ত্রিধারে তরঙ্গলীলা পর্ব-৩৫+৩৬

0
878

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৩৫|
সুগন্ধা পয়েন্টে তিনটে কাপল রুম ভাড়া করেছে সৌধ। যার দু’টিতে কাপল থাকলেও একটিতে সে একা থাকবে৷ বিষয়টা মজার নাকি আফসোসের? আফসোসের হওয়ার কথা থাকলেও মনের ওপর জোর প্রয়োগ করে মজার হিসেবেই নিল। বিলাসবহুল হোটেল রুমে বিরহ যন্ত্রণা বুকে পুষে কাটিয়ে দিল শেষরাত। সূর্যোদয়ের সময় গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ল বিচের উদ্দেশ্যে। কেউ বিরহে নিদ্রাহীন কাটায় তো কেউ তীব্র অনুরাগে। নামী আর সুহাসের জীবনে সবচেয়ে স্মরণীয় রাত ছিল আজ। আজকাল সুহাসের ভালোবাসায় খুব যত্ন মিশে থাকে। সময়ের সাথে সাথে একটা মানুষ কতটা বদলায় সুহাস তার চাক্ষুষ প্রমাণ। এই দুষ্টু ছেলেটাকে নামী এখন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। বলা যায় তার পুরো পৃথিবীটাই এখন একমাত্র বর সুহাসকে ঘিরে। প্রথম হানিমুনের প্রথম ঘনিষ্ঠতার পর সুহাস যখন কানে কানে ফিসফিস করে বলল,

‘ মিসেস সুহাসিনী, সমুদ্রপাড়ে একসঙ্গে সূর্যোদয় দেখা কি বাকিই থাকবে? ‘

নামী নাজুক মুখে মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। বলিষ্ঠ বুকটায় মাথা রেখে গভীর নিঃশ্বাস ছাড়ে। বলে,

‘ নো মিস্টার সুহাস, একে একে একসঙ্গে সব স্বপ্নই পূর্ণ করব। ‘

এরপরই বেরিয়ে পড়ে দু’জন। পথিমধ্যে সুহাস, নামীর সাথে দেখা হয়ে গেল সৌধর। সুহাস উৎফুল্লতার সঙ্গে বলল,

‘ আরে দোস্ত ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিস! ‘

‘ তো আর কী করব? আমার তো বউ নেই যে তাকে নিয়ে বেরুবো। ‘

আকস্মিক কথায় থতমত খেয়ে গেল সুহাস। সৌধর মনের অবস্থা কী? কতখানি যন্ত্রণা বুকে পুষে ছেলেটা তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে সবই বুঝতে পারল৷ এ মুহুর্তে উচিত ছিল সিঙ্গেল ভাবে সৌধকে সময় দেয়া। কিন্তু সৌধর জেদেই কাপল হয়ে আসতে বাধ্য হলো। সুহাসের থমকে যাওয়া দেখে সৌধ হো হো করে হেসে ওঠে বলল,

‘ কী রে মুখ চুপসে গেল কেন তোর? দ্রুত পা চালা কাপল পিক তুলে দিব। ‘

দুই বন্ধুর কথোপকথন চলছিল এদিকে নামী প্রচণ্ড লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে রইল৷ কারণ, সে বুঝতে পারেনি সৌধর সঙ্গে এভাবে দেখা হয়ে যাবে। সাতসকালে তারা জামাই, বউ গোসল করে বেরিয়েছে। লজ্জা অবশ্য এটা নিয়ে পাচ্ছে না। লজ্জা পাচ্ছে তার ইয়া লম্বা, ঘন চুল গুলো ভেজা দৃশ্যমান বলে। লজ্জায় নিঃশ্বাস আঁটকে গলার ওড়না মাথায় তুলল চটপট। নামী লজ্জা পাচ্ছে টের পেয়ে সুহাস ওর গা ঘেঁষে ফিসফিস করে বলল,

‘ লজ্জা পাচ্ছ কেন? বন্ধু আমার ইজি থাকো। ‘

সৌধ খেয়াল করল সুহাস, নামী দু’জনেরই চুল ভেজা৷ ভোরবেলা সদ্য স্নান করে আসা কপোত-কপোতী। ভেবেই গোপনে হাসল সে। নামীর ভেজা চুল চুইয়ে পানি ঝড়ছে। ফলে কামিজের পেছনের অংশ ভিজে গেছে অনেকটা। ওড়না দিয়ে অর্ধেক চুল ঢাকা পড়লেও বাকিটা উন্মুক্ত। ত্বরিত
দৃষ্টি সরিয়ে নিল সৌধ। বন্ধুর বউ হলেও নামীকে সে নিজের বোনের চোখে দেখে। তাই ও লজ্জা পেয়েছে বুঝতে পেরে সুহাসকে বলল,

‘ তোরা যা আমি এদিকটার কিছু দৃশ্য বন্দি করে আসছি। ‘

একসঙ্গে সূর্যোদয় দেখে কিছু সময় সমুদ্রপাড়ে কাটিয়ে ফেরার পথে হঠাৎ সুহাসের নজর পড়ল একটি বাচ্চা মেয়ের দিকে। যে তার বাবা, মায়ের হাত ধরে বালুচরে হাঁটছে। প্রকৃতির শান্ত, স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে মাখাচ্ছে। সকালবেলায় মিষ্টি রোদে এই মিষ্টি দৃশ্যটি দেখে আচমকা সুহাসের মন বিগলিত হলো। পাশে থাকা স্নিগ্ধ মুখের রমণীকে আকস্মিক ডাকল,

‘ নামী। ‘

ত্বরিত সে ডাকে তাকাল নামী। উত্তর করল,

‘ বলো? ‘

সুহাস চোখে ইশারা করে মিষ্টি পরিবারটিকে দেখাল। চোখেমুখে দীপ্তি ফুটিয়ে বলল,

‘ লেটস প্ল্যান অ্যা বেবি? ‘

হৃদয়ে যেন বিদ্যুৎ স্পর্শ করল নামীর! আকস্মিক কথাটির ধাক্কা সামলাতে না পেরে সুহাসের হাত ছেড়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে পড়ল। চোখে বিস্ময় ফুটিয়ে মুখ হা করে তাকিয়ে রইল সুহাসের পানে। সুহাস মিটিমিটি হাসতে হাসতে হাত দু’টো তার থ্রি কোয়াটার প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বলল,

‘ কী সুইট না?’

নামী পুনরায় তাকাল। সত্যি সুইট। কিন্তু সুহাস কী বলল এটা? ভেবে বলল নাকি ঝোঁকের মাথায়? সে যাইহোক কথাটা তার হৃদয়ে লেগেছে। অদ্ভুত অনুভূতিতে গা শিউরে ওঠছে৷ কেমন যেন কাঁদতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছেটা আপনাআপনিই প্রকাশ হয়ে গেল। তার চোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল নিমিষেই। কেন এমন হলো? কী ছিল সুহাসের কথাটিতে? অমন একটি কথা বলে সুহাসেরও মাথায় হাত। কী এমন অপরাধ হয়ে গেল হঠাৎ। যে নামী কাঁদছে? মুখটা পাংশু বর্ণে পরিণত হলো সুহাসের। দ্বিধান্বিত ভঙ্গিতে নামীর হাত চেপে ধরে বলল,

‘ সরি জান। মজা করছিলাম। আমরা নিজেরাই তো বেবি। আমাদের আবার কীসের বেবি প্ল্যান? ‘

এ কথায় আরো বেশি কান্না পেল নামীর। দু-চোখ উপচে পানি গড়াল অবিরত। সুহাস হতভম্ব মুখে তাকিয়ে নামীর হাত টেনে ধরে বলল,

‘ চলো ফিরে যাই। বকাঝকা, কান্নাকাটি সব রুমের ভেতর করবে। প্লিজ এখানে রিয়াক্ট করো না। এই সৌধটা কই চলে গেল। ‘

কথার ফাঁকে আশপাশে নজর বুলাল সে। দেখতে পেল একটু দূরেই সৌধ দাঁড়িয়ে। গলা ছেড়ে ডাকল তাই,

‘ এই সৌধ চল ফিরে যাই। আয়াজের খবরটা নিতে হবে তো… ‘

হোটেলে ফেরার পর নিজেদের রুমে ঢুকে সুহাসকে কিছু বলতে দিল না নামী৷ তার পূর্বেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ওকে। বুকে মাথা রেখে নিঃশব্দে কাঁদল কিছুক্ষণ৷ সুহাসের এত্ত মায়া লাগল যে কী করবে কী বলবে কিছুই ঠাওর করতে পারল না। ওর মনোভাব বুঝে নামী নিজেই মাথা তুলল। দু-হাত বাড়িয়ে সুহাসের সহজসরল মুখটায় আলতো করে চেপে ধরে ভাঙা কণ্ঠে বলল,

‘ আমাদের তো সংসার করা হয়নি সুহাস। কবে সংসার হবে আমাদের? ‘

এবারে মাথা খুলল সুহাসের। কান্নার কারণ তবে এটাই? কিয়ৎক্ষণ ভেবেচিন্তে নামীর হাত দু’টো চেপে ধরে ডান হাতের তালুতে চুমু খেল। এরপর হাত বাড়িয়ে নামীর চোখের অশ্রু কণাগুলো মুছতে মুছতে বলল,

‘ সিম্পল একটি বিষয় নিয়ে কেউ এভাবে কাঁদে পাগলী! ‘

সুহাসের হাতের কব্জি ধরে হুহু করে কেঁদে ওঠল নামী। সুহাস আচমকা শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ওকে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

‘ প্লিজ নামী! ডোন্ট ক্রাই, আমরা সংসার করব। জাস্ট আর কয়েক মাস। আমার ইন্টার্নি শেষ হোক। তোমারো ফাইনাল ইয়ারটা কমপ্লিট হতে থাকুক। তুমি তো খেয়াল করেছ মা’কে। সে কতটা শান্ত, শীতল হয়ে গেছে। বাবার সঙ্গে এখন সব স্বাভাবিক। আমার দৃঢ় বিশ্বাস খুব শিঘ্রই মা আমাদেরও মেনে নিবে। পুত্রবধূর অধিকার দিয়ে ঘরে তুলবে তোমাকে।’

সুহাসের কথাগুলো সত্যি না মিথ্যা জানে না নামী৷ কিন্তু এই মুহুর্তে এতটুকু স্বান্তনা বাণীর খুব প্রয়োজন ছিল তার খুব।
.
.
দরজায় ঠকঠক শব্দ শুনে দরজা খুলল আইয়াজ৷ দেখতে পেল সৌধ দাঁড়িয়ে। মলিন হাসল সে। সরে গিয়ে বিমর্ষ কণ্ঠে বলল,

‘ আয়। ‘

রুমের ভেতর উঁকি দিয়ে সৌধ দেখল ফারাহ এখনো গভীর ঘুমে। বুঝল, ঘুমের ওষুধের রেশ এখনো কাটেনি। আইয়াজের চোখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে ঘুমায়নি। চোখের পাপড়ি দেখে পুরোপুরি বুঝে গেল, এই ছেলে কান্নাকাটি করেছে। ধীরপায়ে হেঁটে রুমের ভেতর প্রবেশ করল সৌধ। ভাবল, কান্নাকাটি করাটা কি স্বাভাবিক নয়? তার মতো শক্ত মনের পুরুষ যদি ভালোবাসার মানুষটির বিয়ে মানতে না পেরে চোখে অশ্রু ঝড়ায় আইয়াজের মতো নরম মনের পুরুষ প্রেমিকার ধ র্ষিত হওয়ার গল্প শুনে কাঁদবে না? দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। ডিভানে বসতে বসতে বলল,

‘ পোশাকটাও পাল্টাসনি! আমি বসছি যা ফ্রেশ হয়ে নে৷ একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করব। সুহাস, নামী ওয়েট করছে। ফ্রেশ হয়ে এসে ফারাহকে ডাকবি। ‘

সৌধর কথায় নিঃশ্বাস চঞ্চল হলো আইয়াজের। স্থির অচঞ্চল ছেলেটা আজ বড্ড অস্থির আর চঞ্চল হয়ে ওঠেছে। ফারাহকে এক সেকেণ্ডও চোখের আড়াল করতে নারাজ মন। কিন্তু এ মুহুর্ত সৌধ এসেছে। তাই ওর ওপর ভরসা করে ওয়াশরুম ঢুকল। ঢোকার পূর্বে অবশ্য বলে গেল,

‘ যদি ওঠে আমাকে ডাকবি। ‘

সৌধ বাঁকা হেসে বলল,

‘ এত টেনশন নিচ্ছিস কেন? যে ঘুম দিয়েছে না ডাকলে পাঁচ, দশমিনিটে ওঠার সম্ভাবনা নেই। চিল ম্যান। ‘

আইয়াজ ওয়াশরুম ঢোকার পর সৌধ নিজের ফোন ঘাটাঘাটি করছিল হঠাৎ ডিভানের এক কোণে আইয়াজের ফোনের স্ক্রিনে নজর পড়ল। প্রাচীর ম্যাসেজ এসেছে? ফোনটা যে অবহেলায় পড়ে আছে বুঝতে পেরে হাত বাড়িয়ে ফোন কাছে এনে লক ছাড়াল। সুহাস, আইয়াজের দু’জনেরই লক তার জানা। তাই অসুবিধা হলো না৷ আর এটাই বোধহয় কাল হয়ে দাঁড়াল। কারণ প্রাচী জানে না তারা কক্সবাজার এসেছে। প্রাচী কেন বন্ধুদের মধ্যে কেউই জানে না। প্রাচী লিখেছে,

‘ দোস্ত জানিস ডক্টর নাকি অর্পণ স্যারের হাওয়া বদল করতে বলেছে৷ শরীর ফিট হলেও মন নাকি ফিট না৷ তাই নিধি আর অর্পণ স্যার আগামীকাল বেড়াতে যাচ্ছে। শা লা আমাদের বন্ধুর মন ভেঙে নিজের মন ফুরফুরা করতে কক্সবাজার যাচ্ছে। আমার শরীর একবারে জ্বলে গেছে এসব শুনে। নিধিটার ওপর রাগ হয় আবার মায়াও হয়৷ শা লার পরিবারের চাপে মেয়েদের কত কীই করা লাগে উফফ। ‘

প্রাচীর প্রথম ম্যাসেজের পর সেকেণ্ড ম্যাসেজ ছিল,

‘ সৌধর কী অবস্থা দোস্ত? আম্মা অসুস্থ বলে আমি আর থাকতেও পারলাম না। তোরা ওকে দেখে রাখিস ভাই। আর শোন নিধি আর অর্পণ স্যারের ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারটা ঘুণাক্ষরেও সৌধকে বলিস না৷’

তৃতীয় ম্যাসেজ,

‘ কীরে ছ্যামড়া রিপ্লাই করস না ক্যান? সৌধকে নিয়ে ব্যস্ত কি তোরা… শোন শোন আরেকটা কথা, সুহাসকেও ব্যাপারটা বলিস না। ওর তো আবার পেটে কথা থাকে না। মুখ ফস্কে বলে দিলেই বিপদ। ‘

ম্যাসেজ গুলো দেখা শেষে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়ল সৌধ৷ হাতের শক্ত মুঠোয় আইয়াজের ফোনটা নিয়ে ভয়াবহ এক আছাড় দিতে নিয়েও হঠাৎ থমকে গেল। নিজের কপাল দোষে অন্যের যন্ত্র কেন নষ্ট করবে কেন? হতাশ ভঙ্গিতে ফোন কিঞ্চিৎ দূরে ছুঁড়ে মেরে শরীর এলিয়ে দিল ডিভানে। মুখ হা করে শ্বাস নিল ঘনঘন। যেভাবেই হোক এই যন্ত্রণা থেকে বেরুতে হবে তার। যেভাবেই হোক ওই বেইমানটার মুখোমুখি হওয়ার আগে কক্সবাজার ত্যাগ করতে হবে। তার মাথায় যে খু ন চেপেছে এই খু নের শিকার অর্পণ স্যার হোক চায় না সে। কারণ সবশেষে নিধি বিধবা তকমা পাবে এটাও তার সহ্য হবে না। আনমনেই বাঁকা হাসল সৌধ৷ নিজের অশান্ত বুকে হাত বুলাতে বুলাতে বিরবির করে বলল,

‘ ভালোবাসা এক রহস্যময় অনুভূতি। ‘

|চলবে|
®জান্নাতুল নাঈমা

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৩৬|
বাথরুম থেকে বেরিয়ে ডিভান ফাঁকা দেখল আইয়াজ। নিমেষে ভ্রূদ্বয় কুঁচকে বিছানায় তাকাল। ফারাহর অবস্থা একই৷ মেয়েটা এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কুঁচকে যাওয়া ভ্রূদ্বয় ধীরেধীরে স্বাভাবিক করে নিল সে। নিশ্চয়ই কোনো জরুরি প্রয়োজনে সৌধ বেরিয়ে গেছে। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে এগিয়ে গেল পোশাক বের করতে। লাগেজ খুলে ধূসর রঙা একটি টি-শার্ট বের করে উদাম শরীরটা ঢেকে ফেলল চটপট। এরপর চোখে চশমা পড়ে বিছানায় এসে ফারাহর পাশে বসল। হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করল ওর ডান গালটায়। কিয়ৎক্ষণ উষ্ণ, নরম গালে নিজের হিম ধরানো হাতটা রেখে তাকিয়ে রইল নির্নিমেষ। বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল সেইসব দিনগুলোকে স্মরণ করে। যেদিন গুলোতে ফারাহ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে তাদের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ানোর। কতবার বিচ্ছেদ হয়েছে তাদের৷ কতবার ফারাহর মুখে শুনেছে,
‘ আয়াজ বিলিভ মি, আমি তোমার যোগ্য নই। ‘

মাঝেমধ্যে সে যখন রেগে গিয়ে বলত,
‘ তাহলে কেন এসেছিলে আমার জীবনে? আমি যতই প্রেম নিবেদন করি কেন গ্রহণ করলে? তুমি গ্রহণ না করলে আমি এগুতাম না। আমি ওই ধরনের ছেলে নই। গ্রহণ যখন করেছ ফা ল তু কারণ দেখিয়ে বর্জন করতে দিব না সরি। ‘

নরম মনের অধিকারী ফারাহ। নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা একেবারেই কম। তাই তখনো ঠিকভাবে বোঝাতে পারেনি আর না আইয়াজের প্রশ্নের যোগ্য জবাব দিতে পেরেছে। সেই মুহুর্তে শুধু কান্না ছাড়া আর কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারেনি৷ আইয়াজও পারেনি তার জীবনে আশা প্রথম নারীকে কোনো মূল্যে হারাতে দিতে। বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আইয়াজের। গালে রাখা হাতটা আপনাআপনিই ফারাহর মাথায় চলে গেল। ধীরেধীরে পরমাদরে সে হাতে মাথা বুলাতেও শুরু করল। এভাবে কেটে গেল অনেকটা সময়। আইয়াজের ফোন বেজে ওঠল হঠাৎ। সুহাস কল করেছে,
‘ কীরে ভাই সেই যে ঢুকেছিস আর বেরুবি না? কাহিনি কী বল তো? বিয়ের আগেই হানিমুনের ওপর দিয়ে হানিমুন করে ফেললি না তো! ‘

বিমর্ষ মুখটায় কিঞ্চিৎ দীপ্তি ফুটল আইয়াজের৷ চোখে ভেসে ওঠল খানিকটা লজ্জা। মনে ভর করল এক চিলতে দুষ্টুমি। বন্ধুর টিপ্পনীতে ক্ষীণ কণ্ঠে জবাব দিল,

‘ ওটাত তুই করেছিস। আমি তোর মতো এত ফাস্টলি এগুতে পারি না দোস্ত। আমাকে স্লোলিই এগুতে হবে। ‘

হো হো করে হেসে ওঠল সুহাস। বলল,

‘ চাপাখানা আছে। ঢাকাইয়া পোলা তো চাপা দিয়েই বাজিমাত। ‘

মৃদু হাসল আইয়াজ বলল,

‘ ফারাহ তো ওঠছে না। কী করি বল তো? ‘

‘ ডাকছিস? ‘

‘ না, ভাবছি ডাকব। ‘

‘ না ডাকলে ওঠব ক্যামনে মাম্মা। তাড়াতাড়ি ডাক আর ঝটপট চলে আয় বুফে যাব। ‘

‘ মিনিট দশেক পর নামীকে পাঠিয়ে দিস। ‘

‘ ওকে, প্যাড়া নাই। ‘

ফোন রেখে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ল আইয়াজ। ফারাহর ঘুম ভাঙার পর ঠিক কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে? ভাবতেই বুক ধুকপুক করে ওঠল। একই সঙ্গে কয়েকটা ধাক্কা খাবে মেয়েটা৷ নিশ্চয়ই সুখ, দুঃখ মিলেমিশে কান্না করবে খুব? নিজেকে সেই পরিস্থিতির জন্য তৈরি করে নিল আইয়াজ। ফারাহকে সামলে নেয়ার পুরো শক্তি অর্জন করে বুক টানটান করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। এরপর ডাকতে শুরু করল। যেইডাকে মিলেমিশে রইল, একচ্ছত্র আদর, প্রগাঢ় ভালোবাসা আর সীমাহীন সম্মান।

আধোঘুমে ফারাহ শুনতে পেল অতিপরিচিত এক মানুষের হৃদয়ে গাঁথা কণ্ঠস্বর। এত দরদ মেখে একজনই ডাকে। আইয়াজ! সাতসকালে আইয়াজ কীভাবে ডাকবে তাকে? নিশ্চিত ভ্রম। ভাবতেই হঠাৎ বুক ধক করে ওঠল। আচমকা দু-চোখ খুলে বড়ো বড়ো করে তাকাল সম্মুখের মানুষটার দিকে। মস্তিষ্কে হঠাৎ চাপ অনুভব করল গতকালকের কথা স্মরণ হতেই৷ সুহাস ভাই, সৌধ ভাই এসেছিল তাদের বাসায়। তার আর আইয়াজের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। সে তার আপার সঙ্গে কথা বলে কান্না করল এরপরই শুনতে পেল সুহাস ভাইরা চলে গেছে। কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছিল তার৷ কী ভয়ানক এক যন্ত্রণায় বুক ভার হয়েছিল সারাদিন। মনের অসুখে সবকিছু বিষাদ লাগছিল। আইয়াজের সাথে শেষবারের মতো কথা বলতে ইচ্ছে করছিল খুব৷ কিন্তু কথা বলতে গেলেই ছেলেটা মাকড়সার জালের মতো প্যাঁচিয়ে ধরবে। বশ মানিয়ে ফেলবে এক মুহুর্তে। সেই ভয়ে বন্ধ ফোনটা আর খুলেওনি। সন্ধ্যাবেলায়ই আপার জোরাজোরিতে নাকে, মুখে ভাত ঢুকিয়ে শুয়ে পড়েছে। ভেবেছিল ঘুম হবে না৷ কিন্তু নাহ, ভাবনাটা ভুল। গভীর ঘুম হয়েছে। তাই তো প্রিয় মানুষটাকে স্বপ্নে দেখেছে, তার ডাক শুনেছে৷ এই তো চোখ খোলার পরও মানুষটার ভালোবাসাময় স্নিগ্ধ মুখটা দেখতে পাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে একটুখানি ছুঁয়ে দেবে কি? না না তাহলেই ভ্রম কেটে যাবে। স্বপ্ন ভেঙে যাবে।

‘ ফারাহ? অ্যাঁই ফারাহ, ঘুম ভেঙেছে? ‘

ইশ ছেলেটা এত মধুর সুরে ডাকে কেন তাকে? চোখ দু’টো টলমল হয়ে গেল। নিঃশব্দে, মৃদু হেসে চোখ বুজে নিল সন্তর্পণে। আইয়াজের কপালে ভাঁজ পড়ল। প্রচণ্ড দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে ত্বরিত কল করল সুহাসের ফোনে। রিসিভ হতেই উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,

‘ দোস্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোতে কোনো সমস্যা হলো না তো? ওর মন, শরীর দু’টোই তো খুব নরম৷ বেড এফেক্ট পড়ল না তো? ‘

আইয়াজের কথা শুনে সুহাসের কপালে ভাঁজ পড়ল৷ বলল,

‘ কেন বলত? ‘

সুহাসকে উত্তরটা দিতে পারল না আইয়াজ। কারণ তার কথা শুনে ইতিমধ্যেই শোয়া থেকে তড়াক করে ওঠে বসেছে ফারাহ। দু’হাতে চোখ ডলে বিস্ময়াপন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আইয়াজের পানে। ভেবেছিল ঘুমের ঘোরে ভ্রম কিন্তু সুহাসকে বলা কথাটা শুনতেই ভ্রম না, স্বপ্ন না টের পায় ফারাহ। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে চোখ খুলে ফোন কানে চেপে আইয়াজকে দেখতে পেয়ে চমকে ওঠে। আইয়াজও চমকায়। ফারাহর ঘুম ভেঙেছে বুঝতে পেরে ফোন কেটে দেয়। মুখে ঈষৎ হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে বলে,

‘ গুড মর্নিং। ‘

মাথা ঝাঁকিয়ে ওঠে ফারাহ। ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে রয় কিয়ৎক্ষণ। এরপরই বৈদ্যুতিক স্পর্শ পাওয়ার মতো করে কেঁপে ওঠে। আইয়াজের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বিলাসবহুল কক্ষে দৃষ্টি বুলায়। এরপর তাকায় বিছানার দিকে। মুহুর্তেই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়। কাচুমাচু হয়ে বলে,

‘ আমি কোথায়? তুমি কীভাবে আমার সামনে? ‘

বুকে শিহরণ জাগে আইয়াজের। ফারাহ ঘুমকাতুরে মুখটায় তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,

‘ আমরা কক্সবাজারে। ‘

‘ কীহহ! ‘

ফারাহর চোখ দু’টো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। আইয়াজের হাসি চওড়া হয়। বলে,

‘ গতরাতে তোমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। ‘

স্তম্ভিত হয়ে যায় ফারাহর মুখ। আইয়াজ হাত বাড়িয়ে ওর গালে স্পর্শ করে। বলে,

‘ তোমার আপা সাহায্য করেছে আমাদের। ‘

তিন বন্ধু আপার সাহায্যে কীভাবে তাকে অপহরণ করল সেই গল্প শুনে ফারাহর মাথা ভনভন করতে লাগল। আপা সাহায্য করেছে মানে? গলা শুকিয়ে গেল তার। ভয় ভয় স্বরে বলল,

‘ আপা কেন সাহায্য করল? ‘

‘ আজ রাতে আমরা বিয়ে করব তাই। ‘

বুক কেঁপে ওঠল ফারাহর। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে ওঠল মুহুর্তেই। শরীরও কাঁপতে লাগল। আইয়াজ খেয়াল করে ওকে কাছে টেনে নিল৷ বুকে টেনে বলল,

‘ আমরা বিয়ে করব ফারাহ। ‘

এক ঝটকায় আইয়াজের বুক থেকে সরে গেল ফারাহ। দু’চোখে উপচে পড়ল বাঁধ ভাঙা অশ্রুজল। বলল,

‘ এটা সম্ভব নয় আয়াজ। আমি তোমাকে ঠকাতে পারব না। ‘

আইয়াজ কাছে চলে এলো। দু-হাত বাড়িয়ে ওর অশ্রুসিক্ত দুগাল স্পর্শ করে নরম কণ্ঠে বলল,

‘ বিয়েটা না করলে অবশ্যই ঠকাবে। ‘

আচমকা আইয়াজকে জড়িয়ে ধরল ফারাহ। কান্নারত গলায় বলল,

‘ তুমি বুঝতে পারছ না আয়াজ, তুমি বুঝতে পারছ না। আমি তোমাকে ঠকাতে চাই না। বিশ্বাস করো। ‘

একটু থেমে পুনরায় হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,

‘ আমি ভুল করে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার মতো শুদ্ধ পুরুষের ভালোবাসা গ্রহণ করেছি ভুল করে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার মতো অশুদ্ধ নারী তোমার যোগ্য না। ‘

ফারাহর কাঁধ চেপে সোজা করল আইয়াজ৷ চোয়ালদ্বয় শক্ত করলেও তার দৃষ্টি ঝাপসা। বলল,

‘ তুমি অশুদ্ধ না ফারাহ। ‘

লজ্জায় মূর্ছা গেল ফারাহ। আইয়াজ এখন শক্ত গলায় তার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসে যা বলছে তা সে ভাঙতে চায় না৷ কিন্তু না ভাঙলে যদি তাকে জীবনে জড়ায়? আর পরবর্তীতে আফসোস করে? ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকাল ফারাহ। কাঁপা স্বরে বলল,

‘ আমি একজন ধ…’

সহসা মুখ চেপে ধরল আইয়াজ। চোখ বন্ধ করে, শ্বাস রুদ্ধ করে বলল,

‘ চুপ! আমি সবটা জানি। গতকাল ফারজানা আপা সমস্ত কিছু জানিয়েছে সৌধকে। আর সৌধ জানিয়েছে আমাকে। দ্বিতীয়বার আর ও সম্পর্কে জানতে চাই না আমি। একেবারেই না। ‘

‘ আইয়াজ! ‘

অবিশ্বাস্য কণ্ঠ ফারাহর! আইয়াজ চোখ খুলল। সহসা তার দুগাল বেয়ে পড়ল দু’ফোটা অশ্রু। ফারাহ হুমড়ি খেয়ে ওর বুকে পড়ল। মৃদুস্বরে আর্তনাদ করল,

‘ কী বলছ তুমি আইয়াজ! ‘

ফের বাঁধ ভাঙা কান্না। ফারাহ কোনোদিনও আইয়াজের চোখে তার জন্য ঘৃণা দেখতে পারবে না। তাই ভয় কাঁপতে থাকল। প্রচণ্ড শক্ত করে জড়িয়েও রইল আইয়াজকে। আইয়াজ বুঝতে পারল তার যন্ত্রণা। এতগুলো বছর দেখছে মেয়েটাকে। মনের কথা বুঝতে পারবে না? তাই মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

‘ তোমাকে আমার আগে কে স্পর্শ করেছে এটা ইম্পর্ট্যান্ট নয় ফারাহ। ইম্পর্ট্যান্ট আমার পর কেউ তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। ‘

ফারাহ ফুপাচ্ছে। বুক ফাটছে আইয়াজেরও। তবু মুখে বলল,

‘ কে নোংরা ভাবে তোমার শরীর ছঁয়েছিল এসবে আমার আগ্রহ নেই। আমার আগ্রহ তোমার ভালোবাসার প্রতি। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার গভীরতা কতটুকু এটাই ইম্পর্ট্যান্ট আমার কাছে। আমি চাই তোমার কাছেও জাস্ট এটুকুর ইম্পর্ট্যান্টস থাকুক ব্যস। ‘

পুরুষ জাতি কী? পুরুষ জাতি কেমন এর আর কোনো ব্যাখ্যা জানতে চায় না ফারাহ। আজ এইক্ষণে আইয়াজ, তার ভালোবাসার মানুষটির যেই রূপের সম্মুখীন হলো। এরপর আর এক মুহুর্ত এ পৃথিবীর বুকে নিঃশ্বাস নিতে না পারলেও তার আফসোস থাকবে না। এতদিন সে জানত তার প্রেমিক পুরুষটি খুব ভালো, মনের, ভদ্র, সভ্য, প্রচণ্ড মেধাবী আর স্বচ্ছ চরিত্রের অধিকারী৷ কিন্তু আজ স্বচক্ষে, হৃদয় দিয়ে অনুভব করল তার প্রিয়তম মানুষ হিসেবে কতটা শ্রেষ্ঠ। প্রেমিকার ধ র্ষিতা হওয়ার অতীত জানার পর তাকে বউ করতে বুকে দম লাগে। আইয়াজের সেই দমটা আছে৷ এই দমটুকু নিয়েই ফারাহ কাটাতে চায় তার বাকি জীবন।
.
.
ভরদুপুরে মেকআপ বক্সের সেট ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ছুঁড়ে মে রে আয়নাটা ভেঙে ফেলল সিমরান৷ ক্রোধে ফুঁসছে সে। শুধুমাত্র আয়না ভেঙেই ক্ষ্যান্ত হলো না৷ তীব্র জেদে ভাঙা কাঁচের টুকরো গুলোর ওপর দিয়ে হাঁটল দু’পা। ছুটতে ছুটতে দরজার সামনে এসেছে উদয়িনী৷ মেয়ের অমন অবস্থা দেখে করুণ আর্তনাদ করে ওঠেছে সে৷ সিমরানও দু’পায়ে কাঁচ ঢুকে ভয়াবহ রক্তপাত দেখে জ্ঞান হারিয়েছে মুহুর্তে। উদয়িনী চিৎকার দেয়ার পর পরই ছুটে এসেছে। প্রথমে মেয়ের রাগান্বিত হয়ে উপরে ওঠা এরপর স্ত্রীর আর্তনাদ। বুক কেঁপে ওঠে সোহান খন্দকারের। অতিথি বিদায় শেষে ড্রয়িংরুমে এসেছিল মাত্র। আর অপেক্ষা না দৌড়ে সেও উপরে চলে এলো৷ কাজের বুয়া সেলিনা আপাও ছুটে এলো। মেয়ের দু’পা থেকে কাঁচ তুলে মেয়েকে জাপ্টে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে উদয়িনী। ভুলে গেছে নিজের ডাক্তারি সত্তা। সোহান খন্দকার হাত মুঠ করে ঝাঁকি দিয়ে বিচলিত কণ্ঠে বলল,

‘ ওহ শীট! মস্ত বড়ো ভুল হয়ে গেল উদয়িনী। আমাদের ওর সঙ্গে আলোচনা না করে পাত্রপক্ষকে আসতে বলা উচিত হয়নি৷ ‘

বলতে বলতে মেয়েকে ত্বরিত কোলে তুলে ছুট লাগালেন৷ উদয়িনীও তার পেছন পেছন দৌড়াতে লাগল। সেলিনা আপা আরো জোরে দৌড় দিয়ে ড্রাইভারকে ডাকতে লাগল আর বলতে লাগল,

‘ আমজাদ ভাই তাড়াতাড়ি আহেন, হাসপাতালে যাওয়া লাগব। সিনু আপার পা কাটছে, অজ্ঞান হইছে! ‘

গাড়িতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বিধ্বস্ত স্ত্রীর মুখে তাকাল সোহান। উদ্বিগ্ন গলায় বলল,

‘ সিনু কারো সাথে রিলেশনশিপে আছে?’

উদয়িনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে হতাশ গলায় বলল,

‘ আই ডোন্ট নো। ‘

ধমকে ওঠল সোহান,
‘ সুহাসকে কল করো। আমার মেয়ের প্রতি কোনো দায়দায়িত্ব নেই তোমার। মা হয়ে মেয়ের মনের কথা জানো না। কেমন মা তুমি? ‘

কেঁপে ওঠল উদয়িনী। মেয়ের চিন্তায় মানুষটা যাই বলুক কষ্ট পাবে না সে। তাছাড়া সিনুকে এখনি বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত তার একার নয়। সোহানেরও। কথাবার্তা এগুতো সুহাস আসার পরই। আজকে শুধু প্রাথমিক ভাবে সিমরানকে দেখাতে চেয়েছিল। মেয়েটা অতিথিদের সামনে ধৈর্য্য ধরে থাকলেও অতিথিরা চলে যাওয়ার পর এমন ভয়ানক প্রতিক্রিয়া দেবে কল্পনার বাইরে ছিল। বা হাতে চোখের পানি মুছতে মুছতে ডান হাতের সাহায্যে ছেলেকে কল করল উদয়িনী। কী বিপদ ঘটেছে সেসব না বলে শুধু জিজ্ঞেস করল,

‘ বাবা সিনু কি কোনো ছেলেকে পছন্দ করে? কারো সাথে সম্পর্কে আছে সিনু মার? ‘

|চলবে|
®জান্নাতুল নাঈমা
রিচেক দিইনি৷ ভুল ত্রুটির জন্য দুঃখীত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে