ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৪২

0
3668

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৪২

#Rabeya Sultana Nipa

 

_সবাই আবিদ চৌধুরীর কেবিনের সামনে পায়চারী করছে।আবিদ চৌধুরীকে ইমার্জেন্সি রুমে নিয়ে ডাক্তাররা ভালো করে দেখছেন।আয়েশা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে সুমি। আকাশ প্রাপ্তিকে ডেকে বললো,প্রাপ্তি আয়ান কে ফোন করেছো? ওকে ফোন দিয়ে বাবার অবস্থার কথা একবার জানালে ভালো হতো না? বাবার কথা শুনে ঝিনুক আর মিনু আসতেছে আর ও আসতে পারবেনা?

প্রাপ্তি-ভাইয়া আমি ওকে ফোন দিচ্ছি ও ফোনটা ধরতেছে না।।আচ্ছা আবার ট্রায় করে দেখি।

আকাশ আর কিছু না বলে একটু হেঁটে যেতেই ঝিনুক আর মিনু এসে জড়িয়ে ধরে, ভাইয়া আব্বুর কি হয়েছে হঠাৎ করে? আব্বু এখন কোথায়? ঝিনুক কথা গুলো বলে শেষ করতেই প্রাপ্তির দিকে নজর পড়লো।
ঝিনুক -ভাইয়া প্রাপ্তি এইখনে?

আকাশ -প্রাপ্তি আমাদের সাথেই থাকে।
মিনু এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে তোমার সাথে কতো দিন পর দেখা তাও আবার আব্বুর এইরকম একটা সময়ে।আয়ান কোথায়? ওকে দেখছিনা?
ঝিনুক -ভাইয়া আব্বু ওদেরকে মেনে নিয়েছে একটা বার জানালিনা?

আকাশ -এখন এইসব বলার সময় নয়।পরে তোদের সব বলবো।ডাক্তার কেবিন থেকে বের হতেই আকাশ কাছে গিয়ে,আংকেল আব্বুর কি হয়েছে? জ্ঞান ফিরেছে?

ডাক্তার -আকাশ! তোমরা এইখানে আনতে অনেক লেট করে ফেলেছো। তবে এখনো কিছু বলতে পারছিনা।তবে তোমার আব্বু এতো টেনশন কি নিয়ে করেছে?
কথাটা শুনে আকাশ আর কিছু বললো না।
প্রাপ্তির দিকে একবার তাকিয়ে,আংকেল টেনশনের ব্যাপারটা কারো কাছে বলার দরকার নেই।আমি আপনাকে আলাদা ভাবে সব বলবো।

ডাক্তার- ওকে।

ঝিনুক আর মিনু এগিয়ে এসে ভাইয়া ডাক্তার কি বললো?

আকাশ -তেমন কিছু না।তোর বস।

অভ্র আর আয়ান থানা থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় আয়ানের ফোনের কথা মনে পড়তে আয়ান ফোন বের করে প্রাপ্তির অনেক গুলা কল দেখে অবাক হয়ে আছে, অভ্র তুই গাড়িতে বস আমি প্রাপ্তিকে কল দিয়ে আসছি।আয়ান একটু সরে গিয়ে প্রাপ্তিকে কল দিতেই সাথে সাথে প্রাপ্তি ফোন রিসিভ করে কোনো কথা না বাড়িয়ে, কোথায় তুমি?বাবা হসপিটালে আছে তুমি আসবেনা?
(আয়ান কোনো কথা বলছেনা দেখে প্রাপ্তি কাঁদোকাঁদো গলায় আবার বলতে লাগলো)আজ তুমি না আসলে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে? আচ্ছা এইসব কিছুর জন্য আমিই দায়ী তাইনা?

আয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে,কেঁদোনা।এটার জন্য তোমাকে দায়ী করছো কেনো? তুমি কেঁদোনা কোন হসপিটাল আছে নাম বলো আমি এখুনি আসছি।প্রাপ্তি হসপিটালের নাম বলতেই আয়ান ফোন রেখে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসতে বসতে, অভ্র চল আমরা হসপিটাল যাবো।
প্রাপ্তি ফোন রাখতেই আকাশ এসে পাশে দাঁড়াতে,ভাইয়া ও আসছে।ভাইয়া এই সব কিছুর আমার জন্য হয়েছে তাইনা? (কান্না জুড়িত কন্ঠে)বাবা ভালো হয়ে যাক আমি সত্যি বলছি আমি এই বাড়ি থেকে নয় দরকার প্রয়োজনে আয়ানের জীবন থেকেও চলে যাবো।আকাশ প্রাপ্তির চোখের পানি মুছে দিয়ে ধুর পাগলি তুই কাঁদছিস কেনো? তুই তো সবার ভালোর জন্যই সব করেছিস।এতে তোর কোনো দোষ নেই।
সুমির কাঁধে মাথা দিয়ে আয়েশা বেগেম বসে আছে।দূর থেকে আয়ান অভ্রর সাথে কথা বলতে বলতে আসছে দেখে আয়েশা বেগম মাথা উঠিয়ে তাকিয়ে আছে আয়ান আসার দিকে।আয়েশা বেগমকে মাথা উঠাতে দেখে মা কি হয়ে বলে তাকাতেই আয়ানকে দেখে সুমি চুপ করে গেলো।
আয়েশা বেগম আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে ভাবছে সত্যিই কি আমার আয়ান আসছে? দুইটা বছর আমি আমার আয়ানকে দেখিনা।এইতো দুই বছর নয় শত যুগ পার হয়ে গেছে আমি আমার ছেলেকে দেখিনা।
আয়ান কাছে এসে তার মায়ের দিকে চোখ পড়তেই চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখে টলমল পানি নিয়ে আয়েশা বেগম হাত দুটো বাড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে ইশারা করছে কাছে আসার জন্য।আয়ানও দেরি না করে তার মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের কাঁধে মুখটা গুঁজে দিলো।আয়েশা বেগম কান্না করতে করতে ছেলেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে এই আয়ানকে আমি চিনিতে পারছিনা।যে আয়ান তার মাকে ছাড়া থাকবে না বলেই পড়ালেখা শেষ করে দেশে চলে এসেছিলো।যে আয়ান আমাকে ছাড়া দুটো দিন বন্ধুদের সাথে গিয়ে থাকতো না।আর সেই আয়ান দুটা বছর কাটিয়ে দিলো তার মাকে না দেখে।সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছে।আয়ান মাথা উঠিয়ে মায়ের চোখ মুছতে মুছতে তোমার আয়ান কখনো তোমাকে ভুলতে পারেনা।হতো তোমার ছেলে তখনকার সময়টাকে মেনে নিয়েছিল। সেই সময়টা যে বড্ড কঠিন ছিল তোমার ছেলের জন্য!
আয়েশা বেগম ছেলের কপালে চুমু দিয়ে, সত্যি আমার ছেলেটা অনেক বড় হয়ে গেছে।একদম বাবার মতো কথা বলতে শিখে গেছে।আকাশের কাছে এগিয়ে গিয়ে, ভাইয়া আব্বুর কি অবস্থা এখন?
এমন সময় সিস্টার এসে আকাশকে বললো স্যার আপনাকে ডাকছে।
আকাশ -আপনি যান আমি আসছি।আয়ান তুইও চল।

ডাক্তার- তোমার বাবার রিপোর্ট এসেছে। এবং আমি সবগুলো দেখে যা বুজলাম হার্টের প্রবলেমটাই বেশি মারাত্মক হয়ে গেছে।আর প্রেশারটাও বেশি। কয়েকদিন হসপিটালে রাখতে হবে।এইখানের ডাক্তারা দেখা শুনা করবেন।আর হ্যাঁ আশা করি এইবারের মতো আর কোনো টেনশন নেই।তবে আরেকটু দেরি করে আনলে মুশকিল হয়ে যেতো।(আয়ানের দিকে তাকিয়ে)আয়ান কেমন আছো?

আয়ান-জ্বী আংকেল ভালো।

ডাক্তারের রুম থেকে বেরিয়ে এসে আকাশ সবাইকে ডাক্তারের বলা কথা গুলো বললো।আয়ান প্রাপ্তিকে না দেখে এদিক সেদিক তাকিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ান পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে হালকা কাশি দিয়ে,এইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
কথাটা বলতেই প্রাপ্তি আয়ানকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
আয়ান খানিকটা চুপ করে থেকে,কেঁদে কেঁদে চেহারাটাকে পেত্নীর মতো করে ফেলছো। চলো বাসায় চলো।এইখানে আর থাকতে হবে না।ডাক্তার বলেছে আব্বু আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

প্রাপ্তি -আমি এইখান থেকে কোথাও যাবো না।আর তুমিও যাবে না।আমার জন্য এইসব কিছু হয়েছে। আর আমি বাবাকে এইভাবে রেখে চলে যাবো?

আয়ান প্রাপ্তির মাথা উঠিয়ে ঠিক আছে তুমি থাকবে কিন্তু নিজেকে দায়ী করতে পারবেনা। আর আমি জানি আমার প্রাপ্তি কখনো কারো খারাপ চাইবে না।

প্রাপ্তি -দুপুরে আমার উপর তোমার অনেক রাগ হয়েছে তাইনা? বাবা যে তোমাকে এইভাবে থাপ্পড় দিয়ে ফেলবে আমি বুজতে পারিনি।

আয়ান -আমি রাগ করিনি তবে ভয় পেয়েছি। ভেবেছিলাম তোমার এই মিথ্যা গুলোর জন্য কোনো বড় বিপদ আসছে না তো?সবাইকে এক করতে গিয়ে নাকি তোমাকেই হারাতে হয়।এখন এইখান থেকে চলো সবাই ভাববে আমি এখনো বউ নিয়েই পড়ে আছি বলে একগাল হাঁসি দিলো আয়ান।

এইকয়েক দিন হসপিটালে আবিদ চৌধুরীর পাশে থেকে নিজেই সেবা যত্ন করছে প্রাপ্তি।প্রতিদিন সবাই এসে দেখে যায়,তবে আয়ান দূর থেকে দেখেই চলে যায়।সারাক্ষণ আবিদ চৌধুরীর পাশেই থেকেছে প্রাপ্তি।নিজের হাতে খাইয়ে দিতো।ঘুমহীন চোখে সারারাত আবিদ চৌধুরীর পাশে বসে থাকতো।প্রাপ্তির শ্বশুরের সেবা করতে ভালোই লাগছে।আবিদ চৌধুরীর প্রাপ্তির প্রতি এক অদ্ভুত ভালোবাসা জন্ম নিলো।অল্প কয়েকদিনে পুরোপুরি ভাবেই সুস্থতা বোধ করেছেন আবিদ চৌধুরী। সাকালে ডাক্তার (আবিদ চৌধুরী বন্ধু)এসে চেকাপ করে দেখে, আবিদ তুই এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়েছিস আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।আমি তো ভেবেছিলাম তোর যে অবস্থা হয়েছে এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়া ইম্পসিবল।
আবিদ চৌধুরী প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে এক হাঁসি দিয়ে,আমার মেয়ে আমার সেবা যত্ন যে ভাবে করেছে আমাকে তো তাড়াতাড়ি সুস্থ হতেই হবে।

ডাক্তার -ঠিক বলেছিস কপাল করে এইরকম বউ পেয়েছিস।

প্রাপ্তি -আংকেল! বাবাকে তাহলে আমরা বাসা নিয়ে যেতে পারবো তো?
ডাক্তার -অবশ্যই পারবে।তুমি আছো না আর চিন্তা কিসের।আমি আজকেই রিলিজ দিয়ে দিচ্ছি।
আকাশ আর প্রাপ্তি আবিদ চৌধুরীকে বাসায় নিয়ে এসে ড্রইংরুমে বসালো।
সুমি এসে পাশে বসে প্রাপ্তি তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়েনে আমি বাবা কে দেখছি।এইকয়দিন তো তুই একাই সব করেছিস।এইবার যা একটু রেস্ট নে।
প্রাপ্তি -আমার জন্য চিন্তা করো না তো।
রুমকি এসে আবিদ চৌধুরীর পাশে বসতে বসতে, নানা ভাইয়া! তুমি একদম ভালো হয়ে যাবে দেইখো। জানো নানা ভাইয়া তুমি যখন অসুস্থ ছিলে সবাই তোমার জন্য কান্না করেছে।আমিও করেছি।ছোটো মামাও করেছে।মামা তো প্রতিদিন তোমায় দেখতে যেতো।কিন্তু আজ যখন তুমি আসলে তোমার সাথে নিয়ে এলে না কেনো।সবাই এইখানে আছে শুধু মামা নেই।রুমকির মুখের কথা গুলো শুনে আবিদ চৌধুরী সবার দিকে তাকাতেই সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।প্রাপ্তি না দাঁড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাবে তখন আবিদ চৌধুরী বললো, প্রাপ্তি দাঁড়াও!
(প্রাপ্তি দাঁড়াতেই) আমার সামনে আসো।

প্রাপ্তি ভয়ে ভয়ে সামনে এসে দাঁড়াতেই রুমকি যা বলছে সব সত্যি?
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে,বাবা আপনি উত্তেজিত হবেন না।আপনি এখনো ভালো ভাবে সুস্থ হননি।

আবিদ চৌধুরী প্রাপ্তিকে আর কিছু না বলে, আকাশ আমি এখন পুরোই সুস্থ। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুই গাড়ি বাহির কর আমি বাহিরে যাবো।

আকাশ -আব্বু তুমি এখন কোথাও যাবেনা।তুমি এখনো পুরোপুরিভাবে সুস্থ হওনি।আর এইসময় কোথায় যাবে? অফিসে!
তোমার অফিসে যেতে হবে না।আমি সব কাজ করে রেখছি।

আবিদ চৌধুরী -আমি যা বলছি তাই কর।আমি এখন বের হব।
আবিদ চৌধুরী কারো কথাই না শুনে সত্যিই রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলেন।

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে