#দমকা_হাওয়া
#ঝিনুক_চৌধুরী
#পর্ব-৭
জেসমিন আরা খেয়াল করলেন টিভিতে মুভি চলছে কিন্তু কোনো সাউণ্ড নেই।
-পিউ, সাউণ্ড নেই কেন? কি দেখো তুমি?
আপনি বললেন না, স্বচ্ছ ভাইয়ার ডিসটার্ব হবে। তাই মিউট করে দেখছি।
জেসমিন আরা অবাক চোখে চেয়ে বলেন, এতো বোকা হলে তো দুনিয়াতে চলা কষ্টকর হবে পিউ।
পিউ দাঁত বের করে হাসে।
– না মা, আমার কোনো কষ্ট হয়নি। সবার অনেক আদর পেয়েছি। তাছাড়া আমাকে সবাই যতটা বোকা ভাবে আমি এতোটা বোকা নই। আমার আশেপাশের মানুষরা সবাই ভালো তাই নিজের বুদ্ধি কাজে লাগানোর প্রয়োজন পড়েনি কখনো।
–প্রয়োজন পড়েনি কারণ তুমি কমফোর্ট জোনে ছিলে সবসময়। পুরো জীবন তো কমফোর্ট জোনে থাকতে পারবে না। এই যে দেখো, ভাগ্য ঘুরে হুট করে তুমি এখানে এমন নতুন পরিবেশে চলে এসেছো, আমরা যদি ভালো না হতাম, বিভিন্ন কুটচালে তোমায় নাজেহাল করতাম তখন কি করতে?
–স্বচ্ছ ভাইয়া সামলে নিত।
–তোমার কেন মনে হলো স্বচ্ছ সব সামলে নিবে? তুমি তো ওকে ভালো করে চেনোই না। কাউকে অল্প চেনায় গভীর বিশ্বাস করাটাই কিন্তু বোকামি।
–অল্প চিনি কিন্তু গভীরভাবে চিনি। তিনি কোনো অন্যায় হতে দেন না।
জেসমিন আরা বুঝতে পারেন না ব্যাপারটা। স্বচ্ছকে ভাইয়া ডাকছে, খুব একটা ভাব দেখা যাচ্ছে না দুজনার মাঝে তবু স্বচ্ছর প্রতি এতো বিশ্বাস!
–সত্যি করে বলো তো, তোমাদের মাঝে কি প্রেমের সম্পর্ক ছিল?
–না। আমরা তো কখনো সেভাবে কথাই বলি নি।
অনেকটা কৌতুলহল নিয়েই জেসমিন আরা প্রশ্ন করেন, তোমাদের পরিচয় কোথায় কিভাবে বল তো, শুনি।
–আপনি ফাইজা আপুকে চেনেন?
– স্বচ্ছর বন্ধু ফাইজা?
– জ্বি, ফাইজা আপু আমার কাজিন হয়। আমি তাদের বাসায় বেড়াতে গেলে আপু বন্ধুদের আড্ডায় আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেত। আপুর বন্ধুরা আমাকে পছন্দ করে। আমার বোকা বোকা কথায় খুব হাসে। স্বচ্ছ ভাইয়া তাদের মাঝেই একজন কিন্তু তিনি কখনো আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেন নি। বরং আমাকে বিভিন্নভাবে গাইড করতেন। একদিন একটা বিশেষ ঘটনার কারণে তিনি আমার পাশে বসতে শুরু করলেন। কেউ না বুঝলেও আমি ঠিকই বুঝতাম স্বচ্ছ ভাইয়া আমার আলাদা খেয়াল রাখে।
-কোনো একটা বিশেষ ঘটনা মানে? ঠিক কি কারণে জানতে পারি?
-একবার আমি ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার সময় মাহিন ভাই আমার পথ আটকে দাঁড়ায়। আমার গাল টেনে বলে তুমি অনেক কিউট একটা মেয়ে। এমনভাবে বলে, যেন আমি ক্লাস টুতে পড়া বাচ্চা মেয়ে। বাস্তবে সে আমার গাল ছুঁয়ে দিল। স্বচ্ছ ভাইয়া দূরে বন্ধুদের মাঝে বসে দেখলেন ব্যাপারটা। তখনই ছুটে এসে মাহিনকে আড়ালে নিয়ে অনেক বকা দিলেন, আমাকে সরি বলতে বাধ্য করলেন। পরবর্তী সময়টুকু আমার পাশেই বসে ছিলেন স্বচ্ছ ভাইয়া। মাহিন ভাইয়ার ব্যবহার যেমন আমাকে বিব্রত করেছিল স্বচ্ছ ভাইয়ার দায়িত্বশীলতা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আরেকবার তাদের বন্ধুরা ভার্সিটিতে রংখেলার উৎসব করেছিল। আপু আমাকে সেদিন নিয়ে গেল সাথে করে। আমিও খুশি মনে গেলাম।
আমাকে দেখেই স্বচ্ছ ভাইয়ার মুখের হাসি উড়ে গেল। সবার আড়ালে আমার কাছে এসে বলল, আজ কেন এসেছো? এখানে সবাই সবাইকে রং মাখাচ্ছে। মাহিনের মতো আরো মানুষ আছে। তুমি কি চাও ওরা তোমার গালে ডলে ডলে রং মাখাক?
আমি বললাম, আমি তো আপনাদের বন্ধু না আমাকে কেন মাখাবে?
-কেউ তোমার বাধা শুনবে মনে করো?
-আমি এতোকিছু ভেবে আসি নি।
স্বচ্ছ ভাইয়া ধমকের সুরে বললেন, এখন ভাবো। ভেবে জলদি জানাও।
আমি তড়িঘড়ি বললাম, আমি চলে যাবো। কিন্তু গাড়ি তো সাথে নেই।
-ফাইজাকে বলো তুমি থাকবে না।
-আপু তো আড্ডা ছেড়ে যেতে চাইবে না। আমিই বোকার মতো জোর করে এসেছি আজ।
-অসুবিধা নেই। আমি তোমাকে দিয়ে আসবো।
জেসমিন আরা মোহিত হয়ে পিউর কথা শুনছিলেন। মুখ ফসকে বলে ফেললেন, সেদিন তোমাদের প্রেম হয়ে গেলো?
-না। আমাদের সারা রাস্তায় কোনো কথাই হয়নি।
–কেন? আমার ছেলেটা এতো আগ্রহ করে তোমাকে সাথে করে নিয়ে গেল অথচ তুমি ওর সাথে কোনো কথা বল নি? স্বচ্ছও কিছু বলে নি?.
–না।
–আজব তোমরা! সবচেয়ে আজব আমার ছেলে! মিজান ও আমি একসাথে ভার্সিটি পড়তাম। আমাদের প্রেমের বিয়ে। আমরা কত কথা বলতাম। আর স্বচ্ছ বুঝি এমন গবেট হয়েছে!
আচ্ছা, তোমার পরিবার তাহলে স্বচ্ছকে চিনতো?
— না। ওদের সাথে তো স্বচ্ছ ভাইয়ার পরিচয় হয়নি কখনো।
— কেন, তোমাকে সেদিন বাসায় পৌঁছে দিলো না ?
পিউ জিব কেটে হেসে দিল। সরি মা, আমি তো উনাকে গেইট থেকেই বিদায় দিয়েছি। বাসায় তো ডাকি ই নি।
— আচ্ছা বোকা মেয়ে তো তুমি! আবার বলছো জায়গামতো তোমার অনেক বুদ্ধি। বলো তো, ঠিক কোন জায়গায় তোমার বুদ্ধি কাজ করেছে ?
পিউ ঠোঁট টিপে হেসে বলে, ওটা সিক্রেট। এখন বলা যাবে না।
স্বচ্ছকে চতুর্থ বারের মতো ডাইনিংয়ে এসে পানি খেতে দেখে জেসমিন আরা গলা উঁচিয়ে বলেন, কিরে স্বচ্ছ এতোবার আসছিস কেন?
পিউ ফিক করে হেসে বলে, গতকালও এমন করেছেন তিনি।
পিউর মীর জাফর মার্কা কথা শুনে স্বচ্ছ জলদি পা চালিয়ে রুমে ঢুকে পড়ে।
জেসমিন আরা পিউর দিকে তাকিয়ে বলেন, গতকালও এমন করেছে?
-হুম, ঐযে দরজার ফাঁকা অংশ দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর আমাকে দেখে।
সাথে সাথে ঘাড় বাঁকিয়ে জেসমিন আরা স্বচ্ছর দরজার দিকে তাকান। ওদিকে স্বচ্ছর কানে পুরো কথাটাই গেছে তাই একমুহূর্ত দেরী না করে একহাতে ঠেলে দরজা বন্ধ করে দেয়।
জেসমিন আরা পিউর দিকে অবাক চোখে তাকায়।
–এই মেয়ে, তুমি তো ভারী কুটনা। আমার ছেলের নামে আমার কাছে নালিশ করছো?
পিউ হি হি করে হেসে ওঠে। জেসমিন আরা নিজেও হেসে ওঠেন।
__________
পিউ গোসল শেষে বের হলে স্বচ্ছ পথ আটকে দাঁড়ায়। –তুমি আম্মুর কাছে কেন বললে আমি বার বার উঁকি দিয়ে তোমাকে দেখি?
–কেন, মিথ্যা বলেছি?
–সব কথা আম্মুকে বলা কি ঠিক?
–সব কোথায় বললাম? শুধু আপনার সাথে কখন কোথায় আমার কথা হয়েছে ওগুলো বলেছি।
–কি? এগুলো কেন বলতে গেলে?
–মা শুনতে চেয়েছিল। তাছাড়া সমস্যা কোথায়? বরং মা আমাকে কতকিছু শেখাচ্ছে। আমাকে পৌছে দেয়ার দিন আপনাকে কেন বাসার সবার সাথে পরিচয় করালাম না সে কারণে খুব বকলেন ।
–খুব ভোলো হয়েছে। আরো বকা খাওয়া উচিত তোমার।
পিউ হেসে বলে, আমার তো ভালোই লাগে। আপনি এতো ভয় পান কেন মাকে?
স্বচ্ছ আনমনে বলে, আমি ঠিক বুঝছি না আম্মু তোমাকে কেন এতো বেশি আদর করছেন? এমন হুট করে বিয়ে করায় আম্মু কি রিয়্যাক্ট করবে ভেবে আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু আম্মু তো উল্টো তোমাকে নিয়ে খুব খুশি।
পিউর দিকে সরু চোখে চেয়ে স্বচ্ছ বলে, আম্মুর সাথে এতো গল্প করছো আমার সাথে করো না কেন?
–আপনিও কি আমার সাথে গল্প করেন?
–আপনি নয় তুমি করে বলো।
–তুমিও কি আমার সাথে গল্প করো?
স্বচ্ছ উত্তর দেয় না।
পিউর হাওয়াই মিঠাই রঙের ফতুয়াটি গায়ের রংয়ের সাথে মিলেমিশে একাকার। ভেজা চুলগুলো একপাশে পড়ে আছে। চশমা ছাড়া গভীর চোখে চেয়ে পিউ ঠিক কি কথা বলছে, স্বচ্ছ তা শুনতে পেল না।
পিউকে একবারই দেখেছিল চশমা ছাড়া। দ্বিতীয় বার আর দেখতে চায় নি। সেদিনই বুঝেছিল এ চোখ দুটিতে দ্বিতীয় বার তাকালে নিজেকে হারিয়ে ফেলবে।
আলতো করে পিউর গালে হাত রাখলে কেঁপে সরে দাঁড়ায় পিউ। মাথা হেলিয়ে চোরা চোখে স্বচ্ছর ঘাড়ের পেছনে তাকায় কেবল।
তাতেই চমকে পেছনে তাকায় স্বচ্ছ।
পিউ হেসে উঠে। এতো ভয় পান কেন আপনি?
পিউর হাসির দিকে চেয়ে স্বচ্ছও হেসে ফেলে।
ডাইনিংয়ে বসে জেসমিন আরা ডেকে ওঠেন দুপুরের খাবার খেতে।
খেতে বসে স্বচ্ছর ঠোঁটে মুচকি হাসি দেখে জেসমিন আরা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। খামাখাই মিজান কি না কি চিন্তা করে। মাঝপথে নিজেকে তিনি দোষী ভাবছেন নব্য দম্পতিকে দূরে রাখার অপরাধে।
খাওয়া শেষে জেসমিন আরা বলেন, দুজন কোথাও ঘুরে আসো বিকালটায়।
স্বচ্ছর মন লাফিয়ে ওঠে।
পিউ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে, কোথায় যাবো?
-এমনি ঘুরতে যাও। এতো প্ল্যান করার কিছু নেই।
— কি পরে যাবো?
–তুমি কি পরতে চাও?
— আমি তো এমনি জিন্স টিশার্ট বা ফতুয়া পরি।
— না না, সুন্দর কিছু পরো।
— সুন্দর? ওগুলোতো তো সুন্দর সাথে আরামদায়ক।
— বলছি কামিজ টাইপ কিছু পরো। বিয়ের পর প্রথম ঘুরতে বেরোচ্ছো।
— আমার জামাগুলো নিয়ে আসি? আপনি পছন্দ করে দিন।
পিউ রুমে ঢুকে আলমারিতে রাখা জামাগুলো হাতে তুলে জেসমিন আরার রুমের দিকে হনহন করে ছুটে যায়। দুটো জামা নীচে পড়ে গেছে সেদিকেও খেয়াল নেই।
জামা সিলেক্ট করা নিয়ে বউ শাশুড়ী মহা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যেন বিশাল কোনো আয়োজনে যোগ দিতে যাচ্ছে। স্বচ্ছ এখানে পুরোপুরি উহ্য। নিজে থেকেই তৈরী হয়ে নেয়। আজ স্বচ্ছর চোখের দিকে তাকালে যে কেউ বলে দিতে পারবে কতটা আনন্দিত সে।
কোনো জামা-ই পছন্দ হলো না জেসমিন আরার। তিনি বললেন, শাড়ি পরো।
-শাড়ি বেশি ঝামেলা হয়ে যাবে না?
-এ যুগের মেয়ে হয়ে রোমান্টিকতা এতো কম বুঝো কেন তুমি? শাড়ি পরেই ঘুরতে যাবে তুমি।
-আচ্ছা, তাহলে শাড়িগুলো আনছি।
–না,না, থাক। আমার শাড়ি দিচ্ছি। ওটা পরো।
পিউ স্বভাব সুলভ দাঁত বের করে হাসল।
জেসমিন আরা তার সবচেয়ে প্রিয় শাড়িটি বের করে পিউকে পরিয়ে দিলেন। নিজেই মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। পরে চোখ সরিয়ে ফেললেন। সন্তানদের দিকে মায়ের মুগ্ধ নজর থাকতে নেই।।
-পিউ, আজ চশমা পরাটা কি খুব জরুরি? ওটা ছাড়া তোমাকে পুরো পরী লাগতো।
-মা, চশমা ছাড়া স্বচ্ছ ভাইয়া আমাকে দেখতে চায় না।
–কি বলো? স্বচ্ছ নিজে তোমাকে বলেছে?
–না, একবার একটা চিরকুট পেয়েছিলাম আমার ব্যাগে। আমি শিওর ওটা সেই লিখেছিল।
খুব আগ্রহ নিয়ে জেসমিন আরা জিজ্ঞেস করলেন, কি লিখেছিল? মুহূর্তে নিজেকে সামলে বললেন, আমার জানতে চাওয়া ঠিক না, আমি তোমার শাশুড়ি।
পিউ ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলো।
জেসমিন আরা নিজের আচরণে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলেন। যেন দুই বান্ধুবী প্রথম প্রেমের অনুভূতি ভাগাভাগি করে নিতে চাইছে।
পিউ হেসে বলল, খুবই বাজে কবিতা।
–বাজে কবিতা? স্বচ্ছ নোংরা কবিতা লিখেছে?
–না না নোংরা নয়, কবিতার মান খারাপ। মানে কবিতার পর্যায়ে সেটা পড়ে না। লিখেছে,
রুক্ষ কাঁচের আড়ালে বন্দি দুচোখ
আমি চাই না সে গহ্বরে তলিয়ে যেতে
আমি বাঁচতে চাই, তোমার সাথে, তোমারই হাত ধরে।
জেসমিন আরা বিজ্ঞ সাহিত্যিক রূপে বললেন, খারাপ লেখে নি তো, তোমার পছন্দ হয়নি কেন?
–আরো ভালো কিছু লিখতে পারতেন তিনি।
–হুম, স্বচ্ছর আব্বু এরচেয়ে অনেক ভালো কবিতা লিখতো। ছেলেটা এতো গাধা হয়েছে!
পিউ হঠাৎ হেসে ওঠে। জেসমিন আরা নিজেও খিলখিল করে হেসে ওঠেন।
বউ শ্বাশুড়ি সম্পর্ক ছাড়িয়ে দুজন প্রাণপ্রিয় সখী যেন।
পিউকে পেছনে আসতে বলে তিনি বের হোন ছেলের চোখের মুগ্ধতা দেখতে। স্বচ্ছর দিকে চেয়ে মিটমিট হাসেন।
মায়ের সামনে পিউকে এক নজর দেখে স্বচ্ছ চোখ নামিয়ে নেয়। মুহূর্তে মুখ লাল হয়ে ওঠে।
দুজন বেরিয়ে গেলে জেসমিন আরা কাগজ কলম নিয়ে বসেন। পিউর জন্য কি কি রঙের শাড়ি কিনবেন। তার ইচ্ছে একেক দিন পিউ এক একটা নতুন রঙের শাড়ি পরবে। ভেজা চুলে এইরুম ঐরুম ঘুরবে। স্বচ্ছ আড়চোখে তাকাবে তার বউয়ের দিকে।
ওদের রুমটা নতুন করে সাজিয়ে দিবেন কি? আচ্ছা আজ ফুল দিয়ে বাসর সাজালে কেমন হয়? ওরা বাসায় ফিরে পুরো চমকে যাবে। পিউকে নিজের হাতে বউ সাজিয়ে দিবেন আবার। উফ! কেন যে ছেলেটা এমন হুট করে বিয়ে করলো। কত কি করার শখ ছিল মনে।
খুশিতে বাকবাকুম জেসমিন আরা মিজান সাহেবকে কল দিলেন। পিউকে নিয়ে নানান পরিকল্পনার ঝাঁপি মেলে ধরলেন।
মিজান সাহেব অফিসের এন্ডিং টাইমের ব্যস্ততা রেখে জেসমিন আরার সব কথা মন দিয়ে শুনলেন। মৃদু হেসে বললেন, মনে হচ্ছে তুমি পুতুল খেলায় মেতেছো।পুতুলকে সাজানো, বিয়ে দেওয়া, ওর সংসার করে দেয়া সব তোমার দায়িত্ব।
জেসমিন আরা আহ্লাদে হেসে বলেন, সমস্যা কি? পিউ তো আমার কাছে পুতুলের মতো। আমার লক্ষী মেয়ে।
মিজান সাহেবের চোখ ভিজে আসে। বুকের জমানো কষ্ট আড়াল করে বলেন, জেসমিন, পিউ এ পরিবারে বউ হয়ে এসেছে। তোমার কাছ থেকে কোথাও যাবে না। একটু রয়েসয়ে আদর করো।
জেসমিন আরার কন্ঠে উত্তাপ ছড়ায়। ঝাঁঝিয়ে বলেন, কি বোঝাতে চাইছো ? আমি আদর করবো না?
মিজান সাহেব সাথে সাথে প্রসঙ্গ হালকা করে বলেন, আরে, কে মানা করছে আদর করতে? বলছি ছেলেটাকেও একটু আদরের ভাগ দিও। সাথে তোমাকে ছাড়া অচল প্রায় এই অসহায় মানুষটাকেও মনে রেখো।
জেসমিন আরা হেসে ফোন রাখেন।
মিজান সাহেব ঝিম মেরে বসে থাকেন। জেসমিনকে কি করে বোঝাবেন যা গেছে তা আর ফিরে আসে না।
চলবে।।