#ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
পর্ব ১১
ফারহা খুশি মনে বাসায় আসে। গতকাল রাতেই আজ দেখা করার প্ল্যান হয়েছিল। যদিও মায়ের সাথে এ নিয়ে ফারহার কোনো কথা হয়নি। জানে ফাইনাল কথা না হওয়ার আগে মা জীবনেও একসাথে ঘোরার অনুমতি দিবে না। কিন্তু ফারহান যখন ওকে একসাথে কফি খাওয়ার প্রস্তাব দিলো, ফারহা না করার প্রশ্নই আসে না। যদিও আগ্রহটা ফারহার দিক থেকেই বেশি ছিল। ফারহা গতকাল লম্বা সময় ফারহানের সাথে চ্যাট করেছে। নানা কথায় বলেছে এরেন্জ বিয়ে নিয়ে ওর ভয় লাগে। মনে হয় হুট করে অচেনা কারও সাথে বিয়ে হলে যদি মানসিক মিল না হয়? তাই যার সাথে বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে, তাকে আগে কিছুটা জানার, বোঝার ইচ্ছে ফারহার। তখন ফারহান প্রস্তাব দেয় একসাথে কফি খাওয়ার। ফারহা জানতো এভাবে বললে ফারহান ঠিকই দেখা করবে। ফারহার মা একটু চিন্তিত। কারণ বেশকিছুদিন পার হয়ে গেলেও ফারহানদের বাসা থেকে এখনও হ্যাঁ না কিছু জানানো হয়নি। যদিও ফর্মাল মেয়ে দেখা ছিল না। তাও এরপর কিছু না কিছু তো জানানোর কথা। ফারহাকে কেউ হুট করে কিছু না জানিয়ে না করার কথা না। ফারহা নিজেও আত্মবিশ্বাসী ছিল। যদিও ফারহানকে দিয়েই তার জন্য প্রথম ছেলে দেখা। চাকরি, পরিবার, ছেলে সব যাচাই করে এই প্রথম কোনো ছেলের ব্যাপারে আগানো হলো। ফারহা একমাত্র মেয়ে। মেয়ের জন্য একজন রাজপুত্র না হলেও, দেখতে শুনতে, পারিবারিক এবং আর্থিক অবস্থাও ভালো এমন পাত্রই তারা চান।
ফারহানদের পরিবার থেকে সরাসরি কোনো কিছু জানানো না হওয়ায় ফারহা নিজেই কথা চালিয়ে যায়। ফারহানের সাথে কথা বলার সময় ফারহার মনে হয়নি সে অনাগ্রহী। তাহলে কথা কেন বাড়াচ্ছে না তাই বুঝতে চেয়েছিল। তাই নিজেই আগ্রহী হয়ে একান্তে দেখা করার বিষয়টা তোলে। ফারহান সহজেই টোপ গিলেছে। অথবা হয়তো টোপের অপেক্ষায়ই ছিল। ফারহান আধুনিক ছেলে, হুট করে এক দেখায় বাবা মায়ের ইচ্ছায় বিয়ে করে ফেলার মতো না। সে তো মিতুলের বর সায়েমের মতো না। ফারহা তাই নিজেই উদ্যোগ নিয়েছে। ভালো লেগেছে খুব। ক্লাস থেকে আগেই বের হয়েছিল। আগেই বলেছিল পার্কে বসতে পারবে না। এসব বাদাম চিবিয়ে, ধুলা হাওয়া খেয়ে ডেট করা মেয়ে ফারহা না। ফারহানও নিজের ক্লাস বোঝাতে সময় নেয়নি। সুপরিচিত কফি শপে নিয়ে গিয়েছে। এক্সপ্রেসো কফি, ক্রোসেন্ট আর ব্রাউনি দিয়ে ব্রান্চ সেরেছে। খাবার সামান্য হলেও, বিল মোটা আসার কথা। সেটাও কপাল সামান্য না কুঁচকে দিয়ে দিয়েছে ফারহান। ফারহা গোল্ড ডিগার না। নিজেও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। কিন্তু লাইফ পার্টনার অবশ্যই এমন চায় যে তার লাইফস্টাইল মেইনটেইন করতে পারে। না হলে প্রেম করতে চাওয়া হাভাতে ছেলের অভাব ছিল না। কিন্তু এসব কাব্যিক প্রেম ফারহার পছন্দ না। এসব প্রেম সাময়িক জানে ফারহা। বিয়ের সময় ছেলের যোগ্যতাই দেখবে সবাই।
খুশি মনে শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে চলে যায়। জানে খুব শীঘ্রই ফারহানদের তরফ থেকে এগুনো হবে। মনটা ফুরফুরে ফারহার।
ফারহান গাড়ি চালাতে চালাতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। ফারহার সাথে কথা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে। মিতুলের বিষয়ে সে কিছুই জানে না। মিতুলের সাথে হুট করে বিয়ের কথা ভাবার আগে আরও জানাবোঝার দরকার। যোগাযোগের জন্য ফেসবুক ব্যবহার করতে হবে। তারপর মায়ের সাথে কথা বলবে।
***
বিকেলে মিতুল ছাদে উঠলে ফারহার সাথে দেখা হয়। যদিও মাঝেমধ্যে মিতুল আর তুলতুলের অতি মিষ্টি ভাবে ফারহার ডায়াবেটিস ফিল হয়। তবুও কাজিনদের সম্পর্ক তো এত সহজেই নাই হয়ে যায় না। ফারহার আর কোনো ভাইবোনও নেই। তাই সকালে মুখে বিরক্তি ধরে রাখলেও, বিকেলে আবার তাদের কাছে এসেই মনের কথা বলে। তুলতুল আর মিতুল ফারহার এই স্বভাবের সাথে অবগত। বাবা মায়ের অতি আদর আহ্লাদে ফারহাও বেশ আহ্লাদী। পরিবারের সবাই ই তা অবগত। তাই ফারহার কিছু আচরণে অসন্তুষ্ট হলেও সবাই মেনে নেয়।
“মিতুল, কী করিস?”
“কিছু না। কাপড় নিতে আসলাম।”
“তোর দাঁড়িওয়ালার কী খবর রে?”
মিতুল বিষম খায়।
“আমার দাঁড়িওয়ালা কে?”
“ফটোগ্রাফার। নাম কী যেন?”
মিতুল ভয় পায়। ফারহা কি মিতুলকে বাইরে দেখেছে?
“কী বলো উল্টাপাল্টা। আরমান নাম ওনার।”
“লোকটা কিন্তু তোর প্রতি ক্রাশ খাইছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।”
“পাগল। কত বড়ো আমার থেকে।”
“কত বড়ো? দশ বছর?”
“জানি না।”
“তোর তো বিশ। এই বয়সে সবমেয়েকে নাকি সুন্দর লাগে। আর ঐ ব্যাটা কিছু করে না। বয়স হয়ে গেল ত্রিশ। তোর প্রতি ক্রাশ না খেলে কার উপর খাবে? এই ব্যাটাগুলো বিশ বাইশের উপর উঠতে পারে না। তুইও যদি ক্রাশ খেয়ে থাকিস তাহলে বয়স পার হওয়ার আগে ল্যান্ড করিস। না হলে ফুস।”
মিতুল বুঝতে পারছে না ফারহা কি ওকে সুন্দর বললো? না ওর বয়সটা সুন্দর বললো? না ওকে খোঁচালো। উফ্ ও এত গাধা কেন? খুশি হবে না দুঃখী? আর আরমান লোকটার কথা ভালো বললো না খারাপ? লোকটার সাথে প্রেম করলে ভালো হবে বোঝালো? না এই লোকের সাথে প্রেম না করলে বিয়ের বয়স পার হয়ে যাবে, কিন্তু বর পাবে না বোঝালো!
“আপু, তোমার কথা কিছুই বুঝতেছি না।”
“হইছে, ঢং করিস না তো। সবসময় এত ইনোসেন্ট ভাব নেস। তোর থেকে তুলতুল আপু ভালো। এত ভাব ধরে না। বুদ্ধিমতী। আর তুই সবসময় এমন ভাব করিস যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারিস না।”
“কী জানি। এত কিছু বুঝি না। আর আব্বুকে চেন না? বুড়ো ধরে বিয়ে দিক, বা এলেবেলে কারও সাথে দিক। সেটা আব্বুরই সিদ্ধান্ত হবে। আমাদের তো আর তোমার ভাগ্য নাই যে সব মন মতো হবে।”
“হুম। আমার জন্য ছেলে দেখেছে জানিস তো। ফারহান নাম। খুব স্মার্ট, ভালো জব, একমাত্র ছেলে। ছোটোবোন আছে, কিন্তু কয়দিন পর তো বিয়েই হয়ে যাবে। ছিমছাম পরিবার। শুধু আমার হ্যাঁ থাকলেই হলো। আমি আম্মুকে বললাম ভেবে দেখি। এত তাড়াহুড়োর তো কিছু নেই।”
“খুব ভালো। আচ্ছা আপু, আমি নামি এখন।”
ফারহা দৌড়ে গিয়ে ধরে।
“আরে নামবি আর কী। কাপড় রাখ ছাদে। জরুরি কথা আছে।”
“কী কথা?”
“রাখ আগে।”
“নাহ্ শুনব না। আর শোনো, আমাকে বোকা ভাব যে ঠিকই ভাবো। তবে আমি ইনোসেন্ট না হলেও তোমার মতো অতিচালাকও না।”
“আমি কী করছি?”
“বিয়ের ভিডিও এসেছে জানো? তুমি যে ইচ্ছে করে ঝোল লাগিয়ে দিলে আঁচলে তা কিন্তু ভিডিও তে থাকতেও পারে। বরের টেবিলের কাছে তো ভিডিও হচ্ছিল। সবাই দেখলে কী ভাববে বলো? আমার মনে হয় চাচী বিষয়টা আন্দাজ করেছেন। তাই শাড়ি নিয়ে কিছু বলেননি, বরং আমাকে দিয়ে দিলেন। চাচা চাচী তো সবসময় তোমাকে আড়াল করে রাখেন। তোমার তো এই স্বভাব নতুন না আপু। তোমার চেয়ে ভালো কারও দেখলেই অযথা হিংসা। এই যে তুমি কথায় কথায় প্রশংসাচ্ছলে ঠাট্টা করো। আমরা বুঝেও না বোঝার ভাব করি। যেন তুমি আবার নাকিকান্না শুরু না করো। আমি যেমনই হই ছিঁচকাদুনে বা বোকা, অন্তত কাউকে অযথা খোঁচাই না।”
মিতুল একটু চাপা মেরেছে। বিয়ের ভিডিওতে ফারহাকে দেখা যাবে কিনা জানে না যদিও। তবে ফারহা যে করেছে, সেই ছবি আরমান পাঠিয়েছে। তার ক্যামেরায় উঠেছে। আরমানের কথা এড়াতে ছবির কথার বদলে ভিডিওর কথা বললো। এই কথাটা তুলতে চায়নি মিতুল। কিন্তু মুখ ফসকে বলেই ফেললো। এখন মনে হচ্ছে রাতুলের কথাই ঠিক। ফারহা জুতোও ভাঙাই দিয়েছিল। এই মেয়েটার হিংসুটে স্বভাব কখনো পরিবর্তন হবে না। মিতুলই বেহায়ার মতো বারবার সব ভুলে গিয়ে হাসিমুখে ফারহার সাথে সহজ হয়ে যায়।
(চলবে)