#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
#Part_5
মরিয়ম আর কিছু বলার আগেই আফাক এসে ওদের কথায় হস্তক্ষেপ করে। মরিয়ম ভয় পেয়ে যায় আফাককে দেখে। আফাক আবার কিছু শোনেনি তো? মরিয়মের মুখ চুপসে যাওয়াটা খেয়াল করেছে অনিন্দা। আফাকের সামনে উনি বলতে নারাজ এটাও বুঝতে পারছে। কিন্তু উনি কি বলতে চেয়েছিলো? জরুরি কিছু!
আফাক অনিন্দার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর মরিয়ম আন্টির দিকে তাকায়। বেশখানিকটা সময় তাকিয়ে থেকে
‘ আন্টি আয়ু আম্মুকে জ্বালাচ্ছে আপনি একটু ওকে নিয়ে ছাদ থেকে ঘুরে আসুন।
মরিয়ম মাথা নিচু করে ছিলো যেন তার চুরি ধরা পরে গিয়েছে। কিন্তু আফাকের কথায় মাথা তুলে
‘ হ্যাঁ বাবা যাচ্ছি।
মরিয়ম ছুটে পালানোর মতো দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়। আফাক অনিন্দার দিকে তাকাতেই অনিন্দা নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আফাক আপোষহীনভাবে অনিন্দার হাত ধরে অল্প কাছে টেনে নিয়ে তাকে
‘ ওর সাথে হাত মেলালে কেন?
অনিন্দা অবাক না হয়ে পারলো না। নিজের ভাইয়ের সাথে সামান্য হাত মেলানো নিয়ে কেউ এমন করতে পারে? আর অনিন্দা তো ইচ্ছে করে হাত বাড়ায়নি। নতুন বউ কেমন দেখা যাবে উল্টো কিছু বললে।
অনিন্দা ভাবলেশহীনভাবে
‘ আপনার ভাই-ই তো হাত বাড়িয়ে দিলো।
আফাক অনিন্দার কথা শুনে রেগে যায়। অনিন্দার হাত আরো জোরে চেপে ধরে
‘ তাই বলে তোমারও হাত বাড়িয়ে দিতে হবে? আমি এসব পছন্দ করিনা অনিন্দা।
অনিন্দার চোখে পানি চলে আসে। বিয়ের প্রথম দিনই স্বামীর মুখ থেকে তাকে এসব কথা শুনতে হচ্ছে। তার দিকে আঙুল তুলছে। সন্দেহ করছে, সন্দেহপ্রবণ হলেই কি কেউ এমন করে? তাও আবার নিজের ভাইয়ের সাথে বউকে নিয়ে? অনিন্দার চোখে পানি চিকচিক করছে দেখে আফাকের ভেতরে ধরাম করে ওঠে। সে সঙ্গে সঙ্গে অনিন্দার হাত ছেড়ে দেয়। সাদা হাত লাল হয়ে গিয়েছে আফাকের হাতের জোরালো চাপে। আফাক লক্ষ্য করলো তবুও অনিন্দা হাত ছাড়ানোর প্রচেষ্টা করেনি। আফাক সম্পুর্ণ পূর্বপ্রস্তুতিহীনভাবে অনিন্দার সাথে এমনটা করেছে। সে ভাবেনি এইভাবে অনিন্দার হাত ধরবে। অনিন্দার চোখে পানি দেখে এখন তার খারাপ লাগছে কেন যেন ভীষণ।
কথা না বাড়িয়ে আফাক সেখান থেকে প্রস্থান করে। অনিন্দা অল্প সময়ে কি যেন ভেবে তার কাজে লেগে পড়ে। সবাইকে নাস্তা খাইয়ে সে নিজেও খেয়ে আয়ুশিকে নিয়ে একটু বসে। অনিন্দা হালিমা সাজ্জাদের কাছে শুনতে পায় আফাক এই বাসায় একা থাকে। তাই বিয়ে করে অনিন্দাকে এখানেই নিয়ে এসেছে। আর হালিমা সাজ্জাদ আর আফাকের বাবা, আরিফ (ছোট ভাই) তারা অন্য বাসায় থাকে। আয়ুশিকে মাঝে মাঝে এসে নিয়ে যায় হালিমা সাজ্জাদ বা এসে দেখে যায়।
অনিন্দার মাথায় ঢুকলো না আফাক কেন আলাদা থাকে। এতো সুন্দর পরিবার রেখে আলাদা থাকার কি প্রয়োজন। আর একসাথে থাকলে আয়ুশিও তো তার দাদিকে কাছে পেতো। কিন্তু অনিন্দার জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না হালিমা সাজ্জাদকে।
আফাক অফিসে চলে গিয়েছে সকালেই। এর মাঝে আফাকের সাথে অনিন্দার কোন কথা হয়নি। হলেই বা কি হতো! আফাক আবার কি একি কথা বলতেন? অনিন্দার মাথায় অনেক কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। আর মরিয়ম আন্টি তখন তার কথা শেষ করতে পারেনি। কি বলতে চেয়েছিলো!
অনিন্দার মা-বাবা দুপুরের দিকে আসে। আফাকের পরিবারের সাথে বেশ সময় কাটিয়ে অনিন্দাকে নিয়ে যাবার কথা বলে বিকেলের দিকে। আফাকের পরিবার আর অনিন্দারা সবাই একসাথেই বেরিয়ে পড়ে।
অনিন্দা বাড়ি গিয়ে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। তবুও সবকিছু যেন অদ্ভুত লাগছে তার। আয়ুশিকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলো সাথে কিন্তু হালিমা সাজ্জাদ আয়ুশিকে নিয়ে গিয়েছে। বলেছে আফাককে জানিয়ে দেবে৷ আয়ুশির জন্য একটু মন খারাপ লাগছে অনিন্দার। ছোট ছোট হাতে যখনি জড়িয়ে ধরেছে দু’হাতে তখনি অনিন্দার কেমন ভালো লাগে। ইচ্ছে হয় বুকেই জড়িয়ে ধরে রাখতে পরম মমতায়। কেউ যেন বলতে না পারে এই মেয়ের মা নেই। কিন্তু আয়ুশির মা কোথায়? উনি কি মারা গিয়েছে, নাকি চলে গিয়েছে? আর আয়ুশিই বা কেন ওইদিন মাম্মাম রক্ত বলছিলো। অনিন্দার মাথা ফেটে যাচ্ছে। সে আর যেন ভাবতে পারছে না কিছু৷ বিছানায় চোখ বুঝতেই অনিন্দার বড় বোন অতসীর আওয়াজ কানে ভেসে আসে। তার রুমের দিকেই আসছে মনে হচ্ছে।
অনিন্দা অতসীর আওয়াজে উঠে বসে। অতসী রুমে এসেই জড়িয়ে ধরে অনিন্দাকে। অতসী ফুপিয়ে কান্না করা শুরু করে দিয়েছে। অতসীর কান্ডে বোকা হয়ে যায় অনিন্দা। দুই বোনের মাঝে বয়সের খুব বেশি তফাৎ নেই। অতসী অনিন্দার সবে দুই বছরের বড়৷ কিন্তু কান্ড এমন করে বসে যেন অতসী অনিন্দার দশ বছরের ছোট।
অনিন্দা অতসীকে ধরে
‘ কিরে আপু কান্না করছিস কেন?
অতসী কান্না নিয়েই
‘ আমার জন্য সব হয়েছে। আমার জন্যই তোকে এমন বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করতে হয়েছে রে অনি। না হয় তোকে এমন বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করতে হতো না।
অনিন্দা মুচকি হেসে
‘ তার জন্য কি আমার ভাগের কান্না তুই করে দিচ্ছিস?
অতসী অনিন্দার কথা শুনে কান্নার বেগ বাড়িয়ে দেয়। কারণ অতসী নিজেও জানে সে এই বিয়ের জন্য কোন না কোন ভাবে দায়ী।
কিছুদিন আগেই অতসীর বিয়ে হয়েছে নেহালের সাথে। কিন্তু এই বিয়ের সময়ও আগে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তাদের। নেহালের সাথে অতসীর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো অনেক দিন। অনিন্দা সবকিছুই জানতো। ওদের ঘটকালিও করতো। একদিন নেহাল অতসীর জন্য গিফট নিয়ে এসে বাড়ির পাশেই দাঁড়ায়। অতসী অনিন্দাকে পাঠায় সেইগুলো নিয়ে আসতে। অনিন্দা গিফটগুলো নিয়ে পাশে তাকিয়েই দেখে তার কিছু কাজিন আর পাড়ার লোক।
তারপর নেহাল আর অনিন্দাকে বাড়িতে নিয়ে যায় ধরে। অনিন্দার বাবা সেদিন ভীষণ কষ্ট পায় কারন অনিন্দাকে সে ভীষণ ভালোবাসতো। সে এমন করবে ভাবেনি। অনিন্দা বোনকে বাঁচাতে সব দায়ভার তুলে নেয় নিজের উপর। অতসীও স্বার্থপরের মতো চুপ থাকে। সবকিছুর পর যখন অনিন্দার বাবা রাজি হয় তাকে নেহালের সাথে বিয়ে দেবে তখন আবার নেহাল আর অতসীকে ভেগে বিয়ে করার জন্য সাহায্য করে অনিন্দা। সে থেকে অনিন্দার বাবা আর তার সাথে কথা বলেনা। তার আত্নসম্মানে লেগেছে ভীষণ। নেহাল আর অতসীকে মেনে নিলেও অনিন্দার সাথে একদমই কথা বলেনা। আর সেই রাগের বসেই পাত্র দেখা শুরু করে দেয় অনিন্দার জন্য তাই বিবাহিত পাত্র হলেও পিছপা হয়নি।
অনিন্দা অতসীকে ছাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে
‘ আপু কান্না করিস না তো। ঢং ভালো লাগছে না এখন। চল দুই বোন মিলে কিছু বানিয়ে খাই। আর নেহাল ভাইয়া কেমন আছে? আসেনি?
অতসী চোখ মুছতে মুছতে
‘ না আসেনি। আমাকেও আসতে দিতে চাইনি। জোর করেই এসেছি। বলেছি বাবার উপর তোমার রাগ বলে কি আমি আমার বোনের কাছে যাবো না! তার সাহায্যের কথা ভুলে গিয়েছো? তারপর আর কিছু বলেনি।
রাত প্রায় দশটা পর্যন্ত দুইবোন খাওয়াদাওয়া গল্প করেছে। কিন্তু অনিন্দার ভালো লাগছে না। আফাক বলেছিলো আসবে, সে কি আর আসবে না? দশটা তো বাজে আর কখন আসবে! রাগ তো অনিন্দার করার কথা, আর তিনিই রাগ করে আসবে না! অনিন্দার রাগ হচ্ছে। আর আফাকের কথা সে ভাবছেই বা কেন? আসলে আসবে না আসলে না আসবে।
অনিন্দা রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়ে। একটুপরই মনে হলো কেউ দরজা ধাক্কাচ্ছে। অনিন্দা বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজা খুলতেই আফাক এসে অনিন্দাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে……..
চলবে……
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।