ধর্ষিতাবউ২
পার্ট:৫
আমেরিকার এয়ারপোর্টে বসে আছে আয়ান! অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশে আসার জন্য।হঠাৎ করেই একটা ছেলে এসে আয়ানের পাশে বসলো।আয়ান পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে ছেলেটা নিজের ব্যাগ ঠিক করে রাখছে।ছেলেটার চেহারায় অনেক মায়া আছে ছেলেটা ব্যাগ রেখেই আয়ানের দিকে চোখ পড়তেই মুচকি হেঁসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে, হাই! আমি ইশফিয়াক চৌধুরী আদর।
আয়ান ও হাত বাড়িয়ে আমি আয়ান চৌধুরী। আবার দুজনেই চুপ করে বসে আছে।খানিকক্ষণ পর আয়ান নিরবতা ভেঙে, তুমি আমার ছোটো তাই তুমিই করেই বলছি, দেখে তো বুজা যাচ্ছে দেশেই যাচ্ছো। আমেরিকায় কি কাজে আসছো?
আদর- it’s ok.আমি ডাক্তার।এইখানেই পড়াশুনা শেষ করেছি। কিন্তু মায়ের আদেশ বাংলাদেশে চলে যাওয়ার জন্য।
আয়ান-মা কে অনেক ভালোবাসো?
আদর -অনেক অনেক ভালোবাসি! কারণ আমার জীবনে মা আর আপুই সব।আচ্ছা আপনি কেনো আসলেন?
আয়ান -আমি বিজনেসের কাজে আসছি।
আদর -হুম,,আপনাকে আংকেল বলে ডাকতে পারি?
আয়ান – দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে,, কেনো পারবেনা! হয়তো তোমার বয়সের আমার একটা ছেলে থাকতো।অবশ্য আমার একটা মেয়ে ছিলো।
আদর -ছিলো মানে? এখন কোথায়?
আয়ান -জানিনা।তবে আমার মেয়ে আশফি আমার মনে সারাক্ষণই বিরাজ করে।।
আদর-আশফি! আমার বড় আপুর নামও আশফি। দেখেছেন আংকেল আপনার সাথে কেমন যেনো মিলে গেলো ।
আয়ান -সব কিছু বিধাতা মিলায়না।যাইহোক, এই নাও আমার ভিজিটিং কার্ড যদি কখনো মনে পড়ে চলে এসো।আজকের মতো আবার দুজনে জমিয়ে আড্ডা দিবো। তোমার সাথে কথা বলে ২৬ বছর পর মনে শান্তি পেলাম।আদর মুচকি হেঁসে আংকেল আপনাকে আমারও খুব ভালো লেগেছে।অবশ্যই দেশে গেলে আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। আদরের কথা শুনে আয়ানের চোখ গুলো কেমন টলমল করছে,আদরের থেকে উঠে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলো,আমার পরী আমার জীবন থেকে চলে গেছে ২৬ টা বছর হয়ে গেলো।এই ২৬ বছরে মনে হলো এই ছেলেটাই আমার কাছে অনেক আপন। বাংলাদেশে এসে দুইজন দুই দিকে পা বাড়ালো।আয়ান চললো চৌধুরী বাড়ির দিকে আর আদর চললো তার মায়ের কাছে।
মা! মা! কাকাই আসতে এতো দেরি করছে কেনো বলো তো।কাকা এইবার অনেক দিন পর দেশে আসছে।তুমি দেইখো কাকাই শুধু এইবার আমাকেই ভালোবাসবে।মেয়ের কথা শুনে সুমি খুব বিরক্তিকর ভাবে মেয়ের দিকে তাকিয়ে সকাল থেকে অনেক বকবক করেছিস তোর কাকাইকে নিয়ে এইবার উপরে যা। যখন তোর কাকাই আসবে তোর কাকাই তোকে ডেকে নিবে।সুমির কথা শেষ হতেই আয়ান সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে আমার মা মনিকে বকছো কেনো তুমি?মুনিয়া কাকাই এসে গেছি এখন আর তোমাকে কেউ বকা দিবেনা।মুনিয়া দৌড়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাকাই মাকে ভালো করে বকে দাওতো।
আয়ান -আচ্ছা একটু পর দিচ্ছি।করিম (নতুন কাজের লোক)গাড়ি থেকে আমার ব্যাগ গুলো নিয়ে আসো তো।
আবিদ চৌধুরী আর আয়েশা বেগম আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে এসে,,
আবিদ চৌধুরী -কখন এলি? আমি এতোক্ষণ এইখানে বসেই তোর অপেক্ষা করছিলাম।তোর দেরি দেখেই রুমে গেলাম।
আয়ান-এইতো আব্বু কিছুক্ষণ।
সুমি-বাবা! কাকা ভাতিজী এক সাথে হলে আর কারো কথা মনে থাকে?আয়ান আগে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।পরে কথা বলা যাবে।
মুনিয়া- কাকাই মা ঠিক বলেছে আগে ফ্রেশ হয়ে আসো।
আয়ান নিজের রুমে গিয়ে কোর্ট খুলে দেওয়ালের প্রাপ্তির ছবির দিকে নজর পড়তেই, কেমন আছো তুমি? আমাকে কষ্ট দিয়ে কি তুমি সত্যি ভালো থাকতে পারবে।না আমি অভিশাপ দিচ্ছি না।শুধু বলছি আমার প্রাপ্তিও তো আমায় ভালোবাসতো।আমার প্রাপ্তি তো আমায় ছাড়া ভালো থাকতে পারেনা।আচ্ছা প্রাপ্তি! আমার ভালোবাসায় কি কোনো খাদ ছিলো? কেনো চলে গেলে তুমি আমায় একা রেখে খুব কষ্ট হয় আমার।তোমাকে একটা মিথ্যা বলায় ২৬ টা বছর এর শাস্তি পেতে হবে আমি কল্পনায় করিনি।(আয়ান ছবি তে হাত রেখে)মিস করি তোমায় আর আমার মেয়েকে।আমার মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে তাইনা?
তোর মেয়ে শুধু বড় হয়নি হয়তো বিয়েও হয়েছে।কথাটা শুনে পিছনে ফিরে দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে।
আয়ান-ভাইয়া কখন এলি?
আকাশ-কিছু ক্ষণ! তুই এখনো ফ্রেশ না হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।
গাড়ি থেকে নেমেই আদর সদর দরজা দিয়ে বাসায় ঢুকে মা! মা! কোথায় তুমি? আদরের মা রুম থেকে বেরিয়ে এসে, কখন থেকে তোর জন্য ওয়েট করতে ছিলাম।তোর দেরি দেখে ভাবলাম ফ্রেশ হয়ে আসি।আদর তার মাকে জড়িয়ে ধরে। I miss u মা! অনেক অনেক করেছি তোমায়?
আদরের মা আদরের কপালে চুমু দিয়ে পাগল ছেলে।আমি ও আমার ছেলেকে অনেক মিস করেছি।তুই ডাক্তার হয়ে ফিরে এসেছিস এতেই আমার সব অপেক্ষার অবসান হয়েছে।এখন আর কোনো কষ্ট নেই।
আদর -মা! আপু কোথায়? আমি আসবো জেনেও এখনো বাসা এলোনা?
ডাক্তার আদর আপনি ভুল বুজছেন। আদর পিছনে ফিরে নিজের বোন আশফিকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আমার হসপিটালে ইমারজেন্সি রুগি ছিলো তাই না গিয়ে থাকতে পারলাম না। হসপিটালে যেদিন থেকে জয়েন করবি সেদিন থেকে বুজবি দায়িত্ব কাকে বলে।
আশফির কথা শুনে আদর আশফির নাক টেনে দিয়ে, জ্বি ডাক্তার আপু বুজেছি।।
আশফি আদরকে নিয়ে একটু এগিয়ে এসে দেখেছো মা!
মা-হুম দেখেছি।আদর! যার জন্য আজ তুই দুনিয়ায় আলো দেখেছিস তাকে বলবিনা?
আশফি- কি! তুই এখনো দেখা করিসনে? আদরের কান টেনে ধরে চল আমার সাথে।
আদর গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে, মিঃ সাবিত সাহেব আসবো?
সাবিত সাহেব -কে? গলাটা কেমন চেনে লাগছে।
আশফি ধাক্কা দিয়ে আদরকে রুমে ঢুকিয়ে, নানা ভাই, আদর আসছে দেখো।সাবিত সাহেব খুব বুড়ো মানুষ তাই চোখে কম দেখেন।চশমা টা খুঁজে নিয়ে চোখে দিতে দিতে আদর এসেছে?কই আমার আদর নানা ভাই। কতো বছর তোকে দেখিনা।তোর মা কে কতো করে বললাম আমার নানা ভাই দেশে থেকেই পড়াশুনা করবে। কিন্তু না তোর মা জেদ ধরেছে তোকে বড় ডাক্তার বানাবে।তাই আমিও আর জোর করলাম না।
আদর সাবিত সাহেবের পাশে বসে আমিও তোমাদের অনেক মিস করেছি এখন চলো মা অপেক্ষা করছে খাবার নিয়ে, চলো এক সাথে খাবো।
আদর আর সাবিত সাহেব ড্রইংরুমে এসে কই তোর মা” প্রাপ্তি! প্রাপ্তি!
প্রাপ্তি এসে এইতো বাবা আমি রান্নাঘরে ছিলাম। খাবার আনতে গেছি।তুমি বসো না! নাতিনাতনিদের সাথে একসাথে বসে খেয়ে নাও।
সাবিত সাহেব বসতে বসতে, প্রাপ্তি মা” আজ তো আদর ডাক্তার হয়ে এসেছে, কথাটা ভেবেছিলাম বলবো না।কিন্তু না বলেও পারছি না।তাই বলছিলাম ওদের বাবা,,,,,, প্রাপ্তি সাবিত সাহেবকে থামিয়ে বাবা আপনি খেয়ে নিন।আর ওদের বাবা নেই।বাবা ছাড়া কি ছেলেমেয়ে মানুষ করা যায় না? হ্যাঁ হয়তো সেই দিন আপনি না থাকলে আমি অজানায় হারিয়ে যেতাম।হয়তো আমার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে না খেয়ে মরতে হতো। শুধু মেয়ে কেনো বলছি! আমার ছেলে যে কিনা আমার গর্ভে দুই মাসের বাচ্ছা। হয়তো সেইদিন জানতাম না আমি আরেক সন্তানের মা হতে যাচ্ছি।আর সেইদিন যদি বাস স্টেশন থেকে আমাদের না নিয়ে আসতে হয়তো আমরা কোথায় হারিয়ে যেতাম। কথা গুলো বলতে বলতে প্রাপ্তি কান্নায় ভেঙে পড়লো।আশফি নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে, মা! প্লিজ তুমি কেঁদো না।আমাদের বাবার দরকার নেই। তুমি আমাদের কাছে বাবা মা সব।আদর উঠে এসে হ্যাঁ মা আপু ঠিক বলেছে তুমি আমাদের কাছে সব।আমার লক্ষ্মী মা! প্লিজ কাঁদেনা।
প্রাপ্তি চোখ মুছে তোদের একটা কথা বলা হয়নি। আমাদের কাল এই বাসা ছেড়ে যেতে হচ্ছে।আমার কলেজ থেকে বদলির অর্ডার আসছে।
কেউ আর কিছু বললো না সবাই চুপচাপ খেয়ে নিলো।
প্রাপ্তি -তোরা গিয়ে রেস্ট নে আমি বাবা কে নিয়ে তার রুমে যাচ্ছি।
প্রাপ্তি সাবিত সাহেব কে রুমে নিয়ে এসে খাটে বসিয়ে নিজেও পাশে বসে,আমার কথায় তোমার কষ্ট লেগেছে তাইনা।
সাবিত সাহেব -নারে,,,,মা! কষ্ট লাগে নাই।তবে এই ২৬ বছর তুই অনেক কষ্ট করেছিস।নিজেকে সুশিক্ষিত করে কলেজের শিক্ষক হয়েছিস।ছেলে মেয়ে দুজনকেই ডাক্তার বানিয়েছিস।তোর এই কষ্টের সাক্ষী যে আমি নিজে।
চলবে,,,,,,