ধর্ষিতা_বউ
পার্ট:৩৯
__আবিদ চৌধুরী ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।চশমাটা খুলে পাশের বক্সের উপরে রাখতে রাখতে,আয়েশা লাইটা অফ করে দাও।কথাটা বলতেই দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেয়ে,
আবিদ চৌধুরী -এতো রাতে দরজা ধাক্কাচ্ছে কে?
আয়েশা বেগম -তুমি শুয়ে পড়ো আমি দেখছি।
আয়েশা বেগম উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই প্রাপ্তি আয়েশা বেগমকে দরজা থেকে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে, মা! আমি এইখানে ঘুমাবো তোমাদের সাথে।ওই রুমে আমার একা একা খুব ভয় লাগছে।
আবিদ চৌধুরী উঠে বসে, এই মেয়ে! কি যা তা বকছো?তুমি আমাদের সাথে ঘুমাবে মানে? যাও নিজের রুমে যাও।
প্রাপ্তি -বাবা আপনি যদি আমাকে এইখানে না ঘুমাতে দেন আমি কিন্তু কান্না করবো বলে দিলাম।
আবিদ চৌধুরী -এইটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।আমি এইটা কিছুতেই মেনে নিবো না।তোমার সব কথা শুনতে আমি বাধ্য নয়।
প্রাপ্তি- ঠিক আছে আমি যখন এইখানে ঘুমাতে পারবোনা তাহলে মা আমার রুমে আমার সাথে ঘুমাবে।কি এইবার রাজি?
আবিদ চৌধুরী -(তোতলাতে তোতলাতে)এএএইইই মে মেয়ে! তো তো তোমার সমস্যা কি?
প্রাপ্তি -(নাক টা কুঁচকিয়ে) একি বাবা আপনার তোতলানোর ও অসুখ বিসুখ আছে নাকি? কই আপনার ছেলের মুখ থেকে কখনো শুনিনিতো।অবশ্য নিজের বাবার এইরকম একটা সমস্যা নিজের মুখে বলবেইবা কি করে।সমস্যা নেই এখনতো জেনে নিলাম।
আবিদ চৌধুরী -আয়েশা এই মেয়ে টা আমাকে পাগল করে ছাড়বে।প্লিজ ওকে এইখান থেকে যেতে বলো।
আয়েশা বেগম কিছু বলতে যাবে, তখনি প্রাপ্তি ওনাকে থামিয়ে,মা! কি বলবে শুনি।আপনার ছেলে আমার সাথে ঝগড়া করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।আমি তো ওর সাথেই এতো দিন ঘুমাতাম এখন হঠাৎ করে তো একা ঘুমানো যায়না।তাই আমি মা কে নিয়ে যাচ্ছি।যেদিন আপনার ছেলে আসবে সেইদিন থেকে মাও আপনার সাথে ঘুমাবে।
আবিদ চৌধুরী নিরুপায় হয়ে গম্ভীর গলায়, আয়েশা যাও! ওর সাথে ঘুমাও।না হলে এই মেয়ের কোনো বিশ্বাস নেই এইখানেই ঘুমিয়ে পড়বে।
কথাটা বলতেই প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে thankyou বাবা।বলে আয়েশা বেগমকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।
আয়েশা বেগম খাটের উপর বসতে বসতে প্রাপ্তি তুই কি শুরু করলি বলতো?
প্রাপ্তি -মা! বাবাকে জব্দ করতেছি।তুমি আর আমি আজ সারারাত বসে গল্প করবো।
আয়েশা বেগম- এই কোন প্রাপ্তিকে দেখছি।আমি তো চিনতেই পারছিনা।যে প্রাপ্তি শান্ত চুপচাপ হয়ে থাকে সেই প্রাপ্তি চঞ্চল হয়ে উঠেছে এইটা আমি ভাবতেই পারছিনা।
প্রাপ্তি আয়েশা বেগমের কোলে মাথা রাখতে রাখতে বললো,মা! আমার জন্যই তো তোমরা মা ছেলেকে আলাদা হতে হয়েছে।তাই আমিই তোমাদের একসাথে করবো।
আয়েশা বেগম- লক্ষ্মী একটা মেয়ে।আচ্ছা তুই শুয়ে পড় আমি তোর বাবাকে একবার দেখে আসি।আজ কয়েক দিনথেকে ওনার শরীরটা ভালোনা।তবেঁ কাউকে বলেনা। নিজেকে সমসময় স্ট্রং দেখিয়ে চলে।কাউকে বুজতেই দেয়না ওনার শরীরটা যে ভালোনা।
প্রাপ্তি-মা! তুমি শুয়ে পড় আমি দেখে আসছি।
প্রাপ্তি উঠে গিয়ে আবিদ চৌধুরী রুমে গিয়ে দেখে একটা বই পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়েছে।প্রাপ্তি বইটা সরিয়ে কাঁথা টা গায়ে দিয়ে লাইট অফ করে নিজের রুমে আসলো।আয়েশা বেগম প্রাপ্তিকে দেখে আয় তুইও শুয়ে পড়।
আয়ান চুপচাপ হয়ে নিজের রুমে খাটের এক কোনায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।প্রাপ্তিকে ছাড়া যেনো তার সময় যাচ্ছেই না।নিজেকে খুব একা লাগছে।হঠাৎ জয়ের কথা মনে পড়তেই অভ্রকে ফোন দিলো।জয়কে আজ সকালে অভ্র এনে একটা রুমে আটকিয়ে রেখেছে।সারা দিনে প্রাপ্তির চিন্তায় খবর নেওয়া হয়নি।
__হ্যালো অভ্র তুই কোথায়? সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো?
অভ্র-আমি একটু আগেই বাসায় আসলাম।।
আর ছেলেটাকে এতো ভয় দেখালাম কোনো কিছুই বলছেনা।
আয়ান -এইভাবে ও কিছুই বলবে না।শুন ওর বোন একটা কলেজে পড়ে।আর যে কলেজে পড়ে সেই কলেজে আমার পরিচিত অনেকেই আছে কয়েটা ছবি তুলে তোকে সেন্ড করবো। ওকে দেখিয়ে বলবি তুই যদি সবকিছু সত্যিটা না বলিস তাহলে প্রাপ্তির সাথে যা করেছিস তোর বোনের সাথে তাই হবে।শুধু ওকে ভয় দেখানো জন্য কথা গুলো বলবি।আর ওই মেয়েটার কোনো অসম্মান হক সেটাও আমি চাইনা।
অভ্র -হুম তোর কথা আমি বুজতে পেরেছি।আমাদের শুধু এইটাই দরকার অন্য ছেলেদের নাম গুলো।
আয়ান -তোকে আমি অনেক ভরসা করি রে অভ্র! তাই সব কথাই তোকে বলেছি।
অভ্র -আয়ান তোর মতো একজনকে আমি বন্ধু হিসেবে পেয়ে নিজেকে খুব গর্ববোধ করি।তোকে না দেখে আমি জানতেই পারতাম না একটা মানুষের ধৈর্যের ক্ষমতা কতোটুকু।
আয়ান মুচকি হেঁসে হ্যাঁ আমিও তোকে না দেখলে জানতাম না বউ পালিয়ে গেলেও সহ্য করা যায়।বলেই দুজনে হা হা হা হাঁসতে লাগলো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাপ্তি নিজের হাতে সবার জন্য আজ নাস্তা বানাচ্ছে। রফিক বার বার বলতে লাগলো মা মনি তুমি পারবে না। আমিও তোমায় হেল্প করছি।
প্রাপ্তি -আপনি চিন্তা করবেনা আমি পারবো।আপনি শুধু দেখেন আমার কোনো ভুল হয় কিনা।
রফিক -তাহলে আগে আমি সাহেবকে চা টা দিয়ে আসি। ওনি আবার চায়ের দেরি হলে রাগারাগি করবেন।
প্রাপ্তি-রফিক চাচা! ১ মিনিট দাঁড়ান! বাবার চা টা বাদে সবাইকে চা দিয়ে আসুন।
আজ থেকে বাবার খালিপেটে চা খাওয়া নিষেধ। প্রাপ্তি এগিয়ে গিয়ে রফিকের থেকে চায়ের একটা কাপ রেখে দিলো।
রফিক -মা মনি সাহেব কিন্তু চা না হলে চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলবেন।
প্রাপ্তি -চাচা তুমি যাওতো! চেঁচালে কিভাবে থামাতে হয় সেই ব্যবস্থা আমি করবো।
রফিক সত্যিই প্রাপ্তির কথা মতো সবাইকে চা দিয়ে আবার রান্নাঘরে আসলো।
আকাশ আর সুমি চা হাতে করে রুম থেকে বেরিয়ে এসে ড্রইংরুমে বসে,
সুমি-রফিক চাচা! চা টা কি আপনি বানিয়েছেন? চা টা কিন্তু দারুণ হয়েছে।
কি বলো আকাশ?
আকাশ -আমিও তাই ভাবছি।
রফিক এসে না চা টা তো আমি বানাইনি।আজ চা বানিয়েছে ছোটো মা মনি।ওই যে রান্নাঘরের দিকে দেখো সব নাস্তা নিজের হাতে বানিয়েছে।
সুমি রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে এই জন্যই তো বলি চা টা কেনো এতো ভালো হয়েছে আমাদের মিষ্টি বউরের বানানো চা বলে কথা।তবে প্রাপ্তি তুমি এইসব একা করতে গেলে কেনো আমাকেও ডাকতে আমিও তোমায় হেল্প করতাম।
প্রাপ্তি নাস্তা গুলো হাতে নিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে ভাবী প্রতি দিন তো তোমরা বানিয়ে খাও আজকে না হয় একদিন আমি বানিয়ে তোমাদের খাওয়ালাম।
এমন সময় আবিদ চৌধুরী এসে এই বাড়িতে কি আমার কোনো গুরুত্ব নেই।এতো বেলা হয়ে গেলো আমার চা এখনো রুমে যায়নি।রফিক! তোকে আর কতো দিন বলতে হবে সকালের চা টা আমার রুমে গিয়ে দিয়ে আসতে।
প্রাপ্তি নাস্তা সবার প্লেটে রাখতে রাখতে, রফিক চাচাকে চেঁচিয়ে কোনো লাভ নেই।আমি বারণ করেছি সকালে আপনাকে চা না দিতে।এতো না চেঁচিয়ে এইখানে এসে চেয়ারে বসুন নাস্তা খেয়ে তারপর চা খাবেন।
আবিদ চৌধুরী বিরক্তিকর ভাবে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, আয়েশা! আয়েশা! কোথায় তুমি।আয়েশা বেগম সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে, কি হয়েছে তোমার সকাল না হতেই চেঁচামেচি শুরু করেছো?
আবিদ চৌধুরী -আমি চেঁচামেচি করবো না তো কি করবো।এই বাড়ির এতো দিনের আইন টা কি চেঞ্জ হলো নাকি? আমার কথার কি কোনো দাম নেই?
প্রাপ্তি -বাবা! এইটা কি কোনো থানা নাকি?
আবিদ চৌধুরী -আয়েশা এই মেয়ে দেখছি এই বাড়ির বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। আমি থানার কথা বললাম কখন?
প্রাপ্তি-এইযে একটু আগে যে আইনের কথা বলছিলেন তাই ভাবলাম আর কি।
আয়েশা বেগম -আচ্ছা হয়েছেটা কি সেটা তো বলবা? শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে যাচ্ছে।
আবিদ চৌধুরী -আমার সকাল বেলার চা নিয়েও এই মেয়ে আপত্তি করছে।
আবিদ চৌধুরী আর কিছু বলার আগেই প্রাপ্তি বলতে লাগলো,হ্যাঁ আমার আপত্তি আছে ঘুম থেকে উঠে চা খাওয়া একদম নিষেধ। নাস্তা করে তারপর চা খাবেন।
আয়েশা বেগম -(প্রাপ্তির কথা শুনে মিটমিট করে হাঁসতে হাঁসতে) আমি এইখানে কি আর বলবো।তোমাদের বউ শ্বশুরের ব্যাপার।
আকাশ আর সুমিও কোনো কথা বলছেনা।চুপ করে নাস্তা করতে বসে গেলো।আবিদ চৌধুরীও নিরুপায় হয়ে নাস্তা করতে বসলো।প্রাপ্তি অনেক রকমের নাস্তা বানিয়েছে।তার সাথে বিরিয়ানি টা করেছে।কারণ আবিদ চৌধুরী বিরিয়ানি খেতে খুবি পছন্দ করে।আয়ানের কাছ থেকে অনেক বার শুনেছে প্রাপ্তি এই কথা।নিজের অজান্তেই আবিদ চৌধুরী খেতে খেতে বললো খাবার গুলো অসাধারণ হয়েছে।সুমি তুমি করেছো রান্নাটা?
সুমি কিছু বলার আগেই, প্রাপ্তি বলতে লাগলো,জ্বী না বাবা! আমি করছি।আজ ফাস্ট দিন বলে কিছু বলছিনা। কাল থেকে আপনাকে খাবার মেপে মেপে খেতে হবে মানে ডায়েট করতে হবে।আর সব কিছুর নিয়ম মেনেই চলতে হবে।
আয়েশা বেগম -প্রাপ্তি কিন্তু কথাটা খারাপ বলেনি তোমাকে।
আবিদ চৌধুরী চুপ করে শুনেই যাচ্ছে।তবে প্রাপ্তি কথা গুলো আস্তে আস্তে ভালোই লাগছে। মেয়েটা ঠিকি বলেছে আমার সবকিছু অনিয়ম ভাবেই চলছে।আবিদ চৌধুরী খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো রেডি হতে, অফিসে যাওয়ার জন্য।আকাশ প্রাপ্তির মাথায় টোকা দিয়ে, অল দ্যা বেস্ট। বলে নিজেও উঠে গেলো রেডি হতে।
প্রাপ্তি -মা! আপনার খেয়ে নিন আমি আপনার ছেলেকে একটা ফোন দিয়ে আসি। কি করছে কি জানে।
প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে দেখে আয়ান অনেক গুলো কল দিয়ে রেখেছে।
চলবে,,,,,,,,,