ধর্ষিতাবউ২ পার্ট: ৩

1
3416

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট: ৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তি রান্নাঘরে ঢুকতেই সুমি মুচকি হেঁসে বললো,কিরে আজ পরীর জন্মদিন আর তুই ঘুম থেকে উঠতে এতো লেট করলি? দুজনে কি সারারাত চোর পাহারা দিছিস নাকি?সুমি কথাটা বলতেই ঝিনুক আর রেশী অট্র হাঁসিতে লুটিয়ে পড়ছে।
প্রাপ্তি কথা না বাড়িয়ে, ভাবী! মিনু আপুকে ফোন করেছো? আশফির জন্মদিন জেনেও একটা ফোন দিলো না।
ঝিনুক -ঠিক বলছো। মিনু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর থেকে সবাইকে কেমন জানি ভুলে গেছে।অবশ্য রাহাত মাঝে মাঝে নিহাদের কাছে ফোন দেয়।

সুমি -মিনু দুইদিন আগে আমায় ফোন করেছিলো।বেশ ভালোই আছে।বার বার আশফির কথা জিজ্ঞেস করছিলো।

আয়েশা বেগম এসে দেখে সবাই রান্নাঘরে কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে।
কি ব্যাপার সবাইকে নাশতা দিবে কখন? আজ তো কেউ অফিসে যাবেনা তাই সবাই আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু তোমরা ওদের সকালের নাশতা না দিয়েই কথার ঝুড়ি খুলে বসেছো।

সুমি-এইতো মা! হয়ে গেছে।আসলে মিনুর কথা উঠলো তাই বলছিলাম।
সবাই নাশতা করতে বসেছে।সুমি আশফিকে কোলে নিয়ে, প্রাপ্তি! সবাইকে কফি ঢেলে দে।
প্রাপ্তি সবাইকে দিয়ে আয়ানকে দিতে যাবে তখনি আয়ান চোখ রাংগিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে কফিটা নিজেই ঢেলে নিলো।সকালে তুমি আমার সাথে যা করছো এইটার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।শুধু আশফির জন্মদিনের পার্টিটা মিটে যাক তারপর তোমাকে বুজাবো আয়ান কি জিনিস। আয়ান কথা গুলো ভাবছে আর প্রাপ্তির দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। প্রাপ্তি ভালো করেই জানে আয়ান কেনো তার হাতের কফিটা খেলো না।সকাল বেলা যখন আয়ান প্রাপ্তিকে ভালোবাসা দিয়ে নিজের করে নিতে ছেয়েছিল প্রাপ্তি তখন ধাক্কা দিয়ে আয়ানকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল।।
আয়ান নাশতা শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো। প্রাপ্তি আয়ানকে রুমে যেতে দেখে, কি ব্যাপার ও সবাইকে রেখে রুমে চলে গেলো কেনো?না আমাকে দেখতে হবে ও রুমে গিয়ে কি করছে।প্রাপ্তি রুমে এসে দেখে আয়ান রুমে নেই ফোনটা খাটের উপর রেখে ওয়াশ রুমে গেছে।প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে সরি আয়ান আমি কখনো ভাবিনি তোমার ফোন আমায় এইভাবে লুকিয়ে দেখতে হবে । তবে আমি এর শেষ দেখতে চাই।এতো কিছু জেনেও কেনো জানি তোমার উপর বিশ্বাস হারাতে ইচ্ছে করে না।আমাকে জানতেই হবে এই তানিয়া কে।ফোন টা খুলে দেখে অনেক গুলা মিসড কল আর এসএমএস।ফাস্ট এসএমএস এ লেখা ছিলো,

“আয়ান তুমি তোমার বউয়ের বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাচ্ছো।কিন্তু আমি সারাটা রাত শুধু তোমার কথায় ভেবে কাটাচ্ছি। ”

প্রাপ্তি ভাবছে সব গুলো এসএমএস পড়লে হয়তো আমি ঠিক থাকতে পারবোনা।আচ্ছা লাস্ট এসএমএস টা দেখি,সেই এসএমএস এ লেখা,
“আয়ান আমি তোমার অপেক্ষায় বসে আছি, তাড়াতাড়ি এসো।”

প্রাপ্তি ফোনটা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে, ধুম করে বসে পড়লো খাটে।সুখের সময়টা হয়তো মানুষের জীবনে বেশি দিন টিকে না।আজ কি সেই জায়গায় আমিও এসে দাঁড়িয়েছি।আমি কি পারবো আমার আয়ান কে অন্যের হাতে তুলে দিতে?এর আগেতো আমার মরণ ভালো।কেনো করলে আমার সাথে এইরকম। আমাকে ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে এখন আমায় ভালোবাসার কাংগাল বানাতে ছাইছো।কথা গুলো ভাবতেই প্রাপ্তি হু হু করে কাঁদতে লাগলো।
আয়ানকে ওয়াশ রুম থেকে বেরতে দেখে প্রাপ্তি তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।আয়ানও কিছু না বলে রেডি হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরতে যাওয়ার সময় প্রাপ্তি হাত ধরে ফেললো। আয়ান পিছনে ফিরে দেখে প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে তার হাত টেনে ধরে আছে।

আয়ান -কিছু বলবে?

প্রাপ্তি -কোথায় যাচ্ছো?

আয়ান -তুমি জানোনা? প্রতিদিন সকাল বেলা আমি কোথায় যাই?
আমি অফিসে যাচ্ছি কিছু বলার থাকলে বলো?
আয়ানের কথা শুনে প্রাপ্তি অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, এই কোন আয়ানকে আমি দেখছি।কতো সুন্দর করে গুছিয়ে মিথ্যা গুলো বলে ফেললো?
একটা বার ভাবলেনা প্রাপ্তি যে তোমার মিথ্যা সহ্য করতে পারেনা।

আয়ান -কিছু বললে বলো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ।

প্রাপ্তি -আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে? তোমার সব শক্তি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরো যেনো কেউ তোমার কাছ থেকে আমাকে আলাদা না করতে পারে।

আয়ান- সকালে ন্যাকামি দেখিয়ে এখন কি প্রমাণ করতে চাও।কথাটা শুনে প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে হাত ছেড়ে দিয়ে, যাও তুমি!আর আটকাবো না।যার সাথেই ঘুরতে যাও সাবধানে যেও।সন্ধ্যার আগে ফিরে এসো আজকের দিনে আমি কোনো ঝামেলা চাইনা।

প্রাপ্তির কথা শুনে আয়ানের মুখে কেমন একটা ভয়ের চাপ দেখা যাচ্ছে। আমতা আমতা করে কোনো কারণে তুমি আমায় ভুল বুজছো?
প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে, প্রাপ্তির কাছে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে,সরি লক্ষ্মী। তোমার যতো কষ্ট জমা হয়েছে আমার উপর আমি ফিরে এসে সব দূর করে দিবো।
আয়ান চলে গেলো। প্রাপ্তি তাকিয়ে আছে আয়ানের যাওয়ার পথের দিকে।

তোমার আসতে এতো দেরি হলো কেনো? আমি কখন থেকে তোমার জন্য বসে আছি আয়ান।ভেবেছিলাম আজ সারাদিন তোমার সাথে ঘুরবো বেড়াবো তা না এসেছো লেট করে এখন মুখ গোমড়া করে বসে আছো।
তানিয়ার কথা গুলো আয়ানের খুব বিরক্তিকর লাগছে।তানিয়া হচ্ছে আয়ানের কলেজের ফ্রেন্ড। অবশ্য ফ্রেন্ডের ছেয়ে বেশি কিছু তানিয়া ভাবে।তানিয়া আয়ানকে ভালোবাসে সে কলেজের সময় থেকেই।কিন্তু আয়ান কখনো বন্ধু ছাড়া আর কিছু ভাবিনি।তানিয়ার বিয়েও হয়ে গিয়েছিলো। তখন থেকে তানিয়া তার হ্যাজবেন্ডের সাথে দেশের বাহিরে থাকতো।কিছুদিন আগে তানিয়া খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার বলেছে তানিয়ার ক্যান্সার, বেশি দিন বাঁচবেনা।সেটা শুনেই তানিয়া দেশে চলে আসে তার পরিবারের কাছে। কিন্তু আয়ানকে সে এখনো ভুলতে পারিনি।তাই দেশে এসে আয়ানকে ফোন দেয় দেখা করার জন্য।আয়ানও সব শুনে কাল অফিস থেকেই তানিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো।দেখা করার শেষে তানিয়া কখন যে তার পকেটে ওই চিঠিটা দিয়েছিল আয়ান নিজেই জানেনা।
তানিয়া -জানো আয়ান তোমাকে যখন দেখি মনে কেমন জানি শান্তি শান্তি লাগে। আচ্ছা কাল যে তোমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম পড়েছো?
আয়ান অবাক হয়ে, কিসের চিঠি?

তানিয়া- কাল তোমাকে না জানিয়ে আমার কিছু অনুভূতির কথা লিখেছিলাম ওই চিঠিতে।পড়ে ছিলে?
আয়ানের বুজতে আর বাকি রইলোনা কাল থেকে প্রাপ্তি ওই চিঠি পেয়েই আমার সাথে এইরকম করছে।তানিয়া আমি আসছি!

তানিয়া-কোথায় যাচ্ছো । এইমাত্র আসলে আর এখুনি চলে যাবে।

আয়ান – হ্যাঁ আমাকে যেতেই হবে।আমার প্রাপ্তি যে আমায় ভুল বুজেছে।আয়ান তানিয়াকে আর কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো।

ওই ভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? রেশীর কথা শুনে অভ্র চমকে উঠলো। বলো কি দেখছিলে?

অভ্র -আমার বউটাকে দেখছিলাম।

রেশী -আমাকে তো সারাদিনই দেখো নতুন করে দেখার কি আছে।

অভ্র -তুমি যে আনরোমান্টিক সেটা আমি জানি।তাই বলে মুখে ফুটিয়ে জাগান দিতে হবে না।তোমার ভাই আর ভাবীকে দেখে তো কিছু শিখতে পারো।প্রাপ্তি আয়ানকে কতো ভালোবাসে।আর তুমি! তাকালেও কেনো তাকিয়ে আছি তার কৈফিয়ত ও তোমাকে দিতে হবে।অভ্রর কথা গুলো শুনে রেশী নিচের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলতে লাগলো,আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি হয়তো আমি ভালো করে বুজাতে পারি না।

প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! কোথায় তুমি?
অভ্র উঠে দাঁড়িয়ে আয়ানের গলা না? প্রাপ্তিকে এইভাবে ডাকছে কেনো?
রেশী -চলো তো দেখি কি হয়েছে?

ঝিনুক আয়ানকে দেখে, কিরে কি হয়েছে? তুই এইভাবে ঘামছিস কেনো? মনে হচ্ছে কোথাও কি অঘটন ঘটিয়ে এসেছি।

আয়ান-তার থেকেও বড় কিছু হয়ে গেছে আপু।প্রাপ্তি কই?

ঝিনুক -ও তো আশফিকে নিয়ে রুমে গেলো দেখলাম।।
আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে দৌড়ে রুমের দিকে গেলো।তাড়াহুড়ায় সিঁড়ি বেয়ে উঠাতে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।প্রাপ্তি শোয়া থেকে উঠে এক গ্লাস পানি এনে আয়ানের সামনে ধরলো। আয়ান পানি খেয়ে প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে আয়ানের পাশে বসালো। প্রাপ্তিও চুপচাপ বসে পড়লো। প্রাপ্তি! আমি জানি কেনো তুমি আমার সাথে এইরকম করছো।প্রাপ্তি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ঠকায়,,,,,,,কথাটা শেষ না করতেই আয়ানের ফোন বাজতে শুরু করলো।
ধ্যাৎ! এখন আবার কে ফোন দিলো? ফোনটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখে তানিয়ার নাম্বার। প্রাপ্তি আড় চোখে নাম্বারটা দেখে মনে হচ্ছে তার বুকের ভেতর হাতুড়ি পিটা শুরু করলো। তবুও আয়ানকে কিছু না বলে আয়ানের কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি গুলো লুকানোর চেষ্টা করছে।
আয়ান ফোন রিসিভ করে, ওপাশ থেকে কথা গুলো শুনে, আমি এখুনি আসছি।ফোন আবার পকেটে রেখে,প্রাপ্তি আমি সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো। আব্বু, ভাইয়া এরা সবাই পার্টির সব সামলে নিবে।
আয়ান চলে গেলো, প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে, চোখের পানি মুছে নিচে এলো।
সুমি – প্রাপ্তি! আজকাল আয়ানের কি হয়েছে? এখন আবার দেখলাম তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো?

প্রাপ্তি -ও আসলে জিজ্ঞেস করে নিও।আমাকে বলে যায়নি।
আবিদ চৌধুরী সন্ধ্যা থেকে বার বার আয়ানের কথা জিজ্ঞেস করছিলো। এর ফাঁকে আসিফ আর নীরা এসেছে দেখে, আয়ানের কথা ভুলে গেছে।ওদের সাথে কথায় মগ্ন হয়ে আছে।প্রাপ্তি আশফিকে রেডি করে এনে আকাশের কোলে দিয়ে নিজে রেডি হতে গেলো।সবাই আশফিকে নিয়ে মেতে আছে। প্রাপ্তি রেডি হচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে আজ আমি এতটা সুন্দর করে সাজবো যেন আয়ান চোখ না ফেরাতে পারে।ওই মেয়ে কি আমার থেকেও বেশি সুন্দর যার কারণে আয়ান তার কাছে বার বার ছুটে যায়।প্রাপ্তি নীল রঙের শাড়ি পরেছে,চোখে গাড় কাজল,ঠোঁটে হালকা রঙের একটু খানি ছোঁয়া।সবমিলিয়ে এক অপরুপ সুন্দর লাগছে প্রাপ্তিকে।
জন্মদিনের অনুষ্ঠান ও শুরু হয়ে গেলো কিন্তু আয়ানের কোনো খবর নেই।অনেকক্ষণ তার জন্য অপেক্ষা করেছে,ফোন দিয়েছে শেষমেষ আবিদ চৌধুরীর কথায় অনুষ্ঠান শুরু করলো। সবকিছু হাঁসিখুশি ভাবেই শেষ করলো প্রাপ্তি। যেনো তার কিছুই হয়নি।আয়ানকে দেওয়া কথা সে রেখেছে। পরিস্থিতি যেমনই হোকনা কেনো তাল মিলিয়ে সে চলবে।

চলবে,,,,,,

1 মন্তব্য

  1. Apu jani apni dekhte kmn kintu koyekdin holo apnar golpo porchilam..ajj 2020 year 11 January shesh korlam golpota onek valo lagche amar kache, janina ar kar kache kmn lagche..hashi kanna abhimaan.onek kishu pailam golpota pore..apnake khuh dekhte icche korche.. apnar sathe kotha bolte icche korche..janen apu amr to maa..nei tai..khub chotto belai maa ke hariyechi….apni ki apar ei chotto vai ti ke biswash kore…address ta dite pare…jodi diten..onek ta khushi hoitam..ami apnar answer er opekkhai thaklam…apu..amar phone number ta dilam…apu.plz plz…apu..01747850912

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে