ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২৬

0
3716

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

__প্রাপ্তি আয়ানের দিকে অবাক চোখে নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।,,,,,,
মনে মনে ভাবছে আচ্ছা এইটা কি পাগল নাকি অন্য কিছু।কেউ এইভাবে কারো,, ওয়াক থুঃ,,

আয়ান -এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? আর অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।ভালোবাসার মানুষের সবকিছু ভালো লাগা উচিত হকনা ঘাম তাতে কি?( কথার ফাঁকে আয়ান খাবার অর্ডার দিয়ে দিলো)

অরণী কথা শেষ করে এসে বসতে বসতে কি ব্যাপার দুজনে কথা শেষ হয়েছে? হলে খাবার তাড়াতাড়ি দিতে বলো।

প্রাপ্তি আবারো আড় চোখে পাশের টেবিলের দিকে তাকাচ্ছে।কেনো আমার এই ভদ্র লোককে এতো চেনা মনে হচ্ছে।ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে ওনি আমাদের দিকে রাগীভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে।কিন্তু কেন?

ওয়েটার এসে অনেক রকমের খাবার এনে দিয়ে গেলো।
আয়ান -প্রাপ্তি এইরকম ভাবে না থেকে খাওয়া শুরু করো।
প্রাপ্তির সেইদিকে কোনো মন নেই।আয়ান প্রাপ্তির অন্যমনস্ক দেখে, এই তুমি আমার দিকে তাকাওতো আমি তোমায় খাইয়ে দিচ্ছি।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি বললো আচ্ছা ঠিক আছে আমি খেয়ে নিচ্ছি।
আয়ান -একদম চুপ! হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।কথাটা বলেই প্রাপ্তিকে জোর করে খাইয়ে দিলো।

প্রাপ্তি -এইবার আপনি খান।

আয়ান -অরণী! প্রাপ্তি আজ আমাকে একবার তুমি বলে ডেকেছে।এখন আবার আপনিতে চলে গেলো।

অরণী – কিরে? সকালে তোকে বলছিনা ভাইয়াকে তুমি বলে ডাকতে?

প্রাপ্তি -অভ্যাস হয়ে গেছে পাল্টাতে তো সময় লাগবে তাই না?

আয়ান – নো প্রবলেম।তোমার যেমনটা ভালো লাগে।
প্রাপ্তিকে পাশের টেবিলে আবার তাকাতে দেখে, কখন থেকে ওই দিকে তাকিয়ে কি দেখছো?দেখিতো! কথাটা বলেই আয়ান ফিরে তাকাতেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আয়ানের হাঁসি মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো।প্রাপ্তি আর অরণী আয়ানের অবস্থা দেখে,
অরণী _ভাইয়া কি হয়েছে? তুমি মুহূর্তের মধ্যেই চেঞ্জ হয়ে গেলা?

প্রাপ্তি -আমার থেকে লোকটাকে কেমন চেনা চেনা লাগছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিনা কোথায় দেখেছি ওনাকে।।

আয়ান গম্ভীর গলায় নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, ওনি আমার আব্বু!
প্রাপ্তি -(বিস্মিত হয়ে) কিহ্।

আয়ান -হুম প্রাপ্তি!

প্রাপ্তি -এই জন্যইতো অনেকক্ষণ থেকে আমার চেনা চেনা লাগছে।কিন্তু ওনি এইখানে কি করছেন?

আয়ান -হয়তো বিজনেসের কোনো কাজে আসছে।

প্রাপ্তি -ওনার সাথে গিয়ে কথা বলবানা?
তুমি এখনো বসে আছো।যাও ওনার সাথে গিয়ে কথা বলো।

আয়ান উঠে দাঁড়াতেই আবিদ চৌধুরী উঠে চলে গেলো। আয়ান তাচ্ছিল্য একটা হাঁসি দিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, প্রাপ্তি! ওনি হচ্ছেন বিখ্যাত বিজনেস ম্যান আবিদ চৌধুরী। ওনার সাথে আমাদের যায়না।

প্রাপ্তি -আমার হ্যাজবেন্ডও কোনো অংশে কম নয়। সেটা ওনাকে বুজতে হবে।আর সেটা আমি ওনাকে বুজাবো।শুধু ভাইয়ার বিয়েটা মিটে যেতে দাও।

অরণী আচ্ছা এখন খাওয়া শেষ করো বাসায় যেতে হবে।বিকালে আবার নাকি মেয়েও দেখতে যাবা।ভাইয়া তোমার বন্ধুকে ফোন করেছো ওদের বাসায় যে যাবা।

আয়ান বসতে বসতে, ওইটা নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবেনা।

প্রাপ্তি -এককাজ করো ভাইয়াকে একটা ফোন দিয়ে দেখো রেশী কে নিয়ে কলেজ থেকে আসছে কিনা।

আয়ান -ভাইয়া আমাকে এসএমএস অনেক আগেই দিয়েছে ওরা বাসায়।

অরণী খাওয়া শেষ করে পানি ঢালতে ঢালতে, তবে যাই বলিস রেশীকে আমার খুব ভালো লাগে।অনেক সহজ সরল একটা মেয়ে।বুজা যাচ্ছে মেয়েটা তোদের অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।আর ভালোবাসবে না কেনো বল তোরা তো ওকে কাজের মেয়ের মতো করে রাখিসনা।

প্রাপ্তি -অরণী! ও অনেক বড় ঘরের মেয়ে হয়তো ভাগ্যে তাকে আমাদের কাছে টেনে এনেছে।শুনেছি ওর বাবা নাকি মেয়েকে অনেক খুঁজেছে।কিন্তু পায়নি।পাবেই বা কি করে ও তো আমাদের কাছেই।জানিস ও বিয়ে থেকে পালিয়ে আসছিলো। ওর সৎ মা নাকি কোনো এক বাজে ছেলের সাথে ওকে বিয়ে দিতে ছেয়েছিলো।কোনোরকম ভাবে সেইখান থেকে পালিয়ে এসে রাস্তার পাশেই বসে ছিলো।তোর ভাইয়া সেই দিন রাতে কোনো একটা কাজে বাহিরে গিয়েছিলো। একা একটা মেয়ে আশেপাশে ছেলেরাও অন্য রকম ভাবে দেখছে। তোর ভাইয়া তো ওকে দেখেই বুজে ফেলেছিলো ও হয়তো পালিয়ে টালিয়ে আসছে।আর ওকে যখন তোর ভাইয়া একবার জিজ্ঞাস করলো যে ও একা কেনো বসে আছে ও সবকিছু গড়গড় করে বলে দিলো।তখন তো তোর ভাইয়া ওকে একা রেখে আসতে পারেনি। তাই সাথে করে নিয়ে এসেছে।আয়ান প্রাপ্তির কথা গুলো শুনছে আর মুখে হাত দিয়ে মিটমিট করে হাঁসছে।অরণী প্রাপ্তি কথা গুলো শুনছে আর বারবার আয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।
অরণী -ভাইয়া কথা জিজ্ঞাস করি?

আয়ান -হুম করো না!

অরণী -আপনি হাঁসছেন কেনো?
অরণীর কথা শুনে প্রাপ্তি রাগি ভাব নিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো।

আয়ান -(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)সত্যি বলছি আমি অন্য কিছু ভেবে হাঁসিনি। একটা কথা ভেবেই আমি হাঁসছি, আর সেটা হলো। তুমি যখন আমার সাথে কথা বলতেনা তখন তো আমি নিজেই বকবক করতাম।আর আমি তখন ভাবতাম আচ্ছা আমি যে এতো বকবক করছি ও কি আমার কথা গুলো শুনে নাকি শুনে না, সেটাও তো বুজতে পারিনা।তবে আজ বুজলাম তুমি আমার সব কথায় শুনতে।

প্রাপ্তি- (একটু ভেংচিয়ে) শু,,,,,,ধু শুনতাম না! ম,,,,,,ন দিয়ে শুনতাম।

আয়ান -জানো অরণী! তবে আমার একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছে তোমার আপুর,সেটা হলো ও আমাকে কখনো সন্দেহ করেনি।কারন যেদিন রাতে আমি রেশীকে নিয়ে এসেছিলাম কিছু না বলে, সেইদিন রেশীকে নিয়ে আমি খুব ভয়ে ভয়ে কলিংবেল চাপলাম। যদি তোমার আপু আমাকে ভুল বুজে কিছু করে বসে।কিন্তু তোমার আপু দরজা খুলে আমাকেই অবাক করে দিয়েছে।কারণ রেশীকে দেখে তার চোখেমুখে বিষণ্ণতার কোনো চাপ নেই।উল্টো মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে রেশীকে বাসায় নিয়ে বসালো।আর রেশীর কি যে যত্ন করেছে তোমাকে বলে শেষ করা যাবেনা।আমি সেইদিন বুজলাম তোমার আপু আমাকে অনেক বিশ্বাস করে।আর আমার প্রতি ওর বিশ্বাস দেখে আমি নতুন ভাবে আবার ওর প্রেমে পড়লাম।

অরণী -আপু দেখেছিস ভাইয়া তোকে কতো ভালোবাসে।আর তুই ভাইয়াকে অনেক কষ্ট দিস।

প্রাপ্তি -অনেক কথা বলা হয়েছে এইবার বাসায় চলো।

আবিদ চৌধুরী বাসায় এসেই চিৎকার দিয়ে, আয়েশা! আয়েশা! কোথায় তুমি?

আয়েশা বেগম নিজের রুম থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এসে, এইরকম বাহিরে থেকে এসে চেঁচাচ্ছ কেনো?
সুমিও উপরের থেকে দৌড়ে নিচে নেমে এলো।

আবিদ চৌধুরী -তোমাদের কি মনে হয় আমি এতোই পাষাণ? আমার মনে কোনো দয়ামায়া নেই।আমি দয়ামায়াহীন?

আয়েশা বেগম -তোমার মনে অনেক দয়ামায়া তাই আমার কলিজা টুকরো টা বউ নিয়ে বাহিরে থাকতে হয়।অবশ্য ভালোই হয়েছে ছেলেটা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে।এইবার কি হয়েছে সেটা বলো।

আবিদ চৌধুরী আয়েশা বেগমের কথা শুনে নিমিষেই যেনো রাগ টা কমে গেলো।চুপচাপ সোফায় বসে পড়লো।

সুমি -বাবা কি হয়েছে আপনার? আপনি যে কাজে গেছেন সেটা হয়নি?

সোফায় মাথাটা হেলান দিয়ে কান্না জড়িতো কন্ঠে, আবিদ চৌধুরী কোনো কাজে হারতে শিখেনি। কিন্তু তার ছেলের কাছেই হেরে বসে আছে।(ঠাট্টা করে)জানো আয়েশা আমার ছেলে বউয়ের প্রতি কি অবিরাম ভালোবাসা দেখে আমি নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেছি।বউয়ের ঘাম খাওয়া হচ্ছে।পাবলিক প্লেসে বউকে খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কথা গুলো শুনে আয়েশা বেগম আর সুমি দুজন দুজানার দিকে তাকিয়ে আছে।

আয়েশা বেগম -কার কথা বলছো তুমি?

আবিদ চৌধুরী -কেনো বুজতে পারোনি? তোমার গুণোধর ছোটো ছেলের কথা বলছি।কথাটা বলেই আবিদ চৌধুরী উঠে নিজের রুমে চলে গেলেন।
সুমি আর আয়েশা বেগম দুজনে কাছাকাছি এগিয়ে এসে হাঁসতে শুরু করলো।

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে