ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে
পর্ব ১৩
ফারিহা অস্বস্তিতে ভুগছে। ফারহান কী চাইছে বুঝতে পারছে না। মোটামুটি নিয়মিত এখন তাদের ফেসবুকে চ্যাট হয়। ফারিহা স্পেস দিচ্ছে রোমান্টিক লাইনে আগানোর, অথচ ফারহান যেন ইশারা বুঝেও বুঝতে পারছে না। এখন বিষয়টা ফারিহার ইগোতে এসে দাঁড়িয়েছে। সবসময় ফারিহা এটেনশন পেয়ে অভ্যস্ত, দিয়ে নয়। অথচ এই ছেলেকে সুযোগ দেওয়ার পরও পিছলাচ্ছে। চিন্তিত ফারহার মা জেসমিনও। রাতে ঘুমুতে এসে স্বামী শফিক সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন,
“আচ্ছা, জুলফিকার সাহেবের সাথে তোমার কোনো যোগাযোগ হয়েছে?”
“কোন জুলফিকার সাহেব?”
“আশ্চর্য! ফারহার একটা প্রস্তাব আসলো না? ছেলের নাম ফারহান, তার বাবা জুলফিকার সাহেব।”
“ওহ। ওনার সাথে তো আমার সরাসরি পরিচয় নাই। আলাপচারিতা যা হয়েছে তা তো রাহেলার জামাইয়ের মাধ্যমে। কেন বলো তো?”
“আর কেন? একটু গল্প করতাম এই জন্য।”
“এ্যাঁ?”
“কী ভ্যা ভ্যা কর? কী জন্য আবার? ওনারা ফারিহার বিষয়ে কিছু জানালেন না যে?”
“বাদ দাও না। আমরাও তো কিছু জানাইনি।”
“আমরা আবার কী জানাব? আমি তো রাহেলাকে সেদিন রাতেই বলেছি যে আমাদের দিক থেকে পজেটিভ। রাহেলা বললো ছেলের পরিবারও পজেটিভ। শীঘ্রই কথা আগাবে। এরপর আর খবর নাই।”
“আরে দিন গেল কয়টা? গায়ে পড়ে জিজ্ঞেস করতেও তো আনইজি লাগে। তবে তাদের তরফ থেকে না হলে তো তারা জানাতেন। বিয়ে শাদীর বিষয়, মানুষ সময় নেয়। কয়দিন যাক আমি খোঁজ নেব।”
“এ কী ধরনের আচরণ? না বলবে কেন? আমাদের মেয়ে কী ফেলনা? সবদিক থেকে পজেটিভ হওয়ায় তো আমরা মেয়ে দেখালাম। না হলে আমি ফারহাকে এভাবে কারও সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে পাঠাতাম? দুই পরিবারে সব কথাবার্তা মিললো বলেই তো ছেলেমেয়েকে একসাথে কথা বলার সুযোগ দিলাম। আমার কানে তো আরেকটা খবর এসেছে।”
“কী খবর?”
“ওরা নাকি আরও মেয়ে দেখেছে সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে। ফারিহাই একমাত্র কন্যা ছিল না। এ কেমন কথা? ছেলের জন্য একসাথে একাধিক মেয়ে দেখেছে, তাও একই জায়গায়!”
“এটা কেমন কথা। না না এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। আমি তো জহিরের সাথে কথা বলব। রাহেলা তো এমন কিছু বলেনি। আমি ভাবলাম বিয়ে শাদীর বিষয়, মানুষ সময় নেয়। কিন্তু এসব কী? কী ঘোড়ার ডিম হয়ে গিয়েছে পাত্র পক্ষ? আমার সামাজিক অবস্থান কোনো অংশে কম নাকি? ওরা কী জানাবে আমিই জহিরকে মানা করে দেব।”
“আস্তে, উত্তেজিত হইয়ো না। হুট করে মানা করে দিবে কী? ফারিহার ছেলেকে পছন্দ হয়েছে বুঝেছি। ইনিয়েবিনিয়ে জানতে চেয়েছিল ওরা কিছু জানিয়েছে নাকি। এখন হুট করে না হয়েছে শুনলে মেয়ে মনে কষ্ট পাবে না।”
“ও মনে কষ্ট পাওয়ার কী আছে? ওর কী প্রেম ছিল যে কষ্ট পাবে! তাছাড়া আমরা রিজেক্ট করব। কারও সাহস আছে নাকি আমার মেয়ে রিজেক্ট করবে।”
“উফ্ জ্বালা তোমার সাথে কথা বলা মুশকিল। রিজেক্ট তো এখনো ওরাও করেনি। এই বিষয়ে তুমি রাহেলার বর মানে জহির ভাইয়ের সাথে আগে কথা বল। একাধিক কন্যা দেখার বিষয়টা লুকানোয় যে আমরা মনোক্ষুণ্ণ হয়েছি তাও জানিও। দেখ কী বলে। আগে জানি তো এই চুপচাপ থাকার কারণ কী।”
***
টুংটাং ম্যাসেজে মিতুলের সাথে আরমানের কথা জমে উঠে। খুবই সহজ সাধারণ চ্যাট। আরমানের ভালো লাগে। যদিও বয়সের পার্থক্যটা ওকে মনে মনে খুব খোঁচায়। তবু নিজেকে নিভৃত রাখতে পারে না। মিতুলের চপলতা, সহজ সরল আচরণ, অকৃত্রিম মানসিকতা তাকে ভীষণ ভাবে আকর্ষণ করে। মিতুলের দিক থেকে বিষয়টা যে তেমন নয় বুঝে। হয়তো মিতুল তাকে সেই নজরে দেখেই না। অথবা যেমন ছেলে মিতুল চায়, তেমনটা আরমান নয়। আজকাল মেয়েরা অনেক বৈষয়িক হয়। ভালো ক্যারিয়ার, কেতাদুরস্ত চলাফেরা, সিকিউরড লাইফ তাদের কাছে বেশি কাম্য। ওসব কবিতা আর কল্পনার দুনিয়া তাদের টানে না। মিতুলের দিক থেকে তেমন কোনো ইশারা পায় না বলেই আরমানের প্রপোজ করার সাহস হয় না। তবু সময়ে সময়ে মিতুলকে ইনবক্সে নক করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা হয় না।
***
তুলতুলের দিনগুলো যাচ্ছে নিস্তরঙ্গ। নতুন বিয়েতে যে পাগলামি টান, আদর ভালোবাসার মাখামাখি থাকার কথা। তার কিছুই যেন নেই। রাত যায় দিন আসে। শারীরিক বিষয়গুলো নিয়ম করে হয়। তুলতুলের ভূমিকা থাকে পুতুলের মতো। তুলতুলের এই নিস্প্রভ আচরণে সায়েমের বিরক্ত লাগে। তুলতুলের এই ঠান্ডা আচরণ একধরণের বিদ্রোহ বুঝেও কিছু করতে পারছে না, মানতেও পারছে না।
***
“ফরিদা, একটা প্রস্তাব এসেছে।”
“কিসের প্রস্তাব?”
“মিতুলের জন্য। ছেলের নাম ফারহান। বংশ ভালো, চাকরি ভালো। কথা আগাব ভাবছি। কী বল?”
“কী বলেন! কিভাবে কী হইলো?”
“আসো বসো বলি।”
ফরিদা অবাক হয়ে স্বামীর পাশে বসে। শুনে সবটা।
(চলছে)