ধর্ষিতা_বউ
পার্ট:৪৩
_আবিদ চৌধুরী আয়ানের অফিসে এসে সোজা আয়ানের রুমে চলে গেলেন।নিজের বাবাকে দেখে আয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে, আব্বু তুমি!
আবিদ চৌধুরী -হ্যাঁ আমি!নিজেকে কি ভাবিস তুই? অনেক মহান? সবার জন্য তোর অনেক মায়া,অনেক ভালোবাসা।শুধু আমি খারাপ তাইনা?
আয়ান -আব্বু তুমি এইসব কি বলছো আমি কিছুই ভাবছিনা।
আবিদ চৌধুরী -ঠিক আছে তাহলে এইবার চলো! আর কোথায় যাবো বা কি করবো কোনো প্রশ্ন করবেনা।এইবার চলো!
আয়ানও কোনো প্রশ্ন না করে আবিদ চৌধুরীর সাথে আসলো।বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই আয়ানের আর বুজতে বাকি নেই তাকে বাড়িতেই আনা হয়েছে।আবিদ চৌধুরী আয়ানের হাত ধরে টেনে বাড়ির ভেতরে নিচ্ছে।আয়ান চুপচাপ হাঁটছে।মনে হচ্ছে নিজের বাড়িতে নিজেরি লজ্জা লাগছে।ড্রইংরুমে এসে, আয়েশা! আয়েশা! দেখো কাকে নিয়ে আসছি।আয়েশা বেগম আসতেই,তোমার ছেলেকে তোমার কাছে ফিরিয়ে আনতে গেছিলাম। তোমার ছেলে একা তার বাবা মাকে ভালোবাসেনা। তার বাবা ও তাকে ভালোবাসে। (কথা গুলো বলতে বলতে আবিদ চৌধুরীর গলাটা ভারি হয়ে আসছিলো)তার বাবাও তাকে মিস করে।
কথা গুলো বলেই আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।আকাশ এসে, আব্বু আমি তাহলে পর হয়ে গেলাম? ঠিক আছে তোমার ছোটো ছেলে এখন এসে গেছে এখন আমাকে আর ভালোবাসবেনা।
আয়ান কে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে আজ আমার ঘর পরিপূর্ণ হলো।প্রাপ্তি! এই দিকে আসো।(প্রাপ্তি কাছে যেতেই) আয়ান! সেইদিন এইমেয়েটাকে না ছাড়ার কারণে আমি তোকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছিলাম আর আজ আমি বলছি তুই এই মেয়েটাকে ডিভোর্স দিসনা।তোদের কি হয়েছে আমি জানিনা।আমি শুধু এইটুকুই বলবো তোরা দুজনের মধ্যে সেই গুলো মিটিয়ে নিবি।প্রাপ্তি কিছু বলতে যাবে এর আগেই আয়ান প্রাপ্তিকে থামিয়ে আব্বু তুমি যা বলবে আমি তাই মেনে নিবো।
আবিদ চৌধুরী -ঠিক আছে। আমার ছেলে আর বউ ঘরে ফিরে এসেছে সেই খুশিতে বাড়িতে পার্টি দেওয়া হবে। আর কখন পার্টি হবে না হবে সেই গুলো আকাশই ঠিক করবে।
আকাশ -ঠিক আছে আব্বু এখন আর কোনো কথা নয়।তুমি রুমে গিয়ে রেস্ট নাও। আমরা সবাই তো আছিই প্রাপ্তি তুমিও যাও।
আবিদ চৌধুরী নিজের রুমে খাঠের সাথে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে আছে।আয়েশা বেগমও পাশে গিয়ে বসতেই, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে আয়েশা জানো আজ নিজেকে অনেক হালকা লাগছে।মনে হচ্ছে আমার ঘরটা আগের মতো পরিপূর্ণ। তবে আরেকজন আসলে আর কোনো কোথায় নেই আমার সংসার টা ষোলআনাই পূর্ণ।
আয়েশা বেগম -কার কথা বলছো তুমি? কে আসবে?
আবিদ চৌধুরী -আকাশ বিয়ে করেছে অনেক গুলো বছর ফেরিয়ে গেলো।কিন্তু কোনো নাতিনাতনি এই ঘরে আসে নাই। এখন যদি আমার আয়ানের ঘরে ছোট্র আয়ান দুনিয়েতে আসে তাহলে আর কোনো কথায় নেই।
আয়েশা বেগম -কথাটা খারাপ বলোনি।
প্রাপ্তি ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শাড়ি ঠিক করছে।আয়ান পিছন থেকে এসে জড়িয়ে প্রাপ্তির কাঁধে নিজের মুখটা গুঁজে দিয়ে, thanks বললে তোমাকে ছোটো করতে চাইনা। কিন্তু তোমার এই ঋণ
আমি কিভাবে শোধ করবো বলোতো?
আমার কাছে তো তোমার কোনো ঋণ নেই উল্টো আমিই সবমসময় তোমার কাছ থেকে নিয়ে এসেছি।তুমি আমাকে যে সম্মান টা দিয়েছো পৃথিবীতে কোনো স্বামী তার ধর্ষিতা স্ত্রীকে এতো সম্মান দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই।তুমি আমাকে শিখিয়েছ কিভাবে এইসমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হয়।তুমি আমাকে শিখিয়েছ সমাজের সবাই আমার পক্ষ হয়ে কথা বলবেনা।যারা বলবে, যারা আমাকে ভালোবাসবে, তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী গড়ে নিতে।
আয়ান প্রাপ্তির কথা গুলো শুনে প্রাপ্তিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
প্রাপ্তি -কি দেখছো ওইভাবে তাকিয়ে?
আয়ান -আমার পাগলিটাকে।আমার লক্ষ্মী বউটা কে কতো দিন হলো কাছে পাইনা।আমার অবস্থা এখন কেমন জানো? একটা তৃষ্ণাত্ব কাকা এক ফোটা পানির খোঁজ পেয়েছে ঠিক তোমাকে পেয়ে আমার অবস্থাও সেইরকম।
প্রাপ্তি -কথাটা খুব ভালো হয়েছে কবিদের ধারেকাছে দিয়ে গেছে।এখন যাও ফ্রেশ হয়ে এসে খাওয়া খেয়ে রেস্ট নিয়ে তারপর গিয়ে রেশীকে নিয়ে আসো।
আয়ান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে,ও মাই গড! আমি একদম ভুলে গেছিলাম রেশীর কথা।পরে ফ্রেশ হবো আগে রেশীকে গিয়ে নিয়ে আসি।মা ও বলেছে সকালে চলে যাবে, মেয়েটা একা একা জানি কি করছে কি জানে।আয়ানকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে ঝিনুক বললো কিরে, তুইনা রুমে গেলি ফ্রেশ হতে? ফ্রেশ না হয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
আয়ান -আপু! আর বলিসনা রেশী বাসায় একা আছে ওকে নিয়ে আসতে হবে।আমার একদম মনে নেই রেশীর কথা।আমি এসে তোদের সাথে কথা বলছি।বলেই আয়ান চলে গেলো।
মিনু রেশীর কথা শুনে, আপু রেশীটা কে? আয়ান কোন রেশীর জন্য এতো তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো?
ঝিনুক মিনুকে ঘাবড়িয়ে দেওয়ার জন্য বললো, আয়ানের ছোটো বোন।আয়ানের খুব আদরের বোন।আয়ান তো তার ছোটো বোনকে চোখে হারায়।
মিনু -আপু কি যা তা বকছিস। বোন মানে?
প্রাপ্তি এসে রান্নাঘরের দিকে যাবে এমন সময়,
মিনু – প্রাপ্তি এই দিকে শুনোতো! রেশী কে?
প্রাপ্তি -আপু একটু ওয়েট করো আসলেই সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।
ঘন্টা দুয়েক পর আয়ান রেশীকে নিয়ে আসলো।রেশী লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে সবাইকে সালাম দিলো। আবিদ চৌধুরী প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, প্রাপ্তি একে তো চিনলাম না! প্রাপ্তি রেশীর কাছে এসে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে আবিদ চৌধুরীর কাছে নিয়ে বাবা তোমার পারমিশন না নিয়ে তোমার ছেলেকে বলেছি ওকে নিয়ে আসতে। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
তারপর আস্তে আস্তে প্রাপ্তি রেশীর ব্যাপারে সব বললো।আবিদ চৌধুরী সব শুনে আমার কোনো আপত্তি নেই। ও এই বাড়িতেই থাকবে এই পরিবারের একজন হয়ে।আয়েশা বেগম রেশীর কাছে এগিয়ে এসে অনেক লক্ষ্মী একটা মেয়ে অভ্রর সাথে ওর বিয়ে এই বাড়িতেই হবে।
সুমি -প্রাপ্তি! তুই গিয়ে আয়ান আর রেশীকে খেতে দে । ওদের লেট দেখে তো সবাই খেয়ে নিয়েছে।রেশী আগে আমার সাথে আসো তোমাকে তোমার থাকার রুমটা দেখিয়ে দিই।
কথাটা শুনে রেশী প্রাপ্তির কানের কাছে এসে, ভাবী তুমি আমার সাথে চলো।
প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে চল।(আয়ানের দিকে তাকিয়ে) এইবার গিয়ে তো ফ্রেশ হয়ে নাও।
প্রাপ্তি রেশীকে নিয়ে তার রুমে গিয়ে, রেশী তুই ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।ভাবী নিছে যাই।কথাটা বলে প্রাপ্তি এগুতেই, রেশী পিছন থেকে,
রেশী-ভাবী!
প্রাপ্তি ভাবী ডাক শুনে পিছনে ফিরে, কিছু বলবি?
রেশী এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে, তুমি এতো ভালো কেনো বলো তো? তোমার আমার জন্য কতো চিন্তা।আমার বোন থাকলে আমার জন্য এতো চিন্তা করতো কিনা আমি জানিনা।তুমি যে আমায় বার বার ঋণী করে দিচ্ছো।তোমার এই ঋণ আমি শোধ করবো কি দিয়ে?
প্রাপ্তি রেশীকে ছাড়িয়ে, স্ট্রং হয়ে দাঁড়া। আর শুন তুই আমার কাছে কোনো ঋণী না।ঋণী যদি হয়ে থাকিস সেটা একজনের কাছেই। শুধু তুই না, আমি যে তার কাছে ঋণী।কিন্তু সে কোনো প্রতিদান চায়না।চায় শুধু সবার একটু খানি ভালোবাসা।
রেশী -ভাইয়ার কথা বলছো তাইতো?
প্রাপ্তি-হুম আর কোনো কথা নয়। তাড়াতাড়ি নিছে আয়।আর শুন নিছে গিয়ে এইভাবে চুপচাপ থাকিসনা। কথাটা যেনো মনে থাকে।
রাতে সবাই যখন আড্ডা দিচ্ছে প্রাপ্তি আর আয়ান নিজেদের রুমের বারান্দায় বসে গল্প করছে।
প্রাপ্তি-আচ্ছা দুপুরে বাবাকে সত্যি কথাটা বলতে দিলেনা কেনো?
আয়ান -কোন সত্যি?
প্রাপ্তি -ডিভোর্সের ব্যাপারটা।বাবাকে যে আমি কথাটা মিথ্যা বলেছিলাম সেটা বাবাকে বলে দেওয়া উচিত ছিলনা?
আয়ান প্রাপ্তির কাঁধে হাত দিয়ে মিথ্যা থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তাহলে মিথ্যাই ভালো।
প্রাপ্তি কিছু না বলে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।সব কিছু কতো সহজে মেনে নেয়।এইলোকটাকে কোনো মেয়েই ভালো না বেসে থাকতে পারবে না।যতো দেখি ততোই তার মায়ায় আমি নিজেকে হারাই।
আয়ান প্রাপ্তিকে এইভাবে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রাপ্তির চোখের সামনে তুড়ি মেরে কি ব্যাপার! ওই ভাবে তাকিয়ে কি ভাবছো?
প্রাপ্তি-হুম? কই কিছুনা।
আয়ান-মুখ টিপে হাঁসি দিয়ে সত্যিই কিছুনা?
প্রাপ্তি নিছের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বুজালো।
বাহিরের চাঁদের আলোই প্রাপ্তিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।চাঁদের আলোয় মানুষকে এতোটা সুন্দর লাগতে পারে আয়ানের এইটা জানা ছিল না।প্রাপ্তি কোনো কথা বলছেনা দেখে আয়ান বললো রুমে চলো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
আয়ানেয় কথায় রুমে এসে দাঁড়াতেই আয়ান আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে রেশীকে আনতে যাওয়ার সময় এইটা নিয়েছিলাম।আমার পরীটাকে শাড়িটা পরিয়ে আমি মন ভরে দেখতে চাই।প্রাপ্তি কিছু না বলে শাড়িটা হাতে নিলো। প্রাপ্তি শাড়ি হাতে নিতেই,আমি পরিয়ে দিই?
প্রাপ্তি-তুমি শাড়ি পরাতে পারো?
আয়ান -তেমন ভালো পারিনা।কিন্তু ইচ্ছে করছে তোমাকে নিজের হাতে শাড়ি পরাতে,ইচ্ছে করছে সাজাতে।প্রাপ্তি আবার আয়ানের হাতে শাড়িটা দিয়ে, পরিয়ে দাও।
প্রাপ্তির কথায় শাড়িটা হাতে নিয়ে প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে নিলো।আগের শাড়িটা খুলে নতুন শাড়িটা পরাতে লাগলো আয়ান।আয়ানের প্রতিটা ছোঁয়া প্রাপ্তির যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে।আয়ান এই প্রথম প্রাপ্তিকে এতোটা কাছ থেকে ছোঁয়ার সাহস পেয়েছে।শাড়িটা পরিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে একদম পরীর মতো লাগছে।ইচ্ছে করছে যুগের পর যুগ তোমাকে সামনে বসিয়ে তাকিয়ে দেখি।
প্রাপ্তি আয়ানকে নিজের আরো কাছে টেনে এনে আজ ভালো করে দেখো কেউ তোমায় বাধা দিবেনা। আয়ান প্রাপ্তিকে কোলে তুলে নিয়ে খাঠের উপর শুয়ে দিয়ে সত্যি কেউ বাধা দিবেনা।আয়ানের কথা শুনে প্রাপ্তি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। আয়ান প্রাপ্তির লজ্জার কারণ বুজতে পেরে প্রাপ্তিকে আর কিছু জিজ্ঞাস না করে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।সারারাত দুজোনে ভালোবাসায় বিভোর হয়েছিল।ভোররাতে প্রাপ্তি আয়ানের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে পড়লো।আয়ানও আর বাধা দিলোনা।আয়ানও প্রাপ্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
চলবে,,,,,