ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে পর্ব-০৯

0
80

#ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
পর্ব ৯

বিয়ের কয়েকদিনেই তুলতুল বুঝতে পেরেছে, শ্বশুর বাড়িতে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ শাশুড়িকে জয় করা নয়। ননাসের সাথে মানিয়ে চলাও নয়। শ্বশুরের আদর অর্জনও নয়। তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, স্বয়ং স্বামী। সায়েম খুবই আহ্লাদে বড়ো হওয়া ছেলে। এতটা মা ঘেঁষা হওয়ার কারণ হলো, সায়েম প্রতিটি কাজে মায়ের উপর নির্ভরশীল। নিজের জামা, জুতো পর্যন্ত নিজে গুছিয়ে রাখা জানে না। যেহেতু তুলতুল নতুন, তাই সায়েমের কখন কী প্রয়োজন তা বুঝতেও পারে না। সায়েমের আব্দার হোক বা প্রয়োজন তা মায়ের কাছেই এখনো সীমাবদ্ধ।

তুলতুল ফিরানিতে গিয়ে মাত্র একদিন ছিল। বাবার বাড়িতে পৌঁছায় সন্ধ্যা সাতটায়। জান্নাত আরা তখনই বলেছিলেন সায়েমের রাতে থাকার প্রয়োজন কী। সায়েম নিজের বিছানা ছাড়া ঘুমাতে পারে না। কষ্ট হবে। তুলতুল বুদ্ধিমতী মেয়ে। ঠান্ডা স্বভাবের বলে কখনোই হইহই করার অভ্যাস তার নেই। সে ঠিক করেছিল সায়েম কী করবে তা সায়েমের হাতেই ছেড়ে দিবে। তাই জান্নাত আরার কথায় বিন্দুমাত্র আপত্তি জানিয়ে প্রতিবাদ করে না। জান্নাত আরা ধারণা করেছিলেন একটু হলেও তুলতুল প্রতিক্রিয়া দেখাবে। শেলী নিজেই সায়েমের সামনে তুলতুলকে প্রশ্ন করে,

“তুলতুল, তোমরা রাতে থাকবে?”

“আমি তো আসলে জানি না আপু। নিয়ম কী? রাতে থাকতে হয় না খেয়ে চলে আসতে হয়?”

“নিয়মের কিছু নাই। বৌভাতের পর নতুন বৌ বাবার বাড়িতে ফিরানিতে যায়। বাবা মা নতুন শাড়ি কাপড় দেয়।”

“রাতে থাকে না।”

“সেটা তোমাদের ইচ্ছে।”

“আপনি আর ভাইয়া কি ছিলেন?”

শেলী উওর দেওয়ার আগেই তুলতুলের দাদী শাশুড়ি বলেন, “হুম ছিল না আবার। জামাই লইয়া তিনদিন আছিল। নয়া নয়া শ্বশুর বাড়িত কম, শেলী তো বাপের বাড়িতই বেশি পইড়া থাকতো।”

“ভাইয়াও থাকতো?”

“তুলতুল এসব কেন জিজ্ঞেস করছ? তুমি আমার সাথে তুলনা করছ? আমার আব্বু আম্মু আমাকে আদর করে রেখেছেন। তোমার আব্বা আম্মা বলেন নাই কিছু?”

“না আপু। কী বলেন। তুলনা কী? আমি আসলেই জানি না কিছু। আম্মা তো এগুলো কিছু বলেন নাই। মিতুল, রাতুল সবাই অপেক্ষায় আছেন বললেন। আদর তো সায়েমকেও দিবে অবশ্যই।”

সায়েম বিরক্ত হয়ে বলে, “কী শুরু করলা তোমরা। আমি কী করব বলো তো?”

শেলী মানাও করতে পারে না। বেলুন চুপসে গিয়েছে একটু আগে দাদীর কথায়। আর এখানে তুলতুলকেও ধরতে পারবে না। কারণ তুলতুল তো কিছু বলেইনি। তুলতুলদের বাসায় এসে সায়েমের ভালোই লাগে। সবাই বেশ খাতির করছে। জামাই আদরের চূড়ান্ত বলা যায়। জান্নাত আরা জানিয়েছিল কোন কোন খাবার সায়েমের বেশি পছন্দ। তাই রান্না করা হয়েছে। রাত বাড়তে থাকে। জান্নাত আরা আর ফোন দেননি, বলা ভালো সায়েমের বাবাই দিতে দেননি। মিতুল, তুলতুলের রুমটাই সায়েম আর তুলতুলের জন্য গুছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

“তুলতুল আমি যাই তাহলে। তুমি থাকো আজ। সবাই তো তুমি থাকবে আশা করে আছেন। কাল এসে নিয়ে যাব।”

“আচ্ছা।”

“আমি চলে গেলে কেউ কিছু মনে করবে?”

“করতেও পারে। সবাই তো আপনি সহ থাকবেন জানে।”

“তাহলে যাব না?”

“তা তো আপনার ইচ্ছে। আমি বলে দেব আপনি নিজের বিছানা ছাড়া ঘুমাতে পারেন না।”

সায়েম ছটফট করে। কেউ একজন তার হয়ে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে দিলে ভালো হতো মনে হয়। শেষ পর্যন্ত নতুন বৌয়ের মায়া, বিছানার মায়ায় চেয়ে বেশি হয়ে যায়। যদিও বাড়ি ফিরে এসে মায়ের থমথমে মুখ দেখে সায়েম বুঝে মা চেয়েছিল সায়েম চলে আসবে। এবার সায়েম সেই অস্বস্তিটাকে বিরক্তি বানিয়ে তুলতুলকে ফেরত দিচ্ছে। বসার ঘরে বসে বসে সায়েম যখন অযথাই বদনাম করছিল, সৌভাগ্য হোক বা দুর্ভাগ্য তুলতুল তা শুনে ফেলে। স্বামীর দ্বিচারিতা তুলতুলের একদম ভালো লাগে না। ঐ বাসায় একবারও মনে হয়নি কিছু সায়েমের খারাপ লাগছে, অপছন্দ হচ্ছে। অথচ সায়েম এখন অবলীলায় বলে যাচ্ছে, রুম ছোটো ছিল, গরম লাগছিল, মুরুব্বিরা বলায় থাকলো।

“বুঝলি আপা, চিংড়ির মালাইকারী তোমার মতো কেউ বানায় না। মুখে দিয়ে মনে হলো বলি যে একদিন আমার আপুর কাছ থেকে রেসিপি… ”

তুলতুল আর দাঁড়িয়ে না থেকে চা নাস্তার ট্রে নিয়ে ভেতরে আসে। সায়েম বিব্রত হয়ে কথা গিলে নেয়। শেলীর মুখটা চকচক করছিল।

“থামলি কেন? ও বৌ মাইন্ড করবে?”

“না আপু। মাইন্ড কেন করব? ও তো গলদা চিংড়ি তিন পিস নিয়েছিল। তারপরও বলেছিল আপুর রান্না চিংড়ি হলে কমপক্ষে ছয় সাত পিস খায়।”

সায়েম বিষম খায়। মিতুলের মুখ দেখে মনে হচ্ছে সহজ কথা বলছে। শেলীও রাগ করবে নাকি বলবে এক মুহুর্তে বুঝে না।

“তুলতুল, তুমি আমার ছেলের খাওয়ায় নজর দাও কেন? তিনপিস নিয়েছে তুমি গুনেছ?”

“না না মা ছিঃ। আমিই তো পাশে দাঁড়িয়ে দিলাম। আমি আরও দিতে চেয়েছিলাম। তখন বললেন যে আপুর রান্না চিংড়ি হলে আরও নিতো।”

জান্নাত আরা দ্বিধায় পড়ে যান। তুলতুল আসলে সহজ সরল, না বেশি বুদ্ধিমান!

***

“তুলতুল, তুমি আমাকে টিটকারি করে মজা পেয়েছ?”

“আমি কী করলাম?”

“আমি বুঝি নাই ভেব না।”

“না আমিই আসলে বুঝিনি। আমার মনে হয়েছিল আপনার সব ভালো লেগেছে। কিন্তু বুঝলাম আমি যা বুঝেছি, তা ঠিক বুঝিনি।”

“আমি কি তোমাদের বাসায় কোনো সিনক্রিয়েট করেছি? এখনাে আম্মু আর আপুকে মিস করেছি বুঝাতে এমন টুকটাক কথা বলেছি। ওনারা খুশি হলে কোনো সমস্যা আছে?”

“আমাদের বাসা, রান্না এসব নিয়ে নেগেটিভ বললে ওনারা খুশি হবেন?”

“আমি তেমন বলেছি?”

“তো কী বললেন?”

সায়েমের মেজাজ খারাপ হয়। প্রথম দিন তুলতুলকে যতটা নরম সরম ভেবেছে। আসলে তা নয়। তুলতুলও মনে মনে ঠিক করেছে যুদ্ধ না করলেও সংসার সমরাঙ্গনে সে লড়াই না করে একপেশে হার হারবে না। শুধু ভয় এতে সংসারটাই না যুদ্ধ ক্ষেত্র হয়ে যায়। এখানে যে শাশুড়ি বনাম বৌ না। এখানে যে স্নায়ুযুদ্ধটা স্বামী বনাম স্ত্রীর

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে