#ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
পর্ব ৮
মিতুল মুগ্ধ হয়ে ছবিগুলো দেখছে। কী চমৎকার এসেছে ছবিগুলো। আচ্ছা লোকটা নাকি কিছু করে না। শেলী আপার ভাষায় ‘হেঁটেহুঁটে খায়’।
তা ওয়েডিং ফটোগ্রাফির কাজ করলেও তো পারে। আজকাল কত আনাড়ি ছেলেপেলেরাও ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনে পেজ খুলে ফটোগ্রাফার বনে গিয়েছে। আর এই লোকটার হাত এতো ভালো, চাইলে ফটোগ্রাফার হয়েও তো ইনকাম করতে পারে। মিতুলের ক্লাসমেট সুমনার বয়ফ্রেন্ড ফটোগ্রাফার। সারাদিন ক্যামেরা নিয়ে ঘোরে। এমন ভাব নিয়ে চলে যেন ফটোগ্রাফার না, সিনেমার পরিচালক। হ্যাংলা মেয়েগুলো সেই ছেলের ক্যামেরায় ছবি তোলার জন্য মুখিয়ে থাকে। সুমনাও বয়ফ্রেন্ডের হাতে নিজের সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে পোস্ট করে। এমন একজন পার্সোনাল ফটোগ্রাফার থাকায়, সবাই সুমনাকে একটু হিংসাই করে। ম্যাসেজ টাইপ করে,
“থ্যাংক ইউ সো মাচ। ছবিগুলো খুব সুন্দর হয়েছে।”
“ইউ আর ওয়েলকাম।”
***
ফারহান ল্যাপটপ খুলে বসেছে। অফিসের কাজ আছে। ফারহার ম্যাসেজ দেখে ফেসবুক খুলে বসে। ফারহা বেশ স্মার্ট মেয়ে। ফারহান কন্টাক্টের জন্য নাম্বার চাইলে সহজেই নাম্বার অদলবদল করেছে, ফেসবুকে এড হয়েছে। ফারহান বুঝতে পেরেছে ফারহা ওর প্রতি ইন্টারেস্টেড। কিন্তু এই এটেনশন ফারহানের জন্য নতুন কিছু না। ফারহানের মতে তারমতো হ্যান্ডসাম ছেলে, যার ভালো জব, ভালো ফ্যামিলি আছে, তারজন্য বিয়ের পাত্রী পাওয়া কোনো বিষয় না। বরং ডেটিং অ্যাপসের মতো যেকোনো মেয়েকে রাইট লেফট সোয়াপ (swap) করা যায়। আপাততঃ ফারহাকে রাইটেই রেখেছে। তাই ইগনোর করছে না। তবে মিতুলের বিষয়টাও মাথা থেকে বের করেনি। আরও একটু দু’জনকেই যাচাই বাছাই করতে হবে।
ফারহা বিয়ের ছবি আপলোড করেছে। বেশিরভাগই নানা ঢং এ তোলা নিজের ছবি। কিছু গ্রুপ ছবি আছে। ফারহার ফেসবুক আইডির লিংক ধরে মিতুলের আইডি ওপেন করে ফারহান।প্রোফাইলের ছবিটাতেই নজর আটকে যায়। ছবিটা সাধাসিধা। কিন্তু ভীষণ আকর্ষণীয়। ফারহা সুন্দর নিঃসন্দেহে। ফারহানের মায়েরও ইচ্ছে ফারহাকেই বৌ করা। বাবার একমাত্র মেয়ে, আর্থিক অবস্থা ভালো, মেয়ের জামাইকে মাথায় করে রাখবে। মিতুলের খোঁজও নিয়েছেন। দেখতে শুনতে ভালোই। কিন্তু আর কিছুই আহামরি বলার মতো না। ফারহানকে তাই আরেকটু ভাবতে বলেছেন তিনি।
***
মিতুলের ছবিগুলো আত্মীয় আর বন্ধুমহলেও সাড়া ফেলেছে। ফারহার এত বিরক্ত লাগছে। এত চমৎকার সাজ, পোশাক পরলো সে, আর সবাই কিনা ঘুরেফিরে শুধু মিতুলের কথা বলে। কী সুন্দর লাগছে? ঘোড়ার ডিম। আসলে মিতুল ভালো জামাকাপড় কম পরে, তাই একটু ভালো শাড়ি পরে সাজতেই সবার চোখে লেগেছে আর কিছু না। মিতুলকে বকা খাওয়ানোর কাজেও ফারহা সফল হয়নি। ড্রাই ওয়াশের পরও শাড়িতে দাগ হালকা আছে এখনো। তবে এ নিয়ে ফারহার আম্মু কোনো রাগ দেখাননি। শাড়িটা মিতুলের কাছ থেকে নেয়ওনি। ওকেই রেখে দিতে বললেন। বললেন মিতুলকে মানিয়েছে খুব। ও গিফট হিসেবে রাখুক। মিতুলের খুশি দেখে কে। যত্তসব।
***
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। ছাতা মাথায় দেওয়ার মতো পানি না, আবার না দিলেও চুল মুখে অস্বস্তি। মিতুল ছাতা নিয়ে বের হয়নি। বান্ধবীর বাসায় যাবে বলে বের হয়েছে। কিছু ছবি প্রিন্ট করতে দিবে। বান্ধবীকে সাথে নিয়েই যাবে ভেবেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বের না হলেই ভালো হতো। মা মানাও করছিল, কিন্তু মিতুলের অস্থিরতা বাঁধ মানলে তো। ছাতাটাও নিয়ে বের হয়নি। ঠিক ঠিক ঠান্ডা লাগবে। তুলতুল আজ বিকেলে সায়েমকে নিয়ে বাড়িতে আসবে। কত পরিকল্পনা ছিল, ঠান্ডা লাগলে কিছু করা হবে না। ইতোমধ্যে হাঁচ্চি শুরু।
“ঠান্ডা সহ্য না হলে বৃষ্টি বিলাস কেন?”
“আপনি এখানে কিভাবে?”
“কেন এই রাস্তায় থাকা দোষ নাকি?”
“না মানে তা বুঝাইনি। ভালো আছেন?”
“জি। কই যাচ্ছেন?”
“বান্ধবীর বাসায়।”
“কতদূরে?”
“এই তো দশ মিনিটের রাস্তা।”
“রিকশা ডেকে দেব?”
“না থাক। বাসায় চলে যাই। আবহাওয়া খারাপ। আজ আপু আসবে ভাইয়াকে নিয়ে। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর আসলে সব মজা পন্ড হবে।”
“বাসা কত দূর?”
“তাও দশ পনেরো মিনিটের রাস্তা।”
“হেঁটেই এলেন?”
“হুম।”
মিতুলের অস্বস্তি লাগে। লোকটা কি তাকে ফকির ভাবছে? বৃষ্টির ভেতর টাকা নেই বলে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে।
“রিকশা পাওয়া মুশকিল এই আবহাওয়ায়। পেলেও দেখবেন না করে দিবে। কোথায় যেন পড়েছিলাম, সুন্দরী মেয়েদের না করার ক্ষমতা একমাত্র রিকশাওয়ালা ভাইদের আছে।”
আরমানের হাসিটা ভালো লাগে মিতুলের। আসলেই রাস্তায় রিকশা কম। মিতুল ভেবেছিল হেঁটেই চলে যাবে, বিশ মিনিটের হাঁটা পথ। টাকাটাও বেঁচে গেল। সেই টাকা জমিয়ে মিতুল বড়োলোক হবে না। তবে এক প্লেট ফুচকার টাকা হয়ে যাবে। ফুচকা, চটপটি দেখলে মিতুলের মাথা ঠিক থাকে না।
“আমি নামিয়ে দেই?”
“না লাগবে না। আমি রিকশা নিয়ে নেব।”
” অস্বস্তি বোধ করলে মাঝখানে আমার ল্যাপটপ ব্যাগটা রেখে দিলেন। তাহলে গায়ে স্পর্শ লাগবে না।”
“আমি কী এটা বলেছি?”
“তাহলে আসেন নামিয়ে দেই।”
মিতুল ইতস্তত করে উঠে বসে। তার পরিবার সহজ পরিবার না। বেশ কনজার্ভেটিভ। অথচ মিতুল এই লোকটার সাথে এত সহজ ভাবে মিশছে কেন! বাবা দেখে ফেললে নিশ্চয়ই ভালো ভাবে নিবেন না। মিতুল, তুলতুলের কোনো ছেলেবন্ধুই নেই এই পর্যন্ত। অবশ্য লোকটা সায়েম ভাইয়ার কাজিন। বাবা জানলেও নিশ্চয়ই খুব একটা রাগ করবে না।
“বাইকে বসার একটা নিয়ম আছে। তা ফলো না করলে পড়ে যেতে পারেন। এত জড়োসড়ো হয়ে বসার কিছু নাই। আমি ছেলে ভালো।”
মিতুলের মাথায় ছোটো সাইজের একটা হেলমেট পরিয়ে দেয় আরমান। মিতুল মনে মনে ভাবে আরমান নিশ্চয়ই হাত খরচের জন্য পাঠাও বাইকের মতো বাইক রাইড দেয়। না হলে এক্সট্রা হেলমেট কেন রাখবে! হতেই পারে, হেঁটে তো মানুষের হাত খরচ আসে না। ইসস এর চেয়ে ফটোগ্রাফার হওয়াই তো ভালো ছিল। কষ্ট কম, ভাববেশি।
বাইক চলতে শুরু করলে ভীষণ ভালো লাগতে থাকে মিতুলের। মনে হচ্ছে অনেক বড়ো হয়ে গিয়েছে। বাতাস তো বটেই, বৃষ্টির ছাটটাও ভালো লাগছে।
(চলবে)