ধর্ষিতাবউ২
পার্ট:৪
_আয়ান হসপিটালের ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষা করছে আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।রাত ১২.২০,প্রাপ্তি হয়তো আমার অপেক্ষায় বসে আছে।বিকেল থেকে ফোনেরও চার্জ নেই। হয়তো সবাই মিলে আমাকে বকাঝকাও করেছে।কথা গুলো ভাবছে আর হাত দিয়ে মুখটাকে মুছে নিচ্ছে।হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে দেখে তানিয়ার মা।
আয়ান-আন্টি! কিছু বলবেন?
তানিয়ার মা- আয়ান! তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো। তোমাকে ফোন দিয়ে বলার পর তুমি যদি না আসতে তাহলে হয়তো আমার মেয়েটার খারাপ কিছু হয়ে যেতো।।
আয়ান -আন্টি আমি ওর বন্ধু আর বন্ধু হিসেবে আমি এইটুকু করতেই পারি।আর সময় মতো তানিয়াকে আপনি হসপিটালে নিয়ে এসে আপনি ভালোই করেছেন।
তানিয়ার মা- হ্যাঁ সকালে তোমার সাথে দেখা করে বাসায় ফিরে মেয়েটার যে কি হলো,, বলেই তানিয়ার মা হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো।।
আয়ান -প্লিজ আন্টি ভেঙে পড়বেন না।আমি আপনাদের পাশে সবমসময় আছি।
তানিয়ার মা আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো, জানি বাবা।তবে তুমি এখন বাসায় যাও। তোমার পরিবারের সবাই হয়তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে ঠিক আছে আন্টি কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন।
আসিফ আর নীরাকে বিদায় দিয়ে প্রাপ্তি আশফিকে এনে ঘুম পাড়ালো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে খাট থেকে নেমে উঠে দাঁড়িয়ে দেখে আয়ান রুমে ঢুকছে,আয়ানকে দেখে প্রাপ্তি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। আয়ান প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে এসে আমার পরীটাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।আমি জানি পার্টিতে সবার চোখ আমার পরীর দিকে ছিলো। প্রাপ্তির রাগান্বিত চোখের দিকে তাকিয়ে,আয়ান নরম স্বরে বললো, সরি! আসলে পরিস্থিতি এমন ছিলো যে আমি,,,,,, আয়ানকে বলার সুযোগ না দিয়ে প্রাপ্তি আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আয়ানের ঠোঁটে সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নিলো। আয়ানও প্রাপ্তির ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারলোনা। প্রাপ্তির ভালোবাসায় আস্তে আস্তে নিজেকে হারাতে লাগলো।
রাত ৩.০০ টায় আয়ানকে রেখে প্রাপ্তি ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো।আয়ান পিছন থেকে আবার জড়িয়ে ধরে, তুমি ফ্রেশ হয়ে এলে যে? চলোনা তোমায় আরেকটু,,,, প্রাপ্তি আয়ানের মুখে আঙুল দিয়ে, আমার থেকে কি ওই মেয়েটা তোমায় ভালোবাসা বেশি দেয়? যার কারণে বার বার ওই মেয়ের কাছে ছুটে যাও।আমার শরীর তোমার কাছে ভালো লাগেনা তাইনা?ওই মেয়েটার ভালোবাসা দিয়ে নিজেকে রাঙিয়ে আমার কাছে আসো তাইনা।এখন বলো তো সারারাত তোমাকে যে ভালোবাসা দিলাম ওই মেয়েটার থেকে কম পড়ছে? আর কতো ভালোবাসা দিলে তুমি ওই মেয়ের কাছে যাবেনা?
আয়ান কথা গুলো শুনে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে প্রাপ্তির গালে থাপ্পড় দিয়ে, একদম চুপ!
কি বলছো আবল তাবল এই গুলো? মাথা ঠিক আছে তোমার?
বাড়ির সবাই শুনলে কি বলবে?
প্রাপ্তি চেঁচিয়ে, লজ্জা করছে তোমার? যখন ওই মেয়েটার কাছে যাও তখন লজ্জা লাগেনা?
তখন একবারো মনে হয়না বাড়ির কথা।আরে আমার কথা না হয় বাদেই দিলাম তোমার তো একটা মেয়ে আছে ওর কথা তো ভাবতে পারতে?
আয়ান করুন গলায় বলতে লাগলো, প্রাপ্তি প্লিজ, আমার কথা ঠান্ডা মাথায় একবার শুনো,আমি তোমাকে সব বুজিয়ে বলছি।
প্রাপ্তি -থাপ্পড় দিয়ে বুজাতে আসছো। কি বুজাবে তুমি? সব মিথ্যে? হ্যাঁ আমি অন্ধের মতোই তোমাকে বিশ্বাস করেছি।কিন্তু তুমি আমার সেই বিশ্বাসের কি মূল্য দিয়েছো।তোমার থেকে তো সায়মন ও ভালো ছিলো।অপকর্মের কথা গুলো নিজের মুখে স্বীকার করে নিয়েছিলো। সায়মনের কথা শুনে আয়ানের মনে হচ্ছে তার শরীরের সব রক্ত তার মাথায় উঠে গেছে,প্রাপ্তিকে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে, কি ভেবেছো! তোমাকে ভালোবাসি বলে এইনা তোমার দেওয়া মিথ্যা অভিযোগ গুলো মাথা পেতে নিবো।
প্রাপ্তি গালে হাত দিয়ে বাহঃ বাহঃ মিঃ আয়ান আপানাকে আর আমার মিথ্যা অভিযোগ সহ্য করতে হবেনা।কথাটা বলে আশফিকে কোলে নিয়ে আমি এখুনি এই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি।আপনার সুখের মাঝে আমি কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াবো না।থাকেন আপনি আপনার লুকানো ভালোবাসা নিয়ে।আমি চলে যাচ্ছি আর লুকাতে হবেনা আপনাকে।
প্রাপ্তি হঠাৎ এমন কথা বলবে আয়ান প্রস্তুত ছিলো না,বিস্ময় ভরা দুটো চোখ নিয়ে, মানে? কোথায় যাচ্ছো এতো রাতে তুমি।কথাটা বলে আয়ান প্রাপ্তির এদিকে এগুতেই, একদম আমার দিকে এগুবে না বলে আশফিকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আয়ান পিছন পিছন প্রাপ্তিকে ডাকতে ডাকতে নিচে নেমে এলো।আয়ানের এইভাবে ডাকাডাকি শুনে সবাই বেরিয়ে এলো রুম থেকে।
আবিদ চৌধুরী অবাক হয়ে, আয়ান কখন এসেছিস? আর এতো রাতে তোদের কি হয়েছে?
আয়ান আবিদ চৌধুরীর কাছে গিয়ে, আব্বু প্রাপ্তিকে আটকাও” প্লিজ আব্বু প্রাপ্তিকে যেতে দিও না।
আবিদ চৌধুরী -আমি তো কিছু বুজতেছিনা। প্রাপ্তি! কি হয়েছে তোমাদের?
প্রাপ্তি -বাবা যাই হয়ে যাকনা কেনো আপনি আমাকে আটকাতে পারেন না।তবে কি হয়েছে সেটাও আমার কাছ থেকে কেউ জানতে চাইও না।কারণ সবার কোনো প্রশ্নের উত্তর আমি দিবোনা।
প্রাপ্তির কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আয়ান এগিয়ে যেতেই, তুমি যদি আমার আর আমার মেয়েকে আটকানো বা ছোঁয়ার চেষ্টা করো তাহলে আমাদের মরা মুখ দেখবে।প্রাপ্তি কথা শুনে আয়ান নিস্তব্ধ হয়ে হাটু ভেঙে বসে পড়লো। কি থেকে কি হয়ে গেলো কেউ কিছু বুজতেছেনা।সুমি এগিয়ে কাছে যেতেই প্রাপ্তি মাথা ইশারা করলো আর এগোতে না।চার দিকে ফজরের আজান দিচ্ছে সেইসময় প্রাপ্তি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো । প্রাপ্তি চলে গেছে ঠিকি আয়ানের সব কিছু হারিয়ে গেছে।আকাশ আর অভ্র এসে আয়ানকে ধরতেই আয়ান ইশারা দিয়ে দেখাচ্ছে প্রাপ্তিকে আটকানোর জন্য।
পুরো টা বাড়ি যেনো থমথমে হয়ে আছে হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো।আয়ান চোখ মুখ মুছে উঠে আসিফকে ফোন দিলো।ভাইয়া! আপনি কোথায়?
আয়ানের কান্না জড়িত কন্ঠ শুনে আসিফ বিস্মিত হয়ে আয়ান কি হয়েছে সব কিছু ঠিক আছে?
আয়ান -কিচ্ছু ঠিক নেই।প্রাপ্তি আমাকে ভুল বুজে বাড়ি থেকে চলে গেছে।আপনাদের বাড়ি গেলে আমাকে ফোন দিয়ে জানাবেন!
আশফিকে নিয়ে বাস স্টেশনে বসে আছে প্রাপ্তি। কোথায় যাবে কি করবে সে জানেনা। বাপের বাড়িও যাবেনা। সেইখানে আয়ান গিয়ে ঠিকিই পৌঁছাবে। আমার জন্য কেনো লুকিয়ে লুকিয়ে ওই মেয়ের সাথে দেখা করবে। এর ছেয়ে ভালো ওকে সম্মান দিয়েই ঘরে নিয়ে আসুক।আমি হয়তো ভালোবাসা পরিপূর্ণ ভাবে দিতে পারি নাই। তাই অন্য মেয়ের ভালোবাসায় নিজেকে পরিপূর্ণ করতে চাইছে।
সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রাপ্তির খোঁজ এখনো কেউ পায়নি।আয়ান আসিফকে জড়িয়ে ধরে, ভাইয়া আমি কি এতোই খারাপ? নাকি আমার ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিলো?
আসিফ আয়ানকে ছাড়িয়ে কাঁধে হাত দিয়ে, আয়ান আমি জানিনা তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে তবে এইটা জানি তুমি কখনো কোনো অন্যায় করতে পারোনা।আমার বোনটার যে হঠাৎ কি হলো আমিও বুজতেছিনা।এখন কোথায় গেছে কি করছে?
সুমি-আমি তো ভেবেছিলাম রাগ করে যখন বেরিয়ে গেছে হয়তো তোমাদের বাড়ি যাবে।কিন্তু এখন তো দেখছি ভয়ংকর রূপে দাঁড়িয়েছে।
চলবে,,,,,,