ধর্ষিতা_বউ
পার্ট:৩৩
অভ্র -ঠিক আছে চলো আমি সহ যাচ্ছি।
রেশী আর কথা বাড়ালো না।নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।
_দুজনে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে অভ্র বার বার রেশীর দিকে তাকাচ্ছে।রেশীও আড় চোখে তাকিয়ে অভ্রকে দেখছে।
অভ্র-রেশী! তুমি কি কাউকে কখনো ভালোবেসেছো?মানে তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?
রেশী নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বুজালো।
অভ্র -কি বলো তোমার মতো এতো সুন্দরী একটা মেয়ের বয়ফ্রেন্ড নেই এইটা তো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
কথা বলতে বলতে আবার দুজনে হাঁটতে লাগলো।
আয়ান -কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো যেতে বলছিতো।
প্রাপ্তি আয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দরজার দিকে একটু এগিয়ে আবার থমকে দাঁড়ালো। পিছনে ফিরে দেখে আয়ান মন খারাপ করে অন্য দিকে ফিরে আছে।প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে আবার দৌড়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।আয়ান চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি চোখ দুটো বন্ধ করে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।চোখ বন্ধ করা ওই মায়াবী মুখটা দেখলে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে।ইচ্ছে করবে তাকে শত জন্মে ভালোবাসতে।ইচ্ছে করবে ওর মতো মানুষটাকেই সারাজীবন পাশে পেতে।ওকে দেখে নিজের চোখের পলক ফেলতে ইচ্ছে করেনা।একটা পলক ফেললেই মনে হবে শত যুগ এই মায়াবী মুখটা দেখা হবে না।
আয়ান -(আস্তে আস্তে নরম স্বরে)প্রাপ্তি! এই প্রাপ্তি! কি হয়েছে তোমার?
প্রাপ্তি আয়ানের বুক থেকে মাথাটা উঠিয়ে আয়ানের মুখে আঙুল দিয়ে চুপ তাকতে ইশারা করলো।
আয়ান প্রাপ্তির হাতটা মুখের সামনে থেকে সরিয়ে নিচে নামালো।আস্তে আস্তে নিজের ঠোঁট দুটো প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে আনতে প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে ফেললো।আয়ান ঠোঁট প্রাপ্তির ঠোঁটের সাথে ছোঁয়া লাগাতেই
অভ্র এসে আয়ান তুই,,,,,,,,,
কথাটা বলতেই আয়ান চমকে উঠে প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে, অভ্র!তুই এইসময়?
অভ্র-সরি সরি আমি কিছু দেখিনি।
আয়ান রেশীর দিকে তাকাতেই রেশী রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
প্রাপ্তিও লজ্জা পেয়ে কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো।
অভ্রর প্রতি আয়ানের খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু কিছু বলতেও পাচ্ছেনা।অনেক ধৈর্যের পরিক্ষা দিয়ে প্রাপ্তির এতো কাছে গেলাম আর অভ্র এসে সব ভেস্তে দিলো।
অভ্র -সরি রে,,,আমি সত্যি তোদের এইভাবে ডিস্টার্ব করতে চাইনি।উপরের সবাই তোদেরকে না দেখতে পেয়ে ডাকছে।সরি বন্ধু এইরকম সময়ে ডিস্টার্ব করার জন্য।
আয়ান-(নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে)নো প্রবলেম! রেশীকে দেখে একটু খারাপ লাগছে।
অভ্র -আরে রেশীকি এখনো ছোটো নাকি? ও সব বুজে।হয়তো শান্ত ভাবখানি নিয়ে থাকে।
আয়ান -তুই বুজচ্ছিস না কেনো।ও আমার ছোটো বোনের মতোই । কখনো এইটা ভাবিনি ওকে আমি রাস্তার পাশে পেয়েছি।তাই একটু খারাপ লাগছে।
অভ্র -আচ্ছা আয়ান তুই যখন ওকে পেয়েছিস ও কি তখন বিয়ের পোষাকে ছিলো তাইনা?
আয়ান -হুম। চল ছাদে যাই।
অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই নিচে নেমে এলো।নিলিমা বেগম সবাইকে ঘুমানো ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এই বাড়িতে এতো গেস্ট সবাইকে তো আর আলাদা আলাদা রুম দেওয়া যায় না।প্রাপ্তি নিচে এসে নিলিমা বেগমকে নিজের রুমটা আকাশদের আর অরণীর রুম টা ঝিকুকদের দিতে বললো।সুমি এসে প্রাপ্তির কথা শুনে প্রাপ্তি! এক দিন না ঘুমালে কিচ্ছু হবে না এককাজ করো যে যে আড্ডা দিতে চায় তাদের সবাইকে নিয়ে ছাদে চলো আমরা সবাই আড্ডা দিবো।
অরণী -ভাবী তুমি ঠিকি বলছো।
ঠিক আছে তোমরা সবাই যাও আমি তোমাদের সবাইকে কফি বানিয়ে দিয়ে আসবো।
প্রাপ্তি-আম্মু তুমি ঘুমাতে যাও! আমি সবার জন্য কফি বানিয়ে নিবো।
সুমি -হ্যাঁ আন্টি আমিও প্রাপ্তিকে হেল্প করবো।
নিলিমা বেগম মুচকি হেঁসে আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।
সবাই উপরে চলে গেলো, রেশীকে সোফায় বসে থাকতে দেখে প্রাপ্তি এসে, রেশী! তুই যাবি না।প্রাপ্তির কথাটা শুনে রেশী তখনকার ঘটনার জন্য নিজেকে খুব ছোটো মনে হচ্ছে।চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রাপ্তি রেশীর সাথে বসে নিচের দিক থেকে নিজের দিকে রেশীর মুখটা ফিরিয়ে, তুই তখনকার ঘটনার জন্য লজ্জা পাচ্ছিস? আমি খেয়াল করলাম এর পর থেকে তুই আমার আর তোর ভাইয়ার থেকে দূরে দূরে থাকছিস।রেশী এইখানে তো তোর কোনো দোষ নেই।মাঝে মাঝে আমরা না চাইতেও এমন ঘটনা ঘটে আমাদের সাথে।এখন চল আমাদের সাথে আড্ডা দিবি।
রেশী -ভাবী তুমি যাও আমি আসছি।
প্রাপ্তি -ওকে আমি যাচ্ছি।তুই তাড়াতাড়ি আয়।কথাটা বলেই প্রাপ্তি উঠে চলে গেলো।
রেশী বসে বসে নিহাদের কথা ভাবছে।সেইদিন ওনি আমাকে দেখতে এসেছিলেন। অনেক কথাও বলেছিলেন আমার সাথে।কিন্তু যদি সব আয়ান ভাইয়াকে বলে ভাইয়া আমায় কি ভাববে।অবশ্য ভাইয়াকে তো আমি সবি বলেছিলাম।আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি।তারপরও কি আমায় ভুল বুজবে।আমার কি তাহলে এখন এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। কিন্তু আমি কোথায় যাবো?আমার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
অভ্র চেঞ্জ করে ছাদে যাবে তখনি দেখে রেশী বসে আছে।রেশীর কাছে একটু এগিয়ে এসে, রেশী তুমি উপরে যাবেনা?বসে বসে কি ভাবছো?
অভ্রর কথা শুন রেশী চমকে উঠে, হ্যাঁ!
অভ্র -তুমি কি কিছু ভাবছো নাকি?
কথাটা শুনে রেশী অভ্রর দিকে তাকালো।
অভ্র-না! তুমি চুপচাপ বসে আছো দেখেই কথাটা বললাম।আচ্ছা চলো ছাদে যাই।
রেশী অভ্রর পিছন পিছন ছাদে গেলো।
আয়ান রেশীকে দেখে অন্য দিকে ফিরে আছে।প্রাপ্তি আয়ানকে ইশারা করলো রেশীর সাথে কথা বলার জন্য।সুমি অভ্র আর রেশীকে একসাথে দেখে, আয়ান! একটা জিনিস খেয়াল করেছিস রেশী আর অভ্রকে কিন্তু খারাপ লাগছেনা।দেখ দুজনকে কি সুন্দর মানিয়েছে।কথাটা শুনেই রেশী অবাক হয়ে অভ্রর দিকে তাকালো।
সুমি -রেশী তুমি কি আমার কথায় রাগ করেছো?
রেশী কিছু বলছেনা অভ্রর দিকেই একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।অভ্রও রেশীর দিকে অসহায় মতো তাকিয়ে আছে আর ভাবছে আমি তো ছেয়েই ছিলাম তোমাকে আমার সারা জীবনের সাথী করে রাখতে।কিন্তু সেইদিন কি এমন হলো তুমি আমাকে অসহায়ের মতো ছেড়ে দিয়ে আসলে।যেইদিন আয়ানের বাসায় আমি তোমাকে দেখলাম সেইদিন আমার মতো অবাক কেউ হয়েছে কিনা কখনো আমি জানিনা।
আয়ান দুজনের দিকে তাকিয়ে, অভ্র তুই যে ভাবে তাকিয়ে আছিস মনে হচ্ছে ভাবী তোর সাথে সত্যিই রেশীকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।
আয়ানের কথা শুনে রেশীর থেকে চোখ ফিরিয়ে অভ্র কিছু না বলেই আকাশের সাথে গিয়ে বসলো।
সবাই মিলে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে সকাল হয়ে গেলো কেউ টেরি পেলোনা।সকাল বেলা সবাই নিচে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসলো।আসিফ রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই নিহাদ বললো আসিফ! আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকী এর মধ্যে যা খুশি করতে পারো,পরে আর পারবেনা।তখন মৃতদের মতোই থাকতে হবে চাইলেই নিজের ইচ্ছায় কিছু করতে পারবেনা।
ঝিনুক -(ঝাড়ি দিয়ে)এই তুমি কি বলতে চাইছো বলোতো? বিয়ের পর সবাই মৃত হয়ে যায়?
আকাশ -ঝিনুক! নিহাদ কিন্তু কথাটা খারাপ বলেনি।বিয়ের পর ছেলেদে সব কিছুই চেঞ্জ হয়ে যায়।নিজের ইচ্ছা মতো কিছু করা যায়না।
সুমি -আমি কিন্তু এইখানেই বসে আছি।আমি কি তোমাকে কোনো কিছু নিয়ে বারণ করেছি?এই প্রাপ্তি তুই করেছিস আয়ানকে কখনো?
আয়ান -সুইট হার্ট! প্রাপ্তি কিন্তু আমায় কোনো দিন কিছু বলেনি।আমি যেই ভাবে ইচ্ছে হয়েছে সেইভাবেই চলেছি।
প্রাপ্তি -ভাবী! আমি কি বারণ করবো বলো? নিজের ইচ্ছে মতো চললেও খারাপ কিছুতো করেনা।তাই আমার কখনো বারণ করতে হয়নি।শুধু চুপচাপ দেখেই যেতাম।
সবার কথা শুনে আসিফ বললো,এইতো দেখছি পুরোই ঝামেলা। প্রাপ্তি! তোরা কি জেনে শুনে আমাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছিস নাকি?
প্রাপ্তি -ভাইয়া তুই কি এখনো ছোটো বাচ্ছা? আজ তোর বিয়ে এখন তো একটু সিরিয়াস হও।
সিয়াম ফোনে কথা বলতে বলতে এসে এইযে সবাই নাস্তা করতে এসেতো ভালোই আড্ডা দিচ্ছেন! মেয়ের বাড়ি থেকে নিশান ফোন করেছে আমরা কখন রওনা দিবো?
কিন্তু আপনারা সবাই যে ভাবে আড্ডা দিচ্ছেন আজকে তো রওনা দিতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।
আয়ান -সিয়াম কিন্তু ঠিক কথায় বলেছে।মেয়েদের তো আবার সাজতে সাজতে একদিন কাটিয়ে দেয়।
অরণী -ভাইয়া নিজের বউ সাজেনা বলে আমাদেরকে কথা গুলো বলছো তাইতো?
আকাশ -আচ্ছা সবাই যাও রেডি হয়ে নাও।সিয়াম কিন্তু সত্যি বলছে মেয়েদের বাড়িতে যেতে অনেক লেট হয়ে যাবে।
আকাশের কথা শুনে সবাই উঠে গেলো রেডি হওয়ার জন্য।
চলবে,,,,,,,