#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৭৪|
” বাহির বলে দূরে থাকুক, ভিতর বলে আসুক না।
ভিতর বলে দূরে থাকুক , বাহিরে বলে আসুক না।
ঢেউ জানা এক নদীর কাছে, গভীর কিছু শেখার আছে। সেই নদীতে নৌকো ভাসাই, ভাসাই করে ভাসাই না। না ডুবাই না ভাসাই, না ভাসাই না ডুবাই
জল ডাকে, আগুনও টানে আমি পড়ি মধ্যিখানে।
দুই দিকে দুই খন্ড হয়ে যায় আবার যায়না, না নিভায় না জ্বালায় না জ্বালায় না নিভায়। বাহির বলে দূরে থাকুক, ভিতর বলে আসুকনা। ভিতর বলে দূরে থাকুক, বাহিরে বলে আসুকনা….। ”
—————-
আজ রবিবার। ভোর পাঁচটা। আব্রাম হক অ্যালেন রকিং চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বুজে আছে। শুনছে বাংলাদেশের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পি হাবিব ওয়াহিদ এবং ন্যান্সির গাওয়া গান। সে ইংলিশ গান, মুভির ভক্ত হলেও বাংলা গানের প্রতি আসক্তি জন্মেছে নামীর কারণে। মেয়েটা বেশ দারুণ গায়। এ সম্পর্কে অবগত হয়েছে জেনেভায় আসার পর পরই। অ্যালেনের স্ত্রী উইরা একজন প্যারালাইজড পেশেন্ট।
কাজের সূত্রে অ্যামেরিকায় নানার বাসায় গিয়েছিল অ্যালেন। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল একমাত্র কন্যা অ্যারিনকে। যার বয়স মাত্র ছয় বছর৷ অ্যালেনের নানা আর নামীর বাবা প্রতিবেশী। পাশাপাশি ফ্ল্যাট তাদের। সেই সুবাদে অ্যারিনের মাধ্যমেই নামীর সাথে প্রথম পরিচয় হয়৷ দীর্ঘ কয়েকটি মাসে যা বন্ধুত্বে রূপ নেয়। বন্ধুত্ব গাঢ় হয়ে ওঠে নামীর ডেলিভারির সময়। আখতারুজ্জামান বাসায় ছিল না। আকস্মিক পেইন ওঠে নামীর। সৎ মা আলেয়া তখন পাশের ফ্ল্যাটের অ্যালেনের সাহায্য নেয়। হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হয় নামীকে। এরপর বাচ্চা দুনিয়াতে আসে। টানা কয়েকটি দিন সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে অ্যালেন। নিঃসন্দেহে উদার মনের অধিকারী লোকটা। আর প্রচণ্ড বন্ধুসুলভ৷ গাঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে প্রায়শই অ্যালেন আর নামী নিজেদের সুখ, দুঃখের গল্প করত। একদিন নামীর ভীষণ মন খারাপ দেখে অ্যালেন জেরা করে। নামী মন খারাপ হওয়ার পেছনের ঘটনা বলতে না চাইতেও বলে ফেলে। বয়সে বড়ো হবার সুবাধে অ্যালেনকে ভাইয়া বলেও সম্বোধন করে সে,
‘ ভাইয়া, আমি বাংলাদেশে ফিরে যাব৷ আমার এখানে আসা উচিত হয়নি। বোঝা উচিত ছিল, আমার মা নেই। বাবা তার দ্বিতীয় স্ত্রী আর সে ঘরের বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত। এটাও বোঝা উচিত ছিল, যেদিন সে দ্বিতীয় বিয়ে করে, আর যেদিন আমাকে পাত্রস্থ করে দেয় সেদিন থেকেই সে আমার পর হয়ে গেছে। এখন যতটুকু সম্পর্ক স্রেফ দায়িত্ব, ভালোবাসা নয়। ‘
অ্যালেন নিশ্চুপ বসে সবটা শুনে। বারকয়েক শ্বাস নিয়ে নামী বলে,
‘ আমি এখানে এসে শুধু আমার মানসিক বিপর্যয়ই ঘটাইনি। ক্যারিয়ারটাও নষ্ট করেছি। ছোটো বাচ্চা নিয়ে কোনদিক সামলাবো বুঝতে পারছি না। স্বামীর ঘর ছেড়ে আসায় বাবা আর তার দ্বিতীয় পরিবার আমার প্রতি প্রচণ্ড রুষ্ট এটাও বুঝতে পারছি। ‘
‘ ফিরে যাবে তোমার হাজব্যন্ডের কাছে? ‘
‘ না, আমি জাস্ট বাংলাদেশে ফিরতে চাই। ‘
‘ আসল সমস্যাটি কী নামী? ‘
‘ সমস্যা আমারি। আমি সবার কাছে প্রপারলি রেসপেক্ট চাই, ভালোবাসা চাই। এটাই আমার অপরাধ। ‘
‘ তোমার ফ্যামিলি তোমাকে এটা দিচ্ছে না? ‘
‘ হয়তো তারা তাদের মতো করে দিচ্ছে। আমারি গায়ে লাগছে না। ‘
‘ ক্লিয়ার করে বলবা? ‘
‘ আসলে আমার যে জমজ দু’টো ভাই আছে। আবির আর আলিফ। কিছুদিন ধরে ওরা আমাকে দেখলেই গলা ছেড়ে কান্নাকাটি শুরু করে। ওদের বুঝিয়েও থামানো যায় না৷ তাই সেদিন বাবা বলল, আমি যেন ওদের থেকে দূরে থাকি। বিষয়টা আমার সম্মানে লেগেছে। খটকাও লেগেছে হঠাৎ বাচ্চা দু’টোর আচরণে। তাই গতকাল ওদের মা যখন শাওয়ারে যায়, আমি দু’টো চকলেট বক্স দু’জনের হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করি, তোমরা আমাকে দেখে চিৎকার করো কেন? কী করেছি তোমাদের? ওরা চকলেট পেয়ে ভীষণ খুশি হয়ে বলে দেয়, ওদের মা বলেছে আমি ভালো মানুষ নই৷ এখানে এসেছি ওদের খামচি দিয়ে ব্লাড বের করতে। ওরা দু’জনই রক্ত খুব ভয় পায়। তাই এই ভয়টাই দেখিয়েছে। সবটা শুনে ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘরে ফিরে যাই। আর বুঝতে পারি, সৎ মা সৎ মা’ই হয়৷ সে কখনো আপন হতে পারে না। আমার হাজব্যন্ডের আলাদা কোনো মুখোশ ছিল না৷ সে অনেস্ট। আমার সঙ্গে যা করেছে সেটাও হুঁশ জ্ঞান রেখে করেনি। আমি জানি প্রখর বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন পুরুষ সে নয়। তবু সেদিন আত্মসম্মান আর আবেগে আঘাত লাগে। কঠিন জেদ, অভিমান নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে আসি৷ আমার ওকে ছাড়াটা ভুল না হলেও জেদকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়া ভুল হয়েছে। আমার বোঝা উচিত ছিল আমার ওপর শুধু আমি একা নির্ভরশীল নই। একটা ছোট্ট প্রাণও সম্পূর্ণভাবে আমাতে নির্ভরশীল। আমার সৎ মাকে আমি আগে থেকেই পছন্দ করতাম না৷ কেন জানি ফেইক ফেইক লাগত। এখন হারে হারে টের পাচ্ছি, সে পুরোটাই মুখোশধারী। খুবই তীক্ষ্ণ ষড়যন্ত্র করেছে আমার বিরুদ্ধে। এসব জানার পরও কী করে থাকব এখানে? সম্ভব না। ‘
অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে অ্যালেন বলে,
‘ উনি এসব মিথ্যা কেন বলেছে? মজা করে? ‘
মলিন হাসে নামী। বলে,
‘ বাঙালি রমণীদের এই রাজনীতি আপনি বুঝবেন না অ্যালেন ভাই। ‘
নামীর চোখ দু’টো ভীষণ বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। অ্যালেন ব্যথিত হয়ে বলে,
‘ ওদেশ থেকে মানসিক শান্তির আশায় এদেশে এসে আরো বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছ। এভাবেই ফিরে যাওয়া ঠিক হবে? আই নো দ্যাট তুমি ভীষণ লড়াকু মেয়ে। তাই তুমি যদি এভাবে হেরে ফিরে যাও বিষয়টা আমি মেনে নিতে পারব না৷ সেদিন তো বললে সুইজারল্যান্ড তোমার স্বপ্নের দেশ, প্রিয় দেশ। চলো তবে আমার সঙ্গে। জেনেভাতে কিছুকাল কাটিয়ে মাইন্ড ফ্রেশ করে তারপর বাংলাদেশে ফিরে যেও। ‘
‘ আমি আর্থিক অস্বচ্ছলতায় ভুগছি ভাইয়া। এ মুহুর্তে সেটা সম্ভব হবে না। ‘
‘ কেন হবে না? তুমি একজন ইন্টেলিজেন্ট ডক্টর। আর্থিক অস্বচ্ছলতা দূর করা তোমার বা হাতের খেল। ‘
অবাক হয়ে তাকিয়ে রয় নামী৷ অ্যালেন দেখায় আশার আলো। ফলশ্রুতিতে নামী সিদ্ধান্ত নেয় তার সঙ্গে জেনেভাতে যাওয়ার। এরপর অ্যালেনের সহায়তায় ট্যুরিস্ট ভিসায় জেনেভায় আসে। এখানে আসার পর মুখোমুখি হয় আরেক বিপত্তির। অ্যালেনের প্যারালাইজড স্ত্রী উইরা খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয়। কারণ স্বামী অ্যালেন অ্যামেরিকায় বেড়াতে গিয়ে ফেরার পথে বাচ্চা সহ এক যুবতী নারীকে সঙ্গী হিসেবে নিয়ে এসেছে। পৃথিবীর কোনো নারী কি এ দৃশ্য সহ্য করতে পারে? পারে না। পারেনি অসুস্থ উইরাও। ফলে তার অসুস্থতা আরো বৃদ্ধি পায়। শশুর, শাশুড়ি, স্বামী আর ছয় বছর বয়সী কন্যা অ্যারিন। কারো সাধ্য হয়নি তাকে সামলানোর। উইরার ধারণা তার অসুস্থতার সুযোগ নিচ্ছে অ্যালেন৷ নেবে নাই বা কেন? অ্যালেনের বয়স সবেমাত্র আটত্রিশ৷ আর তার বয়স চল্লিশ পেরিয়ে একচল্লিশে পড়েছে। শুধু তাই নয় একটি মেয়ে বাচ্চার জন্ম দিয়ে সুখী সংসার গড়ে তোলার আগেই দেহের বাম অংশ প্যারালাইজড হয়ে গেছে উইরার৷ নিজের চেয়ে জুনিয়র এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল সে। মাখোমাখো প্রেম, ভালোবাসা, সুখ। কোনোকিছুর কমতি ছিল না৷ তাদের সুন্দর, স্বাভাবিক সম্পর্ক আর সুখী সংসারে আকস্মিক বজ্রপাত ঘটে। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ ঘুমের ঘোরে স্ট্রোক করে উইরা। এরপর দেড়টা বছর চলে গেল। বিছানা আর হইল চেয়ারেই দিন, রাত কাটায় সে। শরীরের একাংশ অবশ থাকলেও মন, মস্তিষ্ক পুরোপুরি সবল। তাই প্রিয়তম স্বামীকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে এই নারী৷ যদি মন ঘুরে যায়? পৌরুষ চাহিদার কাছে যদি হেরে যায় অ্যালেনের পুরুষালি হৃদয়ের নিগূঢ় ভালোবাসা?
অ্যালেন খুবই কর্মনিষ্ঠ মানুষ। কাজের সূত্রেই দেশ, বিদেশ ঘুরে বেড়ায়। নারী সঙ্গের দোষ কোনোকালেই ছিল না৷ তাই আকস্মিক নামীকে নিয়ে আসাতে হজম করতে পারেনি উইরা৷ দোষ নামী বা অ্যালেনকেও দেয়নি। নিজের অক্ষমতার প্রতি নিজেই রুষ্ট হয়েছে। চেয়েছে নিজেকে কঠিনভাবে আঘাত করতে। কিন্তু যখনি অ্যারিনের নিষ্পাপ মুখটা দেখেছে দমে গেছে। আর সমস্ত ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে অ্যালেনের ওপর। উইরার অবস্থা দেখে, অ্যালেনের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করে
প্রচণ্ড লজ্জায় পড়ে গিয়েছিল নামী। আত্মসম্মানেও আঘাত লেগেছিল খুব। তাই সকলের সম্মুখেই ঘোষণা দিয়েছিল, সে যতদ্রুত সম্ভব চলে যাবে। উইরা বাংলা বুঝে না। তাই ইংরেজিতে বুঝিয়েছিল,
” দেখুন আমি বিবাহিতা। আমার একটি মিষ্টি বাচ্চা আছে৷ পেশায় আমি একজন ডক্টরও। জেনেভাতে বেড়াতে এসেছি। জাস্ট কয়েক মাসের জন্য। অ্যালেন ভাইয়ার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে অ্যামেরিকায়, আমার বাবার বাসাতে। সুইজারল্যান্ড আমার স্বপ্নের দেশ। ইচ্ছে ছিল জীবনে কখনো না কখনো এ শহরে ঘুরতে আসব৷ কিন্তু আমি ফিনান্সিয়াল ইনসল্ভেন্সিতে ভুগছিলাম। আসা যাওয়ার খরচ থাকলেও ছোটো বাচ্চা নিয়ে দীর্ঘদিন এখানে থাকার মতো অর্থ নেই৷ বাবার সঙ্গে মনোমালিন্য চলায় তার থেকেও কিছু নেয়ার আগ্রহ ছিল না৷ অ্যালেন ভাইয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিল। তাই কথার ছলে অ্যালেন ভাইয়াই বলল, এ শহরে তার দু’টো হসপিটাল রয়েছে। আমি চাইলে সুইজারল্যান্ড আসতে পারি। যতদিন থাকব সপ্তাহে দু’দিন করে তার হসপিটালে বসলে যা সম্মানী দেবে এতে সবটা কভার হয়ে যাবে৷”
অ্যালেনকে শ্রদ্ধাভরে ভাইয়া সম্বোধন এবং প্রফেশন সম্পর্কে জেনে উইরার বিচলিত ভাব দূর হয়৷ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নামীর পানে৷ স্পষ্ট ইংরেজিতে প্রশ্ন করে,
‘ প্রফেশনের ডিটেইলস জানতে চাই। শুধু ডক্টর বললেই বুঝব কী করে? ডক্টরদেরও ভাগ আছে।’
মৃদু হেসে নামী বলে,
‘ এ ফিজিসিয়ান ওর সার্জন কোয়ালিফায়েড টু প্রাকটিস ইন জিনেকোলজি। ‘
নামীর স্নিগ্ধ মুখের অমায়িক হাসি, দৃঢ়তা পূর্ণ একজোড়া চোখ আর সাবলীল কণ্ঠস্বর শুনে উইরা মুগ্ধ হয়ে যায়। এটুকু একটা মেয়ের দাম্ভিকতা, আত্মসম্মান বোধ আকর্ষণ সৃষ্টি করে মনে৷ নিমেষে সকলকে অবাক করে দিয়ে এক হাত তুলে হাতজোড় করে ক্ষমা চায় উইরা। অ্যালেনের দিকে তাকিয়ে সরি বলে। অ্যালেন যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। উৎফুল্ল দু’টি চোখ নিয়ে তাকায় নামীর পানে। নামী তবু তাদের বাসায় থাকতে রাজি হয় না৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত থেকে যায় উইরা, অ্যারিন আর নিজের সন্তানের জন্য। বাচ্চাটাকে নিয়ে অবিরাম ছুটোছুটি না করাই শ্রেয়। যতটুকু হয়েছে যথেষ্ট। নামী থেকে যায়। ছোট্ট অ্যারিন আর তার প্যারালাইজড মায়ের সঙ্গে সময় কাটায়। নামীর সঙ্গ পেয়ে উইরার মানসিক বিকাশে উন্নতি ঘটতে শুরু করে। নামীর মুখে বাংলাদেশের গল্প শুনে উইরা। ইউটিউব ঘেঁটে বাংলাদেশের দর্শনীয় কিছু স্থান সম্পর্কেও জানে৷ এভাবে একদিন নামীর পছন্দ সই কিছু বাংলা মুভি দেখা হয়। শোনা হয় হাবিব ওয়াহিদ নামক কণ্ঠশিল্পির গানও। বাংলা ভাষা বুঝে না উইরা। তবু গানের সুর গুলো তাকে টানে। এ জন্য মাঝে মাঝেই নামী তাকে গান শোনায়। এভাবেই একদিন নামীর কণ্ঠে গান শোনা হয়ে যায় অ্যালেনেরও। তার পূর্ব পুরুষদের জন্মস্থান বাংলাদেশে৷ দাদা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে অ্যামেরিকায় এসে ফরাসি এক মেয়ের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। যার বাসস্থান জেনেভা শহরে। এরপর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা৷ পার্মানেন্টলি দেশে ফেরা হয়নি আর৷ জেনেভাতেই সেটলড করেছে দাদা। এছাড়া অ্যালেনের মা অ্যামেরিকান নাগরিক। বাবা জেনেভা শহরের নাম করা বিজনেস ম্যান৷ সেই সুবাদে আব্রাম হক অ্যালেনও বিজনেস ম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। অ্যালেন যেহেতু বাংলা ভাষা বুঝে তাই চটজলদি প্রেমে পড়ে যায় নামীর কণ্ঠে গাওয়া এই গানটির৷ এরপর থেকে প্রায় রোজই তার দিনের শুরু ঘটে একটি বাংলা গান শুনে।
.
পরিচিত গানের সুর তন্দ্রাচ্ছন্ন রমণীর কর্ণে শিহরণ জাগালো। সহসা কেঁপে ওঠল মৃদুভাবে। ঘুম ছুটে গেল। ত্বরিত আড়মোড়া ভেঙে ওঠে বসল নামী। ভাবল, অ্যালেন আজো ঘুম থেকে ওঠে বাংলা গান শুনছে? নিমেষে গানের কথা গুলোতে হারিয়ে গেল যেন৷ বর্তমানে তার হৃদয়ে চলা অনুভূতি গুলোকেই ছন্দে ছন্দে বুনছে কেউ। ক্ষণকাল পেরুলে গান থেমে যায়। নামীরও হুঁশ ফেরে। বুকের ভেতর ধুকপুক শুরু হয়। আজ যে রবিবার। তার হসপিটালে যাওয়ার দিন৷ নিশ্চয়ই সুহাস আর সৌধ ভাইয়া আসবে? হৃৎস্পন্দনে চঞ্চলতা বাড়ল নামীর। দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকাল সুহৃদের পানে। মুহুর্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠল। ঘুমুঘুমু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুহৃদ। তার হাসিতে তাল মিলিয়ে ফোকলা দাঁতে হাসল কিঞ্চিৎ। নামীর হৃদয় বিগলিত হলো। আবেগে টইটুম্বুর হয়ে টলমল দৃষ্টিতে এগিয়ে গিয়ে ছেলের কপালে চুমু এঁটে বলল,
‘ আমার পাপাটা ওঠে গেছে! মনটা খুব খুশি খুশিও লাগছে। ঘটনা কী সুহৃদ বাবা, কোন বেয়ানের মেয়েকে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙিয়েছ আজ? ‘
ছেলের সাথে খুনসুটিতে মেতে ওঠল নামী। তার ছেলেটা হাতে পায়ে ভীষণ ছটফটে হলেও এখন পর্যন্ত মুখে কোনো বুলি আওড়ায়নি। খিদে বা ব্যথা পেলে কাঁদে। কিছু নিয়ে খুশি হলে হাসে৷ এটুকুই। সবে ন’মাস চলছে বলে খুব একটা চিন্তিতও নয়। তবে সে অনেকের কাছে শুনেছিল, বাচ্চারা স্পষ্ট না হলেও আধো ভাবে ছ’মাস পর থেকে মা, বাবা ডাকা আরম্ভ করে। যদিও ডাক্তারি বিদ্যা অন্য কথা বলে। তবু মায়ের মন তো৷ খচখচ করেই। নামীরও করছিল। সে যেন বাচ্চার মুখ থেকে মা ডাক শুনতে মরিয়া হয়ে ওঠেছিল। সব সময় কাছে নিয়ে মা মা বলত। কিন্তু সুহৃদ সেদিকে পাত্তা দেয় না৷ সে তার মতো করেই থাকে৷ একদিন অভিমান করে তাই মোবাইল ঘেঁটে সুহাসের অনেক ভিডিয়ো, ছবি দেখিয়ে বলে,
‘ দেখো এটা তোমার বেআক্কল পাপা। পাপাকে ডাকো তো। ‘
আশ্চর্য হলেও সত্যি সেদিন সুহৃদ কী বুঝেছিল কে জানে? মায়ের কথা বলার ভঙ্গি আর ছবিতে হাঁটা, চলা করা দুষ্ট মতোন অচেনা লোকটাকে দেখে খিলখিল করে হেসে ওঠেছিল। যে হাসিটা আত্মা শীতল করে দিয়েছিল নামীর। এরপর থেকে বেশ কয়েকদিন সুহাসের বিভিন্ন রকম ভিডিয়ো, ছবি দেখিয়েছে সুহৃদকে৷
দু’দিন আগে লেকের দিকে সুহৃদকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিল অ্যালেন। ফেরার পর শুনেছে সুহৃদের মুখে নাকি অস্পষ্ট ভাবে পাপা ডাক শোনা গেছে কয়েকবার৷ নামী বিশ্বাস করেনি৷ তবে বিস্মিত হয়েছে। কীভাবে সম্ভব? অবিশ্বাসটা গাঢ় হয়েছে সুহৃদের মুখে কোনো প্রকার বুলি না শুনে। পাপা তো দূরে থাকুক। যদি সত্যি এমন শব্দ বলে থাকত তার সামনে একবারো বলল না কেন? যতই সে সুহাসের ভিডিয়ো দেখাক, ছবি দেখাক। ন’মাস বয়সের বাচ্চা কীভাবে মনে রাখবে? যদিও বাচ্চাদের ব্রেইন অনেক বেশি শার্প হয় তবু নামী মানতে নারাজ। কারণ, আটমাস পেটে রেখে নয় মাস লালন করার পর ছেলের প্রথম বুলি পাপা হোক চায় না সে৷ সুহাসের প্রতি হিংসেয় বুক ভরে ওঠে ঠিক এ জায়গাতেই। ক্ষণে ক্ষণে মুখও বাঁকায়। কক্ষনো তার সুহৃদ এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে না৷ সুন্দর হৃদয়ের ছেলে তার। এমন পাক্কা দুষ্টুমি করতেই পারে না।
সুহাস, সৌধ দু’জনই জেনেভাতে এসেছে। জানে নামী। ওদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুতও করে নিয়েছে। যখন জানতে পেরেছিল, সুহাস অ্যামেরিকায় যাবে। তখন তার রাগটা গাঢ় হয়। অ্যালেনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠার খাতিরে সুইজারল্যান্ডে চলে আসারও সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সুইজারল্যান্ড আসার পর যখন জানতে পারে সুহাস বদ্ধ উন্মাদ হয়ে জেনেভাতেই আসছে। তখন আর রাগটা প্রগাঢ় করতে পারেনি৷ শুধু অভিমান গাঢ় হয়েছে। সুহৃদকে ভাগ্যবান মনে হয়েছে। মনে মনে আবার শান্তিও পেয়েছে। সুহাসের মাঝে পারফেক্ট স্বামী না দেখলেও পারফেক্ট বাবার আভাস পেয়ে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নামী। ভাবে এত কাঠখড় যখন পোহাচ্ছে। একটা ফয়সালা তো হওয়াই উচিত। ঝুলে থাকা সম্পর্ক কারোরই কাম্য নয়৷ হয় এসপার নয় উসপার। বাবা ছেলের কাছে অতি সহজে আসতেই পারে৷ কিন্তু ছেলের মা অব্দি আসা এত সহজ নয়। যদি তাই হতো দীর্ঘ এক বছর পাঁচ মাস যুদ্ধ করত না সে। শ্বাসরুদ্ধকর ভাবনা গুলো ভাবতে ভাবতে সুহৃদকে নিয়ে বেরুবার সিদ্ধান্ত নিল। ভোরের স্নিগ্ধ, কোমল পরিবেশে স্বচ্ছ শহরে বেবি নিয়ে হাঁটাহাঁটি করার মজাই আলাদা। জেনেভা আসার পর রোজ সকালে এই অভ্যাসটা গড়ে তুলেছিল ডক্টর. নামী রহমান। আকস্মিক সিদ্ধান্তটি আতঙ্ক ছড়াল মনে। ডিসেম্বর মাস। শীতের প্রকোপ বেশি। এই ভোরবেলা স্নো পড়ে জেনেভা শহরের সৌন্দর্য অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে৷ সুহৃদকে নিয়ে দূরে থাক। এ মুহুর্তে তার নিজেরই বেরুনো উচিত হবে না। গত কয়েকটি সপ্তাহ অ্যালেন তাকে বেরুতে দেয়নি। সুহৃদকে একদম নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসে মানুষটা৷ মারাত্মক পজেসিভ! সুহৃদও অ্যালেন মামাকে ভীষণ পছন্দ করে। করবে নাই বা কেন? জন্মানোর পর নার্স তো প্রথম অ্যালেনের কোলেই দিয়েছিল সুহৃদকে। অ্যালেন যেমন নামীর প্রিয় বন্ধু। সুহৃদেরও এ পৃথিবীতে মায়ের পর প্রথম বন্ধু।
.
.
বাবার বাড়িতে বাবার কাছে এসেছে সিমরান। বাবা, মেয়ে মিলে ভীষণ উদগ্রীব হয়ে আছে। সকালবেলা সৌধ ফোন করে বাবার কাছে আসতে বলেছিল তাকে। কারণ, আজ নামীর সঙ্গে দেখা করার পর সে ভিডিয়ো কল করবে৷ দেখা করাবে নামী আর ক্ষুদে সদস্যটির সঙ্গে। সেই উত্তেজনাতেই দুপুরের খাবার খেয়ে সোহান খন্দকার আর সিমরান অপেক্ষা করছে। সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের সময় চার ঘন্টা এগিয়ে৷ তাই ওদের অপেক্ষার প্রহর বাড়তে লাগল। এদিকে দশটা থেকে হসপিটালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সৌধ, সুহাস৷ সময় গড়াতে গড়াতে দুপুর আড়াইটা৷ এমন সময় সহসা একটি অচেনা নাম্বার থেকে ফোন পেল সৌধ৷ নিমেষে চোখে, মুখে দীপ্তি ছাড়িয়ে পড়ল। ঠিক এই ফোন কলটারই অপেক্ষা করছিল ওরা৷ নিধি গতকাল রাতে জানিয়েছিল, সঠিক সময়ে ঠিক নামী ফোন করবে তোকে৷ ধাতস্থ হয়ে ফোন রিসিভ করল সৌধ। সুহাস প্রায় লাফিয়ে কাছে এসে কান পেতে দিল ফোনে। শান্ত, শীতল, মিষ্টি সেই কণ্ঠটা শুনতেই বুকের গভীরে কম্পন ধরল সুহাসের। ঠিক ষোল মাস পর নামীর ভারিক্কি কণ্ঠ শুনে হৃদয়টা ঠান্ডা হয়ে গেল। যেন ষোল মাস নয় ষোলটা যুগ পর প্রিয়তমার কণ্ঠ শুনল সে। ফোন কেটে দিল সৌধ। আকস্মিক সুহাসকে জড়িয়ে ধরে উত্তেজিত গলায় অভিনন্দন জানালো,
‘ কংগ্রাচুলেশনস দোস্ত, নামী আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ঠিকানা |******| ‘
.
|চলবে|
®জান্নাতুল নাঈমা
#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৭৫|
ধবধবে সাদা রঙে ঘেরা একটি আলিশান বাড়ি। চারপাশের ভূমি গাঢ় সবুজ, কৃত্রিম ঘাসে সজ্জিত। গাড়ির ভেতর থেকে এ পর্যন্ত দেখে ধীরেসুস্থে নেমে দাঁড়াল সৌধ। সুহাসকে ইশারা করল চটজলদি বেরুতে। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটাচ্ছে সুহাসের। উত্তেজনায় তলপেট মুচড়ে, মুচড়ে ওঠছে। চোখ, মুখের অবস্থা নাজেহাল। কণ্ঠনালি ক্ষণে ক্ষণে নীরস হচ্ছে। হৃৎস্পন্দন চলছে বিদ্যুৎ গতিতে। সৌধর ইশারা পেয়ে ধাতস্থ হলো। সচেতন ভাবে এক ঢোক গিলে নেমে দাঁড়াল গাড়ি থেকে। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল ঝকঝকে, চকচকে আকর্ষণীয় বাড়িটায়। নিমেষে বুকের ভেতর হুহু করে ওঠল। আচমকা একটি হাত চলে গেল বুকের বা’পাশে। কী ভয়ানক ভাবে লাফাচ্ছে হৃৎপিণ্ডটা! নিজেকে আর স্থির রাখতে পারল না সুহাস। অদৃশ্য কোনো এক সুতোয় যেন বাঁধা পড়ল তার সমস্ত সত্তা। সৌধকে রেখেই কোনোদিকে না তাকিয়ে তরান্বিত হয়ে এগিয়ে গেল।
সৌধ বুঝতে পারল ওর অনুভূতি। তাই কিছু না বলে নিজেও ছুটে গেল। যেতে যেতে বাড়ির চারপাশটায় নজর বুলালো সুক্ষ্ম ভাবে। সম্মুখের একপাশ জুড়ে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম পশুপাখির মূর্তি, নাম জানা এবং না জানা অনেক ফুল গাছের সমাহার। আরেক পাশে পাশাপাশি দু’টো দোলনা, রাজকীয় একটি ডিভান আর সুইমিং পুল। এ বাড়ির মালিক ভীষণ রুচিশীল। বাড়ির সম্মুখে ছোটোখাটো, স্বচ্ছ, সুন্দর, আকর্ষণীয় পার্ক দেখে বাড়ির সদস্যদের প্রতি মনে মনে ইতিবাচক ধারণা করল সৌধ। ওরা দু’জন যখন সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপবে ভাবল ঠিক সেই মুহুর্তেই দরজাটা খুলে গেল। বেরিয়ে এলো, ধবধবে ফরসা দেহের বলিষ্ঠ এক পুরুষ। সৌধ, সুহাস দু’জনই থমকানো দৃষ্টিতে তাকাল। সম্মুখের পুরুষ লোকটি চোখে মুখে দীপ্তি ফুটিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল সুহাসের দিকে। বলল,
‘ হ্যালো, আই এম আব্রাম হক অ্যালেন। নামী’স বেস্ট উইশার। ‘
স্তম্ভিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত বাড়াল সুহাস। অ্যালেন হাত মিলিয়ে সৌধর দিকেও হাত বাড়াল। সুহাস পলকহীন অ্যালেনকে দেখতে লাগল। ঢোক গিলল নীরস গলাটা ভেজাতে। ওর হৃৎস্পন্দন এবার থমকে আছে। কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে মস্তিষ্ক। কুর্ণিশ শেষে ওদের দু’জনকে ভেতরে নিয়ে গেল অ্যালেন৷ সৌধ সুহাসের পেটে কনুই দিয়ে গুঁতা দিল। নিচু স্বরে বলল,
‘ ভেড়ার মতো মুখ করে না থেকে মানুষের মতো থাক। নিজের বউ বাচ্চার কাছে আসছিস। আব্রাম হক অ্যালেনের না। ‘
সৌধর এহেন কথায় যেন সম্বিৎ ফিরে পেল সুহাস। শরীরটা ঝাঁকি দিয়ে ওঠল৷ নিমেষে উথাল-পাতাল শুরু হলো বুকে। নামী কোথায়? তার সন্তান কোথায়?
ওরা ভেতরে প্রবেশ করলে ড্রয়িংরুমে দু’জন ভদ্রমহিলা আর একটি ছোটো বাচ্চা মেয়েকে দেখতে পেল। ভদ্রমহিলাদের মধ্যে যার বয়স কম সে হুইলচেয়ারে বসা। অ্যালেন তাদের দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দিল,
‘ আমার মা আর স্ত্রী উইরা। ‘
অ্যালেনের চেহেরায় বাঙালির চিহ্ন বলতে ওই চোখ দু’টোই। গায়ের রঙ ধবধবে সাদা, চুল গুলোও ব্রাউন কালার। তাই বাংলা বলাতে বিস্মিত হয়েছিল সৌধ, সুহাস। সেই বিস্ময় কাটিয়েছে অ্যালেন নিজেই৷ সগর্বে জানিয়েছে তার শরীরে বাঙালির রক্ত বইছে। অ্যালেনের বয়সটা ঠিক আঁচ করতে পারছিল না ওরা দু’জন৷ কিন্তু স্ত্রীর পরিচয় পেয়ে বুঝতে পারল ভদ্রলোক তাদের থেকে ঢের সিনিয়র। স্বস্তি পেল সুহাস। অ্যালেন বিবাহিত। হাঁপ ছেড়ে যেন বাঁচল ছেলেটা। এরপর অ্যালেন অ্যারিনের সঙ্গে পরিচয় করানোর পূর্বেই গুটিগুটি পায়ে অ্যারিন সামনে এসে দাঁড়ায়। দু-হাত কোমরে রেখে পিটপিট করে তাকিয়ে সৌধ, সুহাসকে দেখে নিয়ে অ্যালেনকে প্রশ্ন করে,
‘ পাপা, হুইচ ওয়ান ইজ সহৃদ’স ফাদার? ‘
সৌধর চোখ দু’টো ছোটো ছোটো হয়ে গেল। ভাবল, সুহাসের ছেলের নাম তাহলে সুহৃদ? চমৎকার! সুহাস স্তম্ভিত! সুহৃদ? তাদের ছেলের নাম সুহৃদ রেখেছে নামী? মেয়ের প্রশ্নে অ্যালেন স্মিত হাসে প্রথমে সৌধ, সুহাসকে বলে,
‘ আমার একমাত্র মেয়ে অ্যারিন হক। ‘
এরপর অ্যারিনকে ইংরেজিতে বলে,
‘ তুমি দু’জনকে দেখে চিহ্নিত করো তো পাপা কোনটা সুহৃদের পাপা? ‘
ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল অ্যারিন৷ দু’জন আংকেলই ভীষণ স্মার্ট। সুহৃদও স্মার্ট বেবি। তাহলে সে বুঝবে কী করে কোনটা ওর পাপা? অ্যারিন চিন্তায় মশগুল। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখছে সৌধ, সুহাসকে। অ্যালেন ওদের বসতে বলল। সৌধ বসলেও সুহাস বসল না। সে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
‘ নামী? ‘
সুহাসের অস্থিরতা আর চোখ দু’টো দেখে অ্যারিন হঠাৎ চ্যাঁচিয়ে ওঠল৷ হাত তালি দিতে দিতে বলল,
‘ সুহৃদ’স ফাদার! ‘
অ্যালেন মৃদু হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ টিপ্পু মাসিকে বলো, সুহৃদকে নিয়ে আসতে। ‘
সুহাসের বুকের ভেতর ধড়াস করে ওঠল। অ্যালেনের মা চলে গেল, গৃহকর্মীদের অতিথি আপ্যায়নে তাড়া দিতে। সুহাসের অবস্থা তখন বিধ্বস্ত প্রায়। সৌধ টের পেল অত্যাধিক উত্তেজিত হওয়ার ফলে ওর নিঃশ্বাস আঁটকে আসছে। তীব্র শীতেও ওর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম৷ এক পর্যায়ে শরীরে জড়ানো শীতের পোশাকটা খুলে ফেলল সুহাস৷ বন্ধুর অবস্থা দেখে সৌধ আর চুপ থাকতে পারল না। অ্যালেনকে জিজ্ঞেস করল,
‘ মিস্টার অ্যালেন, নামী কোথায়? ‘
সৌধর এ প্রশ্নে অ্যালেনের মুখে হাসি বিলীন হয়ে গেল। অচঞ্চল পায়ে এসে বসল সৌধর পাশে। সুহাসের দিকে এক পলক তাকিয়ে মৃদু গলায় সৌধকে বলল,
‘ অনেক বুঝিয়েছি। সে কিছুতেই মিস্টার সুহাসের সামনে আসতে রাজি হলো না৷ তার বক্তব্য আপনারা যতদিন এখানে থাকবেন ততদিন মিস্টার সুহাস তার সন্তানের সঙ্গে টাইম স্পেন্ড করার সুযোগ পাবে। বাকি সব ফয়সালা দীর্ঘ কিছু মাস পর বাংলাদেশে গিয়ে করবে৷ ‘
আকস্মিক যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল সুহাসের। সৌধ হতবাক! এ কেমন ছেলেমানুষী? অ্যালেন সুহাসের কাঁধে হাত রাখল। বিনয়ের সুরে বলল,
‘ মিস্টার সুহাস, হতাশ হবেন না৷ আপনার স্ত্রীর অভিমান ভীষণ প্রকট। দুর্ধর্ষ জেদ। নিঃসন্দেহে ভেতরে ভেতরে আপনার প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা লালন করে সে। কিন্তু অদৃশ্য এক রাগ, জেদ আর তীব্র অভিমানের বেষ্টনে তা প্রকাশ করতে পারছে না৷’
অ্যালেনের স্বান্তনা বাণী কাজে দিল না। স্থির নেত্রে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সুহাস৷ বড়ো বড়ো করে শ্বাস নিল। অস্থির চিত্তে বলল,
‘ নামী কোথায় মিস্টার অ্যালেন? আমি নামীর কাছে যাব। ওকে বলুন আমি এসেছি, ওর সুহাস এসেছে। আমি ভুল করেছি, অন্যায় করেছি৷ স্টিল নাও স্বীকারও করছি৷ হাতজোড় করে ক্ষমা চাইব। তবু প্লিজ ওকে আমার সামনে আসতে বলুন। আমি আর নিতে পারছি না, পারছি না নিতে৷ ‘
মন, মস্তিষ্ক জুড়ে তীব্র এক আলোড়ন সৃষ্টি হলো। বদ্ধ উন্মাদের মতো এক শব্দ, এক বাক্য বারবার উচ্চারণ করতে লাগল সুহাস। অ্যালেন আশ্চর্য হয়ে গেল সুহাসের অস্থিরতা দেখে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন যুবক কতটা ছেলেমানুষ হতে পারে স্বচক্ষে দেখে নিল সে। শুধু তাই নয়। নামীর মতো শক্ত ধাঁচের মেয়ের জীবনে এমন সরল, উন্মাদ প্রেমিকের সরূপ দেখে বিস্ময়ের সীমা রইল না। এ পৃথিবীতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ তার বিপরীত স্বভাবের মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়৷ সুহাস ঠিক তাই হয়েছে। যতটুকু বুঝেছে নামীও এই ছেলেকে ভালোবাসে। তবে কেন এই দূরত্ব? দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে, মেয়ের এই ছেলেমানুষি কি শোভা পায়? সম্পর্ক, ভালোবাসা, সন্তানের চেয়েও কি অভিমান, জেদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ? সহসা একটি কথা মনে পড়ে গেল অ্যালেনের। নামী সব সময় বলে, তার কাছে জীবনের চেয়েও সম্মান বড়ো। দীর্ঘশ্বাস ফেলল অ্যালেন৷ স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকাল সুহাসের পানে। সৌধ ওকে সামলানোর চেষ্টা করেও সামলাতে পারল না৷ শেষে বাধ্য হয়ে যে নাম্বার থেকে নামী তাকে ফোন করেছিল সেই নাম্বারে কল করতে উদ্যত হলো। দু’জন গৃহকর্মী হালকা নাস্তা নিয়ে এসেছে। ত্বরিত সেগুলো টেবিলে রেখে চলে গেল তারা৷ এরপরই বেবি রকারে সুহৃদকে নিয়ে হাজির হলো টিপ্পু মাসি আর অ্যারিন। ফলশ্রুতিতে সৌধর আর নামীকে কল করা হলো না৷
টিপ্পু মাসি ফিরে গেল। নামীর অবর্তমানে সুহৃদের দেখভাল সেই করে। ভেতর ঘর থেকে অ্যারিনকে শিখিয়ে দিয়েছে নামী৷ সুহাসকে জানাতে সুহৃদের পুরো নাম। তাই অ্যারিন ইংরেজিতে স্পষ্ট ভাষায় বলল,
‘ সুহাস আংকেল, আপনার ছেলে – নুহাস খন্দকার সুহৃদ। ‘
সহসা সকল উত্তেজনা মিলিয়ে গেল সুহাসের। বিস্ময়াপন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল, একটি ছোট্ট, কোমল নিষ্পাপ শিশু। যার শুভ্র দেহের, কোমল মুখটায় চোখ পড়া মাত্র সর্বাঙ্গ শিউরে ওঠল৷ ছোট্ট গোলগাল মুখটার টকটকে ঠোঁট, লম্বা নাক, ধূসর বর্ণের ছোট্ট ছোট্ট দু’টি চোখ আর মাথা ভর্তি হালকা ব্রাউন কালার চুল দেখে হৃদয় জুড়ে অনুভব করল শীতল শিহরণ। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে একবার সৌধর দিকে চোখ ফিরাল। টলমল হয়ে ওঠল দৃষ্টি। চোয়ালদ্বয় কাঁপছে। মিলিয়ে যাওয়া উত্তেজনা পুনরায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল। নিজেকে সামলাতে না পেরে ডান হাতটা ওঠিয়ে মুখে সামনে নিয়ে একবার কামড়ে ধরল। থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে সৌধকে বলল,
‘ আমার ছেলে! ‘
একটু থেমে ফের বলল,
‘ আমার সন্তান আমাকে চেনে সৌধ। সেদিন লেকের পাড়ে পাপা ডেকেছিল ওই তো! কী কপাল আমার প্রথম দর্শনে ছেলেকে চিনতে পারিনি, ছুঁতে পারিনি। ছেলে কিন্তু ঠিক বাবাকে চিনতে পেরেছে। ‘
চোখ দু’টো বড়ো বড়ো হয়ে গেল সৌধর। বিস্ময়ে শিহরণ জাগল শরীর জুড়ে। হতভম্ব হয়ে গেল অ্যালেনও। পুরো বিষয়টা বুঝে ফেলল সৌধ। আচমকা সুহাসকে জাপ্টে ধরে স্বাভাবিক করতে বলল,
‘ আলহামদুলিল্লাহ! পৃথিবীতে কোইন্সিডেন্স শব্দটা এমনি এমনি তৈরি হয়নি সুহাস৷ নিজেকে সামলা। ভাতিজা আমাদের মাশাআল্লাহ। যেমন দেখতে তেমনি ট্যালেন্ট। নজর না লাগুক৷ ‘
বন্ধুর বুকে বুক মিলিয়ে পিঠে শক্ত করে চাপড় দিতে দিতে ফের বলল,
‘ দেখ কীভাবে তাকিয়ে আছে। কাছে যা ব্রো, কাছে যা বুকে আগলে নে। এই বাচ্চাই তোকে আর নামীকে এক করবে দেখে নিস৷ তুই জাস্ট মাথাটা ঠান্ডা রেখে সব সামলে যা। ‘
নিজেকে সামলালো সুহাস। ধাতস্থ হয়ে চোখের পানি মুছে তাকাল সুহৃদের দিকে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সুহৃদ। সুহাস, সৌধ ওর দিকে তাকাতেই এক পাশে মাথা কাত করে হাসল। সৌধর মুখটা হা হয়ে গেল বাচ্চার কাণ্ড দেখে। আর সুহাস ছেলের স্বাগতম পেয়ে আবেগে টইটুম্বুর। চোখ, নাক লাল হয়ে অশ্রু ঝড়তে শুরু করল তার। বুকে ধুকপুক নিয়ে অত্যন্ত শান্ত ভঙ্গিমায় মৃদু পায়ে গিয়ে ছেলের সামনে এক হাঁটু গেঁড়ে বসল। কম্পিত দু’টো হাত বাড়িয়ে ছেলেকে তুলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে বন্ধ করল চোখ দু’টি। ভারিক্কি শ্বাসের পাশাপাশি অবিরাম অশ্রু ঝড়ল চোখ বেয়ে। সুহৃদ নিশ্চুপ। আপন, আপন উষ্ণ বুকে মিলিয়ে রইল। সুহাস চোখ বন্ধ রেখেই একের পর এক চুমু খেল ওর সারা গায়ে। পিতা পুত্রে এহেন মিলন দৃশ্যে উপস্থিত সকলের শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। না চাইতেও সৌধর চোখ দু’টি ঝাপসা হয়ে ওঠল। সে ন্যায়, অন্যায়, ভুলচুকের ঊর্ধ্বে গিয়ে দীর্ঘ মাস ব্যাপি বন্ধুর করুণ দশা গুলো স্মরণ করে আজকের এই মুহুর্তে আবেগি না হয়ে থাকতে পারল না।
ড্রয়িং রুমের উত্তর কর্ণারে থাইগ্লাসের দেয়াল। দেয়ালের ওপারে ছোট্ট একটি রুম। অ্যারিনের খেলার ঘর এটি। যে ঘরের ভেতর থেকে বাইরের সবকিছু দেখা যায়। কিন্তু বাইরে থেকে ভেতর দেখা সম্ভব না। ঠিক এই সুযোগটাই নিয়েছে নামী৷ আড়ালে থেকে সবটা অবলোকন করতে করতে কখন যে তার হৃৎস্পন্দন থমকে গেছে টেরই পায়নি। চোখ গলেও বেড়িয়েছে নোনা পানির ধারা…।
.
.
খুবই অল্প সময়ে সুহাসের সঙ্গে সুহৃদের সখ্যতা গড়ে ওঠল। ঘন্টা দুয়েক আগে নাস্তা দেওয়া হয়েছে। সৌধ সম্মানার্থে একটু মুখে তুললেও সুহাস ছেলেতে মগ্ন। কখনো বুকে আগলে, কখনো বা কাঁধে তুলে ড্রয়িংরুম জুড়ে পায়চারি করছে সুহাস। একবার সোফায় বসে আদরে, আহ্লাদে গল্প করছে তো আরেকবার চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে তুলছে বাচ্চাকে। টিপ্পু মাসি এরই মধ্যে দু’বার সুহৃদের খাবার নিয়ে এসেছে। আনাড়ি হাতে সুহাসই খাইয়ে দিয়েছে ছেলেকে। সৌধ ভিডিয়ো কলে সোহান আংকেল আর সিমরানকে সেসব কাণ্ড দেখিয়েছে। ওদেশে বাবা, মেয়ে মিলে কান্না, হাসিতে লুটোপুটি। সামনে ফোন ধরলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে সুহৃদ। সোহান খন্দকার দাদুভাই দাদুভাই করে চ্যাঁচায়৷ চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ে তার৷ সুহৃদ হাসে। সোহান খন্দকারের গলা যত বাড়ে সুহৃদের হাসি বিস্তৃত হয়৷ খিলখিল করে হাসে ছেলেটা। সিমরান মুখে হাত চেপে অবাক হয়। মনে পড়ে আম্মুকে। সুহৃদের হাসি, চোখ দু’টো ঠিক তার মায়ের মতো। হবে নাইবা কেন? তাদের পরিবারের ছেলে সুহৃদ। আহ্লাদে গদগদ হয় মেয়েটা। টলমল চোখে সৌধর পানে তাকায়৷ আফসোস করে, কেন তাকে নিয়ে গেল না? কেন সে সুহৃদকে ছুঁতে পারছে না? চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে তুলতে পারছে না ওর গুলুমুলু গালটা? সৌধ স্মিত হাসে৷ সুহৃদের গাল টেনে আদর করে দেয়৷ যেন ভাতিজাকে নয় তার ফুপুমনির গালটাই টেনে আদর করে দিল। আড়াল থেকে সবটাই দেখে যায় নামী। সবকিছুর ভীড়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে খেয়াল করে সুহাসকে। ছেলেতে বিভোর থাকলেও ওর দৃষ্টি ক্ষণে ক্ষণে অচঞ্চল হয়ে পড়ছে। অস্থির চিত্তে খুঁজে বেড়াচ্ছে শুধুই তাকে৷ এত আনন্দ, হাসিখুশির ভীড়ে সুহাসের ভেতরকার তীব্র বিষাদসিন্ধু দেখতে পেল সে। শরীরটা কেমন ভেঙে পড়েছে। আগের মতো সুস্বাস্থ্য নেই৷ সর্বাঙ্গ জুড়েই বিষণ্নতার ছাপ৷ বহু বছর আগের সেই হ্যাংলা পাতলা ছেলেটা মনে পড়ল নামীর। কিন্তু ওই বয়সে ওই ছেলেটার হ্যাংলা, পাতলা রূপ মানানসই লাগলেও আজ এ বয়সে এসে একদম মানাচ্ছে না। মানুষের অভাবের চেয়ে বড়ো অভাব পৃথিবীতে আছে কী? নেই। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণার চেয়েও তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা কী হতে পারে? নিজের ভুল কর্ম দ্বারা এ পৃথিবীতে অনেকেই মানুষ হারায়। ভালোবাসা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। নিঃসঙ্গতা এক ভয়ানক ব্যাধি৷ এই ব্যাধিতে যে আক্রান্ত হয় সেই জানে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কী কঠিন! প্রিয় মানুষ ছাড়া জীবন কী দুর্বিষহ। রুদ্ধশ্বাস ফেলে নামী৷ সহসা দু’হাতে মুখ চেপে ধরে ডুকরে ওঠে।
বাংলাদেশে সময় যখন দু’টো ছুঁই ছুঁই। সুইজারল্যান্ডে তখন দশটা। আজ বাবার বুকেই ঘুমিয়ে গেছে সুহৃদ। যদিও দীর্ঘ সময় মাকে না পেয়ে ছটফট করছিল। কিছুক্ষণ গুনগুনিয়ে কেঁদেছেও। সুহাস কতবার অনুরোধ করেছে অ্যালেনের কাছে। একবার নামীকে আসতে বলুন। আসেনি। ছেলের ছটফট দেখে এরপর ওকে সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পিতৃ সত্তার জাদুবলে সামলে নিয়েছে সন্তানকে। এভাবেই এক সময় ঘুমিয়ে গিয়েছে সুহৃদ। সৌধও শশুর আর বউকে বিদায় দিয়ে ফোন রেখে দিয়েছে। যদিও তারা নামীর সঙ্গে কথা বলার জন্য উৎকন্ঠিত হয়ে ছিল। কিন্তু সৌধ নামীর সিদ্ধান্ত চেপে গিয়ে কৌশলে তাদের দমিয়ে রেখেছে। সুহৃদ ঘুমালেও ওকে ছাড়ল না সুহাস৷ এদিকে রাতের খাবার আয়োজন চলছে। হঠাৎ সৌধ বুদ্ধি করে অ্যালেনকে বলল,
‘ সুহৃদ তো ঘুমিয়ে গেছে। ওকে বেডরুমে নেয়া উচিত। ‘
এরপরই টুপ্পি মাসি এলো। হাত বাড়াল সুহৃদকে নিতে। রেগে গেল সুহাস৷ সুহৃদকে বুকে আগলে ধরে বলল,
‘ আমি দিব না৷ কোন ঘরে নিয়ে যাব ওকে তাই বলুন।’
টুপ্পি মাসি দৃঢ় দৃষ্টিতে অ্যালেনের দিকে তাকাল। অ্যালেন ইশারায় নিয়ে যেতে অনুমতি দিলে টুপ্পি মাসি আগে গেল। আর সুহাস গেল পিছন পিছন। নামীর ঘরেই নিয়ে গেল সুহাসকে। কিন্তু ও ঘরে নামী নেই৷ সুহাস হতাশ হলো এতে। কিন্তু ঘরে ঢুকতেই বেবি বেবি ঘ্রাণ আর নামী নামী ঘ্রাণ মিলেমিশে তার নাকে ধাক্কা খেলো যেন। চারপাশে যা কিছু দেখল সবটাই ভীষণ আপন আপন মনে হলো। টুপ্পি মাসি সুহৃদের বিছানা ইশারা করলে সুহাস গিয়ে ওকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পড়ল। এক হাত সুহৃদের বুকের ওপর হালকা করে রেখে কপালে এঁটে দিল স্নেহময় পরশ। নিষ্পাপ মুখটা নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাবা সুহাস।
সুহাস ভেতর ঘরে চলে গেলে সৌধ বুদ্ধি করে অ্যালেনকে প্রশ্ন করল,
‘ নামী ওর ঘরে নেই রাইট? ‘
অ্যালেন মাথা নাড়ল। সৌধ মৃদু হেসে বলল,
‘ একটি সাহায্য চাই করবেন? ‘
‘ আমি ভীষণ সাহায্যপ্রিয় মানুষ। বলুন? ‘
‘ নামীকে গিয়ে বলবেন আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই? সুহাসের সঙ্গে দেখা না দিক সম্ভব হলে দশ মিনিটের জন্য আমার সঙ্গে একাকী যেন দেখা দেয়। জোর করছি না জাস্ট প্রস্তাব রাখছি। বাকিটা সম্পূর্ণ নামীর ইচ্ছে। ‘
হাসল অ্যালেন। বুঝল এই ছেলেটা অসম্ভব বুদ্ধিমান। এরপর চলে গেল নামীর কাছে৷ নামীকে গিয়ে সৌধর প্রস্তাবটি রাখলে এক বাক্যে রাজি হয়ে গেল নামী। বলল,
‘ এ ঘরেই আসতে বলুন উনাকে। ‘
|চলবে|
®জান্নাতুল নাঈমা
রিচেক করিনি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।