ধর্ষিতাবউ২
পার্ট:১
_সকাল থেকেই আশফি কান্না করছে।কিছুতেই প্রাপ্তি থামাতে পারছেনা।আবিদ চৌধুরীও অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু না সেই কান্না করেই যাচ্ছে।আকাশ রুম থেকে বেরিয়ে এসে, কি ব্যাপার তোমরা এতো জন থাকতেও বাড়ির পরী রানী যদি কান্না করে তাহলে ভালো লাগে? কি হয়েছে প্রাপ্তি? দেখি আমার কাছে দাও।কি হলো আমার আম্মুটার? কে বকে দিয়েছে?
কথা গুলো বলতে বলতে আকাশ আশফিকে কোলে নিচ্ছে ।
প্রাপ্তি -ভাইয়া, এইরকম বাবা কাতুরে মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি।ওর বাবাকে দেখতে পাচ্ছে না বলেই এইরকম কান্না করছে।
আকাশ -আয়ানকে ফোন দিয়ে আসতে বলো ওর মেয়ে যখন বাবাকে ছাড়া থাকতে পারেনা তাহলে মেয়েকেই বেশি করে সময় দেওয়া উচিত।
আকাশের কোলে গিয়ে আশফির আস্তে আস্তে কান্না কমছে।
আবিদ চৌধুরী আশফির কান্না বন্ধ হয়েছে দেখে,প্রাপ্তি দেখেছো আকাশ কোলে নিতেই কেমন শান্ত হয়ে গেলো।
প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে ভাইয়া! আপনি না ভাবীকে নিয়ে ডাক্তার কাছে যাবেন?
আকাশ-হ্যাঁ! সুমি রেডি হচ্ছে।আশফির কান্না শুনে বেরিয়ে আসলাম।
আয়েশা বেগম এসে আবিদ চৌধুরী পাশে বসতে বসতে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে,আমি তোকে বলেছি বাহিরের দেশে নিয়ে সুমিকে ডাক্তার দেখা তোরা তো আমার কথা শুনছিস না।
আকাশ কিছু বলছে না গম্ভীর হয়ে আশফির দিকে তাকিয়ে আছে।আশফি কান্না বন্ধ করে দিয়ে বাবা, বাবা বলে ডাকছে।কাল আশফির দুই বছর পূর্ণ হবে।দুই বছর হলেও আশফি একটু আধটু কথা বলে।আকাশকে এইভাবে গম্ভীর হতে দেখে।
প্রাপ্তি -মা! আপনিও না? দেখবেন এইবার ভাবী ডাক্তার কাছে গেলে ঠিক খুশির খবর নিয়ে আসবে।
সুমি রেডি হয়ে এসে, আকাশ! আমার হয়ে গেছে, চলো।পিছন দিকে তাকিয়ে, সুমিকে দেখে আশফিকে প্রাপ্তির কোলে দিয়ে মুচকি হেঁসে, চলো।
সুমি আশফির গালে চুমু দিয়ে, প্রাপ্তি ওর দিকে খেয়াল রাখিস।একটু পর আয়ানই চলে আসবে।আসফিকে বাবার কাছে দিয়ে আগে আয়ানকে সময় দিস।
প্রাপ্তি -ভাবী তুমিও না।এখন সাবধানে যাও।
সুমি আর আকাশ বাসা থেকে বের হতে যাবে তখনি আয়ান বাসায় ঢুকলো,আকাশকে দেখে কিরে ভাইয়া তুই এখনো যাসনি?
আকাশ -এইতো যাচ্ছি।
আয়ানকে দেখে আশফি প্রাপ্তির কোল থেকে বাবা বাবা বলে আয়ানের কাছে ছুটে এলো।
আয়ান আশফিকে কোলে নিয়ে এগিয়ে এসে আবিদ চৌধুরীর পাশে বসলো।
আবিদ চৌধুরী -তুই আগে ফ্রেশ হয়ে নে। পরীকে আমার কাছে দে।আয়ান আশফিকে রেখে উপরে গেলো ফ্রেশ হতে।পিছন পিছন প্রাপ্তিও গেলো।আয়ানকে চুপচাপ থাকতে দেখে,
প্রাপ্তি -মন খারাপ?
আয়ান পিছনে ফিরে প্রাপ্তিকে দেখে মুচকি হেঁসে,কই না তো।
প্রাপ্তি -তাহলে চুপচাপ কেনো?
আয়ান -আমার লক্ষ্মী বউটাকে না দেখলে মোটেও ভালো লাগেনা।ভাবছি কাল থেকে অফিসে কয়দিন যাবো না।এইকয়দিন আমার বউটাকে দেখে দেখে কাটাবো।
প্রাপ্তি এগিয়ে এসে ঢং করোনাতো! সত্যি করে বলোনা কি হয়েছে তোমার? প্লিজ বলো!
আয়ান তোয়ালেটা হাতে নিয়ে ওয়াশ রুমে যেতে যেতে আজ আব্বুর বন্ধু জামিল আংকেল আসছে আমার অফিসে ওনার ছেলের ব্যাপারে কথা বলতে।
প্রাপ্তি কিছু বলার আগেই আয়ান ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো।প্রাপ্তি নিচে গিয়ে আশফিকে এনে খাটে বসিয়ে আয়ানের শার্ট গুলো গোছাচ্ছিলো।হঠাৎ শার্টের পকেট থেকে একটা কাগজ নিচে পড়তেই প্রাপ্তির চোখ পড়লো সেই কাগজের উপর। প্রাপ্তি কাগজ টা উঠয়ে খুলে দেখে একটা চিঠি, প্রাপ্তি চিঠিটা পড়তে শুরু করলো।
আয়ান,
তোমাকে আজ অনেক দিন পর এতোটা কাছে পেলাম।বিশ্বাস করো তোমাকে আমি কখনো এতোটা কাছ থেকে পাবো কখনোই ভাবিনি। তুমি সেই আগের মতই আছো।সুন্দর, স্মার্ট, চলাফেরা সবকিছুই আগের মতোই। আমি তো ভেবেছিলম তোমার জীবনে যেই মেয়েটা এসেছে তোমাকে পাল্টিয়ে সে তার নিজের মতো করে নিবে।কিন্তু না! আয়ান তো আয়ানই সেই সবসময়ই নিজের মতো করেই থাকে,এইটা অবশ্য আমি জানি।আচ্ছা তুমি কি এখনো আমায় একটু ভালোবাসতে পারোনা? আচ্ছা তোমার নাকি একটা মেয়ে আছে সেই কি তোমার মতো এতো সুন্দর দেখতে? তবে তোমার মেয়ে আর মায়ের মাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।কারণ তারা ভাগ্য করে জন্মেছে।কেউ তোমার মতো স্বামী পেয়েছে আর কেউ বাবা! তাদেরকে নিয়ে তুমি অনেক ভালো আছো তাইনা?আয়ান! আমি জানি যখন তুমি এই চিঠি পড়বে তখন আমায় পাগল ভাববে। কিন্তু হ্যাঁ আমি পাগল আর সেটা আয়ানের পাগল এইটা তুমি ভালো করেই জানো।আজ এইখানে আর কিছু বলতে চাইনা।শেষে এইটুকুই বলবো আজকের দিনটা আমাকে দেওয়ার জন্য তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
তানিয়া।
চিঠিটা পড়ে প্রাপ্তি নিস্তব্ধ মুক্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। চিঠিটা সত্যিই কোনো মেয়ের ছিলো?যে আমায় এতোটা ভালোবাসে একটা চিঠিই কি সব মিথ্যে করে ফেলবে?বিশ্বাস কি এতোটাই ঠুনকো। না! না!আয়ান কখনো আমায় ঠকাতে পারেনা।আমার ভালোবাসা আমি কখনো মিথ্যা হতে দিবেনা। সন্দেহের কাছে আমার আয়ান হেরে যেতে পারেনা।এর ছেয়ে ভালো আমি অফিসে একটা ফোন দিয়ে দেখি,প্রাপ্তি চিঠিটা লুকিয়ে অফিসে ফোন দিলো।
সাইদ ফোন ধরে সালাম দিয়ে ম্যাডাম আপনি?
প্রাপ্তি -তোমাদের স্যার তো এখনো বাসায় এলো না। অফিসে কি কাজ বেশি নাকি?(প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে আয়ান আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি চাইনা আমাদের ভালোবাসা সন্দেহের কাছে হেরে যাক তাই মিথ্যা আমাকে বলতেই হলো।)
সাইদ -ম্যাডাম! স্যার তো সকালে অফিসে এসেই জামিল সাহেবের সাথে দেখা করে চলে গেছেন।বললো ওনার জরুরী কাজ আছে।কথাটা শুনে প্রাপ্তি কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলো।কথাটা শুনে মনে হলো কেউ তার কলিজাটা ছিড়ে হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি গড়িয়ে পড়ছে। আশফি মায়ের চোখের পানি দেখে মাম্মা মাম্মা বলে খাটের কিনারায় এসে প্রাপ্তিকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে।
আয়ান ওয়াশ রুমের দরজা খুলে বাহিরে এসে আশফিকে কিনারায় দেখে দৌড়ে এসে কোলে নিয়ে প্রাপ্তি তুমি পাশে থাকতেও আশফির দেকে খেয়াল করছো না কেনো? মুক্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো,,,,কথা বলেই প্রাপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে।প্রাপ্তিকে এক হাত দিয়ে কাছে টেনে এনে আমার পরীর আম্মুর কি হয়েছে কাঁদছে কেনো?
প্রাপ্তি নিজের কাঁধ থেকে আয়ানের হাতটা সরিয়ে চোখে পানি মুছে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
প্রাপ্তির কান্ডে অবাক হয়ে প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! শুনো! পিছন থেকে আয়ান অনেক বার ডাকলেও প্রাপ্তি পিছনে ফিরে না তাকিয়ে চলে গেলো।
আশফিকে আয়ান আদর করে, পরীর মাম্মা কেনো অভিমান করেছে তার বাবার উপর? পরী কি কিছু জানে? আশফি সাথে নানা ভংগিমায় কথা বলতে বলতে আয়ান নিচে এলো।
আয়েশা বেগমের পাশে বসতে বসতে আম্মু! আব্বু কই? এখানেই তো ছিলো।
আয়েশা বেগম -রুমে গেছে “কেনো কিছু বলবি?
আয়ান -কাল তো আশফির জন্মদিন।তাই ভাবছি এইবার বড় করে তেমন কোনো পার্টি দেওয়ার দরকার নেই।
আয়েশা বেগম -ঠিক আছে আকাশ আসুক তার পর না হয় এইসব নিয়ে ভাবা যাবে।
আয়ান এইদিক সেদিক তাকিয়ে প্রাপ্তিকে না দেখে, আম্মু প্রাপ্তি কই?
আয়েশা বেগম -(রান্নাঘরের দিকে দেখিয়ে)সুমি নাইতো তাই মনে হয় তোদের জন্য নাস্তা বানাচ্ছে।আকাশকে একটা ফোন কর তো এখনো তো এলো না!
আয়ান -আম্মু ওরা এখনো ছোটো নয়।ডাক্তার দেখিয়ে ঠিক সময় মতো চলে আসবে।
কলিং বেলর শব্দ আসতেই ওইতো আম্মু তারা মনে হয় এসে গেছে।রফিক চাচা! দরজাটা খুলে দাও।
রফিক এসে দরজা খুলে অবাক হয়ে আরে, আপনারা! আয়ান বাবা দেখো কারা এসেছে।আসেন আসেন ভিতরে আসেন।
চলবে,,,,,,,,,