#দখিনা_প্রেম
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ০৯ ||
—“এইযে বিদেশি ভাইয়া একটু শুনবেন?”
সা’দ ফোনে রুবাইয়ের সাথে কথা বলছিলো এমন সময়ই পেছন থেকে কারো ডাক শুনে সা’দ থতমত খেয়ে পিছে ফিরলো। তার পিছে ঝোপঝাড় এবং সেটা হালকা হালকা নড়ছে। ঝোপের ফাঁকে ফাঁকে পোশাকের অংশ দেখা যাচ্ছে। সা’দ নিশ্চিত হলো ঝোপের পেছন থেকেই কেউ “বিদেশি ভাইয়া” বলেছে। সা’দ ভ্রু কুচকে কল কেটে বললো,
—“কে বিদেশি ভাইয়া?”
এবার ঝোপের পেছন থেকে একটা মেয়ে মাথা বের করে মৃদ্যু সুরে আমতা আমতা করে বললো,
—“আপনি! আমি তো আপনাকেই ডাকলাম।”
সা’দ বিস্মিত হয়ে মেয়েটির চোখের দিকে তাকায়। এই মেয়ে তো সেই মায়াবিনী! আজ মেয়েটার ডানগালের কিছু অংশও দেখা যাচ্ছে। কী ফর্সা মেয়েটা, ডানগালের মাঝামাঝি একটা ছোট্ট তিলও দেখা যাচ্ছে, এ তিলটা যেন হার্ট এট্যাকের জন্য যথেষ্ট। সামনের ক’গাছা চুল মেয়েটির ডান চোখ এবং ভ্রু স্বল্প ঢেকে রেখেছে। মেয়েটির বামপাশ দেখতে পেলো না কারণ সে একপাশ ঢেকে রাখলেও অপর পাশ ঢাকতে সক্ষম হয়নি। মেয়েটির চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ ঝামেলায় পরেছে সে। সা’দ আবারও ভ্রু কুচকে বললো,
—“আমাকে দেখতে কী বিদেশিদের মতো লাগে?”
—“হ্যাঁ! আপনি অনেকটা আরব দেশের বাসিন্দাদের মতো দেখতে তাই তো আপনি বিদেশি ভাইয়া!”
“ভাইয়া” শব্দটা যেন সা’দকে প্রচন্ড রাগিয়ে তুললো। তবে সে নিজের রাগ দমিয়ে শান্ত কন্ঠেই বললো,
—“কিসের সাহায্য লাগবে বলুন আমার তাড়া আছে। আই হ্যাভ টু গো!”
—“আরে দাঁড়ান! বেশি কিছু না ওইযে ওই গোলাপি রঙের কামিজ পরা মেয়েটিকে দেখতে পারছেন ওকে একটু এদিকে আসতে বলুন প্লিজ প্লিজ প্লিজ!”
সা’দ কেন যেন সেহেরের কথা না রেখে পারলো না। সেহেরের কোনো কথার উত্তর না দিয়ে সে চলে গেলো আর সেহের মনমরা হয়ে দাঁড়ালো। আপনমনে বিড়বিড় করে বললো,
—“এই বিদেশি এমন কেন? এই ছোট সাহায্য করলে কী হতো? আমি কী তার কাছে টাকা ধার চেয়েছি নাকি হুহ!”
এমন সময়ই মানজু আসলো সেহেরের কাছে। ঝোপের পিছে সেহেরকে কাঁদামাটিতে গোসল করতে দেখে ইয়া বড় হা করে সেহেরের দিকে তাকিয়ে রয়। বিস্ময়ের সাথে বলে,
—“কীরে ফুল কাঁদামাটি দিয়ে তোর এ কী অবস্থা? কীভাবে কী হলো?”
মানজুর কথায় সেহেরের ধ্যান ভাঙতেই সে চোখ বড় বড় করে তাকালো। সেহের আমতা আমতা করে বললো,
—“আবিদ ভাইকে দূর থেকে দেখে এখানে এসেছিলাম লুকাতে কিন্তু এখানে যে এমন অঘটন ঘটবে কে জানতো। পড়েছি তো পড়েছি-ই সাথে জুতোটাও ছিঁড়ে গেলো। এখন কী করি বলতো? তোকে কে বলেছিলো এই শুটিং দেখতে আসতে? এখন ঘটলো তো এই অঘটন!”
—“তোরে তো আমার কেলাতে মন চাচ্ছে, এই আবুলকে দেখে লুকানোর কী ছিলো হ্যাঁ? তোরে দেখলে কী খেয়ে ফেলতো?”
—“অনেকটা তা-ই করতো! দেখছিস না কতো লোকজন। আবুদ ভাই কখনো আমায় এতো লোকজনের মাঝে রাখেনি!”
—“হাহ ঢং! তোর ওই আবুল ভাইরে বলিস তোরে প্যাকেট করে আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখতে, এতো ঢং কেমনে করে?”
—“ওই তোর সমস্যা কী, সারাদিন আমার ভাইয়ের পিক্সহে লেগে থাকিস কেন?”
—“তো কী করবো? আচ্ছা রাখ এসব কথা। আমার বাসা সামনেই, আমার বাসা থেকে গোসল করে আমার জামা পরিধান করে আপাতত বাড়ি যা পরে নাহয় ফেরত দিয়ে দিস!”
—“জুতা?”
—“খালি পায়ে যাবি সমস্যা কী? বাড়ি গিয়ে উঠোনে পা ধুঁয়ে নিবি!”
—“বুদ্ধি খারাপ না। আচ্ছা চল, এখানে থাকতে অসহ্য লাগছে। আরে হ্যাঁ আরেকটা কথা!” হাঁটতে গিয়ে থেমে শেষের কথা বললো সেহের। মানজু থেমে পিছে ফিরে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে,
—“কিসের কথা?”
—“তোকে আমার এই স্থানের কথা কে বললো?”
—“একটা মেয়ে, কেন কী হয়েছে?”
সেহের কিছুটা চিন্তায় পরে গেলো। সে তো ওই বিদেশি ছেলেটাকে মানজুকে ডাকতে বলেছিলো মেয়ে আসলো কোথা থেকে?
—“কীরে কী হলো?”
—“না কিছু না চল!”
সেহের বাসায় গিয়ে আবিদের কাছে শুনলো, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নাকি ওই রাফসান পালিয়েছে। রাফসান সুস্থ হলে গ্রামের মানুষ তাকে ন্যাড়া করে মাথায় ঘোল ঢেলে গাধার পিঠে বসিয়ে গ্রাম থেকে বের করে দিত। কিন্তু রাফসান তার আগেই পালিয়ে গেছে। এদিকে আবিদ যেন নিজের রাগ সামলাতে পারছে না, যার তার সাথে ঝগড়াঝাটি লাগিয়েই রাখছে। শেষমেষ সেহেরের কাঁদামাটিতে ভূত সাজা অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বসে পরেছে৷ সেহের তো গাল ফুলিয়ে আবিদকে হাসতে বারণ করছিলো কিন্তু আবিদ আরও হেসে দেয়। এরপর আর কী, দুই ভাইবোনের খুনশুটি শুরু।
★
এদিকে ফারুক হোসাইন স্ক্রিপ্ট দেখছে তখনই সা’দ তার পাশে এসে বসলো। সা’দকে দেখে ফারুক হোসাইন স্ক্রিপ্ট রেখে হেসে বললো,
—“কী ইয়াংমেন! এমন লাগছে কেন?”
—“আচ্ছা আঙ্কেল আমার মধ্যে বিদেশি বিদেশি ভাব আছে? আই মিন আমি কী আরাবিয়ানদের মতো দেখতে?” সা’দের বাচ্চা বাচ্চা কথায় ফারুক হোসাইন হুঁ হাঁ করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বললো,
—“তা অবশ্য তুমি টুকটাক আরাবিয়ান তবে কার সাহস হলো তোমাকে এই চরম সত্যটা বলেছে?” রসিকতার সুরে বললো ফারুক হোসাইন।
—“সিরিয়াসলি আঙ্কেল? তাহলে তো আমায় আরাবিয়ান ফিল্মে চান্স নিতে হবে!”
সা’দের মশকরায় ফারুক হোসাইনও আবারও আরেকদফা হেসে নিলো। আবারও সে হাসতে হাসতে বললো,
—“আমারও এমন হয়েছে জানো। তোমার মনে আছে কাল এক মিষ্টি মেয়ের কথা বলেছিলাম? যেখানে গ্রাম শহর সকলেই আমার নাটক দেখে, আমাকে ভালোভাবে চিনে সেখানে সেই মেয়েটি আমাকে কাঁদা থেকে উঠানোর সময় আমার সাথে সহজ ব্যবহার করেছে, আমাকে “চাচা” বলে সম্বোধন করেছে। আমি সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। এই গ্রামের প্রায় সকলের ঘরে ঘরে টিভি আছে বিভিন্ন জায়গায় আমার এডের পোস্টার আছে তাও ওই মেয়ে আমাকে চিনেনি। সত্যি আমার এই অভিনয় জগতে এমন মেয়ে প্রথম দেখলাম যে আমায় চিনে না!”
—“তা বুঝলাম, তবে মেয়েটার হয়তো টিভি দেখার মতো সামর্থ্য নেই!”
—“নাহ সেরকম মনে হয়নি, মেয়েটির পোশাক-আশাকে ভদ্র এবং বড়োঘরের মেয়েই লাগছিলো, ব্যবহারেও বেশ শালীনতা আছে!”
সা’দ অবাক হয়ে সবটা শুনলো উত্তরে আর কিছু বললো না। ফারুক হোসাইন আবার বলা শুরু করলো,
—“মেয়েটাকে কোনো পরী থেকে কম লাগে না। ও তো এই প্লাটফর্মে আসলে সিলেক্টও হয়ে যাবে, কী মায়াবী তার চেহারা। বারবার মনে হয়েছিলো আপনজন!”
শেষের কথায় সা’দের ধ্যান ভাঙলো আর ভ্রু কুচকে বললো,
—“আপনজন মনে হয় মানে?”
ফারুক হোসাইন ম্লান হেসে বলে,”আমার স্ত্রীর কথা মনে পরে এই আর কী!”
—“ওহ আচ্ছা। তা আঙ্কেল আপনি শুটিংয়ের জন্য রেডি?”
—“হ্যাঁ। শুরু করা যায়।” ঠোঁটদুটো প্রসারিত করে বললো ফারুক হোসাইন।
★
বিকালে সেহের মানজুর জামাকাপড় নিয়ে যেতেই মানজু যেন সেহেরকে খপ করে ধরলো। সেহের চোখ বড় বড় করে বললো,
—“না ভাই আমি ওই শুটিং স্পটে মোটেও যাবো না। দেখেছিস কতো লোকজন ছিলো সেখানে?”
—“আরে ধুর লোকজন থাকলে কী হবে হ্যাঁ? কিছুই হবে না তুই চল তো! দুপুরে তোর জন্য আমি শুটিংয়ের সেটের দিকে পৌঁছাতে পারিনি! আজ যেহেতু নিয়ত করেছি আমি শুটিং দেখবো, মানে দেখবোই! নো কথা তুই আমার সাথে যাবি মানে যাবি ব্যাস!”
—“দেখ মানজু পাগলামি করিস না! এতোদূর শুটিং দেখতে আমি যেতে পারবো না!”
—“কে বললো দূরে? ওই বিচ্ছু নুমকির থেকে জানতে পেরেছি আমাদের বাসা থেকে কিছুটা দূরের যে আমবাগানটা আছে, এখন সেখানে শুটিং হচ্ছে। প্লিজ বোন আমার চল! অনেকদিনের ইচ্ছে টিভির নায়ক-নায়িকাদের বাস্তবে দেখার! প্লিজ তুই আমার ইচ্ছাটারে ভাঙ্গিস না! যেতে তো বেশিসময় লাগবে না!”
সেহের কী করবে ভেবে পায় না। মানজুর জোরাজুরিতে অবশেষে হলো সেহের। সেহের থাকায় মানজুর মা মানজুকে আটকালো না। মানজু তো প্রায় লাফাচ্ছে তার এতো আনন্দ হচ্ছে সে বলে বোঝাতে পারবে না। এদিকে সেহেরের কেন যেন খুব ভয় লাগছে। ওই বিদেশিকে দেখলে তার কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হয়, বুকের ধুকপুকানি অধিক হারে বেড়ে যায়। মানজু সেহেরকে টানতে টানতে অবশেষে পৌঁছালো শুটিং স্পটে। শুটিং দেখার জন্য স্পটের চারপাশে গ্রামের মানুষের হালকা পাতলা ভীড় জমেছে। মানজু ভীড় ঠেলে সেহেরকে নিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আর চোখ বুলিয়ে অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে নায়ক-নায়িকা এবং সকল অভিনতা-অভিনেত্রীদের দেখছে। এই আমবাগানটা অনেক সুন্দর। মাটিতে সবুজ ঘাসের সমোরোহ, শীতল পরিবেশ। বলা যায়, ফ্যামিলি পিকনিকের জন্য পারফেক্ট একটা জায়গা। এখন মূলত পিকনিকের সিনই চলছে। একটা বাচ্চা একজন মধ্যবয়সী লোকের সাথে বল খেলছে আর তার পিছে এক সুন্দরী নারী পাটি বিছিয়ে বসে হটপট থেকে খাবার বাড়ছে। মেয়েটির কোলে আবার একজন মাথা দিয়ে আকাশের পানে চেয়ে কিছু ডায়লগ দিচ্ছে। এ যেন এক বড়ই সুখী পরিবার। কোলে মাথা রাখা মানুষটাকে চিনতে সেহেরের সমস্যা হলো না কারণ এ ছেলেটিকে সে ভালো করে চিনে। এই ছেলেই তাকে গতকাল আজেবাজে কথা বলছিলো। হঠাৎ সেহেরের সামনে চোখ যেতেই সে থমকে গেলো। শুটিং স্পটের অপরদিকে সেই বিদেশি এক বড় ছাতার নিচে পায়ের উপর পা তুলে মাথা নিচু করে মনোযোগ সহকারে তার সামনে থাকা মিনি পিসিতে কিছু একটা দেখছে। তার পাশে আরেকজন লোক একইভাবে মনোযোগ দিয়ে দেখছে। সেহের না চাইতেই অবাক চাহনিতে সা’দকে দেখছে। কেন জানি না সেহেরের এই সা’দকে বড্ড ভালো লাগে যার ফলে সে বারংবার ছেলেটায় ভাবনায় হারিয়ে যায়। পরমুহূর্তে সেহের নিজের চোখ সরিয়ে মনে মনে বললো,
—“ছিঃ সেহের! তুই কেন সেই ছেলেটাকে দেখছিস? সে কতো বড়ো এবং উঁচু ঘরের মানুষ আর তুই কিনা তার ভাবনা নিয়ে বসে আছিস? না সেহের তাকে নিয়ে এতো ভাবিস না, সে বড়োমাপের মানুষ, নিশ্চয়ই তার অনেক মেয়েদের সাথে উঠাবসা। আর তুই ভাবলি কী করে এই বিদেশির সাথে তোর কথা হবে? ওরা সেলিব্রিটি মানুষ তাই ওদের দিক থেকে নিজের ফোকাস উঠা! হ্যাঁ নিজেকে শান্ত রাখ! আর তাকাবি না ওনার দিকে।” ভেবেই চোখ বন্ধ কয়েকবার লম্বা শ্বাস নিলো সেহের। হঠাৎ মানজু সেহেরকে জোরে ঝাকিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো,
—“ও আমার আল্লাহ! আমি কখনো ভাবতেই পারি নাই আমার ক্রাশ তুষারকে বাস্তবে দেখবো! দেখ ভাই কীভাবে নিজের সংলাপ বলছে। আমি তো পুরা মুগ্ধ ফুল! খাতা কলম আনলাম না কেন রে? অটোগ্রাফ নিতাম ধ্যাত!”
বলেই মুখ গোমড়া করে ফেললো মানজু। সেহের চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,
—“কে তুষার?”
—“আরে ওইযে নায়িকা তারা আপুর কোল থেকে উঠে বাচ্চাটার কাছে যে ছেলেটা আসলো না, সেটাই তো তুষার। ওয়ি এই নাটকের হিরো!”
সেহের ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো। হ্যাঁ কালকের ওই অভদ্র ছেলেটাকেই বলছে মানজু। সেহেরের মনে এখন প্রশ্ন জাগলো, এই তুষার যদি হিরো হয় তাহলে ওই বিদেশিটা কে? সেহেরের দৃষ্টিতে এই অভদ্র তো কোনো নায়কের কাতারেই পরে না। সেহের আনমনে বলে ফেললো,
—“এ ছেলে কোনো নায়ক হলো নাকি? নায়ক তো ওই ছাতার নিচের চেয়ারে বসা সুদর্শন ছেলেটাকেই মানায়। কোন চয়েসে এই অভদ্রকে নায়ক বানালো পরিচালকরা?”
—“তুই তো কোনোদিন টিভির ধারেকাছেও যাস নাই, ভালো খারাও বুঝবি কই থেকে? জানিস আমার তুষার ক্রাশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কতোটা হাই লেভেলে আছে! এইসব মূর্খ ক্ষেতমার্কা পাবলিক কই থেকে যে আসে কে জানে?”
এসব শুনে সেহের তার বামপাশে তাকায়। তার কিছুটা দূরত্বে তপা বুকে হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মানজু রেগে তপার দিকে তেড়ে যাওয়ার আগেই সেহের মানজুকে আটকায় এবং বলে,
—“দয়া করে এখানে কোনো ঝামেলা করিস না!”
—“মানেহ! ওই বেয়াদব মেয়ে কিসব বললো শুনিসনি? মূর্খ সে নাকি তুই? বড়দের সাথে ভালো ব্যবহার করে না সে আবার কেমন ভদ্রতা! ছাড় আমাকে। এই বেয়াদবকে আজ আমি কোনো ছাড় দিবো না।”
তখনই শুটিংয়ের এক কর্মচারী “কিপ সাইলেন্ট’স” বলে চেঁচিয়ে উঠলো মানজুদের উপর! মানজু সাথে সাথেই মুখে তালা মারলো। কর্মচারীর চেঁচানো সা’দের কানে আসতেই সা’দ বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকালো এবং আবারও থমকে গেলো। সেই মায়াবী চোখজোড়া! তবে আজ চোখজোড়ায় কিছু অস্বস্তি এবং ভয় ফুটে আছে। আজ সা’দের কেন যেন খুশিতে খুব জোরে “ইয়াহু” বলে চেঁচাতে ইচ্ছা করছে। তার একটাই কারণ আজ সেহেরের মুখে কোনোরকম মুখোশ নেই। সে আজ পুরো মুখমন্ডল দেখতে পেলো। মায়াবী চোখজোড়া দ্বারাই এই রূপসী মেয়েটাকে চিনতে পেরেছে। বড্ড আদুরে মেয়েটি। এই মুখটা দেখার জন্য সা’দ যেন কতোবছর এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলো। অথচ গতকালই এই মেয়েটাকে প্রথম দেখেছে সে। যদিও কল্পনা করেছিলো কিন্তু তার কল্পনাকেও এই মুখমন্ডলের অপরূপ গঠন হার মানিয়ে দিলো। গতকাল শুটিং শেষে রাতে এই ল্যাপটপে এই মেয়েটাকেই বারবার দেখছিলো সে, তাই যেন এই মায়াবীনি তার বড্ড চেনা। তবে মেয়েটার ঠোঁটের বামদিকে কেমন ঝাপসা কালসিটে দাগ। দাগ থেকে সা’দ ভ্রু কুচকালো। যদিও দূর থেকে এই দাগ অস্পষ্ট তবুও সা’দ অল্প হলেও সে দাগটাকে লক্ষ্য করেছে।
সা’দ শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে মেয়েটার ওড়না ঠিক করার ভঙ্গি, কপালের ঘাম মোছা, হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে তার পাশের মেয়েটির কানে কানে কথা বলা সবটাই লক্ষ্য করছে সে। এসব দেখে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে সা’দের। জানে না সে এই অনুভূতির কোনো নাম, তবে চুপিচুপি মেয়েটাকে দেখতে তার ভিষণ ভালো লাগছে। কারীব অনেকক্ষণ থেকেই তার স্যারের ভাব-ভঙ্গি খেয়াল করছে। শেষে উপায় না পেয়ে সে সা’দের দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকালো আর নিজেই বিষম খেলো।
—“এ যে এক সুন্দরী মেয়ে, স্যার কেন এই মেয়ের দিকে বারবার তাকাচ্ছে? ওদের ভেতর কী কিছু চলছে? কিন্তু মেয়েটা তো একবারের জন্যেও স্যারের দিকে তাকায়নি এর মানে কী শুধু স্যারের মধ্যেই কিছু চলছে? হতে পারে। আমি যা ভাবছি তা যদি হয় তাহলে তো জিও বস! স্যারকে সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল করার সুযোগ যে খুবই নিকটে!”
ভেবেই কারীব অন্যদিকে চলে গেলো।
চলবে!!!
#দখিনা_প্রেম
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| অতিরিক্ত অংশ ||
কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মা নড়ে সদর দরজার দিকে তাকালো। মায়ের নড়াচড়ায় রুয়াবি লাফ দিয়ে উঠে বসলো আর এদিকে সেদিক তাকিয়ে অস্থিরতার সাথে বলতে লাগলো,
—“কী হলো মা? ভাই এসেছে? কোথায় সা’দ?”
বলতেই তার সদর দরজার দিকে নজর গেলো। সা’দকে দেখে রুবাইয়ের যেন প্রাণ ফিরে এলো। সে উঠে দাঁড়িয়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে সা’দকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। সা’দও পরম আবেশে নিজের বোনকে জড়িয়ে ধরলো। পরিবারের প্রতিটা মানুষ সা’দকে এখনো সেই ছোটবেলার মতো করেই ভালোবাসে।
—“এতো দেরী হলো কেন ভাই? আমি তো অফিস থেকে ফিরে তোকে পেলাম না!”
—“আমি তো ন’টায় রওনা দিয়েছি আপু, তাই দেরী হলো আর কী!”
সা’দের মা দুই ভাইবোনের দিকে এগিয়ে এসে গাল ফুলিয়ে বললো,
—“বোনকে পেয়ে সবাই ভুলে যায় আর আমি যে ১২টা অবধি জেগে আছি সে খবর কেউ রেখেছে?”
মায়ের অভিমানী কথায় সা’দ কিঞ্চিৎ হাসলো। এরপর রুবাইয়ের সাথে নিজের মাকেও জড়িয়ে ধরলো। সা’দ চোখ বুজে মুচকু হেসে বলতে লাগলো,
—“তোমাদের ভুলবো কী করে বলো তোমরা যে আমার দুনিয়া মা! এখন বলো আমার চিন্তায় প্রেশার হাই করে ফেলোনি তো?”
সা’দের কথায় মা সা’দের বুকে হালকা চাপড় দিয়ে বললো,
—“তুই এতো ফাজিল হলি কেন?”
সা’দ দুজনকে ছেড়ে বুজে হাত বুলাতে বুলাতে মুখ গোমড়া করে বলে,
—“কিছু বললেই দোষ!”
—“না রে ভাই! তোর দোষ না মায়ের ব্লাডপ্রেশারের দোষ!” বলতেই লিভিংরুমে একদফা হাসির রোল চললো। কারীবকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সা’দ বললো,
—“এই তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন ভেতরে আসো! আজ ডিনার আমার সাথে করবে প্লাস আজ আমাদের বাড়িতেই থাকবে!”
—“আরে কী বলেন স্যার! তা তো হয় না!”
—“হওয়ার হলে ঠিকই হয়। এখন কোনো কথা না, চুপচাপ গেস্টরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো! ইট’স মাই অর্ডার!”
বলেই সা’দ সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। রুবাই হেসে কারীবকে বললো,
—“বসের অর্ডার না মানলে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন আপনার এই চাকরি ফুঁস করে উড়ে গেছে। তাই বেশি না বলে সা’দ যা বললো তাই করে ফেলুন, আমরা খাবার রেডি করছি!”
বলেই রুবাই তার মায়ের কাজে হাত লাগাতে রান্নাঘরে চলে গেলো। সা’দ উপরে যাওয়ার সময়ই মা কিচেনে ছুটেছিলেন। কারীবও আর কী করবে, কোনো উপায় না পেয়ে গেস্টরুমের দিকে চলে গেলো।
★
—“সেহের! তোরে আমি এতো সহজে ছাড়মু না। আমারও সময় আইবো! আমি কী জিনিস তোরে আমি হারে হারে বুঝায় দিবো। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। সেই সঠিক সময়ে তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না কেউ না! তোর অপমানের শোধ আমি শুধে আসলে নিবো।”
বলেই অচেনা লোকটা হুংকারের সাথে হাতে থাকা স্টিলের গ্লাসটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো। রাগে তার সমস্ত শরীর যেন দাউদাউ করে জ্বলছে। প্রচন্ড জ্বলছে!
★
সেহের ব্যস্ত হয়ে পরলো নিজের পরীক্ষা নিয়ে। সারাদিন বইয়ে ডুবে থাকো পরীক্ষা দাও আর রাতে রিমনকে সময় দাও। এ যেন তার প্রতিদিনের রুটিন। জোহরা বা তপা এখনো কোনো ঝামেলা করেনি তবে জোহরা একবার এসেছিলো রিমনকে নিতে কিন্তু রিমন বরাবরই নাকোচ করে দেয় যে সে ওই বাড়িতে ফিরবে না। প্রতিবারের মতোই জোহরা খালি হাতে ফিরে যায়। তবে ফিরে যাওয়ার আগে সেহেরের দিকে ক্রোধের দৃষ্টি একবার হলেও নিক্ষেপ করবেই। সেই দৃষ্টি সেহের বুঝতে পারলেও কিছু বলে না। কবির এখনো জেলে আছে। এদিকে গ্রামের মানুষ নতুন একজন চেয়ারম্যান নিয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান হলো রতন চাচা। উনি অত্যন্ত ভালো এবং ঠান্ডা স্বভাবের মানুষ৷ যেমন তার ব্যবহার তেমনই তার কাজের দক্ষতা। গ্রামের মানুষ বেশ খুশি এমন একজন চেয়ারম্যান পেয়ে। সময় যত এগোতে থাকলো সেহেরের পরীক্ষাও শেষ হয়ে আসলো। পরীক্ষার কারণে মানজুর সাথে কলেজ ছাড়া দেখাই হয় না। শেষ পরীক্ষার দিন মানজু আগেই কলেজ থেকে বাসায় চলে গেছে তাই সেহেরের আজ একাই যেতে হচ্ছে। সেহের প্রশ্নের এমসিকিউ দেখতে দেখতে আসছিলো তখনই তার পাশের ক্ষেত থেকে একটা শব্দ পেলো। সেই শব্দে সেহের ভ্রু কুচকে থামলো। ঘাড় ঘুরিয়ে পা উঁচু করে কিছু দেখার চেষ্টা করতেই যা দেখলো তাতে সেহেরের হাত-পা যেন অবশ হয়ে গেলো৷ এ যে তার বাবা কবির! এক ঢোকে মদ গিলছে সে। সেহের ভয়ে শ্বাস আটকে আসছে। মদ খাওয়া শেষে বোতল নামিয়ে কেমন পাগলের মতো কথা বলছে আর চিৎকার চেঁচামেচি করছে যা দেখে সেহেরের ভয় আরও বেড়ে গেলো। সে আর এক মুহূর্ত সেদিকে না দাঁড়িয়ে দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করলো। তার পক্ষে এই মানুষটার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না। বাসায় ফিরে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে চেয়েও কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারলো না। আর আবিদ বা জেঠুও বাসাতে ছিলো না। আবিদ তার ভার্সিটি থেকে এখনো ফিরেনি আর জেঠু তার কাজে গেছে। সেহেরের অস্বস্তি যেন বেড়েই চলছে। কবির জেল থেকে ছাড়া কবে পেলো? আর কীভাবেই বা বের হলো? সে কী আবার সেহেরের কোনো ক্ষতি করবে? এরকম নানান প্রশ্ন সেহেরের মাথায় ঘুরঘুর করছে। চাচী সেহেরকে উঠোনে বসে থাকতে দেখে হাক ছেড়ে বললো,
—“ফুল রান্নায় এসে সাহায্য করতে পারবি? পুকুরে যাইয়া কাপড় ধুইতে হইবো আমার, তুই একটু ভাত টিকা দিস আর মাছ বসিয়েছি নুন লাগলে দেখিস একটু!”
—“আচ্ছা চাচী তুমি যাও, রান্না আমি সামলাচ্ছি!”
চাচীমা মুচকি হেসে রান্নাঘর থেকে ভেতরে চলে গেলো। সেহের নিজের সব চিন্তা পাশে ফেলে রান্নাঘরে চলে গেলো। আজ যেহেতু সেহেরের পরীক্ষা শেষ, সেহেতু সে এখন অবসরেই আছে।
★
পার্টিমুখর পরিবেশ! কিছুক্ষণ পরপর লাল, নীল লাইট বদলে চারপাশ দুই কালারের কলম্বিয়া তৈরি করছে। সাইড স্টেজে একটা ব্যান্ড এবং ফেমাস সিঙ্গার বসেছে। গায়ক কিছুক্ষণ পরপর বিভিন্ন মনভুলানো গান গাইছে। চারপাশে নানান মানুষের আনাগোনা। সকলেই পাবলিক ফিগার অথবা সেলিব্রিটি। এক প্রডিউসার তার নিউ মুভিতে ভালো রেসপন্সের জন্য এই বিশাল পার্টির আয়োজন করেছেন বিভিন্ন বড়ো বড়ো বিজন্যাসমেন এবং ফিল্মইন্ডাস্ট্রির সকল লোকদের। তুষার ড্রিংকস সাইডে হাতে ওয়াইন নিয়ে দুই-তিনজন মডেল মেয়ের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত এমন সময়ই সদর দরজার সামনের থেকে হালকা শোড়গোল শোনা গেলো। তিন মডেল সেদিকেই তাকালো। শুধু এই তিনজন নয় আশেপাশের সবার দৃষ্টি-ই সেদিকে। সকলের মতো তুষারও বিরক্তি নিয়ে সেদিকে তাকালো। প্রডিউসার সাহেব একপ্রকার ছুটে সদর দরজায় গেলেন আর কাউকে ওয়েলকাম ওয়েলকাম করে ভেতরে আসতে বলছেন। কিছু মানুষ সরে যেতেই দেখা গেলো সা’দ আর তার বোন রুবাই পার্টিতে প্রবেশ করছে। সা’দ পুরো ফর্মাল লুকে আর রুবাই একটা শাড়ি আর হিজাব পরেছে। সা’দকে দেখে তুষারের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। মেজাজ গরম হওয়ার মূল কারণ সা’দ কেন তার চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় যার জন্য প্রায় সকল মডেল আর অভিনেত্রী তার দিকে নজর দেয়? কই তুষারের দিকে তো এভাবে তাকায় না? এই বিষয়গুলো পুরো বিরক্তি ধরিয়ে দেয় তুষারকে। অত্যন্ত বিরক্তির সুরে তার পাশে থাকা মেয়েটিকে বললো,
—“এরে নিয়ে এতো মাতামাতির কী আছে ভাই? সে তো সামান্য ডাইরেক্টর। শুধু সাদা হলেই যে ভালো হতে হবে এমন তো নয়! লুক এট মি অর লিভ হিম!”
মেয়েটা তুষারের দিকে না ফিরে কড়া কন্ঠে বললো,
—“সা’দ বিন সাবরানের মতো মানুষকে প্রায় প্রতিটা মেয়েই হাসবেন্ড হিসেবে আশা করে, যে মেয়েদের সাথে মিসবিহেভ করে না, রেসপেক্ট দেয় সাথে একজন ভালো মানুষ। ফেরেশতার মতো মানুষটাকে খারাপ বলার মতো কোনো ওয়ে নেই মিস্টার! বরং আমি এটা বলতে পারি, তোমার স্টার হওয়ার ২ বছরে বেশ অনেকবার ওয়াইন বা ড্রিংকস নিতে দেখেছি কিন্তু সা’দ স্যারকে গত সাড়ে চার বছরে কোনোদিন ড্রিংকস তো দূরে থাক স্মোকিংও করতে দেখিনি!”
বলেই মেয়েটি তার পাশের দুজন মেয়েকে নিয়ে অন্যদিকে চলে গেলো। তুষার রাগে গ্লাসের পুরোটা ওয়াইন এক দমে শেষ করে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বললো,
—“সা’দ সা’দ এন্ড সা’দ! এই এক নাম আমার সবকিছু যেন শেষ করে দিচ্ছে। কে এই সা’দ! এ উপরে যা দেখায় তা তো সে একদমই না! এর ভেতরে কুটনৈতিক কাজ কেউ কেন ধরতে পারে না হোয়াই? কেন তার জন্য বারবার নিজেকে অপমান হতে হয়! এরে তো ইচ্ছা করে নিজ হাতে খুন করি একে!”
সা’দ কয়েকজনের সঙ্গে অল্পস্বল্প আলোচনা করছিলো তখনই সে দূর থেকে ফারুক হোসাইনকে দেখতে পেলো। তখনই সে “এক্সকিউজ মি” বলে ফারুক হোসাইনের দিকে এগিয়ে গেলো। এই একটা মানুষকে সা’দের বেশ পছন্দ। ফারুক হোসাইন যেমন রসিক তেমনই ভালো মানুষ। অল্পতেই মানুষের সাথে মিশে যান! সামান্য অহংকারবোধ নেই তার মধ্যে। ফারুক হোসাইন সা’দকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
—“আরে ইয়াংম্যান যে কী অবস্থা? তা নতুন কোনো শিডিউল আছে নাকি??”
—” আলহামদুলিল্লাহ আঙ্কেল ভালো আপনার কী অবস্থা? আর এক মাস শান্তিতেই আছি কোনো শিডিউল নেই। থাকলে তো আপনি জানতেনই!” মুচকি হেসে বললো সা’দ। ফারুক হোসাইন হেসে বললো,
—“হ্যাঁ তা তো অবশ্যই। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তা কিছু খাবে কোলড্রিংকস অর স্নেকস?”
—“না আঙ্কেল ঠিকাছি। আন্টির কী অবস্থা আর আপনার মেয়ের?”
—“সকলেই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। আমার মেয়েকে তো এবার নিউইয়র্কে পাঠিয়েছি!”
—“ও আচ্ছা৷ এবার সে কোন ক্লাস?”
—“ইন্টার দিয়েছে, রেজাল্ট আসার পর নানান ঝামেলার পর অবশেষে নিউইয়র্কে পারি জমালো! তা শুনলাম তোমার বোনও নাকি এসেছে? সে কোথায় পরিচয়ই তো হলো না!”
—“ও হ্যাঁ ও ওদিকে আছে৷ চলুন সেদিকে যাই!”
—“হ্যাঁ চলো।
চলবে!!!