ধর্ষিতাবউ২
পার্ট:৮
_মুনিয়া বাসায় এসে সোজা আয়ানের রুমে গিয়ে প্রাপ্তির ছবির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। ম্যাম কি সত্যি বলেছেন? কাকীর সাথে উনাকে আমি গুলিয়ে ফেলেছি।কিন্তু এতটা মিল কি করে হতে পারে। আয়ান রুমে এসে মুনিয়াকে প্রাপ্তির ছবির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে,মুনিয়া! এই সময় এইখানে?
মুনিয়া -কাকাই! কাকীর আর কোনো ছবি আছে তোমার কাছে?
সুমি মুনিয়াকে তার রুমে খুঁজে না পেয়ে আয়ানের রুমে এসে দেখে, কিরে এখনো ফ্রেশ না হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস? তোকে নিয়ে আমি আর পারিনা।
মুনিয়া -কাকা আমি তোমার সাথে পরে এসে কথা বলছি।
মুনিয়া কলেজে আসতেই প্রাপ্তির একটা ছবি নিয়ে আসলো কিন্তু প্রাপ্তিকে দেখানোর সাহস পাচ্ছেনা। ক্লাস শেষ করেই মুনিয়া আগে বেরিয়ে পড়লো।আদর গাড়ি থামিয়ে কলেজের গেট দিয়ে ঢুকতেই মুনিয়ার সাথে ধাক্কা খেয়ে,
আদর -এই মেয়ে চোখে দেখতে পাওনা? হাঁটো কি ভাবে?
মুনিয়া-সরি! আসলে আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম তাই।আপনার লাগেনিতো?
আদর -না তেমন লাগেনি।
প্রাপ্তি এসে, কি হয়েছে?
আদর -না মা! কিছু হয়নি। তুমি চলো।
মুনিয়া অবাক হয়ে ম্যাম আপনার মা?
আদর -হ্যাঁ আমার মা! আমার শ্রেষ্ঠ মা!
মুনিয়া কিছু না বলে আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে এগুতে লাগলো।কাকাই আজ আসতে পারবে না আমাকে নিজেই বাড়ি ফিরতে হবে।কিন্তু কাল থেকে আমি যা ভেবে আসছিলাম তার সাথে তো আমার ভাবনার কোনো মিলই নেই।আমি ভেবে ছিলাম আমরা হয়তো কাকীকে পেয়ে গেছি।কাকাইকে সারপ্রাইজ দিবো ম্যামকে সামনে দাঁড় করিয়ে। কিন্তু এখন দেখছি ম্যাম আমার কাকী নয়, কারণ আমার কোনো ভাই নেই।ছিলো শুধু আশফি আপু।আর কাকী তো আশফি আপুকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।ম্যাম সত্যিই বলেছিলো, কাকীর সাথে আমি ম্যাম কে গুলিয়ে ফেলেছি।
আজ সকাল থেকেই আবিদ চৌধুরীর শরীরটা ভালো না।আয়ান নিজের রুমে বসে অফিসের ফাইল গুলো দেখছে, সুমি হঠাৎই এসে আয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে, আয়ান তাড়াতাড়ি নিচে আসো বাবার শরীর খুব খারাপ। তোমার ভাইয়া ওইখানেই আছে।।
আয়ান হাতের কাজ রেখে, কখন থেকে? তোমরা তো আমাকে কিছু বলোনি।কথা গুলো সুমিকে বলতে বলতে নিচে নেমে এলো।
হসপিটালের করিডোরে সবাই বসে অপেক্ষা করছে।আবিদ চৌধুরীকে একজন ডাক্তার এসে দেখে গেছেন।ডাক্তার যাওয়ার সময় বলে গেছে নতুন ম্যাডাম এসে দেখে যাবেন।
সন্ধ্যায় আশফি এসে আবিদ চৌধুরীর কেবিনে গিয়ে ভালো করে দেখে রিপোর্ট সব গুলোই চেক করে
মোটামুটি ভালোই। আবিদ চৌধুরীর মাথায় হাত রেখে কেমন লাগছে আপনার কাছে?আর এই বয়সে আপনার কিসের চিন্তা বলুন তো?
আবিদ চৌধুরী -সেটা তো তোমাকে বুজাতে পারবোনা।
আশফি – সিস্টার উনাকে মেডিসিন গুলো ঠিক মতো দিয়ে দিও।আমি আসছি।
আশফি কেবিন থেকে বেরিয়ে মনে মনে ভাবছে কাল মায়ের জন্মদিন রাত ১২.০০ টার আগেই বাসায় গিয়ে পৌঁছাতে হবে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কারো গাঁয়ের ধাক্কা খেয়ে,, সরি
আয়ান -না মা মনি! সরি তো আমার বলা উচিৎ। আমি তাড়াহুড়ায় তোমাকে দেখতে পাইনি।
আশফি কিছু বলতে যাবে এর আগে আদর এসে, আপু তুই এইখানে সারা হসপিটাল তোকে খুঁজেছি। আয়ান পিছনে ফিরে আদরকে দেখে অবাক হয় আরে আদর তুমি এইখানে? অবশ্য তুমি তো ডাক্তার হসপিটালে থাকারই কথা।
আদর -আংকেল! আপনি এইখানে?
আয়ান -আমার বাবাকে নিয়ে এসেছি।
আদর -আংকেল এই হচ্ছে আমার বড় বোন আশফি যার কথা আপনাকে বলেছিলাম।
আশফি -আদর উনাকে তুই আগে থেকে চিনিস?
আদর -আপু উনার সাথে আমার এয়ারপোর্টে দেখা হয়েছিলো আসার সময়।উনার মেয়ের নাম ও আশফি।
আশফি-ও আচ্ছা।তুই এখন হসপিটালে কি করছিস?
আদর -ভুলে গেছিস কাল মায়ের জন্মদিন। আর তুই এখনো হসপিটাল আছিস তাই নিতে আসলাম।
জন্মদিনের কথা শুনে আয়ানের মন খারাপ হয়ে গেলো।কারণ আজ তার পরীর ও জন্মদিন। প্রতি বছর এইদিনে সে একা একাই কাটায়।
আশফি -আংকেল আপনি কি কিছু ভাবছেন?
আয়ান-(ভাবনা থেকে ফিরে এসে)না কিছু না! তুমিই মনে হয় বাবা কে দেখেছো? এখন কেমন আছে উনি।
আশফি- অনেকটাই সুস্থ।ইচ্ছা করলে কালকেই বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন।আর হ্যাঁ উনার বিশেষ যত্ন নিবেন।
আদর আশফির কথা শেষ হতেই, আংকেল কাল আপনি আমার মায়ের জন্মদিনে আসুন না।আমার মা আপনাকে দেখলে খুশি হবেন।
আয়ান-না আদর! অন্য একসময় যাবো।
আশফি -আংকেল চলুন না। আসলে আমরা এইখানে কাউকেই চিনিনা।আদর যখন আপনাকে আগে থেকেই চিনে তাহলে তো আর অসুবিধা নেই।
আশফির কথা শুনে তোমরা এইখানে নতুন নাকি?
আদর -জ্বি আংকেল।এখন কি! যাবেন তো?
আয়ান -এইখানে কোথায় এসেছো তোমরা?
আশফি বাড়ির ঠিকানা বলতেই আয়ান অবাক হয়ে, আরে ওই বাড়িটা তো আমার ছিলো।
আশফিও বিস্মিত হয়ে তার মানে বাশার আপনার কথা বলেছিলো?
আপনার ওয়াইফ,,,,আদর আশফিকে থামিয়ে, তাহলে তো আংকেল ভালোই হলো। কাল যেনো আমরা আপনাকে আমাদের বাসায় দেখি।
আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে, আচ্ছা চেষ্টা করবো।
আশফি -তাহলে আংকেল আমরা আসি!আর আপনার বাবার দিকে খেয়াল রাখবেন।
সাবিত সাহেবকে খাইয়ে প্রাপ্তি শুয়ে দিয়ে বাবা কালকের দিন তোমার মনে নেই তাই না?
সাবিত সাহেব -কেনোরে মা! কালকের দিন,,,, ওহঃ আমি তো ভুলেই গেছি।কাল তো তোর জন্মদিন।আমি ভুলেই গেছি।আমার নাতিনাতনিরা কাল যে ওদের মায়ের জন্মদিন তারা কি ভুলে গেছে?..
রাত ১২.০০ টা আশফি আর আদর একটা কেক নিয়ে এসে happy birthday to you আমাদের লক্ষ্মী মা।
প্রাপ্তি আর সাবিত সাহেব অবাক হয়ে,
সাবিত সাহেব -তোরা ভুলিসনি?
আদর-না নানা ভাই! মায়ের জন্মদিন আমরা ভুলতে পারি?
চলো মা! কেক কাটো।
ছেলেমেয়ের কান্ড দেখে চোখ দিয়ে গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। ২৬ বছর পর আবার এই শহরে তার জন্মদিন পালন করছে তার ছেলেমেয়েরা। আয়ানের হয়তো মনেই নেই আজকের দিনের কথা।তার পরীর জন্মদিনে সবসময় সেই সারপ্রাইজ দিতো।
মা! তুমি এতো কি ভাবছো?তাড়াতাড়ি কেক কাটো।আশফির কথা শুনে ভাবনা থেকে ফিরে এসে আমার ছেলেমেয়ে সত্যি অনেক বড় হয়ে গেছে।
সাবিত সাহেব বসতে বসতে, হ্যাঁ প্রাপ্তি। সবচেয়ে বড় কথা হলো তোর মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে ।
আশফি -তুমি থাকতে আমার আর বিয়ের দরকার আছে?
আদর -আচ্ছা ঠিক আছে মা এইবার তুমি কেকটা কাটো।
প্রাপ্তি কেক কেটে সবাইকে এক এক করে খাইয়ে দিলো।
আদর কেক খেতে খেতে,মা! কাল আমাদের বাসায় একজন গেস্ট আসবে।আসলে এইখানে আসার আগে উনার সাথে আমার পরিচয় হয়।আজ আবার আপুর হসপিটালে দেখা হয়েছে।তাই আপু সহ উনাকে কাল আসার জন্য ইনভাইট করে আসলাম।
প্রাপ্তি -ভালো করেছিস।এখন যা রাত অনেক হয়েছে।বাবা তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো আমি আসছি।
সকাল সকাল উঠে প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গেলো।বারান্দায় আসলে তার মন ভালো হয়ে যায়।বাড়িটা যে বিক্রি করেছে সেই লোকটার পছন্দ আছে।বারান্দায় বিভিন্ন রকমের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে।প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে, লোকটার সাথে আমার অনেকটাই মিল আছে ।আশফি এককাপ কফি নিয়ে প্রাপ্তির রুমে এসে প্রাপ্তিকে না দেখে বারান্দা গিয়ে, জানতাম তুমি এইখানেই আছো।এই নাও তোমার কফি।
প্রাপ্তি কফি হাতে নিয়ে কফির কাপে চুমুক দিতেই,
আশফি-আমি এইখানে কেনো এসেছি জানো?
প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে, কেনো?
আশফি -আজ তুমি কলেজে যাবে না।আজকের এই বিশেষ দিনটি আমরা একসাথে থাকতে চাই।
প্রাপ্তি -ওকে মহারানী।
আশফি আর আদর বাড়িটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছে।মায়ের জন্মদিন বলে কথা।এই শহরের কাউকে তেমন চিনেনা।এসেছে মাত্র কয়েকদিন হলো ব্যস্ততায় কারো সাথে তেমন পরিচয় হয়ে উঠেনি।
বাশার এসে দেখে প্রাপ্তি নিজেই সব রান্না করেছে।সন্ধ্যা হয়ে এলো, সাবিত সাহেব বাশার কে দিয়ে প্রাপ্তিকে নিজে রুমে ডেকে পাঠালেন।
প্রাপ্তি সাবিত সাহেবের রুমে যাবার জন্য পা বাড়াতেই,মা! আগে তুমি রেডি হয়ে আসো তারপর নানা ভাইয়া ঘরে যাবে।আদর আবার ওই আংকেল কে এগিয়ে আনতে গেছে।আদর এসে যদি দেখে তুমি রেডি হওনি তাহলে তোমার খবর আছে।
প্রাপ্তি আশফিকে আর কিছু না বলে রেডি হয়ে সাবিত সাহেবের রুমে গেলো।
প্রাপ্তিকে দেখে সাবিত সাহেব বসে, আয় মা! আমার পাশে বস!
আজ তোর জন্মদিনে আমার দিবার মতো তেমন কিছু নেই।তবে একটা জিনিস আছে, কথাটা বলে বালিশের নিচ থেকে কিছু কাগজ পত্র বের করে, এই নে!
প্রাপ্তি কাগজ গুলো হাতে নিয়ে বাবা এই গুলো তো জায়গার দলিল।
সাবিত সাহেব -হুম,আমার যা কিছু আছে আজ থেকে সব তোর।আমার তো কেউ নেই এইগুলো দিয়ে আমি কি করবো।কিন্তু আমার মেয়ের জন্মদিনে এইগুলা আমার মেয়েকে আমি উপহার দিলাম।
প্রাপ্তি কান্না জড়িত কন্ঠে, বাবা আমার এইসব কিছুই চাইনা।এই অভাগী কে তুমি তোমার নিজের মেয়ে বলে সমজে স্বীকৃতি দিয়েছিলে এইটাই আমার জীবনে সবচেয়ে বড় উপহার।
বাশার রুমে দরজায় দাঁড়িয়ে, খালাম্মা ভাইজান আর ওই মামা এসে ড্রইংরুমে বসে আছে, আপনাকে ভাইজান ডাকতেছে।
প্রাপ্তি -বাশার তুমি যাও আমি আসছি।
আয়ান ড্রইংরুমে বসে আছে,সব কিছু দেখে একটু অবাক হলো।বাড়িটা সে যে ভাবে সাজিয়েছে সেইভাবেই আছে।শুধু দেওয়ালের ছবি গুলো এরাই লাগিয়েছে, আয়ান কথা গুলো ভাবতে ভাবতে একটা ছবির দিকে চোখ পড়লো,এই সে কাকে দেখছে আশফি আর আদরের সাথে আমার প্রাপ্তি, আয়ান সোফা থেকে উঠে আস্তে আস্তে ছবির দিকে এগুতে লাগলো।এইদিকে প্রাপ্তি শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুচতে মুচতে ড্রইংরুমে এসে আয়ানের সাথে ধাক্কা খেয়েই আয়ানের বুকের সাথে মিশে গেলো।
চলবে,,,,,,,