দমকা হাওয়া পর্ব-০২

0
1103

#দমকা_হাওয়া
#ঝিনুক_চৌধুরী
#পর্ব-২

মিজান সাহেব খাবারে এতো মনোযোগী ছিলেন যে কি ঘটনা ঘটেছে তা টের পেলেন না। মা ছেলের মনকষাকষি চলছে ভেবে গরুর মাংস নির্ভিঘ্নে আরো দু পিস মুখে চালান করে দিলেন। তৃপ্ত মুখে চেয়ে বললেন, কি হয়েছে রে বাপ?
স্বচ্ছ বলল, বাবা আমি বিয়ে করে ফেলেছি। ওর নাম পিউ।
ডাইনিংয়ে বসেই হা হয়ে চেয়ে রইলেন মিজান সাহেব। ধরে নিলেন তিনি ভুল শুনেছেন। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন আমি আজকাল বড্ড আবোল তাবোল শুনি রে। তুই কি বললি আর আমি কি ভুলভাল শুনলাম। দাঁত বের করে হাসার চেষ্টা করে সন্দিহান দৃষ্টিতে দরজায় উঁকি দিয়ে দেখেন সত্যিই লাল বেনারসি পরে এক মেয়ে স্বচ্ছর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
মুহূর্তে উনার হেঁচকি রোগ ফিরে এলো। অতি টেনশনে তিনি অনবরত হেঁচকি তুলেন অন্যদিকে স্বচ্ছ অতি টেনশনে লাল মুখে অনবরত ঘামছে।
জীবনের এতো বড় সিদ্ধান্ত সে একাই নিয়ে নিল! মায়ের অনুমতি ছাড়া এক পা এগোয় না এমন ছেলে কিনা দশ মিনিটের সিদ্ধান্তে বিয়ে করে ফেললো। এখন মাকে কি করে সামলাবে।

খুব গোপন কথা বলার ভঙ্গিতে এগিয়ে এসে মিজান সাহেব বললেন, এটা তুই কী করলি, স্বচ্ছ ? সত্যিই সত্যিই বিয়ে করেছিস?
-হ্যা আব্বু।
-কেন? তোর মার কথা একবারও ভাবলি না। তোর মাকে বাদ দে আমার কথা তো একবার ভাবতে পারতি। তোর কারণে এখন তোকেসহ আমাকে জবাই করবে তোর মা ।
আব্বু, আমি আসলে…পরিস্থিতি ঠিক…. সবকিছু…
পিউ থামিয়ে বলল, স্বচ্ছ ভাইয়া, আপনি আন্টিকে সামাল দিন আমি আঙ্কেলকে সব খুলে বলছি।
প্রথম থেকে শুরু করলো পিউ। আজ আমার বিয়ে ছিল। বর আমাকে বিয়ে করবে না বলে পালিয়েছে। আমার আব্বু ও বরের আব্বু মিলে বন্দুক হাতে…….

স্বচ্ছ দরজা ধাক্কা দিচ্ছে বারবার।
-আম্মু, দরজা খুলো, প্লিজ ।
মিজান সাহেব পিউর কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনলেন। কাহিনী তেমন জমলো না। নিজের ছেলের হিসাবটাই মিলছে না। মায়ের অনুগত সুবোধ ছেলে মাত্র দশমিনিটের সিদ্ধান্তে একটা সামান্য পরিচিত মেয়েকে বিয়ে করে ফেললো! কোথাও কোনো গরমিল আছে।
স্বচ্ছর উপর খুব রাগ হচ্ছে । আজ রাত স্বচ্ছর কপালে কি আছে জানা নেই তবে তাকে নির্ঘাত গরমের মধ্যে গেস্ট রুমের সিঙ্গেল বিছানায় উইদাউট এসি ঘুমোতে হবে। এটা কেমন কথা, বিয়ে করবে ছেলে আর শাস্তি পাবে বাপ।
স্বচ্ছ দরজা ধাক্কা দিয়েই চলছে। পিউ স্বচ্ছর পাশে সুপারি গাছের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
মিজান সাহেব নিজের স্বার্থেই স্বচ্ছর সাথে সুর মেলালেন, জেসমিন দরজা খোলো। যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। দরজা খুলে ছেলের সামনে দাঁড়াও। দরকার হলে ছেলের কান মলে দাও, ঝাড়ু দিয়ে পেটাও তবু দরজা খোলো। বিনীত অনুরোধ করছি।
জেসমিন আরা অনেকক্ষণ যাবত নীরব আছেন। বাপ ছেলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পিউ হঠাৎ বলে উঠল, আন্টি এতো রেগে আছেন কেন তাই তো বুঝছি না।
স্বচ্ছ এবং মিজান সাহেব দুজনেই ঘাড় ঘুরিয়ে পিউর দিকে তাকাল। স্বচ্ছ অবাক না হলেও মিজান সাহেব হা হয়ে বললেন, এতো বড়ো ঘটনা ঘটিয়ে তুমি বলছো তুমি কিছুই বুঝছো না?
-না মানে, স্বচ্ছ ভাই আজ যা করেছে তা তো তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা, তাই না?
মিজান সাহেবের মুখ আরো হা হয়ে গেল। তিনি ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
মুহূর্তে দরজা খুলে অগ্নি রূপে বেরিয়ে এলেন জেসমিন আরা। হুংকার দিয়ে বললেন, কি বললে তুমি? আমার এমন শিক্ষা? আমি শিক্ষা দিয়েছি বাপ মাকে না বলে হুট করে রাত এগারোটায় বউ নিয়ে দরজায় উপস্থিত হতে? এই স্বচ্ছ তুই বেছে বেছে এমন মেয়ে আনতে পারলি যে কিনা এসেই আমার নামে এমন অপবাদ দিচ্ছে?
স্বচ্ছ পিউর দিকে চেয়ে তোতলার মতো কিছু বলতে চাইলো, মাথা মন্ডু কিছু বোঝা গেল না।
মিজান সাহেব, পিউ এমন কি জেসমিন আরাও অধীর আগ্রহে স্বচ্ছর কথা বোঝার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো।
পিউ আবার বলল, আন্টি, আপনি আমার কথায় রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি খারাপ কি বললাম? আপনি স্বচ্ছ ভাইয়াকে ভালো শিক্ষা দিয়েছেন বলেই সে আজ আমার মতো বিপদে পড়া মেয়েকে বিয়ে করে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। বিয়ের আসরে বসে বিয়ে ভেঙে গেলে সেই মেয়ে এবং তার পরিবার কত অসহায় হয়ে পড়ে আপনি তো তা জানেন। স্বচ্ছ ভাইয়া মহান মানুষ বলেই তো আজ আমার ও আমার পরিবারের ইজ্জত বাঁচিয়েছে। আপনার ভালো শিক্ষার গুণেই তো এমন হয়েছে, তাই না?
স্বচ্ছ অবাক চোখে পিউকে দেখে। যতটুকু চেনে পিউ মোটেও বুদ্ধিমতী মেয়ে নয়। বরং বোকা বোকা কথা বলায় ওস্তাদ। অথচ আজ কি গুছিয়ে কথা বলছে!
জেসমিন আরা সরু চোখে পিউর দিকে তাকায়।
এই মেয়েতো ভয়াবহ চালাক! এসেই পাশার চাল চালছে। স্বচ্ছ এতো বড় ভুল করলো ? সাজানো গোছানো পরিবারটা আজ থেকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে নিশ্চিত। কোথা থেকে এ দমকা হাওয়া এলো?

স্বচ্ছ বলল, আম্মু প্লিজ মাথা ঠাণ্ডা কর। আমি এমন কাজ আর দ্বিতীয় বার করবো না, আই প্রমিস!
মিজান সাহেব ধমকের সুরে বললেন, মানে কি, তুই আবার বিয়ের কথা ভাবছিস?
জেসমিন আরা গরম চোখে স্বামীর দিকে তাকালেন। একটা মানুষ এতোটা গাধা হয় কী করে? পরিস্থিতি বুঝে না।
তিনি আঙ্গুল উঁচিয়ে কিছু বলতে গেলে স্বচ্ছ সে হাত ধরে বলে, আম্মু প্লিজ আগে খেয়ে নাও। না খেয়ে থাকলে তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে। খাওয়া শেষে আমাকে যা ইচ্ছে বল। আমি সব মাথা পেতে নিব। প্লিজ আম্মু। আমিও কিছু খাই নি এখনো।
জেসমিন আরা ফোঁস করে বললেন, কেন, তোর নব্য শ্বশুরবাড়ি নতুন জামাইকে খালি পেটেই পাঠিয়েছে?
পিউ উত্তর দিল, আব্বু খেয়ে যেতে বলেছিল। স্বচ্ছ ভাইয়া মানা করে দিলেন। বললেন, মা আমাকে ছাড়া না খেয়ে বসে থাকবে। আমি মায়ের সাথেই বাসায় গিয়ে খাবো।
জেসমিন আরা পিউর দিকে ফিরে বললেন, মা ছেলের মাঝে কথা বলবে না তুমি। খবরদার! তোমার পরিবার একটা অপরিচিত ছেলের হাতে তোমাকে এক কাপড়ে তুলে দিল কেমন করে? কেমন পরিবারের মেয়ে তুমি?
–আন্টি, আব্বু তো সাথে আসতে চেয়েছিল। আমি মানা করেছি। আব্বুর উপর আমার অনেক রাগ। না জেনে বুঝে কেন আমার বিয়ে ঠিক করেছিল তাও আমারই বন্ধুর সাথে। আমি তাই একাই এসেছি স্বচ্ছ ভাইয়ার সাথে। স্বচ্ছ ভাইয়াকে আমি চিনি অল্পস্বল্প কিন্তু আব্বু ভাইয়াকে অনেক প্রশ্ন করেছে, আপনাদের পরিবার সম্পর্কে জেনেছে। সন্তুষ্ট হয়ে তবেই বিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া স্বচ্ছ ভাইয়া সুপার টেলেন্টেড, একজন ভদ্র, বিনয়ী মানুষ। দেখতেও রাজপুত্রের মতো। একটু গোবেচারা চেহারা, ওটা আব্বুর চোখে খারাপ ঠেকে নি।
স্বচ্ছর বাবা-মা একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ী করে।
বিনা নোটিশে এমন হুট করে বিয়ে হয়ে এসে রাগান্বিত শ্বশুর শাশুড়ীর সামনে দিব্যি সাবলীল ভাষায় বকবক করা মেয়েটা কি অতিরিক্ত বুদ্ধিমতী নাকি বোকা?
–বিয়ে উপলক্ষে রান্না করা খাবার এবং আমার লাগেজ আব্বু সাথে করে দিয়ে দিয়েছেন। আপনি পারমিশন দিলে ড্রাইভারকে উপরে আসতে বলি?
জেসমিন আরা গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মিজান সাহেব স্ত্রীর কাঁধে হাত রেখে বলেন, মাথা ঠান্ডা করো জেসমিন। স্বচ্ছ তোমার একমাত্র ছেলে ।
জেসমিন আরার চোখ ভিজে আসে। কান্না সামলে বলেন, তুমি যখন এসে পড়েছো তোমার কাপড় আটকে আমি কি করবো। বলো দিয়ে যেতে।
স্বচ্ছ ইন্টারকমে দারোয়ানকে জানালে পিউর ড্রাইভার বড় একটা ট্রলি ব্যাগ নিয়ে ঢুকে। সাথে চারজন লোক বড় বড় ডিশে সাজানো খাবার নিয়ে ঢুকে।
জেসমিন আরা ও মিজান সাহেবের চোখ উপরে উঠে যায়।
জেসমিন আরা ভাবেন এতো খাবার কোথায় রাখবেন ।
অন্যদিকে মিজান সাহেব ভাবেন, কেন একটু রয়ে সয়ে খেলেন না ? পেটে একতিল জায়গা খালি নাই অথচ খাবারের সুগন্ধি তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
জেসমিন আরা শ্বাস ছেড়ে বললেন, আমাদের পরিবার ভদ্র পরিবার। ঘরের ভেতর কোনো সিনক্রিয়েট হতে আমি কখনো দেই নি, দেবোও না। তোমরা খেতে বসো। আমি বরং ফ্ল্যাটের সবার বাসায় খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করি। হাজার হোক আমার একমাত্র ছেলে আজ বিয়ে করেছে। আমাকে না জানিয়ে করলেও ছেলেকে তো আর ফেলে দেয়া যাবে না।
শেষ কথাটা একটু জোরেই ঠেস দিয়ে বললেন।
স্বচ্ছ মায়ের কষ্টটা খুব ভালো ভাবে অনুধাবন করলো। তবু পরিস্থিতি সামাল দিতে বলল , তাহলে আগে কাজ শেষ করি তারপর সবাই খেতে বসি আম্মু।
মিজান সাহেব হেসে বলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ, সেটাই ভালো হবে ততক্ষণে আমার আবার ক্ষিধে পেয়ে যাবে।

খাবার বিলি বল্টনে পুরো ফ্ল্যাটে হৈ হৈ পড়ে গেল। বলা নাই কয়া নাই এতো ভালো ছেলে হুট করে বিয়ে করে নিলো অথচ কাকপক্ষীয় টের পেল না? ডাল মে কুছ তো কালা হ্যায়!
অনেকেই ছুটে আসলো স্বচ্ছর বউ দেখতে। কত প্রশ্ন তাদের মনে। জেসমিন আরার গাম্ভীর্যের সামনে কেউ সাহস পেল না রঙ বেরঙের প্রশ্ন করতে। তবে তাদের চোখ মুখের ভঙ্গিতে সাফ বোঝা গেল জেসমিন আরাকে টিপ্পনী কাটতে এসে চরম হতাশ হয়েছে সবাই। হীরে জড়ানো পুতুলের মতো সুন্দরী বউ দেখে সবারই চোখ জ্বলে গেছে সাথে চোয়াল ঝুলে গেছে।

সবাইকে বিদায় দিয়ে নিজেরা খেতে বসলে পিউ বলে, আন্টি আপনার হাতের কোনো রান্না নেই? আমার এতো ভারী কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না একদম।
আনছি বলে জেসমিন আরা বিরস মুখে উঠতে নিলে স্বচ্ছ বলে, তুমি বসো আম্মু, আমি আনছি।
যেদিন গরুর মাংস রান্না হয় সেদিন বাপ ছেলে অন্য তরকারী ধরে না তাই আজ গরু আর সবজি ডাল ছাড়া কিছু রান্না করেন নি। একবাটি গুড়ো মাছ ধনিয়া পাতা দিয়ে রান্না করা ছিল। পুরোনো তরকারী। জেসমিন আরা নিজে খাবেন বলে গরম করেছিলেন। পিউ সেটা তুলে নিলো গরম ভাতে। দুবার নিয়ে শেষে পুরোটাই প্লেটে ঢেলে চেটেপুটে খেল।
ব্যাপারটা জেসমিন আরার পছন্দ হলো। তবু মুখে শক্ত ভাব এনে রাখলেন। গলে গেলে তো চলবে না। এই মেয়ে বোকা বোকা চেহারায় থাকলে কি হবে ভেতরে নিশ্চয়ই মহা ধুরন্ধর!
পিউ সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল, আমি কোথায় ঘুমাবো?
মিজান সাহেব হাসি মুখে স্বচ্ছর রুমের দিকে আঙ্গুল তুললেন।
পিউ তার মস্ত বড় ট্রলি টেনে সে রুমে ঢুকে গেল। যাবার আগে স্বচ্ছর বাবা-মাকে গুড নাইট বলে গেল।
মিজান সাহেব মুগ্ধ চোখে পুত্র বঁধূর প্রস্থান দেখছিলেন হঠাৎ মনে হলো নিজের রুমে ঢোকা উচিত। আসন্ন বিপদ এখনও কেটে যায় নি। যে কেনো সময় মা ছেলের তান্ডবে তিনি গৃহহারা হতে পারেন। তাই আর দেরী না করে পিউর মতো হাসি মুখে গুড নাইট বলে নিজের রুমে প্রবেশ করলেন।

এ সংসারে আজ হঠাৎ করে কোনো অঘটন হয়নি এমন ভঙ্গিতে জেসমিন আরা কাজে লেগে গেলেন। সংসারের প্রতিটা কাজ তিনি নিজ হাতে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করেন। এ বাসায় কোথাও এক ফোটা বালি কেউ খুঁজে বের করতে পারবে না। মিজান সাহেব এবং স্বচ্ছ নিজ নিজ কাজে পটু।
রান্না ঘর পুরোটা গুছিয়ে বের হয়ে দেখেন স্বচ্ছ এদিক সেদিক পায়চারি করছে।
জেসমিন আরাকে দেখে বিব্রত হয়ে পড়ল। কোথাও লুকাতে পারলে হয়তো বেঁচে যেত।
– অযথা হাঁটা হাঁটি করছিস কেন?
— ইয়ে পিউ তো ঘুমিয়ে গেছে।
— তো?
— .. আমি… মানে.. আমি কোথায় ঘুমাবো?
জেসমিন আরা ভ্রু কুচকে দাঁত খিচে বলেন, ন্যাকা সাজা হচ্ছে? বিয়ে করার সময় জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করিস নি। এখন কোথায় ঘুমাবো? আমার মাসুম বাচ্চা তুই? আর একটা ন্যাকা কথা বলবি তো আজ তোকে আমি লাঠি পেটা করবো। ভাগ!
জেসমিন আরা দড়াম করে নিজের দরজা আটকে দিলে স্বচ্ছ ধীর পায়ে নিজের রুমে ঢুকে।

ট্রাউজার-টিশার্ট পরে শুয়ে আছে পিউ। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। চুলগুলো ছড়িয়ে আছে মুখের উপরে।
ডিম লাইটের মৃদু আলোয় পিউর মুখখানা মায়া ছড়াচ্ছে।
চোখ সরিয়ে নেয় স্বচ্ছ ।

ট্রলিব্যাগের চেইন খোলা। শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট স্বচ্ছর পড়ার টেবিল চেয়ারের উপর এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে। পাশে গলার মালা দুল চুড়ি অযত্নে পড়ে আছে। পুরো ঘর দুইঘন্টার ব্যবধানে অন্যের দখলে চলে গেছে। একটা মেয়েলি সুবাস ভেসে বেড়াচ্ছে ঘরটিতে।
স্বচ্ছ আলতো করে পিউর চুড়িগুলো ছুঁয়ে দিল। লাল টকটকে গোলাপ চারটি থেকে একটি হাতে তুলে নিল। কিছুক্ষণ আগে এ গোলাপটি পিউর চুল আঁকড়ে ছিল। পিউর দিকে চোখ গেলে বুকের ভেতর কেমন তাড়া অনুভব করল।
স্লাইড ডোর ঠেলে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো স্বচ্ছ । শেষ বসন্তের মিষ্টি বাতাস মনের আনচান কিছুটা হলেও লাঘব করল।
বন্ধ চোখে তৃপ্তি ভরে শ্বাস টানলো সে। ইষৎ হাসি ঠোঁটের কোণে।
জীবনে কোথাও কোনো পূণ্য করেছে নিশ্চয়ই! নইলে বিধাতা স্বয়ং এসে কেন স্বচ্ছর হাতের মুঠোয় অপ্রত্যাশিত ভালোবাসাটিকে তুলে দিলো?

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে