ধর্ষিতা_বউ
পার্ট:২২
__আয়ানের বউ কথাটা শুনেই আবিদ চৌধুরী আয়নের দিকে তাকালো। আয়ান মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়েশা বেগমের দিকে তাকালো সেও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশের দিকে তাকাতেই সে অন্য দিকে ফিরে গেলো। একেক করে সবার দিকে তাকাতে থাকলো একেক জন একেক রকম দেখাচ্ছে।সবার মুখে ভয়েরচিহ্ন। সবার কাছে এমন মনে হচ্ছে যে কোনো এক বাঘের সামনে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।
আবিদ চৌধুরী -সবাই এইভাবে আছো কেনো?সুমি! এই মেয়েটাকে তো সেদিন দেখলাম না।যার সাথে বিয়ে ঠিক করে এসেছি সে কই?
সুমি কিছু বলার আগেই আয়ান মুখ থেকে হাত সরিয়ে আব্বু আসলে,,,,,,,,
আবিদ চৌধুরী হাত দিয়ে ইশারা করে আয়ানকে চুপ থাকতে বললো।সুমি! তুমি কথা বলছো না কেনো?আমি কি প্রশ্ন করছি তার আনসার দাও?
সুমি -বাবা আসলে সেই দিন আমরা যেই মেয়েকে দেখেছিলাম আয়ান সে মেয়ের কথা বলেনি বলেছে এই প্রাপ্তির কথা।ওই মেয়েটার একটা রিলেশন ছিলো যার সাথে প্রাপ্তির বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।বিয়ের দিন প্রাপ্তি জানতে পেরে ওর বোন কে ওই ছেলের হাতে তুলে দেয়।আর আয়ান নিজের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে।
আবিদ চৌধুরী -এতো কিছু হয়ে গেলো আর আমাকে কিছুই জানালে না? (আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে)তুমিও তো আমাকে একবারের জন্য কথা গুলো বলোনি।
যাইহোক তবে বউ আমার পছন্দ হয়েছে।
কথাটা শুনেই সবার মুখে যেনো হাঁসির ঝলক ফুটে উঠলো।
সুমি-বাবা তাহলে আপনি বসুন আমি এখনি মিষ্টি নিয়ে আসছি।আজকে এই খুশির দিনে মিষ্টি না হলে হয়।সুমি গিয়ে মিষ্টি নিয়ে আসলো।প্রাপ্তির হাতে মিষ্টির প্লেট দিয়ে, প্রাপ্তি তুমি বাবাকে মিষ্টি খাইয়ে দাও।
প্রাপ্তি মিষ্টির প্লেট হাতে নিতেই অধরা সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে, ভাবী! তোমাদের নাটকের কাহিনী আরো কিছু বাকী রয়ে গেলো।সেই গুলো বলো জেঠুকে।
ঝিনুক বিড়বিড় করে, এসে গেছে আর দেরী করলো না।কাকা কাকী চলে গেছে এইটাকে যে কেনো রেখে গেলো! সুমি ঝিনুকে চোখ দিয়ে ইশারায় করে বললো এইবার কি হবে?
ঝিনুকও সুমিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো চিন্তা করো না।আয়ান আছে তো।
আবিদ চৌধুরী অধরা কাছে আসতেই জড়িয়ে ধরে কেমন আছো মা!
অধরা -খুব ভালো। জেঠু তোমাকে অনেক মিস করেছি আমি।
আবিদ চৌধুরী -আমি ও। কিন্তু তুমি তখন কিসের নাটকের কথা বলছো?
অধরা -জেঠু! এই মেয়েটা মানে আয়ানের বউ রূপে গুণে সব ঠিক আছে কিন্তু তবে আরেকটা প্রবলেম ও আছে।
আবিদ চৌধুরী আয়ানের দিকে তাকিয়ে, সে প্রবলেম কি অধরা?
অধরা -আয়ান তোমার বউয়ের কথা তুমিই বলো। আমি বললে তো পরে বলবে অধরা সব বলে দিয়েছে।অবশ্য তুমি হয়তো ভাববে আমি এতো কিছু কি করে জানলাম।আয়ান! আমি অধরা চৌধুরী। যে মেয়ের কারনে তুমি আমাকে Avoid করবে তার হাঁড়ির সব খবর না জানলে তো আমার মরেও শান্তি হবে না।সেইদিন সুমি ভাবীকে জিজ্ঞাস করেছিলাম ভাবী অজুহাত দেখিয়ে চলে গেলো তারপর মিনু আপুকে জোর করতেই তারপর সব আমাকে বললো।এতো দিন আমি চুপ করেছিলাম কারণ আমি জেঠু আসার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
আবিদ চৌধুরী -(ধমক দিয়ে)প্লিজ কেউ কি আমাকে বলবে সমস্যা টা কি?
কেউ কিছু বলছেনা সবাই চুপ হয়ে নিচে দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়েশা বেগম নিরবতা ভেঙে, তুমি রুমে চলো ফ্রেশ হয়ে নাও আমরা এইসব নিয়ে পরেও কথা বলতে পারবো।
আয়ান বাবার দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই ঘটনার জন্য নিজেকে আমি আগেই প্রস্তুত করে রেখেছি কিন্তু সময়টা যে এতো তাড়াতাড়ি চলে আসবে এইটা ভাবিনি।
আয়ান -প্রাপ্তি! মিষ্টির প্লেটটা রেখে দাও।(অফিসের ফাইল গুলো এগিয়ে দিয়ে)তুমি এই গুলো নিয়ে রুমে যাও আমি আব্বুর সাথে কথা বলছি।
প্রাপ্তি প্লেট টা সুমির হাতে দিয়ে ফাইল গুলো নিয়ে উপরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই
আবিদ চৌধুরী -দাঁড়াও এখন কেউ কোথাও যাবে না।আগে আমি সব শুনবো তারপর যে যেখানে যাবার যাবে।(আয়েশা বেগমের দিকে এগিয়ে গিয়ে)তুমি এখন সব বলবে। বলো কি হয়েছে?
আয়েশা বেগম – আসলে ছোটো বউয়ের এইখানে কোনো দোষ নেই।মেয়েটা খুব ভালো, অনেক লক্ষী একটা মেয়ে।এই কয়েদিনে সবাইকে এক বাঁধনে বেধে ফেলেছে।
আবিদ চৌধুরী বিরক্তিকর ভাব নিয়ে আয়েশাাাাাাাাাাাাাা আমি এতো গুনো গান শুনতে চাইনি।সমস্যা কি সেটা বলো।
আয়েশা বেগম -(ভয়ে ভয়ে)বলছিতো! সময়তো দিবে নাকি?মানে প্রাপ্তিকে কয়েকটা ছেলে উঠিয়ে নিয়ে Rape করেছে।
আয়েশা বেগম কথা টা বলতেই প্রাপ্তি কান্না ভরা চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। আল্লা তুমি আমাকে এই দিন দেখার জন্য বাঁচিয়ে রাখলে?এইগুলো দেখার আগে মরণ ও ভালো ছিলো।আর কতো সহ্য করবো আমি?
আবিদ চৌধুরী -(চেঁচিয়ে) কিহ্! আর সেই মেয়ে আমার ঘরের বউ।আকাশ! তোমাকে আমি সব দায়িত্ব দিয়ে গেলাম এই দৃশ্য দেখার জন্য?তোমাদের কি করে সাহস হয় এই মেয়েকে বউ হিসেবে ঘরে উটানোর?
আয়েশা বেগম-তুমি একটু শান্ত হও। তুমি এইরকম করলে তোমার প্রেশার টা বেড়ে যাবে।
আবিদ চৌধুরী -আমার জন্য যখন এতোই চিন্তা তাহলে এইটা চিন্তা হয়নি এই মেয়েকে কখনোই এই বাড়ী বউ হিসেবে আমি মেনে নিবো না?এই সমাজে আমার একটা সম্মান আছে সেই সম্মান নিয়ে ছিলিমিলি খেলার অধিকার তোমারদের কে দিয়েছে?আজ আমি এই জায়গা এমনি এসে পৌঁছায়নি।অনেক কষ্ট করেই আজ আমি বিখ্যাত ব্যবসায়ী আবিদ চৌধুরী ।
আয়ান- আব্বু আমার লাইফটাকে তোমার বিজনেসের সাথে যদি তুলনা করো তাহলে ভুল করছো।আমি ওকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছি।
আবিদ চৌধুরী -(তাচ্ছিল্য হাঁসি দিয়ে)ভালোবাসা! এই মেয়েকে? এইসব মেয়েকে ভালোবাসা যায়না।শুধু দয়া করা যায়।যদি তোমার এই মেয়ের প্রতি এতোই দয়া হয়েছে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করে আসতে।
আয়ান-আমি তো ওকে কোনো দয়া করে বিয়ে করিনি।ওকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি।আর আমার ওয়াইফ কে অপমান করার অধিকার তোমার নেই।
আকাশ আয়ানের কথা শুনে, আয়ান!অফিসে যা। আব্বু তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমরা এইসব নিয়ে পরে কথা বলবো।
সুমি তুমি প্রাপ্তিকে নিয়ে রুমে যাও।আমি আয়ানকে নিয়ে যাচ্ছি।
আবিদ চৌধুরী -আকাশ! ওকে আমার সাথে কথা বলেতে দাও। ও কি বলেছে আমার নাকি ওর ওয়াইফকে অপমান করার কোনো অধিকার নেই।তাই নাকি মিস্টার আয়ান! যখন অধিকারের কথায় উঠাইছেন তাহলে শুনেন। আপনি যে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উড়াচ্ছেন,দামী গাড়ী ব্যবহার করছেন,এ সি রুমে ঘুমাচ্ছেন। সব টাকাই আমার।যে জব টা করছেন সেটাও আমার দেওয়া।এখন আপনিই বলুন আমার কি কোনো অধিকার নেই?
আয়েশা বেগম -কি বলছো তুমি এইসব। নিজের ছেলেকে এইভাবে বলতে পারলে?
আবিদ চৌধুরী -আয়েশা! এর মাঝে তুমি এসো না।আমার ছেলে আমাকেই অধিকারের কথা বলছে।কার জন্য করলাম এতো কিছু?যাইহোক আমার এটাই শেষ কথা এই মেয়ে এই বাড়ীতে থাকতে পারবেনা।আমি ফ্রেশ হতে রুমে যাচ্ছি এসেই যেন দেখি এই মেয়ে চলে গেছে।
কথাটা বলেই আবিদ চৌধুরী রুমের দিকে পা বাড়াতেই আয়ান বলে উঠলো, দাঁড়াও আব্বু ও যদি যেতেই হয় তাহলে আমাকেই তো যেতে হবে।কারণ বিয়েতো ওকে জোর করে করেছি আমি।ও তো ইচ্ছে করে এই বাড়ীতে আসিনি।তুমি যখন ওকে মেনে নিতে পারবে না তাহলে আমার ও এই বাড়ীতে থাকা হবে না।
ছেলের কথা শুনে অনেকক্ষণ চুপ করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে আকাশ কে বললো (গম্ভীর ভাবে)আকাশ, ওর থেকে গাড়ীর চাবি টা নিয়ে নাও।ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করে দাও,অসিফের কাজ গুলো বুজে নাও।বাহিরের মানুষকে তো আর এইগুলো দেওয়া যায়না।কথাটা বলে আবিদ চৌধুরী চলে যেতে লাগলেন।
আয়েশা বেগম কাঁদতে কাঁদতে পিছনে যেতে যেতে, কি বলছো তুমি এই সব।তুমি তোমার কথা ফিয়ে নাও।আমি আমার ছেলেকে ছাড়া থেকতে পারবো না।প্লিজ কথা বলো।ও এইভাবে কোথায় গিয়ে থাকবে।হঠাৎ করে এইভাবে বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে বললেই কি চলে যাওয়া যায়? তুমি ওকে কয়েকটা দিন সময় দাও তারপর না হয়,,,,,,
আবিদ চৌধুরী রুমে ঢুকে আয়েশা বেগমকে বাহিরে রেখে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
আয়েশা বেগম কান্ন জড়িতো কন্ঠে, হাত দিয়ে দরজায় থাপ্পড়াতে থাপ্পড়াতে তুমি শুনে রাখো আমি আমার ছেলেকে কখনোই বাড়ী ছাড়া হতে দিবোনা।(চেঁচিয়ে) শুনেছো তুমি!
প্রাপ্তি এখনো সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কান্না করছে।আমার জন্য আজ একটা ফ্যামিলি আলাদা হচ্ছে।আমি কখনোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা। ওনাদের ছেলে বাড়ীতেই থাকুক আমি বরং এই বাড়ী ছেড়ে চলে যাই।সত্যিই তো আমার মতো মেয়েদের ভালো ঘরের কেউ বউ হিসেবে মেনে নিবে না।আমার মতো মেয়েদের কপালে সংসার নামক শব্দটা থাকতে নেই।ঝিনুক,মিনু,আকাশ এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে,আয়ান পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। চোখে বিষণ্ণতার কোনো চাপ নেই।সবাইকে সরিয়ে দিয়ে প্রাপ্তি! উপরে যাও সব কিছু গুছিয়ে নাও।অবশ্য এই বাড়ীতে আমার তেমন কিছুই নেই। তবে তোমার যা কিছু আছে আমার রোজগারের টাকারই কিনা।ওইখানে আবিদ চৌধুরীর কোনো ভাগ বসাতে পারবেনা।আচ্ছা চলো আমি তোমায় হেল্প করছি গুছিয়ে নেওয়ার জন্য।
প্রাপ্তি চোখ মুছে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আপনি যাওয়ার দরকার নেই আমি ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি ও এসে আমাকে নিয়ে যাবে।
আয়ান রাগী ভাব নিয়ে ধমক দিয়ে, সেট আপ,,,এতো দিন যেহেতু আমার সাথে তুমি কোনো কথা বলোনি আজ বলবানা।আমি যা বলছি তাড়াতাড়ি গিয়ে সেই কাজটা করো।
সুমি অধরার কাছে এগিয়ে গিয়ে, শান্তি হয়েছে তোমার? এটাই তো ছেয়েছিলে তাইনা? তোমার মতো মেয়েরা কখনো কারো ভালো দেখতে পারেনা।কি ক্ষতি করেছিলাম আমরা তোমার? বলো!এখন আনসার দিচ্ছো না কেন?
অধরাকিছু না বলে মুখটাকে বাঁকা করে উপরে উঠে গেলো।
চলবে,,,,,,