দ্বিতীয় বসন্ত পর্ব-১০

0
848

#দ্বিতীয়_বসন্ত
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১০
রিথী রুমের একোনা থেকে ওকোনা পায়চারি করছে আর হাত কচলাচ্ছে। রুদ্ধকে আজকে রাতে রেখে দিয়েছে মানা গেলো কিন্তু ওর সাথেই কেনো থাকতে হবে? রিথী এগুলো ভাবছে আর অস্থির হচ্ছে।
রিথী ওর মাকে বলেছিল যে, সে আজকে নাহয় তার বোনদের সাথে ঘুমালো আর রুদ্ধ তার রুমে।
কিন্তু রিথীর মা-জননী মেয়েকে এক প্রকার শাসিয়ে গেছে যেনো এরকম কথা আর উচ্চারন না করে। জামাই প্রথমবার শ্বশুর বাড়ি থাকবে তাও রুমে একা থাকবে! এটা কখনো হয়নি তাই রিথীকে রুদ্ধর সাথেই থাকতে হবে।

রিথী টেনশনে এখন ব্যালকনিতে চলে গেছে। সেখানেও পায়চারি করছে। কিয়ৎক্ষণ পর রুমে কারো পদচারণার শব্দে রিথী রুমে যায় আর দেখে রুদ্ধ বিছানায় আয়েশ করে বসেছে। দেখে মনে হচ্ছে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রিথী চোখ দুটো ছোট ছোট করে রুদ্ধর কাছে গিয়ে বলে,

–তোমাকে এখানে থাকতে বলেছে কে? রাত তো আর অতো বেশিও হয়নি যে তখন তুমি তোমার বাড়ি ফিরতে পারতে না!

রুদ্ধর কথাটা কিছুটা গায়ে লাগে তারপরেও সে রম্য স্বরে বলে,
–বাড়িতে তো বউ নেই তাই ভাবলাম বউয়ের কাছে থাকার অফারটা মিস করা যাবে না।

রিথী কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছ। তা দেখে রুদ্ধ বলে,

–আপনি করে বলবে আমাকে। তাহলে নিজের মধ্যে একটা বড় বড় ফিলিংস আসে। বউয়ের মুখে “আপনি” ডাক! আহা!

রিথী রুদ্ধর কথা শুনে বিড়বিড় করে বলে,
–এহ! আসছে সে বড়! তাকে আপনি করে ডাকবো! পারলে তো তুই করে বলবো তোরে শয়তান। পিচ্চি পোলার আবার বড় হবার শখ!

রিথী বিড়বিড় করে বললেও রুদ্ধ তা শুনে ফেলে। এরপর হাই তুলতে তুলতে বলে,
–স্বামীকে সম্মান দিতে শিখো রমণী। জানো তো, “ছোট লংক্কার ঝাঁঝ বেশি”। বয়সে ছোট হতে পারি তবে অন্যকিছুতে ছোট না। “আই এম দা ক্রাশ বয়” ইউ নো!

রিথী আর কিছু না বলে ব্যালকনিতে যেয়ে বসে। রুদ্ধও যায় সেখানে তারপর তারকাখচিত আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

–আমি তোমার সাথে যতোটা সহজ ও নরম ব্যাবহার করছি, আমি কিন্তু ততোটা সহজ-সরল না। তোমাকে ভালোবাসি বলেই তোমার অবহেলা মেনে নিচ্ছি। আর তাছাড়া তোমাকে সময় দেওয়া প্রয়োজন তাই সময় দিচ্ছি। বাস্তবতাকে মানতে শিখো। কল্পনার রাজ্যে তখনি পরে থাকা যায় যখন মানুষটাকে পাবার ক্ষীন পরিমানেও আশা থাকে কিন্তু তোমার জীবনের সবচেয়ে অপ্রিয় সত্য এটাই যে, নিদ্র আর কখনো ইহলোকে ফিরবে না। পরকাল ছাড়া তুমি তার দেখা পাবে না। আর তোমাকে তার জন্য এভাবে থাকাকে কি নিদ্ররও ভালো লাগতো? না তো। তাই নিজেকে সময় দেও। আমি তোমাকে জোর করবো না আমাকে মানতে। তোমাকে ভালোবাসি বলেই তোমাকে আগলে নিয়েছি। এর থেকে অন্যকিছু ভেবো নাম

রিথী শুনলো এরপর ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–আমাকে কেন ভালোবাসেন? একদিনের পরিচয়ে ভালোবাসা ও বিয়ে! আর এটা জানা সত্বেও যে আমি বিধবা! কতো সুন্দরি মেয়েরা আপনার জন্য পাগল। আমাকে বিয়ে না করলেও পারতেন।

রুদ্ধ হাসলো এরপর বলে,
–তোমাকে কেনো ভালোবাসি তা জানি না তবে তোমাকে দুই বছর ধরে ভালোবাসি। তোমার বিয়ের খবর শুনে কষ্ট পেয়েছিলাম তবে নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম এটা ভেবে যে নিষিদ্ধ তুমি আমার জন্য। কিন্তু যখন নিদ্রর মৃত্যুর কথা শুনলাম, তখন আমি থমকে গিয়েছিলাম। কারন নিজের ভালোবাসার ভালো থাকার উৎস যে সেই ছিলো। তারপর তোমার ভেঙে পড়ার কাজ গুলো শুনে আমি ডিসিশন নিয়েই নিয়েছিলাম যে তোমার জীবনের দ্বিতীয় বসন্ত হবো আমি। প্রথম বসন্ত চলে যাবার সময় তোমার সব রঙ সাথে করে নিয়ে গেছে আর আমি দ্বিতীয় বসন্ত হয়ে সব রঙের ডালা নিয়ে তোমার দুয়ারে হাজির হবো। এবার তোমার সেটা সাদরে গ্রহন করার অপেক্ষা। আমি জানি আমার ভালোবাসার বিনিময়ে হয়তো ভালোবাসা পাবো না। তাও চেষ্টা করতে ক্ষতি কি! তোমার মনে নিদ্রর জায়গা আমি চাই না। সত্যি বলতে কেউ কখনো কারো মনে কারো জায়গা নিতে পারে না যদি সেই জায়গাটা অম্লিন হয়। আমি চাই নিদ্রর পাশাপাশি তুমি আমাকে তোমার মনে কিছুটা যায়গা দাও। বিশ্বাস রাখতে পারো, আল্লাহ না চাইলে মৃত্যু ব্যাতিত তোমার হাত ছাড়বো না।

রিথী মুগ্ধ দৃষ্টিতে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে। রিথীর মন বলছে,
“ছেলেটার বয়স কম হলেও কথাগুলো খুব সুন্দর। কারো মনকে নরম করতে পারে। কিছুটা নিদ্রর মতো কথা বলে। নিদ্র সবসময় তাকে স্পেস দিয়েছে। নিদ্রর মানুষকে বোঝার ক্ষমতা দারুন ছিল। শান্ত স্বভাবের ছিল কিন্তু রুদ্ধ শান্ত স্বভাবের না।”

রুদ্ধ এবার তাড়া দিয়ে বলে,
–আমি ঘুমাবো। তুমি কি করবে দেখো। ভোর সকাল থেকে বিছানায় গা হেলানোর সুযোগ পাইনি।

রিথী উঠে গিয়ে বিছানা করে। বিছানার মাঝে একটা বড় কোলবালিশ দেয়। রিথী তাও ইতস্তত করছে। তা দেখে রুদ্ধ বলে,
–বাহ! পার্টিশন। নো টেনশন। আমি ওটা ক্রস করবো না।বয়সে ছোট হতে পারি তবে বিচার ক্ষমতা আছে।

রুদ্ধ গিয়ে একপাশে শুয়ে পড়ে। রাত এখন ১০.৩০ বাজে। সারাদিন ঘোরাফেরার কারনে শরীর এখন বিশ্রাম চাইছে তাই দুজনেই ঘুমিয়ে পরে।

_______________
ভোরের ঊষা রক্তিম আভা নিয়ে পূর্ব আকাশে উদিত হচ্ছে। ভোরের আলোর সূচনা লগ্নে ঘুম ভাঙে রিথীর। বাংলা নববর্ষের প্রথমদিন। সকাল সকাল ইলিশ ভাজা, হরেক রকমের ভর্তা বানানোর হিরিক পরে যায়। এরপর গরম ভাতে পানি ঢেলে ইলিশ ভাজা ও ভর্তা দিয়ে পরিবেশন করে সকালের খাবার। রিথী উঠে নামাজ আদায় করে নেয় এরপর ওর মনে হলো রুদ্ধকে ডাকা উচিত নামাজ পড়ার জন্য। রিথী কিভাবে ডাকবে এটা ভেবেই এক মিনিটের মতো দেরি করে ফেলল। এরপর আর ভাবা-ভাবির দিকে না গিয়ে সরাসরি ডাক দেয়,

–রুদ্ধ! রুদ্ধ! রুদ্ধ উঠুন। নামাজের সময় চলে যাচ্ছে। উঠুন রুদ্ধ।

রুদ্ধ একটু নড়াচড়া করে পাশ ফিরে আবার ঘুমাচ্ছে। রিথী এবার কি করবে! তাই রিথী এবার ফোনের একটা লাউড মিউজিক অন করে রুদ্ধর কানের কাছে ধরে। আচানক কানের কাছে উচ্চ শব্দে রুদ্ধ ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। রিথী তা দেখে মুখে হাত দিয়ে হাসতে থাকে। রুদ্ধর মেজাজ তো চটে গেছে। রুদ্ধ ধমক দিয়ে বলে,

–এই মেয়ে! শুধু হাতে-পায়েই বড় হয়েছো কিন্তু মাথায় কি বুদ্ধি হয়নি? ঘুমন্ত কাউকে যে উচ্চ শব্দের কিছু দিয়ে ডাকতে হয়না তা জানোনা? মানুষ তখন হার্ট এ্যাটাকও করতে পারে।

রিথী চুপসে যায়। ঠিকই তো বলেছে রুদ্ধ। জড়তার কারনে কি করবে বুঝতে পারেনি। রিথী আমতা আমতা করে বলে,

–আসলে বুঝতে পারিনি। এলার্মও তো এভাবে বাজে। আর আপনাকে ডাকার পরেও উঠছিলেন না তাই..

রুদ্ধ নিজেকে শান্ত করে বলে,
–এলার্ম একদম কানের কাছে বাজে না। সেটা যথেষ্ট দূরত্বে বাজে। আরো কয়েকবার ডাকলেও পারতে। যাইহোক আমি উঠে গেছি এখন তোমার তো তাড়া আছে তাই যাও। যেই কাজের জন্য এতো তাড়াহুড়ো সেটা করো।

রিথীর এটাতো বুঝে আসছে যে রুদ্ধ রাগ করেছে কিন্তু সে কি করবে সেটাই বুঝতে পারছে না। রিথী বিষন্ন মনে চলে যায়। আর রুদ্ধ উঠে ফ্রেশ হয়ে অজু করে নামাজটা পড়ে নেয়। তারপর ব্যালকনিতে গিয়ে বসে। সকালের স্নিগ্ধ আলো মনকে ছুঁয়ে যায়। মনটা ফ্রেশ হয়ে যায়।

রিথী বিষন্ন মুখ নিয়ে রান্নাঘরে গেলে ওর মা ওকে বলে,
–কিরে! আবার কোনো ঝামেলা হয়নি তো? তোর মুখ এমন কালো করে রাখছিস কেন?

রিথী চুপ করে আছে। সে যা করছে সেগুলা বললে এই নববর্ষের দিন বকা খাবে। আর রিথী এটা মানে যে, নববর্ষের দিন ভালো গেলে পুরো বছর ভালো যায়। তাই রিথী কথা ঘুরিয়ে বলে,

–দাও তো রসুনের ভর্তা বানাবো। সাথে ইলিশ মাছ তো নামিয়ে রাখছো। সেগুলোকে কেটে তারপর ভাজি।

মিসেস রোজী মেয়েকে বাধা দিয়ে বলে,
–আগে কফি বানিয়ে রুদ্ধকে দিয়ে আয় তারপর যা করার করবি।

রিথীর তো ভয় লাগছে। যদি রুদ্ধ আবারো ধমক দেয়। তাও মায়ের তাড়াতে কফি বানিয়ে নিয়ে যায়। রুদ্ধকে রুমে না পেয়ে ব্যালকনিতে যায়। তারপর রুদ্ধর সামনে কফির মগ বাড়িয়ে বলে,

–এই নিন আপনার কফি। আর স্যরি, আমার ওভাবে ঘুম ভাঙানো উচিত হয়নি। আসলে জড়তা কাজ করছিল তাই বুঝতে পারিনি।

রুদ্ধ কফির মগটা নিয়ে তাতে চুমুক দিয়ে বলে,
–আমি চিনি যুক্ত কফি খাইনা। শুধু ব্ল্যাক কফিতে এক চামচ চিনি খাই। তাও এটা ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ কফির জন্য।

রিথী আর দাঁড়ায় না। রান্নাঘরে চলে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে