ধর্ষিতাবউ২
পার্ট:২
__আয়ান আশফিকে আয়েশা বেগমের কোলে দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে,আরে আপু! রেশী! তোরা?
ঝিনুক আর রেশী ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে, হুম আমরা! আম্মু কাল যে ওর মেয়ের জন্মদিন একবার ফোন করে বলেছে?মেয়ের বাবা হওয়ার পরও যে তুই এতোটাই কান্ড জ্ঞানহীন থাকবি এইটা আমি কখনো ভাবিনি।
আয়ান মাথা চুলকাতে চুলকাতে আমি একটু পর তোদের ফোন দিতাম কাল আসার জন্য।
রেশী এগিয়ে এসে ভাইয়া কেমন আছো?
আয়ান-ভালো! অভ্র আসেনি?
ঝিনুক -নিহাদের সাথে রাতে আসবে।আশফিকে কোলে নিয়ে,প্রাপ্তি কোথায়। ভাইয়া আর ভাবী এরা কোথায়?
প্রাপ্তি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে কেমন আছো আপু?
ঝিনুক -এইতো ভালো।
রেশী এগিয়ে গিয়ে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কেমন আছো ভাবী?
প্রাপ্তি -তোদের এখন আসার সময় হলো বিকেল থেকে কি করেছিস?
আয়ান বার বার প্রাপ্তির দিকে তাকাচ্ছে, এই প্রাপ্তিকে কেমন জানি অচেনা লাগছে।সবার সাথে কথা বলছে ঠিকি কিন্তু কোনো মাধুর্যতা নেই।প্রাপ্তি যার সাথেই কথা বলুক না কেনো তার মুখে হাঁসি লেগেই থাকে। কিন্তু আজ যেন এক অন্য মানুষ দাঁড়িয়ে আছে আয়ানের সামনে।
আয়ান কাছে যেতেই,আপু তোমরা ফ্রেশ হয়ে নাও আমি তোমাদের জন্য নাশতা নিয়ে আসছি বলেই রান্নাঘরে আবার চলে গেলো।আয়ান পিছন পিছন রান্নাঘরে গিয়ে প্রাপ্তির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রাপ্তি না দেখার ভাণ করে নিজের কাজ করেই যাচ্ছে।
আয়ান খানিকক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে, কি হয়েছে তোমার?
প্রাপ্তি চুপ করেই আছে,
আয়ান আবারও জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে কথা বলছো না কেনো?
প্রাপ্তি কফি নেওয়ার জন্য কাপ নিতে হাতটা বাড়াতেই আয়ান হাত ধরে ফেললো।ধমকিয়ে,কি সমস্যা তোমার?তুমি যদি,,,, কথাটা বলতেই রফিক এসে, আয়ান বাবা তুমি এইখানে? আয়ান রফিকে কিছু না বলে প্রাপ্তির হাত ছেড়ে দিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
আয়ানকে গম্ভীর হয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে, কি হয়েছে মা! আয়ান বাবা রাগ করছে কেনো?
প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস ছড়ে দিয়ে কফি ঢালতে ঢালতে, কাকা এই বাড়িতে হয়তো আমার আয়ু গনিয়ে আসছে তাই।
রফিক প্রাপ্তির কথা শুনে, কি বলছো এইসব? মা! আয়ান একটু রাগী ঠিক আছে কিন্তু তুমি এই বাড়ি থেকে গেলে কি আয়ান বাবা এই বাড়িতে থাকবো?থাকবে না! সেইবার দেখলেনা তোমাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছিলো ।
প্রাপ্তি- সব সময় এক রকম যায়না।ও নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।আমি গিয়ে সবাইকে নাশতাটা দিয়ে আসি।
প্রাপ্তি এসে দেখে আকাশ আর সুমিও চলে এসেছে। আয়েশা বেগম আশফিকে প্রাপ্তির কোলে দিয়ে, প্রাপ্তি ওর ক্ষিধে লেগেছে মনে হয়।তুই ওকে খাইয়ে নিয়ে আয়।
প্রাপ্তি আশফিকে কোলে নিয়ে, ভাবী! ডাক্তার কি বলেছে?
সুমি – রিপোর্ট সব গুলোই ভালো আসছে।বাকীটা আল্লার হাতে।তুই যা পরীকে খাইয়ে আমার কাছে দে।অনেকক্ষণ হলো আমার পরীটাকে কোলে নিই না।
প্রাপ্তি রুমে গিয়ে দেখে আয়ান বসে বসে ফোনে কথা বলতেছে।প্রাপ্তি আয়ানের দিকে না তাকিয়ে আশফির জন্য খাবার রেডি করে খাওয়াচ্ছে।আয়ান বার বার প্রাপ্তিকে আড় চোখে দেখছে আর বুজার চেষ্টা করছে কেনো প্রাপ্তি হঠাৎ তার সাথে এমন আচরণ করছে। বাহিরের থেকে আসার পরও তো সব ঠিক ছিলো। ওয়াশ রুমে যাওয়া পর কি এমন ঘটলো যার কারণে ও এইরকম করছে।
প্রাপ্তির আসতে দেরী দেখে সুমি নিজেই এসে, কিরে তোর হলো?
আয়ান ফোনটা রেখে, ভাবী আশফিকে একটু নিয়ে গিয়ে তোমার কাছে রাখো।আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।
সুমি প্রাপ্তির কাছ থেকে আশফিকে কোলে তুলে নিতে নিতে আমি তো আমার পরীটাকেই নিতে আসছি।
প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।সুমি রুম থেকে যেতেই প্রাপ্তিও উঠে চল যাবার জন্য পা বাড়াতেই আয়ান হাত ধরে টেনে খাটের উপর বসিয়ে,(নরম স্বরে) রাগ করেছো কেনো আমার উপর? আমি কি আমার অজান্তেই তোমাকে কোনো কষ্ট দিয়ে ফেলেছি? কারণ আমার জানা অনুযায়ী আমি তোমাকে কোনো কষ্ট দিতে চাই না।
আয়ানের কথা গুলো শুনে প্রাপ্তির মনে হচ্ছে তার বুকের মধ্যে তীর গুলো গুছিয়ে গুছিয়ে কেউ বসিয়ে দিচ্ছে।আমার আয়ান ঠিক সেই রকম গুছিয়ে মিথ্যা গুলো আমাকে শুনাচ্ছে।আয়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,আমাকে সত্যিটা বলতেই পারতে।আমি সরে যেতাম।কেন এখন গুছিয়ে গুছিয়ে এই মিথ্যা বাক্য গুলো আমায় শুনাচ্ছো।তোমার চোখে আমার প্রতি যে ভালোবাসা দেখেছি সবি কি মিথ্যা? আমার এখনো কেনো তোমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।তুমি অফিসে যাওনি যেনেও আমার মনে হয় আয়ান আমাকে ঠকাতে পারেনা।ওই চিঠিটা পড়ার পরও কেন তোমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।মেয়েটা লিখেছে তুমি ওর কাছে গেছো।কতোটা কাছে? যতটা তোমার আর আমার সম্পর্কে, ততটা? কথাটা ভাবতে প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে চোখের পানি গুলো অঝোরে ঝরছে। আয়ান কিছুক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে, থুনিটা উঠিয়ে নিজের দিকে করে, প্রাপ্তি আমার চোখের দিকে তাকাও।(ধমকিয়ে)কি হলো তাকাতে বললাম তো?
প্রাপ্তি অনিচ্ছা সত্ত্বে তাকাতেই,
আমি জানিনা আমার উপর কেনো তোমার এতো রাগ অভিমান। শুধু এইটুকু বলবো,কাল আমাদের মেয়ের জন্মদিন। কতো গেস্ট আসবে। অলরেডি আপুরা চলেও এসেছে।তুমি যদি সবার সামনে এইভাবে গম্ভীর হয়ে থাকো এইটা কি সবার কাছে ভালো দেখাবে।এর ছেয়ে তুমি আমাকে বলো কি কারণে আমার উপর তোমার এতো রাগ! প্লিজ বলো!
প্রাপ্তি আয়ানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়য়ে আমার কিছু হয়নি।আর তোমার আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবেনা।আমি সবার সামনে তাল মিলিয়ে চলতে পারবো।
অভ্র আর নিহাদ এসেছে,সবাই আড্ডা দিচ্ছে, আয়ান কিছু বলছেনা চুপচাপ সবার কথা গুলো শুনছে।প্রাপ্তি অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবার সাথে তাল মিলাচ্ছে।রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যেই যার মতো করে ঘুমাতে গেলো।প্রাপ্তি আশফিকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে আছে।আয়ান আশফির পাশে শুয়ে প্রাপ্তি আসার অপেক্ষায় আছে। প্রাপ্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আকাশটাকে মেঘ ঢেকে রেখেছে।মেঘে ঢেকে থাকায় চাঁদটাকে বুজা যাচ্ছেনা।চারপাশ কেমন যেন এক অজানা নিস্তব্ধতায় বর করেছে।আমার জীবনে যেই দিনই কোনো ঝড় আসুক সেইদিন আকাশেরও মন খারাপ থাকে।কথাটা ভেবেই প্রাপ্তি তাচ্ছিল্য একটা হাঁসি দিয়ে।মানুষ না হয় ঠকে কিন্তু আকাশ! তার তো কোনো চাঞ্জ নেই।তাহলে কেনো তার মন খারাপ?আচ্ছা এই তানিয়াটা কে।হটাৎ কোথায় থেকে আসলো এই তানিয়া? নাকি আয়ানের জীবনে তানিয়া নামের কেউ আগেই ছিলো। কথা গুলো ভাবতেই কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনের দিকে না ফিরেই ঘুমাও নি এখনো?
আয়ান -তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না এইটা তুমি ভালো করেই জানো। তার পরেও কেনো এই কথা জিজ্ঞেস করলে?
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে ফিরে, আমাকে ছাড়া ঘুমানোর অভ্যাস করো।সারাজীবন তো আর আমি থাকবো না।আমার জাগায় অন্য কেউ আসবে তাকেও কি এই কথা বলবে? কথাটা বলেই প্রাপ্তি হনহন করে রুমে এসে শুয়ে পড়লো।
আয়ান প্রাপ্তির কথার আগামাথা কিছুই মাথায় ঢুকলো না।প্রাপ্তি এসে আশফিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
সকালের সোনালী রোদের আভা প্রাপ্তির রুমের দেওয়ালে এসে ঝিকঝিক করছে।প্রাপ্তি আড়মোড়া ভেঙে পাশে তাকিয়ে দেখে আয়ান নেই।আয়ানকে না দেখে বুকের ভিতরটা কেমন যেন দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। তড়িঘড়ি করে উঠে বারান্দায় গিয়ে দেখে আয়ান বসে বসে ঘুমাচ্ছে।সুস্থির নিশ্বাস ফেলে পাশে বসে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।এই মায়াময় চেহারা কি তার প্রাপ্তিকে ঠকাতে পারে? কতো নিস্পাপ লাগছে আমার আয়ানকে।আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উঠতে যাবে এমন সময় আয়ান প্রাপ্তির হাত টেনে ধরে ফেললো।
আয়ান – যখন এতটাই ভালোবাসো তাহলে কষ্ট দাও কেনো?
প্রাপ্তি -হাত ছাড়ো! আমার অনেক কাজ আছে।
আয়ান-আমার থেকে আজ তোমার কাজ বেশি হয়ে গেলো। আমি তো জানি আমার প্রাপ্তির যতই কাজ থাকুক তার আয়ানের সব কিছু ঠিক থাকে।প্রাপ্তি কিছু না বলে হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আয়ান অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে প্রাপ্তিকে হেচকা টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে, আয়ানের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া এতো সহজ নয় বলেই প্রাপ্তির ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট এক করে নিলো।
সকাল থেকেই জামাল সাহেব ড্রইংরুমে বসে আছে। আয়ানের সাথে কথা বলার জন্য। আবিদ চৌধুরীও পাশে বসে অনেক কথাই বুজালেন।কিন্তু জামিল সাহেব আয়ানের সাথে কথা না বলে যাবেননা।
জামিল – (আবিদ চৌধুরীর হাত টেনে নিয়ে) তুই আমার অনেক পুরনো বন্ধু, সেই বন্ধুত্বের আবদার নিয়ে রিকুয়েষ্ট করছি তোর ছেলেকে বল আমার ছেলেটার মামলাটা তুলে নিতে।সারাজীবন আমার ছেলে ওই অন্ধকারে পড়ে থাকবে?
আবিদ চৌধুরী -সরি এইখানে আমার কিছু বলার নেই।তোর ছেলে যে অন্যায় করেছে তার জন্য আয়ানের কাছে কোনো রিকুয়েষ্ট করলেও লাভ হবে না।
আয়ান আশফিকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে, আপনি এখানে কেনো এসেছেন আপনাকে যা বলার কাল তো আমি সব বলেই দিয়েছি।তাহলে আজ আবারও কেনো বাসায় আসলেন?
জামিল সাহেব কিছু বলতে যাবে তখনি দেখে প্রাপ্তি নিচে নামছে। প্রাপ্তি আসতে জামিল সাহেব এগিয়ে গিয়ে, মা! আমি তোমার কাছে রিকুয়েষ্ট করছি প্রয়োজনে তোমার হাতে পায়ে ধরছি, আমার ছেলেটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।দরকার হলে আমার ছেলেকে নিয়ে বাহিরের দেশে চলে যাবো।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে, দেখুন! এইখানে আমার কিছু বলার নেই। আমার হ্যাজবেন্ড যা ভালো মনে করে সেই তাই করবে।এইখানে আমার কিছু বলার থাকতে পারেনা।কথা গুলো বলে রান্নাঘরে চলে গেলো। আয়ান জামিল সাহেবের দিকে তাকিয়ে, এটাই আপনার ছেলের শাস্তি।এইটাও অনেক কম পড়ে গেছে। ওকে গুলি করে মেরে ফেলা উচিত ছিলো। কিন্তু আমি সেটা করলামনা। কারণ কুকুরকে মেরে কখনো হাত নোংরা করতে নেই।এখন সারাজীবন জেলে চার দেওয়ালের ভিতরে থাকুক মজাটা একটু বুজক।আর হ্যাঁ আপনি আর কখনো আমাদের এইখানে আসবেনা। আয়ান সদর দরজাটা ইশারা দিয়ে দেখিয়ে আপনি এখন আসতে পারেন।
চলবে,,,,,,,