ধর্ষিতা_বউ
পার্ট:৪০
__ প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে দেখে আয়ান অনেক গুলো কল দিয়ে রেখেছে।প্রাপ্তি ফোন দিতেই আয়ান ফোনের ওপাশ থেকে জোরেশোরে বলতে লাগলো, কতবার ফোন দিয়েছি তোমায়? সকাল থেকে কোথায় ছিলে তুমি? আমার খবর নেওয়া একবারও প্রয়োজন মনে করলেনা তুমি?এই আয়ান তোমায় ছাড়া কতটা নিষঙ্গ তুমি সেটা জানো? নাকি জেনেও না জানার ভাণ করো?কথা গুলো এক নিশ্বাস এ বলে গেলো আয়ান।প্রাপ্তি কথা গুলো শুনে দীর্ঘশ্বাস পেলে,সরি, আসলে সকাল থেকে একটু ব্যস্ত ছিলাম।
আয়ান- (তাচ্ছিল্য একটা হাঁসি দিয়ে) প্রাপ্তি তুমি কি বলছো তুমি খেয়াল করেছো একবার? যে প্রাপ্তি হাজার টা কাজ থাকলেও আয়ানের সবকিছু ঠিক রাখে আর সেই প্রাপ্তির মুখে ব্যস্ততার কথা, আবিদ চৌধুরীর সাথে থেকে দুইদিন না যেতেই চেঞ্জ!
প্রাপ্তি-তুমি আমায় ভুল বুজতেছো।আমি জানি আমার আয়ান কখনো আমায় ভুল বুজতে পারেনা।আমার উপর তোমার যে বড্ড অভিমান হয়েছে তা আমি ঠিকি বুজিছি।আচ্ছা সকালে নাশতা করেছো?
আয়ান -তোমাকে আমার এতো কিছু খবর নিতে হবে না।সকাল থেকে তো আমিই ফোন দিচ্ছি তাহলে আমিই তোমার খবর নিবো।(আয়ান যে রাত থেকে কিছুই খায়নি এইকথা প্রাপ্তি শুনলে তার উপর রেগে যাবে।তাই কথা কাটানোর জন্যই কথাটা বলা)
প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে তুমিই আমার খবর নিও।অফিসে যাবে কখন?
আয়ান -রেডি হচ্ছি।
প্রাপ্তি -এতো দেরি কেনো তোমার? (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) অল রেডি অনেক লেট করে ফেলেছো। ব্যাপার কি তোমার এতো লেট হলো কিভাবে?
আয়ান-(ঠোঁটের কোনে মুচকি একটা হাঁসি এনে)তুমি ছাড়া আয়ান সবসময় অগোছালো। প্রতি দিন তো আমার মিষ্টি বউটা আমার সবকিছু গুছিয়ে রাখে।কিন্তু আজ তো আমার বউটা কাছে নেই। তাই সবকিছু অগোছালো ভাবেই হবে।
প্রাপ্তি -আচ্ছা বুজেছি। শুনো দুপুরে আমি কিন্তু তোমার সাথে দেখা করছি।কাল থেকে তোমায় দেখছিনা আমারো ভালো লাগছেনা।আমি দুপুরবেলা ফোন দিয়ে বলে দিবো কোথায় আসতে হবে।আর হ্যাঁ আজ তোমার সাথে বাহিরেই খাবো।
আয়ান -ওকে।
আয়ান বাসা থেকে বের হতে হতে রেশীকে ইশারায় দরজা বন্ধ করতে বলে চলে গেলো।
আবিদ চৌধুরী আর আকাশ ও অফিসে চলে গেলো।
আয়েশা বেগম এসে কিরে,,, তুই কি কোথাও যাবি নাকি?
প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে হ্যাঁ মা তোমার ছেলের কাছে।কাল থেকে ওকে দেখছি না মনে হয় কতো যুগ পার হয়ে গেছে।তুমি যাবে? চলনা একসাথে যাই।
প্রাপ্তির কথা শুনে আয়েশা বেগম মুখটা মলিন করে দীর্ঘ নিশ্বাস পেলে নারে,,,যেই দিন আমার ছেলে এই বাড়িতে হাঁসি মুখে আবার ফিরে আসবে সেইদিন কলিজাটা কে আবার বুকে জড়িয়ে নিবো।(কথা গুলো বলতেই আয়েশা বেগমের গলাটা ভারী হয়ে আসছে,চোখ দুটো ছলছল করছে)জানিস প্রাপ্তি! আমার আয়ান একগুঁয়ে ছিলো নিজে যেটা বলবে সেটাই।তবে কোনো অন্যায় তার সহ্য হয়না।দেখলিনা অন্যায় জন্য নিজের বাবার সাথেও তার কোনো আপোষ নেই।
প্রাপ্তি আয়েশা বেগমকে জড়িয়ে ধরে মা! সব ঠিক হয়ে যাবে।আর সেটা অল্প কয়েকদিনের মধ্যে তুমি দেইখো।
দুপুরের আগেই প্রাপ্তি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো আয়ানের সাথে দেখা করবে বলে। অনেক বার ফোন দিয়েছে আয়ানকে কিন্তু আয়ান ফোন ধরছেনা। প্রাপ্তির খুব চিন্তা হচ্ছে আয়ান তো এইরকম করেনা।প্রাপ্তি ভাবছে এইভাবে কতক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যায়।এরছেয়ে ভালো অফিসে গিয়ে দেখি।অবশ্য অফিস তো আমি চিনিও না।আচ্ছা অভ্র ভাইয়াকে একটা ফোন করে দেখি।অভ্রকে ফোন দিয়ে, ভাইয়া তোমার বন্ধু কোথায়?
অভ্র -প্রাপ্তি! ও তো মিটিং এ আছে।ফোনটা দিবো ওকে?
প্রাপ্তি -না তার দরকার নেই। আচ্ছা ভাইয়া তোমাদের অফিসে ঠিকানাটা আমায় একটু এসএমএস করে দাও।
অভ্র -ব্যস্ততার ফাঁকে প্রাপ্তির কথা গুলো এতোটা গুরুত্ব না দিয়ে এসএমএস এ ঠিকানা পাঠিয়ে দিলো।
এসএমএস টা পড়ে প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে মনে মনে ভাবছে,প্রাপ্তি তুই এমনি বউ নিজের ভালোবাসার মানুষের অফিসের ঠিকানা অন্যের কাছ থেকে নিতে হয়।নাহ্ আগে ওকে গিয়ে সারপ্রাইজটা দিই।
প্রাপ্তি অফিসে এসে অভ্রকে দেখে, ভাইয়া! ও কোথায়?
প্রাপ্তিকে দেখে অভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।অভ্র মনে হচ্ছে একি প্রাপ্তির চেহারায় কোনো পেত্নী আসলো নাতো?অভ্রর তাকানো দেখে, প্রাপ্তি অভ্রর চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে ভাই আপনাকে আমি কিছু জিজ্ঞাস করছি।আপনার বন্ধু কোথায় সেটা বলুন।
অভ্র মুখে কোনো কথা না বলে হাত দিয়ে ইশারায় দেখিয়ে দিলো মিটিং এর রুমে।
প্রাপ্তি এগিয়ে যেতেই অভ্রর ঘোর কাটতেই একি আমি প্রাপ্তিকে মিটিং এর রুমে পাঠিয়ে দিলাম।প্রাপ্তিকে ডাকতে যাবে এর আগেই প্রাপ্তি দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেলো।প্রাপ্তি ভিতরে গিয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। আবিদ চৌধুরী! তাও আবার আয়ানের সাথে! প্রাপ্তি কথাটা ভাবতে যেনো মাথাটা ঘুরঘুর করছে।প্রাপ্তিকে দেখেও সবাই অবাক।আয়ান ও কম অবাক হয়নি।প্রাপ্তি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।আবিদ চৌধুরীর পাশে গিয়ে বাবা! আপনি কি ওকে বকাঝকা করতে আসছেন নাকি। তবে ভালোই করেছেন ওর মতো লোকের বকা খাওয়ারই যোগ্য।যে নিজের বউকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।আয়ান প্রাপ্তিকে কি বলবে বুজতে পারছেনা।
পিছন থেকে অভ্র এসে, সরি আয়ান! আসলে প্রাপ্তিকে দেখে আমিও অবাক হয়ে গেছিলাম। তাই ও কখন এই রুমে চলে এসেছে আমি বুজতে পারিনি।আয়ান হাত দিয়ে ইশারা করে অভ্রকে চুপ থাকতে বলে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে তোমাকে এইখানে কে আসতে বলেছে? বেরিয়ে যাও আমার অফিস থেকে।তোমাকে বলেছিনা আমার সামনেও কখনো আসবেনা।তারপর ও কেনো আমার সামনে আসছো এখুনি বের হয়ে যাও।
আয়ানের কোথায় অভ্র অবাক হয়ে,আয়ান তুই প্রাপ্তির সাথে এইভাবে কথা বলছিস কেনো?
আয়ান অভ্রর দিকে ফিরে, তোকে বললাম না চুপ থাকতে।আমাদের মধ্যে তুই কথা বলার কে?কথাটা শুনে অভ্র মন খারপ করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই কোন আয়ানকে দেখছি আমি।আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না আয়ান প্রাপ্তির সাথে এইভাবে ব্যবহার করছে।নাকি ওর বাবা কে দেখে এইরকম করছে?
প্রাপ্তি-আমি তো এইখানে থাকতে আসিনি।আমি শুধু এসেছি আপনার সাথে আমার সম্পর্কটা পাকাপাকি ভাবে শেষ করতে।
কথাটা শুনেই আয়ানের মনে যেনো ধাক্কা লাগলো।প্রাপ্তির সবকিছু অভিনয় মানলাম কিন্তু প্রাপ্তি এতো সহজে কথাটা কিভাবে বলতে পারলো।আয়ান খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে ডিভোর্স ছাইছো তাই তো ঠিক আছে অতি শীঘ্রই তুমি ডিভোর্স নোটিশ পেয়ে যাবে।
আবিদ চৌধুরী আর চুপকরে থাকতে না পেরে হঠাৎ বসা থেকে উঠেই আয়ানের গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে, এই থাপ্পড়টা আমার অনেক আগেই দেওয়া উচিত ছিলো। থাপ্পড় টা অনেক দেরি করে দিয়ে পেলেছি।যদি আগে এই থাপ্পড়টা দিতাম তাহলে আজ এই অবস্থায় এসে কাউকেই দাঁড়াতে হতো না।তোকে আমার ছেলে বলতেও ঘৃণা লাগছে।আচ্ছা এই মেয়েটার জন্যই তো তুই আমার সব কিছু ছেড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিস তাহলে কি এমন হলো যার জন্য তুই ওকে ডিভোর্স দিতে ছাইছিস। (সবাই অবাক হয়ে শুধু আবিদ চৌধুরীর দিকেই তাকিয়ে আছে।এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে এসে প্রাপ্তি পড়েছে কিছু বলতেও পারছেনা।আয়ানের দিকে করুণাময় চোখে ফেলফেল করে তাকিয়ে চোখের পানি গুলো গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছে।তার জন্য আয়ানকে থাপ্পড় খেতে হয়েছে,কথাটা ভাবতেই প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে আছে)আবিদ চৌধুরী আবার বলতে শুরু করলেন আয়ান তুই মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে দেখ কতোটা মায়া ভরা এই মুখে, আমি না হয় না বুজে একটা অন্যায় করেছি সেই অন্যায় শাস্তি তুই আমাকে কম ও দিসনি। তাহলে তুই কিভাবে একি অন্যায় করতে যাচ্ছিস।আমি তো জানতাম আমার ছেলে কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনা।ও আমি তো ভুলেই গেছিলাম আপনি আয়ান চৌধুরী এই কোম্পানির এম ডি। আপনার কাছে এখন মানুষ কে মানুষ বলে মনে হয়না।(প্রাপ্তির হাত ধরে) তবে একটা কথা মনে রাখবেন মিস্টার আয়ান! আজ থেকে ও আমার মেয়ে। যে অসম্মানে আমি ওকে বাড়ি থেকে বের করেছি আজ পূর্ণ সম্মান দিয়ে আমার মেয়েকে আমি আমার বাড়িতে নিয়ে গেলাম।আরেকটা কথা যে বিজনেসের ডিল টা আমাদের হয়েছে সেটা বাদ দিয়ে দিন।আজ থেকে আপনার সাথে বিজনেসের সম্পর্কটাও রাখতে চাই না।কথা গুলো বলেই আবিদ চৌধুরী প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।আয়ান তাদের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লো।কি থেকে কি হয়ে গেলো।প্রাপ্তি কি নিজের হাতেই কোনো বিপদ ডেকে আনলো না তো?
অভ্র আয়ানের অবস্থা দেখে আয়ান আমি তো কিছুই বুঝতেছি না?
আয়ান অভ্রকে সব বললো।অভ্র সব শুনে প্রাপ্তি যে ওই বাড়িতে তুই তো আমাকে বলিস ও নি।এখন কি হবে?
আবিদ চৌধুরী বাড়ি এসে সুমি আর আয়েশা বেগমকে ডাকতে লাগলেন।
আয়েশা বেগম আর সুমি প্রাপ্তিকে আবিদ চৌধুরীর সাথে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আয়েশা বেগম- কি হয়েছে! প্রাপ্তি তোমার সাথে?
আবিদ চৌধুরী -আজ থেকে ও আমার ছেলের বউ না মেয়ে হয়েই এই বাড়িতে থাকবে।আমি যে অন্যায় করেছি সেই অন্যায় আমি নিজেই শুধরে নিবো।প্রাপ্তি কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো আয়ানকে ফোন দিতে।অনেক বার ফোন দিয়েছে কিন্তু আয়ানের ফোন অফ করে রেখেছে।
চলবে,,,,,,,,