ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-০৫

0
672

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ ‘আমার বউ’ শুনেই স্থির হয়ে গেছে। এদিকে ওর কফি যে ঠান্ডা হয়ে গেছে সেদিকে খেয়াল নেই। মেঘ অস্ফুট স্বরে বিরবির করে বলতে লাগলো,,

“সব ভুলে গেলেও নিষ্ঠুর মেয়ের প্রতি কি অভিযোগ করা যায় অবলীলায়। কিছু দিনের পরিচয়ে তার সাথে জড়তা ছাড়াই আজব স্বপ্নের কথা বলা যায়। নাকি কথার মাঝেই আমার বউ বলা যায় অবলীলায়। অদ্ভুত আপনার ভালোবাসা ধূসর।

ধূসর আপনি এক অদ্ভুত মানব যার আগমন ঘটেছিল এই ধূসর রাঙা মেঘের জীবনে এক অদ্ভুত লগ্নে। ভালোবাসা দিয়ে রাঙিয়ে তুলেছিল মেঘের রঙহীন জীবন। কিন্তু ধূসর এমনটা আমাদের সাথে কেন হলো? নাকি আমার অতিরিক্ত ভালোবাসা সহ্য হয় না এটাই কারন। ধূসর আপনি তো বলেছিলেন আপনার নিষ্ঠুর মেয়েটা যতোই আপনার ভালোবাসায় নিষ্ঠুরতা দেখাক,আপনি সবসময় নিষ্ঠুর মেয়েটার পাশে থাকবেন আমৃত্যু পর্যন্ত। তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকে ছেড়ে দিলেন কেন?

মেঘ আরো কিছু বলবে তার আগেই কারো ডাকে মেঘের হুশ ফিরল।আয়মান চৌধুরী ডাক দিয়েছেন। মেঘ ওনার দিকে চমকে তাকালো। তখন তিনি বললেন,,

“কি ব্যাপার আম্মা? আপনি তো দেখি একদম স্থির হয়ে বসে কিছু বিরবির করছেন। আর কফি এটা তো বোধহয় ঠান্ডা হয়ে গেছে। আমি ওপর থেকে দেখলাম এক ভাবেই বসে আছেন।”

মেঘ কফি এক চুমুকে শেষ করে মগটা রেখে বলল,,

“আব্বা একটু বসবেন আমার পাশে?”

আয়মান চৌধুরী বসলেন তখন মেঘ বলল,,

“আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি আব্বা?”

আয়মান চৌধুরী বুঝতে পারলেন মেঘের কোন কারনে হয়তো মন খারাপ। তিনি মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। মেঘ তার আব্বার কাঁধে মাথা রাখলো। তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“কি হয়েছে আম্মা মন খারাপ?”

” তুমি খুব নিষ্ঠুর বলা লোকটা যেদিন নিষ্ঠুরতার প্রমান দিয়ে গেল। সেদিনই বুঝেছি দুনিয়া টাই বড় নিষ্ঠুর।”

মেয়ের কথা শুনে আয়মান চৌধুরী একটু অবাক হলেন আর বললেন,,

“ধূসরের কথা মনে পড়ছে আম্মা?”

“জীবনের মোড়ে আমাদের সাথে কত কিছুই না ঘটে। অথচ হাঁসি মুখে নিয়তি মেনে জীবন এগিয়ে যায় সময়ের সাথে।”

আয়মান চৌধুরী কিছু বললেন না চুপ করে রইলেন। মেঘ ও কিছু না বলে তার আব্বার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ রইলো। কে জানে মাথায় কি চলছে। আস্তে আস্তে বাড়ির সকলে নিচে নেমে আসলো। সবার প্রথমে এলেন মায়মুনা চৌধুরী তিনি বাবা মেয়েকে দেখে একটু অবাক তো হয়েছে তবে কিছুই না বলে কিচেনে চলে গেল। বাকিরা অবাক চোখে দেখছে।সবার অস্তিত্ব টের পেয়ে মেঘ আয়মান চৌধুরী কে আস্তে করে বলল,,

“আব্বা অনেকদিন হলো দু’জনে সকালে বের হওয়া হয় না। চলুন আজ দুজনে একটু বাইরে থেকে টং এর চা খেয়ে আসি।”

আয়মান চৌধুরী হেঁসে বললেন,,

“সাথে পাউরুটি!”

“তা আর বলতে!”

মেঘ আর আয়মান চৌধুরী কাউকে কিছু না বলে বাইরে চলে এলেন। মেঘ নামাজ পড়ে ওরনা আর মাথা থেকে নামায় নি। তবুও ভালোভাবে ওরনা দিয়ে মাথা আবৃত করে বের হলো। ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে হুট করে আয়না চৌধুরী বলল,,

“বাবা একটা প্রশ্ন? তুমি তো মেঘকে একটা সময় দেখতেই পারতে না হুট করে কি এমন হলো যে, তাকে পারলে মাথায় করে রাখো?”

মেয়ের কথা শুনে সমশের চৌধুরী হাসলেন আর বললেন,,

“চোখ যখন খুলে যায়, তখন কি মানুষ অন্ধ থাকে!”

সমশের চৌধুরীর এক কথায় সবাই অবাক হলো কিন্তু কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। আবার আয়না চৌধুরী বললেন,,

“কি বললে বুঝলাম না?”

“এটাই আমার উত্তর। পারলে বুঝে নাও। তোমার হাজবেন্ড আসবে কবে দেশে? মুনের বিয়ের তো আর এক সপ্তাহ বাকি। তাছাড়া তোমার ছেলে মেয়ে তারা।”

“দুই তিন দিনের মধ্যে চলে আসবে বাবা?”

“আচ্ছা!”

“শাফিয়ান আর রেজাউল নতুন ডিলের কি হলো?”

তখন রেজাউল আহমেদ বললেন,,

“সবজায়গাতেই কম্পিটিশন প্রচুর। আমাদের সাথে অনেকেই তাদের প্রজেক্ট সাবমিট করেছে ডিলটা পাওয়ার জন্য। দেখি কি হয়? এখনো জানায় নি আজকে বিকেলে মিটিং তখন জানা যাবে।তবে ডিলটা আমাদের জন্য ইম্পোর্টেন্ট।

“ওহ আচ্ছা!”

ওনারা নানা বিষয়ে কথা বলতে লাগলো। এদিকে
বাবা মেয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে টং দোকানের চা পাউরুটি খেল। তারপর বাড়িতে ফিরলো ওরা যে যার মতো নিজের রুমে চলে গেল। সবাই দেখলো কিন্তু কেউ কিছু বললো না। মেঘ লিলিকে নিয়ে নিচে আসলো ব্রেকফাস্ট করার জন্য। আজান গিয়ে লিলির সাথে ভাব জমাতে লাগলো। আজ লিলি ঠিকই আজানের কাছে গেল তা দেখে আজান বলল,

“দেখো মেঘ আপু কাল তুমি ঠিকই বলেছিলে। আজকেই আমার কোলে উঠে পড়েছে।”

তখন লিলি আজানের কোল থেকে নেমে শায়লার মেয়ের কাছে গেল। তা দেখে আজান বলল,,

“মেঘ আপু কেসটা কি হলো?”

মেঘ হেসে বলল,,

“লিলির বাচ্চা খুব পছন্দ তাই পিচ্চির কাছে গেল।”

তখন শায়লা বলল,,

“তোর মতো তোর বিলাই ও ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার।”

“একদম আমার লিলিকে বিলাই বলবে না ওর নাম আছে ওর নাম লিলি!”

“আরে বাবা রেগে যাচ্ছিস কেন? আমি এমনি বলেছি!”

“এরপর থেকে বলবা না। ওকে বিলাই বলা একজনের খুব অপছন্দ তাই বলবা না ঠিক আছে।”

“আচ্ছা আমার আফা আর বলবো না তোর লিলিকে বিলাই!বাই দা ওয়ে কার অপছন্দ?

“আমার মেঘ রাঙা ধূসর গোধূলির! যাই হোক লিলি আয় আমার কাছে ।”

লিলি দৌড়ে মেঘের কাছে গেল। কিন্তু মেঘের কথার মানে আয়মান চৌধুরী ছাড়া কেউ বুঝতে পারলো না।মেঘ লিলিকে কোলে নিয়ে হাত বুলাতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর খেয়ে দেয়ে নিজেদের রুমে চলে গেল। ও রুমে গিয়ে দেখলো মুন বসে আছে তা দেখে মেঘ বলল,

“আরে আপু তুমি এখানে?”

“মনে হলো আমার ছোট্ট পুতুলটার সাথে একটু সময় দিই। তাই এলাম ।”

“ওহ আচ্ছা!”

“তুই অনেক বদলে গেছিস মেঘ? আগে তো তাও একটু কথা বলতিস। এখন তো তাও বলিস না। বাবার ঐ ঘটনার পর কি আমাকে আর মাকে ঘৃনা করিস।”

“তোমার কথা শুনে আমার একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হলো, সেটা হলো তুমি ছোটবেলায় আমাকে খুব আদর করতে। ছোট বেলার ঐ ঘটনার পর কি তুমি আমায় ঘৃনা করতে?” মনে করো তোমার উত্তরের মতোই আমার উত্তর কিছু টা হবে।

কথাটা শুনে মুনের চোখ ছলছল করে উঠলো সাথে মাথাও নিচু করে ফেললো। তখন মেঘ বলল,,

“কি হলো বলো না? অবশ্য বলবে কিভাবে ঘৃনাই তো করতে। একটা ছোট্ট বাচ্চাকে যখন হুট অবহেলা করতে তখন মেয়েটা কিছুই বুঝতো না। খালি বলতো মুন আপু আমায় আর ভালোবাসে না। কিন্তু বুঝতে পারতো না তখন মেয়েটাকে সবাই ঘৃনা করতো। আর তার মা কেমন মা যার শুধু প্রয়োজনের জন্য তার কাজ করা হতো। খাবার দেওয়া, জামা পড়িয়ে দেওয়া এগুলোই। আর কি কখনো ভালোবাসা দিয়েছে সে? তবুও আমি কথা বলতাম কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে সব বুঝতে পারলাম। তবুও সব নিয়ে ভালো ছিলাম। কিন্তু ছয় বছর আগে তোমরা আব্বার সাথে কি করেছিলে ওটা। আমার কিছুতেই সহ্য হয় নি সেটা। না তোমাদের ওপর ঘৃনা আসে নি। তবে তোমাদের সাথে কথা বলার ইচ্ছে মরে গিয়েছে।”

এটুকু বলেই মেঘ থামলো মুন কাঁদছে তা দেখে কিছুক্ষণ থেমে বলল,,

“একটা কথা আমি কোনদিন কাউকে বলি নি। সেটা হলো তার ঐ অবস্থার জন্য আমি কখনোই দায়ী ছিলাম না। ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল। জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে সেদিন ঐ ঘটনায় আমি মারাও যেতে পারতাম।সেটা তোমরা কেউ ভাবো নি। দোষারোপ করে গেছো আমাকে। তোমরা কিভাবে পারলে ঐ ছোট্ট মেয়েটার ওপর এত বড় একটা অভিযোগ করতে। ছোট্ট মেয়েটা কি বুঝতো বলো তো। যার জন্য তোমরা তার জীবনটাকে ভালোবাসাহীন অবহেলাময় একটা জীবনে প্রবেশ করালে। তার জীবনের কিছু ঘটনা যা সে কখনোই করেনি কিন্তু তাও তোমরা অভিযোগ দিয়েছো অবলীলায়। সেই মেয়ের কাছ থেকে তোমরা কি আশা করো যে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় সব। এটাই তো তোমার মায়ের কথা তাই না। আজ থেকে আট বছর আগের ঘটনায় ও আমি দায়ী ছিলাম না। তবুও সবাই আমাকেই দোষী করেছো। তোমরা কি পারতে না আমার আব্বার মতো আমার হাত ধরতে। আর ছয় বছর আগে কি আব্বাকে বিশ্বাস করে আব্বার হাত ধরতে পারতে না। তিনি তো তোমার বাবা ছিল।

মুন উঠে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো আর কাঁদতে কাঁদতে বলল,,

“আমায় মাফ করে দে মেঘ আমি তো কিছু বুঝিনি ছোট বেলায় ঐ ঘটনা একটা ট্রমার মতো ছিল। আমারই বয়স কত ছিল বল। ইভেন বাড়ির সবাই সেই ঘটনার পর থেকে চুপচাপ হয়ে গেছিল। সবাই তোকে দোষী বলছিল তাই আমিও ভেবেছিলাম সত্যি তুই দোষী।”

মেঘের চোখ স্থির ও মুনকে ধরলো না শুধু বলল,,

“তুমিও বিশ্বাস করে নিলে ঐ ছোট্ট বাচ্চা ওমন করতে পারে । শুধু পুতুল খেলার ছলে বলেছিল আমি সব শেষ করে দেবো। চলে যাও মুন আপু আমার রুম থেকে আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও।

মেঘ মুনকে ছাড়িয়ে নিল আর রুমের বাইরে রেখে দরজা আটকিয়ে দিল। কিন্তু মেঘ এখন নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। মেঘ মুখটাকে কঠোর করে বলল,,

“যাদের জন্য আমার পরিবার এর থেকে অবহেলা পেয়েছি তাদের কাউকে ছাড়বো না আমি। কড়ায় গন্ডায় সব বুঝে নিব। আমার জীবন তো অবহেলাময় করেছোই আবার আমার আব্বার দিকে হাত বাড়িয়েছিলে এর জন্য তোমাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে।”

বলেই কাউকে ফোন দিল। মেঘ রেডি হয়ে বের হলো বাড়িতে ভালো লাগছে না। আয়মান চৌধুরী অফিসের জন্য বের হচ্ছিল মেঘকে রেডি দেখে মেঘকে নিয়ে নিচে আসলো। তখন আজান বলল,,

“মেঘ আপু আমায় একটু কলেজে ড্রপ করে দেবে?”

“হুম চল । জায়মা আপু আর শায়লা আপু লিলিকে একটু দেখো আমার আসতে দেরি হবে কিছু কাজ আছে।”

মেঘ আজান আর আয়মান চৌধুরী বের হলো ওনারা আলাদা আলাদা গাড়িতে যাবে। মেঘ ওর আব্বাকে জরিয়ে ধরে বলল,,

“বেস্ট অফ লাক আব্বা। টেনশন করবেন না তকদিরে যা আছে তাই হবে।”

“হুম আম্মা!”

তিনি মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন। আজান আর মেঘ গাড়িতে উঠলো। মেঘ গাড়ি স্টার্ট করলো আজান কে নামিয়ে দিয়ে অন্য রাস্তায় গেল। হুট করে একটা মেয়েকে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও মেঘ গাড়ি থামালো না। তা দেখে মেয়েটা বোধহয় ভয় পেল তবুও ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। মেঘ মেয়েটার ঠিক আধ হাত সামনে গাড়ি থামালো তা দেখে মেয়েটা চিৎকার দিয়ে বলল,,

‘হ্যা হ্যা একদম উঠিয়ে দে না আমার ওপর দিয়ে, এটা তো তোর বাপের রাস্তা। একজন দাঁড়িয়ে আছে চোখে দেখতে পাস না। আরেকটু হলেই এক্সিডেন্ট হতো। যারা গাড়ি চালায় তারা নিজেদের কি মনে করে কে জানে?

মেঘ গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটার কাছে গিয়ে বলল,,

‘আমার বাপের রাস্তা না হলো আপনার বাপের রাস্তা নাকি‌। এভাবে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে কে? এই আপনাদের মতো লোকদের জন্য, যারা গাড়ি চালায় তাদের দোষ হয়। এখন রাস্তা থেকে সরুন আমার তাড়া আছে।”

মেয়েটা মেঘের মাথায় টুকা মেরে বলল,,,

“তুই দশ মিনিট লেট এর জন্য এটা?”

“ঐ মা একদম আমার আম্মুকে মারবে না!”

মেঘ পাশে ঘুরে দেখলো একটা পাঁচ বছরের বাচ্চা স্কুল ড্রেস পরে আর ব্যাগ নিয়ে ওদের দিকে আসছে। তা দেখে মেয়েটা বলল,,

“ঐ যে এসে গেছে তোর চামচা! মায়ের থেকে মায়ের বান্ধবীর দরদ বেশি।”

“ঐ নীলি একদম আমার নীলবাবু কে কিছু বলবি না নাহলে মুখ ভেঙে দেব।”

“হ ভাই সব তো তোরাই করবি। আমি খালি দেখমু।”

এই বলেই মেঘ ছেলেটাকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম নীলবাবু! কেমন আছো?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

তখন নীলি নামক মেয়েটা বলল,,

“আমি কেমন আছি সেটাও জিজ্ঞেস করা হোক!

এ কথা শুনে মেঘ হেঁসে বলল,,

“আমি তো দেখতেই পাচ্ছি তুই কেমন আছিস আবার জিজ্ঞেস করতে হবে নাকি।”

‘তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিস না মেঘ নিষ্ঠুর একটা!”

“আরে ভাই রাগ করছিস কেন? এখন তোর দেরি হচ্ছে না।”

“তোর জন্য দেরি হলো। তুই ফোন করে বললি আমাদের ড্রপ করবি। নাহলে সোহেলের সাথে যেতে পারতাম।”

“মনে হলো নীলবাবুর সাথে একটু দেখা করি তাই!”

“আর আমি তোর কেউ না?”

ওরা গাড়িতে বসে পড়লো নীল একা পেছনে আর মেঘ আর নীলি সামনে। নীলি মুখ ভার করে আছে কারন মেঘ প্রশ্নের উত্তর দেয় নি। তা দেখে মেঘ হেঁসে বলল,,

‘মিসেস নীলিমা খান আপনি হলেন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সাথে আমার ননদ। আরেকটা পরিচয় যদি বলি তাহলে নীলবাবু হলো রাজকুমার আর আপনি হলেন রানী।”

এটা শুনে নীলিমা হাসলো। আর বলল,,,

“তো মাই ডিয়ার ভাবি এখন গাড়ি স্টার্ট দিন নাহলে আমাদের আর স্কুলে যেতে হবে না।”

মেঘ নীলকে দুটো চকলেট দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল, গাড়ি চলছে। হুট করে মেঘ বলল,,

“ও বাড়িতে যাবি কবে? মা তোর জন্য অপেক্ষা করে তো?”

“ভাইয়ার ঐ ঘটনার পর ও বাড়িতে গিয়ে ভালো লাগে না তোকে ছাড়া। তাছাড়া ভাইয়াও কেমন যেন হয়ে গেছে আগের মতো আর কিছুই নেই।”

“ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“মেঘ তুই কেমন আছিস? ঠিক আছিস তো?”

মেঘ সামনের দিকে তাকিয়েই বলল,,

“আমার আবার কি হবে ঠিক আছি। জীবন তো চলছে থেমে নেই।”

“ভাইয়াকে খুব মিস করিস?”

তখন মেঘ গাড়ি থামিয়ে বলল,,

“তোর গন্তব্য এসে গেছে নেমে পড়। পরে আবার কথা হবে।আর নীলবাবু একদম দুষ্টুমি করবে না। গুড বয় হয়ে থাকবে, আর হ্যা মায়ের সাথে একদম ঝগড়া করবে না।”

“একদম করবো না আম্মু।”

নীলি আর কিছু বললো না নীলকে নিয়ে নেমে পড়লো। নীল ও মেঘের কথায় সায় জানিয়ে বিদায় দিয়ে চলে গেল। মেঘ ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘তোর ভাইয়াকে খুব মিস করি আমি নীলি।”

_______________

এদিকে,,

ধূসরদের পরিবারের সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে। হুট করে ধূসর বলল,,

‘বাবা আমার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তোমাদের কি চোখে পরছে না।”

এ কথা শুনে সকলে একপ্রকার শকড। নোলকের তো খাবারটায় গলায় আটকে গেল। নোলক তাড়াতাড়ি করে পানি খেল। তখন ধূসরের বড় ভাই দিশান বলল,,

“ভাই একটু রয়ে সয়ে কথা বল । একটু লজ্জা রাখ!”

“এখানে লজ্জার কি হলো ভাইয়া। আমি তো বিয়ের কথা বললাম।”

দিলরুবা খানম রোহিনী আর নোলক জানে তাই ওরা কিছু বলছে না। দিলরুবা খানম জানতো তার ছেলে বিয়ে নিয়ে বাবার সাথে কথা বলবে কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে নি। ধূসরের বাবা এহসান খান বললেন,,

“ধূসর তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো বলো?”

‘ওকে তাহলে সরাসরিই বলি। আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি। তাকে বিয়ে করতে চাইছি তুমি তার বাবার সাথে কথা বলো।”

এ কথা শুনে এহসান খান স্থির রইলেন। কারন কালকের ঘটনা দিলরুবা খানম ওনাকে বলেছে তাই উনি বেশ নিশ্চিন্ত। দিশানকেও রোহিনী বলেছে তাই কেউ কোন রিয়াক্ট করলো না। সব স্বাভাবিক রেখেই এহসান খান বললেন,,

“তা মেয়ের নাম আর মেয়ের বাবার নাম কি? আর মেয়ের বাবা কি করে?

“মেয়ের নাম আর কি করে, বলতে পারবো। কিন্তু মেয়ের বাবার কথা বলতে পারছি না। মেয়ের নাম কাশফিয়া আয়মান পেশায় একজন লয়ার। আমি যদি ভুল না হই তাহলে আমার মনে হয় মিস কাশফিয়ার বাবার নাম আয়মান।”

‘বাহ শুধুমাত্র মেয়ের পরিচয় জেনেই, মেয়ের বাবার সাথে কথা বলতে চাইছো। আরে মেয়ের বাবার সাথে কথা বলতে গেলে মেয়ের বাবাকেও তো চিনতে হবে তাই না। সবথেকে বড় কথা মেয়েটা তোমাকে বিয়ে করতে চায় কি না? সেটাও তো তোমাকে জানতে হবে।

এবার ধূসরের মাথায় এলো তাও ঠিক। তখন ধূসর বলল,,

“তুমি ঠিক বলেছো আগে মেয়েটা আমাকে বিয়ে করতে চায় কি না জানতে হবে। আর বাবার পরিচয় ও জানতে হবে। ওকে বাবা আমি সব জেনে তারপর আবার তোমাকে জানাচ্ছি ঠিক আছে।”

তখন দিশান বলল,,

“আমার ভাই বিয়ে পাগল কবে থেকে হলো। রোহিনী দেখছো তোমার ছোট ভাইয়াকে। আমার মেয়ে গুলো ওর পাগল আমার মেয়েগুলোকে একটু ওর থেকে দূরে রেখো। নাহলে এরাও কবে বলে বসে। বাবা আমাদের ছেলে পছন্দ হয়ে গেছে তুমি তার বাবার সাথে কথা বলো।”

দিশানের কথা শুনে সকলে হাসলো তখন রিম বলল,,

‘বাবা তুমি কি বললে আমি তো কিছুই বুঝলাম না।”

“থাক মা তোমার বুঝতে হবে না।”

তখন দিলরুবা খানম বলল,,

‘অনেক হয়েছে এখন চুপ চাপ খাও।”

তখন ধূসর বলল,,

‘ মা নীলি অনেকদিন হলো আমাদের বাড়িতে আসে না। ওকে আসতে বলো না এখন হাসপাতালের চাপ কম ভাইবোনেরা একটু আড্ডা দেওয়া যাবে।”

“আচ্ছা বলে দেব।”

তখন রিমঝিম বলে উঠলো,,

“দাদি তাহলে ছোট আম্মুকেও বলো না আসতে!”

এ কথা শুনে সকলে একেঅপরের দিকে তাকালো তখন ধূসর বলল,,

“ছোট আম্মু কে?”

রিমঝিম কিছু বলবে তার আগে রোহিনী বলল,,

“তেমন কিছু না ছোট ভাইয়া আমার এক বান্ধবী+বোনকে ওরা ছোট আম্মু বলে।”

‘ওহ আচ্ছা তাহলে তাকেও বলো আসতে রিমঝিম এর ভালো লাগবে। আমার খাওয়া শেষ আমি উঠছি।”

ধূসর ওপরে চলে গেল তখন রোহিনী বলল,,

“রিমঝিম তোমাদের কতোবার বলেছি ছোট ভাইয়ার সামনে ছোট আম্মু বলবে না।”

‘আহ বকছো কেন ওরা কি এতকিছু বুঝে নাকি।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

“আচ্ছা সেসব বাদ দাও রিমঝিম তোমার ছোট আম্মুর সাথে আমাদের আবার খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে। আর আমাদের বাড়িতে আসবে।

‘সত্যি!”

“তিন সত্যি!”

‘ইয়েইইইইইইই”

______________________

সন্ধ্যার পর মেঘ বাড়িতে ফিরে দেখলো সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে । আয়মান চৌধুরী এখনো ফেরেন নি। কিন্তু শাফিয়ান চৌধুরী আর রেজাউল আহমেদ আর সমশের চৌধুরী মুখ কালো করে বসে আছে। তা দেখে মেঘ বলল,,

“কি হয়েছে দাদুভাই?”

তখন সমশের চৌধুরী বললেন,,

“আজকে একটা মিটিং ছিল একটা ডিলের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত আমরা ডিলটা পাইনি। জানিনা কিভাবে প্রজেক্ট তৈরি করেছে?

তখন শাফিয়ান চৌধুরী বললেন,,

‘বাবা তুমি এমন করে কেন বলছো? আমরা চেষ্টা করেছিলাম তো।”

“তোমরা চেষ্টা করেছিলে কিন্তু বেস্ট টা দাও নি সেটা আমি হরফ করে বলতে পারি। একটা প্রজেক্ট নিজের বেস্ট দিয়ে তৈরি করতে কতটা শ্রম লাগে সেটা আমি জানি। খাওয়া ঘুম সময়মতো হয় না অথচ এ কয়েকদিনে আমি তোমাদের মধ্যে সেরকম কিছুই দেখলাম না। উল্টো বাড়িতেই বেশি দেখলাম। একটা কথা মনে রেখো,,
‘আল্লাহ কাউকে নেয়ামত দিলে যতদিন ইচ্ছে ভোগ করতে দেন। কিন্তু যখন সে অকৃতজ্ঞ হয়, তিনি সেই নেয়ামতকে আযাবে পাল্টে দেন!

— হাসান বাসরি (রহ.)
সূত্র: কিতাবুশ শুক্‌র, ইবনু আবিদ দুনইয়া, ১৭

এখনো সময় আছে বিজনেসের হাল শক্ত করে ধরো। নাহলে কখন ডুবে যাবে বলা যায় না। তখন উঠানোর মতো কেউ থাকবে কি না সন্দেহ।

মেঘ সহ সবাই মন দিয়ে শুনলো তখনি আয়ামান চৌধুরী কে দেখা গেল হাঁসি মুখে বাড়িতে ঢুকতে। মেঘ তার আব্বার চেহারা দেখেই বুঝতে পারলো তার মনে কি চলছে। তাই সে চলে যেতে নিল তখন আয়মান চৌধুরী মেঘকে ডাকলেন,,

“মেঘ আম্মা!”

মেঘ ঘুরে তাকালো তখন আয়মান চৌধুরী মেঘের কাছে এসে কপালে চুমু দিয়ে বলল,,

‘আপনার আব্বা জিতে গেছে আপনার ঐ আইডিয়ার জন্য।”

“আমি কিছুই করি নি আব্বা আপনিই সব করেছেন রাত জেগে না খেয়ে। আপনার কাজের ফলাফল আপনি পেয়েছেন। হ্যা যদিও ঐ একটুখানি আইডিয়া আমি দিয়েছিলাম। তবে কাজটা তো আপনি করেছেন আমি নই। আচ্ছা আমি ওপরে যাই ফ্রেশ হবো।”

‘ঠিক আছে আম্মা!

‘আমি যদি ভুল না হই তাহলে আপনি আর কাকাই রা একই জায়গায় আপনাদের প্রজেক্ট সাবমিট করেছিলেন?”

“হুম কিন্তু ওরা আমাকে খেয়াল করে নি। তারওপর মাস্ক পড়েছিলাম।

‘এই একটা কারনেই ওনারা পেছনে সবসময়। চোখ কান খোলা রেখে সামনে আগাতে হয় কিন্তু ওনারা। যাই হোক! তবে এখন কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। রাসুল (সা) বলেছেন,

কিছু খুশির সংবাদ গোপন রাখতে হয়।কেননা প্রত্যেক সংবাদ শ্রবনকারী বন্ধু হয় না।”
( তারবানি হাদিস)

~চলবে,,।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে