ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১১

0
646

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১১ (বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ আস্তে ধীরে দুই হাত উঁচু করে নিচে নামলো। তারপর সাবধানে নিজের রুমে ঢুকলো। এতক্ষন ধূসর মেঘের জন্য অপেক্ষা করছিল তবে লুকিয়েছিল। ঠিকভাবে মেঘ রুমে ঢুকতেই ধূসর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চলে গেল নিজের রুমের দিকে। মেঘ রুমে ঢুকতেই দেখলো ওর তিন বান্ধবী আরামসে ঘুমাচ্ছে একে অপরকে জরিয়ে। মেঘ হাসলো তারপর টেবিলে বসে ধূসরের কথা ভাবতে লাগলো। লোকটার হাঁসি, তার এলোমেলো চুল কতো সাবধানে যত্ন করে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছিল। মেঘের ঠোঁটে মিষ্টি হাসির রেশ দেখা যাচ্ছে। অতঃপর কিছুক্ষণ পরে মেঘ হাত ধুয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে হাত দু’টো ভালো করে দেখলো অনেক সুন্দর রঙ হয়েছে। সে খুশিমনে বিছানায় বান্ধবীদের পাশে শুয়ে পড়লো। খুব তাড়াতাড়ি মেঘের চোখে শান্তির ঘুম নেমে এলো।

অতঃপর মিষ্টি সকালের আগমন। কাল অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে , তাছাড়া কালকে রাতের ঘুমটাও শান্তির ছিল। তাই মেঘের আজ ফজরের সময় ঘুম ভাঙেনি। মেঘের বান্ধবীরা ফজরের সময় উঠে পরেছে তাই মেঘকেও ডেকে তুলল। অতঃপর চার বান্ধবী উযু করে একসাথে ফজরের নামাজ আদায় করে নিল। চার বান্ধবী একসাথে বেলকনিতে গিয়ে ভোরের স্নিগ্ধতা দেখতো লাগলো। হুট করে হিরের নজর গেল মেঘের হাতের দিকে ও মুখে হাত দিয়ে বলল,,

“ও মাই আল্লাহ!”

তখন জাবিন বলল,,

“কি হয়েছে?”

“আমাদের নিরামিষ বান্ধবীর হাত দেখেন তাহলেই বুঝতে পারবেন?”

সবাই মেঘের হাতের দিকে তাকালো। তা দেখে মেঘ বলল,,

“কি!

তখন হির বলল,,

“রাতে দুলাভাই আইছিলো ঘরে আমরা কেউ ঠাহরই করতে পারলাম না। আল্লাহ কাল রাতে ঘুমটা একটু কম দিতে পারলে না, তাইলে ঐ প্রেমিকযুগলরে মন ভইরা দেখতে পারতাম। আহ দুলাভাই আপনি কেন আমাগো জাগাইলেন না।”

“ঐ ড্রামাবাজ অফ যা!”

‘আচ্ছা বল এইটা কেমনে হলো? তুই তো নিবি না সেটা জানি তবে এটাও জানি ধূসর ভাইয়ার হাতে ছাড়া আরো কারো হাত থেকে মেহেদী নিবি না।ধূসর ভাইয়ার তো কিছু মনে নাই তাইলে তোরে মেহেদী কেমনে দিল।”

ওকে শোন কাল রাতে,,, মেঘ ওদের কে সব ঘটনা বললো এদের থেকে মেঘ কিছুই লুকায় না। সব শুনে লিয়া বলল,,

“ধূসর ভাইয়ার কথা কি বলবো। তোকে ফিল করে আবার এটাও মনে এটা ঠিক না। তোর হাতে মেহেদী দিল কিন্তু হাত ধরলো না। ভাইয়ার মেহেদী দিতে কষ্ট হয়েছে কিন্তু!”

‘হুম তা তো হয়েছেই। এখন নিচে চল সকাল হয়ে গেছে। আপনাদের কাজ আপনারা দেখে নেন।”

______________

আজ মুনের বিয়ে সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত। আজ আয়মান চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরীর মনটা বেশ খারাপ। তাদের বড় সন্তান আজ অন্যের বাড়ি চলে যাবে। সকাল থেকেই মেঘ আয়মান চৌধুরী কে লক্ষ্য করছিল। মেঘ আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে মুনের রুমে নিয়ে গেল। মুন প্রথমে অবাক হলেও পরে বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আর মাফ চাইলো। আয়মান চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত রেখে শান্ত করে বেরিয়ে এলেন। সকালে সবাই নাস্তা করে বসে আছে দিলরুবা খানম আর মেঘ একসাথে বসেছে। এমন কি অপর পাশে ওর বান্ধবীরা আর ধূসর ও ওখানে ছিল। তখন মেঘের বড় মামি ওনার মেয়েকে এনে দিলরুবা খানম এর কাছে এসে বললেন,,

“আচ্ছা আপনার ছোট ছেলে তো ডক্টর তাই না।”

দিলরুবা খানম হেঁসে বললেন,,

“হুম আলহামদুলিল্লাহ আমার ছেলে একজন ডক্টর!”

“মাশাআল্লাহ আপা! ও হচ্ছে আমার মেয়ে মিতু।”

ধূসর আর মেঘ মন দিয়ে কথাগুলো শুনছিল। হুট করে মেয়ের কথা আসতেই মেঘ বুঝতে পারলো কি বলবে এখন। তাই ও নিজেই বলল,,

“হ্যা বড় মামি ও আপনার মেয়ে মিতু। তাতে কি হয়েছে?”

তখন মেঘের বড় মামি দিলরুবা খানম এর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আসলে আপা আমি ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না। তাই সরাসরিই বলছি। আমার আপনার ছেলেকে জামাই হিসেবে পছন্দ হয়েছে। যদি আপনাদের আমার মেয়ে পছন্দ হয় তাহলে ওরা একে অপরের সাথে আলাপ করে বিয়ে অব্দি যেতে পারে।”

মেঘ বিস্ফোরিত চোখে ওর বড় মামির দিকে তাকালো। দিলরুবা খানম পরে গেলেন মহা বিপদে এদিকে সবাই ধূসরের বিয়ের কথা শুনে উৎসুক হয়ে আছে। কেউ কিছু বলছে না তখন ধূসর বলল,,

“সরি আন্টি আমি বিবাহিত!”

এ কথা শুনে সবার দৃষ্টি ধূসরের দিকে পড়লো। মেঘ ও চমকে উঠলো। দিলরুবা খানম ও ছেলেকে পর্যবেক্ষন করছে। তখন মেঘের বড় মামি বলল,,

‘ওহ আচ্ছা সরি! আসলে তোমার বউকে তো আনোনি তাই ভাবলাম তুমি অবিবাহিত কিছু মনে করো না।”

উনি লজ্জায় মেয়েকে নিয়ে চলে গেলেন। এদিকে দিলরুবা খানম ছেলের কাছে গিয়ে বললেন,,

“এখন এটা কি হলো?”

ধূসর ফিসফিস করে বলল,,

“কি আবার হলো আমি তো একজন কে পছন্দ করি তাকেই বিয়ে করবো। আর কেউ যেন বিয়ের প্রস্তাব না দেয়। সেই জন্য বলে দিলাম আমি বিবাহিত।”

ধূসরের কথায় দিলরুবা খানম হাসলেন আর বললেন,,

“পাগল একটা! তাই এভাবে কেউ বলে!

“আমি বলি এই ধূসর এহসান শুভ্র বলে!”

দিলরুবা খানম হেঁসে ওখান থেকে মেঘের কাছে গেলেন। মেঘ প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। তা দেখে উনি ধূসরের বিষয়টা জানালেন। মেঘ হাসলো ধূসরের কান্ড দেখে। হুট করেই বিয়ে বাড়িতে একটা খবর উঠলো ধূসর নামক হ্যান্ডসাম ডক্টর বিবাহিত।

দুপুর হয়ে গেলে মেঘরা সবাই তৈরি হয়ে নিল। মেঘ,নীলি, জাবিন, হির আর লিয়া একইরকম গ্ৰাউন পরেছে শুধু রঙটা ভিন্ন। মেঘ হোয়াইট কালার ,হিরের টা পিংক, নীলির টা ব্লু ,জাবিনেরটা ব্ল্যাক, আর লিয়ার টা নেভিব্লু কালার। সবাই নিজের গ্ৰাউনের সাথে মিলিয়ে হিজাব নিকাব পরেছে। পাঁচজন কেই সুন্দর লাগছে। এদিকে ধূসর সাদা রঙের স্যুট সেট পরছে। যে কেউ দেখে বলবে ওরা ম্যাচিং করে পরেছে। মেঘরা পাঁচ বান্ধবী একসাথে নিচে নামলো সবাই ওদের প্রশংসা করলো। মেঘ ওর আব্বার কাছে গেল। আয়মান চৌধুরী মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বললেন,,

“মাশাআল্লাহ আমার আম্মাকে অনেক সুন্দর লাগছে। কারো নজর না লাগে।”

মেঘ হাসলো আর বলল,,

‘আব্বা আপনাকেও এই শুভ্র রঙের পাঞ্জাবিতে অনেক সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ।”

‘আমার থেকে আপনাকে বেশি সুন্দর লাগছে। দাঁড়ান আমি সূরা পরে নজর কাটিয়ে দিই।”

মেঘ হাসলো আয়মান চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত রেখে তিনবার করে সূরা ফালাক আর সূরা নাস পরে মাথায় ফুঁ দিয়ে দিল। ওখানে থাকা সকলেই দেখলো এদের বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখে তারা মুগ্ধ। মেঘ ওর আব্বার কাছেই দায়িয়ে রইলো। তখন মেঘ ধূসরকে দেখলো সিড়ি দিয়ে নামতে সাদা রঙের স্যুট সেট পরেছে। একবার নিজের দিকে তাকালো আবার ধূসরের দিকে তাকালো। দুজনে ম্যাচিং হয়ে গেছে। ধূসরও মেঘকে দেখলো আর মেঘকে দেখে ওর হার্টবিট বেড়ে গেল। আর মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো,,

“মাশাআল্লাহ মেঘবালিকা! যেন একটু মেঘ আমার সামনে দাঁড়িয়ে!

ধূসর মেঘের কাছে যাওয়ার জন্য ওর দিকেই আসলো। ওখানে এহসান খান আর দিশান ও ছিল। ধূসর মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,

“মাশাআল্লাহ মেঘবালিকা!”

বলেই ওর পাশ কাটিয়ে দিশানের কাছে গেল। তখন একজন এসে আয়মান চৌধুরী কে বলল,,

“তো আয়মান সাহেব বড় মেয়ের বিয়ে তো হলো এখন ছোট মেয়ের পালা শুনলাম মেয়ের পড়াশোনা শেষ তো মেয়েকে বিয়ে দেবেন না!”

হুট করে এমন প্রশ্নে আয়মান চৌধুরী আর মেঘ অপ্রস্তুত হয়ে গেল। তাছাড়া ধূসরের পরিবার ও ওখানে ছিল। তখন সমশের চৌধুরী মেঘের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,,

“আমার নাতনি বিবাহিত!”

এ কথাটা যেন ধূসরের কাছে বাজ ফেলার ন্যয় কাজ করলো। আয়মান চৌধুরী আর মেঘ ভাবেনি হুট করে সমশের চৌধুরী এখানে এসে সব বলে দেবে। মেঘ ধূসরের দিকে তাকালো ওর চোখ ছলছল করছে। ও ধূসরের অবস্থা বুঝতে পারলো। ধূসর কোন কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে গেল। পেছনে দিশান ও ছুটলো ও বুঝতে পারছে এখন ওর ভাইকে একা ছাড়া উচিৎ নয়। মেঘ এই ভয়টাই পাচ্ছিল। মেঘের চোখ ছলছল করে উঠলো। এখন ধূসর কি করবে? আয়মান চৌধুরী মেঘের অবস্থা বুঝতে পেরে মেঘের হাত ধরে ওনার রুমে গেল। মেঘকে এই মুহূর্তে কেমন বিধস্থ লাগছে। ও রোবটের মতো ওর আব্বার সাথে রুমে এলো। সকলে অবাক চোখে বাবা মেয়েকে দেখলো কিন্তু এগিয়ে এলো না। ধূসরের পরিবার ওখানেই ছিল তাই ঐ অবস্থা দেখে ওনারাও এগিয়ে এলো। এহসান খান সব জানালেন। ওনারা নিজেরাও কি করবে বুঝতে পারছে না। মেঘকে রুমে এনে আয়মান চৌধুরী বললেন,,

‘আম্মা আপনি!”

মেঘ ওর আব্বাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

“অনাকাঙ্ক্ষিত সত্যের যখন ভুল সময়ে আগমন ঘটে তখন কি রকম অনুভুতি হয় আমার জানা নেই। তখন ধূসরের দিকে তাকিয়ে কিছুই হয় নি শুধু হুট করে থমকে গেছিলাম। তার চোখে আমাকে হাড়িয়ে ফেলার তীব্র যন্ত্রনা দেখতে পেয়েছিলাম। ওনার চোখদুটো ছলছল করছিল আব্বা। বোধহয় ঐ চোখ দুটো চিৎকার করে বলছিল এটা হতে পারে না।”

“আর আপনি?”

মেঘ নিঃশব্দে তার আব্বার বুকে তার অনুভূতি ঢেলে দিচ্ছে। এ যে নিদারুণ বিষাদ। কিছুক্ষণ পর মেঘ নিজের চোখ মুছে ফেলল আর বলল,,

‘আমি ঠিক আছি আব্বা আপনি নিচে যান। আপনার বড় মেয়ের বিয়ে অনেকেই আসছে। তাদের স্বাগতম জানাতে হবে তো! ”

“আম্মা আপনি ,,

‘আব্বা আমার কথা শুনুন আপনি যান। আমি ফ্রেশ হয়ে আবার ঠিকঠাক হয়ে নিচে আসছি। তাছাড়া বরযাত্রী এসে পরবে কিছুক্ষণের মধ্যেই।”

আয়মান চৌধুরী মানা করলে মেঘ আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে বেরিয়ে এলো। সিড়ির সামনে দাঁড়ালো মেঘ ইশারা করলো নিচে যেতে । আয়মান চৌধুরী অসহায় চোখে তাকিয়ে মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

“ইনশাআল্লাহ আপনার সময় টা সুখের হোক!”

“আমিন আব্বা!”

আয়মান চৌধুরী নিচে চলে গেলেন। মেঘ তাড়াতাড়ি করে রুমে আসলো ওখানে নীলি আর জাবিন ছিল। ওদের দেখেও না দেখার ভান করে বলল,,

‘তোরা নিচে যা আমি দশ মিনিটে নিচে আসছি। আর নীলি খোঁজ কর তোর ভাই কোথায়? তোর ভাই আবার শোকে দেবদাস হয়ে বনবাসে গেছে নাকি‌। দিশান ভাইয়াকে বল বাড়ি নিয়ে আসতে।”

বলেই মেঘ ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। নীলি আর জাবিন অসহায় মুখ করে নিচে চলে এলো। মেঘ নিকাব খুলে নিজের অশ্রুসিক্ত চোখ দেখলো। ও হিজাব খুলে নিজের মুখ ভালো করে ধুয়ে বের হলো। আবার হিজাব নিকাব পরে নিচে আসলো। নিচে এসে প্রথমে নীলকে কোলে নিল তারপর ওকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল এখন ও পুরো বাড়িটা দেখবে ঘুরে ঘুরে। নীল ও একটা ব্লু রঙের পাঞ্জাবি পরেছে খুব সুন্দর লাগছে। বাইরে এসে মেঘ নীলকে নামিয়ে হাত ধরে হাঁটতে লাগলো। মেঘকে দেখে মনে হচ্ছে ও হাড়িয়ে গেছে এদিক ওদিক কিছু খুঁজছে। হুট করে তখন আয়মান চৌধুরী মেঘকে ডাক দিল স্টেজের ওখানে। মেঘ ওখানে গেল। আর ওখানে গিয়ে ওর আব্বার সাথে কাউকে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখে চমকে উঠলো। ও গিয়ে বলল,,

“হুম আব্বা ডেকেছেন?”

“ইনি হলো সুনামধন্য বিজনেস ম্যান আতাউর রহমান। বিজনেসে সবার ওপরে যদি কারো নাম থাকে সেটা হচ্ছে তার।”

“তুমি ভুল বললে আজকাল A.M.C ইন্ড্রাস্ট্রিজের A .C ও কিছু কম যায় না।”

আয়মান চৌধুরী একটু নড়েচড়ে উঠলে। মেঘ কথাটা শুনে হেঁসে কথা ঘুরানোর জন্য বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল!”

তখন আতাউর রহমান বললেন,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। এতদিন তোমার নাম অনেক শুনেছি আজ দেখলাম। তুমিই তো সেই যে আয়মানের সবসময় সাথে ছিলে। এমনকি যখন সবাই আয়মান কে ভুল বুঝে ছিল তুমি তার সাথে ছিলে।”

আয়মান চৌধুরী একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। তখন রেজাউল আহমেদ বললেন,,

“আহ হা পুরোনো কথা টেনে এনে কি লাভ। মেঘ ওর কথায় কিছু মনে করো না।”

“ফুপা আপনারা দুজন কি বন্ধু!”

এটা শুনে দুজনেই একটু হকচকিয়ে গেল। তখন আতাউর রহমান বললেন,,

“হ্যা আমরা একসাথে পড়াশোনা করতাম।”

‘ওহ আচ্ছা! আপনি তো AR ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর মালিক তাই না।”

“হুম বাহ আমায় দেখি চিনো তুমি?”

‘হ্যা ঐ একটু! আচ্ছা আপনারা কথা বলুন আমি আসছি!”

তখনি শোনা গেল বর এসেছে সবাই এগিয়ে গেল কিন্তু মেঘ গেল না। ও নীল কে বলল ওর মায়ের কাছে যেতে। নীল চলে গেল। মেঘের ভালো লাগছে না হুট করে নানা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। ও বাড়ির পেছন দিকে গেল। সেখানে গিয়ে ধূসরকে দেখলো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ ওখানে গেল ও ভাবতে পারে নি ধূসরকে এখানে পাবে। এই জায়গায় কেউ আসনা সচরাচর। মেঘ ধূসরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। ধূসর কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে পাশে তাকালো এই মুহূর্তে তার মেঘবালিকা কে দেখে মোটেও খুশি হয় নি সে। ওর চোখটা ছলছল করছে মেঘের চোখের দিকে তাকাতেই চোখের পানি গড়িয়ে পরলো। ধূসর তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে মুছে ফেলল। তা দেখে মেঘের চোখটাও ছলছল করে উঠলো কিন্তু মেঘ কিছু বললো না।চোখটা সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল। হুট করে ধূসর বলল,,

আকাশের মেঘ তুমি!
যাকে দেখা যায়,
অনুভব করা যায়,
কিন্তু ধরে রাখা যায় না।

ভেতরে বিষাদভরা শোক!
তুমুল আর্তনাদ,
নাম না জানা নীল ব্যাথা
তুমি আমার থেকে
ঝড়ে যাওয়া
এক সবুজ পাতা।

এক একটা মুহুর্ত যাচ্ছে
সাথে হাহাকার গুলো গাঢ় হয়ে উঠছে।
আহ এ কেমন বিষাদ
আমাকে ঘিরে ধরেছে!

“এই সময় দাঁড়িয়ে আমার ভেতর থেকে এই কথাগুলোই কবিতার রুপ নিয়ে আসলো কবিতাটা সুন্দর তাইনা মেঘ।”

মেঘ সামনের দিকে তাকিয়েই বলল,,

“হুম!”

“তুমি বিবাহিত আমায় বলো নি তো?”

“সেরকম সময়ই আসে নি। তাছাড়া যে নেই তার কথা বলে কি লাভ।”

কথাটা শুনে ধূসর চমকে মেঘের দিকে তাকালো মেঘ এখনো সামনের দিকেই তাকিয়ে আছে। ধূসর নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“কি বললে? কিছু বুঝলাম না!”যে নেই মানে?”

‘যে নেই মানে নেই। আমার সে আমার হাত ছেড়ে দিয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে।”

‘আমার সে’ শুনে ধূসরের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়। মেঘ কি তাকে অনেক ভালোবাসে? ধূসর নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“ছেড়ে দিয়েছে মানে? তোমার মতো মানুষকে কে ছেড়ে দিতে পারে? এতটা বোকা কেউ কি করে হতে পারে?”

মেঘ হেসে বলল,,

“আমাদের জীবনে অনেকসময় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কিছু বিপর্যয় আসে। যা আমাদের হাতে থাকে না। ঠিক তেমনটাই আমাদের সাথে ঘটেছিল। আমার থেকে চিরতরে সে হাড়িয়ে গেছে। আমায় ভুলে গেছে সে।

এ কথা শুনে মেঘের জন্য খারাপ লাগলেও ধূসরের অনেক খুশি নিজের জন্য। ধূসর খুশি মনে বলল,

“চিরতরে মানে?

ধূসরের কন্ঠস্বর শুনে মেঘ বুঝতে পারল তার অবস্থা তাই ওর দিকে ঘুরে বলল,,

“চিরতরে মানে চিরতরে তার তখনকার অস্তিত্ব মুছে গেছে। আজ থেকে একবছর আটমাস আগে। সে আর আমার হয় নি আমায় ছেড়ে গেছে। আমায় ভুলে গেছে সে।”

আমায় ভুলে গেছে এই শব্দটার মানে ধূসর বুঝতে পারলো না। তবে ধূসরের চোখেমুখে হাঁসি দেখা যাচ্ছে কিন্তু সে প্রকাশ করছে না। কিন্তু মেঘ বুঝতে পারলো। মেঘ মনে মনে হাসলো। ধূসর বলল,,

“আপনার সে যেমনভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনার কাছে থেকে হাড়িয়ে গেছে। তেমনভাবে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনার জীবনের সাথে কেউ জুড়ে যায়। আপনি কি তাকে গ্ৰহন করবেন মিসেস কাশফিয়া আয়মান মেঘ?”

মেঘ মুখ ঘুরিয়ে হাসলো চমৎকার সেই হাঁসি। তবে ধূসর দেখতে পেল না। মেঘ বলল,,

“জানিনা আপনার মতো!”

ধূসর বুঝতে পারলো এ কথার মানে। ও হাসলো। ওর জানিনা শব্দে যেমন সব হয়ে যায়। তেমনটাই মেঘ বলল। মেঘ ওখান থেকে চলে আসতে নিল। তখন ধূসর চিৎকার করে বলল,,

“আপনার উনার নাম কি মিসেস কাশফিয়া আয়মান মেঘ?”

মেঘ কিছু বললো না হেঁসে ওখান থেকে চলে গেল। মেঘের মনে অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করছে। ধূসরের ভালোবাসা ঠুনকো নয়। মেঘের প্রতি তার ভালোবাসা এক আকাশ। মেঘের বিবাহিত শোনার পরও সে মেঘকে নিজের করতে রাজি। মেঘ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমার উনি অদ্ভুত সে শুনছো আকাশ,
তোমার বিশলাতার থেকেও তার ভালোবাসার পরিমান বিশাল! তাই তো এতো তাকে নিয়ে অহং আমার।”

মেঘ ভেতরে চলে গেল ততক্ষণে মুজাহিদের সাথে আসা মানুষজন খাওয়া দাওয়া শুরু করেছে। মেঘ পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে গেল। ধূসরের পরিবারের সবাই বিরস মুখে বসে আছে। সাথে তার বান্ধবীরাও সেখানে তেমন কেউ নেই। তাই মেঘ তাদের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলল,,

“আমার জীবন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ধূসর এহসান শুভ্র এর সাথে জুড়তে চলেছে। তাই সবাই মুড ঠিক করুন!

মেঘের কথা শুনে মনে হলো ঈদ লাগছে মেঘের চার বান্ধবী মেঘকে জড়িয়ে ধরলো। দিলরুবা খানম মেঘের কপালে চুমু খেলেন। ওপর থেকে মায়মুনা চৌধুরী সব দেখলেন। হুটহাট করে ঘটনাগুলো তার মাথায় ঢুকছে না। মাত্রই মুনের রুমে থেকে বের হয়ে ওদের দেখলেন। অতঃপর মুনের বিয়ের বাকি থাকা সকল কার্যক্রম শেষ করা হলো। ধরনীর বুকে সন্ধ্যা নেমে গেছে আরও আগেই চারদিকে অন্ধকার। এখন মুনের বিদায়ের পালা। মুন সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। মেঘকে জড়িয়েও কাঁদলো কিছুক্ষণ। সমশের চৌধুরী মুনকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে মুজাহিদ এর হাত ধরে বললেন, মুনকে ভালো রাখতে। মুনের গাড়ি চলতে লাগলো কিছুক্ষণ পর সবাই ভেতরে গেল। মেঘ বুঝতে পারলো ওর আব্বার মন খারাপ অনেক তাই মেঘ সোফায় তার হাত ধরে বসে রইলো। আয়মান চৌধুরীর একটা একটা কল এলো উনি দরজার কাছে গিয়ে ফোনটা ধরে কথা বলতে লাগলেন।তখন এর পর থেকে ধূসরের মেঘের সাথে কথা হয় নি। মেঘ বসে আছে তা দেখে ধূসর ওর দিকে এগিয়ে যেতে নিল। তখনি মেঘ “আব্বা!’ বলে আয়মান চৌধুরীর দিকে দৌড় দিল। আসলে আয়মান চৌধুরীকে কেউ পেছন থেকে চাকু দিয়ে আঘাত করতে যাচ্ছিল। মেঘ গিয়ে ধরে ফেলল চাকুটা মেঘের হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে। সকলে মেঘের চিৎকারে দরজার দিকে তাকালো। মেঘ পা দিয়ে লোকটাকে লাথি মারলো লোকটা নিচে পরে গেল। ধূসর মেঘের দিকে এগিয়ে যাবে এমন সময় মেঘ বলল,,

‘সবাই ওপরে যাও তাড়াতাড়ি!”

তখনি কতোগুলো বাড়িতে ঢুকলো। কারো হাতে বন্দুক কারো হাতে লাঠি। মেঘ হাতে থাকা ছুড়িটা একজনের দিকে ছুড়ে মারলো। আরেকজন লোক আয়মান চৌধুরীর দিকে আঘাত করতে এলো মেঘ ওকেও মারতে লাগলো। আয়মান চৌধুরী ততক্ষনে নিজের গান বের করেছে। একটা মেঘের দিকে ছুড়ে মারলো । মেঘ বন্ধুক নিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,,

“এখন যে আগাবে তাকেই শ্যুট করে দেব!”

তখন একটা লোক হেঁসে বলল,,

“তোমার হাতে ওটা মানাচ্ছে না মামনি এসব খেলনা বন্দুক দিয়ে ভয় দেখাচ্ছো?”

মেঘ হেঁসে বলল,,

“খেলনা বন্দুক বুঝি!”

মেঘ একসাথে চারজনকে শ্যুট করলো। সবার কাঁধের দিকে গুলি করেছে যাতে না মরে। এত তাড়াতাড়ি সব ঘটলো যে কেউ কিছু ঠাহরই করতে পারলো না। সকলে অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে মেঘের পরিবার আর ধূসর! তখন মেঘ হেঁসে বলল,,,

‘কাশফিয়া আয়মান মেঘ কখনো খেলনা জিনিস ইউজ করে না। এখনো তোদের মনে হচ্ছে এটা খেলনা বন্দুক।

কাশফিয়া আয়মান মেঘ শুনে সবথেকে পেছনে থাকা একটা লোক পিছিয়ে গেল। আর তাড়াতাড়ি করে কাউকে ফোন দিল । তখন গুলি চলার আওয়াজ আসলো বাইরে মেঘের গার্ডদের সাথে হয়তো গুলাগুলি হচ্ছে। প্রথমে হয়তো ওদের পাঠিয়েছে। ,,
ততক্ষনে ওপাশের লোকটা হ্যালো হ্যালো করছে লোকটা ফোন নিয়ে বলল,,

“বস মেঘ বেঁচে আছে।”

ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো ,,

“কে বেঁচে আছে?”

লোকটা তখন চিৎকার দিয়ে বলল,,

“K.A. Megh ওরফে কাশফিয়া আয়মান মেঘ বেঁচে আছে।”

এই কথাটা এতটাই জোরে ছিল যে , সব ভেদ করে সবার কানে পৌঁছে গেছে কাশফিয়া আয়মান মেঘ বেঁচে আছে।”

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে