ধর্ষিতা_বউ
পার্ট:৩৮
_আবিদ চৌধুরী আর আকাশ বসে চা খাচ্ছে।আয়েশা বেগম আর সুমি কোনো একটা কথা নিয়ে হাঁসা হাঁসি করছে।রফিক আকাশের রুমে গেছে অফিসের ফাইল নিয়ে আসতে।এমন সময় কলিংবেলের শব্দ শুনে আবিদ চৌধুরী আকাশকে বললো তুই বস আমি গিয়ে দেখছি।আবিদ চৌধুরী উঠে গিয়ে দরজাটা খুলতেই অবাক হয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আর যার দিকে তাকিয়ে আছে সে এক গাল হাঁসি দিয়ে আবিদ চৌধুরীর পা ছুঁয়ে সালাম করে উঠে দাঁড়িয়ে আরে বাবা আপনি এই ভাবে মুক্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকলে আমি ঘরে ঢুকবো কি করে? সরেন তো সরেন! কথাটা বলেই আবিদ চৌধুরীকে হাত দিয়ে সরিয়ে ঘরে ঢুকলো।ঘরে ঢুকতেই সবাইও অবাক হয়ে তাকিয়ে, প্রাপ্তি!
প্রাপ্তি -হুম আমি! আরে আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে আমাকে বরণ করে ঘরে তুলুন।
আয়েশা বেগম আর সুমি আবিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে,মনে হচ্ছে প্রাপ্তিকে এইভাবে হঠাৎ দেখে মাথায় কোনো কাজ করছে না আবিদ চৌধুরীর, কি করবে তাই হেবলার মতো তাকিয়ে আছে।
প্রাপ্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে, ভাইয়া আপনি ঠিক আছেন তো? যে ভাবে আমাকে দেখে হা করে আছেন মশা ডুকে যাবে। হা টা বন্ধ করুন।
প্রাপ্তির কথা শুনে আকাশও থ হয়ে গেছে।
আবিদ চৌধুরী এইবার নিজের নিরবতা ভেঙে প্রাপ্তির কাছে এগিয়ে এসে, এই মেয়ে কখন থেকে যাকে যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছো ব্যাপার টা কি তোমার? এই বাড়িতে এসেছো কেনো? এতো বড় সাহস কে দিয়েছে তোমাকে আমার বাড়িতে আসার?
প্রাপ্তি -(মুখটাকে একটু গম্ভীর করে) শুনুন আমি আপনার বাড়ি আসিনি আমি এসেছি আমার শ্বশুর বাড়ি। তাই আপনাকে কে অধিকার দিয়েছে আমাকে এই বাড়ি থেকে বাহির করার?
আবিদ চৌধুরী -কথাটা ভালো করে যাচাই না করে)হ্যাঁ তা ঠিক।(মনে পড়তেই) এই না কি বলছো উল্টাপাল্টা এইটা আমার বাড়ি।আর আমি তো তোমার শ্বশুর।
প্রাপ্তি -(মুচকি হেঁসে)বাবা তাহলে আপনি শিকার করছেন আমি আপনার ছোটো বউ।
প্রাপ্তির কথাটা শুনে আবিদ চৌধুরী ভ্যাবাচেকা খেয়ে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে। আর সবাই মিটমিট করে হাঁসছে।রফিক নেমে এসে প্রাপ্তিকে দেখে, মা মনি কেমন আছো?
প্রাপ্তি-রফিক চাচা আমি একদম পারফেক্ট। যার এইরকম একজন শ্বশুর আছে সে কি খারাপ থাকতে পারে?
কথাটা শুনে ফরিক ও হাঁসছে।
আবিদ চৌধুরী -এই মেয়ে! তোমার মতলবটা কি সেটা বলো? এইবাড়িতে কেনো এসেছো?
প্রাপ্তি -মাথায় এতো গোবর নিয়ে এতো বড় বিজনেসম্যান হলেন কি ভাবে?ব্যাগপত্র দেখেও বুজেন না আমি এই বাড়িতে থাকতে এসেছি।নাকি বুদ্ধিটাও মাথা থেকে গেছে।রফিক চাচা আপনাদের ছোটো ছেলে আগে যেই রুমে থাকতো আমার ব্যাগ গুলো সেই রুমে রেখে আসুন।(আবিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে)আর হে এই বাড়িতে আমি বেড়াতে আসিনি।সারাজীবনের জন্য আসছি।
আবিদ চৌধুরী -না! এই বাড়িতে তোমার কোনো জায়গা নেই।তাড়াতাড়ি আমার বাড়ি থেকে বিদায় হও।
প্রাপ্তি-বাবা আমি আপনার ছেলের সাথে ঝগড়াঝাঁটি করেই এইখানে এসেছি। যদি আপনি আমাকে এখন এই বাড়ি থেকে বের করে দেন তাহলে আমার আর কোনো উপায় নেই সোজা থানায় যেতে হবে। আর থানায় গেলে সবাই জানতে পারবে বিখ্যাত বিজনেসম্যানের ছোটো ছেলের বউ তাদের নামে থানায় মামলা করেছে।তারপর কি হবে বাবা।থাক আমিই বলছি।কাল পেপারে বাহির হবে। টিভিতে দেখানো হবে,সাথে আপনার ছবিও থাকবে।এখন আপনিই বলুন বাবা এইটাকি ভালো দেখাবে?(কথা গুলো বলে প্রাপ্তি মুখ টিপে টিপে হাঁসছিলো।)
প্রাপ্তির কথা শুনে আকাশ আবিদ চৌধুরীর পাশে গিয়ে ফিসফিস করে,আব্বু তুমি ওকে এই বাড়ি থেকে বাহির করো না।এই মেয়ে কি বলছে শুনেছো। যদি সত্যিই এমন কিছু করে তাহলে আমাদের কোনো মানসম্মান থাকবেনা। আমরা কাউকে মুখ দেখাতে পারবোনা।তোমার এতো দিনের সম্মান এক নিমিষেই শেষ।
আকাশের কথা শুনে আবিদ চৌধুরী হ্যাঁ সূচক বুজিয়ে,গলাটা ভালো করে কেশে,এই মেয়ে শুনো তোমার কোথাও যেতে হবে না।আজ থেকে তুমি এইবাড়িতেই থাকবে।তবে একটা শর্তে তুমি আমার সামনে বেশি আসবে না বলে দিলাম।কথা গুলো বলেই আবিদ চৌধুরী নিজের রুমে চলে গেলো।
আবিদ চৌধুরী যেতেই সবাই খুশিতে হাঁসতে লাগলো।আয়েশা বেগম প্রাপ্তিকে জড়িয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে কতো দিন পর তোকে দেখেছি।তুই কি সত্যিই আমার ছেলের সাথে ঝগড়াঝাঁটি করে এসেছিস।
প্রাপ্তি-আরে মা তুমিও না। ওর সাথে আমি ঝগড়া করবো কেনো।আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে এসে ওকে কল দিচ্ছি।
আয়ান প্রাপ্তিকে না খুঁজে পেয়ে অস্থির হয়ে আছে।আসিফ কে ফোন করে বলতেই সবাই এই বাসায় চলে এসেছে।
নিলিমা বেগম প্রাপ্তির রুমে বসে কান্না করতে করতে, আয়ান! আমার মেয়েটার কি এমন হলো কাউকে কিছু না বলে এইভাবে বাসা ছেড়ে চলে গেছে? মেয়েটা কোথায় আছে কি করছে কেউ কিছু বলতে পারছেনা।আমার মেয়েটার আবার নতুন কোনো বিপদ হলো না তো।
আয়ান- (কাঁদোকাঁদো হয়ে)মা! ও তো ফোন ও অফ করে রেখেছে।কি করবো আমার মাথায় কিছু আসছে না।
এমন সময় ফোন বাজতেই ফোন হাতে নিয়ে দেখে প্রাপ্তির নাম্বার থেকে কল।তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করেই,হ্যালো! প্রাপ্তি তুমি কোথায়? কোথায় গেছো কাউকে কিছু না বলে? তুমি জানো না তোমাকে না দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই।তুমি আমাকে এইভাবে একা রেখে কোথায় গেলে প্রাপ্তি।কথা গুলো বলেই ভেঙে পড়লো আয়ান।
প্রাপ্তি -তুমি আমার কথাটা শুনো প্লিজ,এইভাবে কান্নাকাটি করোনা।আসলে আমি তোমাকে বলে আসতাম।কিন্তু আমি জানি তোমাকে বললে তুমি কখনোই আমাকে আসতে দিতে না।তাই আমি কাউকে কিছু না বলে চলে আসছি। আর আমি অনেক ভালোও আছি।
আয়ান- (চোখ মুছতে মুছতে)কোথায় আছো তুমি?তুমি বলো আমি এখুনি আসছি।
প্রাপ্তি -না! তুমি এখন আসবে না।আমি তোমাকে বলেছিলাম না আমি তোমাকে তোমার মা, বাবা সবাইকে ফিরিয়ে দিবো। আর আমি সেই কাজটা সাকসেসফুল করার জন্যই আসছি তোমাদের বাড়িতে।তুমি টেনশন করোনা প্লিজ।
আয়ান- প্রাপ্তি আমার কাউকে লাগবেনা।যদি কখনো ভাগ্যে থাকে এমনিতেই আসবে।আর আবিদ চৌধুরী তোমাকে কখনো মেনে নিবেনা।প্লিজ তুমি চলে আসো।
প্রাপ্তি -তুমি একদম চিন্তা করোনা। আমি থাকার অনুমিত পেয়ে গেছি।
আয়ান- প্রাপ্তি! তোমাকে ছাড়া আমি একা থাকবো? ইম্পসিবল আমি পারবোনা।আমি এখুনি তোমাকে নিতে আসছি।চুপচাপ এখন তুমি আমার সাথে বাসায় আসবে।
প্রাপ্তি অনেক বুজিয়ে সুজিয়ে আয়ান কে কোনোমতে রাজি করালো।
প্রাপ্তি -এইবার আম্মুকে ফোনটা দাও।(আয়ান নিলিমার কাছে ফোন দিতেই)আম্মু শুনো আমি যতো দিন না আসছি। আয়ান আর রেশীর খেয়াল রেখো।আর আমি এসেই রেশী আর অভ্রর বিয়েটা দিবো।
প্রাপ্তি কথা শেষ করে দেখে সুমি পাশে দাঁড়িয়ে আছে,ভাবী কখন এলে?
সুমি-কিছুক্ষণ হলো তুই কথা বলছিস তাই ডিস্টার্ব করিনি।তবে তুই আজ যা খেল দেখালি না।আমি নিজেই অবাক হয়ে গেছি।তবে তুই এই বাড়িতে আসছিস আমার এখন খুব ভালো লাগছে।আচ্ছা আয়ান পাগল টা তোকে ছাড়া থাকবে কি করে?
প্রাপ্তি-জানিনা অনেক তো বুজালাম। কখন আবার কি করে বসে আল্লাই ভালো জানে।
সুমি-আচ্ছা এখন খেতে চল।পরে তোর সাথে অনেক কথা বলবো আড্ডা দিবো।
সুমি আর প্রাপ্তি এসে দেখে আকাশ আর আবিদ চৌধুরী খেতে বসে গেছে।প্রাপ্তি এসে আবিদ চৌধুরীর পাশের চেয়ারটায় বসলো।
প্রাপ্তিকে দেখে আবিদ চৌধুরী বিরক্তিকর ভাব নিয়ে, এই বাড়িতে কি শান্তিতেও খেতে পারবো না।যখন তখন যে কেউ সামনে এসে পড়ে।
প্রাপ্তি আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে,মা! বাবা আপনাকে কি বলছে শুনেননি।যখন তখন সামনে আসেন কেনো? বাবা আপনার জন্য শান্তিতেও খেতে পারছেনা।
প্রাপ্তির কথা শুনে আবিদ চৌধুরী থতমত হয়ে, এই মেয়ে আমি কখন এই ওকে এই কথা বললাম? তুমি তো দেখছি পাজি মেয়ে।আয়েশা বেগম বুজতে পেরে লুকিয়ে লুকিয়ে হাঁসছে।আকাশ আর সুমি হাঁসি আসছে দেখে মুখে হাত দিয়ে রেখেছে।
প্রাপ্তি-বাবা আপনি মিথ্যা বলেন এইটা তো জানতাম না একটু আগেই তো আপনি কথা গুলো বলেছেন।যাইহোক বাবা খেয়ে নিন। মনে এতো চিন্তা রাখলে শান্তিতে খেতে পারবেন না।
আবিদ চৌধুরী মনে মনে ভাবছে এই মেয়েতো দেখছি পুরোই সাংঘাতিক যা বলি সবি উল্টো করে ফেলে।
চলবে,,,,,,,,,