ধর্ষিতা_বউ
পার্ট:২৮
_বাড়ি ফিরে এসে সবাই তো নীরার প্রশংসা করছে।আজাদ সাহেব সবার কথা শুনে বললেন তোমাদের পছন্দ হয়েছে এইটাতেই আমি খুশি।আমার পরিবার খুশি মানে আমি খুশি।তবে তোমরা আসতে এতো দেরি করলে কেনো?
অরণী -আব্বু নীরার মা তো না খাইয়ে আসতেই দিলোনা।আমি কিন্তু আজ একটা জিনিশ বুজেছি।নীরার মা ও আপুকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।হয়তো ছেলের বন্ধুর বউ বলে কথা আদর তো একটু বেশি করবেই।
আয়ান -অরণী! তোমার কি হিংসে হচ্ছে?(অরণী কে খেপানোর জন্য)এই জন্যই তো বলি কেমন পোঁড়া পোঁড়া গন্ধ আসতেছে।
অরণী -আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।
সিয়াম -অরণী! তোমরা গল্প করো আমার আবার সকালে অফিস আছে।
আয়ান -বাবা আপনি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আমাদের জানিয়েন।আমরা কাল সকালে চলে যাবো।আমার অফিসে কাল যেতেই হবে।
আজাদ সাহেব -আমার মনে হয় সামনের মাসের ৩ তারিখের দিকে বিয়েটা হলে ভালো হবে।আমাদের জন্যও সুবিধা হবে।
অরণী -আব্বু এই মাসেরই তো আজ ১৯ তারিখ বেশি দিন আর সময় কই।
আয়ান -আমার মনে হয় এটাই ঠিক আছে।কি বলো প্রাপ্তি?
প্রাপ্তি -আমি কি বলবো তোমরা যা ভালো মনে করো।
নিলিমা বেগম -প্রাপ্তি আর অরণী তোরা সব কিছু গুছিয়ে এই বাড়িতে চলে আয়।তারপর সব কিছু ভাবা যাবে।
আয়ান -(আয়ান হাই তুলে)প্রাপ্তি উঠো আমার ঘুম আসছে।কাল অনেক সকাল সকাল উঠতে হবে।
কথা শেষ করে সবাই সবার রুমে ঘুমাতে চলে গেলো।
প্রাপ্তি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে এলো,আয়ান বসে বসে অভ্রর সাথে ফোনে কথা বলছে।প্রাপ্তিকে এসে শুইতে দেখে আয়ান ফোন রেখে দিয়ে, বিকেলবেলা যেই কথাটা বলেছি মনে আছে?
প্রাপ্তি -অনেক কথাই তো বললে। কোনটা মনে রাখবো?
আয়ান -বাবু! আমি জানি তোমার মনে আছে, কারণ আমার বউ তো আমি ভালো করেই চিনি।
প্রাপ্তি -তোমার এই সব কথা বাদ দিয়ে ঘুমাও সকালে আবার বাসায় যেতে হবে।
আয়ান -না আমি ঘুমাবো না,আগে তুমি বলো তুমি আমার কথায় রাজি?প্রাপ্তি আমি তোমাকে জোর করবো না তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি কিছুই করবোনা।কথা টা বলেই আয়ান অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো।
প্রাপ্তি চুপ করে বসেই আছে,কি বলবে আয়ানের কথায়। অনেক তো কষ্ট দিয়েছি আয়ান কে। আর কতো কষ্ট দিবো!আয়ানের মতো ছেলে আমার থেকে আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করতে পারতো। আমি তার যোগ্য না তবুও আমায় কতো ভালোবাসে, কতো কেয়ার করে।আমাকে বিয়ে না করলে এতো কষ্ট সহ্য করতে হতো না।ওকে ওর পরিবার থেকে আলাদা থাকতে হতোনা।কথা গুলো ভাবতেই প্রাপ্তির চোখে পানি টলমল করছে।আস্তে করে পিছনদিক থেকে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আয়ানের পিঠে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো।আয়ান প্রাপ্তির ছোঁয়ার অনুভূতি পেয়ে, প্রাপ্তিকে ছাড়িয়ে প্রাপ্তির দিকে ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরে,কি ব্যাপার মহারাণী নিজের ইচ্ছায় জড়িয়ে ধরেছে আমি তো বিশ্বাস করতে পারছিনা।তবে এই জড়িয়ে ধরার মাঝে একটা মায়া লুকিয়ে আছে।দুইটা বছর এতো টা কাছে থেকেও এই মায়াটা বিষণ মিস করেছি।প্রতিটা রাতে তোমার ঘুমের পরে যখন তোমার দিকে তাকাতাম ইচ্ছে করতো তোমাকে একবার ছুঁয়ে দেখি। কিন্তু সাহস হতো না।
প্রাপ্তি -আমি ও মাঝে মাঝে তোমায় দেখেতাম।আমারো ইচ্ছে করতো তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে। কিন্তু কেনো জানি পুরোনো সেই দিন গুলোর কথা মনে হলেই আমার কাছে সব অসহ্য লাগতো।তখন মনে হতো আমি মরে যাওয়াটাই ভালো ছিলো।
প্রাপ্তি কথাটা বলতেই আয়ান প্রাপ্তির ঠোঁটের উপর আঙুল দিয়ে, আর কখনো এই কথা বলবেনা,আজকের জন্য ক্ষমা করে দিলাম।যদি এই কথা তোমার মুখ থেকে দ্বিতীয় বার শুনেছি আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা।
এইভাবে কথা বলতে বলতে কখন দুজনে ঘুমিয়ে পড়লো মনে নেই।
সকালে প্রাপ্তি উঠেই ফ্রেশ হয়ে এসে আয়ানের পাশে বসে একটা শোলা নিয়ে কানে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। আয়ানকে সুড়সুড়ি দিতেই লাফ দিয়ে উঠে বসে দেখে প্রাপ্তি একিবারে গোসল করেই ফ্রেশ হয়ে বসে আছে।
আয়ান -(দুষ্টামি করে)কি ব্যাপার মহারাণী একদম সকাল সকাল গোসল সেরে নিয়েছো।আমার জানা মতে রাতে তো আমি তোমার সাথে কিছু করেনি।
আয়ান -বাসায় যাবা না?আমাদেরকে তো বাসায় নামিয়ে দিয়ে তোমার আবার অফিসে যেতে হবে।তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।বলে প্রাপ্তি উঠতে যাবে তখনি আয়ান হাত টেনে নিজের কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে নাকের সাথে নাক লাগিয়ে এইটা কিন্তু আমার আনসার নয়।
প্রাপ্তি নিজেকে ছাড়িয়ে, এইটাই আনসার বলে উঠে রুম থেকে চলে গেলো।ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে রেশী রেডি হয়ে বসে আছে।
নিলিমা বেগম টেবিলে নাস্তা দিতে দিতে প্রাপ্তিকে আসতে দেখে, দেখনা প্রাপ্তি! রেশী সে সকাল থেকে রেডি হয়ে বসে আছে।কিছু খাচ্ছেও না।তোরা সত্যিই আজ চলে যাবি?
প্রাপ্তি -আম্মু এখন যেতেই হবে। দুইদিন পর তো চলেই আসবো। অরণী তো আছে এখন তোমার কাছে।আমিও থেকে যেতে পারতাম যদি তোমাদের জামাইয়ের অফিসে যেতে অসুবিধা না হতো।(রেশীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে)রেশী নাস্তা করছো না কেনো?
রেশী -তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
সকালে নাস্তা করে আয়ানরা বেরিয়ে পড়িলো, রেশী আর প্রাপ্তিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আয়ান অফিসে চলে গেলো।
আয়ানকে দেখেই অভ্র এগিয়ে এসে স্যার আপনি মিষ্টি খাওয়াবেন কখন?
আয়ান নিজের রুমে যেতে যেতে তোকে কতো বার বলেছি আমাকে স্যার বলে ডাকবিনা।তারপরেও তুই স্যার বলছিস কেনো?
অভ্র -এইটা তো অফিস। ফর্মালিটি মেনে তো চলতেই হয়। তুই অফিসের এমডি মানে আমাদের স্যার তোকে যদি সাবার সামনে আমি আয়ান বলে ডাকি তাহলে আমারও খারাপ লাগবে।সবাই বলবে আমি তোকে বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে ব্যাবহার করছি।
আয়ান -(অভ্রর কাছ থেকে ফাইল গুলো নিয়ে বসতে বসতে)বুজলাম! এখন বল কিসের মিষ্টি তোকে খাওয়াবো?
অভ্র -ভাবীকে কাছে পেয়ে সব ভুলে গেলি?
মিষ্টি দুইটা কারণে খাওয়াবি,
১/ভাবী তোর সাথে এখন ঠিক মতো কথা বলছে।
২/ আসিফ ভাইয়ার বিয়ে।
এখন বল কখন খাওয়াবি?
আয়ান -ওকে আজ রাতেই,তুই আমার বাসায় ডিনার করবি,আর এক সাথে মিষ্টিও খাওয়া হয়ে যাবে।
অভ্র -ওহ্ঃ তোকে তো একটা কথা বলা হয়নি।১২.০০টার সময় আমাদের নতুন ক্লাইন্ট আসবে আর বস বলছে মিটিং টা তুই সামলে নিতে।বস এটাও বলছে তুই ছাড়া ভালো প্রেজেন্টেশন কেউ দিতে পারেনা।
আচ্ছা আয়ান একটা সত্যি কথা বলবি?
আয়ান -তোর সাথে কখনো মিথ্যা বলেছি?
অভ্র-মিথ্যা বলিসনি ঠিকি অনেক কিছু লুকিয়েছিস।আমার মনে হয় এইখানে আসার আগে তুই বড় কোনো কোম্পানিতে চাকরী করেছিস।আমি কি ঠিক বলেছি আয়ান?
আয়ান -তোর হঠাৎ করে এইগুলো মনে হলো কেনো?
অভ্র- হঠাৎ নয় আমার সবসময় তোর কাজ দেখে, তোর লাইফ স্টেইল দেখে মনে হয়।
আয়ান অভ্রর কথা কিছু না বলে চুপচাপ ফাইল গুলো দেখছে আর ভাবছে কি বলবো অভ্রকে? আব্বুর নাম বললে অভ্র হয়তো চিনে যাবে।এতে আমার প্রাপ্তিকেও ছোটো করা হবে।
অভ্র -কিরে কিছু বলছিস না কেনো?
আয়ান -পরে একসময় বলবো।আচ্ছা যে ক্লেইন্ট আসছে ওদের কোম্পানির নাম কি?
অভ্র -চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রি! আবিদ চৌধুরীকে ছিনিস ওনি নিজেই নাকি আজ আসবে।
আমাদের কোম্পানির কাজ নাকি ওনার খুব ভালো লেগেছে।সব তো তোর জন্যই বল?
আবিদ চৌধুরী! নিজের বাবার নামটা শুনেই আয়ানের সব কিছু যেন ঘুরপাক খাচ্ছে।অভ্রর দিকে আশ্চর্য ভরা দুটো চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আয়ান।নিজের হাত থেকে ফাইল গুলো রেখে ঘড়ির দিকে তাকালো আয়ান!সময় আর বেশি নেই হয়তো একটু পর চলে আসবে আবিদ চৌধুরী। কারণ সময়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক তিনি।
অভ্র আয়ানের চোখমুখের অবস্থা দেখে কিরে কি হয়েছে তোর? ওনাকে ছিনিস নাকি আগে থেকে?নাম টা শুনে কেমন জানি মনে হচ্ছে তোকে।
আয়ান- অভ্র মিটিং টা তুই সামলে নিতে পারবিনা? প্রাপ্তিকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।ওই বাড়ি থেকে এসেছে,হয়তো মন খারাপ করে আছে ওকে এখন একটু সময় দেওয়া উচিত।
অভ্র -(অট্ট হাঁসি দিয়ে) তুই এতো বউ পাগল কেন বলতো? মিটিং শেষ করেই বাসায় চলে যাস কেউ তোকে আটকাতে যাবেনা।
এমন সময় অফিসের স্টাফ সাইদ এসে, স্যার আবিদ চৌধুরী এসে মিটিং এ যোগ দিয়েছেন বস আপনাকে ডাকছেন।
সাইদের কথা শুনে অভ্রর দিকে তাকালো আয়ান,
অভ্র -স্যার তাহলে আপনি যান আমি ফাইল গুলো গুছিয়ে আসছি।
আয়ান -সাইদ চলো!
আব্বুর কোম্পানি হয়তো এই কোম্পানি থেকে ছোটো হতে পারে কিন্তু আমার আব্বুতো আমার কাছে ছোটো নয়।অভ্র সবসময় বলে এই কোম্পানিটা আমার জন্যই আজ এতো দূর পর্যন্ত এসেছে।কিন্তু এইভাবে আব্বুর সামনাসামনি হতে হবে আমাকে আমি কখনোই ভাবিনি।
চলবে,,,,,,,,,,