ত্রিধারে তরঙ্গলীলা পর্ব-৯০

0
942

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৯০|
সুখ, দুঃখ, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি মিলিয়ে বিবাহিত জীবনের
অনেকগুলো দিন পেরিয়ে গেছে। সুহাস, নামীর বিয়ের বয়স আট বছর। আইয়াজ, ফারাহর চার। সৌধ, সিমরানের দু’বছর পূর্ণ হবে আগামী সপ্তাহে।
ওদের বন্ধুমহলের সকলেই সফল। ক্যারিয়ার, সংসার নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। একজন যাও বাকি ছিল তারও বিয়ের সানাই বাজতে চলেছে। সৌধ, সিনুর ম্যারেজ এনিভার্সারির পরপরই বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে। আজিজের বিয়েতে ওরা সব বন্ধু, বান্ধবী আর তাদের ছানাপোনারা যাবে। কচি মেয়ে খুঁজে চলা আজিজ অবশেষে একুশ বছর বয়সী এক সুন্দরী তরুণিমার স্বামী হতে চলেছে। পাত্রীর নাম তামান্না জাহান তৃষা। আগামী সপ্তাহের শুক্রবার মোঃ আজিজ মিঞা এবং তামান্না জাহান তৃষার শুভ বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে। সে বিয়েতে বন্ধুদের সপরিবার আমন্ত্রিত।

দেড় মাস হয়ে এলো। সৌধ ছুটি পায়নি। আসেনি বাড়িতে। হয়নি বউ এবং পরিবারের সঙ্গে সশরীরে সাক্ষাৎ। কথা ছিল সিনুর ফাইনাল পরীক্ষার পর ওকে তার কাছে নিয়ে যাবে। কী জানি পরে কী ভেবে আর নেয়নি। তার নিজেরও এখানকার হসপিটালে চলে আসার সম্ভাবনা বর্তমানে ক্ষীণ। সিমরান পরীক্ষার পর ইনিয়েবিনিয়ে বহুবার বুঝাতে চেয়েছে তার কাছে নিয়ে যেতে। প্রতিবারই বিষয়টা এড়িয়ে গেছে সৌধ। এই এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে একদিন দুজনের ঝগড়া হলো। ঝগড়াটা অবশ্য মৌনতার। সৌধ যেমন কথা এড়িয়ে গেছে। সিনুও তেমন সৌধকে এড়িয়ে চলেছে। ব্যস দুজনার শীতল বিরোধ। সেই বিরোধ কাটল সৌধর একটা ছোট্ট এক্সিডেন্টে। কে জানে এক্সিডেন্টটা ইচ্ছেকৃত কিনা। সিমরানের এখনো বেশ সন্দেহ হয়৷ এমন সচেতন মানুষ কিনা বাইক এক্সিডেন্ট করে! যেমন তেমন এক্সিডেন্ট নয় কপালের বাম সাইটে আলুর মতো ফুলে নীল বর্ণ হয়ে ছিল। যা দেখে বেচারি সিনুর সব অভিমানী আগুন নিভে বরফজলে রূপান্তরিত হয়। সৌধও ওকে ঠেশ দিয়ে বলতে ভুলে না,

‘ বউ যদি সর্বক্ষণ এমন রাগ, জেদ, ক্ষোভ নিয়ে থাকে স্বামীর তো অমঙ্গল হবেই। এজন্যই গুরুজনেরা বলেন, স্বামীর ওপর অসন্তুষ্ট হতে নেই। এতে তাদের অমঙ্গল হয়। ‘

কেঁদে গাল ভাসিয়ে সিমরান জড়িয়ে ধরে তাকে। ব্যথা পাওয়া অংশে চুমু খেয়ে বলে,

‘ নিতে হবে না তোমার কাছে। আমার কোনো অসন্তুষ্টি নেই। আমি যথেষ্ট সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট বলেই স্বামীর কাছাকাছি থাকতে চেয়েছি। তাই অভিমান করে আছি। এজন্য এতবড়ো আঘাত পেতে হবে?’

আহ! সে কী কান্না। সৌধ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিল,

‘ সিনুপাকনি, আমার উপর ভরসা রাখো। সঠিক সময় বুঝে ঠিক চলে আসব। ওখানে কেন নিচ্ছি না সেটাও বলব। ‘

সেই এক্সিডেন্টটা যে বাইক এক্সিডেন্ট না পরবর্তীতে টের পেয়েছে সিমরান। ইচ্ছেকৃত দেয়ালে মাথা ঠুকে এমন করেছে কিনা কে জানে! মানুষটার যা তীক্ষ্ণ বুদ্ধি। বউয়ের প্রেমে উন্মাদ, বুদ্ধুও বলা যাবে এ ঘটনার পর৷
.
.
ক’দিন ধরেই জ্বর ছিল সিমরানের। দুদিন আগে শাশুড়ি মা ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিছু পরীক্ষা দিয়েছিল ডক্টর। রিপোর্ট পেয়েছে গতকাল। রিপোর্ট সম্পর্কে এ বাড়ির কেউ কিচ্ছু জানে না। এক শাশুড়ী আর বউ মা ছাড়া। সৌধকে পর্যন্ত জানানো হলো না। শুধু তাই নয়। রিপোর্ট গুলো দেখার পর সৌধর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে সিমরান৷ বেড়েছে কান্নাকাটি আর থেকেথেকে ভয়ে থরথর করে কাঁপা। মাঝেমধ্যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিস্ময় ভরে নিজেকে দেখে। বেলকনিতে গিয়ে চুপটি করে বসে থাকে। রাতে ঘুম হয় না ঠিকঠাক। মাঝরাতে উঠে বসে থাকে। গুটিগুটি পায়ে ঘুরে বেড়ায় ঘরজুড়ে। খাবারদাবারে ভয়াবহ অরুচি। ওর বেহাল দশা দেখে সর্বক্ষণ ওকে সামলে চলেছে শাশুড়ি মা। রাতে ওর কাছে থাকতেও চেয়েছেন। বেচারি বলেছে,

‘ আম্মা প্লিজ এটা করো না। আমি খুব লজ্জা পাবো তোমার সাথে ঘুমুতে। ‘

তানজিম চৌধুরী স্পেস দিয়েছে রাতটুকু। এরপর হুট করে একবার এসে বললেন,

‘ সিনু, ছেলেটাকে কিছু জানাতেও দিচ্ছ না। তুমিও ওর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছ। ও তো ভীষণ টেনশনে আছে মা। আর ভুলে গেছ আসছে সোমবার তোমাদের বিবাহবার্ষিকী? ছেলেটাকে ফোন করে কথা বলো। কবে ছুটি নেবে শোনো। আর ছেলেমানুষী করো না। ‘

শাশুড়ির কথা শুনে বুক ধক করে উঠে সিমরানের। চোখ দুটো গোল গোল হয়ে যায়। নেক্সট উইকে তাদের ম্যারেজ এনিভার্সারি! শিরশির করে উঠে সর্বাঙ্গ। উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বন্ধ ফোনটা চালু করে৷ সৌধর নাম্বার ডায়াল করতে উদ্যত হয়েও থেমে যায়৷ সঙ্গে সঙ্গে কল আসে সুহাসের। আকস্মিক ভাইয়ের ফোন পেয়ে স্তম্ভিত হয় সে। পরমুহূর্তে সচকিত হয়ে রিসিভ করেই কান্না বিগলিত কণ্ঠে বলল,

‘ ব্রো, কেমন আছো? কোথায় আছো তুমি? ‘

‘ হসপিটালে আছি! কি হয়েছে সিনু কণ্ঠ এমন লাগছে কেন? কাল থেকে ট্রাই করছি। ফোন বন্ধ ছিল কেন তোর? সৌধর সঙ্গে ঝগড়া করেছিস? ‘

‘ না, একদমই না। ‘

ফের কান্নারত কণ্ঠ। সুহাস দিশেহারা।

‘ বোন শরীর খারাপ! নামীকে পাঠিয়ে দিব তোর কাছে? দাঁড়া ফোন করছি ওকে। ‘

বিরক্ত হলো সিমরান। চাপা ধমক দিয়ে বলল,

‘ কিচ্ছু হয়নি আমার, একদম ঠিক আছি। একটু জ্বর হয়েছে এই যা। মনের আনন্দেও কাঁদা যাবে না তোমার কাছে? আতঙ্কিত করে ফেলো ধ্যাৎ ভাল্লাগে না। ‘

বলেই বিরক্ত হয়ে কল কেটে দিল সে। সুহাস হতভম্ব হয়ে বসে রইল। মনের আনন্দে বোন কাঁদছে? এমন কি আনন্দ যে অমন করে কাঁদতে হবে? ভেবেই তৎক্ষনাৎ নামীর নাম্বার ডায়াল করল ও। নামী তখন তার পাশের ক্লিনিকে ছিল। কল রিসিভ করতেই সে চঞ্চল কণ্ঠে বলল,

‘ কী করছ নামীদামী খুব বেশি ব্যস্ত আছো কি? ‘

‘ কেন কী হয়েছে! এনি প্রবলেম? ‘

‘ সিনু কাঁদছে। আমাকে বলল আনন্দে কাঁদছে। তুমি ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করো তো সৌধর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে কিনা? জীবনে কক্ষনো ও আনন্দে কাঁদেনি। ওহহো বিয়ের সময় কেঁদেছিল। বাট এছাড়া কাঁদেনি। এই নামী, মা, বাবা তো নেই। ওর কোনো সমস্যা হলে সেভাবে কাউকে বলতেও পারে না। সাংসারিক জটিলতা গুলো আমি অতো বুঝি না৷ তুমি জাস্ট কল করে সিয়র হও ও কেন কাঁদছে। বাড়ির কারো সঙ্গে সমস্যা নাকি সৌধর সঙ্গে৷ কাইন্ডলি আমাকে জানাও। বাকিটা আমি বুঝে নিচ্ছি।’

একদমে কথাগুলো বলে থামল সুহাস। নামী ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ তোমাকে কিচ্ছু সামলাতে হবে না সুহাস। যা করছ সেটাই মন দিয়ে করো। বাকিটা আমি দেখছি। অযথা টেনশন করো না। সিরিয়াস কিছু না বোঝাই যাচ্ছে। ‘

‘ হেলাফেলা করো না নামী। তুমি সিনুকে জানো না। ও খুব জেদি। হতে পারে আনন্দে কান্না করছে এটা জেদ করে বলেছে। ওর হয়তো সত্যি কিছু নিয়ে দুঃখ হচ্ছে। ‘

‘ আচ্ছা আমি কল দিচ্ছি। তুমি রাখো। ‘

‘ আর শোনো কোনোভাবে যেন আমাদের প্ল্যান টের না পায়। সাবধানে কথা বলো। ‘

‘ হয়েছে আমাকে সাবধান করতে হবে না। আমি তোমার মতো পেট পাতলা নই। ‘

‘ ওকে ডার্লিং। ‘

নামী ফোন কাটতে উদ্যত হয়৷ সুহাস ত্বরিত আবার বলে,

‘ আধঘন্টা পর ফ্রি হবো। সুহৃদকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। ‘

ছোটো বাচ্চাকে একা অন্য কারো দায়িত্বে রেখে ওরা কাজে আসে না। সঙ্গে করে নিয়েই আসে। দুজন মিলে খুব সুন্দর করেই ঘরে, বাইরে আর বাচ্চা সামলায়। যেহেতু নিজেদেরই হসপিটালে নামী কর্মরত। সেহেতু সুহৃদকে এখানে বাসার মতো করেই রাখতে পারে। সর্বক্ষণ দেখভালের জন্য একজন বিশ্বস্ত মেয়ে কর্মচারী রেখেছে। ছেলেকে কর্মচারীর কাছে রাখলেও সে নজর রাখতে পারে। সময়ও দিতে পারে পর্যাপ্ত। খাওয়া, গোসল, ঘুমের সময় মায়ের সান্নিধ্যই পায় সুহৃদ। এ ব্যাপারে নামীর থেকেও সুহাস বেশি স্ট্রং। সে বলে দিয়েছে প্রয়োজনে সব একা হাতে সামলাবে। তবু ছেলেকে প্রপার গাইড, অ্যাটেনশন দিতে হবে। নিজের বেড়ে উঠা আর ছেলের বেড়ে উঠায় ফাঁক রাখবে সে৷ কারণ একজন ভুক্তভোগী বাবা কক্ষনো চায় না। তার মতো তার সন্তানরাও ভুক্তভোগী হোক৷ এছাড়া ওদের মধ্যে এও কথা হয়েছে। সুহৃদ যথেষ্ট বড়ো না হওয়া পর্যন্ত সেকেন্ড বেবি নেবে না৷ এত বড়ো দায়িত্ব, সংসার সামলে দুটো বেবির টেককেয়ার কঠিনই হয়ে যাবে। আজ যদি উদয়িনী বা সোহান খন্দকার বেঁচে থাকতেন। সুহাস, নামীর স্ট্রাগল গুলো অন্যরকম সুখময় হতো৷ এখনো সুখী তারা। তবু দিনশেষে একটা শূন্যতা থেকেই যায়।

‘ ওকে রাখছি। ‘

ফোন কেটে সিমরানকে কল করল নামী। দশ মিনিটের মতো কথা বলে সব স্বাভাবিকই লাগল। সত্যি বলতে সিমরান সচেতন হয়ে গেছে নামীর কল পেয়ে। ঢের বুঝেছে ভাইয়ের পাগলামি! সে অতো সহজে ধরা দেওয়ার মেয়ে নয়৷ ননদের সঙ্গে কথা বলে স্বামীকে ফোন করে ঝাড়ল নামী। সুহাস ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে রইল। বোন রাগ করে ফোন কেটে দিল। এখন বউ ফোন করে ঝাড়ল কতক্ষণ। আজ হচ্ছে টা কী তার সঙ্গে? কী আশ্চর্য! এই দুই নারী তার ইমোশন বুঝে না কেন? কেন?
.
.
একই সপ্তাহে দুটো ইনভিটেশন পেয়েছে আইয়াজ, ফারাহ৷ সৌধ, সিমরানের বিবাহবার্ষিকী। আর আজিজের বিয়ের দাওয়াত। বেবি হবার পর ওরা কোথাও যায়নি। আনান, ফানানের বয়স প্রায় ছ’মাস হতে চলল। তাই এবার বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল আইয়াজ। ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে তৈরি। প্রথমে গিয়ে সুহাসের বাসায় উঠবে। এরপর সৌধর বাড়ি। সেখান থেকে আজিজের বিয়ে কাটিয়ে ব্যাক করবে ঢাকায়। বন্ধুদের মধ্যে কে কে যাচ্ছে খোঁজ, খবরও নিয়ে নিল। নিধির প্র্যাগ্নেসির সিক্স মান্থ চলে। বেশকিছু কমপ্লিকেশন দেখা দিয়েছে ওর। তাই সৌধর বাড়িতে আসার সম্ভাবনা নেই। আজিজের বিয়েতে যাবে কিনা এ নিয়েও সন্দিহান। আইয়াজ সৌধর বাড়িতে আসার জন্য জোর করল না৷ তবে আজিজের বিয়েতে যদি সম্ভব হয় আসতে বলেছে। কারণ বিয়ে, সংসার আর বাচ্চা হবার পর এ প্রথম ওরা সব বন্ধু একসঙ্গে হচ্ছে। আজিজের বিয়ে উপলক্ষে। প্রাচীও আসবে তার সাড়ে চার মাসের ছেলে প্রাণ ভৌমিককে নিয়ে।

শরীর ভালো নেই৷ মনে তীব্র উত্তেজনা। সব মিলিয়ে সৌধর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি সিমরান৷ আরমাত্র দুদিন পর তাদের বিয়ের দু’বছর পূর্ণ হবে৷ এবার সৌধর সঙ্গে কথা বলা উচিত। না হয় খুব অন্যায় হবে। তাছাড়া অতদূর থেকে মানুষটা আসবে। সে খোঁজখবর না নিলে মন ভার থাকবে। অন্যমনস্ক হয়ে বিপদ ঘটাবে। আর তারও টেনশন বাড়বে৷ এই মুহুর্তে এত টেনশন নেয়া অনুচিত। সব ভেবেচিন্তে শাশুড়ির আদেশ, অনুরোধ শুনে বরকে কল করল সে। সৌধ তখন মহাব্যস্ততার ভাণ করল। কল রিসিভ করে বলল,

‘ কেমন আছো সিনু? শরীর ঠিক আছে? ‘

এমন স্বাভাবিক কণ্ঠ দেখে কপালে ভাঁজ পড়ল ওর। যদিও সে জানে মানুষটা মায়ের কাছে ঠিক বউয়ের খোঁজ নিয়েছে। এছাড়া পার্সনাল এসিস্ট্যান্ট তাহানী তো আছেই। তাই বলে সে যে অসুস্থ হয়ে ফোন অফ করে রেখেছিল। কয়েকদিন কথা বলেনি এরজন্য একটুও উতলা হবে না? আশ্চর্য! একবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করল না ‘ সিনু জ্বর কমেছে? রিপোর্টে কী এসেছে? রিপোর্ট গুলো কই? দেখালে না তো আমাকে? ‘

একটু রাগও করল না সৌধ। একটা ধমক দিয়ে শাসন পর্যন্ত করল না। বুকের ভেতর চিনচিন করে উঠল এবার। সে শাশুড়িকে বলেছিল, সৌধকে সারপ্রাইজ দেবে। তাই যেন আসল ব্যাপারটা চেপে শুধু জ্বর এসেছে জানায়। স্বাভাবিক জ্বর। ক’দিন মেডিসিন নিলেই সেরে যাবে। তানজিম চৌধুরী এক কথার মানুষ। দুনিয়া নড়চড় হবে। তার কথা নড়বে না। ছেলেকে যতই ভালোবাসুক। বউমাকে দেওয়া কথা রেখেছেন সে। জানে সিনু। তবু সৌধর মাঝে তাকে নিয়ে আকুলতা আশা করেছিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। তীব্র অভিমানী গলায় বলল,

‘ আমি ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছো?’

ফোনের ওপাশে মুচকি হাসল সৌধ। বলল,

‘ আলহামদুলিল্লাহ। আমি বিজি আছি বুঝলে রাতে কল করব। টেক কেয়ার। ‘

ফোন কেটে দিল সৌধ। সিমরানের মুখ হা হয়ে গেল। দু-চোখে উপচে পড়ল বিস্ময়! নিজেকে আর সামলাতে পারল না যেন। আবার কল করল। রিসিভ হতেই উত্তেজিত হয়ে বলল,

‘ কীসের ব্যস্ততা তোমার? আমি কল করেছি মানে তুমি এক্ষুনি আমাকে সময় দেবে। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি। ‘

চোখ, মুখ লাল করে চিৎকার করে কথাটা বলল সিমরান। ওপাশে ভড়কে গেল সৌধ। হকচকিয়ে ঢোক গিলল কয়েকবার৷ অত্যন্ত শান্ত, শীতল কণ্ঠে বলল,

‘ কুল ডাউন সিনুপাকনি। ওকে ডান সব কাজ বন্ধ আমার। ভিডিয়ো কল করছি। আসো হোয়াটসঅ্যাপ আসো।’

ফুঁসে উঠে সিমরান বলল,

‘ যাব না আমি। ‘

হাঁপ ছেড়ে বাঁচল সৌধ। ভিডিয়ো কলের জন্য মোটেই প্রস্তুত নয় সে। স্বস্তি নিয়ে বলল,

‘ ওকে যেতে হবে না। কী করছ এখন? ‘

মুখ ভেঙচি দিয়ে বিড়বিড় করল সিমরান,

‘ এখন দরদ দেখাচ্ছে, কিচ্ছু বলব না কিচ্ছু না। ‘

এরপর তেজস্বী গলায় বলল,

‘ দুদিন পর যে আমাদের ম্যারেজ এনিভার্সারি সেই হুঁশ কারো নেই। থাকবে কী করে? তার কাছে কাজটাই সব আমার কোনো মূল্য নেই। আমি একদম ভেল্যুলেস এখন। ‘

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি আটকালো সৌধ। বলল,

‘ কাল সকালে রওনা হচ্ছি ডিয়ার। বিকেলে তোমার নামে কিছু পার্সেল যাবে রিসিভ করো কেমন। ‘

হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল সিমরানের। আর কিছু বলার মুখ রইল না। অন্যরকম আরাম আর ভালো লাগা ঘিরে ধরল ওকে। নিমেষে ঘুম পেয়ে গেল খুব। হাই তুলতে তুলতে বলল,

‘ আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। তুমি সাবধানে এসো। রওনা হবার আগে আমাকে টেক্সট করে রাখবে কিন্তু। ‘

কল কেটে দিল সিমরান। সৌধ ফোন কাটতেই ওপাশে হাসির ঢল নামল। এই হাসির মালিক গুলো আর কেউ নয়। নামী, ফারাহ, আইয়াজ আর সুহাস। সঙ্গে ছোটো ছোটো বাচ্চারা তো আছেই। যারা বাবা, মায়ের হাসি দেখে দেখে খিলখিলিয়ে হেসে চলেছে।
.
.
ভোরবেলা থেকে ফোন ধরে বসে আছে সিমরান। সৌধর একটা ফোনকল বা ম্যাসেজ কিচ্ছু আসেনি। মন খারাপ হলো ভীষণ। কল করল নামীকে। কিছুক্ষণ কথা বলে, সুহৃদকে দেখে মনটা হালকা করে নিল। শরীর ভালো লাগছে না। ব্রেকফাস্টের জন্য ডাকতে এলো তাহানী। ইচ্ছে না করলেও বাধ্য হয়ে নিচে গেল। সবার সঙ্গে বসে খেতে। তানজিম চৌধুরী তার জন্য আলদা ব্রেকফাস্ট দিলেন। তা দেখে বাঁকা চোখে তাকাল ঝুমায়না৷ সন্দেহ তৈরি হলো মনে। সিমরান ডিম দেখে নাক কুঁচকালো। স্যান্ডউইচ মুখে দিতেই বিশ্রী একটা গন্ধে পেটের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল৷ করুণ চোখে তাকাল শাশুড়ির পানে। বুঝালো এটাও সম্ভব হচ্ছে না। তানজিম চৌধুরীর মাথায় হাত। ডিম খাবে না সবজি দিয়ে স্যান্ডউইচ করেছে তাও মুখে রুচছে না। চিন্তান্বিত হয়ে সে কাছে এসে নিচু স্বরে বললেন,

