#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
“কি ব্যাপার আয়মান খুব খুশি মনে হচ্ছে? মেয়েকে আদর করে কথা বলাও হচ্ছে দেখি।
পেছন থেকে হুট করে কারো এরকম কথা শুনে আয়মান চৌধুরী পেছনে ফিরলেন। মেঘ ও তার দিকে তাকালো এবং সবার দৃষ্টি তার দিকেই। আয়মান চৌধুরীর চোখ তাকে দেখে স্থির হয়ে গেল। তিনি শুধু বললেন,,
“তেমন কিছু না মনে হলো আমার আম্মাকে একটু আদর করি তাই।”
তখন আয়না চৌধুরী বলল,,
“তোমার না আরো দুদিন পর আসার কথা ছিল?”
“কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ হলো তাই, তাছাড়া শুনলাম আয়মান আর মেঘ বাড়ি ফিরেছে তাই আরো তাড়াতাড়ি চলে এলাম।”
তখন মেঘ হেঁসে বলল,,
“আপনিই বাকি ছিলেন নাহলে আমার বাবার আত্মীয় সব এসে পরেছে আপুর বিয়েতে। যাক আপনি আসায় সবাই কম্পিলিট। তা কেমন আছেন কাকু সরি ফুপা।
“আরে মেঘ আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো?তবে তোমার মুখে কাকু শুনতে বেশ লাগে।”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তবে আপনি আমার আব্বার কাছের বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিলেন তাই সেই হিসেবে কাকু আবার আপনি আমার ছোট ফুপির স্বামী সেই হিসেবে ফুপা। আচ্ছা যাই হোক আব্বা চলুন ওপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিই।”
বলেই মেঘ আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে ওপরে নিয়ে গেল। তখন সমশের চৌধুরী বললেন,,
“আশরাফ যাও গিয়ে ফ্রেশ হও। আয়না আশরাফকে নিয়ে রুমে যাও।”
আশরাফ হক আয়না চৌধুরীর সঙ্গে চলে গেল। মেঘ আয়মান চৌধুরী কে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বলল,,
“আব্বা কি বুঝলেন?”
“বুঝলাম তো অনেক কিছুই! কিন্তু,,”
“কিন্তু কি আব্বা?”
“এই মুহূর্তে এহসান আর মাইনুল কে দরকার!”
“মেজো মামা আর বাবা।”
“হুম, কারন আমার মনে হচ্ছে মুনের বিয়েতে অন্যরকম কোন ধামাকা আসতে চলেছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”
“ওকে আব্বা সমস্যা নেই হির, লিয়া, জাবিন, নীলিমা ওরাও তো থাকছে। কিছু হলে সবাই মিলে সামলে নেব।”
“বিয়েতে ধূসর ও থাকবে আম্মা! কিভাবে সব সামলাবেন একটু ভেবে নিয়েন। এবাড়ির কেউ জানেনা আপনার হাজবেন্ড কে? কিন্তু আপনি বিবাহিতা সেটা সবাই জানে। যদিও সবার মনে আছে নাকি সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে আমার।
মেঘ চমকে আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আপনি ওনাদের বলেছেন?”
“না আব্বা বলেছে। এহসান আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সেই হিসেবে। আমার মেয়ের বিয়ে অথচ আমার বন্ধুদের ফ্যামিলি থাকবে না। তাই আব্বা ওদের বলেছে। এটা আমাকে কাল বিকেলে জানিয়েছে আপনাকে জানাতে মনে ছিল না। তাই এখন জানালাম।”
“এবার কি করবো আব্বা?” যদিও আমার মনে হচ্ছে আমার বিয়ের ব্যাপারে কোন কথা হবে না। তবুও যদি কিছু হয়।”
“আপনি সব সামলাতে পারবেন আম্মা আল্লাহ ভরসা। যদি কিছু হয়েও থাকে তাহলে আমিও দেখবো ধূসরের কি হয়? আপনি বিবাহিত শুনে ও কি করে। আপনি তো বলেছিলেন ও এখনো আপনাকে অনুভব করে। আমি যতটুকু ধূসর কে চিনি ও ওর ইচ্ছে যেভাবেই হোক পূরন করেই ছাড়ে। আজ এহসান ফোন দিয়েছিল তাকে কাশফিয়া আয়মান এর বাবার সাথে বিয়ের কথা বলতে বলেছে ধূসর।
“সকালের ঘটনা নোলক ফোন দিয়ে আমাকে বলেছে।”
“আপনি খুব লাকি আম্মা যে ধূসরের মতো একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছেন এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে নতুন ভাবে আবার পাবেন।”
“ইনশাআল্লাহ আব্বা! এখন নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। আব্বা মেয়ে গল্প শুরু করলে সারা রাতেও শেষ হবে না।”
“ঠিক বলেছেন আম্মা।”
আয়মান চৌধুরী চলে গেলেন। মেঘের রুমের উল্টোদিকে ওনার রুম। উনি রুমে যেতেই দেখলো মায়মুনা চৌধুরীকে ওনার জন্য অপেক্ষা করছেন। উনাকে দেখে, মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,
“এতক্ষনে আসার সময় হলো। তুমি না কখন এলে নিচে থেকে।”
“মেঘের সাথে কথা বলছিলাম তাই।”
“আচ্ছা তুমি মেঘের সাথে এত কথা বলে কি পাও?” যতটা তুমি ওর সাথে কাটাও বাকি সবার সাথে সেটুকু সময় ও কাটাও না।”
আয়মান চৌধুরী হাসলেন আর বললেন,,
“কেন তোমার ঈর্ষা হয় নাকি?”
“না ওর কোন কাজে আমার কেন ঈর্ষা হবে ? ও তেমন কোন ইম্পোর্টেন্ট মানুষ না।”
“সেটা তোমার কাছে আমার কাছে না। আমার জীবনে যদি সবথেকে ইম্পোর্টেন্ট কেউ থেকে থাকে। সেটা হলো আমার আম্মা আমার মেয়ে মেঘ। আর তার সাথে কথা বলে কি পাই বললে না? তার সাথে কথা বলে আমি সুখ পাই। আমার জীবনে মেঘ হলো আমার জীবনের সুখ, আমার প্রশান্তি , আমার সাহস, আমার মনোবল, আমার শক্তি, আমার ভরসার হাত, সবশেষে আমার বিশ্বস্ত বন্ধু। আমার জীবনের সবকিছু যেন তাকে ঘিরেই। এই ছয় বছর আমি আর আমার আম্মা এমন একটা নিজেদের ছোট্ট পৃথিবীতে বাস করতাম। সেখানে ছিল না কোন জটিলতা। ছিল এক সহজ জীবনের চিত্র আর ভালোবাসা। তাকে নিয়ে বলতে শুরু করলে সারারাত ও কম পরবে তাই এখন আর কিছু বলছি না। তবে যাই বলো না কেন আমার আর আমার আম্মার ভালোবাসা দেখে যে কেউ ঈর্ষান্বিত হবে। তুমি মানো আর না মানো!”
বলেই আয়মান চৌধুরী নিজের কোর্ট খুলে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। তখন মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,,
“মেঘ কেমন তা জানি না? আর জানতে চাই ও না। তবে সে তার জন্মের পর থেকে আমার জন্য কিছু সুখ বয়ে আনে নি। যা এনেছে তা শুধু দূর্যোগ। তবে এটা সত্যি তোমাদের বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখে যে কেউ ঈর্ষান্বিত হবে।”
_______________
“না না এটা কি করে হতে পারে আমার হাত থেকে ডিলটা কিভাবে ফসকে যেতে পারে।”
“শান্ত হও বন্ধু আমরা তো চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু হয় নি!”
“সেটাই তো কেন হয় নি? এই ডিলটার ওপর পরবর্তী বিজনেস অফ দ্য ইয়ার নির্ধারন করা হবে। সেই জন্য বাংলাদেশের টপ টেন এ থাকা সব বিজনেস ম্যান এই ডিলটায় অংশগ্রহণ করেছিল। আমি তো সব কম্পানিতেই নিজেদের লোক ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। এমন কি তোমার কথা মতো চৌধুরী কম্পানির শাফিয়ান কেও কিনে নিয়েছিলাম যার জন্য ওরা নরমাল একটা প্রজেক্ট সাবমিট করেছে। এসবের মাঝেও যেই কম্পানিতে লোক ঢোকাতে পারি নি। সেটাই ডিল পেয়ে গেল। এত কষ্ট করে কি হলো সব ওয়েস্ট। কি করে ঐ A.M.C ইন্ড্রাস্ট্রিজ ডিলটা পেয়ে গেল।”
“A.M.C ইন্ড্রাস্ট্রিজের ওনার A.C অনেক ধূর্ত। এখন পর্যন্ত কখনো নিজের নামের ফুল ফ্রম ইউজ করে নি। এমন কি কেউ জানেও না। হুট করেই চার বছর আগে তার নাম বিজনেস এর টপ টেনে চলে এসেছে। আজ পর্যন্ত কেউ তাকে দেখে নি। সবসময় মাস্ক পরে থাকে।’
“খোঁজ লাগাও কে এই A.C . তাকে শেষ করতে হবে নাহলে আমি ওপরে উঠতে পারবো না।”যাই হোক তুমি A.C. এর খোঁজ নাও।
‘হুম লাগাচ্ছি। তুমি চিন্তা করো না কিছুদিনের মধ্যেই পেয়ে যাবো।”
“ওকে শেষ করতে পারলে বিজনেস ওয়াল্ড এ আমার নামটাই প্রথমে থাকবে। তারপর আমি হবো বিজনেসের রাজা।
“হুম আজকেই লাগাচ্ছি।”
“সে যখন বিজনেসের টপ টেনে নিজের নাম লিখিয়েছিল তখন ভেবেছিলাম সে তেমন কিছুই না। কিন্তু সে তো সুঁই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হচ্ছে। আমি দশ বছরেও যা করতে পারি নি লোকটা এই পাঁচ বছরেই করে ফেলেছে।”
“বিজনেস এমন একটা জিনিস হুট করে যেমন ওপরে উঠাতে পারে তেমন নামাতেও সময় নেয় না। এই চৌধুরীদেরকেই দেখো না । আয়মান থাকতে কতো বড় কম্পানি ছিল তারপর তুমি বুদ্ধি করে ওকে সরালে তারপর থেকে দেখো শুধু নিচের দিকে যাচ্ছে।”
‘সেটাই তো আমি চাই ঐ চৌধুরীদের শেষ দেখতে। সমশের চৌধুরীর খুব অহংকার ছিল তাই না। নিজেদের বিজনেস নিয়ে আর নিজের বাড়ি নিয়ে। সেটা একদিন মাটির সাথে মিশিয়ে দেব আমি। ওনার জন্য কি কি পোহাতে হয়েছে সেটা শুধু আমি জানি। ওনাকেও শেষ হতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। বড় ছেলের বড় মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন না উনি। দাওয়াত দিয়েছে দাওয়াত খেতে তো যেতেই হবে। তাছাড়া আয়মান ও শুনলাম ফিরে এসেছে একেবারের জন্য, তার সাথে তো দেখা করতেই হয় কি বলো।
বলেই লোকটা হাসতে লাগলো । তার হাসির সাথে আরেক জন ও হাসতে লাগলো। তারপর হাঁসি থামিয়ে বলল,,
“এবার তাহলে ফোনটা রাখি কেউ শুনে ফেলবে।”
“তুমিও না চৌধুরীদের সাথে থাকো, অথচ কেউ জানেই না? তুমি ওদের আপন হয়েও পেছন থেকে আমার সাথে মিলে…….
“জীবনে আগাতে হলে অনেক কিছুই করতে হয় রাখছি।”
বলেই লোকটা তাড়াতাড়ি করে ফোন রেখে দিল। ফোনটা রাখতেই ওপাশ থেকে লোকটা হেঁসে বলল,,
“তুমি কি ভাবছো তুমি খুব বুদ্ধিমান আমার বন্ধু। নাহ তুমি তো আমার তুরুপের তাস। আমার স্বার্থে আঘাত লাগলে আমি কি করতে পারি তোমার ধারনাতেও নেই। তোমার প্রয়োজন শেষ হলে তুমিও শেষ হয়ে যাবে।
বলেই লোকটা নোংরা ভাবে হাসতে লাগলো।
________________
মেঘ ফ্রেস হয়ে কিছুক্ষণ লিলির সাথে সময় কাটিয়ে দেখলো, ডিনার টাইমে হয়ে গেছে। তাই মেঘ লিলিকে খাবার দিয়ে নিচে নেমে গেল। সকলে টেবিল এ বসে পরেছে। মেঘ তার আব্বার পাশের চেয়ারে বসে বলল,,
“আব্বা আমার মামার বাড়ির লোকেদের খবর দিন। বিয়ের এখনো এক সপ্তাহ বাকি আপনার আত্মীয়রা চলে এসেছে। অথচ আমার মায়ের আত্মীয়দের এখনো কারো দেখা নেই। তারা কিন্তু পিছিয়ে পরবে?”
মেঘের কথা শুনে সবাই অবাক। এ কথা শুনে আয়না চৌধুরী রেগে বলল,,
“তুই কি আমাদের ইনডেরিক্টলি অপমান করছিস?”
“ছোট ফুপি আমি কখন অপমান করলাম । আপনার বাবার বাড়ি আপনি সারাবছর থাকেন আমার কি? আমি তো আমার মামার বাড়ির কথা বলছিলাম। দেখুন আপনারা চলে এসেছেন। শায়লা আপু, জায়মা আপু পর্যন্ত জামাই বাড়ি থেকে এসেছে অথচ আমার মামারা এখনো এলো না। সব কাজ আপনারাই করবেন নাকি তাদের ভাগ্নির বিয়ে তাদের কোন দায়িত্ব নেই নাকি । সব কষ্ট কেন আপনারাই করবেন। কাল থেকেই কাজ শুরু হবে তাই বলছিলাম।”
কিভাবে কথার মাধ্যমে কথা সামাল দিতে হয় সেটা মেঘ ভালো করেই জানে। আয়মান চৌধুরী মেয়ের কথার মানে বুঝতে পেরে বললেন,,
“মেঘ ঠিক বলেছে কাল থেকেই সব কাজ শুরু হবে। সব আমার ভাই বোন আর বোনের জামাইরা করবে নাকি। তোমার ভাই ভাবিদের খবর দাও আসতে বলো মায়মুনা।”
তখন মায়মুনা চৌধুরী বললো,,
‘হঠাৎ তাদের কথা কেন? তারা তাদের সময় বুজে আসবে।”
‘আহ হা তাদের প্রথম ভাগ্নির বিয়ে বলে কথা। তাছাড়া মাইনুল কে বলো তাড়াতাড়ি যেন ছুটি নিয়ে আসে।”
তখন সমশের চৌধুরী বললেন,,
“আহ হা অনেক হয়েছে। ময়মুনা বলে দেবে। এখন সবাই খাওয়া শুরু করো।”
সবাই খাওয়া শুরু করলো। খাওয়া শেষে সমশের চৌধুরী বললেন,,
“মেঘ কাল কি তোমার কাজ আছে?”
“কেন দাদুভাই!”
“আসার পর থেকে দিনের বেলা বাড়িতেই থাকছো না তাই।”
“সরি দাদুভাই কাজ থাকে তাই বাড়ি থাকা হয় না।”
তখন রেজাউল আহমেদ বললেন,,
“মেঘ তুমি কি কাজ করো? যার জন্য সবসময় বাইরে থাকতে হয়। মানে তোমার প্রফেশন কি? পড়াশোনা তো শেষ করেছো আগেই ,শুনলাম গাড়িটাও তোমার নিজের কেনা।”
“একটা সময় যারা আমার খোঁজ করেনি তাদের হুট করে খোঁজ নেওয়াটা বিলাসিতা ছাড়া কিছু লাগছে না।” তাছাড়া আমার কাজ দিয়ে আপনারা কি করবেন?
তখন সমশের চৌধুরী বললেন,,
“তোমার কিছুই বলতে হবে না মেঘ। তুমি তোমার মতো নিজের কাজ করো। কাল থাকতে বলতে চাইছিলাম এই জন্যই কাল মুনরা সবাই শপিং করতে যাবে বিয়ের জন্য তাই।”
তখন মুন বলল,,
“সমস্যা নেই দাদুভাই। মেঘের সময় হলে আমরা বরং চলে যাবো ওকে নিয়ে।
বোনের কথা শুনে মেঘ হাসলো আর বলল,,
“কাল কোন সমস্যা নেই, কালকেই যাবো। আচ্ছা আমি উঠি তাহলে?”
বলেই মেঘ উপরে চলে গেল। বাকিরা কেউ মেঘের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে সমশের চৌধুরী তাদের থামিয়ে দিলেন। আয়মান চৌধুরী শুধু হাসলেন।
_______________
বেশ রাত হয়েছে সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে। মেঘ লিলিকে নিয়ে বসে আছে আর কিছু ভাবছে। তখন ধূসরের ফোন আসলো তা দেখে মেঘ হেঁসে ফোনটা রিসিভ করে বলল,,
“আসসালামু আলাইকুম ডক্টর!”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম! কি করছেন?”
“এই তো লিলিকে নিয়ে বসে আছি।”
লিলি নাম শুনে ধূসরের অন্যরকম লাগলো। কিন্তু সব সাইডে রেখে বলল,,
“লিলি কে?”
“আপনার বিড়াল সরি আমার বিড়াল।”
“ওহ আচ্ছা মাশাআল্লাহ নামটা অনেক সুন্দর। কিন্তু আপনি বললেন আমার বিড়াল।”
“আরে ওটা ভুলে হয়ে গেছে। তা কিসের জন্য ফোন দিয়েছেন?
“শুনতে আমার কলিগের কেসটা কতদূর এগুলো?
“ওহ আচ্ছা। ভালোই এগিয়েছে আমি গ্ৰামে গিয়েছিলাম ওখানকার পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। সত্যিই আপনার কলিগের চাচা টাকা দিয়েছিল ওখানে গিয়ে জানতে পেরেছি। তাই আমি তাদের বলেছি এখন ওনাকে সাহায্য না করলে আর ভবিষ্যতে ঘুষ খেলে তাদের বিরুদ্ধে স্টেপ নেবো।ব্যাস এতেই সব ঠিক আপনার কলিগের চাচাকে ধরে নিয়েছে পুলিশ।কেসটা কোর্টে উঠলেই হলো এখন। বুঝি না মানুষ অন্যের জমি দখল করে কি পায় তারা কি জানে না,ইয়া’লা ইবনু মুররা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যেকোন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিগত জমি দখল করে তাকে আল্লাহ তা সাত তবকের শেষ পর্যন্ত খুঁড়তে বাধ্য করবেন। অতঃপর তার গলায় তা শিকলরূপে পরিয়ে দেওয়া হবে, যাবৎ না মানুষের বিচার শেষ করা হয়’ (আহমাদ, মিশকাত হা/২৯৬০)।
সব শুনে ধূসর বলল,,
“এটাই তো মানুষ বুঝতে চায় না মিস। এখন যুগ পাল্টিয়েছে সাথে সবার জীবনযাপন ও এখন শুধু তাদের সম্পদ আর টাকার দরকার। সেটা হালাল না হারাম সেটা দেখার সময় নেই।আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘মানুষের উপর এমন একটি সময় আসবে, যখন মানুষ হালাল-হারাম উপার্জনে বিবেচনা করবে না’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৭৬১)।
সেই সময়টা বোধহয় এসে গেছে মিস।
“হুম কিন্তু আপনার কলিগ তো তার হাতে কাগজ ও পেয়ে গেছে। আপনাকে বলে নি?
“বলেছে কিন্তু আমি তো আপনার থেকে শুনতে চাইছিলাম।”
“মানে?”
“আচ্ছা আপনার বাবার নাম কি?”
“হুট করে আমার বাবা এলো কোথা থেকে?”
“বলেন না একটু আমার দরকার?”
“কেন? আপনার দরকার কেন?”
“তুমি বড্ড কথা বলো মেয়ে?”
হুট করে তুমি শুনে মেঘ চোখ বুজে ফেললো। নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“বাহ আপনি থেকে তুমি?”
“ধুর আপনি আপনি আর ভালো লাগছে না। আমি কিন্তু এখন থেকে তুমি করেই বলবো মাইন্ড করলেও কিছু করার নাই। তাছাড়া আমি তোমার থেকে বয়সে বড় হবো।”
মেঘ হেঁসে বলল,
“ঠিক আছে তুমি করেই বইলেন।”
“তুমি না করলেও, আমি তুমি করেই বলতাম। বুঝলে মেয়ে?”
“বুঝলাম!”
“কি বুঝলে?”
“আপনি পাগল হয়ে গেছেন ডক্টর!”
“পাগল হই আর যাই হই তোমারই বুঝলে।”
বলেই ধূসর একটা লজ্জামাখা হাঁসি দিল। এ কি বলে ফেলল। এদিকে মেঘ শুনেও না শোনার ভান করে বলল,,
“কি বললেন বুঝলাম না নেটওয়ার্ক সমস্যা মনে হয়।”
এটা শুনে ধূসর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আস্তে করে বলল,,
“আল্লাহ বাচাইছে শুনে নাই মনে হয়।
মেঘ সব শুনে হাসছে তখন ধূসর বলল,,
“তেমন কিছুই বলি নাই। এখন তোমার বাবার নাম বলো ? আর তোমার বাবার প্রফেশন কি?
“ঐ তো বাবার নাম আর আর প্রফেশন দিয়ে কি করবেন?”
“তোমার বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো….
ধূসর কিছুক্ষণ থেমে আবার বলল,,
‘যাই হোক মজা করলাম।”
এবার মেঘ একটু জোরেই হাসলো। তা শুনে ধূসর বলল,,
“হাসছো কেন তুমি? আমি কি হাসির কিছু বলেছি?”
“তেমন কিছু না ডক্টর এমনিই।”
“আচ্ছা আমিও তোমার বাবার নাম আর প্রফেশন জানতে চাইছি এমনিই!”
“আমার আব্বার নাম আয়মান চৌধুরী! পেশায় একজন বিজনেস ম্যান।
ধূসর কয়েকবার আয়মান চৌধুরী নামটা আওড়ালো তারপর বলল,,
“নামটা কোথায় যেন শুনেছি? মনে পড়ছে না। আর আব্বা? তুমি তোমার বাবাকে আব্বা বলো?
“হুম বলি তো আব্বা বলার মাঝেও আলাদা শান্তি আছে। জানেন আমি আমার আব্বাকে আপনি বলে সম্বোধন করি। আর আমার আব্বা আমাকে আম্মা আর আপনি বলে সম্বোধন করে। এতে সবার বিস্তর অভিযোগ আছে। আমাদের বাবা মেয়ে কেন আপনিময় সম্পর্ক থাকবে? আপনি কতো দূরে দূরে লাগে। কিন্তু তাদের কে বোঝাবে এই আপনার মাঝে কতটা আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা মিশ্রিত থাকে। সবথেকে বড় কথা আলাদা প্রশান্তি থাকে।”
মেঘের কথা শুনে ধূসর মুগ্ধ হয়ে গেল। আর বলল,,
“তাহলে আমি তো আপনিতেই ঠিক ছিলাম। হুট করে তুমি তে নিয়ে এলাম। ভুল হয়ে গেল।”
মেঘ হেসে বলল,,
“আমার আব্বার মুখে আপনি টা অনেক সুন্দর লাগলেও। আপনার মুখে আপনির থেকে তুমিটা অনেক বেশি সুন্দর লাগছে ডক্টর।”
“তাহলে ঠিক আছে। রাতে খাবার খেয়েছো?
“হুম ! আপনি?”
“হাসপাতালে আছি কিছুক্ষন পর বাড়ি যেয়ে খাবো।”
“ওহ আচ্ছা ! তাহলে সময়মতো খাবার খেয়ে নিয়েন।আর নিজের যত্ন নিয়েন। রাখছি আল্লাহ হাফেজ।”
“আরে নিষ্ঠুর মেয়ে শুনো এখনই রাখছো কেন?”
“নিষ্ঠুর মেয়ে?”
“তো নিষ্ঠুর মেয়ে বলবো না আমার কথা শেষ হয় নি তুমি ফোন রাখতে চাইছো।”
“কি বলবেন বলেন?”
“তোমাদের বাড়িতে ছাদ আছে?”
‘হ্যা আছে।”
“একটু ছাদে যাও তো!”
“যদি না যাই!”
“তোমার কাছে বেশি কিছু চেয়েছি নাকি?”
“যাবো না!”
“আমার কাজে বাধা না দিলে তো তোমার শান্তি হয় না নিষ্ঠুর মেয়ে।”
” কয়েকদিনের পরিচয়ে একটা মেয়েকে অবলীলায় নিষ্ঠুর বলতে আপনার একটুও বাঁধছে না?”
“কই না তো! বরং তোমাকে নিষ্ঠুর মেয়ে বলে আলাদা প্রশান্তি পাচ্ছি। কিন্তু কেন পাচ্ছি জানি না?”
“ঐ যে শুরু হয়ে গেল জানি না।”
“না জানলে বলবো কিভাবে?”
“আর কিছু বলবেন?”
“ছাদে যাও!”
‘যাবো না তো বললাম!”
‘আজ অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে তোমাকে দেখাতে চাইলাম কিন্তু তুমি দেখলে না।”
“আপনি এখন কোথায়?”
‘আমি তো ছাদেই দাঁড়িয়ে আছি। হুট করে চাঁদের দিকে নজর গেল তাই তোমাকে বললাম। কিন্তু তুমি তো আমার কথা শুনলেই না।”
‘আপনার মনে হয়না একটা মেয়েকে রাত করে ফোন দিয়ে গল্প করছেন। আবার ছাদে যেতে বলছেন। শুধুমাত্র চাঁদ দেখানোর জন্য। এটা অনুচিত হচ্ছে। এটা আপনার মনে হচ্ছে না। আপনি একটু বেশিই ফ্রিভাবে কথা বলছেন না আমার সাথে? যা একটা প্রাপ্ত বয়সের ছেলে ও মেয়ের করা উচিৎ নয়।
ধূসর হুট করেই অবাক হয়ে গেল সাথে একটু খারাপ ও লাগলো। সত্যিই তাই এটা তার উচিত হচ্ছে না। কিন্তু হুট করেই ধূসর মনে মনে ভাবলো আর জেদ চেপে বসলো ওর সাথে আর কথা বলবে না। যা বলার কাল সামনাসামনি বলবে। তবে কিছুদিন পর একদম পুরো অধিকার নিয়ে এর জবাব দেবে ও কি উচিত আর উচিত নয়। ওকে সব তাড়াতাড়ি করতে হবে এবং নিষ্ঠুর মেয়েটাকে নিজের সাথে বেঁধে ফেলবে বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো। এদিকে মেঘ বোধহয় ধূসরের অবস্থা বুঝতে পারলো যাতে সব তাড়াতাড়ি করে তাই তো মেঘ ওকে এগুলো বলল। মেঘ হাসলো আর বলল,,
“কি হলো! কিছু বলছেন না যে?”
“সরি হয়তো আজ একটু বেশিই অধিকার দেখিয়ে দিলাম। যাই হোক কাল একবার দেখা করতে পারবেন সেই জায়গায়। কিছু কথা আছে আপনার সাথে।
‘সরি হবে না আমি দশদিনের মতো বিজি থাকবো।সময় হবে না কোনভাবেই।
“আচ্ছা তাহলে দশদিন পরই বলবো আপনাকে।”
“আচ্ছা! আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ!”
বলে ধূসর ফোনটা কানে থেকে নামিয়ে বলল,,
“তুমি যে নিষ্ঠুর সেটা এখনো প্রমান করলে। যেখানে আমি একটা দিন তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারছি না। সেখানে দশদিন তবে আমিও কম যাই না মেয়ে। তুমি ইনডিরেক্টলি আমার অধিকার নিয়ে কথা বললে তো। দেখিও আমার অধিকার কতোটা সেটা তোমায় সঠিক সময় দেখিয়ে দেব। এই ধূসর এহসান শুভ্র কি জিনিস তুমি জানো না মেয়ে। নিষ্ঠুর মেয়ে একটা আমার এত সুন্দর একটা মুহূর্ত কিভাবে নষ্ট করে দিল। কি সুন্দর তাকে নিয়ে চন্দ্রবিলাস করতে চাইলাম অথচ তাকে দেখো। এই সব কিছুর হিসাব রাখলাম। বিয়ের পর পই পই করে হিসাব নেব তোমার নিষ্ঠুর মেয়ে। তখন দেখবো আমার ভালোবাসায় নিষ্ঠুরতা কিভাবে দেখাও তুমি।
এদিকে মেঘ ধূসরের কথা শুনে হাসছে। সে জানতো ধূসর ফোন না দেখেই নিজের সাথে নিজে কথা বলবে। তাই তো ফোনটা না কেটে শুনছিল মেঘ হেঁসে ফোনটা কেটে দিল আর বলল,,
“কাল কি বলবেন আমি জানি ধূসর। তবে কি বলুন তো এতদিন আমাকে যে বিরহের আগুনে পুড়িয়েছেন আপনিও একটু পরুন আমাকে একা রেখে আমার হাত ছেড়ে দিয়েছিলেন । যদিও আপনার অগোচরে তাতে কি হয়েছে পুড়িয়েছেন তো। এটুকু যদি নিষ্ঠুর না হই তাহলে আপনার নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধি দেওয়া টা কি করে স্বার্থক হবে।
তারপর মেঘ লিলিকে তুলে একটা চুমু দিল আর বলল,,
“তোর বাবা এমন কেন বলতো? পাগল ডক্টর একটা। আমায় নিষ্ঠুর মেয়ে বলে, অথচ মূলত নিষ্ঠুর তো সেই ধূসর এহসান শুভ্র। এই নিষ্ঠুর মেয়েটার নিষ্ঠুর পুরুষ।”
_______________
ফজরের আজান শুনেই ধূসর জেগে গেল। ওয়াশরুম থেকে ওযু করে টুপি নিয়ে বেরিয়ে পরলো মসজিদের উদ্দেশ্যে। জামাতের মাধ্যমে নামাজ শেষে সবার জন্য এবং নিজের জন্য দোয়া করলো যাতে, সব ভালোই ভালোই হয়ে যায়। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে তাই ধূসর টুপি পকেটে ভরে এদিক ওদিক কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলো। তারপর বাড়ি ফিরে দেখতে পেল সবাই ড্রয়িংরুমে বসে চা খাচ্ছে। ধূসর গিয়ে সোফায় বসলো তখন দিলরুবা খানম ধূসরকে কফি দিয়ে গেল। ধূসর কফি শেষ করে বলল,,
“বাবা মেয়ের বাবার নাম আয়মান চৌধুরী । পেশায় একজন বিজনেস ম্যান। তুমিও তো বিজনেস ম্যান তাহলে তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব তোমার।”
তখন নোলক বলল,,
“ভাইয়া তুমি তো দেখছি 5G স্পিডে চলছো। তা মেয়ে রাজি নাকি ।”
” জানি না? দশদিন পর জানবো।”
তখন দিশান বলল,,
“ভাই একটু লজ্জা রাখ বিয়ে বিয়ে করে পাগল হয়ে যাচ্ছিস। আচ্ছা মেয়েটাকে তো আমাদের ও পছন্দ হতে হবে। তাহলেই না বিয়েটা হবে।”
“কেন তোমাদের পছন্দ করতে হবে কেন? বিয়ে করবো আমি তাহলে আমার পছন্দই শেষ কথা হওয়ার কথা।”
তখন এহসান খান বললেন,,
“সেটা ঠিক আছে তবে কি বলো তো ধূসর, যখন একটা মেয়ের বিয়ে হয় তখন কি মেয়েটা তার স্বামীর সাথেই থাকে, থাকে না তো। মেয়েটাকে তার স্বামীর পরিবারের সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে হয়। তাছাড়া পরিবারের সদস্যদের ও তো মেয়েটাকে সাদরে গ্রহন করতে হবে। এখন মনে করো একটা মেয়ে দেখা হলো পরিবারের সবার পছন্দ হলো। কিন্তু সেই পরিবারের দুজন ব্যক্তির মেয়েটাকে পছন্দ হলো না। মেয়েটার যদি বিয়ে হয়েও যায়। তবুও ঐ মেয়েটা সেই দুজন ব্যক্তির কাছে খারাপ থাকবে কিছু না করেই। কারন মেয়েটাকে তাদের পছন্দ হয় নি আগেই। সবথেকে বড় কথা আমাদের যাদের অপছন্দ তার কোন কাজই আমাদের ভালো লাগে না। এভাবে একটা সময় সেই দুজন ব্যক্তি মেয়েটাকে অপমান করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। না চাইতেও অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মেয়েটা কষ্ট পাবে। এটা ছেলেদের ক্ষেত্রেও হয়।একটা বিয়ে শুধু দুজনকার মধ্যে সম্পর্ক নয় । বরং দুই পরিবারের এবং অনেক গুলো মানুষের সম্পর্কের স্থাপনা হলো বিয়ে। এই জন্যই বিয়ের ব্যাপারে পরিবারের সকলের পছন্দটাকেও প্রাধান্য দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কোন মেয়ে বা ছেলের সাথে কিছু খারাপ না হয়ে যায়।”
~চলবে,,