ধর্ষিতা_বউ
পার্ট:৯
আয়ান -ওহ্ মাই গড আমিতো ভুলেই গেছিলাম আজ আব্বুর সাথে মেয়ে দেখতে যাবার কথা।আবিদ চৌধুরী আজ আমায় গিলে খাবে । তুমিও তো রেডি হয়ে আছো দেখছি।ভাবী আমি ৫ মিনিটেই রেডি হয়ে আসছি।
সুমি -তাড়াতাড়ি করো। ৫ মিনিট বলে ৫০ মিনিট লাগাবা।
আয়ান মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে, ওকে সুইট হার্ট বলে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
আয়ান ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসতেই আবিদ চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে ঘড়ির দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন কয়টা বাজে দেখেছো? তোমার কাছে সময়ের কোনো মূল্য না থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে আছে।মেয়েদের বাড়ীতে জানিয়েছিলাম ১১ টায় যাবো। এখুনি তো ১০ টা বাজে। আয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো, আব্বু আমার মনে ছিলো না।
আবিদ চৌধুরী -তোমার যে সময়ের জ্ঞানের অভাব আছে সেটা আমার আগেই জানা আছে।
আকাশ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে আব্বু ঠিক আছে ওকে বকতে হবেনা।আমাদের তো দেরী হয়ে যাবে।আমি গাড়ী বের করছি তোমরা আসো।আয়ানও আকাশের পিছন পিছন চলে গেলো।
আদিদ চৌধুরী -সুমি! মেয়ের জন্য যে আংটি টা এনেছি ওইটা নিয়েছো তো?
সুমি -আব্বু আজ সত্যিই আংটি পরিয়ে আসবেন?
আবিদ চৌধুরী -হ্যাঁ আসবো। এখন চলো।
আয়ানরা সবাই প্রাপ্তিদের বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
প্রাপ্তি নাস্তা করতে এসে দেখে অনেক আয়োজন চলছে বাড়ীতে।প্রাপ্তির মামী আর আম্মু কাজে অনেক ব্যস্ত। বড় ঘর থেকে অরণীর জন্য প্রস্তাব আসছে এইটা তো আর হাত ছাড়া করা যায়না।
প্রাপ্তির মামী -আপা! (নিলিমা বেগমকে)আসিফ তো অফিসে চলে গেলো এইদিকে ছেলের বাড়ী থেকেও নাকি লোকজন আসছে ভাই (প্রাপ্তির বাবা)কি পারবে এতো কিছু সামাল দিতে।
নিলিমা বেগম-চিন্তা করিস না।আসিফ বলেছে মিটিং শেষ করেই চলে আসবে।
সিয়াম বার বার অরণীকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে অরণী একবারের জন্যও রিসিভ করছেনা।উল্টো ফোন অফ করে দিয়েছে।সিয়াম মনে মনে ভাবছে ব্যাপার কি ওকে সারপ্রাইজ দিবো বলেই তো বাবা মা কে না বলে ওদের বাড়ীতে পাঠিয়েছিলাম।মা তো বলেছে বিয়ের কথা পাকাপাকি করে আসছে শুধু তারিখটা ফেলবে।ও তো খুশী হয়ে আমাকে ফোন দেওয়া উচিত কিন্তু তানা উল্টো ফোনটাই অফ করে রেখেছে।আচ্ছা ও কি আমাকে বিয়ের দিন সারপ্রাইজ দিবে বলে হয়তো ফোন অফ করে রেখেছে।হয়তো ও বউয়ের সাজেই এক সাথে সামনে আসতে চায়।ঠিক আছে আমিও অপেক্ষা করে রইলাম।তোমাকে একসাথেই দেখবো আর ফোন দিবো না তোমাকে।
প্রাপ্তি হাঁটতে হাঁটতে বাগানের দিকে এলো।ফুল গুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে কিযে ভালো লাগছে তার।তাদের বাড়ীর সামনে যে একটা গাড়ী এসে থামলো সেই দিকে তার কোনো খেয়ালই নেই।
গাড়ী থেকে নেমেই আবিদ চৌধুরী ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়ীর ভিতরে ঢুকলেন।আকাশ আর সুমি কথা বলতে বলতে তারাও চলে গেলো।
আয়ান বাড়ীতে ঢুকতেই প্রাপ্তির দিকে নজর পড়লো।তখন প্রাপ্তি ফুলের দিকে তাকিয়ে নিজে নিজে ফুল গুলোর সাথে কথা বলছে।প্রাপ্তির ধারনা মানুষের থেকে ফুল গুলোই ভালো। কারণ শুধু ফুল গুলোই তার কথা শুনে। তার দিকে খারাপ ধারনা নিয়ে তাকায়না।আয়ান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়েই আছে তার মনে হচ্ছে তার দেখা সুন্দর মানুষটি তার সামনে।আচ্ছা ওই ফুল গুলোকে কি বলছে আর নিজে নিজে মিটমিট করে হাঁসছে।আয়ান প্রাপ্তির দিকে এগুতে এগুতে ভাবতে লাগলো এই মেয়েকেই আজ দেখতে আসছি? আমি যাকে এতো দিন মনে মনে খুঁজছি এইসেই মেয়ে।আমি ওকে হারাতে চাই না কোনো ভাবেই না।আব্বু কে আজ আর বলবো না আমার মেয়ে পছন্দ হয়নি।মনে হচ্ছে একটা পরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ প্রাপ্তির নজর পড়তেই দেখে আয়ান তার পাশে দাঁড়িয়ে পলকহীন ভাবে তাকেই দেখছে।প্রাপ্তি কিছু না বলেই দৌঁড়েই বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো।আয়ান মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে নিজেও বাসায় ঢুকলো।
সুমি আয়ানকে দেখে কোথায় ছিলে এতোক্ষণ তুমি?
আয়ান-(ফিসফিস করে)সুইট হার্ট মেয়ে আমার দেখা হয়ে গেছে।আমি এখনি হ্যাঁ বলে দিলাম।তোমাদের আর মেয়ে খুঁজতে হবে না।
সুমি -ঠিক আছে দেখি তোমার পছন্দ কি রকম। বাবা তো বলেইছে পছন্দ হলে আংটি পরিয়ে যাবে।
নিলিমা বেগম আর আজাদ সেহেব বসে মেয়ের গুনো গান গাইছেন। কিন্তু আয়ানের সেইদিকে কোনো মন নেই। আয়ান ভাবছে কখন মেয়েটাকে তার সামনে নিয়ে আসবে।
আসিফ এসে সবাইকে সালাম দিয়ে বাসায় ঢুকলো।সবার সাথে একটু কথাবার্তা বলে বললো আপনার বসুন আমি আমার বোনকে নিয়ে আসছি।
আসিফ ভিতরের রুমে যেতেই আবিদ সাহেবের অফিস থেকে ফোন আসলো জরুরী ভাবে যাওয়ার জন্য।ফোন রেখেই আবিদ সাহেব বললো অফিস থেকে ফোন আসলো তাড়াতাড়ি যেতে হবে। তোমরা তাহলে দেখো আমি আসছি।
সুমি -বাবা আপনি চলে গেলে আংটি পরাবে কে?
আবিদ সাহেব -আগে আয়ানের পছন্দ হয় কিনা দেখো তারপর বাকী কথা।
সুমি -বাবা আমি বলি কি আয়ান নাকি মেয়েকে দেখেছে এবং তার পছন্দ ও হয়েছে।
আকাশ -তাই নাকি।আব্বু তাহলে বরং অফিসে আয়ান যাক আপনি থাকেন।ওর যখন পছন্দ হয়েছে তাহলেতো আর কথাই নেই।
আয়ান -আব্বু আপনি থাকেন আমিই যাচ্ছি। একদিক দিয়ে আসিফ অরণী কে নিয়ে আসলো অন্যদিক দিয়ে আয়ান বেরিয়ে গেলো।আয়ানের যেতে ইচ্ছে করছেনা ওই পরীর মতো মুখটা আরেক বার দেখতে ইচ্ছে করছে।ওই মেয়ের চোখে একটা মায়া আছে যে মায়া আমাকে বার বার টানে।
অরণী কে দেখে আবিদ চৌধুরীর পছন্দ হয়েছে। সুমির দিকে তাকিয়ে তোমরা কি বলো আয়ানেরও যখন পছন্দ হয়েছে তাহলে আংটি পরিয়েই যাই।
আকাশ -আব্বু আপনি ঠিকি বলেছেন। আয়ানের তো মতের কোনো ঠিকই নেই।কখন আবার কি করে। এর ছেড়ে ভালো পরিয়েই যাওয়াটা ভালো হবে।
আবিদ সাহেব আংটি টা অরণীর আঙুলে না পরিয়ে আসিফের হাতে দিয়ে বললো আপনারা পড়িয়ে নিবেন।প্রাপ্তিদের বাড়ীতে খাওয়াদাওয়া করে বাড়ী ফিরে এলো আয়ানদের সবাই।আয়েশা বেগম ড্রইংরুমে বসে অপেক্ষা করছিলো তাদের জন্য।আবিদ সাহেব কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো।সুমি এসে বসতে বসতে মা! আর কোনো চিন্তা নেই আপনার ছোটো ছেলের বউ বাড়ীতে আসছে কয়দিন পর। সব কিছু রেডী করেন।ঝিনুক আর মিনু (আয়ানের বোন)আপুদের খবর দিন।
আকাশ -সুমি তুমি এমন ভাব করছো যেন বউ কালকেই ঘরে আসছে।
আয়েশা বেগম খুশী হয়ে তোরা সত্যিই বলছিস বিয়েটা হচ্ছে? আচ্ছা আয়ানের মেয়ে পছন্দ হয়েছে? আয়ান কোথায় ওকে তো দেখছিনা?
আকাশ -আম্মু! আয়ান অফিসের কাজে গেছে।তবে ওর পছন্দেরই মেয়ে।ও সুমিকে ওইখানেই বলেছে মেয়ে নাকি তার পছন্দ হয়েছে।
আয়েশা বেগম- আলহামদুলিল্লাহ্! ওকে নিয়েই তে বড় চিন্তা ছিলো।আমি এখনি ঝিনুক আর মিনুকে ফোন দিয়ে বলছি।ওরা শুনে কতো খুশীই না হবে।রুমকি (ঝিনুকের মেয়ে)শুনলে তো এখনি আসার জন্য কান্নাকাটি করা শুরু করবে।
সুমি -হ্যাঁ মা ঝিনুক আপু তো ভাইয়ার চাকরীর জন্য আসতেই পারে না।রুমকি কে কতো দিন হয়েছে দেখি না।কতো মিষ্টি একটা মেয়ে।সারাক্ষণ মামনি মামনি বলে আমার কাছে পড়ে থাকে। ওকে কাছে ফেলে আমার মা না হওয়ার কষ্ট টা আর মনে থাকেনা।কথাটা বলেই সুমি কান্না করতে করতে দোতালায় চলে গেলো।নিজের রুমে গিয়ে বালিশ বুকের নিছে দিয়ে শুয়ে শুয়ে কান্না করছে।
আয়েশা বেগম আকাশ কে চোখ দিয়ে ইশারা দিলো সুমির কাছে যেতে।আকাশ ও মায়ের কথা শুনে রুমে গিয়ে সুমির পাশে গিয়ে বসলো।
আকাশ -সুমি! এই সুমি! তুমি কেন কান্না করছো? আমি তো তোমাকে কতো বার বলেছি সমস্যা যারি থাকুক না কেন ডাক্তার দেখাতে কিন্তু না তুমি যাবে না।আমি তোমাকে এটাও বলেছি না হলে আমারা বাচ্চা দত্তক নিবো তুমি সেটাও মানো না।কি হলো কথা বলছো না কেন? ওকে,,,,, তুমি যদি চাও আমায় ছেড়ে চলে যেতে পারো আমি বাঁধা দিবো না।কথাটা শুনেই সুমি এক ঝটকায় উঠে আকাশকে জড়িয়ে ধরে কান্না জড়িতো কন্ঠে বললো এইসব কি বলছো তুমি আমি তোমায় ছেড়ে কোথায় যাবো? ওকে ফাইন (চোখ মুছতে মুছতে) আমি আর কখনো কাঁদবো না।এইবার তুমি খুশীতো?
আকাশ -তুমি জানো তোমার কান্না আমার ভালো লাগেনা।আচ্ছা সুমি তুমিই বলো আল্লাহ আমাদের পরিক্ষা করছে তাইনা? আল্লাহ সবাইকে সব কিছু দেয়না সুমি।আল্লা আমাদের কি না দিয়েছে কিন্তু একটা সন্তান দেয়নি।
সুমি আকাশে কথা শুনে চুপ করে আছে।আমার তো আর একা কষ্ট হচ্ছে না আমি জানি আকাশ ও মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু কাউকে বুজতে দেয়না।
চলবে,,,,,,,