ধূসর কাবিন রঙিন প্রণয়
পর্ব ১৭
“গাড়িতে গান শোনার ব্যবস্থা নেই?”
“গান শুনবে?”
“জ্বি।”
মাহিম প্লে লিস্ট অন করে, “Thousand miles to go before i sleep”. মাহিমের প্রিয় গানগুলোর একটি।
“বাংলা বা হিন্দি গান নেই?”
“আছে। তবে এই প্লে লিস্টটা আমার আর চন্দ্রিমার পছন্দে সাজানো। আমরা দু’জনই এই গানগুলো শুনতে পছন্দ করি। তুমি ইংরেজি বুঝ না? মানে বুঝলে গানগুলো তোমারও ভালো লাগবে। চমৎকার লিরিক।”
“ইংরেজি পড়তে পারি। কিন্তু বলতে গেলে আটকে যাই। গান শুনলেও কী বলে বুঝি না। এত তাড়াতাড়ি বলে। তাই গানের মজা পাই না।”
“টিভিতে ইংলিশ মুভি দেখবে, খবর দেখবে। নিচে সাবটাইটেল ওঠে। দেখার সাথে সাথে সাবটাইটেল পড়লে একসময় কী বলছে সেটার উচ্চারণ বুঝতে শুরু করবে। সাবটাইটেল দেখার তখন প্রয়োজন হবে না। আর আয়নায় নিজের সাথে নিজে ইংরেজিতে কথা বলবে। আস্তে আস্তে জড়তা কাটবে। চন্দ্রিমা বাসায় এলে ওর সাহায্য নিও। ওর ইংরেজি উচ্চারণ চমৎকার। তোমার উচ্চারণের ভুল ঠিক করে দেবে।”
চন্দ্রিমার নাম উল্লেখে চৈতালীর বিরক্ত লাগে। সব ভালো গুণে চন্দ্রিমাকে মাহিম৷ টেনে আনবেই। যদিও এটাই স্বাভাবিক। তবু চৈতালী মনের বিক্ষিপ্ত ভাবটাকে দূর করতে পারে না।
“আপনার উচ্চারণ কেমন?”
“ভালোই তো যতটুকু জানি।”
“তাহলে আপনি শেখান। আচ্ছা, শোনেন আজ থেকেই শেখান একটু একটু। চন্দ্রিমা আপার সাথে তো ওনার বাবা মা আছেন। আপনি না গেলেও চলবে। ওনারাই ডাক্তার দেখাতে পারবেন। মেয়েতো ওনাদের। ওনাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে।”
মাহিম ঝট করে চৈতালীর দিকে তাকায়। ওর মুখ দেখে মন পড়া সহজ। কম বয়সী মেয়েদের আবেগের জন্য তাদের অভিমান, হিংসা সহজেই তাদের মুখেই ফুটে ওঠে।
“চৈতালী বয়সের তুলনায় তুমি যথেষ্ট ম্যাচুয়র। তারপরও কিছু বিষয়ে না চাইলেও হয়তো নিজের তুলনায় নিয়ে আসাটাই স্বাভাবিক। এই মুহুর্তে তোমার আবদারটা ছেলেমানুষী না বরং ছোট মনেরই পরিচয় দিচ্ছে। তোমার ইংরেজি শেখাটা নিশ্চয়ই চন্দ্রিমার ডাক্তার দেখানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ না। শোন আমার বোন মিন্নীর একবার খুব শখ হলো বিড়াল পালবে। আম্মু রাজি না। আমিও যে বিড়াল পছন্দ করি তা না। বিড়াল বড্ড গা ঘেঁষা। আমার কুকুর পছন্দ। কিন্তু মিন্নীর জিদ আর অনুরোধের কাছে হার মেনে আম্মুকে রাজি করিয়ে বিড়াল আনা হয়। শর্ত হয় সে আম্মু আর আমার রুমে যাবে না। তারপরও যখন তখন বিড়ালকে নিজের কম্পিউটার টেবিল, বেডে চলে আসাকে মেনে নিয়েছিলাম কারণ সে অবলা প্রাণী। এখন মিন্নী যখন বাইরে পড়তে গেল, তার শখের বিড়ালকে সাথে নিতে পারলো না। তাকে আমরা ফেলেও দিতে পারলাম না তারও একটাই কারণ সে সে অবলা প্রাণী। তার প্রতি একটা মায়া কাজ করে। কিন্তু বিড়ালের জায়গা হয়েছে আউট হাউজে, ঘরে নয়। তুমিও আমার জীবনে তেমনই অবস্থানে আছ। আমি তোমাকে ফেলে দিতে পারবো না কারণ তুমি মানুষ। শখের বশে নয়, প্রয়োজনেই তোমাকে আমার জীবনে আনা হয়েছে, আমার ঘরে তোমার জায়গা হয়েছে। কিন্তু হৃদয়ে নয়। একটা কোরবানির পশুও দুইদিন আমাদের আঙিনায় থাকলে মায়া পড়ে যায়। তাই নিজেকে কখনোই চন্দ্রিমার বরাবর ভাববে না।”
চৈতালীকে বাড়ির গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যায় মাহিম। চৈতালী ঠোঁট কামড়ে কান্না গিলে নেয়। নিজের বাচ্চামির জন্য মাহিমকে রাগিয়ে দিয়ে ঠিক করেনি বুঝতে পারছে। একটু একটু করে মাহিম সহজ হচ্ছিল ওর সাথে। বারবার নিজেকে চন্দ্রিমার সাথে মেলাতে গিয়ে যে বরং দূরত্বই বাড়বে এই বিষয়টা চৈতালী বুঝেও বুঝতে পারছে না। না চাইলেও প্রতিযোগিতার ভাব, হিংসা ওর আচরণে চলেই আসে।
*****
“মাহিম, থ্যাংক ইউ।”
“কেন?”
“আমার মনে হয়েছিল তুমি আসবে না। কাজের বাহানায় হয়তো আজ আমার পাশে তুমি থাকবে না। সত্যি বলছি তোমাকে দেখলে আমি এমনিতেই সুস্থ অনুভব করি। মুঠো মুঠো ঔষধ খেয়েও যেখানে কাজ হয় না।”
“তোমার চেয়ে কাজ আমার কাছে কখনোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।”
“লাভ ইউ।”
“লাভ ইউ টু।”
আজ চন্দ্রিমাকে নিয়ে মাহিম, আর চন্দ্রিমার বাবা মা যাচ্ছেন বাংলাদেশের একজন সনামধন্য লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জনের কাছে। লিভার কেয়ার হাসপাতালের সার্জারিগুলো ইতোমধ্যে দেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আশি ভাগ সফলতার হার রয়েছে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারিতে। যকৃতের জটিল সব রোগ নিয়ে আলাদা করে গবেষণা হয় এখানে। যকৃতের চিকিৎসা ব্যয়বহুল চিকিৎসাগুলোর একটি। তারউপর এখানে খরচটা তুলনামূলক অন্য জায়গার চেয়ে বেশি। তাই নিতান্ত সচ্ছল পরিবারেরই আগমন ঘটে হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন হীরক চন্দ্র রায়ের চেম্বারে।
হীরক চন্দ্র রায় চন্দ্রিমার রিপোর্টগুলো শুরু থেকে দেখেন। চন্দ্রিমার লিভার সিরোসিসের কারণ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ। এই ভাইরাস সাইলেন্ট ভাবে সময় নিয়ে যকৃতকে একটু একটু করে নষ্ট করেছে। কোন লক্ষণ প্রকাশ করেনি। যখন লক্ষণ প্রকাশ করেছে তখন কিছু বোঝার আগেই দেখা গেল চন্দ্রিমার যকৃতের অনেকখানি অংশ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। অচিরেই লিভার ট্রান্সপ্লান্ট না করা হলে যা প্রাণঘাতী রূপ নেবে।
“ডোনার রেডি আছে?”
চন্দ্রিমা মাহিমের দিকে তাকায়। মিস্টার এন্ড মিসেস আবেদিন চেম্বারের বাইরে অপেক্ষা করছে। চেম্বারের ভেতর চন্দ্রিমাকে নিয়ে মাহিম প্রবেশ করেছে।
“জ্বি মোটামুটি।”
“ডোনার হতে পারবে কিনা, তা জানার জন্য বেশকিছু টেস্ট দরকার।”
“কিছু টেস্ট করানো আছে। চন্দ্রিমা ব্যাগ খুলে চৈতালীর রিপোর্টগুলো বের করে দেয়।”
হীরক চন্দ্র রায় টেস্টগুলো উল্টেপাল্টে দেখে সন্তুষ্টির চিহ্ন আঁকেন মুখে।
“আর কিছু ফাইনাল টেস্ট লাগবে। ডোনারকে নিয়ে আসবেন। ডোনারের কিছু ফাইনাল কাউন্সিলিং লাগবে। লিখিত অনুমতি লাগবে। তবে ডোনার সিলেকশন ভালো হয়েছে। আশা করি ভালো একটা রেজাল্ট আমরা পাব।”
“কতদিনের ভেতর ট্রান্সপ্লান্ট করা উচিত? আমরা কিছুদিন পর করতে চাইছিলাম।”
“যত দেরি করবেন, তত সফলতার হার কমতে থাকবে। ভালো হয় কয়েক মাসের ভেতর করে ফেলা। অনেক সময় সিরোসিস ক্যান্সারে রূপ নেয়। তখন ট্রান্সপ্লান্টও কাজে আসে না। মিসেস চন্দ্রিমার কিছু টেস্ট আমি দিচ্ছি। এগুলো যতদ্রুত সম্ভব করে আমাকে দেখান।”
ডাক্তারের চেম্বার থেকে চন্দ্রিমা উজ্জ্বল মুখ নিয়ে বের হলেও মাহিমের চেহারায় রাজ্যের দুশ্চিন্তা।
(চলবে)
ধূসর কাবিন রঙিন প্রণয়
পর্ব১৮
“চন্দ্র, তুমি কি আমার সাথে বাসায় যাবে? না এখানে থাকবে?”
“তোমার সাথে যাব। তোমাকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না।”
মিস্টার আবেদিন এগিয়ে আসেন।
“কিন্তু মামনী ডাক্তার কিছু টেস্ট দিয়েছেন তোমাকে। সেগুলো করে রিপোর্ট পেলে ডাক্তারকে দেখিয়ে গেলে ভালো। আমাদের বাসা থেকে হাসপাতাল কাছে। তোমার বারবার জার্নির ঝক্কিতে না পড়াই ভালো।”
“বাপি ঠিক বলছেন চন্দ্র। বারবার জার্নি না করাই ভালো।”
“তুমি চাও না আমি তোমার সাথে যাই?”
“অবশ্যই চাই। তুমি চাইলে আমি তোমাকে নিয়ে যাব। কিন্তু গাড়িতে লম্বা সময় থাকলে তোমারই শরীর খারাপ লাগে। ভেবে দেখ আজ দেড় ঘন্টা জার্নি করে যাবে, কাল আবার দেড় ঘন্টা জার্নি করে আসবে যাবে। তোমার শরীর খারাপ করবে।”
অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হয় চন্দ্রিমা। মাহিম গাড়িতে ওঠার আগে চন্দ্রিমা ওকে টেনে একপাশে নিয়ে যায়।
“মাহিম একটা প্রশ্ন ছিল।”
“চৈতালীকে নিয়ে?”
“আমাদের নিয়ে। আমাকে নিয়ে। যদি আমি চিকিৎসার পর একদম সুস্থ হয়ে যাই তাহলে আমি একাই কি তোমার জন্য যথেষ্ট নই?”
“অবশ্যই যথেষ্ট চন্দ্রিমা। অসুস্থ তুমিও আমার জন্য যথেষ্ট।”
“আমাদের বাচ্চা না হলেও সমস্যা তো নেই তাই না?”
“কোন সমস্যা নেই।”
“আম্মির যে নাতি নাতনির শখ।”
“আম্মির তো অনেককিছুরই শখ। আমি তুমি সেই শখ পূরণের হাতিয়ার নই। তুমি ভুলে গিয়েছ, এই কথা আমি সেদিনই বলেছিলাম। যেদিন..”
“যেদিন প্রথম গ্রহণ লেগেছিল আমার পূর্ণিমায়।”
“স্যরি, আমি কথা দিয়েছিলাম এই দিনটার কথা কখনও তুলবো না।”
“তুমি তোলোনি। আমিই তো তুললাম। মাহিম তাহলে চৈতালীর প্রয়োজন শুধু আমি সুস্থ হওয়ার জন্য। ওকে সারোগেট মা বানানোর কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের জীবনে ওর কোন অংশই আর চাই না। আমি জানি তুমি নিজের মনের সাথে লড়াই করছো। কিন্তু যতদ্রুত সম্ভব অপারেশন শেষে আমি চৈতালীকে তোমার আমাদের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে চাই।”
“আমিও তোমার সুস্থতা চাই। তাছাড়া আমি নিজের টেস্টও আবারও করাতে। যদি সম্ভব হয়, এবং সাকসেসের চান্স থাকে তবে আমিই তোমাকে আমার লিভার দেব।”
“এই বিষয়ে আমরা আগেই কথা বলেছি। সব শেষেই চৈতালীকে আমাদের জীবনে এনেছি। তোমার পাশে একটা মেয়ের ছায়াও যেখানে মানতে পারি না। সেখানে চৈতালীকে তোমার সাথে ভাগ করেছি। এখন তুমি আবার এসব কেন বলছো? চৈতালীই আমাদের ডোনার হবে। আমরা ইতোমধ্যে ওকে কাবিনের দশ লাখ দিয়েছি। তার বাবা মাকে জায়গা জমি দিয়েছি। ওর লিভারের মূল্য দিয়েই আমরা নিচ্ছি।”
“তাহলে ওকে জানিয়েই নেই। না জানিয়ে নিলে তা চুরিই হবে। এবং ও আদালতে পর্যন্ত যাওয়ার অধিকার রাখে। কারণ আমরা না বলে করে ওর শরীরের অংশ নিলে তা প্রতারণাই হয়।”
“ওকে তুমি চেননি? ও কখনোই রাজি হবে না।”
“আমার মনে হয় হবে। এর জন্য আমাকে ওর বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।”
“বিশ্বাস অর্জন, না ভালোবাসা অর্জন? আমি যে ছিলাম না, তাতে কি তোমাদের মাঝে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা হয়েছে?”
“চন্দ্রিমা, তুমি যদি আমার উপর বিশ্বাসই না রাখ তাহলে আর সবকিছুর কী কোন মানে আছে? প্রতারণা করতে হলে চৈতালীর সাথে করার প্রয়োজন আছে কি? চৈতালী বৈধ স্ত্রী। তার সাথে আমার কেন ধরনের সম্পর্ক প্রতারণা নয়। প্রতারণা করার জন্য আমার বিয়ে করার প্রয়োজন ছিল না। টাকার বিনিময়ে সুন্দরী, স্মার্ট গার্লফ্রেন্ড কাম রক্ষিতা রাখা আমার জন্য কোন বিষয়ই না। বারবার এই কথাগুলো তুলে তুমি যদি আমার ইগোকে হার্ট করো। তবে আমি ভুলে যাব তুমি অসুস্থ। আমার ইমোশনের সুযোগ নিয়ে আমাকে যথেষ্ট প্রেশার দিয়েছ। কিন্তু এসব বিষয়ে আর কোন ফালতু কথা বলবে না। চৈতালীকে এখানে আমি নিয়ে আসবো তখনই যখন ও সব জেনেশুনে স্বেচ্ছায় ডোনার হতে রাজি হবে। আর সারোগেসির বিষয়টা আমারও মত নেই এখন। এসব নিয়ে তোমারও এখন চিন্তা করে শরীর খারাপ করার মানে নেই।”
*****
“হ্যালো, চৈতালী। কেমন আছিস?”
“ভালো আছি। আপনারা ভালো আছেন?”
“আমাদের খোঁজ খবর একবারও নিছস তুই? মানুষ বিয়া হইলে এমনে পর হয়? তোর বাপে কী মনে কষ্টটা না পাইছে। কয় মাইয়ার জন্য কলিজা পোড়ে, আর মাইয়াটা একটু জিগায়ও না।”
“আমার জন্য এত কলিজা পুড়লে একটা ফোনও তো দিল না।”
“ফোন নষ্ট হয়ে গেছে তোর বাপের।”
“আপনার ফোন তো ভালো আছে। আপনিও অবশ্য ফোন দেন নাই।”
“তুই না দিবি।”
“কেন?”
“বাপ মায়ের খোঁজ নিবি না। তারা ভালো আছে না মন্দ।”
“ভালো না থাকার কারণ কি? কাঁচা টাকা হাতে।”
“টাকা আর কয়টা। তোর বাপের কাশি বাড়ছে। ডাক্তারের কাছে গেছিল। এই টেস্ট সেই টেস্ট।”
“বাংলা মদ কম খাইতে বলেন। এখন হাতে টাকা আছে জুয়ার নেশা যত বাড়বে মদের অভ্যাসও তত বাড়বে। মদ খেলে কাশি তো হবেই।”
“আমার কথা কী শুনে? আগে এমন ছিল না। মাঝেমধ্যে টুকটাক খেলতো।”
“আগে হাতে টাকা ছিল না। এখন আছে।
“কী করতাম বল? এই তোদের মুখের দিকে তাকায়ে থাইক্কা মাটি কামড় দিয়ে সংসার করছি।”
“আমি তো আর নাই। শাহিন, শফিক ছেলে মানুষ। ওরা নিজের ব্যবস্থা নিজে করবে। এখন আর মাটি কামড়ানোর কী দরকার।”
“নিজে তো বড়লোক সংসারে বিয়ে কইরা নিজের ব্যবস্থা কইরা নিয়েছিস। এখন এই বয়সে আমারে সংসার ভাঙার বুদ্ধি দেস? তোর বাপকে ছাইড়া দিলে আমারে জায়গা দিবে কে?”
“রেগে যান কেন। কথা শোনেন। যেহেতু আপনি আমাকে বড়লোক ঘরে বিয়ে দিয়ে এত বড় উপকার করেছেন। তাই আমিও আপনাকে একটা বুদ্ধি দিতে চাইছিলাম।”
“কী বুদ্ধি?”
“নানির বাড়ি যান। মামা তো মামলার মারপ্যাঁচ ভালো বুঝেন।”
“তুই কি নারী নির্যাতন মামলা দিতে কইতেছস?”
“আরে নাহ্। মামলা চালানোর টাকা আছে আপনার যে মামলা করবেন?
” তাইলে কী করবো?”
“কাগজ বানাবেন। বাড়ি আর পুকুরের কাগজ। আগে আসল দলিল সরাবেন। তারপর কাগজ বানাবেন মামাকে দিয়ে। আব্বা যেদিন জুয়া খেলে খুশি খুশি মনে বেশি গিলে আসবে সেদিন আস্তে করে কাগজে টিপসই নিয়ে নিবেন। সাইন নিতে পারলে ভালো। না পারলে টিপসই। না হলে এই জুয়ার নেশায় বাড়ি ঘর সব যাবে।”
শিউলি ফোন রেখে চিন্তায় পড়ে যায়। চৈতালীকে ফোন দিয়েছিলেন ইনিয়ে বিনিয়ে বাবার নামে নালিশ করে একটু মায়া জন্মাতে। তাহলে মাঝেমধ্যে বিকাশে কিছু টাকা নিতে পারতেন চৈতালীর কাছ থেকে। শফিক বলেছে চৈতালীর বেশভূষাই পাল্টে গিয়েছে। কলেজে এসেছে গাড়িতে করে। অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ মনে হচ্ছিল চৈতালীকে। নিশ্চয়ই বুঝেশুনেই বুদ্ধি দিচ্ছে।
(চলবে)