ত্রিধারে তরঙ্গলীলা পর্ব-৮৭

0
1002

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৮৭|
রাত গভীর হচ্ছে। একে-অপরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে ওরা৷ গভীর রাত। সুখসুখ তন্দ্রায় যেন বিমোহিত একাত্মায় দুই শরীর৷ শ্রান্তিহর সৌধর বুকে মুখ লুকিয়ে সিমরান৷ ধীরেধীরে খিদের ভাব হয়। পেটটা চুঁইচুঁই করে৷ ঘুম ছুটে যায় আকস্মিক। সুঠামদেহী পুরুষটি তার বলিষ্ঠ একজোড়া হাত দিয়ে বউকে গভীর বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। ঘুমাচ্ছে বেঘোরে। সিমরান মাথা তুলে তাকায়৷ আশ্চর্য এক সৌন্দর্য ভর করেছে সৌধর মুখে। মানুষটা যেন কত সুখী আর তৃপ্ত। লজ্জা পায় সে। চিত্ত চনমনে হয়। সর্বাঙ্গ জুড়ে ঝনঝনে সুখ। মৃদু হাসি ফুটে ঠোঁটের কোণায়। মাথা উঁচিয়ে চুমু এঁকে দেয় স্বামীর কপালে৷ তক্ষুনি চোখ মেলে তাকায় সৌধ। ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে,

‘ চুরি করে চুমু খাওয়া খাচ্ছে? ‘

সহসা চোখ খিঁচে ফের বুকে মুখ গুঁজে সিমরান। সৌধ মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলে,

‘ মুখটা এমন ছোটো হয়ে আছে কেন! খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই? নাও উঠো। ঝটপট শাওয়ার নিয়ে নিই। তারপর নিচে গিয়ে খাবার গরম করে খাই দুজন। ‘

ত্বরিত লজ্জার ঘরে তালা মারে সিমরান। উঠতে উদ্যত হয় ঝটপট। নিমেষে আবার চুপসে যায়৷ মুখটা কাচুমাচু করে কম্বলের নিচে হাতাহাতি করে। সৌধ পাশফিরে শুয়ে মিটিমিটি হাসছে। সিমরান বেশকিছুক্ষণ হাতাহাতি করেও যখন প্রয়োজনীয় বস্ত্র পেল না। কপট রেগে গেল। বা হাত বাড়িয়ে সৌধর ঘাড়ে দিল আলতো করে এক খামচি। এরপর লজ্জা মিশ্রিত মিহি স্বরে বলল,

‘ ভালো হচ্ছে না কিন্তু। ‘

খামচি খেয়ে সৌধ প্রায় ফুঁসে উঠার মতো ফিরে তাকাল। চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে উঠে বসল। এরপর আলগোছে পিছন ঘুরে বলল,

‘লুক! এত সুন্দর সুন্দর আর্ট করার পরও মন ভরেনি? ক্লান্তি হয়নি হাত দুটো?’

সর্বাঙ্গ শিউরে উঠল সিমরানের। বিস্ময়ে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে মরার মতো থমকে রইল সে। সৌধর ফর্সা পিঠ। প্রায় পুরোটা জুড়েই আঁচড়! লাল টকটকে একেকটা আঁচড় দেখে ওর বুকের ভেতরটা টনটন করে উঠল৷ লজ্জা সব জলাঞ্জলিতে দিয়ে ভাবতে লাগল, এত সুন্দর পিঠটা সে এভাবে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে? ইশ! কিন্তু কখন কীভাবে হয়ে গেল? সৌধ ফিরে বসে সিমরানের পানে তাকাতেই দেখতে পেল, অপরাধীর ন্যায় তাকিয়ে আছে সে৷ মুখটা এত বেশি ছোটো হয়ে আছে বলার মতো না। যা দেখে শব্দ করে হেসে ফেলল ও। সিমরান মিনমিনে গলায় বলল,

‘ আমি এটা কীভাবে করলাম! এত ব্যথা দিলাম তোমায়? সরি, ভীষণ সরি। ‘

সৌধর হাসি বিস্তৃত হলো। হাত বাড়িয়ে গাল টিপে দিল সিমরানের। চেয়েছিল লজ্জায় আরো নাস্তানাবুদ করতে। কিন্তু হয়ে গেল উল্টো। মেয়েটা এত বেশি ভালোবাসে তাকে! তার প্রতি দুর্বলতার সীমানা পেড়িয়ে গেছে একদম। অজান্তে একটু ব্যথা দিয়েছে বুঝলেই মুখটা অন্ধকার করে ফেলে। বড়ো করে নিঃশ্বাস ফেলল সৌধ। হাত বাড়িয়ে সিমরানের গা থেকে কম্বল সরালো। মুহুর্তেই চোখ, মুখ খিঁচে ফেলল সে। সৌধ আর কোনোকিছু না ভেবে ওকে কোলে তুলে নিল। পা বাড়াল ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে নাজুকরূপী বউটাকে মোহনীয় স্বরে বলল,

‘ তোমার ভালোবাসার কাছে এই আঁচড় গুলো ফিঁকে বউপাখি৷ ‘

কথাটা বলেই থামল একটু। পরোক্ষণেই আবার গাঢ় স্বরে বলল,

‘ তুমি যতটা সহ্য করো তার কাছে এটুকুনি অতি নগণ্য ডিয়ার৷ ‘
.
.
মধ্যরাতে আচমকা ঘুম ভেঙে যায় ফারাহর। হাঁসফাঁস চিত্তে উঠে বসে ত্বরিত। এত্ত পিপাসা লেগেছে! এদিকওদিক মাথা ঘুরিয়ে বুঝতে পারে সে কোথায় আছে। পাশে তাকিয়ে দেখে আইয়াজ ঘুমাচ্ছে। ঘড়িতে সময় কত? সকাল হয়ে গেছে কী? মোবাইল খুঁজে সময় দেখে। সে কী! সবে দুটো বাজে? পাশেই ওয়াটার বোতল রাখা। আইয়াজই রেখেছে। সে অর্ধেক বোতল পানি খেয়ে নেয়। এরপর আলগোছে শুয়ে পড়ে আবার৷ কিন্তু ঘুম আর আসে না৷ চোখ বন্ধ করে থাকতেও ইচ্ছে করছে না। একটু পর অনুভব করল, বাবুরা নড়ছে। নিমেষে হাত চলে গেল তলপেটে। তবে কী বাচ্চারা জেগে আছে বলেই তার ঘুম ছুটে গেছে? এটাই কি মায়ের সঙ্গে বাচ্চাদের কানেকশন? অজান্তেই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেল। আবেগে টইটম্বুর হয়ে রইল তার মাতৃহৃদয়। দীর্ঘক্ষণ পর তাকাল আইয়াজের পানে। এই শ্যামলাটে মায়াবী চেহেরা দেখলেই বুকজুড়ে প্রশান্তি বয়ে যায় তার। এই ছেলেটা কত ভালোবাসে তাকে! যত্নটুকু দেখলেই শতসহস্রবার ওর বুকে মরতে ইচ্ছে করে। স্বামীর পানে অপলকভাবে তাকিয়ে ছিল ফারাহ৷ পাশাপাশি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকলেও ফারাহর স্পর্শ অনুভব করতে পারল আইয়াজ। তাই ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই হাসল মৃদু। ফারাহ সেই মৃদু হাসি দেখে হাতটা সরিয়ে নিল। একটু হাঁটতে ইচ্ছে করছে। আইয়াজ ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। বেচারাকে বিরক্ত করবে না৷ সে বরং উঠে রুমেই হাঁটাহাঁটি করবে কিছুক্ষণ। যেই ভাবা সেই কাজ। সে উঠে হাঁটতে লাগল। সময় গড়াল মিনিট পাঁচেক। টুকটুক শব্দ শুনতে পেল ড্রয়িংরুম থেকে। এত রাতে কেউ কি উঠেছে? নাহ কে উঠবে? খিদের ভাব হচ্ছিল। নামী ফলমূল সহ আরো কিছু খাবার দিয়ে গেছে৷ কিন্তু তার এসব খেতে ইচ্ছে করছে না। দুপুরের ঝালঝাল খিচুড়ির কথা মনে পড়ল। আশ্চর্য! তখন খেতে ইচ্ছে করেনি অথচ এখন খেতে ইচ্ছে করছে। কী পাগলাটে ইচ্ছে সব। আচ্ছা এগুলো কি তার টুইন বেবিদের ইচ্ছে নাকি তার? নিশ্চয়ই টুইনদের৷ তার ইচ্ছে মোটেও এমন দুষ্টু নয়৷ সে খুব ভালো মেয়ে। টুইনরা নিশ্চয়ই খুব দুষ্টু হবে৷ নয়তো তখন তার খেতে ইচ্ছে করল না। আর এই মাঝরাতে খেতে ইচ্ছে করছে কেন? আপনমনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হেসে ফেলল ফারাহ। বিড়বিড় করে বলল,

‘ তুই দুষ্টু না কে বলল ফারাহ? এই তো দিব্যি নিজের দোষ বাচ্চাদের ওপর চাপিয়ে দুষ্টুমি করছিস। ‘

ঘুমন্ত আইয়াজের পানে তাকাল সে। বাইরে কেউ উঠেছে নিশ্চিত। হয়তো তার মতোই কারো খিদে পেয়েছে। নামীকে ফ্রিজে খিচুড়ি উঠিয়ে রাখতে দেখেছে সন্ধ্যায়। সে কি বেরোবে? গিয়ে খিচুড়ি গরম করে খেয়ে নিবে? দোনোমোনো করতে করতে বেরোতে উদ্যত হলো। আইয়াজের ঘুম গভীর হলেও সে টের পেয়েছিল ফারাহ উঠেছে। এরপর অনেকক্ষণ তার পাশে নেই এও বুঝেছে। তাই আচমকা চোখ খুলে যখন বাইরে যেতে দেখল, তড়াক করে উঠে বসে প্রশ্ন করল,

‘ কোথায় যাচ্ছ তুমি? ‘

চমকে উঠল ফারাহ৷ এত্ত ভয় পেল! আইয়াজ ত্বরিত উঠে এসে ওর ঘাড়ে, পিঠে মৃদুভাবে তিনটে থাপ্পড় দিয়ে বলল,

‘ আল্লাহ! ভয় পেয়েছ কেন? ‘

‘ ঘুমন্ত মানুষ আচমকা এভাবে প্রশ্ন করলে ভয় পাবো না?’

ঠোঁট কামড়ে হেসে দিল আইয়াজ। আলতো করে জড়িয়ে ধরল বউকে। বলল,

‘ ধুরর, তুমি উঠেছ টের পেয়েই ঘুম ছুটে গেল। যাচ্ছ কোথায়? খিদে পেয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে? ঘুম আসছে না? ‘

‘ আরে বাবা একসঙ্গে এতগুলো প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর দিব? শুধু শুধু উতলা হয়ে যাও তুমি ধ্যাৎ! ‘

‘ আহা রাগ করে না। আস্তেধীরে বলো তুমি। নো প্রবলেম। ‘

আইয়াজ ছেড়ে দিল ওকে। বিছানায় গিয়ে নিজের এবং ফারাহর দুজনেরই চশমা নিয়ে ফিরে এলো। এরপর নিজের চশমাটা চোখে দিয়ে বউকেও পরিয়ে দিল। বলল,

‘ এবার বলো? ‘

‘ খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে। ‘

মুখটা কাচুমাচু করে ফারাহ এ কথা বলতেই আইয়াজ ভীষণ খুশি হয়ে বলল,

‘ওহ, এই ব্যাপার? সমস্যা কী চলো আমার সঙ্গে। নামী তো বলেই দিয়েছে কোথায় কী আছে। যখন যেটা খেতে ইচ্ছে করবে জাস্ট বলবে। ‘

হাত ধরে অতি সাবধানে ফারাহকে নিয়ে বেরোলো আইয়াজ৷

খাবার গরম করছিল সিমরান৷ পাশে সৌধ। পরনে ট্রাউজারের সঙ্গে টি-শার্ট। শীত থেকে বাঁচতে টি-শার্টের উপর জ্যাকেটও পরে নিয়েছে। একটি হাত জ্যাকেটের পকেটে৷ অপরহাতে আইফোন৷ ফেসবুক স্ক্রলিং করছে সে৷ পাশাপাশি তাকিয়ে দেখছে, সদ্য স্নান করে আসা বউটির স্নিগ্ধ মুখশ্রী। হালকা কমলা রঙের তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুলগুলো প্যাঁচিয়ে রেখেছে সিমরান। গরম জলে স্নান করলেও মধ্যরাতের শীত থেকে রক্ষা পায়নি। লাল টকটকে ঠোঁটজোড়া শুষ্ক হয়ে উঠছে। বারেবারে জিভ দিয়ে সে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে সে৷ সৌধ তাকিয়ে দেখছে। একেবারে সুক্ষ্ম, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। ব্যাক ক্যামেরায় আবার টুকুশ টুকুশ করে ছবিও তুলে রাখছে। সিমরান আড়চোখে তাকিয়ে ওর কাণ্ড দেখে বলল,

‘ যাও গিয়ে বসো, আসছি আমি। ‘

মুচকি হেসে ফোন পকেটে রেখে সৌধ বলল,

‘ কী কী নিতে হবে বলো। হেল্প করছি। ‘

খাবারদাবার নিয়ে ওরা দুজন ডাইনিং রুমে যেতেই স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। আইয়াজ, ফারাহ সবেই এসেছে৷ ফারাহকে চেয়ারে বসিয়ে আইয়াজ ফ্রিজের দিকে এগুচ্ছিল। এমতাবস্থায় অকস্মাৎ বন্ধু আর বন্ধুর বউয়ের দর্শন পেয়ে গোল গোল হয়ে গেল চোখ দুটো। সিমরানের মাথায় তোয়ালে প্যাঁচানো দেখে মুচকি মুচকি হাসতে থাকল ফারাহ। আইয়াজ ভদ্র ছেলে৷ সে একবার সিমরানকে দেখে আর তাকাল না৷ এক বন্ধুর বউ হলেও আরেক বন্ধুর বোন বলে কথা। তাই সম্পূর্ণ দৃষ্টি সৌধতেই নিবদ্ধ রাখল। ভ্রু নাচাল, চোখে ইশারা করে মাথা দুলিয়ে বোঝাল,

‘ আহারে বন্ধু ধরা পড়ে গেলা! ‘

সৌধ ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি আটকালো। আড়চোখে জড়ীভূত সিমরানকে দেখে আইয়াজকে চোখ রাঙাল। মুহুর্তেই শান্তশিষ্ট আইয়াজ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

‘ আরে তোরা! তোদেরও খিদে পেয়েছে নাকি? আমার বউ আর টুইনদেরও খিদে পেয়েছে। ‘

বলেই ফিচেল হাসল আইয়াজ। ওই হাসির রহস্য জানে সৌধ। তাই মাইন্ড ঘুরাতে এগুতে এগুতে বলল,

‘ বাহ! দারুণ তো। একসঙ্গে খেয়ে নিই চল। ‘

‘ ফারাহ খিচুড়ি খাবে আমি গরম করে আনছি ওয়েট।’

সৌধ বলল,

‘ না তুই বোস ওর পাশে। সিনু গরম করে আনুক।’

লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া সিমরান যেন হুঁশে ফিরল। গুটিগুটি পায়ে এসে হাতের খাবার গুলো টেবিলে রেখে আমতা আমতা করে বলল,

‘ আমি গরম করে আনছি। তুমি বসো ভাইয়া। ‘

আইয়াজ মাথা দুলিয়ে এসে বসল। ফারাহর মুখ থেকে মুচকি মুচকি হাসি সরছেই না৷ সিমরান প্রায় দৌড়ে পালালো ওখান থেকে। ত্বরিত মাথা থেকে তোয়ালে খুলে রান্নাঘরের একটি চেয়ারে রেখে দিল। এরপর চুলগুলো হাতে আঁচড়ে নিল যথাসম্ভব। দুরুদুরু বুকে ভাবতে লাগল, কী সর্বনাশটাই ঘটল। এমন অবস্থায় কখনো পড়তে হবে কস্মিনকালেও ভাবেনি৷ ইশ!

ফারাহ, আইয়াজ উভয়ের জন্যও খাবার গরম করল সিমরান। সৌধ এসে হাতে হাতে নিয়ে দিল সব। এরপর ওরা গল্প করতে করতে খেয়ে নিল। এদিকে চুল ভালোভাবে শুকায়নি বলে সিমরানের চুলের পানিতে পরনের সোয়েটার ভিজে একাকার। থেকে থেকে হাঁচিও দিচ্ছে। একটু চিন্তা চাপল সৌধর মনে।
জ্বর ঠান্ডা না লেগে যায়৷ সিমরানের হাঁচিতে আইয়াজ, ফারাহর দম ফাটা হাসি পাচ্ছে। বেচারি সিমরান হাঁচি গুলো আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। আর বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ছে। সৌধ অবশ্য বিব্রত হচ্ছে না৷ তার যত চিন্তা বউয়ের শরীর খারাপ হওয়া নিয়ে। খাওয়ার পাশাপাশি ভেজা চুলে বউকে লক্ষ্য করতে করতে ওর নজর পড়ল সিনুর গ্রীবাদেশে। লাভবাইটে একাকার অবস্থা। এমনিতেই আজ যথেষ্ট লজ্জায় পড়েছে। আর পড়তে চায় না৷ তাই আইয়াজ, ফারাহর অগোচরে ওড়নায় ঘাড় ঢেকে দিল। খাওয়া শেষে সিমরান পুনরায় উঠে গেল রান্নাঘরে। ফারাহও একটু হাঁটতে ড্রয়িংরুমে চলে গেছে। এই সুযোগে আইয়াজ সৌধর মুখোমুখি বসে ভ্রু জোড়া নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘ আমার পুত্রবধূ আনার ব্যবস্থা চলছে নাকি? ‘

‘ বউয়ের সঙ্গে সবে রোমান্স জমে উঠেছে এক্ষুনি ছানাপোনা আনলে চলবে নাকি? ‘

শব্দ করে হেসে উঠল আইয়াজ। সৌধর কাঁধে চাপড় মেরে বলল,

‘ ওরে আমার রোমান্সের গুরুরে। ‘
.
.
সকাল থেকেই মন আকাশে মেঘ জমল ভাইবোনের। আজ পথশিশু, অনাথ, গরিবদুঃখীদের খাওয়ানো হবে। এরপরই চলে যাবে আত্মীয় স্বজনরা। ফারাহ আর আইয়াজ আরো কয়েকদিন থাকবে অবশ্য।

নামীর ব্যস্ততা বেড়েছে খুব। ছেলেটাকেও সময় দিতে পারছে না। শুধু খাওয়ানোর সময় আর ঘুমানোর সময়ই কাছে নিচ্ছে। বাকি সময় সুহাস আর অন্যান্য সদস্যদের কাছে থাকে সুহৃদ। সারাদিন সকলেরই খুব ব্যস্ততায় কাটল। দুপুরে সবাইকে খাইয়ে ছেলে সদস্যরা চলে গেল সোহান খন্দকারের গ্রামের বাড়ি৷ গোরস্তানে গিয়ে কবর জিয়ারত করে ওদের ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। এরপর রাতের খাবার খেয়ে তাড়াতাড়িই ঘুমাতে গেল সবাই৷ সারাদিন বেশ ধকল গেছে বলা যায়। ক্লান্ত শরীরে বিশ্রাম প্রয়োজন। বেশকিছু রাত ধরেই। উহুম বেশ কিছু নয়। বলা যায়, জেনেভা থেকে ফেরার পর এ বাড়িতে যতগুলো দিন গেছে ততগুলো রাতই নামী লক্ষ্য করেছে, মধ্যরাতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায় সুহাস। আর ফেরে না৷ সকালবেলা হয় বারান্দা বা ড্রয়িংরুমে দেখা পায়। তাহলে আগরাতে কিছু সময় ঘরে কী করে? নিজেকে খুব চালাক মনে করে সুহাস৷ হয়তো ভাবে এই যে সে রোজ মাঝরাতে বেরিয়ে যাচ্ছে এটা টের পায় না নামী। অথচ প্রথমদিন থেকেই টের পাচ্ছে সে। এভাবে আর কতদিন চলবে? নাহ আর চলতে দেওয়া যাবে না৷ তাই ভাবল, সরাসরি প্রশ্ন করবে আজ। আবার ভাবল, নাহ এক্ষুনি প্রশ্ন নয়। আগে বিষয়টা পরোখ করে দেখতে হবে। আসলে সুহাস কোথায় যায় রোজ রোজ? আর ঘরে ফিরেই বা আসে না কেন? মনে মনে পরিকল্পনা করে নিয়েই আজ চোখের পাতা এক করল নামী। ঠিক সময় অনুযায়ী সুহাসও বিছানার ওপাশ থেকে উঠে বেরিয়ে গেল রুম ছেড়ে। সুহৃদ ঘুমুচ্ছে। এখন আর জাগার চান্স নেই। তাই আলগোছে ছেলের পাশ থেকে উঠে পা টিপে টিপে বেরোলো সেও। পিছু নিল সুহাসের!

|চলবে|
® জান্নাতুল নাঈমা
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
প্রিয় পাঠক, আমরা উপন্যাসের একদম শেষ পথে…। সবাই রেসপন্স করবেন। আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতেও ভুলবেন না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে