#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
#Part_6
অনিন্দা বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজা খুলতেই আফাক এসে অনিন্দাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আকস্মিক এহেন কান্ডে ভেবাচেকা খেয়ে যায় অনিন্দা। কি করছে আফাক বুঝে উঠতে পারছে না সে। অনিচ্ছুক হৃদয় আফাক কে ধরার প্রবল প্রয়াস করছে। কিন্তু অনিন্দা চাওয়া সত্ত্বেও আফাক কে ধরছে না। কিছুটা অজানা আশংকা আর কিছু ভীতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে৷
আফাক কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয় অনিন্দাকে। অনিন্দা নিজেকে সামলাতে সামলাতে
‘ আপনি ঠিক আছে…
কথাটা বলতে পারলো না অনিন্দা তার আগেই দেখে আফাকের হাত থেকে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছে। অনিন্দা রক্ত দেখে আওয়াজ করে উঠে
‘ আপনার হাত থেকে রক্ত পড়ছে আফাক।
আফাক হাতের দিকে তাকিয়ে
‘ এ কিছু না।
অনিন্দা তারাহুরো করে আফাকের হাত ধরে বিছানায় বসায়৷ তারপর হাত স্যাভলন দিয়ে মুছে ব্যান্ডেজ করে দেয়। অনিন্দার চোখে পানি। কেন এসেছে বুঝতে পারছে না। কাছের মানুষ নাকি একটু ব্যথা পেলেই চোখে জল আসে! আফাক কি তবে কাছের মানুষ? পবিত্র একটা সম্পর্ক দিয়ে তারা ঘেরা। নিজের স্বামী ব্যথা পেলে কান্না হয়তো আসবেই। আফাক তাকিয়ে আছে অনিন্দার ভেজা চোখের দিকে।অনিন্দা চোখ না মুছে উঠে দাঁড়তে নিলেই আফাক অনিন্দার হাত ধরে
‘ কোথায় যাচ্ছো?
অনিন্দা চুপ করে আছে দেখে আফাক মুচকি হাসি দিয়ে
‘ আয়ু নাকি তোমার সাথে আসেনি। আম্মু ফোন দিয়ে বললো আম্মু নাকি নিয়ে গিয়েছে আয়ুকে। ওকে দেখে ফিরতেই একটু লেট হয়েছে।
অনিন্দা এবার চুপ না থেকে চোখের পানি মুছে নিয়ে তাকালো আফাকের দিকে, তাকিয়েই
‘ আপনার হাতে কিসের চোট লেগেছে?
আফাক বাধ্য ছেলের মতো মাথা নিচু
‘ সকালে তোমায় ব্যথা দিয়েছিলাম না চাইতেও, তাই আমার হাতেও ব্যথা দিলাম।
অনিন্দা অবাক হয়ে
‘ আপনি নিজে নিজের হাতের রক্ত ঝরিয়েছেন।!
আফাক মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই অনিন্দা যেন আকাশ থেকে পড়ে। এই ছেলে এসব কি বলে? মাথায় নিশ্চয় কোন সমস্যা আছে। মাথায় গন্ডগোল না হলে এমন কেউ করে! এমন নয় যে সে তার প্রেমিকা, দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্য এমন করা সত্যিই আশ্চর্যজনক, সাথে অশোভনীয়। অনিন্দা আয়ুশির দিকে তাকিয়ে বিয়ে তো করে নিয়েছে কিন্তু সামনে কি হয় আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাছাড়া প্রথম বউ হয়তো এইসবের জন্যই উনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। মারা গেলে নিশ্চয় বলতো৷
আফাক অনিন্দার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে
‘ পাগল ভাবছো?
অনিন্দা চোখ বড় করতে নিয়েও আবার ছোট করে ফেলে
‘ উনি কি ভাবে জানলো? পাগল ভাবছি!
আফাক মুচকি হেসে
‘ আসলে কাউকে কষ্ট দিলে পরবর্তীতে বিষয়টি আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। তাই রাগ সামলাতে না পেরে মাঝে মাঝে এমনটা করি৷ তোমাকে সকালে এমনটা বলা ঠিক হয়নি। আমি সরি।
অনিন্দা বিছানায় বসে নিচে তাকিয়ে
‘ আমি জানতাম না আপনি এতে রাগ করবেন। জানলে এমনটা করতাম না। আমি ভেবেছিলাম আপনার ভাই-ই তো তাই!
আফাক উঠে দাঁড়িয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে তাকায় আঁধার আকাশে। বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে
‘ আমার আয়ুর মাম্মাম মানে শান্তা আমাদের ভালোবেসেই বিয়ে হয়েছিলো। আয়ুর যখন আড়াই বছর আমি কানাডায় যায় একটা কোর্স কমপ্লিট করার জন্য। শান্তা,আয়ু আর আমার পরিবার এক সাথেই থাকতো তখন। হঠাৎ একদিন আমার ফোনে কিছু ছবি আসে যা দেখে আমি বিস্মিত হয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার ভাইয়ের সাথে শান্তার ছবি। খুব বেশি ক্লোজ ছিলো না সেই ছবি গুলো কিন্তু তাও কেন যেন আমার ভালো লাগেনি। শান্তাকে কল দিয়ে ব্যস্ত পেলে আমার ভাই আরিফকে কল দিয়ে দেখতাম সেও ব্যস্ত। শান্তার আচরণ আমার ভালো লাগতো না। কিছুদিন পরই আমি দেশে চলে আসি।
দেশে এসেও ওদের মতিগতি আমার ভালো লাগতোনা। আমি অবাক হতাম সব চেয়ে বেশি আমার আপন ভাই আমার সাথে কি করে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করছে। দিন যাচ্ছিলো আর ওদের প্রতি আমার সন্দেহ বাড়ছিলো। একদিন দেখলাম অনেক রাত করে শান্তা আরিফের রুমে যাচ্ছে। সেদিন ওকে হাতেনাতে ধরার পরও সে স্বীকার করেনি। আমার আরিফের সাথে ঝগড়া হয়। বাবা আমায়ই দোষারোপ করছিলো।
তারপর আমি শান্তা আর আয়ুকে নিয়ে আলাদা হয়ে পড়ি। মরিয়ম আন্টি আমাদের ওই বাসায়ই থাকতো। আম্মু মরিয়ম আন্টিকে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়। আর মরিয়ম আন্টির একটা মেয়ে আছে ছোঁয়া ও আমাদের ওই বাড়িতে থাকে। ছোঁয়া এই বাড়িতে কেন মাঝে মাঝে আসতো তা নিয়ে শান্তা ঝগড়া করতো আমার সাথে। আমার সাথে নাকি ছোঁয়ার অবৈধ সম্পর্ক আছে। নিজের দোষ ঢাকতে আমাকে অনেক অপমান করে। আলাদা কেন হয়ে এই বাড়িতে এসেছি তার জন্যও ঝামেলা হয় অনেক। একদিন ওর সাথে ঝগড়ার এক পর্যায়ে ওকে একটা ধাক্কা দেই আর সে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় ফ্লোরে। আয়ুও চলে আসে তখন। শান্তার রক্ত দেখে আয়ু ভয় পেয়ে যায়। তাই এখনো আয়ু রক্ত রক্ত করে।
আফাক এইটুকু বলে থেমে যায়। অনিন্দা আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে আফাকের দিকে। অনিন্দা বুঝতে পারলো সেদিন কেন আয়ু মাম্মা লত্ত বলছিলো
‘তারপর কি হয়েছিলো?
‘ শান্তাকে নিয়ে হসপিটালে যায়। কিছুদিন পর দেখতাম ওর একটা বন্ধু আমাদের এখানে প্রায়ই আসে৷ ও বলতো ওর কাজিন। আমার ভালো লাগতো না। আর আমার মনে হতো অন্য কারো সাথে আবার সম্পর্কে গিয়েছে সে। হয়তো সেই কাজিনের সাথেই। শান্তার বন্ধুর অভাব ছিলো না।অনেক বলেছিলাম শান্তাকে। ও শুনতো না। তারপর হঠাৎ একদিন শান্তা আমার কাছে ডিভোর্স চেয়ে বসলো। সে সাইন করে দিয়েছে আমি যেন সাইন করে দেই। আমি জিজ্ঞেস করলাম কারণ কি! সে বললো আমি নাকি তাকে সন্দেহ করি এই ভাবে সংসার করা যায়না। আমিও রাগের বসে সাইন করে দিয়ে চলে যায় বাড়ি থেকে। তারপর অনেক রাতে এসে দেখি শান্তা নেই। কাপড়চোপড় আছে কিনা দেখার জন্য রুমে গিয়ে দেখি কাপড়চোপড়ও নেই। কয়েক মাস আগের কথা এই সব। আমিও কেন ওকে আগলে রাখবো? আর খুঁজিনি ওকে। চলে গিয়েছে সে। হয়তো ভালোই আছে।
ধোকা খেয়ে ভেবেছিলাম আর কখনো বিয়ে করবো না কিন্তু আয়ুর জন্য করতে হলো। আমার কাছে আয়ু বেশি থাকে না। আম্মুর কাছেই থাকে এমনিতে। আম্মুরও তো বয়স হয়েছে আয়ুকে সামলাতে পারেনা বেশি। আমিও ওই বাসা আর আম্মুদের কাছেও যেতাম না। এদিক সেদিকই থাকতাম। তাই আয়ুকে শিখিয়ে দিতো নতুন মাম্মামের কথা।
আরিফকে তাই আমি পছন্দ করিনা। আমি চাইনা তুমিও ওর সাথে কথা বলো। আমার আপন ভাই আমার পিঠ পিছে ছুরিঘাত করতে ওর বুক কাঁপেনি। ভালোবাসার মানুষটি তার বহুরুপ দেখিয়ে চলে গেলো।
অনিন্দার মাথা ভনভন করছে। আয়ুশির কথা একবারো ভাবলো না উনি? কেমন মানুষ উনি? মা হয়ে সন্তানকে এই ভাবে ফেলে চলে যেতে পারলো! মানলাম আফাকের দোষ আছে তাই বলে এই ভাবে একটা বাচ্চা মেয়েকে ফেলে চলে যাবে! নিজের কথাটাই শুধু ভেবেছে। সত্যিই জন্ম দিলেই মা হওয়া যায়না। মা হতে ভীষণ ত্যাগ করতে হয়। নিজের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা সব কিছু। ভালোবাসার মানুষটিকে ঠকাতেও ভাবলো না দুবার। মানুষ হিসেবে ব্যর্থ তিনি।।
আফাক কে রাতের খাবার খাইয়ে সব কিছু গুছিয়ে অনিন্দা রুমে এসে দেখে আফাক চুপ করে বসে আছে। অনিন্দা কিছু না বলে কাজ করছে তার। অনিন্দাকে দেখে আফাক উঠে অনিন্দার কাছে এসে
‘ আমি যাকে ভালোবাসি সবটুকু দিয়ে ভালোবাসি। সে আমার মানে সম্পুর্ণই আমার। আমি তার মাঝে অন্য কারো ছায়াও সহ্য করতে পারিনা।
কথা গুলো বলেই অনিন্দার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় আফাক…….
চলবে…..
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।