#দুজনা
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৪
ইদানীং দেখছি আমার শাশুড়ী মা আমাকে আদিলের বেতনের কথা জিজ্ঞেস করছেন আমাকে।এই যেমন সকালে নাস্তা বানানোর সময় শাশুড়ী মা কিচেনে ঢুকলেন।আমি রুটি বানালাম;এর সথে আলু-মটরশুঁটি ভাজি করবো নাকি ডিমের অমলেট করবো বুঝতে না পেরে শাশুড়ী মাকে বললাম,
“মা,ডিমের অমলেট নাকি আলু-মটরশুঁটি ভাজি?”
শাশুড়ী মা আমার প্রশ্নের উত্তর না করে সোঁজা বলে উঠলেন,
“আদিল তোমাকে তার অফিস থেকে বেতন পাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেছ?”
যদিও অবাক হলাম কিছুট।তবে তা মুখে আর প্রকাশ করলাম না।স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বললাম,
“নাহ, মা।বলে নি।”
“যদি কিছু বলে আমাকে জানাইয়ো ত।”
“জ্বী,আচ্ছা। ”
পরে দুপুরের সময়,রাতে খাবারের সময়ও জিজ্ঞেস করছেন।আমি বুঝতে পারলাম না ঠিক শাশুড়ী মা কেনো এতবার জিজ্ঞেস করতেছেন।বিষয়টি পরে আমি আচ করতে পারলাম।যখন আমি সন্ধে জামাকাপড় নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেছিলাম তখন শাশুড়ী মায়ের কারো সাথে রাগারাগি করার আওয়াজ কানে আসে।সিঁড়র সাথের নিচের রুমটাতেই শাশুড়ী মা থাকেন।আমি সেখানে সেকন্ডস দুয়েকের মতন দাঁড়িয়ে বুঝতে পারলাম শাশুড়ীমা আদিলের সাথে ফোনে কথা বলতেছেন,
“আজকে দুই তারিখ চলতেছে!আর তুই এখনো বেতন পাস নি মানে!মিথ্যে বলতেছিস নাকি আমাকে!”
আদিলের কথা শুনা গেলো না।লাউড লো ছিল।
“তোর বস বেতন দিবে না আমারতো এমন মনে হচ্ছে না!তুই ই ত বলেছিস তোর বস খুব ভালো!”
“—————-।”
“ঠিক আছে।বুঝতে পেরেছি!যদি বেতন নিয়ে দ্বিতীয়বারও এরকম টানাহেঁচড়া করে তাহলে ওখানে আর কাজ করার দরকার নেই।সোঁজা চলে আসবি বাসায়।আর এসে তোর দুলাভাই অথবা ভাইয়ের সাথে কাজে লেগে যাস।কথাটা যেনো মনে থাকে।আমি আর এসব সহ্য করতে পারতেছি না।কিসের উপরে তোদের সংসার টা চলে, হ্যাঁ?তোর এখানে এ সমস্যা ওখানে এ সমস্যা!এত সমস্যার কথা শুনলে তোদের খরচটা কতদিন চালাবে অন্যজন, বলতো আমাকে!”
“——————”
“নাহ আমি ওত কথা শুনতে চাচ্ছি না।যেগুলো বলেছি ওগুলো মাথায় রাখিস।রাখলাম!”
বলেই শাশুড়ী মা ফোনটা কেঁটে দেন আদিলের।তারপর বিরবির করে বলেন,
“টাকা দেবে না ওদের সংসার চালাবে আরেকজন!”পাশে ননদ এবং জাও ছিলেন।উনারা শাশুড়ী মায়ের সাথে ফিসফিস করে যেনো কি বলতেছেন!
আমি আর দাঁড়ালাম না।আমার রুমে চলে এলাম।জামাকাপড়গুলো পাশে বিছানার উপর রেখে চুপ করে বসে রইলাম কিছুক্ষণ!আর মনের ভেতরে সন্দেহ জমতে শুরু করলো,
“আচ্ছা,আদিল যে আমার বাবার থেরাপীর জন্যে চাব্বিশ হাজার টাকা দিয়েছিলো তা কি তার বেতনের থেকে দিয়েছিল?নাহলে ত আদিলের আর কোনো উৎস দেখছি না টাকা পাওয়ার!”
সন্দেহটা সত্যি ভাবতেই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি।সারাটা সন্ধা মন খারাপে কেঁটেছে আমার!রাত এগোরটার দিকে আদিল কল করে।ফোন পাশেই ছিল।রিসিভ করি সাথে সাথেই।আর অপেক্ষা না করে বলি,
“আপনি বাবাকে টাকাটা কি আপনার বেতনের থেকে দিয়েছিলেন?”
“মানে কি বলতেছো তুমি এসব?”
“তাহলে কোথায় থেকে দিয়েছেন!”
“আগের কথা এখন আবার টানার মানে কী,প্রিয়া!?নাকি একই কথা বারবার তোমার বলতে ভাল্লাগে!”
আদিলের কথাতে তেঁজ ছিল কিছুটা।হয়তো রাগ হয়ে গেছে।বিয়ের সাতমাসের মাথায় আজ এই প্রথম মানুষটির তেঁজ অবলোকন করলাম!তারপরও চুপ করে থাকলাম না।উল্টো রাগ চলে এলো!কে বলেছে ওক এত দয়ালু হতে!কে বলেছে!রাগে-অভিমানে বলতে থাকলাম,
“তবে শুনু রাখুন এটা করা আপনার একদমই ঠিক হয়নি!”
সাথে সাথে আদিল কলটা কেঁটে দিলো।বুঝলাম ও আরো রেগে গেছে!
পরদিন সকালে আদিল আবার কল করে!স্ক্রিনে উনার নামটা ভেসে উঠতেই মন ভরে শ্বাস নিই।বিশ্বাস করুন?গতকাল রাত উনি রাগে কলটা কেঁটে দেওয়াতে শ্বাস আমার রুদ্ধ হয়ে গেলো।এখন যেনো আবার প্রাণটা ফিরে এলো।কলটা রিসিভ করতেই,
“সরি প্রিয়া!কালরাতে ওভাবে কল কেঁটে দেওয়াতে।আমার উপর তোমার খুব রাগ হয়েছিল না?মনখারাপও হয়তো!আই’ম সরি প্রিয়া।আসলে আমি তোমাকে মনখারাপ হতে দিই নি।তবে,একই প্রসঙ্গ আমার এতবার শুনতে ভালো লাগে না।প্লিজ তুমিও প্রিয়ু একই প্রসঙ্গ বারবার আমাকে বলো না।”
আমার পেঁটের কোণে এখন দেখি হাসিটা চেপে রাখাও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।ছেলেটা নিজের রাগ-অভিমান সব রাখতে পেরেছে চেপে?মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে নিজেই আবার বেহায়া বিলাইয়ের মতন মেওমেও করতেছে। বহু কষ্টে হাসিটাকে সামলিয়ে,গলাটা ভালো কর ঝেঁড়েঝুড়ে নিই,যাতে একটি কণাও আমার হাসির শব্দ আদিলের কানে না পৌঁছায়।বললাম,
“ইট’স ওকে।ইট’স ওকে!”
আহা শান্তি!এই মানুষটা রাগ করে থাকলে আমারো ভাল্লাগে না!তারপর অনেকক্ষণ ধরে আমরা কথা বললাম।কত কথাতে কত ধরণ ছিল আমাদের হাসি-তামাশা আবার জোকস আবার মাঝে মাঝে দুঃখেরও কথা!উনার মা-বাবার ব্যাপারে বলেছেন।উনার মায়ের থেকেও নাকি উনার বাবার আদর বেশি পেয়েছেন।বাবা সারাক্ষণ নিজের কাছে কাছে রাখতো।সুযোগ পেলে গল্প শুনাতো।আবার আদর করে “আমার জান” বলে ডাকতো।তবে অতি সুখ বেশিদিন সইলো না।এগারো বছরকালেই বাবা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য শহরে যাওয়ার পথে ট্রাক এক্সিডেন্টে মারা যান।কত কেঁদেছিলেন বাবার জন্যে সেইদিন।আর আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতেন সংসারটা খুব ভালো থাকতো। রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলোর সাথে মুখ কালো হতো না কারো !
————————————————-
পরের মাসেও শাশুড়ী মা আদিলের থেকে বেতনের টাকা পায়নি।আর চাকরিটাও ছাড়ে নি।এই নিয়ে শাশুড়ী মা প্রচন্ড রেগে যায়।সেই রাগটা শাশুড়ী মায়ের তার তিনদিন পরে আরো তিনগুণ বেড়ে যায়।কারণ হলো আদিলের টাকায় আমার বাবার যে থেরাপী চিকিৎসা করা হয় তা কিভাবে যেনো শাশুড়ী মা, ননদ এবং জা জেনে যায়!শাশুড়ী মা আমাকে এসে খুব বকেন।আর এও বলেন,
“একটা ভাতের দানাও যদি তুই আমার মেয়ের এবং বড় ছেলের টাকার খাস তাহলে সেইদিন তোকে আমি দেখে নিব!ফকিন্নি,এমনিতে তো বাপের বাড়ি থেকে কিছু আনতেই পারিস নি আবার আমার সংসারের টাকা তোর সংসারে দিস!সাহস কত!এইজন্যেই ত ভাবী ছেলেকে আমার মন্ত্র কেন পড়ায়!”
চলবে……..