ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৫

0
4669

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

প্রাপ্তিদের বাড়ীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিলিমা বেগম খাওয়াদাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছে।এক নাগাড়ে কান্না করেই যাচ্ছে।আসিফ আর আজাদ সাহেব থানায় ডায়রি করেছে।অরণী তার মায়ের পাশে বসে আছে।নিজের বোনের এই অবস্থার জন্য কি ও নিজেই দায়ী? ভাইয়াকে কি সব বলবো? আচ্ছা ভাইয়া কি জানে সায়মন ছাড়া পেয়েছ?

আসিফ ড্রইরুমে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।অরণী মাথা নিচু করে আসিফের সামনে এসে দাড়িয়েছে দেখে আসিফ কান থেকে ফোন নামিয়ে, কিরে কিছু বলবি?

অরণী আমতা আমতা করে বললো,ভাইয়া সায়মন আপুকে নিয়ে যায়নিতো?

আসিফ অরণীরর কথা শুনে অবাক হয়ে সায়মন তো জেলে আছে।

অরণী -সায়মন কে তার বাবা ছেড়ে নিয়ে এসেছে।ও হয়তো আমাদের পরিবারের উপর প্রতিশোধ নিতেই হয়তো আপুকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে।

আজাদ সাহেব এসে অরণী কে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন তুই এতো কিছু জেনেও চুপ করে ছিলি।তুই কি করে তোর বোন কে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে চুপ করে ছিলি।আমার মেয়েটা এখন কি অবস্থায় আছে আল্লাহ্‌ ভালো জানে।কথা গুলো বলতে বলতে আজাদ সাহেব কান্না ভেঙে পড়লেন।(আসিফের দিকে তাকিয়ে)আসিফ আমাদের তো সব শেষ হয়ে গেলো। এখন কি হবে? প্রাপ্তিকে কোথায় খুঁজবো?

আসিফ -আব্বু তুমি শান্ত হও আমি দেখছি।
অরণী তুই আম্মুর দেখে খেয়াল রাখিস আমি আরেক বার থানা থেকে আসছি।কথা বলেই আসিফ বেরিয়ে পড়ল।
কাটতে থাকে দিন।বাহিরের মানুষের আনাগোনায় কেটে যায় প্রাপ্তিদের বাড়ী। নিলিমা বেগম জ্ঞান হারায় আবার ঠিক হয়।এইভাবেই কেটে যায় তিনদিন। এইতিন দিনও মেয়েটার খুঁজ মিলেনি। বিকেল বেলা
ড্রইংরুমে বসে চা খাচ্ছে আসিফ।প্রাপ্তি হারিয়ে যাওয়ার পর তাদের চাচা,চাচী মামা,মামী সবাই এই বাড়ীতেই আছে।আসিফের ফোন বেজে উঠতেই ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আননোনাম্বার থেকে কল আসছে।

আসিফের মামা ফোন বাজতেছে দেখে, কি রে আসিফ ফোন রিসিভ করছিস না কেন? ফোনের দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস?

আসিফ -আসলে মামা, নাম্বারটা ছিনিনা।

মামা- রিসিভ করে দেখ প্রাপ্তির কোনো যদি খবর পাওয়া যায়।

আসিফ ফোন রিসিভ করতেই একজন মহিলা, আসসালামু আলাইকুম

আসিফ -ওয়ালাইকুম সালাম,

মহিলা -নাম্বারটা কি আপনার?

আসিফ -জ্বী আমার আপনি কে বলছেন?

মহিলা -আপনি আমাকে ছিনবেন না।আমি একজন টিচার, আজ সকালে ভোর ৫.০০ টায় একটা মেয়েকে আমার বাড়ীর সামনে একটা গাড়ী এসে ফেলে দিয়ে গেছে।মেয়েটার অবস্থা খুবি খারাপ।মেয়েটা জ্ঞান হারাবার আগেই আমাকে এই নাম্বারটা দিয়েছিলো।

আসিফ বসা থেকে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো হয়ে আপনি কোথায় আছেন আমাকে বলুন।আপনি যাকে পেয়েছেন ও আমার বোন কোথায় আছে ও। আমি এখনি আসছি।

মহিলা -জ্বী আমি ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসছি।আমি আপনাকে এসএমএস এ ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি আপনারা আসুন।
প্রাপ্তির কথা শুনে সবাই পগলের মতো হয়ে গেছে নিলিমা বেগম দৌঁড়ে এসে, আসিফ! প্রাপ্তি কোথায় আছে আমিও যাবো তোদের সাথে।

আসিফ -আচ্ছা চলো।আব্বু,মামা তাড়াতাড়ি চলো।

ওই মহিলা আসিফকে ঠিকানা দেওয়াতে সবাই হাসপাতালে চলে আসছে।

আসিফ মহিলার সামনে গিয়ে আপনি আমাদের ফোন দিয়েছিলেন?

মহিলা -জ্বী। ও কেবিনেই আছে।সকাল থেকে এখনো জ্ঞান ফিরেনি ডাক্তার আবার দেখছে আপনারা বসুন।
নিলিমা,অরণী বসে কান্নাকাটি করছে,মেয়েটাকে এতো কাছে পেয়েও দেখতে পারছিনা।আমার মেয়েটার সাথে না জানি কি কি ঘটেছে আল্লাহ্‌ ভালো জানে।

ডাক্তার প্রাপ্তির কেবিন থেকে বের হতেই আসিফ আর আজাদ সাহেব দৌঁড়ে কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করেতে লাগলো,

আসিফ-ডাক্তার আমি ওর ভাই,ওর কি হয়েছে?

ডাক্তার -দেখুন আমরা পুলিশকে খবর দিয়েছি ওনারা আসছে।আর আমারা মেয়েটাকে দেখে যা বুজেছি মেয়েটাকে Rape করা হয়েছে।ওর জ্ঞান এখনো ফিরেনি আশা করি কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবে।আপনার অপেক্ষা করুন।

কথা গুলো যখন ডাক্তার বলছিলো মনে হচ্ছে সবাই একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো।
প্রাপ্তির বাবা নিস্তব্ধ হয়ে পাশের চেয়ারটায় বসে পড়লো।মনে হচ্ছে কলিজাটা ছিড়ে কেউ নিয়ে গেছে।আসিফ দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে অরণীর দিকে একদৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।আসিফের মামা আসিফের কাঁধে হাত দিয়ে বললো আসিফ তুই যদি এইভাবে ভেঙে পড়িস তাহলে এই মানুষ গুলোকে কে দেখবে।কথাটা বলতেই আসিফ তার মামাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো,মামা আমি কখনো নিজের কথা ভাবিনি শুধু এই বোনদের জন্য,নিজের সপ্ন গুলকে মাটি ছাপা দিয়ে নিজের বোনদের সপ্ন গুলোকে দেখতে শিখেছি।মামা! মামা! আপনিই বলেন আমার বোনের এখন কি হবে?আমার বোন তো কারো ক্ষতি করে নাই তাহলে ওর কেন এই অবস্থা হলো।

মামা -আসিফ তুই এইভাবে ভেঙে পড়িস না।তোকে শক্ত থাকতে হবে।প্রাপ্তির সামনে গিয়ে এইভাবে কান্নাকাটি করলে মেয়েটা কি করবে বল?
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বললো আপনাদের রুগীর জ্ঞান ফিরেছে।তবে সাবধান ওকে বেশি কথা বলাবেন না।কান্নাকাটি করবেননা একটু পর পুলিশ এসে জিজ্ঞাসা করবে।সবাই প্রাপ্তির কেবিনে ঢুকলো।নিলিমা বেগম আর অরণী দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।প্রাপ্তি কিছু বলছেনা চুপচাপ হাত পা গুলোকে গুটিয়ে বসে আছে।কারো দিকে তাকাচ্ছে না।নিছের দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখের পানি গুলো অঝরে ঝরছে ।
নিলিমা বেগম -মা রে,,,, তুই কথা বল! তুই এইভাবে চুপ করে থাকিস না।প্রাপ্তি কথা বলছে না দেখে আসিফ অরণীকে সরিয়ে দিয়ে নিজে প্রাপ্তির পাশে বসলো।প্রাপ্তি আসিফ কে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে শুরু করলো।

আসিফ -প্রাপ্তি! তুই এইভাবে কাঁদিস না।ভাইয়া সব ঠিক করে ফেলবো।প্রাপ্তি তোর কিচ্ছু হয়নি।মনের ভেতর খারাপ কোনো চিন্তা আনবিনা।দেখ আমরা সবাই তোর পাশে আছি।
কথা গুলো শুনে প্রাপ্তি আরো জোরে কাঁদতে লাগলো।
প্রাপ্তি কারো সাথে কথা বলেনা।সারাক্ষণ শুধু কাঁদতেই থাকে।এক দুইটা বললেও তাও আসিফের সাথে।দুইদিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে নিয়ে এসেছে প্রাপ্তিকে।প্রাপ্তিকে সময় দেওয়ার জন্য আসিফ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে।বাসায় এসে নিজের রুমের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের ভাবনার জগত টাকে ভাবছে।একনিমিষেই মানুষের জীবনটা কিভাবে পাল্টে যেতে পারে।এইতো কয়দিন আগেও তাদের ঘরটায় কতো হৈ চৈ ছিলো। কতো হাঁসি খুশি ছিলো আর আজ ইচ্ছে করছে নিজের জীবন টাই শেষ করে ফেলি।
পিছন থেকে আসিফ এসে বললো আরে তুই এইখানে? আমি ভাবলাম ড্রইংরুমে সবাই মিলে আড্ডা দিবো তা না তুই এইখানে দাঁড়িয়ে আছিস।আসিফের কথা শুনে চোখের পানি গুলোকে আড়াল করে ভাইয়া তুই যা আমার ইচ্ছে করছে না।

আসিফ -সব কিছু থেকে নিজেকে সরাতে ছাইছিস?প্রাপ্তি! মানুষে জীবনে কতো কিছুইতো ঘটে সবকিছু মনে রাখতে নেই।দেখবি একদিন তোর জীবনে এমন কেউ আসবে তোর পিছনে ফেলা দিন গুলো মনে করতেই দিবেনা।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি আসিফকে জড়িয়ে ধরে এমন কেউ আর আসবেনারে ভাইয়া। কেউ তোর বোন কে বিয়ে করবে না।ধর্ষিতা মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না।

আসিফ প্রাপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো, পুলিশের সামনে সেদিন মিথ্যা বললি কেন যে তুই কাউকেই ছিনিস নাই?
আমি জানি ওই ছেলেটা সায়মন ছিলো।তুই না বললেও আমি জানি।

প্রাপ্তি -আমার জীবনটা তো শেষ হয়ে গেছে।সমাজের লোক গুলো আমার জন্য তোমাদের কথা শুনায়।কেউ এখন আর আমায় ভালো চোখে দেখেনা।আমি চাই না অরণীর জীবন ও সেই রকম হোক। সায়মন বলেছিলো আমি যদি কিছু বলি অরণী অবস্থাও নাকি আমার মতো হবে।জানিস ভাইয়া সেইদিন আমি তোকে অনেক বার ডেকেছিলাম কিন্তু তুই শুনিসনি।অবশ্য এতে তোর কোনো দোষ নেই। জানিস একেকটা দিন আমি যে কিভাবে কাঁটিয়েছি তা শুধু আমি জানি।
প্রাপ্তির কথা গুলো শুনে আসিফের বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে।চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে।ইচ্ছে করছে সায়মন নামের কীট টাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিতে।সায়মন কে আমি কখনোই ছাড়বো না।আজ প্রাপ্তিকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই।প্রাপ্তি! জীবনে কখনো নিজেকে ছোটো করে দেখবিনা।তুই কয়েকটা দিন সময়নে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে