ত্রিধারে তরঙ্গলীলা পর্ব-৬৯+৭০

0
950

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৬৯|
আরো একটি নির্ঘুম রাত৷ এ কী বীভৎসতা? এ কোন দহনে পুড়াচ্ছে নামীদামি? সুহাস কী সইতে পারে তার সুহাসিনীর পাষণ্ডতা? পারে না তো… তাই তো তীব্র যন্ত্রণা বুকে পুষে দু’রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিল। গোটা একটা রাত কেটে গেল প্রিয়জন হারানোর শোকে। দীর্ঘদিন এই শোকে ঝিমিয়ে পড়েছিল সে।
যা দৃঢ় হয়ে ওঠেছে সে বাবা হচ্ছে বিষয়টি জানতে পেরে। নতুন অনুভূতি, প্রথম পরিচয় যা ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে ক্রমাগত। বহুকষ্টে ভোরবেলা একটু চোখ বুজতে পারল৷ কিন্তু ঘুম হলো না ঠিকঠাক। মস্তিষ্ক জুড়ে কিলবিল শুরু করল, নামীর সঙ্গে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত। বেলা বাড়তে বাড়তে সেই মুহুর্ত গুলো পেরিয়ে পেরিয়ে চলে এলো, সেদিনের সেই ঝগড়ায়। এরপর বাস্তবের মতো স্বপ্নেও নামী হারিয়ে গেল৷ আর খুঁজে পেল না তাকে৷ বুকের ভেতর ছটফটিয়ে উঠলো। মস্তিষ্কে চাপ পড়ল ভীষণ। তীব্র যন্ত্রণায় স্বপ্নের ঘোরেই নড়তে শুরু করল সুহাস৷ আকস্মিক তখন আবার নামীর দেখা মিলে। গাঢ় গোলাপি রঙের একটি গোল জামা পরিহিত নামী। পেটের কাছটা অনেক উঁচু। দেখে মনে হচ্ছে সাত, আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাদের বাড়িরই সিঁড়ি পেরিয়ে অসন্তুষ্ট মুখে নিচে নামছে৷ সুহাস সদর দরজায় দাঁড়িয়ে। হাসিমুখে তাকিয়ে আছে গর্ভবতী নামীর পানে। সহসা পা ফস্কে যায় নামীর। সিঁড়ি গড়িয়ে পড়ে নিচে। প্রতিটি সিঁড়ির ধাপে ধাপে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সুহাসের বুকের ভেতর মুচড়ে ওঠে নিমেষে। চোখ দু’টো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়। ভয়ে শিউরে ওঠে দেহ। বাড়ি কাঁপিয়ে আর্তচিৎকার করে ওঠে তার পুরুষালি কণ্ঠস্বর। একছুটে চলে আসে রক্তে মাখামাখি হয়ে পেটে দু’হাত চেপে ধরে কাতরাতে থাকা নামীর কাছে। শুনতে পায় কাঁপা কাঁপা স্বরে নামী বলছে,

‘ আমি ওকে বাঁচাতে পারলাম না সুহাস৷ তোমার মতো অযোগ্য লোকের স্ত্রী কখনো মাতৃসুখ পায় না। আমিও পেলাম না৷ ঠিক এই অপরাধেই আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব! ‘

দিকবিদিকশুন্য হয়ে গগনবিদারী এক চিৎকার দেয় সুহাস। হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসে৷ ঘুম ছুটে গেছে পুরোপুরি৷ হাঁপাচ্ছে ভীষণ। যেন সে ঘুমাচ্ছিল না, মাইলের পর মাইল দৌড়ে এসেছে। থরথর করে কাঁপছে ছেলেটা। এসি চলছে তবু শরীর দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝড়ছে। ভালোভাবে চারপাশে তাকিয়ে দেখল, আলো ফুটেছে। ঘড়ির কাঁটায় সময় ঠিক বেলা এগারোটা। অর্থাৎ, সে এতক্ষণ যাবৎ স্বপ্ন দেখছিল, দুঃস্বপ্ন! ফোঁস ফোঁস শব্দে নিঃশ্বাস ছাড়ল সুহাস৷ কাঁপা হাতে সাইট টেবিলে থাকা জগ থেকে গ্লাসে পানি ভরে এক শ্বাসে পানি খেল। এরপর শঙ্কিত চিত্তে সেলফোন খুঁজে ত্বরিত কল করল সৌধকে৷
.
ভারি বর্ষণ শেষে সবুজ, শ্যামল প্রকৃতিতে যেই সতেজতা বিরাজ করে। সিমরানের আপাদমস্তক আজ সেই সতেজতাতেই পরিপূর্ণ৷ তাকে দেখে মনেই হচ্ছে না গত রাতে তার সঙ্গে একটি বিকৃত ঘটনা ঘটেছিল৷ সৌধ নামক ম্যাজিসিয়ান স্বামী যার আছে তার জীবনে কোনো বিকৃত ঘটনার চিহ্ন থাকতে পারে না৷ সদ্য বিবাহিতা সিমরানকে ঘিরে আছে যেন আশ্চর্য এক সুখ। জ্বলজ্বল করা এই সুখ হিংসে করার মতোন। সকাল থেকে চৌধুরী বাড়ি জুড়ে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে এক সুখী, সুশ্রী তরুণী৷ এ যেন চোখের শান্তি। সুজা চৌধুরী থেকে শুরু করে বাড়ির প্রতিটি সদস্যই খেয়াল করেছে। সুন্দরী, প্রাণ চঞ্চল এক মেয়ে কী অমায়িক ভাবে মিশে আছে তাদের পরিবারের সঙ্গে। বয়সের তুলনায় মানসিক পরিপক্বতা আসেনি হয়তো। কাজেকর্মেও পটু নয়।
তবু তার মিষ্টি আচরণ, শিষ্টতাতেই মুগ্ধ সকলে। এ বাড়িতে সৌধ, তানজিম চৌধুরীর পর সিমরানের সবচেয়ে কাছের মানুষ তাহানী৷ তার সঙ্গে এখন সে এ বাড়ির বিরাট লাইব্রেরিতে ঢুকেছে৷ ওদিকে সৌধ খুঁজে বেড়াচ্ছে সিমরানকে৷ দুপুর হয়ে আসছে৷ এখনো জানানো হয়নি আজ সে নিধির সঙ্গে দেখা করতে যাবে। কাজের মেয়ে তুরিন জানালো সে তাহানীর সঙ্গে গ্রন্থাগারে গেছে৷ শুনে খুশি হলো সৌধ। ভেবেছিল চট্টগ্রামে চলে যাওয়ার আগে সে নিজেই একবার ওখানে নিয়ে যাবে সিনুকে। যাতে অবসর সময় গুলো বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা না দিয়ে বই, পুস্তক পড়ে কাটাতে পারে। ওর যা বন্ধুমহল ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ নয় সৌধর। সবগুলোই চেনে সে। তারা কোন পরিবারের, তাদের চলাফেরা কী সব ব্যাপারে অবগত। এতকাল তাদের সঙ্গে মেশা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা দিলেও আলাদা কোনো জোর ছিল না৷ এবার আছে। অন্তত কোনো পুরুষই চাইবে না তার বউয়ের সমাজে বিশৃঙ্খল সৃষ্টিকারী বন্ধু-বান্ধব থাকুক৷ দীর্ঘশ্বাস ফেলে সৌধ। আকাঙ্ক্ষা জন্মায়, বইয়ের সঙ্গে সিনুর একটা নিবিড় সম্পর্ক হোক।

বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে বাগানের ডানপাশে চলে গেল সৌধ৷ ছোট্ট একটি দোতলা বিল্ডিং। নিচতলার প্রবেশদ্বারের সামনে নেম প্লেটে লিখা, ” বুক ফ্রেন্ড লাইব্রেরি ” মূলত লাইব্রেরিটা ছিল সুলল চৌধুরীর। এ বাড়িতে বইপ্রেমী মানুষ বলতে সুজা চৌধুরী, তানজিম চৌধুরী আর সুলল চৌধুরীই ছিল। সৌধ বড়ো হতে হতে কাকুর উৎসাহ, উদ্দীপনায় ধীরে ধীরে তুখোড় বইপ্রেমী হয়ে ওঠল৷ এরপর চাচা, ভাতিজা মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তারা বড়ো করে একটা লাইব্রেরি ঘর দেবে৷ সুলল কাকুর ব্যক্তিগত লাইব্রেরিটাই বড়ো করা হলো। দোতলার ছোট্ট ঘর বদলে নিচে এখানটায় রাজকীয় ভাবে স্থাপন করা হলো ” বুক ফ্রেন্ড লাইব্রেরি ” নিচতলায় ঢুকে সিমরানের দেখা পেল না সৌধ৷ উপর তলা থেকে শুনতে পেল দুটো মেয়ের খিলখিল করে হাসির শব্দ। যা পুরো বিল্ডিংয়ে ঝংকার তুলার পাশাপাশি সৌধর বুকেও তুলল। গতরাতে কাঁদতে কাঁদতে যার বেহাল দশা হয়েছিল আজ সে তাহানীর সঙ্গে খিলখিল করে হাসছে। অদ্ভুত ভালোলাগায় শিহরণ হলো সৌধ। উদ্ভাসিত চিত্তে পা বাড়াল দোতলার দিকে৷ এমন সময় তার ফোন বেজে ওঠে থেমে যায় সে। সুহাসের কল। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে সুহাস হড়বড় করে বলতে থাকে,

‘ দোস্ত আমি নামীকে স্বপ্নে দেখেছি!…’

এক নিঃশ্বাসে বিস্তারিত বলে থামে সুহাস৷ হাঁপাচ্ছে সে৷ প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে ত্বরিত সামলে নেয় সৌধ। বুঝতে পারে নামী আর আগত বাচ্চাকে নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফল এই দুঃস্বপ্ন। তাই শান্ত গলায় বলে,

‘ অতিরিক্ত চিন্তা করতে নিষেধ করেছিলাম তোকে। ‘

‘ সৌধ নামী ভালো নেই। ওর নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে! ‘

‘ নামী ভালো নেই এটা জানা কথা৷ কিন্তু বিপদ ঘটেছে কিনা এটা অজানা৷ মনগড়া ভাবনা থেকে বের হো। অতিরিক্ত চিন্তা করেছিস বলে দুঃস্বপ্ন দেখেছিস ব্যস আর কিছুই না। ‘

‘ না সৌধ। আমাকে তুই বিশ্বাস কর। ‘

অসহায় স্বর সুহাসের। সৌধ চোখ বুঁজে ভাবল কিছু। এরপর বলল,

‘ তোকে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু তোর এই অনুভূতিকে না। জাস্ট একটা দুঃস্বপ্ন এটা। কই এতদিন তো এমন কোনো স্বপ্ন দেখিসনি৷ তাহলে আজ কেন? কারণ তুই এখন ডেস্পারেট হয়ে দুঃশ্চিন্তা করছিস। ‘

উদ্বিগ্নতা কমে এলো সুহাসের। হতাশ কণ্ঠে বলল,

‘ বাবা এখনো আখতার আংকেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি সৌধ। ‘

‘ সো হোয়াট? চিন্তার কিছু নেই৷ অ্যামরিকায় আখতার আংকেল কোথায় থাকে এটা তো জানে সোহান আংকেল। ব্যস এতেই হবে৷ কোনোভাবে যোগাযোগ করতে না পারলে তুই চলে যাবি ওখানে৷ ‘

নিশ্চুপ সুহাস৷ সৌধ স্মিত হেসে বলল,

‘ রাতে ফোন করব। এখন রাখছি। ‘

ফোন কেটে ভেতরে ঢুকল সৌধ। আকস্মিক সিমরানের মুখোমুখিও হলো। সৌধ ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

‘ দেখা শেষ? ‘

‘ না সবেই তো এলাম৷ এই দেখো দেবদাস। তুমি কি এটার কথাই বলেছিলে? ‘

সৌধ দেখল সিমরানের হাতে একটি চমৎকার প্রচ্ছদের দেবদাস বইটা৷ যেখানে দেবদাস, পার্বতীর বিচ্ছেদ চিহ্নও দৃশ্যমান। অমায়িক ভঙ্গিতে হাসল সৌধ৷ একহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে দিয়ে আরেক হাতে ডান ভ্রু চুলকাতে চুলকাতে এগিয়ে গেল ভেতরে৷ সিমরান একটু সরে গেল৷ এরপর সৌধর পিছু পিছু হাঁটতে লাগল৷ তাহানী এসে বলল,

‘ ছোটো ভাইয়া সিনুপাই এই বইঘরটা খুব লাইক করেছে। ‘

তাহানীর মাথায় হাত বুলিয়ে শেল্ফের সামনে দাঁড়াল সৌধ। দেখে দেখে সমরেশ মজুমদার আর শরৎচন্দ্রের কয়েকটি কালজয়ী উপন্যাস বের করে সিমরানের হাতে দিয়ে তাহানীকে বলল,

‘ কিউটি, একটু ওপাশে ঘুরে আসো তো। তোমার ভাবিপার সঙ্গে কিছু প্রাইভেট কথা বলব। ‘

ছয় বছর বয়সী তাহানী কী বুঝল কে জানে? মুখে হাত দিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে চলে গেল। সিমরান তো তাজ্জব বনে গেল এ দৃশ্য দেখে। সৌধ মুচকি হেসে বলল,

‘ ভেরি ভেরি স্মার্ট। কার কন্যা দেখতে হবে না? ‘

সিমরান নাজুক হয়ে মনে মনে বলল,

‘ কার সিস্টার তাও তো দেখতে হবে। ‘

সৌধ হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে হাতে থাকা বইগুলো সিমরানের হাতে তুলে দিয়ে অকপটে বলল,

‘ সন্ধ্যার পর নিধির সঙ্গে মিট করতে যাচ্ছি। আমার প্রয়োজনে নয়। সুহাসের প্রয়োজনে। ‘

সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপের ন্যায় মুখশ্রীতে আচমকা এক টুকরো আঁধার নামল বোধহয়। বুকের ভেতরটায় তীক্ষ্ণ এক যন্ত্রণা অনুভব করল সিমরান। সৌধ ভাইয়ের কাছে তার এই অনুভূতি ধরা পড়ার ভয়ে জোর পূর্বক ঠোঁটে হাসি টেনে মিহি স্বরে বলল,

‘ ঠিক আছে৷ ‘

একপেশে হাসল সৌধ। হাতে থাকা বইগুলোর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে বলল,

‘ পরিণীতা বইটা আমি পড়িনি বুঝলি৷ যতক্ষন বাইরে থাকব এ সময়ে এই বইটা শেষ করা যাবে৷ তুই পড়ে আমাকে কাহিনীটা বলিস তো। বুঝিসই তো কাজের চাপে আমার এখন এসব বই পড়ার সময় হয় না৷ তুই পড়ে গল্প শোনালে সময় কম লাগবে।
আমারো জানা হবে প্রিয় লেখকের আরেকটি বই সম্পর্কে। ‘

যে মিথ্যায় সুখ পাওয়া যায়, শান্তি আসে, দুঃখ দূর হয়ে কষ্ট মলিন হয় সেই মিথ্যাকে সম্মান করে সৌধ। শরৎচন্দ্রের প্রতিটা উপন্যাসই তার ঠোঁটের আগায়৷ পড়তে পড়তে মুখস্থ হয়ে গেছে বলায় যায়। পরিণীতা পড়েছিল, সেই ক্লাস নাইনে পড়াকালীন। তবু মিথ্যা বলল। কারণ আজ সন্ধ্যার পর সে বেরিয়ে গেলে সিমরান খুব অশান্তি নিয়ে কাটাবে৷ তাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে৷ সংগোপনে নিধির প্রতি ইর্ষাও জন্মাতে পারে। তাই বুদ্ধি করে বই পড়ার কাজ দিল। এতে করে সন্ধ্যার পর সিমরান ব্যস্ততায় কাটাবে। তার অবর্তমানে বই বন্ধুর সঙ্গ পাবে৷ যদি কর্মহীন বসে থাকে তাহলে আলস্যতা চেপে ধরবে৷ আর অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। শুধু আজ নয় তার অবর্তমানে সিমরান যেন কোনো মুহুর্তেই নিঃসঙ্গতায় না ভুগে সে জন্য অনেক নির্দেশনাও দিল। সবটাই ছিল কোনো না কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা৷ ভার্সিটিতে যাওয়া, পড়াশোনা করা। বাড়িতে আম্মার সাথে রান্না শেখা, গল্প করা। তাহানীর সঙ্গে সময় কাটানো, বই পড়া। আরো কত কী বলল সৌধ। সবটা মন দিয়ে শুনে হঠাৎ সিমরান বলল,

‘ চট্টগ্রাম গিয়ে তুমি কি একটুও ফ্রি থাকবে না? একটা ফোনকল বা ম্যাসেজ করার? ‘

সহসা স্তব্ধ হয়ে যায় সৌধ। নিষ্পলক চেয়ে রয় সিমরানের সুশ্রী, ম্লান মুখটায়। এরপর হেসে ফেলে কিঞ্চিৎ। মুগ্ধ করা এক বাঁকা হাসি। পুরুষ মানুষের বাঁকা হাসি এমন মারাত্মক সুন্দর হয়? নাকি শুধু সৌধর বাঁকা হাসিটাই হৃদয় কাড়া সুন্দর? উত্তরের অপেক্ষায় সিমরান। সৌধ স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে শীতল কণ্ঠে উত্তর দিল,

‘ আরে বোকা, আমিত কল করবই। বিয়ে করেছি না? বাড়িতে বউ রেখে যাব আর তার খোঁজ, খবর নিব না? আমাকে ইররেস্পন্সিবল মনে হয় তোর? ‘

শেষ শব্দটায় একটু শাসনি সুর ছিল। যা টের পেয়ে আকস্মিক মাথা নেড়ে সিমরান জবাব দেয়,

‘ উহুম একটুও না৷ শুধু লাভলেস মনে হয়৷ অপ্রেমিক।’

ঘোরের মুখে কথাটা বলেই জিভ কাটে সিমরান। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে সরে পড়ে সৌধর সম্মুখ থেকে। সৌধ কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রয় ঠাঁই। অস্ফুটে বিরবিরায় ‘ আমি অপ্রেমিক! ‘
.
.
শহরের ছোট্ট একটি কফিশপ। সৌধর পরিচিত এক বড়ো ভাই এক বছর হলো এটি উদ্ভোদন করেছে৷ যা অল্প সময়েই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে৷ স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাই বেশি আসে৷ তাও আবার যুগল হয়ে। আজ এক ঘন্টার জন্য কফিশপ বন্ধ। কারণ সৌধ চৌধুরী একঘন্টার জন্য তার এক বান্ধবীকে নিয়ে বসবে এখানে৷ ব্যক্তিগত ভাবে এখানে কর্মরত প্রতিটি সদস্য সৌধকে চেনে৷ তাই বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক কিছু ভাবল না। বরং গুরুত্বপূর্ণ কাজে বলেই বিবেচনা করল এবং সচেতন থাকল যাতে তাদের কোনো আচরণে ভুল না পায় সৌধ। সন্ধ্যার পর আবছা আলো আবছা আঁধারে প্রকৃতি। সৌধ এলো বাইকে করে। সঙ্গে ওর কাজিন সাদি ছিল। যাকে কফিশপের বাইরে রেখে ভেতরে প্রবেশ করল সে। কফিশপে দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন এসে সালাম দিল তাকে। বসার জন্য জায়গা দেখিয়ে দিল। সৌধ মৃদু হেসে গিয়ে বসল। ফোন বের করে কল করল নিধিকে৷ নিধি জানালো সে কফিশপের সামনে। সৌধও জানিয়ে দিল, সে ভেতরে আছে।

পুরো কফিশপ ফাঁকা। অবাক হলো না নিধি। সৌধকে চেনে সে। তাই ধারণা ছিল এমন কিছুই হবে৷ স্পেশালিটি থাকবেই থাকবে। চারপাশে ভালো করে নজর বুলিয়ে সৌধকে দেখতেই চোখে, মুখে দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ল। যা এগিয়ে যেতে যেতে মিলিয়ে গেল আচমকা। শুভ্র রাঙা টিশার্ট পরনে সৌধর। চোখে পিউর ব্লাক সানগ্লাস। সদ্য সিগারেট ধরিয়েছে! নিধি সামনে এসে দাঁড়াল। কোনো প্রকার উদ্দীপনা দেখা গেল না সৌধর মাঝে। সে নির্লিপ্ত ভাবে একবার তাকাল। ঈষৎ হেসে দৃঢ় গলায় বলল,

‘ বোস। ‘

এরপর ঠোঁটে সিগারেট চেপে ধরল। ধোঁয়া ছাড়ল পিছন দিকে যেন নিধির দিকে না যায়৷ তবু সিগারেটের ঘ্রাণ নাকে এলো নিধির। খুব একটা কড়া না। তবু নাকমুখ কুঁচকে বসল সে। অস্বস্তি হলো ভীষণ। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সৌধ সিগারেট খাচ্ছে। তবু তার সামনে৷ পরোক্ষণেই স্মরণ হলো, আইয়াজ তাকে জানিয়েছিল সেদিনের পর সৌধ শুধু সিগারেট না নানারকম নেশাদ্রব্য পান করেছে। বারে পর্যন্ত গেছে! এসব আবার ত্যাগও করেছে শুনেছিল। তবে কী আইয়াজ ভুল জানে? কখনো সিগারেট না ছোঁয়া ছেলেটা এই তো দিব্যি সিগারেট খাচ্ছে। ঢোক গিলল নিধি৷ থমথমে গলায় প্রশ্ন করল,

‘ কেমন আছিস? ‘

‘ আলহামদুলিল্লাহ। ‘

নিঃসংকোচ উত্তর সৌধর। ওয়েটার এসে দু’টো কোল্ড কফি দিয়ে গেল৷ নিধির প্রিয় কোল্ড কফি। এজন্য সৌধ এটাই দিতে বলেছে। যা দেখে একটু শান্তি পেল নিধি৷ যাক তার পছন্দ মনে আছে। কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ বসে থেকে সৌধর থেকে কোনো প্রশ্ন বা শব্দ না পেয়ে নিজেকে সুস্থির করল সে।এরপর পুনরায় প্রশ্ন করল,

‘ নিয়মিত সিগারেট খাস? ‘

‘ যখন ইচ্ছে হয় তখন খাই৷ ‘

ওড়না দিয়ে নাক ঢাকল নিধি৷ কিঞ্চিৎ রাগ হয়ে বলল,

‘ সিনুর সামনে বসেও খাস? ও কিছু বলে না? ওর বাপ, ভাই কেউ তো সিগারেটখোর না৷ মানিয়ে নিতে পারে? ‘

‘ হার্মফুল জিনিস ওর সামনে খাব কেন? এটা যে খায় এবং যে ঘ্রাণ পায় দু’জনের পক্ষেই ক্ষতিকর। ‘

ভ্রু বাঁকিয়ে ফেলে নিধি৷ চোখ দু’টো ছোটো ছোটো করে বলে,

‘ বাহ ডক্টর সাহেব আপনি যাতে মাতাল তালে ঠিক। তা এই হার্মফুল জিনিসটা খেতে কে পায়ে ধরে তোর? ‘

‘ বললাম না আমার ইচ্ছে? ‘

‘ বিশ্রী ইচ্ছে। ‘

শব্দ দুটো বলে হঠাৎ চ্যাঁচিয়ে ওঠে,

‘ ওই তুই নিজের ক্ষতি করার পাশাপাশি আমারো ক্ষতি করছিস৷ সিনুর ক্ষতি হবে বলে ওর সামনে যেমন খাস না আমার ক্ষতি চিন্তা করেও এখন তোর এটা খাওয়া উচিত না৷ যা ফেলে আয়। ‘

হাসল সৌধ। এতক্ষণ নিধির দিকে না তাকালেও এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অদ্ভুত সুরে বলল,

‘ আমার বউ আর বান্ধুবী তো এক নয়। বন্ধুর জন্য এটুকু সেক্রিফাইস তুই করতেই পারিস৷ আর আমি তোর অল্প ক্ষতি করতেই পারি। শুনেছি বন্ধুর জন্য আরেক বন্ধু প্রাণও দিতে পারে৷ ‘

আকস্মিক সমস্ত উদ্দীপনা মিশে গেল নিধির। বউ আর বান্ধবী এক নয়। সৌধ সিনুর সামনে সিগারেট খায় না৷ কারণ এতে সিনুর ক্ষতি হবে। অথচ তার সামনে খাচ্ছে। অর্থাৎ তার ক্ষতি হলে সৌধর এখন আর যায় আসে না! মুখটা ছোটো হয়ে গেল নিধির৷ পুরোনো দিনের অনেক কথা, অনেক স্মৃতি এসে মন পুড়াতে লাগল। সবচেয়ে বিস্ময়কর লাগল, সৌধ কি অনায়াসে আমার বউ শব্দটা বলল। একদিকে অবশ্য খুশিই হলো সৌধ নিজেকে সামলে সবটা মেনে নিতে পেরেছে বলে। কিন্তু ওই যে কিছু স্মৃতি, কিছু অভ্যেস ঠিক তীক্ষ্ণ ভাবে জ্বালাতে শুরু করল। একটা সিগারেট অর্ধেকটা শেষ করে ফেলে দিল সৌধ। নিধি কফি খাচ্ছে আর গভীর কিছু ভাবছে৷ সৌধ তাকাল ওর দিকে৷ খেয়াল করল আগের চেয়ে মুটিয়ে গেছে মেয়েটা। তক্ষুনি মনে পড়ল, নিধি এখন একটা ফুটফুটে বাচ্চার মা৷ সহসা মনে পড়েছে এমন করেই জিজ্ঞেস করল,

‘ রূপ কেমন আছে? ‘

থমথমে কণ্ঠেই উত্তর দিল নিধি,

‘ ভালো আছে। টুকটাক কথা বলতে শিখেছে। সারাক্ষণ বাবাকে ডেকে বেড়ায়৷ দু একবার অবশ্য আমাকেও ডাকে। ‘

আচমকা মুখ ফস্কে কথাটা বলেই সচেতন চোখে সৌধর দিকে তাকাল। সৌধ নির্লিপ্ত। তবু কেন যেন মনে হলো ওর ভিতরে নির্লিপ্ততা নেই। আছে অন্যকিছু। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছাড়ে নিধি। ভাবে সৌধ যদি তার বউ, তার বউ অবলীলায় বলতে পারে সে কেন তার বাচ্চার বাবার গল্প করতে পারবে না? তাই অর্পণ স্যারকে নিয়েও কিছু গল্প শুরু করল৷ সৌধ গোপনে হাসল তাচ্ছিল্য ভরে৷ ধরে ফেলল নিধির মনোভাব। অথচ নিধি ধরতে পারল না সৌধ ইচ্ছে করেই তার সামনে সিগারেট খাচ্ছে। যা বলছে যা করছে সবটার পেছনে কারণ একটাই তাদের দু’জনের জীবনের পথ সুন্দর, স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে যাওয়া শ্রেয়। যেসব তিক্ত ঘটনা ঘটে গেছে সেসব থেকে বেরিয়ে এসে অন্তত বন্ধুত্বটুকু বাঁচিয়ে রাখা৷ যদি তারা একে অপরের কাছে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক গুলো সহজ ভাবে তুলে ধরতে না পারে তবে উভয়ের মনেই অতীত নিয়ে পিছুটান থাকবে। সেই পিছুটান যেন না থাকে এজন্যই এই প্রয়াস৷ অন্তত আজ থেকে বিশ বছর পর হঠাৎ দেখা হলে হাসি মুখে দুটো বাক্য বিনিময় করতে চায় সৌধ। এটা যদি না পারে তাহলে তারা দ্বিতীয় মানুষটাকে নিয়ে সুখী হতে পারবে না। সৌধ এখন মনে প্রাণে চায় নিধি অর্পণকে নিয়ে সুখী হোক। সে নিধির সুখ চায় বলেই যে অর্পণ স্যারকে নিয়ে এত এত ভালো ভালো কথা হজম করতে পারবে তা না৷ তাই তো ক্রোধটুকু সুপ্ত রেখে বাঁধা প্রদান করে শুধাল,

‘ আমার সঙ্গে দেখা করতে এলি তোর বর জানে? ‘

‘ না। বলেছি বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাই। কোন বন্ধু জিজ্ঞেস করেনি। আমিও বলার প্রয়োজন বোধ করিনি। ‘

স্মিত হাসে সৌধ। বলে,

‘ আমার বউ সন্ধ্যার পর একা বেরুতে পারবে না৷ এটা আমার বাড়ি এবং আমার রুলস। ‘

নিধি দম্ভ দেখিয়ে বলল,

‘ আশ্চর্য। ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার মতো ছেলে তো তুই নোস। ‘

এ বিষয়ে আর কথা বাড়াল না সৌধ। নিধি একশটা যুক্তি দেবে৷ কথা বাড়বে। তাই শুধু বলল,

‘ আমি কিন্তু সিনুকে জানিয়েই দেখা করতে এসেছি। ‘

অবাক হলো নিধি। বিস্ময় ভরে বলল,

‘ সিরিয়াসলি? ‘

মাথা নাড়ে সৌধ। নিধি ভাবুক হয় একটু। সৌধ অফ টপিক বদলে এবার আসল টপিকে চলে আসে৷ সহসা প্রশ্ন করে,

‘ নামীর বিষয়টা কেন গোপন করলি?’

হকচকিয়ে যায় নিধি৷ নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিয়ে বলে,

‘ ও বোন হিসেবে আমার সহায়তা নিয়েছিল সৌধ। সুহাস আর ওর তুমুল ঝগড়া হয়েছিল। সুহাস নামীর গায়ে হাত তুলেছে এটা শুনে আমারো রাগ হয়েছিল ভীষণ। বউ পেটানো পুরুষ আমার বন্ধু! জাস্ট মেনে নিতে পারছিলাম না৷ বাবা, মা হীন মেয়ে নামী। বড়ো বোন হিসেবে একটু আশ্রয় চেয়েছিল। দিয়েছি। ‘

‘ সুহাসকে ছেড়ে অ্যামরিকায় চলে গেল। তোর উচিত ছিল না সুহাসকে এ ব্যাপারে জানানো? ‘

‘ বিশ্বাস কর আমি চেয়েছিলাম। কিন্তু নামী আমাকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাও ধরেছিল৷ ভাব ওর মতো মেয়ে কতটা অসহায় হয়ে এই কাজ করেছে। ও অনেক বিধ্বস্ত ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম ওর মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এমন একটা ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ও যে সুহাসের কাছে গেলে সেই ট্রমা থেকে ও আর বেরুতে পারবে না৷ প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত ছিল সুহাসের প্রতি৷ আর এরজন্য দায়ী সুহাস নিজেই৷ একজন শিক্ষিত, ভদ্র পরিবারের ছেলে, পেশায় ডাক্তার। সে কী করে বউয়ের গায়ে হাত তোলে৷ ‘

‘ তুই সুহাসকে চিনিস। ‘

‘ তাই বলে বউকে মারবে? সরি, বন্ধু বলে আমি এক্ষেত্রে ওকে সাপোর্ট করতে পারব না। ‘

‘ বলিনি সাপোর্ট করতে। নামী যে প্র্যাগনেন্ট জানিস? ‘

চমকে ওঠে নিধি। ঢোক গিলে বলে,

‘ দেশে থাকাকালীন জানতাম না৷ চলে যাবার পর একদিন যোগাযোগ হয় আর তখন জানায়৷ আগে জানলে যেতেই দিতাম না৷ কারণ আমি তো জানি এই জার্নিটা। আসলে আমি এটা জানার পরই বুঝতে পারি নামী কেন মানসিক অসুস্থতার মধ্যে যাচ্ছিল। প্র্যাগ্নেসির সময় মেয়েদের মুড সুইং হয়। কিন্তু নামীর ওই সময়টা শুরু ছিল। হিউম্যান সাইকোলজি বলে, মেয়েদের হৃদয় গর্ভাবস্থা চলাকালীন শিশুসুলভ হয়ে যায়৷ ওরা অল্প আদরে যেমন অনেক বেশি খুশি হয়, তেমনি অল্প আঘাতে ভয়ংকর ভাবে ভেঙে পড়ে৷ আমার এক বান্ধবী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। ওর
কাছে এক প্যাশেন্ট এসেছিল৷ এটা তার মুখের গল্প। ভদ্রমহিলা যখন গর্ভবতী ছিল তার হাজব্যন্ড খুবই সামান্য একটি বিষয় নিয়ে বকাঝকা করে৷ ফলশ্রুতিতে ডেলিভারি হওয়ার আগ পর্যন্ত চক্ষুশূল হয়ে ছিল বর৷ অথচ বিয়ের পর থেকে শাশুড়ীর সঙ্গে উনার বনিবনা ছিল না৷ গর্ভবতী হওয়ার পর সে শাশুড়ি একদিন খিচুড়ি রেঁধে খাইয়েছিল বলে খুশিতে সেদিন শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছে। এরপর শাশুড়ি যতই রেগে কথা বলুক সে হাসিমুখেই সেগুলো এড়িয়ে চলে৷ ‘

একটু থামল নিধি। এরপর সৌধর দিকে সিরিয়াস হয়ে তাকিয়ে বলল,

‘ আসলে কী বলত আমাদের এই জার্নি কোনো ছেলের পক্ষে বোঝা সম্ভব না। মানসিক, শারীরিক সবদিক দিয়ে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি৷ একদম বাচ্চাদের মতো। আমার ছেলের সামনে মোম জালিয়ে ধরিস৷ ও একবার হাত দিয়ে ছ্যাঁকা খেলে আর দ্বিতীয়বার সেটা ধরবে না। প্র্যাগ্নেসির সময় আমাদের মাইন্ডটা ঠিক ওরকমই থাকে। সুহাস স্টুপিডটা এত্ত কেয়ারলেস কী আর বলব। ‘
.
.
সৌধ, নিধির কথোপকথন শেষ৷ নামীর সঙ্গে প্রথম দিকে যোগাযোগ থাকলেও এখন আর যোগাযোগ নেই নিধির৷ টেক্সট করে না পেয়ে মেইল করে রেখেছে নিধি৷ সব শুনে সৌধ বলল,
‘ যখনি ওর সঙ্গে যোগাযোগ হবে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবি৷ ‘

নামীর মেইল ঠিকানা নিয়ে রাখল সৌধ। নিধিও সুহাসের বর্তমান অবস্থা জেনে দুঃখ প্রকাশ করল। সৌধকে অনুরোধ করল, সুহাস যেন না জানে নামী চলে যাবার সময় তার কাছে ছিল। সে সাপোর্ট করেছে নামীকে। সৌধ এমনিতেও সুহাসকে কিছু বলবে না। বড়োজোর এটা বলতে পারে নামী ওদেশ থেকে নিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল একদিন৷ এর বেশি কিছু নয়৷ কারণ সে চায় না নিধির সাথে কারো সম্পর্ক খারাপ হোক৷ কথা শেষে ওরা যখন ওঠবে তখন হঠাৎ নিধি প্রশ্ন করল,

‘ নতুন জীবন কেমন লাগছে বললি না তো? ‘

অমায়িক ভঙ্গিতে হাসল সৌধ। গর্ব করে বলল,

‘ দারুণ। ‘

‘ সিনু অনেক ভালো মেয়ে অনেক ভালো রাখবে তোকে। ‘

‘ আই নো। ‘

ওঠে দাঁড়াল নিধি৷ সাথে সাথে সৌধও ওঠল। কফিশপ থেকে বেরিয়ে রিকশা ডেকে তুলে দিল নিধিকে। রিকশায় বসে হঠাৎ নিধি মাথা এগুলো। সৌধ বলল,

‘ কী হলো কিছু রেখে গেছিস? ‘

আকস্মিক নেমে দাঁড়ায় নিধি। চারপাশে রাতের আঁধারে সজ্জিত। গাড়ির হর্ণ, রিকশার টুংটাং, মানুষের কোলাহল কর্ণে বাজছে। একটা রিকশা অপেক্ষা করছে নিধির জন্য৷ অথচ নিধি তার প্রিয় বন্ধু সৌধর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ক্ষীণ গলায় বলে,

‘ ভালোবাসা বিষয়টায় আমি অনেক আনাড়িরে সৌধ। এক বাচ্চার মা হয়েও ঠিকঠাক বুঝে ওঠতে পারছি না এই অনুভূতিটাকে৷ একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি? ‘

স্তম্ভিত মুখে সৌধ বলল,

‘ হু, প্রশ্নটা? ‘

‘ দ্বিতীয় বার কাউকে ভালোবাসা যায়? ‘

কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ থাকলেও সহসা দ্বিধাহীন, তীব্র বিশ্বাস নিয়ে, স্পষ্ট ভাষায় সৌধ উত্তর দিল,

‘ কেন নয়? তুই যদি আমার হৃদয় কোণে ভালোবাসার আবছা অক্ষর হোস, সিনু আমার হৃদয় কোণে ভালোবাসার শেষ স্বাক্ষর। ‘

|চলবে|
®জান্নাতুল নাঈমা

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৭০|
একটি একটি করে দিন গড়াচ্ছে। পূর্বের চেয়েও অধিক অস্থির হয়ে ওঠছে সুহাস। প্রতিনিয়ত তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে নামীর সাথে কাটানো এক একটা মুহুর্ত। রাত গভীর হলে যখনি দু’চোখের পাতা এক হয় দুঃস্বপ্নেরা ছিন্নভিন্ন করে দেয় হৃদয়। নির্ঘুম বা দুঃস্বপ্ন দু’টোর একটিকে নিয়েই প্রতিটি রাত পার করছে সে। যেন এক রাতজাগা পাখি৷ যার প্রতিটা দীর্ঘশ্বাস ঘুটঘুটে আঁধার মাখা বদ্ধ ঘরে গুমোট বেঁধে থাকে। এক টুকরো আলোর আশায় উতলা রয় সর্বক্ষণ। যেই আলোর নাম নামী। তার হৃদয় কোণে শিহরণ জাগানো সে এক সুহাসিনী।

সোহান খন্দকার কোনোভাবেই বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে বাবা, ছেলেকে হতাশা জেঁকে ধরেছে। কিন্তু সেই হতাশা তাদের দিক বিভ্রান্ত করতে পারেনি৷ নিয়ম মেনে সুহাস ফিরে গেছে তার কর্মস্থলে। সোহান খন্দকার আগামী মাসে হজে চলে যাবে। ইতিমধ্যে সুহাস ভিসার জন্য আবেদন করতে চেয়েছিল। বাঁধা দিয়েছে আইয়াজ। কারণ সে আর ফারাহও সুহাসের সঙ্গে অ্যামেরিকা যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছে। আইয়াজের পাসপোর্ট করা ছিলই। ফারাহর পাসপোর্ট তৈরি হলেই ওরা তিনজন ভিসার আবেদন করবে৷ আইয়াজের এহেন সিদ্ধান্তের পেছনে অবশ্য বন্ধুত্বের চমৎকার একটি যত্ন লুকিয়ে আছে৷ সৌধ একা সুহাসকে অ্যামেরিকায় পাঠাতে রাজি না৷ আবার সে নিজেও সঙ্গ দিতে পারবে না৷ কারণ, হসপিটালে জয়েন করার পর অনেকদিন ছুটি কাটিয়ে ফেলেছে সে৷ সদ্য বিয়ে করেও ছুটি কাটাল। তাই নিজের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে আইয়াজকে সঙ্গ দিতে বলেছে। সৌধর সঙ্গে পরামর্শ করে আইয়াজ, ফারাহ অ্যামেরিকার এই সফরটাকে হানিমুন সফর হিসেবেই বিবেচনা করে নিল। নিশ্চিন্ত হলো সুহাসও৷ কারণ নামী তাকে দেখে কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে জানে না সে৷ তাই আইয়াজ, ফারাহ সঙ্গে থাকলে জোর পাবে। নামীর অতিপ্রিয় বান্ধবী ফারাহ। তাই বান্ধবী আর তার বরকে নিশ্চয়ই বাবার বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারবে না? নিজের কৃতকর্মের জন্য ঘাড় ধাক্কা খাওয়ার কিঞ্চিৎ ভয় পেলই সে।
.
.
আগামী সপ্তাহে সৌদির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবে সোহান খন্দকার। বিয়ের পর সৌধ সেই যে চট্টগ্রাম গেছে একবারও বাড়িতে আসেনি। এরজন্য অবশ্য শ্রদ্ধেয় আম্মা আর স্নেহময়ী স্ত্রীকে কৈফিয়ত দিতে কৃপণতা করেনি৷ শশুর আগামী সপ্তাহে চলে যাবে এ জন্য বেশ কিছুদিন ছুটি কাটাবে সে। মেয়ের জামাই হিসেবে আলাদা কিছু দায়দায়িত্ব আছে না? তাই এর আগে অল্প ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি। তবে দূরত্ব তার বৈবাহিক জীবন বা স্ত্রীর মনে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলেনি। বরং দূরত্বটুকুই
ওদের সম্পর্কে দারুণ এক মিষ্টতা এনে দিয়েছে। শত ব্যস্ততায়ও নিয়ম মেনে দিনের বেলা বারকয়েক ফোন করেছে সৌধ৷ অপ্রয়োজনীয় কথা বলেনি। খবরাখবর নিয়ে রেখে দিয়েছে। কখনো কখনো প্রয়োজনটাও প্রিয় হয়ে ওঠে ভীষণ। যার উদাহরণ সৌধর থেকে পেল সিমরান। এছাড়া রাতটা ছিল অন্যরকম অনুভূতিপ্রবণ। ন’টার পর থেকে দু’জনের ফোনালাপ শুরু হতো৷ কখনো অতি ব্যস্ততায় ন’টার জায়গায় বারোটা বাজিয়ে কল করত সৌধ৷ অনেক সময় ভিডিয়ো কলে থেকে টুকিটাকি কাজ করত দু’জনই। রাতের খাবারটা প্রায় সময়ই একসাথে খেত। ফোনের স্ক্রিনে মুখোমুখি হয়ে। যেদিন দেরিতে কল করত সেদিন দেরিতেই ফোন ছাড়া হতো। ভিডিয়ো কলে কথা অবশ্য কম বলত ওরা৷ কারণ অডিয়ো কলে সিমরান অনেক বেশি সহজ আর প্রাণ চঞ্চল হয়ে কথা বলতে পারে৷

সারাদিন সে কী করেছে, কোথায় গিয়েছে, আজ কী রান্না শিখল, আব্বা, আম্মা তার রান্না খেয়ে কী প্রশংসা করল, ভার্সিটিতে আজ কোন টপিকে ক্লাস হয়েছে, কাল কোন টপিক পড়াবে, ফাইনাল এক্সাম কবে ইত্যাদি যত কথা সব অনায়াসে উগ্রে দিত মেয়েটা। প্রেমের প্রথম ধাপে নারী, পুরুষের মাঝে যেই উত্তেজনা, আবেগ, ভালোলাগার শিহরণ তৈরি হয় তার সবটুকুরই আভাস পাওয়া যায় এই দম্পতির মাঝে৷ সিমরানের যত গল্প সব মন দিয়ে শুনত সৌধ।

ভিডিয়ো কলে দেখাদেখি ছাড়া ওরা দু’জন কিছুই বলতে পারে না। সিমরান এত বেশি লজ্জা পায় যে সৌধ কী বলবে ভেবে পায় না। পাছে অতি লজ্জায় কল কেটে দেয় যদি? দু একবার এমন হওয়াতে সে ভুল আর করেনি৷ মিষ্টি একটা বন্ধুত্ব আর টক, ঝাল অনুভূতিতে দু’জন সিক্ত হয়েছে সর্বদা৷ একে অপরের সঙ্গে সামনাসামনি তেমন সখ্যতা গড়ে তুলতে না পারলেও ফোনকলে ঠিকই গড়ে তুলল। আলাদা একটা অনুভূতি, অভ্যেসে দু’জন ডুবে রইল দু’জনাতে। প্রথম দিকে সৌধ কম কথা বললেও সিমরানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক সময় সেও তার প্রত্যাহিক জীবনের টুকিটাকি কথা জানাতে শুরু করে৷ সেদিন এক ঘটনাও শেয়ার করছিল। বলেছিল,

” আজ হসপিটালে এক প্যাশেন্ট এসেছিল। জানিস, উনার কী নিয়ে হার্টে সমস্যা হয়েছে? তার আদুরে কন্যা এক ট্রাক ড্রাইভারের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেছে। একজন উকিলের মেয়ের জামাই ট্রাক ড্রাইভার। ইগোতে আঘাত পড়েছে ভীষণ। ব্যস এট্যাক করে বসেছে! ”

ঘটনাটি দুঃখজনক হলেও খিলখিল করে হেসে ওঠে সিমরান৷ হাসিটা বোকা বোকা লাগে। চোখ, মুখ কুঁচকে ধমক দেয় সৌধ। কথার ছলে মুখ ফস্কে বলে ফেলে,

‘ হাসছিস কেন? হাসার জন্য বলিনি। বলেছি বর্তমানে সন্তানদের কী অধঃপতন হয়েছে। সেটা জেনে রাখার জন্য। বাচ্চা, কাচ্চাদের প্রতি কেয়ারলেস থাকা যাবে না বুঝেছিস? তারা কোথায় যায়, কী করে, কার সঙ্গে মেলামেশা করে সব খবর রাখতে হবে। ওই মেয়েটা যে ট্রাক ড্রাইভারের সঙ্গে প্রেম করে পালিয়ে গেল, এটাত আর একদিনে হয়ে যায়নি। প্রেম করতে মিনিমাম কিছুদিন সময় লেগেছে। এরপর পালানো, বিয়ে। এতকিছু ঘটিয়ে ফেলল বাচ্চা একটা মেয়ে৷ পড়ে ক্লাস নাইনে। অথচ পরিবারের লোক টের পেল বিয়ে করে জামাই নিয়ে উপস্থিত হওয়ার পর? শোন সিনু, পড়াশোনা শেষ কর। আরেকটু বুদ্ধিশুদ্ধি বাড়া আই মিন ম্যাচিওর হয়ে নে৷ তারপর আমরা বেবি নিব। দু’জন মিলে পর্যাপ্ত কেয়ার করে সন্তান মানুষ করতে হবে। নাবালক, নাবালিকা অবস্থায় এক চুল অবহেলাও করা যাবে না ওদের। বর্তমান সমাজব্যবস্থার যেমন খুবই করুণ অবস্থা। উঠতি ছেলেমেয়েদের মানসিকতাও করুণ বিপর্যস্ত। ‘

সৌধ এ কথাগুলো খুবই সহজ, সাবলীল ভাবে বলে। সিমরান নিশ্চুপ থেকে মন দিয়ে শুনতে শুনতে হঠাৎ থমকে যাক। চোখের পলক ফেলতে যেমন ভুলে যায় ঠিক তেমনি ভুলে যায় নিঃশ্বাস ছাড়তেও৷ কান দু’টোয় উষ্ণ ধোঁয়া বেরুতে শুরু করে৷ শরীর জুড়ে অদ্ভুত শিহরণে টালমাটাল হয়ে রয়। সে জানত সৌধ ভাই একদিন মন থেকে পূর্ণরূপে তাকে ভালোবাসতে পারবে৷ সেটা এত তাড়াতাড়ি হয়ে যানে কল্পনা করতে পারেনি৷ সবচেয়ে বেশি ভালো লাগল, এটা ভেবে যে মানুষ অবচেতনে যা বলে তা একদম সত্যি বলে। পুরোপুরি মন থেকে বলে। ভেতর থেকে না এলে এভাবে কেউ বলতে পারে না৷ নিমেষে বুকে কম্পন সৃষ্টি হয় মেয়েটার। উথাল-পাতাল তরঙ্গে দুলতে থাকে ছোট্ট হৃদয়টুকু। দীর্ঘসময় নীরব থাকলে
চমকে ওঠে সৌধ৷ হুঁশ ফেরে আচমকা। টের পায় সে কী বলেছে? যেখানে আর পাঁচটা স্বামী, স্ত্রীর মতো সম্পর্কই গড়ে ওঠেনি সেখানে সে ডিরেক্ট বাচ্চা, কাচ্চা নিয়ে কল্পনা করে ফেলেছে। তার বউ কি ধাক্কাটা নিতে পেরেছে? নিশ্চয়ই পেরেছে কিন্তু সামলে ওঠবে কখন? আকস্মিক কেশে ওঠে সৌধ। বিব্রত বোধটুকু আড়াল করে মেকি হেসে বলে,

‘ কী ব্যাপার এমন চুপসে গেলি কেন? এভাবে চুপসে গেলে তো চলবে না। সেদিন কী বলেছিলি মনে আছে? আমাকে তোর লাভলেস মনে হয়। আমি নাকি অপ্রেমিক! কত বড়ো স্পর্ধা নিয়ে এ কথা বলেছিস। ভাবতেই তো আমার দম বেড়িয়ে আসতে চায়! ‘

নড়েচড়ে ওঠে সিমরান৷ লজ্জায় মিলেমিশে একাকার হয়ে চাপা স্বরে প্রশ্ন করে বসে,

‘ বাচ্চা, কাচ্চার পরিকল্পনা করলেই বুঝি কেউ প্রেমিক মহাশয় হয়ে যায়? ‘

চোখ কপালে ওঠে যায় সৌধর। ধীরে ধীরে সিমরান স্বাভাবিক হয়ে ওঠছে তার সাথে। লজ্জা পেলেও মুখের ওপর প্রশ্ন করতে শঙ্কিত হচ্ছে না৷ ভালো লাগল বিষয়টা। মুচকি হেসে অনেক কিছুই বলতে উদ্যত হয়েও আবার থেমে গেল। মনে মনে নিজেকেই উত্তর করল,

‘ আমি তোকে মিথ্যা অনুভূতির জালে ফাঁসাতে চাই না ডিয়ার৷ বাচ্চা, কাচ্চার পরিকল্পনা করলেই প্রেমিক হওয়া যায় না৷ স্ত্রীর শরীরে উন্মত্ত হতে পারা পুরুষকেও প্রেমিক বলা অন্যায়৷ আমি তোকে একজন খাঁটি প্রেমিক রূপে ধরা দিতে চাই। ভালোবাসতে চাই নিজের সবটুকু দিয়ে৷ আমি জানি, ভালোবাসার পরিমাপে তোর ওজন অনেক বেশি। আমি তোর চেয়ে বেশি হতে না পারলেও সমকক্ষ রূপে ধরা দিতে চাই। আই ফিল ইউ এণ্ড আই মিস ইউ, দ্যান আই ওয়ান্ট টু লাভ ইউ ইনশাআল্লাহ। ‘

প্রণয়ের সূচনাতেই প্রিয়তমার সর্বস্ব লুট করে নিতে নেই৷ সবচেয়ে বড়ো লুটপাট তো করেই ফেলেছে। অর্ধাঙ্গিনীর হৃদয়টুকুর মালিকানা পেয়ে গেছে। বাকিটা না হয় রয়েসয়েই হোক। হঠাৎ একদিন খুব যত্ন নিয়ে নিজের হৃদয়টাও তুলে দেবে সে। বুঝিয়ে দেবে সৌধ চৌধুরী শুধু তার হৃদয় চুরিই করেনি নিজের হৃদয় স্বেচ্ছায় বিলিয়েও দিয়েছে। তবে কে মহান হলো? যে চুরি করে সে নাকি যে স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দেয় সে? এই প্রশ্ন সিনুকে একদিন করবেই সে। সেই মুহুর্তটুকু তাদের গভীর মিলনবেলায়ও আসতে পারে! তবে মুহুর্তটা এমন হতে হবে যেন মানুষটা শুধু তাকে অনুভবই করতে পারে৷ মুখ ফুটে উচ্চারণ না করতে পারে একটি শব্দও। প্রিয় খাবার যেমন গিলে খেলে তৃপ্তি আসে না। ঠিক তেমনি প্রিয়জনকে আচমকা বশ করে নেয়া বা আচমকা তার বশ মানাতে অনুভূতির গাঢ়ত্ব বা দৃঢ়ত্ব বজায় থাকে না৷ ভালোবাসতে হয় রয়েসয়ে খুব যতনে সংগোপনে।
.
.
|চলবে|
® জান্নাতুল নাঈমা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে