#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৫৭|
মনের ভেতর অদ্ভুত অশান্তি চলছে। কাউকে ভালো লাগছে না। কোনোকিছুতে মন বসছে না। ঘরের দরজা বন্ধ করে বিবশ মুখে বসে রইল সিমরান। একটু আগে তার কাছে সুহাস এসেছিল। ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে প্রশ্ন করেছে,
‘ সৌধ ফোন করেছিল? ‘
সে জবাব দেয়,
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ কী বলল? ‘
‘ সন্ধ্যায় বেরুবে। এখন বন্ধুদের নিয়ে ক্লাবে আড্ডা দেবে। তুমিও তো যাচ্ছ? ‘
চটে যায় সুহাস। আইয়াজ ফোন করে ইনভাইট করেছে তাকে। সব শুনেই বোনের কাছে এসেছে। বোন সবটা জানে শুনে তেড়ে এসে বলল,
‘ তুই মেনে নিলি? ‘
‘ না নেয়ার কী আছে? বিয়ে করছে বলে সবকিছু জলাঞ্জলিতে তো দেবে না। আমি অমোন দজ্জাল বউ হতে পারব না৷ বরকে প্রাইভেসি দিব৷ ‘
সুহাস ফুঁসতে শুরু করে। যেখানে সৌধ আজ সিনুকে নিয়ে বেরুবে বলেছে। সেখানে প্ল্যান ক্যানসেল হয় কী করে? সৌধ কোন সাহসে তার বোনের সঙ্গে বেরুবার কথা ভঙ্গ করে? বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে? আচমকা সুহাসের মনে নিধি বিঁধতে শুরু করল৷ সৌধ কি নিধির জন্য তার বোনকে অবমূল্যায়ন করছে? সিনুর চেয়ে নিধিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে? একবার ভাবল সে যাবে না৷ আবার মত পাল্টালো। তাকে যেতে হবে। সৌধ এখন শুধু তার বন্ধু না। বোন জামাইও হতে যাচ্ছে। আর নিধি সৌধর দুর্বলতা। ওখানে না যাওয়াটাই নির্বুদ্ধিতা। বরং গিয়ে বুঝতে হবে আসল পরিস্থিতি আর সৌধর মনোভাব। সিমরানের জন্য সৌধ কতটুকু যোগ্য, মঙ্গলকর দু’চোখে প্রমাণ সমেত নিশ্চিত হতে হবে। বোনের স্বার্থে কারো সঙ্গে আপোষ করতে রাজি নয় সুহাস৷ সে হোক সৌধ, বা নিধি৷ আগে বোন পরে বন্ধুত্ব। প্রচণ্ড ক্ষেপেছে সুহাস। এমনিতেই মনে শান্তি নেই। এর ওপর বোনের শান্তি বিনষ্ট হওয়ার পথে৷ ভাইয়ের ক্রোধে জর্জরিত মুখটা দেখে সিমরান শান্ত করার চেষ্টা করে বলল,
‘ তুমি রাগ করছ কেন? ব্যাচেলের জীবনের শেষ আড্ডা তার। আমি কেন বাঁধা দিব? তাছাড়া বলেছে তো সন্ধ্যায় আমাকে নিয়ে বেরুবে। অহেতুক রাগ করো না ব্রো। যাও গিয়ে ঝটপট রেডি হয়ে বের হও। কতদিন পর সব বন্ধুরা একসঙ্গে হচ্ছো। স্পেশালি নিধি আপু আসছে। কতদিন পর তোমাদের সেই পুরোনো বন্ধুমহল এক হতে যাচ্ছে…। ‘
সিমরানের কণ্ঠে চাপা উত্তেজনা। চোখে, মুখে খুশির ঝলক। যা সুহাসের বুকের ভেতরও শিহরণ জাগালো। সব ক্রোধ ছাপিয়ে নম্র হলো মন। সত্যিই তো! কতদিন পর তারা সব বন্ধুরা এক হচ্ছে। আড্ডা হবে, মজা, মস্তি। গল্পের আসর, গানের আসর একদম জমে ক্ষীর। সে শুধু শুধু রাগ করছে। বোনের প্রতি তীব্র ভালোবাসা থেকে সৌধকে ভুল বুঝছে সে। সৌধ কঠিন ব্যক্তিত্বের পুরুষ। চরিত্রে এক বিন্দু ত্রুটি ধরাও মুশকিল। নিধির প্রতি অতীতে আসক্ত ছিল ঠিক৷ বর্তমানে দুর্বলও। তাই বলে তার বোনকে ঠকাবে না৷ কারো প্রতি অন্যায় করতে পারে না সৌধ। সেখানে মানুষটা যদি হয় সিনু, তার বোন। ক’দিন বাদে সৌধর বউ হবে যে মেয়েটা। তাকে ঠকানোর সাধ্য সৌধর হবে না৷ ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পরোক্ষণেই একটু চমকাল। বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
‘ নিধি আসবে কে বলল তোকে? ‘
সিমরান প্রশান্তিময় হেসে উত্তর দেয়,
‘ কে আবার সৌধ ভাই। ‘
চোখ দু’টো কপালে ওঠে গেল সুহাসের। মনে মনে বলল,
‘ ও বাবা এতদূর? শা’লা দেখি পাক্কা খেলোয়াড়, আমার মতো কাঁচা না। ‘
নিমেষে বোনের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক হলো। কী সব ভাবছে। সৌধ এখন শুধু তার বন্ধু না। ছোটো বোনের হবু বরও। রয়েসয়ে মন্তব্য করতে হবে। ভেবেই ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বোনকে মৃদু হাসি বিনিময় করে বেরিয়ে গেল। ভাই বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই সিমরানের অশান্তি শুরু…
সে অশান্তি দূর করতে ফোন করে বান্ধবী লুনাকে। তার স্বস্তির মানুষ। নিজের মনের অস্থিরতা জানালে
লুনা পরামর্শ দেয়, ঝটপট লেকের পাড়ে চলে যেতে। সে আর বাকি বন্ধুরা সেখানে আড্ডা দিচ্ছে। বাড়ি ভর্তি মানুষ। মামাত ভাই, বোনরা এসেছে। বাবার দিকের আত্মীয়তেও ভরপুর। এত মানুষের মাঝে কারো সঙ্গেই স্বস্তি অনুভব করে না সিমরান৷ তাই বান্ধবীকে সায় দিয়ে ত্বরিত পোশাক পাল্টে নিল৷ এরপর বেরিয়ে পড়ল বাবার অনুমতি নিয়ে। বিয়ের কনে একা একা বেরুচ্ছে বলে নানুমনি গজগজ করল। তাকে সামলে নিল সোহান খন্দকার।
.
.
তিন রাস্তার মোড়। পশ্চিম পাশে দোতলা বিল্ডিং। নিচে দোকান উপরে দু’টো ফ্ল্যাটের পাশে একটি ঘর৷
হলঘরের মতো। যার সামনে সাইনবোর্ডে লেখা- “বিগবস ক্লাব” পুরো বিল্ডিংটাই সুজা চৌধুরীর। ক্লাবের অংশ বাদে বাকি অংশ ভাড়া দেয়া। সৌধর বন্ধুরা আগেই উপস্থিত হয়েছে। তারা নিজেদের মতো করে আড্ডা দিচ্ছে। সৌধ এলো তারা উপস্থিত হওয়ার ঘন্টাখানিক পর। এক গাড়িতে চার বন্ধু এলো। সৌধ, আইয়াজ, আজিজ আর প্রাচী। ওরা উপস্থিত হতেই সকলে মিলে স্বাগতম জানালো, কুর্নিশ করতে করতে একবাক্যে বলল,
‘ সৌধ ভাইয়ের আগমন শুভেচ্ছার স্বাগতম। ‘
সৌধ বাঁকা হাসিতে ভেতরে প্রবেশ করল। কাঁধ থেকে গিটার খুলে সামনে এগিয়ে ধরতেই একজন সেটা নিয়ে নিল। প্রাচী চোখ, মুখ কুঁচকে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
‘ কী সমস্যা। সৌধ কি একাই আসছে? ওরে একাই স্বাগত জানাবি? আমরা কি এলিয়েন নাকি! ‘
সকলে হো হো করে হেসে ওঠল। সৌধকে যেভাবে স্বাগত জানালো একই ভাবে এবার প্রাচীকে জানিয়ে বলল,
‘ প্রাচী আফার আগমন শুভেচ্ছার স্বাগতম। ‘
‘ হইছে, হইছে। সেধে সেধে আর সম্মান নিতে চাই না।’
চোখে চশমা ঠেলতে ঠেলতে আইয়াজ গিয়ে বসল চেয়ারে। এদিকে আজিজ সবাইকে পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখে বলল,
‘ কীরে শা’লা, কীরে ভাতিজারা খবর ভালো? ‘
বলতে বলতেই একটু দূরে স্টেজ সিস্টেম ইট সিমেন্টের উঁচু জায়গাটায় ওঠে দাঁড়াল। এরপর বক্তৃতার ভঙ্গিতে দু-হাত তুলে বিজ্ঞের মতো বলতে লাগল,
‘ হে বন্ধুগণ, আপনারা শান্ত হন। আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। কারণ খুব তাড়াতাড়ি আমাদের জাতির ডক্টর, জাতির চৌধুরী সাহেব এবং জাতির ভাই সৌধ ভাইয়ের বলিদান সেলিব্রেশন করতে। ‘
‘ বলিদান! ‘
হকচকিয়ে গিয়ে আইয়াজ কথাটা বলতেই দাঁত ক্যালিয়ে হাসল আজিজ। আইয়াজকে ইশারা করে বুক টানটান করে দাঁড়িয়ে পুনরায় বলতে লাগল,
‘ এই তো বলি প্রাপ্ত বন্ধু আমার! এই তো তাহারা একই পথের পথিক হতে যাচ্ছে। ‘
কান্না আসে না। তবু জোর করে কান্নার ঢঙ করে আজিজ৷ আইয়াজ হতভম্ব মুখে বসে। আজো কী পরিমাণ নাটকবাজ রয়ে গেছে আজিজ! প্রাচী হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে বসে পড়েছে৷ সৌধ এদের হাড়ে হাড়ে চেনে। তাই অবাক হলো না। ওদেরকে ওদের মতো ছেড়ে দিয়ে আইয়াজকে ইশারা করে কাছে ডাকল। জিজ্ঞেস করল,
‘ খাবারের ব্যবস্থা করেছিস? ‘
‘ সুহাস করবে। বাসমতী চালের খাসির কাচ্চি, স্প্রাইট, স্পিড ক্যান। এখন চা, কফি পাচ্ছি শুধু। ‘
‘ কোথায় ও? ‘
‘ কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবে বলল। ‘
.
.
ক্লাবের সামনে বাইক থামতেই নিধির ডাক শুনতে পেল সুহাস,
‘ এই সুহাস, এই। ‘
আচমকা পিছনে ঘুরতেই বাচ্চা কোলে নিধিকে দেখতে পেল সে। নিমেষে বুকের ভেতর জমে থাকা সব রাগ, অস্বস্তি দূর হয়ে গেল। ঠোঁটের কোণে আলতো হাসির রেখা ফুটল সুহাসের। ত্বরিত বাইক থেকে নেমে এগিয়ে গিয়ে অনিরূপকে কোলে তুলে নিল। নিধি যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে বলল,
‘ কেমন আছিস? ‘
‘ এইতো আছি.. তোর কী খবর? ‘
অনিরূপের সঙ্গে খেলা করতে করতে জিজ্ঞেস করল সুহাস৷ নিধি ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ আজ আমি ভীষণ ভালো আছিরে দোস্ত। কতদিন পর তোদের একসঙ্গে পাচ্ছি। আই এম সো হ্যাপি। ওরা সব কোথায়? এসে গেছে? ‘
‘ হ্যাঁ আমি আর তুইই লেট। ‘
অনিরূপের বুকে নাক ঘষল সুহাস। খিলখিল করে হেসে ওঠল ছেলেটা৷ সুহাস আশ্চর্য কণ্ঠে বলল,
‘ কিইরে দোস্ত! ও তো তোর মতো খলখল করে হাসে। ‘
নিধি হা হয়ে গেল৷ সুহাসের গাল টেনে দিয়ে বলল,
‘ আমি খলখল করে হাসি? ‘
সুহাস দুষ্টুমি ভরে উত্তর দিল,
‘ ঘোড়া ছুটলে চারপাশে যে ধ্বনি বাজে তুই ঠিক অমন হাসিস বিলিভ না হলে সৌধকে জিজ্ঞেস করে দেখিস। ‘
অনেকদিন পর দেখা। অনুভূতি জেগে ওঠেছে পুরোনো দিনের মতোই৷ তাই তো কথার ছলে পুরোনো স্বভাবে মুখ ফস্কে সৌধর নাম বলে ফেলল সুহাস৷ সহসা দু’জনের মুখই চুপসে গেল। চারপাশ যেন সুনসান নীরবতায় আচ্ছন্ন। সুহাস আর খেলা করছে না। যত্ন নিয়ে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছে অনিরূপকে। অনিরূপ ওর চুল নাড়াচাড়া করতে ব্যস্ত। নিধি স্মিত হাসল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলল,
‘ চল ভেতরে যাই। ‘
সায় দিল সুহাস৷ ওরা দু’জন যখন ক্লাবের দরজার সামনে উপস্থিত হলো শুনতে পেল, সবাই মিলে সৌধকে জেরা করছে, তাদের হবু ভাবি কোথায়? সুহাসের সঙ্গে আসবে নাকি? সৌধ গম্ভীর গলায় বিরক্ত হয়ে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে,
‘ ওর আসার কথা ছিল না। অহেতুক গ্যান্জাম করিস না তো। ‘
কতদিন? বহুদিন? হ্যাঁ বহুদিনই বটে। বহু এবং বহুদিন পর সৌধর দেখা পেল নিধি৷ বুকের ভেতরটা আবেগে টইটম্বুর। এক সময় কত ভালো বন্ধু ছিল দু’জন। কত ভালো সময় কাটিয়েছে তারা৷ যেখানেই সৌধ সেখানেই নিধি৷ সৌধর চারধারে এক নিধির অস্তিত্ব। চোখ দু’টো টলমল হয়ে ওঠল ওর৷ কেউ দেখার আগেই তা অস্পষ্ট করে রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল৷ সকলের প্রশ্নে বিরক্ত হলো কিঞ্চিৎ। এরা কি নিজেদের বোধবুদ্ধি গিলে খেয়েছে? বিগবস ক্লাবে সিনু কেন আসবে? এটা সৌধর বন্ধুহলের ক্লাব। আজ তারা বন্ধুরা মিলে মিট করতে এসেছে। বন্ধুদের মাঝখানে কেন সিনু আসবে? বউ আর বন্ধু দু’টো দু জায়গাতেই মানানসই৷ এক জায়গাতে না। বউ কখনো বন্ধু হতে পারে না৷
সুহাস, নিধিকে দেখে খুশিতে চিৎকার করে ওঠল প্রাচী, ‘ ওহ নিধি। ‘ বলেই একছুটে এসে নিধিকে জড়িয়ে ধরল সে৷ এবার আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না নিধি। কেঁদে ফেলল আচমকা। ওদের দু’জনের জড়িয়ে ধরা দেখে স্টেজ থেকে লাফিয়ে ছুটে এলো আজিজ। দু হাত এগিয়ে ধরে ঢঙ করে বলল,
‘ ওহ নিধি আয় বুকে আয়। ‘
আজিজের কথা শুনে লাফিয়ে সরে গেল নিধি প্রাচী দু’জনই। আজিজ নিধির দিকে যেতে যেতে বাঁক নিল। সুহাসের দিকে৷ নিধির ছেলে অনিরূপকে কোলে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরল। আফসোসের স্বরে বলল,
‘ আয় ভাই তুইই বুকে আয়। তোর মা তো আসবে না তুইই আয়। ফা টা কপাল আমার। ‘
বান্ধবীর ছেলেকে ভাই! এই আজিজ পারেও বটে৷
সকলের মাঝে হাসির রোল পড়ল৷ এক সৌধ ছাড়া। সে নির্লিপ্ত ভাবে বসে আছে৷ এদিকে আজিজের শক্ত বুকে শক্ত চাপ খেয়ে অনিরূপ উচ্চ গলায় কান্না করে দিল। তার কান্না শুনতেই নিধির বুকের ভেতর ছ্যাঁত করে ওঠল যেন। তড়াক করে এসে আজিজকে বকতে বকতে ছেলেকে কোলে তুলে নিল।
‘ কীরে তুই! এখনো শুধরালি না। বাচ্চাদের সাথে কেউ এমন করে। সব জায়গায় মজা নেস। ভয় পেয়েছে ছেলেটা। ‘
ছেলেকে পরম মমতায় বুকে আগলে নিল নিধি৷ এরপর উপস্থিত সকলের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে নির্দ্বিধায় চলে গেল সৌধর সামনে৷ সৌধ যে চেয়ারটায় বসে আছে তার পাশের চেয়ারে বসে নিজেকে সুস্থির করল। এরপর তাকাল সৌধর পানে। সহসা বুকের ভেতর ধক করে ওঠল। সৌধ তাকায়নি তার দিকে। সে এসেছে অথচ সৌধর মাঝে বিন্দু পরিমাণ উৎসাহও নেই। এই যে পাশে বসল এতেও ভ্রুক্ষেপহীন। আহত হলো নিধি। গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘ কেমন আছিস? ‘
উত্তর দিতে সময় নিল না সৌধ। কৃপণতাও করল না। সহজ গলায় বলল,
‘ ভালো। তুই? ‘
একটুক্ষণ চুপ রইল নিধি। অপেক্ষা করল সৌধর তাকানোর। তাকাল না সৌধ। নিরাশ হলো সে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ আছি, ভালোই। ‘
কথাটা বলে খেয়াল করল সৌধর ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি৷ নিধির হৃদয়টা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল এ হাসিতে। পুরোনো দিন গুলো আর ফিরে আসবে না৷ তাই বলে এতখানি পার্থক্য মানতে কষ্ট হলো। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে৷ কী করবে কী বলবে বুঝতে না পেরে অনিরূপের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ অনিরূপকে দেখবি না? আমার ছেলে। বাচ্চাদের সঙ্গে রেগে থাকতে নেই। ‘
নিধি যখন এ কথাটা বলল সৌধর বুকের ভেতর কাঁটা হয়ে বিঁধল, অনিরূপ অর্পণ শিকদার আর নিধির সন্তান। নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিল সৌধ। নিধির দিকে তাকাল না একবারো। তবে নিষ্পাপ শিশুটার দিকে তাকাল। অনিরূপের ফর্সা গুলুমুলু মুখ, মায়ের মতো বাদামি রঙের নিষ্পাপ চাহনি হৃদয় শীতল করে দিল তার। স্মিত হাসল সে। সহসা ডান হাত বাড়িয়ে অনিরূপের ডান হাত স্পর্শ করে বলল,
‘ হেই লিটল স্টার, উই ক্যান বি ফ্রেন্ডস? ‘
সৌধ, নিধিকে আশ্চর্য করে দিয়ে অনিরূপ মুগ্ধ করা এক হাসি দিল। দু-হাত বাড়িয়ে প্রায় লাফিয়ে চলে গেল সৌধর কোলে। সৌধ আগলে ধরল অনিকে। দু’হাতে উঁচিয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে বলল,
‘ ওকে ফাইন পাক্কা দোস্ত হয়ে গেলাম আমরা। ‘
এবারে নিধির দিকেও তাকাল সৌধ। বহুদিন না দেখা মুখটায় তাকিয়ে হাসল অমায়িক ভঙ্গিতে। যে হাসিতে নিধি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল৷ সৌধ দৃষ্টি সরিয়ে নিল নিধির হালকা লালচে চোখ দু’টো থেকে। তার মনে হলো ভেতরে ভেতরে কাঁদছে নিধি৷ কেন কাঁদছে? উত্তর জানতে চায় না। নিধি অপলকভাবে সৌধর কোলে অনিরূপকে দেখছে৷ সৌধ ওর সঙ্গে অল্প অল্প কথা বলছে, হাসাতে চেষ্টা করছে। অনিরূপ বার বার সৌধর নাকে আঙুল ঢুকিয়ে দিতে লাগলে সৌধ মুখ সরাতে সরাতে নিধিকে বলল,
‘ ভালো ইয়ার্কি মারে তোর ছেলে। ঠিক তোর মতো। বন্ধু পাতাতে না পাতাতেই ইয়ার্কি শুরু করে দিয়েছে।’
একটু দূরেই প্রাচী। সবই শুনছিল৷ হঠাৎ কাছে এসে বলল,
‘ বাব্বাহ বন্ধু পাতিয়ে ফেললি? ‘
‘ এটাই ব্যাটার। ‘
দৃঢ় স্বর সৌধর৷ প্রাচী টের পেয়ে কথা বাড়াল না৷ দূর থেকে ওদের তীক্ষ্ণ চোখে খেয়াল করল সুহাস৷ সৌধ নিধির সঙ্গে বিরবির করছে৷ কী বলছে ওরা? কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে এলো সে। তক্ষুনি আজিজ গিটারে টুংটাং বাজাতে লাগল। কী বিশ্রী শুনালো! সুহাস রেগে গিয়ে বলল,
‘ ছাগল দিয়ে হাল চাষ হয় না। দে এদিকে দে। ‘
প্রাচী হঠাৎ চ্যাঁচিয়ে ওঠল,
‘ এই সৌধ, এই সুহাস গান ধর তো একটা। ‘
বাকি বন্ধুরা প্রতিবাদ করল।
‘ এই না এভাবে না। এক এক করে গাইতে হবে। তার আগে সবাই শান্ত হয়ে বোস। ‘
ওরা সবাই শান্ত হয়ে বসল। নিচ থেকে সবার জন্য চা নিয়ে এলো কয়েকজন। ওরা সবাই মিলে চা খেতে খেতে আড্ডা দিল। নিধির ছেলের বয়স সাড়ে সাত মাস। আড্ডার কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই ছেলেটা ক্ষুন ক্ষুন করে কাঁদতে লাগল। নিধি টের পেল, খিদে পেয়েছে। বার বার মায়ের কোলে আসতে বাহানা খুঁজল। নিধি কোলে নিলে বুকের দিকে মুখ ঘষতে শুরু করল অনিরূপ। সকলে আড্ডায় ব্যস্ত৷ আড্ডার ফাঁকে সৌধর চোখ চলে যায় নিধির অস্বস্তি ভরা মুখে। বুঝতে পারে সমস্যা। তাই প্রাচীকে ইশারা করে নিধিকে নিয়ে ওপাশে চলে যেতে। ছোটো বাচ্চা নিয়ে মায়েদের এই সমস্যা। ওরা পরিস্থিতি বুঝে না৷ খিদে পেয়েছে ওদের খাবার চাই। এতে মা যতই বিব্রত হোক ওরা সেসব কেয়ার করে না৷ করবে কী? ওরা তো বুঝতেই পারে না৷ ভেবেই আচমকা মুচকি হাসল সৌধ।
.
সকলে আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডার পাশাপাশি ফোন টিপছিল সৌধ৷ ফেসবুক স্ক্রলিং করতে গিয়ে হঠাৎ দৃষ্টি থমকাল সিমরানের আইডিতে লুনার একটি লাইভ ট্যাগ দেখে। ভ্রু কুঁচকে ফেলল সে৷ লাইভ শো করল। দেখতে পেল লুনা সহ আরো গুটিকয়েক ছেলেমেয়ে। লেকের ধারে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সেখানে সিমরানও আছে৷ লুনা সিগারেট খাচ্ছে আর লাইভে তার ফ্যান, ফলোয়ারদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। নিমেষে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল তার৷ লুনা মেয়েটাকে একদম পছন্দ নয় তার। এর আগে একবার ওর সঙ্গে মিশতে নিষেধ করেছে সিমরানকে। বেস্ট ফ্রেন্ড বলে মেলামেশা বন্ধ করতে পারেনি৷ তাই বলে রাস্তাঘাটে, বাইরে মেয়েটা এভাবে সিগারেট খাবে? এ কেমন অসামাজিকতা! অসভ্য, বর্বর একটা মেয়ে! ক্রোধে দেহ শক্ত মূর্তি হয়ে গেলো সৌধ৷ এতদিন সিমরান শুধু ওর বন্ধুর বোন ছিল৷ এখন হবু বউ৷ সুজা চৌধুরীর হবু পুত্রবধূ। একটু হিসেব করে চলা উচিত ছিল৷ মেজাজ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ল। ক্রুদ্ধ কণ্ঠে সুহাসকে ডাকল। সুহাস কাছে আসতেই ফোন এগিয়ে ধরে বলল,
‘ লুনার সাথে ওকে মিশতে না করিস না কেন তুই? ‘
চমকে ওঠল সুহাস। বিস্ময়ে বড়ো বড়ো চোখ করে একবার ফোন আর একবার সৌধর দিকে তাকাল। ঢোক গিলতে গিলতে ভাবল, সিনু তো বাড়ি ছিল। কখন বের হলো? যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। সৌধ কেমন ছেলে, কোন বাড়ির ছেলে, সৌধর কী অপছন্দ, তাদের বাড়ির চোখে কী অপরাধ। সমস্তটাই অবগত সুহাস৷ এদিকে বোন যে ভুল করেছে সেটা মনে মনে স্বীকার করলেও সৌধর সামনে স্বীকার করতে নারাজ৷ তাই দোষ সৌধকেই দিল৷ ঠিক বাচ্চাদের মতো করে বলল,
‘ সিনু তো বাড়িতে ছিল৷ কখন বের হলো? সব দোষ তোর। তুই আজ এ সময় ওকে নিয়ে বেরুতে চেয়েছিলি। যদি কথা রাখতি ও কি লুনার কাছে যেত? ‘
বিগড়ানো মেজাজটা আরো বিগড়ে গেল সৌধর৷ এই সুহাস কোনোদিন ঠিক হবে না৷ ভুল তারই হয়েছে। সুহাসের থেকে সমাধান পাবে না সে৷ অহেতুক কথা বাড়ল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সৌধ। বাকি বন্ধুদের দিকে তাকাল একবার। ওরা ফিসফাস করছে। শুনতে পেল, তার হবু বউকে দেখার আগ্রহ অনেকের। কেউ কেউ আশায় ছিল আজ হবু বউকে নিয়েই আসবে। পরিচয় করাবে তাদের সঙ্গে। হঠাৎ করেই সৌধর মনে কী চাপল কে জানে? কল করল সিমরানকে। যেহেতু লুনার লাইভ চলছে সেহেতু দেখতেই পেল সিমরান কী করে।
আচমকা সৌধর কল পেয়ে কেঁপে ওঠে সিমরান। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে লুনার থেকে দূরে সরে যায়৷ কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই সৌধ তিরিক্ষি মেজাজে বলে,
‘ কোথায় আছিস? ‘
ঢোক গিলে সিমরান। আমতা আমতা করে সত্যিটাই বলে সে কোথায় আছে। সত্যি বলাতে একটু ঠান্ডা হয় সৌধ। আদেশ করে,
‘ পনেরো মিনিটের মধ্যে ক্লাবের সামনে আসবি। এসে কল করবি আমাকে, অপেক্ষায় থাকলাম। ‘
আর একটা কথাও বলল না সৌধ। যা বলার সামনাসামনি বলবে। যতই বেস্ট ফ্রেন্ড হোক। মেয়েটা বিশৃঙ্খল লাইফ লিড করে৷ লুনাকে হয় ওই লাইফ ত্যাগ করতে হবে৷ নয়তো সিমরানের সাথে বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ ঘটাতে হবে। মনে মনে কঠিন পণ করল সৌধ।
অনিরূপকে খাইয়ে শান্ত করে ফিররে এলো নিধি। বসল সৌধর পাশের সিটে৷ পুরোনো অভ্যাস তার। বরাবর সৌধর পাশের সিটটা তার জন্যই বরাদ্দ ছিল৷ সে অনুযায়ী বিনা দ্বিধায় আজো বসে পড়ে। যা সুহাসের কাছে দৃষ্টিকটু লাগছে খুব৷ আবার বন্ধুত্বের জায়গা থেকে মেনে নিচ্ছে। সৌধকে ঠিক বুঝতে পারছে না সুহাস৷ কেমন শান্ত, শীতল আচরণ দিচ্ছে। শক্ত ধাঁচের মানুষ নিয়ে এই হলো সমস্যা। ভেতরে ভাঙছে না মচকাচ্ছে বোঝা মুশকিল।
গানের আসর জমে ওঠেছে৷ সৌধকে হাজার জোরাজোরি করেও গান গাওয়ানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত নিধি অনুরোধ করল। সৌধ ভেবেছিল গাইবে না৷ নিশ্চিত ছিল সুর আসবে না৷ নিধি অনুরোধ করতে করতে হঠাৎ যখন তার বাহু চেপে ধরল৷ একদম বিনা সংকোচে। চমকে ওঠল সৌধ। অনুভব করল নিধির এই স্পর্শ যন্ত্রণা দিচ্ছে তাকে। মেনে নিতে পারছে না এই স্পর্শকে। অথচ একদিন এই স্পর্শের জন্য অভুক্তের ন্যায় অপেক্ষা করেছে সে। অবাক দৃষ্টিতে তাকায় সৌধ। সুক্ষ্মতার সাথে খেয়াল করে নিধির হালকা লাল চোখ দু’টোকে। যে চোখের ভাষা সে কোনোদিনও বুঝে ওঠতে পারেনি৷ সেই চোখের ভাষা আজ তাকে বিস্মিত করছে। কাঁদছে মেয়েটা৷ ওর মন কাঁদছে। কেন কাঁদছে? কেন কাঁদবে? প্রশ্ন গুলো তীব্র জেদ তুলে দেয় মনে। আলগোছে তীব্র অবজ্ঞায় সরিয়ে দেয় নিধির ধরে রাখা হাতটি। এরপর ওঠে গিয়ে সম্মুখে সুহাসের পাশে বসে। গিটার তুলে নিয়ে সুহাসকেও বলে আজিজের হাতের গিটারটা নিতে। সুহাস গিটার নিতেই সে কোন গান গাইবে বলে৷ এরপর দু বন্ধু গিটার বাজায়। গান গায় শুধু সৌধ একা।
—- পৃথিবীটা নাকি ছোটো হতে হতে
Satellite আর cable এর হাতে
Drawing room-এ রাখা বোকা বাক্সতে বন্দি
আ-হা-হা-হা, আ হা, আ-হা-হা-হা
আ হা, আ-হা-হা ——
মাথা নত সৌধর। দৃষ্টিজোড়া আবদ্ধ। একমনে গিটারে আঙুল চালাচ্ছে। মৃদু মৃদু মাথা নাড়াচ্ছে আর গাইছে। পাশে বসে সুহাস। ওর গিটারের ধ্বনি একটু বিধ্বংসী। সৌধর ধ্বনিতে যত আবেগ সুহাসের ধ্বনিতে ততই ক্রুদ্ধতা।
—- ঘরে বসে সারা দুনিয়ার সাথে
যোগাযোগ আজ হাতের মুঠোতে
ঘুচে গেছে দেশ-কাল-সীমানার গণ্ডি
আ-হা-হা-হা, আ হা, আ-হা-হা-হা
আ হা, আ-হা-হা-হা —–
নিধির বুকের ভেতরটা অশান্ত হয়ে ওঠেছিল। যা গাঢ় হলো সৌধর গলায় পরের লিরিক শুনে,
—- ভেবে দেখেছো কি
তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে
তারও দূরে
তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে
ভেবে দেখেছো কি
তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে
তারও দূরে
তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে —–
সহসা বুকে কম্পন সৃষ্টি হলো নিধির৷ চোখ দু’টো টলমল। তারদিকে সৌধর কোনো খেয়াল নেই৷ ওর সমস্ত খেয়াল আজ নিজের দিকে। হাতে থাকা গিটারের সুরে।
—- সারি সারি মুখ আসে আর যায়
নেশাতুর চোখ TV পর্দায়
পোকামাকড়ের আগুনের সাথে সন্ধি
আ-হা-হা-হা, আ হা, আ-হা-হা-হা
আ হা, আ-হা-হা-হা–
পাশাপাশি বসে একসাথে দেখা
একসাথে নয়, আসলে যে একা
তোমার-আমার ভাড়াটের নয়া ফন্দি
আ-হা-হা-হা, আ হা, আ-হা-হা-হা
আ হা, আ-হা-হা-হা
ভেবে দেখেছো কি
তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে
তারও দূরে
তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে
ভেবে দেখেছো কি
তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে
তারও দূরে
তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে….
কেউ নিশ্চুপ। কেউ হতবিহ্বল। কেউ তীব্র ক্লেশে বিভোর। কেউ বা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গান শুনছে৷ এমনই ক্ষণে আচমকা সৌধর ফোন বেজে ওঠল। আঙুলে চলন থামে সৌধর৷ কণ্ঠে সুর বন্ধ হয়। আলগোছে পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করতেই সিমরান ভীত কণ্ঠে বলে,
‘ সৌধ ভাই, এসেছি আমি। ‘
সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দেয় সৌধ। প্রাচীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ প্রাচী ক্লাবের সামনে সিনু দাঁড়িয়ে আছে৷ নিয়ে আয় ওকে। ‘
সুহাস চমকে ওঠল। সকল বন্ধুরা প্রথমে বিস্মিত হয়। এতবড়ো চমক রেখেছিল সৌধ! ‘ হুররেএ ‘ ওরা খুশিতে হৈচৈ শুরু করে। নিধি ছেলে কোলে হতভম্ব মুখে বসে। সৌধ কি ইচ্ছে করে সিনুকে ডেকে আনল? তীব্র অসন্তুষ্টির ছাপ নিধির মুখে। বন্ধুমহলে সিমরানকে সে মেনে নিতে পারল না৷ সিমরান সুহাসের ছোটো বোন৷ আজ বাদে কাল সৌধর বউ হবে, হয়ে যায়নি তো আর। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল নিধি৷ অবিশ্বাস্য চাউনিতে তাকিয়ে রইল সৌধর মুখপানে। অনুভব করল তার বুকের ভেতর ভয়াবহ কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে। ইচ্ছে করে এক্ষুনি ছুটে পালিয়ে যেতে৷ সময় থাকতে যে অনুভূতি তাকে ছুঁতে পারেনি। অসময়ে সে অনুভূতি কেন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরল।
যা সৌধর মুখোমুখি হতে আরো প্রগাঢ়তায় রূপ নিচ্ছে। তবে কি বন্ধুত্বের দিকে তাকিয়ে এখানে আসা ভুল হলো? বিধ্বংসী এক ঝড়ের পূর্বাভাস নিধির বক্ষগহ্বর জুড়ে…।
| চলবে |
® জান্নাতুল নাঈমা
#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৫৮|
বন্ধু মহলের আড্ডা কিছুক্ষণ স্থগিত। সকলে উৎসুক নয়নে তাকিয়ে। খোলা দরজার সামনে কখন সৌধর হবু বউ এসে দাঁড়াবে। সেই প্রতীক্ষায় রয়েছে প্রত্যেকে। নিধির ভেতর অদ্ভুত অস্বস্তি চলছে। সে চাচ্ছে না এই অস্বস্তিতে ভুগতে। যথাসম্ভব নিজেকে স্থির রাখার চেষ্টা করছে। তবু মনটা নিয়ন্ত্রণে থাকতে চাইছে না৷ নিধির অস্বস্তি সর্বপ্রথম ধরা পড়ে আইয়াজের চোখে৷ এরপর থেকেই আইয়াজ খেয়াল রাখতে শুরু করে নিধির দিকে। সবার মতো সৌধও বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। সুহাস খেয়াল করে বলল,
‘ প্রাচীকে না পাঠিয়ে তুই যেতে পারতিস। আমাকেও বলতে পারতিস৷ বোন আমার, আমিই নিয়ে আসতাম। ‘
সৌধ মহাবিরক্তি নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
‘ বোন ভক্তি খুব দেখাতে পারিস তাই না? তোর বোন এখন শুধু তোর বোন নেই। আমার হবু বউও৷ সো, আমি তাকে কীভাবে ট্রিট করব সেটা তোর থেকে শিখতে হবে না৷ শোন সুহাস, সাবধান করে দিচ্ছি আমার আর সিনুর মধ্যে ঢুকার চেষ্টা করবি না। বন্ধু আমার তুই, সেই সম্পর্কটায় চিড় যেন না ধরে। আর সিনুর বড়ো ভাই। সম্মানের জায়গাটা ঠিক রাখিস৷ আমি জানি তুই সম্পর্কের মূল্য কম বুঝিস। তার মানে এই না আমি সিনুর সঙ্গে কী করব, কীভাবে করব এসবে তুই ইন্টারফেয়ার করবি! ‘
বিস্ময়ে হতবুদ্ধি সুহাস। সে সম্পর্কের মূল্য কম বুঝে? শেষ পর্যন্ত তার ভাঙা হৃদয়ে আঘাত করল সৌধ! আর কী বলল? সিনুর সাথে কী করবে, কীভাবে করবে ওর ব্যাপার। সে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। সিনু তার বোন একদম নিজের বোন৷ আদরের ছোটো বোন। তা কি সৌধ ভুলে গেছে। ক্রোধে গজগজ করতে করতে সুহাস বলল,
‘ ও তোর বউ হওয়ার আগে আমার বোন। আমি অবশ্যই ওর ব্যাপারে নাক গালাব৷ ‘
সৌধর চোখ দু’টো ছোটো ছোটো হয়ে গেল। মনে মনে বলল, ‘ বুঝেছি তোর নাকের ডগা বেশি উঁচু হয়েছে। ওয়েট নিচু করে দিচ্ছি। ‘ এরপর আশপাশে তাকিয়ে দেখল সবার মনোযোগ কোনদিকে। তার দিকে নেই৷ তাই দুর্বোধ্য হেসে সুহাসের দিকে ঝুঁকে বসে ফিসফিস করে বলল,
‘ তাহলে তো মুশকিল হয়ে গেল সুহাস। আমার বউকে আমি ওপেন ফ্রেমে লাভ বাইট দিতে পারব না। তার নির্লজ্জ, বেহায়া ভাইয়ের চোখে পড়ে গেলে আমার কলার ধরে ইন্টারফেয়ার করতে আসবে! ডিপজলের ফরমে চলে গিয়ে বলবে, মাথা নষ্ট, তুই কোন সাহসে আমার বোনকে অমন গাঢ় চুমু খেলি? ‘
সহসা চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল সুহাসের। কেশে ওঠল খুক খুক করে। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সৌধকে আপাদমস্তক দেখে ঢোক গিলল। জীবনে প্রথমবার বোধহয় লজ্জা পেল ছেলেটা। স্তম্ভিত মুখ তার কিংকর্তব্য বিমূঢ়। সৌধ খেয়াল করল সুহাস লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে দারুণ মজা পেল সে। সুহাসকে জব্দ করার জম্পেশ অস্ত্র তাহলে এটাই।
ইচ্ছে করে সৌধ তাকে জব্দ করল টের পেল সুহাস। আচম্বিত ওঠে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সুহাসের অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসতে লাগল সৌধ। হাসির ফাঁকে যেই ডানদিক, সম্মুখে দৃষ্টি গেল অমনি হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো মিলিয়ে গেল হাসিটা৷ বন্ধুর সঙ্গে দুষ্টুমির ছলে যে কথাটা বলেছে মনের মাঝে তা টিপটিপ বৃষ্টির মতো ঝড়তে লাগল। একদিকে নিধির অদ্ভুত দৃষ্টি অপরদিকে মনের মাঝে টিপটিপ বৃষ্টি। বৃষ্টির উৎসর্গ তার হবু বউ সিমরান। মৃদু কেশে ওঠল সৌধ। নিধির দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে পা বাড়াল বাইরের দিকে। প্রাচী এখনো ভেতরে আসছে না যে? কোনো সমস্যা হলো না তো? ভাবতে ভাবতে দরজা পর্যন্ত যেতেই প্রাচী আর সিমরানের মুখোমুখি হলো।
সিমরানের মুখশ্রীতে আঁধার নেমেছে। যা দেখে সৌধর ভ্রু কুঁচকে গেল। প্রাচী কপালে ভাঁজ ফেলে চাপা গলায় বলল,
‘ সুহাস বকেছে সিনুকে। তুই নাকি কিসের লাইভ দেখেছিস ও কোন সিগারেট খোর বান্ধবীর সাথে আড্ডা দিচ্ছিল! তাই সুহাসও বকল আর বলল তুইও নাকি ঝাড়বি। ‘
আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেল সৌধ। সুহাসের মাথা কি একেবারেই খারাপ হয়ে গেল? সে কখন বলেছে, সিনুকে বকবে? তাও এই ভরা জলসায়? দাঁতে দাঁত চেপে ধরল সৌধ। সিমরানের দিকে তাকাল তীক্ষ্ণ চোখে। বলল,
‘ আমি সুহাসের মতো মাইন্ডলেস না। বউ ডেকে এনে বন্ধুদের সামনে ঝাড়ার পিণ্ড নিয়ে জন্মায়নি আমি। ‘
অকস্মাৎ চমকে নত দৃষ্টি উঁচু করল সিমরান। সৌধর ভারিক্কি মুখাবয়ব, গভীর, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিজোড়ায় দৃষ্টি মিলতেই সর্বাঙ্গ শিউরে ওঠল৷ নিমেষে দৃষ্টি সরিয়ে নিল, ভয় শূন্য হৃদয়ে। শরীরের প্রতিটি ইন্দ্রিয় যেন জানিয়ে দিল ‘ এ দৃষ্টি ভয়ের নয় সিনু, এ দৃষ্টি প্রথম প্রহরের প্রণয়াবেগের। ‘ এমনিতেই রোদ মাথায় এসেছে। ফর্সা ত্বকে রোদ পড়ে লালচে হয়েছিল৷ তার ওপর সৌধর মুখে হবু বউ থেকে সোজা বউ শুনে বুকের ভেতর ঢেউ খেলে গেল। বুক ভর্তি পানিতে যেন ছলাৎ ছলাৎ তরঙ্গ বইছে। কান দু’টোয় ছুঁয়ে দিচ্ছে উষ্ণ বাতাস। চারপাশে এত মানুষ। অথচ সিমরানের সেদিকে হুঁশ নেই। সে বিগলিত চিত্তে লজ্জা মাখা মুখশ্রীতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। সৌধ কখন প্রাচীকে ইশারা করে তাকে ভেতরে নিয়ে বসাতে বলেছে খেয়ালই করল না। যখন হুঁশ ফিরল নিজেকে আবিষ্কার করল পরিচিত, অপরিচিত বহু চোখের সম্মুখে। নেই শুধু সৌধ আর সুহাস।
সৌধর বন্ধুরা খুবই বিনয়ের স্বরে কথা বলছে সিমরানের সাথে। যারা চেনে তারাও আজ যেন নতুন করে আলাপে মেতেছে। ভাবি, ভাবি ডাকে পুরো ঘরটা মুখরিত। সিমরান লজ্জায় টইটম্বুর। এত সম্মান, এত প্রাধান্য। কার জন্য? ডক্টর সৌধ চৌধুরীর জন্যই তো। এতকিছুর ভীড়ে সিমরান ভুলেই গিয়েছিল, এখানে ছেলে সমেত নিধি উপস্থিত আছে৷ সবার সঙ্গে আলাপচারিতা, আজিজের দুষ্টুমি উপভোগ করতে করতে হঠাৎ নিধির দিকে দৃষ্টি পড়ল। নিধি তাকিয়েই ছিল তার দিকে। তাই চোখাচোখি হতেই মৃদু হাসল নিধি। সিমরানের এত্ত অপরাধবোধ হলো। মনে মনে ইশ বলেই ওঠে গিয়ে নিধির পাশে বসল। জিজ্ঞেস করল,
‘ কেমন আছো নিধি আপু? তোমার ছেলে! ওয়াও কী কিউট। ‘
অনিরূপের গালে আলতো করে ছুঁয়ে দিল সিমরান। নিধি বলল,
‘ ভালো আছি। তুই? ‘
সে জানে সিমরান খুব ভালো আছে৷ ভালো থাকারই কথা৷ তবু আনুষ্ঠানিকতার খাতিরে জিজ্ঞেস করল। সিমরান অমায়িক একটা হাসি দিয়ে বলল,
‘ ভালো আছি। বাবুকে কোলে নিই? ‘
অনিরূপকে এগিয়ে দিল নিধি। সিমরান ওকে কোলে নিয়ে গুলুমুলু গালে চুমু খেল সযত্নে। নিধি অপলকভাবে তাকিয়ে দেখল মেয়েটা৷ কী স্নিগ্ধ, কী প্রশান্তিমাখা হাসি। কী দারুণ সুখী একটা মেয়ে। যেন পৃথিবীর সমস্ত প্রাপ্তি তার হাতের মুঠোয়।
সত্যিই কি তাই? স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ কি আদতেও পৃথিবীতে আছে? সিমরান কি স্বয়ংসম্পূর্ণ? একদমই না। তবু তাকে সবচেয়ে সুখী সরূপ দেখছে নিধি। নিজের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটা প্রাপ্তি গোটা সিমরানকেই বদলে দিয়েছে। বড্ড লোভ জাগে, ঈর্ষা হয়। তৎক্ষনাৎ নিজেকে দমিয়ে নেয়। মস্তিষ্কে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সেদিনের সেই দৃশ্যটা। যেদিন, সিমরান তার পায়ে ধরে সৌধর ভালোবাসা ভিক্ষা চেয়েছিল। অনুরোধ করেছিল সৌধকে ফিরিয়ে না দিতে৷ সিমরানের কোনো দোষ নেই। সৌধর কোনো দোষ নেই৷ তাহলে সে কেন লোভী হয়ে ওঠছে? কেন ঈর্ষা হচ্ছে তার? না এখানে আর এক মুহুর্ত থাকা যাবে না৷ নিজের ব্যক্তিত্বের বাইরে চলে যাওয়ার ভয়ে কুঁকড়ে গেল নিধি। দোষী তো সে নিজেও না। সবটাই ভাগ্যের দোষ। ভাগ্যকে মেনে নেয়া ছাড়া এখন আর উপায় নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। সিমরান অনিরূপকে রূপ নামে ডেকে ডেকে আদর করছে। নিধি নিতে চাইলে সিমরান দিল না। এমতাবস্থায় সৌধ আর সুহাস এলো। দুপুরের খাবার আয়োজন হয়ে গেছে। একটু পরই খাবার পাঠিয়ে দেবে। সৌধ এসে দেখল নিধির পাশে বসে সিমরান৷ অনিরূপকে আদর করছে। সে গিয়ে সিমরানের মুখোমুখি চেয়ারটায় বসল। তাকিয়ে রইল সিমরান আর অনিরূপের দিকে। অনিরূপ ভীষণ মিশুক বাচ্চা। যে কোল পাতে তার কোলেই চলে যায়৷ আর কী সুন্দর মিশে যায়। সিমরানের সাথে খেলা করতে করতে একবার ওর চুল মুঠো ধরছে, আরেকবার ওড়না টেনে মুখে দিচ্ছে। সমস্তই খেয়াল করছিল সৌধ। এক পর্যায়ে অনিরূপ সিমরানের চুল এমন করে টেনে ধরল ব্যথায় চোখ কুঁচকে ফেলল মেয়েটা।
দেখামাত্র সৌধ তড়াক করে ওঠে এসে রয়েসয়ে অনিরূপের হাত থেকে সিমরানের চুল ছাড়িয়ে দিতে লাগল। বন্ধুরা সবাই তা দেখে হৈহৈ করে ওঠলে সুহাস ধমক দিল। ধমক দিয়ে সে নিজেও অনিরূপের হাত থেকে বোনের চুল ছাড়াতে সাহায্য করল। সৌধ বলল,
‘ আস্তে জোরে টানিস না। তাহলে চুলে আঁচ লেগে রূপের হাত কেটে যাবে। কচি হাত তো…। ‘
নিধি খেয়াল করল সিমরান, সৌধ দু’জনই অনিরূপকে শুধু রূপ বলে ডাকল। সিমরান কেন শুধু রূপ বলল জানে না৷ তবে সৌধর বলায় ব্যাখ্যা বের করল, অনি নামটা তার আর অর্পণের সঙ্গে মিলিয়ে। তাই হয়তো সৌধ ওই নামে ডাকল না। দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিধি। ওঠে এসে অনিরূপকে কোলে নিয়ে বলল,
‘ সরি সরি। ওর জন্য সিনুর কষ্ট হলো। ‘
সৌধ ভ্রু কুঁচকে ফেলে বলল,
‘ সরি বলার কী আছে? ও কি বুঝতে পারে নাকি আশ্চর্য! ‘
মুখ ঘুরিয়ে নিল সৌধ। দেখল সিনু হতভম্ব চোখে তাকিয়ে আছে। সৌধ গম্ভীর গলায় বলল,
‘ ওড়না ঠিক কর। পারলে মাথায় দে। ‘
সিমরানকে কথাটা বলেই সরে গেল সৌধ৷ পরিস্থিতি গুমোট। দম বন্ধ লাগছে নিধির। তাই সুহাসকে বলল,
‘ সুহাস বাবুকে নিয়ে আর বেশি দেরি করা ঠিক হবে না রে। আমি বিদায় নিই। ‘
সুহাস বলল,
‘ বাবুর তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কী মাম্মা সমস্যা হচ্ছে? ‘
অনিরূপ ফোকলা দাঁতে হাসল। সুহাস বলল,
‘ দেখ ও খুব এনজয় করছে। দে আমার কোলে দে তুই ওদের সঙ্গে আড্ডা দে, চিল কর। ‘
বলেই খপ করে কোল থেকে অনিরূপকে নিয়ে পুরো ঘরময় ঘুরতে লাগল। একে একে সব বন্ধুরাই অনিরূপকে কোলে নিল। এমন ভাবে বাচ্চাটাকে মাতিয়ে রাখল যে মা এবং খিদে দু’টোর কথাই ভুলে গেল অনিরূপ।
.
.
খাবার দিয়ে গেলে ওরা সবাই মিলে খেতে বসল। খেতে খেতে গল্পও চলছিল ওদের। সৌধর পাশেই সিমরান বসেছে। নিধি আর প্রাচী ওদের সম্মুখীন হয়ে বসা। বাকি বন্ধুরাও আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে খাচ্ছে। খেতে খেতে সৌধ আর সিমরানকে খেয়াল করছিল নিধি। এক বলিষ্ঠ সুদর্শন যুবকের পাশে ফিনফিনে দেহের অপরূপা যুবতী৷ দেখতে মন্দ লাগছে না৷ সৌধ যেমন সুদর্শন সিমরানও রূপ, লাবন্যে চোখ ধাঁধানো। পাশাপাশি দু’জনকে মেইড ফর ইচ আদারই লাগছে। হঠাৎ নিধির মনে পড়ল সৌধ সব সময় তাকে বলত, ‘ তুই সিম্পল মেয়ে নিধি৷ তোর এই সাধারণত্বই আমার ভালো লাগে। ‘ সে কথা মনে হতেই সিমরানকে সুক্ষ্ম চোখে দেখল। সিমরান তার মতো সাধারণ নয়৷ গর্জিয়াস মেয়ে।
সৌধর পছন্দ সাধারণ। তাহলে সিমরানকে কেন পছন্দ হলো? যে যেমন পছন্দ করে তার বিপরীত কাউকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে পায়। কথাটির সত্যতা মিলল যেন। পরনে লেডিস জিন্সের সাথে হলুদ কামিজ পড়েছে সিমরান। মাথায় হলুদ রঙের জর্জেট ওড়না দিয়ে ঘোমটা দেয়া৷ নতুন বউয়ের মতোই লাগছে দেখতে। বিয়ের ফুল ফুটেছে বোধহয়। মনে মনে হাসল নিধি। শুনতে পেল আজিজ সিমরানকে ডাকছে,
‘ ভাবি ও ভাবি। ‘
সিমরান ডান দিকে তাকাল। লজ্জা লাগছে তার। সৌধ নিচু কণ্ঠে বলল,
‘ তাকাস না ফাইজলামি করছে। প্রয়োজনীয় কথা বলবে না। ‘
সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি ঘুরিয়ে খাওয়ায় মন দিল সে। আজিজ থেমে রইল না৷ বলল,
‘ ও ভাবি আমাদের সৌধ কিন্তু মাছের কা টা বাছতে পারে না। আপনি কিন্তু বিয়ের পর এ দিকটা খেয়াল রাখবেন। যত্ন করে মাছের কা টা বেছে বেছে খাওয়াবেন। ‘
আঁতকে ওঠল সিমরান। সে শুনেছিল সৌধ ভাই খুব একটা মাছ খায় না৷ যেগুলোতে কা টা বেশি সেগুলো তো একদমই খায় না। তানজিম আন্টি ছোটো থেকেই ছেলেকে জোর করে মাছ খাওয়ায়। এখনো মাছ বেছে দেয় ছেলেকে। সে নিজেও তো এসবে কাঁচা। মুখ ভার হয়ে গেল। মনে মনে ভাবল, বাড়ি গিয়ে মাছ নিয়ে বসবে৷ মাছ বাছা শিখতে হবে তাকে। এতদিন সেও মাছ এড়িয়ে চলেছে। যখন খেয়েছে আম্মু বা ভাবি বেছে দিলে খেয়েছে। এখন আর ওভাবে চলবে না। নিজেকে পাকা করতে হবে। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে সৌধর দিকে তাকাল সিমরান। বলল,
‘ এটা তো প্রয়োজনীয় কথাই। ‘
সৌধ কিছু বলল না৷ মনে মনে হাসল৷ আজিজ আবার ডাকল,
‘ ভাবি ও ভাবি। ‘
সিমরান একবার তাকিয়ে মৃদু হেসে মাথা নত করল। আজিজ বলল,
‘ সৌধর খেয়াল রাখিয়েন হ্যাঁ? ‘
সিমরান জবাব দিল না৷ প্রাচী ব কা দিয়ে ওঠল,
‘ কী শুরু করেছিস ফা জিল? ‘
আজিজ পাত্তা না দিয়ে ফের ভাবি ভাবি করলে সৌধ গরম চোখে তাকাল। আজিজ সঙ্গে সঙ্গে সচেতন হয়ে ঘুরে বসল। সৌধর খাওয়া শেষ। ওঠবে এমন সময় খেয়াল করল সিমরানের বা হাতের পিঠে লম্বা লাল দাগ। সদ্যই আঁচ লেগেছে বুঝতে পারল। ভ্রু জোড়া কুঁচকে হাতটা ধরে ওপরের দিকে ওঠিয়ে বলল,
‘ কীভাবে লাগল? ‘
চমকে ওঠল সিমরান। আমতাআমতা করে বলল,
‘ রিকশা থেকে নামতে গিয়ে। ‘
সৌধ কা টা স্থানে বুড়ো আঙুল বুলিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘ রাস্তায় দেখেশুনে চলাফেরা করতে হয়। ‘
কথাটা বলেই বেরিয়ে গেল সৌধ। নিধি সবটাই খেয়াল করছিল। শেষ দৃশ্যে বুকের ভেতরটা ভার হয়ে ওঠল পুরোনো স্মৃতি মনে করে। চোখ দু’টো শত চেষ্টায়ও আর স্বচ্ছ রাখতে পারল না৷ ঝাপসা হয়ে ওঠল আপনাআপনি। সৌধ কতটা কেয়ারিং ছেলে সে জানে। সিমরানের প্রতি ওর ভালোবাসা কতটুকু তৈরি হয়েছে জানে না৷ কিন্তু আজ যে সব দৃশ্যের সম্মুখীন হলো, এতে স্পষ্ট বুঝতে পারল, সৌধ আর তার অভাবে ভুগছে না৷ সে অযথাই কষ্ট পাচ্ছে, অহেতুক নিজেকে অপরাধী করে বেঁচে আছে। বুকটা কেঁপে ওঠল তক্ষুনি। অহেতুক? অযথা? সে চোখ থাকতেও অন্ধ, বোধ থাকতেও নির্বোধ হয়ে অপরাধ করেনি? এই যে বুকের ভেতর তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা। এই যে আফসোস নামক ঝড় বইছে এগুলোর দায় কার? তারই তো? গলা দিয়ে আর খাবার নামল না নিধির। অজান্তেই দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়াল। নিমেষে তা আবার মুছেও নিল। অঘটন অবশ্য ঘটে গেল একটা৷ আইয়াজ দূর থেকে তার কান্না দেখে ফেলল!
.
.
খাওয়াদাওয়া শেষে বন্ধুদের আড্ডা জমে ওঠেছে৷ পাশাপাশি বসে আছে সৌধ, সিমরান৷ ওদেরকে ঘিরেই সকল আনুষ্ঠানিকতা। নিজেকে খুব নিকৃষ্ট লাগছে নিধির। এতগুলো দিন ধরে নিজেকে বহুভাবে গুছিয়ে নিয়েছিল। আজ চোখের সামনে সৌধর পাশে সিমরানকে দেখে। দু’চোখ ভরে সিমরানের সুখ দেখে তার হৃদয়টা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে তীব্র। অথচ সে কষ্ট পেতে চায় না৷ সে মন, প্রাণ ভরে সৌধ, সিনুর সুখ প্রার্থনা করে। নিজের মনের এই টানাপোড়েন থামাতে না পেরে শেষে মিথ্যার আশ্রয় নিল সে৷ হঠাৎ করেই বলল,
‘ অর্পণ ম্যাসেজ করেছে রে। ওর নাকি শরীর খারাপ। আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে। ‘
আকস্মিক কথায় সকলে থমকে গেল৷ নিধি চলে যাবে এত তাড়াতাড়ি? সৌধ ভ্রু উঁচিয়ে তাকাল একবার৷ নিধির চোখ, মুখ দেখে মাথা নত করল। বিরবিরিয়ে বলল,
‘ লায়ার। ‘
পাশে বসা সিমরান স্পষ্ট শুনল শব্দটি। বিস্মিত চোখে তাকাল সৌধর পানে৷ সৌধ খেয়াল করল সিনু তাকিয়েছে তার দিকে। তাই ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ ও মিথ্যা বলছে। ‘
সিমরানের বুকের ভেতর চিড়িক দিয়ে ওঠল। সে যে ভালোবাসে। তাই তো দেখতে পারে ভালোবাসার যন্ত্রণা। থমথমে গলায় সিমরান বলল,
‘ তুমি চাও নিধি আপু না যাক? ‘
সৌধ তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
‘ থাকলেই কি না থাকলেই কী? ‘
‘ তুমি এখনো নিধি আপুকে ভালোবাসো? ‘
সহসা চোখ দু’টো দৃঢ় হয়ে ওঠল সৌধর। শক্ত, নিচু গলায় বলল,
‘ এখন এসব প্রশ্ন করার সময়? আমি তোর সাথে বেড রুমে আছি? ‘
‘ সরি। ‘
অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিল সিমরান। এদিকে নিধি সকলের থেকে বিদায় নিয়ে সৌধ আর সিমরানের সামনে এলো। মুখে মিথ্যে হাসির রেখা ফুটালেও মন থেকে বলল,
‘ সৌধ, সিনু তোদের জন্য শুভকামনা। অনেক ভালো থাক তোরা৷ ‘
এরপর সিমরানের মুখোমুখি হয়ে সিমরানকে আলতো করে জড়িয়ে ধরল৷ কানে কানে বলল,
‘ সৌধকে ভালো রাখিস। সুখী হোস তোরা। ‘
আর এক মুহুর্ত দেরি করল না নিধি৷ সুহাসের থেকে অনিরূপকে কোলে তুলে নিল৷ সবাই ওকে নিচ পর্যন্ত এগিয়ে দিলেও রিকশা না পাওয়া পর্যন্ত পাশে থেকে গেল শুধু আইয়াজ।
.
.
হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূরে এসে পড়েছে নিধি, আইয়াজ৷ নিধির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আইয়াজের। তাই সেই বলল, কিছুক্ষণ হাঁটতে। একটু অপেক্ষা করে বাসায় যেতে৷ এ মুহুর্তে একাকী কারো সঙ্গ প্রয়োজন ছিল নিধির৷ যে তাকে বুঝবে, সম্পূর্ণ মনোযোগ তাকে দিয়ে সময় দেবে। আইয়াজ বলল,
‘ অর্পণ স্যারের টেক্সট করার বিষয়টা মিথ্যা। বুঝেছিলাম আমি। ‘
বাঁকা হেসে নিধি বলল,
‘ এত বুঝিস ক্যান তুই? ‘
ঠোঁট কামড়ে আলতো হাসল আইয়াজ৷ অকস্মাৎ বলল,
‘ তুই এখন ফিল করছিস সৌধকে ভালোবাসিস রাইট? ‘
থমকে দাঁড়াল নিধি। অনিরূপকে কোলে নিতে ইশারা করল৷ আইয়াজ অনিরূপকে কোলে নিলে সে বসে পড়ল ডান পাশের বটগাছের শিকড়ের ওপর। বুকের ভেতর থেকে উপচে আসা কান্না গুলো গিলে ফেলে বলল,
‘ আমি মরে যাচ্ছি আয়াজ, আমি মরে যাচ্ছি। ‘
হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে আইয়াজ গিয়ে নিধির পাশে বসল। ধীরস্থির গলায় বলল,
‘ শান্ত হো নিধি। আমার কথা শোন। ‘
‘ এখানটায় ভীষণ জ্বলছে আয়াজ।
মরে যাচ্ছি আমি। দেখ নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। ‘
বুকের বা’পাশে হাত রেখে নিধি ছটফট করছিল। আইয়াজ বলল,
‘ কিচ্ছু হচ্ছে না, কিছুই হবে না৷ জাস্ট শান্ত কর নিজেকে। আমার কথা শোন। ‘
ওড়নার কোণা মুখে চেপে হুহু করে কেঁদে ফেলল নিধি৷ বলল,
‘ আমি সৌধর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি রে। আমি বিশ্বাসঘাতকতা করেছি আমার সাথে। আমি সৌধকে ঠকাইনি। আমি আসলে ঠকিয়েছি আমাকে।’
‘ আমরা সবাই সেটা জানি৷ সৌধ নিজেও জানে। ‘
চমকে গেল নিধি। বিস্মিত হয়ে বলল,
‘ সৌধ জানে! ‘
‘ এসব এখন বাদ দে। আমি তোকে কিছু কথা বলতে চাই। কথাগুলো যদি শুনতে চাস কান্না থামিয়ে চোখের পানি মোছ। ‘
বাচ্চাদের মতো অসহায় ভঙ্গিতে আইয়াজের কথা মেনে নিল নিধি। আইয়াজ খুব আহত হলো নিধির এই রূপ দেখে। কী সুন্দর প্রাণোচ্ছল, শক্তিশালী মেয়েটা কীভাবে মনের দ্বন্দ্বে অসহায় হয়ে পড়ল! দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল আইয়াজ,
‘ “Sometimes you don’t know what you’ve got until it’s gone!” মাঝে মাঝে তুমি জানো না যে তুমি কি পেয়েছো, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা হারিয়ে যায়!’
‘ আমার সাথে এটাই হয়েছে। ‘
দৃঢ় স্বর নিধির৷ আইয়াজ স্মিত হেসে বলল,
‘ হয়নি তবে হতে পারে। যদি তুই তোর ভুল অনুভূতি থেকে সরে না দাঁড়াস। ‘
‘ মানে? ‘
‘ যা চলে গেছে, যা পাসনি তা নিয়ে আমি বলতে চাই না। আমি বলব, যা পেয়েছিস তাই নিয়ে। সৌধকে তুই পাসনি৷ সো ওই চ্যাপ্টার ক্লোজ। তুই কাকে পেয়েছিস বল? অর্পণ স্যার আর অনিরূপ। তুই ওদের মূল্যটা বুঝছিস না। অন্ধ হয়ে আছিস সেই মানুষটাকে ঘিরে। যে আজ বাদে কাল অন্য একজনের হয়ে যাবে। ‘
থামল আইয়াজ। নিধি স্তম্ভিত। আইয়াজ ফের বলল,
‘ আমি অত্যন্ত লজ্জিত সেই দিনটার জন্য। শুধু আমি না আমরা তিন বন্ধুই লজ্জিত। যেদিন না জেনে না শুনে স্যারের ওপর হাত তুলেছিলাম। এরজন্য একদিন তাকে সরি বলে দিব। অজানা ভুল ছিল ওটা। নিধি, আসল ভুল তোর ছিল। তুই আমাদের জানাসনি তোর বিয়ের কথা৷ যেভাবেই বিয়ে হোক। হয়েছে তো? আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড। সৌধকে জানাতে অসুবিধা ছিল আমাকে বা সুহাসকে জানাতে পারতিস৷ যাক সে কথা। জানাসনি, প্রচণ্ড গোলমাল হয়েছে ফলসরূপ। কিন্তু এরপর থেকে যা সব হচ্ছে। তার জন্য আমরা মোটেও তোর ওপর সন্তুষ্ট নই। যে সৌধ ভেঙে পড়েছিল তোর বিয়ের কথা শুনে। যে সৌধ অর্পণ স্যারকে খু ন করার হুমকি দিয়েছে সেই সৌধও তোর ওপর অসন্তুষ্ট। কেন জানিস? তুই ওকে বাছাই না করে অর্পণ স্যারকে করেছিস এ জন্য না। হ্যাঁ এজন্য ও দুঃখ পেয়েছে। তীব্র যন্ত্রণায় ভুগেছে। যার রেশ আজো রয়ে গেছে। কিন্তু ও অসন্তুষ্ট এ জন্য যে অনেকগুলো বছর ধরে ও যাকে ভালোবেসে আসল। তাকে ও ভুল চিনেছে। তুই সব সময় তোর সিদ্ধান্তে অটুট থেকেছিস। সবসময় ন্যায়, অন্যায়, সঠিক, ভুল বিবেচনা করে চলেছিস। সেই তুই কীভাবে অর্পণ স্যারের প্রতি অন্যায় করিস। তা আমরা কেউই মেনে নিতে পারি না৷ আমরা সবাই তোর ভালো চাই। তুই নিজের মনকে স্থির কর নিধি। আজ যা পেয়েছিস তা ধরে রাখ৷ এক জীবনে একই ভুল দু’বার করিস না। তাহলে তোর প্রতি যতটুকু সম্মান আছে তা আর থাকবে না। সবচেয়ে বড়ো কথা এখনো আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক আগের স্থানে ফিরে যাওয়া সম্ভব৷ কিন্তু তুই যদি তোর বৈবাহিক জীবনে সুখী না হোস৷ তবু তোরই ভুলে। তাহলে সৌধ তোকে ছাড়বে না। না বন্ধুত্ব রাখবে আর না তোকে। ‘
‘ কী করবে ও? মেরে ফেলবে আমাকে? ‘
‘ মরেই তো আছিস। দেহ টুকুর বিদায় দেবে। ‘
মুখাবয়ব শক্ত হয়ে ওঠল নিধির। আইয়াজ ওর মাথায় একহাত রেখে বলল,
‘ শান্তি, শান্তি। ‘
সহসা নরম হলো মেয়েটা। ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ আমি খুব খারাপ আয়াজ। আমি খুব খারাপ। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি মন থেকে চাই ওরা ভালো থাকুক। প্রার্থনা করি, ওদের দেখে আমার মনের যন্ত্রণা না বাড়ুক। ‘
‘ তুই খুব ভালো মেয়ে নিধি। আমরা সবাই রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আমাদের দ্বারা ভুল হবেই৷ সেই ভুল শুধরে নিতে হবে শুধরানোর সুযোগ না থাকলে দ্বিতীয় বার যেন একই ভুল না হয় সচেতন থাকতে হবে। ‘
নিশ্চুপ নিধি। আইয়াজ বলল,
‘ বাসায় যা। গিয়ে অর্পণ স্যারের সঙ্গে কথা বল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখ মানুষটাকে। উনি তোর সন্তানের বাবা। যার সন্তান তোকে মা ডাকে তার বুকে একবার মাথা রাখ। দেখবি পৃথিবীতে তোর মতো সুখী মেয়ে আর একটিও নেই। ‘
আইয়াজের কথা শুনে শরীরে কাঁ টা দিয়ে ওঠল। বুকে কম্পন ধরল খুব৷ আইয়াজ জিজ্ঞেস করল,
‘ স্যার তোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে? ‘
নিধি মাথা নাড়ল। না করে না। আইয়াজ বলল,
‘ তোরা একসঙ্গে ঘুমাস? ‘
‘ হু। ‘
‘ লাস্ট কবে চুমু খেয়েছিস তোরা? ‘
একটু চমকাল নিধি৷ মনে করতে পারল না। ভাবল, অনিরূপ পেটে আসার আগে লাস্ট ঘনিষ্ঠ হবার সময়ই বোধহয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। আইয়াজ বলল,
‘ লাস্ট কবে ইন্টিমেট হয়েছিস? ‘
‘ অনিরূপ পেটে আসার আগে। ‘
‘ হোয়াট! কী সমস্যা, স্যার কি ইন্টারেস্টেড না? ‘
‘ উনার সঙ্গে আমি খুব খারাপ বিহেইভ করিরে। কী করব বল? ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে মানসিক রোগি হয়ে গেছি। উনি আমার সাথে কথা বললেই মেজাজ গরম হয়। শরীরে টাচ করলেই মাথায় আগুন ধরে যায়। ‘
ধমক দিল আইয়াজ। নিধি বলল,
‘ এত সিরিয়াস হয়ে কথা বলিস না । অচেনা লাগে। ‘
‘ তুই অচেনা হয়ে গেছিস নিধি। এটা তুই না৷ এই জীবন তোকে মানায় না। ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শোন, আজ গিয়ে তুই স্যারের সঙ্গে সময় কাটাবি। নাহ শোন এক্ষুনি বাসায় যাবি স্যার সামনে আসা মাত্র জড়িয়ে ধরবি শক্ত করে৷ যা হারিয়েছিস তা নিয়ে আফসোস না করে যা পেয়েছিস তা আঁকড়ে ধর দোস্ত প্লিজ। অর্পণ স্যার তোর শত্রু নয় এ পৃথিবীতে এখন সেই তোর সবচেয়ে আপন মানুষ। অনিরূপের বাবা অর্পণ স্যার, তোর স্বামী। ‘
®জান্নাতুল নাঈমা