‘ সকালবেলা কিছু তো খেতে হবে। সাদা ভাত বসাতে বলি৷ কী দিয়ে খাবে বলো। ‘

জুসের গ্লাস টেনে নিয়ে সিমরান বলল,

‘ এটাই হবে। ভাত খাব না এখন। ‘

চোখ রাঙালেন তানজিম চৌধুরী। বললেন,

‘ বকা খাওয়ার ধান্ধা করছ? আমি বকব ন। আমার ছেলে জানলে খবর হয়ে যাবে বুঝছ? সাদা ভাতের সঙ্গে দুটো ভর্তা আইটেম করতে বলি। আপাতত কষ্ট করে ডিম টুকু খেয়ে উপরে যাও। চোখমুখের কী অবস্থা হয়েছে এখনি! ‘

মুখ কাচুমাচু করে বসে রইল সিমরান৷ ঝুমায়না কান পেতে ছিল। হঠাৎ এত ফিসফাস! খাবার নিয়ে টালবাহানা! মুখোভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি বমি করে দেবে এই মেয়ে। তাহলে কী ঘটনা কিছু ঘটেই গেল! এই সেরেছে এখন তো ন্যাকামির ফ্যাক্টরি খুলবে এরা৷ সেসব দেখে দেখে তার না আবার পিত্তি জ্বলে যায়। বাবা গো বাবা রক্ষা করো এসব থেকে। ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলল ঝুমায়না৷ আঁকাবাঁকা চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগল সিমরানের চলনবলন।

সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়াল অস্থিরতা নিয়ে। সবকিছু এবার অসহ্য লাগছে সিমরানের। এ বাড়ির প্রতিটা মানুষকে রহস্যময় লাগছে। কাউকে সহ্য হচ্ছে না আর৷ তাহানীকে পর্যন্ত না৷ সৌধর ফোন বন্ধ। শাশুড়িকে কতবার জানালো। সে নিরুত্তর, নির্লিপ্ত। কেউ এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে না৷ আর না আগ্রহ প্রকাশ করছে। ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল মেয়েটার। কাঁদতে কাঁদতে কল করল সুহাসকে। সব শুনে সুহাস শান্ত করার চেষ্টা করল ওকে। গালাগাল করল সৌধকে। সিমরান শান্ত হলো না৷ সুহাস বলল,

‘ তুই ফোনটা কাট আমি বিশ মিনিটের মধ্যে ওর খবর এনে দিচ্ছি। ‘

আশ্বস্ত হয়ে ফোন কাটল সিনু। ঠিক দশমিনিটের মাথায় কল এলো সৌধর। প্রচণ্ড মেজাজ দেখিয়ে বলল,

‘ কী হচ্ছে সিনু? আমি রাস্তায় আছি। বাচ্চাদের মতো আচরণ করছ কেন? বিকেল হতে চলল। খেয়েদেয়ে তৈরি হও। আজ আমরা বাইরে ডিনার করব। পার্সেল খুলে দেখেছিলে? ঝটপট তৈরি হয়ে নাও বউ। আমি আসছি। ‘

সিমরানকে কিছু বলার সুযোগ দিল না। ফোন কেটে দিল। ভোঁতা একটা অনুভূতি নিয়ে সিমরান পার্সেলটা নেড়েচেড়ে দেখল। গতকাল সন্ধ্যায় হাতে পেয়েছে এটা। খুলে দেখেনি। আজ রাত বারোটায় তাদের বিবাহবার্ষিকী দিন পড়বে। সৌধ এক্ষুনি তৈরি হতে বলেছে। এসে ডিনার করবে একসঙ্গে। তাহলে নিশ্চয়ই সন্ধ্যার মধ্যে পৌঁছাবে? সমস্ত দুঃশ্চিন্তা ঝেড়ে নিচে গিয়ে আগে খাবার খেল সে। তারপর উপরে এসে পার্সেল খুলতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল!

ভালোবাসার মানুষের দেওয়া প্রতিটি জিনিসই খুব স্পেশাল হয়। সিমরানেরও হলো। মেরুন কালারের বেনারসি সিল্ক শাড়িটা দেখেই ওর প্রাণ জুড়িয়ে গেল। শাড়ির সঙ্গে সিম্পল কিছু গোল্ডের জুয়েলারি। একটা চিরকুটও রয়েছে। তাতে লেখা: ” নিজেকে সাজাও বউপাখি। যত্ন নিয়ে সাজাও। তোমার উন্মত্ত প্রণয়পুরুষ আসছে, তার চোখ ঝলসাতে। হৃদয়ে বইয়ে চলা উত্তাল তরঙ্গে আরো গভীরভাবে বিলীন হতে। ”

চিরকুটের লেখা পড়ে রমণীর সর্বাঙ্গে ঝংকার বয়ে গেল যেন। তীব্র লজ্জায় গাল দু’টো লাল হয়ে উঠল৷ কান দুটোতে যেন উষ্ণ হাওয়া বেরুচ্ছে। এত অস্থিরতা, অপেক্ষার পর এই সুখ যে তার প্রাপ্যই। শুধু সে নয় তাকেও দেবে সুখ। যে সুখ স্বর্গসুখের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। হৃদয়ে ধুকপুকানি নিয়ে প্রিয় পুরুষটির জন্য নিজেকে সযত্নে সাজাতে লাগল সিমরান।
.
.
সুহৃদকে শার্ট, প্যান্ট পরিয়ে মাথায় লাল ক্যাপ আর পায়ে লাল জুতো পরিয়ে দিল নামী। এরপর কপালে স্নেহভরে চুমু দিয়ে বলল,

‘ আমার সুদর্শন রাজকুমার। ‘

সুহাস তৈরি হচ্ছিল। মা ছেলের ভালোবাসার মুহুর্তটুকু দেখে ত্বরিত সামনে চলে এলো। মুখ এগিয়ে ঠোঁটে ইশারা করে বলল,

‘ নাও ঝটপট লিপ কিস করে দাও তো নামীদামী। আর অবশ্যই বলবে আমার সুদর্শন মহারাজ। ‘

মুখ ভেঙচাল নামী। ছেলেকে চুপচাপ বসতে বলে নিজে আয়নার সামনে চলে গেল। সুহৃদ হাসি-হাসি মুখে সুহাসের পানে তাকিয়ে বলল,

‘ পাপাহ। ‘

‘ ইয়েস পাপা? ‘

‘ পুপফিহ দাই। ‘

‘ ফুপি যাই ‘ বলেই খুশিতে গদগদ হয়ে হাত তালি দিল। নামী কাল থেকে তাকে শেখাচ্ছে, আমরা তোমার ফুপি বাড়ি যাব। অত্যন্ত চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে সুহৃদ। বাবার মতো ডানপিটে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এবার মায়ের মতো জ্ঞান, বুদ্ধি হলেই হয়। দু, চারকথা ভালোই বলতে পারে বাচ্চাটা। তবে কিছু স্পষ্ট কিছু অস্পষ্ট। দাদা, পাপা, মাম্মা স্পষ্টই বলে। আইয়াজ, সৌধকে মামা ডেকেছে। সুহাস যদিও চাচ্চু শেখাতে চেষ্টা করেছিল। ওর কাছে চাচ্চু কঠিন। তাই নামীর শেখানো মামাই কব্জা করে নিয়েছে। কিন্তু ফুপিটা স্পষ্ট হচ্ছে না৷ ফুপিকে পুপফিহ বলছে বারবার। এই নিয়ে গতরাতে সৌধর সে কী হাসি! সুহৃদের গাল টিপে বলেছে,

‘ কীরে ব্যাটা ফুপিকে পুপফিহ বলছিস তাহলে ফুপাকে কী বলবি পুপফা? ‘

মেজেন্ডা কালার বেনারসি পরেছে নামী। এখন মিলিয়ে কিছু গয়না পরছে। সুহাসের পরনে ফরমাল শার্ট-প্যান্ট। শার্টের ওপর স্ত্রীর শাড়ির কালারের সঙ্গে মিলিয়ে ওয়েস্ট কোট। দেখতে মারাত্মক সুদর্শন লাগছে। চোখ সরানো দায় হয়ে পড়েছে নামীর৷ তবু সরিয়ে রাখছে। নয়তো ছেলের বাবার ভাব বেড়ে যাবে। নিজেকে যতই সুদর্শন লাগুক সেসব ফিঁকে সুহাসের কাছে৷ তার কাছে আয়নার সামনে দাঁড়ানো ওই শ্যামাঙ্গিনী বধূটিই পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শনা। এই মেয়েটি জীবনে না এলে কতকিছু অজানা রয়ে যেত তার। ভাগ্যিস বাবা জোর করে মেয়েটাকে গছিয়ে দিয়েছিল। না হলে যে তার কী হতো! চাকচিক্যময় রমণীদের ভীড়ে খাঁটি সোনার নাগাল পেত না। অপলক দৃষ্টিতে নামীর পানে তাকিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে এলো সুহাস। নামী হার পরছিল গলায়৷ সে গিয়ে সাহায্য করল। বলিষ্ঠ, লম্বাটে সুপুরুষটি পেছনে দাঁড়াতেই বুক ধক করে উঠে নামীর। ধূসর বর্ণের ওই গভীর চোখ দু’টো কীভাবে দেখছে তাকে। হার পরানো শেষে ঘুরে দাঁড়াল নামী৷ কাজল কালো চোখদুটোতে হাসির ঝলক তুলে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘ কী মশাই দারুণ মুডে আছেন মনে হচ্ছে? এনিভার্সারি আপনার বন্ধুর আপনার নয় ওকে। ‘

আলগোছে ওর কোমর প্যাঁচিয়ে ধরল সুহাস। অধর কামড়ে দুষ্টু হেসে একদম নিজের কাছে টেনে নিল বউকে। চোখ রাঙিয়ে তাকাল নামী৷ ঘাড় বাঁকিয়ে দেখল সুহৃদ খেলনা নিয়ে ছুটোছুটি করছে। এদিকে তাল নেই। যাক বাঁচা গেল। নির্লজ্জ বাপের পাল্লায় পড়ে ছেলেটা কবে জানি রসাতলে যায়। বিরবির করে এসব বলতেই সুহাস ওর লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটের স্বাদ নিতে উদ্যত হয়। হাত বাড়িয়ে বাঁধা দেয় সে। বলে,

‘ আরে আজব লোক! দেখছ না লিপস্টিক দিয়েছি?’

‘ ওহহো ডার্লিং এই লিপস্টিক খেয়ে পেট ভরিয়ে ফেললেও কিচ্ছু হবে না৷ কেনার সময় জেনেশুনেই কিনেছি। ‘

‘ মানে! সিরিয়াসলি, এতটা অধঃপতন হয়েছে তোমার? দিনদিন বয়স বাড়ছে না কমছে? এক ছেলের বাপ হয়েও নির্লজ্জতা কমল না। আমার সঙ্গে বেশরম আচরণ করো ওকে ইট’স ফাইন। বউ আমি। তাই বলে কসমেটিকসের দোকানে গিয়ে তুমি এসব করবে? ‘

রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সুহাসের কলার চেপে ধরল নামী। অগ্নি চোখে তাকিয়ে ফের বলল,

‘ সত্যি করে বলো মেয়ে ছিল না ছেলে? তুমি কীভাবে কী বলে কিনেছ? ‘

মিটিমিটি হাসল সুহাস। একহাতে ওকে জড়িয়ে ধরে অপরহাতে সামনে আসা চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলল,

‘ ছেলেটা আমার বন্ধুলোক। কলেজ জীবনে ওর থেকে কসমেটিকস নিয়ে গার্লফ্রেন্ডদের গিফট করেছি। তো ফাইনালি ওর কাছে বউয়ের জন্য কিছু কিনতে গিয়েছিলাম৷ তোমারও লিপস্টিক দরকার ছিল। বাবুর জন্য সময় করে যেতে পারো না। তাই ভালো ব্র্যান্ডের এক বক্স লিপস্টিকও চাইলাম। সাথে ফিসফিস প্রশ্ন করলাম, পেটে গেলে হজম হবে তো? ও দাঁত ক্যালিয়ে হেসে বলল, ‘ এই লিপস্টিক পেটে যেতে দেরি হজম হতে দেরি নেই। ‘ ব্যস নিয়ে এলাম। বাপ্রে তোমাদের লিপস্টিকের দাম দিয়ে তো আমার সাতদিনের খরচ উঠে যাবে! ‘

সত্যি বলতে বলতে এত বেশি সত্যি বলে ফেলল যে নামী কিলগুঁতো থাপ্পড় দিয়ে ওর বুক ব্যথা করে ফেলল। তবু ছাড়ল না সুহাসে। নামী আহাজারি করল,

‘ সারাজীবন কোনো ছেলেকে কাছ ঘেঁষতে দিইনি৷ সেই আমার কপালেই এমন রোমিও জুটেছিল! ‘

সুহাসের টনক নড়ল এবার। জিভ কামড়ে ধরে ইনোসেন্ট মুখে বলল,

‘ ট্রাস্ট মি জান আমি ভালো হয়ে গেছি। এই তোমার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলছি, আমার চারধারে এক নামী আমার সুহাসিনী ছাড়া আর কোনো রমণীর অস্তিত্ব নেই। ‘

বলেই চট করে নামীর ঠোঁটে চুমু খেল সে। নামী ঠোঁট মুছে নিরাশ চিত্তে বলল,

‘ হয়েছে হয়েছে বুঝেছি আপনি আমার সাধু জামাই।
এবার ছাড়ুন রেডি হতে দিন৷ ‘

ওদের এই খুনসুটি মুহুর্তে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল সৌধ৷ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

‘ তোরা বরং থেকে যা সুহাস। আমি সুহৃদকে নিয়ে যাই।’

নিমেষে ছিঁটকে সরে গেল দুজন। সুহাস লজ্জা পেল না অবশ্য। কিন্তু নামী তীব্র লজ্জায় চোখ, মুখ অন্ধকার করে বিরবির করে বকে দিল সুহাসকে।

|চলবে|
® জান্নাতুল নাঈমা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে