ত্রিধারে তরঙ্গলীলা পর্ব-১০+১১

0
798

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১০

ক্লাস শেষ হলো বিকেল পাঁচটায়। সৌধর হাবভাব ভালো ঠেকেনি নিধির৷ একদম স্যারের পিছু পিছু বেরিয়েছে সে৷ কিন্তু বিপদ ঘটল অর্পণ স্যারকে দেখে। আটাশ বছর বয়সী যুবক অর্পণ। তাকে এই মেডিকেল কলেজের হার্টথ্রবও বলা হয়। যার প্রতি অন্যান্যদের মতো নিধিও দারুণ মোহিত। বর্তমানে স্টুডেন্ট’সদের মধ্যেও একজন হার্টথ্রব রয়েছে। যার নাম সৌধ চৌধুরী। এমপি সুজা চৌধুরীর ছোটো ছেলে। কিন্তু নিধির চোখ সেখানে আটকায়নি। দমিত হয়নি হৃদয়। ধরা যায়, ছোঁয়া যায় এমন জিনিসে আমরা আকৃষ্ট কম হই৷ নিধির ক্ষেত্রে ঠিক এমনই ঘটেছে। তার নজরে অর্পণ স্যার গগন হলেও সৌধ কেবলই মৃত্তিকা। অর্পণ স্যারকে সব সময় কালো রঙের ফুল হাতা শার্ট আর নেভি ব্লু জিন্স প্যান্টে দেখা যায়৷ আজো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। লম্বাটে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ে ঐ কালো শার্টটাই যেন সবচেয়ে বেশি মানানসই। শার্টের ওপর সাদা অ্যাপ্রোন, চোখে চিকন সোনালি ফ্রেমের চশমা, গলায় ঝুলানো স্টেথোস্কোপ, বা’হাতের কব্জিতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি। সবমিলিয়ে নজরকাড়া যুবকটিকে স্থির নয়নে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল নিধি। ক্লাসের সামনে বারান্দা ধরে এগুচ্ছিল সে। অর্পণ স্যার কাছাকাছি আসতেই সম্মুখে দাঁড়িয়ে দুরুদুরু বুকে সালাম দিল,

‘ আসসালামু আলাইকুম স্যার। ‘

‘ নিধি? ওয়ালাইকুমুস সালাম। কী অবস্থা তোমার? ‘

প্রথম বর্ষের শেষের দিকে অর্পণ স্যার ক্লাস নিয়েছিল তাদের। পরিচয় হয়েছিল ক্লাসেই। স্যার তার নাম মনে রেখেছে! ভাবতেই উত্তেজনায় হাত, পা কাঁপতে শুরু করল৷ শ্বাসরোধ করে কোনোরকমে উত্তর দিল সে। অর্পণ স্যার মৃদু হেসে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। নিধি শুনতে পেল সুহাসরা সালাম দিচ্ছে অর্পণ স্যারকে। এরপরই শুনতে পেল আইয়াজের মৃদুস্বর,

‘ দোস্ত সৌধ কিন্তু ব্যাপক রেগে আছে। তোকে নাকি কোন ছেলেরা টিজ করেছে! জানাসনি কেন? ‘

সহসা রেগে গেল নিধি৷ বলল,

‘ কেন ওকে কেন জানাতে হবে? বন্ধু বলে আমার সব বিষয় ওকে জানাব? আমার কোনো প্রাইভেসি নেই?’

হকচকিয়ে গেল আইয়াজ। নিধির কথা, শুনতে পেয়ে সুহাসও হতভম্ব হয়ে গেল। সৌধর কমে এলো পায়ের গতি। দূরত্ব কম হওয়াতে ঐ গতিতেই নিধির পাশে এসে দাঁড়াল। গমগমে সুরে বলল,

‘ প্রাইভেসি? ‘

সৌধর স্থির বাঁকা চাহনিতে ভড়কে গেল নিধি। আমতাআমতা করে বলল,

‘ দোস্ত আমি কোনো ঝামেলা চাই না। প্লিজ। ‘

গায়ে চাপানো অ্যাপ্রোন খুলে বা হাতের বাহুতে রাখল সৌধ। ডানহাতের আঙুল চালালো চুলে। পুরু ঠোঁটজোড়া জিভ দ্বারা ভিজিয়ে নিল দ্রুত। বলল,

‘ তুই আমার ফ্রেন্ড। শুধু ফ্রেন্ড না ভেরি গুড ফ্রেন্ড। তুই এ শহরের মেয়ে না, আলাদা শহরের। এখানে তুই আছিস, বলা যায় আপন বলতে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। তোর সুবিধা, অসুবিধা দেখার দায়িত্ব আমাদেরই। সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার সুজা চৌধুরীর ছোটো ছেলের বান্ধবী তুই। এলাকার কয়েকটা বখাটে ছেলেপুলে তোকে উত্যক্ত করবে আর আমি জানব না? জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিব না? আর কী বললি প্রাইভেসি! এখানে তোর প্রাইভেসিটা ঠিক কী নিধি? ‘

ঢোক গিলল নিধি৷ অসহায় চোখে তাকাল সুহাস আর আইয়াজের দিকে। এরপর তাকাল সৌধর তীক্ষ্ণ চোখে। আমতাআমতা করতে লাগল সে। সৌধর শীতল অভিব্যক্তি বুকে কাঁপন ধরাল ক্রমাগত। হাসফাস চিত্তে বলল,

‘ চল যেতে যেতে কথা বলি। ‘

দু’কাঁধ উঁচু করে সৌধ ইশারায় বলল,

‘ চল। ‘

ক্যাম্পাসের পিছনে বিরাট বড়ো পুকুর। সে পুকুরের সিঁড়িতে এসে বসল নিধি। বসল সুহাস আর আইয়াজও। সৌধ অ্যাপ্রোনটা আইয়াজের হাতে দিয়ে নিধির থেকে দু-হাত দূরত্ব রেখে দাঁড়াল। দু-হাত রাখল কোমরে। বুক টান টান করে দাঁড়িয়ে বড়ো বড়ো শ্বাস নিল। নিধি সুহাসের দিকে থমথমে মুখে তাকিয়ে। সুহাস ইশারায় শান্ত থাকতে বলল তাকে। আইয়াজ ফিসফিস করে বলল,

‘ ছেলে গুলো কী বলেছে সেটা বল। ‘

নিধিও ফিসফিস করে বলল,

‘ তার আগে বল তোরা এসব কী করে জানলি? ‘

‘ আমাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে এখনো তোর সন্দেহ আছে? ‘

‘ না ভাই, নেটওয়ার্কটা কী সেটা বল, কে বলেছে? ‘

‘ সৌধর দূর সম্পর্কের খালাত বোন ওখানেই ভাড়া থাকে। নার্সিংয়ে পড়ছে মেয়েটা। চিনবি মেবি। তোদের তিন বাসা পরেই থাকে। ‘

দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিধি৷ সৌধর দিকে তাকাল অসহায় ভঙ্গিতে। বলল,

‘ দোস্ত এখানে এসে বোস। ‘

সহসা তাকাল সৌধ। নিধি ঈষৎ হেসে বসতে ইশারা করল। সৌধ যেন ময়লা ঝারার ভঙ্গিতে কথাটা ঝেড়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। বলল,

‘ ছেলেগুলো কী বলেছিল তোকে? ‘

‘ আর বলিস না তিনটাই জুনিয়র। ওদের মধ্যে হৃদয় নামে ছেলেটা প্রেমের প্রপোজাল দিয়েছে। আমি কীসে পড়ি আমার বয়স কত সেসব না জেনেই। জানিস ছেলেটা কীসে পড়ে? ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার। ‘

বলতে বলতেই খিলখিল করে হেসে ওঠল নিধি৷ হাসল আইয়াজও৷ সুহাস ঠোঁট টিপে হেসে তাকাল সৌধর দিকে। বিড়বিড়িয়ে বলল,

‘ বেচারা জেলাসনেসে লাল হয়ে যাচ্ছে। ‘

নিধির হাসি থামল সৌধর কটমট চাহনি আর গম্ভীর কণ্ঠে,

‘ তুই কী বললি? ‘

‘ কী আবার বলব, বলে দিলাম আমার বয়স আর কীসে পড়ি। ব্যস হৃদয়ের সঙ্গে আসা ছেলে গুলো হো হো করে হেসে ওঠল। ক্ষেপাতে শুরু করল হৃদয়কে। আর আমি চলে গেলাম বাসায়। ‘

সৌধ কিঞ্চিৎ শান্ত হলো। খালাত বোন মুনিয়া কথোপকথন শুনেনি। শুধু দেখেছে নিধির কাছে এসে কয়েকটা ছেলেকে হাসাহাসি করতে। তাহলে আসল ঘটনা এটাই। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল সে। এরপর নিধির কাছাকাছি এসে ঝুঁকে বলল,

‘ এরপর থেকে কেউ এমন কিছু বলতে এলে বলবি তুই সুজা চৌধুরীর আত্মীয়। আর হ্যাঁ অবশ্যই আমাদের জানাবি। ‘

নিধি মাথা দুলাল। সৌধ সরে গিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল করল পরিচিত এক ভাইকে। নিধি যে এলাকায় থাকে সে এলাকার নাম বলে ছেলেটার নাম জানালো। কিসে পড়ে তাও জানালো। এরপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ বেশি না, দু’টো চটকানি দেবেন। ‘

নিধি চমকে ওঠল। চ্যাঁচিয়ে বলল,

‘ আরে সৌধ এসব করার কী দরকার, মেয়ে হয়ে জন্মেছি, দেখতে শুনতে ভালো প্রপোজাল তো আসবেই। আশ্চর্য লোক তুই ভাই! ‘

কথাটা বলেই সুহাস আর আইয়াজের দিকে তাকাল। সহসা বাহুতে শক্ত হাতের চাপ অনুভব করল সে। সঙ্গে বল পূর্বক টান। সৌধর শক্ত থাবায় ভড়কে গেল সে। চাপা আর্তনাদ করে বলল,

‘ আহ, কী করছিস কী! ব্যথা পাচ্ছি। ‘

‘ এরচেয়েও বেশি ব্যথা আমি পাচ্ছি… ‘

বসা নিধিকে একটানে দাঁড় করাল সৌধ। মুখোমুখি হয়ে চোখে চোখ রেখে দৃঢ় স্বরে কথাটা বলল সে। নিধি কাঁপা কণ্ঠে বলল,

‘ তুই এমন অস্বাভাবিক আচরণ করছিস কেন কী হয়েছে তোর? ‘

‘ অর্পণ স্যারের দিকে ওভাবে তাকাস কেন? ‘

সৌধর ক্রোধ বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে আজ। নিধির দৃষ্টিতে অন্য পুরুষের প্রতি মুগ্ধতা ক্ষিপ্ত করে তুলেছে তাকে। কিন্তু নিধি এই ক্ষিপ্ততা অগ্রাহ্য করে ব্যথাহত স্বরে প্রশ্ন করল,

‘ কীভাবে তাকাই? ‘

সৌধর ভাবমূর্তিতে শুধু নিধি নয় সুহাস, আইয়াজও ভড়কে গেছে। আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ল ওরা। সুহাস এসে চেপে ধরল সৌধর কাঁধ। আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল,

‘ দোস্ত, নিধি ব্যথা পাচ্ছে। ‘

আইয়াজ উত্তেজিত হয়ে ধমকে ওঠল,

‘ সৌধ! ‘

আচমকা নিধির বাহু ছেড়ে দিল সৌধ। তার পেশিবহুল হাতের থাবা পেয়ে নিধির কোমল বাহুতে লাল দাগ বসে গেল। প্রায় কান্না করে দিল নিধি। ত্বরিত অ্যাপ্রোন খুলে বাহুতে বসা আঙুলের দাগ দেখে ক্রোধে ফেটে পড়ল সে৷ এক চিৎকার দিয়ে বলল,

‘ এটা তুই কী করলি সৌধ। ‘

সৌধ অধর কামড়ে থমকানো চোখে তাকিয়ে। নিধি ওর থেকে উত্তর না পেয়ে আইয়াজের দিকে তাকাল। ক্রোধ মিশ্রিত চাহনি নিক্ষেপ করে পুনরায় চিৎকার দিয়ে বলল,

‘ বটগাছের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ওর সমস্যা কী জিজ্ঞেস কর। বান্ধবীর সাথে বউয়ের মতো ট্রিট কেন করছে ও? ‘

আইয়াজ হতভম্ব মুখে তাকিয়ে। তার হতভম্বতা নিধির ক্রোধ তীক্ষ্ণ করে তুলল। এবার সুহাসের দিকে তাকাল সে। তৃতীয়বার চিৎকার দিয়ে বলল,

‘ ওকে বলে দিস ফারদার যদি এই আচরণ দেখি তাহলে আমাদের বন্ধুত্বের সমাপ্তি এখানেই। ‘

নিধির মুখে এমন কথা শুনে সৌধ হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ল। হাত কেঁপে ওঠল কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিতে৷ কিন্তু অমন অঘটন ঘটার পূর্বেই সুহাস সৌধকে জাপ্টে ধরল। আইয়াজকে জোর গলায় বলল,

‘ আইয়াজ নিধিরে পৌঁছে দিয়ে আয়। আমরা এখানেই অপেক্ষা করছি। ‘

শরীরে বাঁধা পেয়ে মুখে কিছু বলতে উদ্যত হবে সৌধ, তৎক্ষনাৎ নিচু কণ্ঠে সুহাস বলল,

‘ কন্ট্রোল সৌধ কন্ট্রোল। অলরেডি নিধি সন্দেহ করে ফেলছে। তোর এবার থামা উচিত। এতটা কন্ট্রোল হারাবি বুঝতে পারলে আগেই সাবধান করতাম। ‘
***
এক মাসের জন্য ইন্ডিয়া গেছেন সোহান খন্দকার। চাচাত ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য ছেলেমেয়েদের রেখে যেতেই হলো। বাড়িতে সুহাস, সিমরান আর নামী ছাড়া কেউ নেই। শুক্রবার, ছুটির দিন৷ বাড়ির কাজের মহিলার নাম সেলিনা। সুহাস, সিমরান তাকে সেলিনা আপা বলে ডাকে। রাতে বৃষ্টি হয়েছে। শীতল আবহাওয়ায় সেলিনা আপার কাছে খিচুড়ির আবদার করল সিমরান। সকালের নাস্তা শেষ করেই আবদারটি করেছে সে। তাই সেলিনা আপা জানালো, দুপুরে খিচুড়ি আর গরু মাংস করবে।

কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে জানালা খুলেছে নামী। অমনি চোখ পড়েছে ওপাশের বেলকনিতে দাঁড়ানো সুহাসের দিকে। জানালা খোলার শব্দ পেয়ে উৎসুক নয়নে তাকিয়ে সুহাস। নামী আপাদমস্তক সুহাসকে দেখে নিয়ে নিচু কণ্ঠে বলল,

‘ নির্লজ্জ কোথাকার! ‘

সুহাস স্পষ্ট ভাবে না শুনলেও বুঝে ফেলল নামী তাকে নির্লজ্জ বলেছে। আর কেন বলেছে টেরও পেল। তাই নিজের ধবধবে উদাম শরীরে তাকাল সে। পরনে শুধু থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। তাও উদরের কেন্দ্রস্থলের নিচে পরা। নিজেকে দেখে নিয়ে অধর কোণে বক্র হাসি ফুটিয়ে তুলল। নামীর পানে তাকাল দুর্বোধ্য দৃষ্টিতে। এরপর ঠোঁট কুঞ্চিত করে শিষ বাজাতে শুরু করল। সুর তুলল একটি দুষ্টুমিভরা গানের। ‘ আমি নষ্ট মনে নষ্ট চোখে দেখি তোমাকে মন আমার কী চায় বুঝাই কেমনে ‘ সুহাস মনে মনে এ গানের সুর তুললেও নামী স্পষ্ট বুঝতে পারল না। তবে তার মন খুঁত খুঁত করতে লাগল। কেন যেন খুব পরিচিত মনে হলো সুরটা। সুহাস মুখো ভঙ্গি দেখে বুঝে ফেলল নামী গানটা বুঝেনি। না বুঝলে তো আসল মজাটাই হবে না। ভেবেই ত্বরিত পকেট থেকে ফোন বের করল সে। এরপর ইউটিউবে ঢুকে গানটা সার্চ করে বের করে প্লে করল। সুহাসের দুরন্ত চোখজোড়া স্থির রইল নামীতেই। মোবাইলে পান্থ কানাই আর মমতাজ গাওয়া সে গানটা বাজছে,
‘ আমি নষ্ট মনে নষ্ট চোখে দেখি তোমাকে মন আমার কী চায় বুঝাই কেমনে! ‘

গানটা শুনতেই নামী ধরে ফেলল সুহাসের সুর। সহসা কান দু’টো গরম হয়ে ওঠল তার। চোখের সামনে দাঁড়ানো সুহাসকে এখন মমতাজ মুভির হুমায়ূন ফরিদীর সেই চরিত্রকেই মনে পড়ল। কিন্তু মমতাজের চরিত্র কে? এমন প্রশ্ন মনে জাগতেই খেয়াল করল সুহাস তার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে। যে চাহনির ভাষা সুবিধার নয়। তার মন বলল, ও চোখ নষ্ট, ও মন নষ্ট, এই ছেলে পুরোটাই নষ্ট! গা শিউরে ওঠা অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে ওঠল সে। সুহাসের দৃষ্টি অনুসরণ করে আচম্বিতে দৃষ্টি পড়ল নিজের দিকে। অমনি তড়াক করে দাঁড়িয়ে পড়ল। সুহাসের দৃষ্টি তার গলদেশ ও উদরের মধ্যবর্তী অংশে। বোঝা মাত্র এক চিৎকার দিয়ে বলে ওঠল,

‘ অসভ্য, নির্লজ্জ, লষ্ট মাইন্ডেড ছেলে কোথাকার! আই উইল কিল ইউ! ‘

আরো নানারকম বকাঝকা করে শব্দ করে জানালা
বন্ধ করে দিল। কাণ্ড দেখে হো হো করে হাসতে লাগল সুহাস। অনেকদিন পর মেয়েটাকে জব্দ করে মনটা চনমনে হয়ে ওঠল তার। কিয়ৎক্ষণ প্রাণভরে হেসে শান্ত হলো সে। এরপর আচমকাই গলা খাঁকারি দিয়ে টিপ্পনী কাটল ,

‘ ঢাকনা ছাড়া বিরিয়ানির পাতিল। অথচ গন্ধ ছড়াবে না, তাই কখনো হয়? ‘

দরজা লাগিয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে নামী। তাই সুহাসের বলা কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেল। একদিকে লজ্জা অন্যদিকে তীব্র ক্রোধ মিলেমিশে মুখটা থমথম হয়ে রইল তার৷ কিন্তু সুহাসকে কঠিন কিছু কথা না বলে শান্তি পেল না। চুপ থাকতেও পারল না৷ তাই গর্জন ছেড়ে বলল,

‘ আশপাশে যে হুলো বেড়াল ওঁত পেতে আছে বেমালুম ভুলে গেছিলাম। ‘

হুলো বেড়াল! নিজেকে হুলো বেড়াল মেনে নিতে কষ্ট হলো সুহাসের। বলার জন্য পাল্টা কিছু খুঁজে পেল না। মস্তিষ্ক কেমন নিশ্চল ঠেকল। আবার মনে ক্রোধও জাগল। রাগে গজগজ করতে করতে ঢুকল ম্যাসেণ্জারে। সৌধ লাইনে নেই, কিন্তু আইয়াজ আছে। তাই তাকে বলল,

‘ কী করি বল তো, এই নামী খুব বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। বাড়িতে টেকা যাচ্ছে না। ‘

আইয়াজ বলল,

‘ কেন কী করল আবার? ‘

‘ এই তো মাত্রই আমাকে হুলো বেড়াল বলল। ‘

‘ কেন তুই কি ছুঁকছুঁক করছিস দোস্ত? ‘

প্রশ্নটা করেই কয়েকটা চোখ টিপ ইমুজি পাঠালো আইয়াজ। সুহাস ফোঁস ফোঁস করতে করতে রাগি ইমুজি দিল তাকে। আইয়াজ সঙ্গে সঙ্গে বলল,

‘ আরে ইয়ার রাগিস কেন? ও তোরে হুলো বলছে তুই ওরে মেনি বলে দে শুধবাদ। ‘

সুহাসের মাথায় যেন বুদ্ধি খুলল। সে গলা বাড়িয়ে তৎক্ষনাৎ নামীকে বলল,

‘ নিজেকে যে বেড়ালী ভাবো জানতাম না তো! ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন বেড়ালী, তোমার মতো মেনির প্রতি আই হেভ নো ইন্টারেস্ট। ‘

চলবে…

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১১

নিজের ভেজা দুটো টিশার্ট ছাদে টাঙানো রশিতে মেলে দিল সুহাস। ভেজা চুলে হাত নেড়ে পানি ঝেড়ে গিয়ে দাঁড়াল ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে। সদ্য গোসল করা সুহাসকে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। তার লোমহীন ধবধবে ফরসা বুকটাও আকর্ষণীয়। পাশের বাড়ির ছাদে চৌদ্দ, পনেরো বছর বয়সী এক কিশোরী। কাপড় নাড়ার পাশাপাশি লক্ষ্য করছিল সুহাসকে৷ দুরন্ত সুহাস টের পেতেই উৎফুল্ল হয়ে ওঠল। শিষ বাজিয়ে চেষ্টা করল বাচ্চা মেয়েটির মনোযোগ দৃঢ় করার। কাপড় নাড়া শেষে সম্পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকাল মেয়েটি। সুহাস দুষ্টুমি ভরে হাসল। ডান চোখ টিপ দিল। লজ্জা পেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল মেয়েটা। লাজুক হাসি এঁটে রইল ওর ওষ্ঠজোড়ায়। সুহাস ভেবেছিল বাচ্চা একটা মেয়ে৷ এক চোখ টিপ দিলেই ভয়ে দৌড়ে পালাবে৷ কিন্তু না, তাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটি ওড়নার কোণা কচলাতে শুরু করল। আর মাঝে মাঝে আড়দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে লাগল তাকে। ভড়কে গেল সুহাস। এ মেয়ে তো তার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে। সে ফ্লার্ট করল আর মেয়েটা পটে গেল! নাহ পাশের বাড়ির অল্পবয়সী ললনাদের সঙ্গে ফ্লার্ট করা যাবে না। বলা যায় না কখন বাড়ি এসে বসে থাকে৷ এক কালনাগিনী নিয়েই তার জীবন ঝালাপালা। কালনাগিনীর দল আর ভারী করতে চায় না সে৷

সুহাসরা এই বাড়িটি নতুন করেছে। ডুপ্লেক্স এই বাড়িতে ওঠেছে মাসখানেক হলো। এর আগে এ শহরে তারা ভাড়া বাসায় থাকত। নিজস্ব এই বাড়িটা তার বাবা মায়ের খুব শখের। সারাজীবন যত রোজগার করেছে তার বেশির ভাগি ঢেলে দিয়েছে এই বাড়িতে৷ আশপাশের প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার বাবা মায়ের আলাপ থাকলেও তার নেই। তাই পাশের বাড়ির অল্পবয়সী মেয়েটার সাথে আজি প্রথম দেখা। গলা খাঁকারি দিল সুহাস। জিজ্ঞেস করল,

‘ এই তোমার নাম কী ? ‘

মেয়েটা চমকাল। মুখ তুলে একবার তাকিয়ে হাসল লাজুকতা ভরে। এরপর মাথা নুইয়ে বলল,

‘ অতসী তালুকদার। ‘

‘ কোন ক্লাসে পড়ো? ‘

‘ ক্লাস সেভেন। ‘

বিস্মিত হলো সুহাসের দৃষ্টি। পরোক্ষণেই কেশে ওঠল সে। মেয়েটার চোখে কিঞ্চিৎ ব্যাকুলতা। সুহাস নিজেকে স্বাভাবিক করল সময় নিয়ে। এরপর বলল,

‘ তোমার বড়ো বোন আছে? ‘

মাথা দুলালো অতসী। সুহাস এবার প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছাড়ল। কুটিল হেসে বলল,

‘ তাহলে আমাকে দুলাভাই ডাকবে। আপুর নাম্বার মুখস্থ আছে? ‘

অতসীর মুখে মেঘ নেমে এলো। অমাবস্যার রাতের ন্যায় মুখ করে সে বলল,

‘ আপুর বয়ফ্রেন্ড আছে। ‘

এরপর আর এক মুহুর্তও দাঁড়াল না অতসী। তীব্র অভিমান নিয়ে ছাদ থেকে চলে গেল সে। এই মেয়ে আবার অভিমান করতেও জানে? মানুষ তো অভিমান করে তার কাছের লোকজনের সাথে। সুহাস তো তার কাছের কেউ নয়৷ তবে কেন অভিমান করল? বর্তমানে অল্পবয়সী মেয়েদের পাকনামি আকাশ ছোঁয়া। এরা মুহুর্তের মধ্যে প্রেমে পড়ে। মুহুর্তের মধ্যেই প্রেমে পড়ে যাওয়া পুরুষটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। কেউ কেউ আবার সংসারও করে ফেলে। অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল সুহাস৷ হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেল তার। হাসি থামল তাদের গেট বরাবর দৃষ্টি যেতেই৷ তাদের গেটের সামনে ফারাহ দাঁড়িয়ে! নামীর বেস্ট ফ্রেন্ড ফারাহ। কী ব্যাপার? আকস্মিক গম্ভীর হয়ে গেল সুহাস। বোঝার চেষ্টা করল ঘটনা টা ঠিক কী?

এক মিনিট পর গেট খুলা হলো। নামীর হাসিমাখা মুখটা এক পলক দেখল মাত্র। ফারাহ ভেতরে ঢুকল। গেটে তালা লাগিয়ে ফারাহকে নিয়ে ভেতরে চলে গেল নামী। ছাদে ওঠার সময় ওপাশ থেকে খিচুড়ির ঘ্রাণ নাকে এসেছিল তার। সেলিনা আপাও খিচুড়ি করছে সেই ঘ্রাণ খুব একটা পায়নি। নামীও আজ খিচুড়ি করছে। সেই খিচুড়ি খেতেই কি বান্ধবীকে বাড়ি ডেকে আনল? তাহলে সে কেন চুপ করে থাকবে? তারও উচিত বন্ধু-বান্ধব ডেকে আনা৷ তারপর আনন্দ উল্লাস করে খিচুড়ি ভোজন করা। বাবা বাড়ি নেই। ফেরার আশঙ্কাও নেই। এই তো সুযোগ নামীকে জ্বালানোর। আর দেরি করল না সুহাস৷ ঝটপট ম্যাসেজ করল সৌধকে। সৌধ তার প্রস্তাব নাকচ করে দিল। সে খেয়েদেয়ে লম্বা একটা ঘুম দেবে৷ পুরো সপ্তাহ রাত জেগে পড়াশোনা করে। শুক্রবার দুপুরের পর কয়েক ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস তার। তাই ঘুমের চেয়ে সুহাসের এই ফালতু প্রস্তাবকে বেশি গুরুত্ব দিল না ৷ নামীকে জ্বালানো ছাড়া আর কোনো লক্ষ্যই যেন সুহাসের নেই৷ নম্র, ভদ্র, শান্তশিষ্ট মেয়েটাকে অহেতুক অপমান, অসম্মান, বিরক্ত করাতে কখনোই পক্ষপাতিত্ব করেনি তারা৷কতগুলো মাস হয়ে গেল বোঝাচ্ছে সুহাসকে। মাতৃভক্তে এতটাই অন্ধ হয়ে গেছে ছেলেটা, যে নামীর ব্যাপারে ইতিবাচক পরামর্শ দিলে বন্ধুদেরও শত্রু ভেবে বসে থাকে। সৌধর থেকে পাত্তা না পেয়ে আইয়াজকে কল করল সুহাস৷ ব্যাপক পড়ুয়া ছাত্র আইয়াজও পাত্তা দিতে চাইল না। কায়দা করে সুহাস ফারাহ আসার কথা জানাল। আইয়াজ যে ফারাহ’র প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে টের পেয়েছে সে। ইদানীং ম্যাসেন্জারে ফারাহর সঙ্গে বেশ চ্যাটিং করে আইয়াজ। সব খবর আছে সুহাসের কাছে। তাই ফারাহ নামক টোপ ফেলল সে। মুহুর্তেই সে টোপ গিলেও নিল আইয়াজ৷ বলল,

‘ আসছি আমি। সাথে করে নিধিকেও নিয়ে আসছি। নিধির আসার খবরটা তুই শুধু সৌধকে বলে দে। ওর ঘুম উড়ার পাশাপাশি ফুড়ুৎ করে তোর বাসায় উপস্থিত হবে। ‘

আইয়াজের বুদ্ধি মানেই খাপে খাপ। আজ ওরা এলে রেখে দেবে। রাতেও যেতে দেবে না ৷ জম্পেশ আড্ডার পাশাপাশি নামীদামিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দেবে। শান্তি ভরে শ্বাস নিল সুহাস। নিচে নামতে পা বাড়াল। তৎক্ষনাৎ মাথায় তোয়ালে প্যাঁচিয়ে বালতি হাতে ছাদে প্রবেশ করল নামী। মুখোমুখি হলো সুহাসের। সন্তর্পণে পাশ কাটিয়ে চলে গেল ছাদের মাঝ বরাবর। নামীর চলনবলন দেখলেই সুহাসের শরীর জ্বলতে শুরু করে। এই মেয়ে হাবভাব এমন দেখায় যেন সে এই দেশের মিনিস্টার। কাপড়ের পানি ঝেড়ে শুখা দিতে লাগল নামী। সুহাস নিচে গেল না৷ সে বিপরীত পাশে গিয়ে দাঁড়াল। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইল নামীর দিকে। নামী ভেবেছিল সুহাস চলে গেছে। তাই জামার নিচে পরিধেয় ছোট্ট বস্ত্র শুখা দিতে উদ্যত হলো। সে মুহুর্তেই বেজে ওঠল সুহাসের ফোন৷ চমকে ওঠল নামী। ধাতস্থ হয়ে অধোবস্ত্রটি লুকিয়ে ফেলল। সুহাস ফোন রিসিভ করলেও নামীর থেকে নজর সরাল না। নামী কতক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকল। এরপর কামিজের নিচে আলগোছে অধোবস্ত্রটি রেখে কামিজ টান টান করে শুখা দিয়ে নিচে চলে গেল। নামী চলে যেতেই ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইল সুহাস। ব্যাপারটা কী ঘটল? ফোনের ওপাশে প্রীতি বকবক করেই চলেছে। সুহাসের সেদিকে হুঁশ নেই৷ সে মগ্ন নামীতে। নামী কী লুকাল? অমন দ্বিধান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল কেন? এসব প্রশ্নই ঘুরপাক খেতে লাগল মাথায়। একসময় ফোন কেটে দিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে এলো। কিঞ্চিৎ দ্বিধা ঠেকলেও দুরন্ত মস্তিষ্ক তাকে পাত্তা দিল না। চট করে জামা উঁচিয়ে দেখে ফেলল কাঙ্ক্ষিত বস্ত্রটি। নিমিষেই শরীর শিরশির করে ওঠল তার। হৃৎপিণ্ডে ধড়াস জনক একটি শব্দও হলো। কণ্ঠনালি শুঁকিয়ে নীরস হয়ে গেল। কেঁপে ওঠল জামা ধরে রাখা হাতটা। শ্বাস আঁটকে দাঁড়িয়ে রইল কতক্ষণ। নিজের প্রতি অভিযোগ আসল একবার। পরোক্ষণেই মনটা চনমনে হয়ে ওঠল। আশপাশে চোরা চোখে তাকিয়ে ছাদের দরজার দিকে সচেতন ভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। এরপর ত্বরিত অধোবস্ত্রটি টান দিয়ে ভরে নিল হাতের মুঠোয়। ছাদের দরজা পর্যন্ত গিয়ে কী যেন ভেবে মুঠো ভরা বস্ত্রটি থ্রি কোয়াটার প্যান্টের পকেটে পুরে নিল। দৃষ্টিতে ঝলমল করল দুষ্টু হাসিরা। অধরে ফুটে ওঠল বক্র হাসি। ‘ আহ নামীদামি দারুণ জব্দ হবে তুমি। ‘ মনে মনে কথাটা বলেই বুকের ভেতর খেলে গেল পৈশাচিক আনন্দ।
***
বড়ো আপুকে খুব কষ্টে রাজি করেছে ফারাহ৷ যেন নামীর কাছে ক’দিন থাকতে দেয়৷ দু’জন মিলে একসঙ্গে পড়াশোনা করবে। নামী পড়াশোনায় কত ভালো সে গল্প শুনেছে ফারাহর বড়ো আপু। সে বরাবর ভালো স্টুডেন্ট’সদের সমীহ করে। তাই নামীর রিকুয়েস্ট ফেলতে পারেনি। তাছাড়া শুনেছে মেয়েটা একা থাকবে। তার বাবা গুরুত্বপূর্ণ কাজে দেশের বাইরে গেছে। মা মরা মেয়ে বড্ড মায়া হয়েছে নামীর জন্য৷ সোহান খন্দকার নামীর শশুর এ কথা ফারাহ জানলেও ফারাহর বড়ো বোনকে জানানো হয়নি। তাছাড়া সুহাস, নামীর সম্পর্কের কথা কেউ জানে না৷ কেবল ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু – বান্ধব ছাড়া। তাই খুব একটা সমস্যা হয়নি আপুকে পটাতে৷ দুই বান্ধবী মিলে দুপুরবেলা আচাড় দিয়ে পাতলা খিচুড়ি খেল। এরপর পড়াশোনা নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা করে পড়তে বসল যে যার মতো।

সময় গড়াল অনেকক্ষণ। আকাশে গুড়ুম গুড়ুম শব্দে চমকে ওঠল নামী। ছুটে চলে গেল ছাদে, কাপড় আনতে। ফারাহও বই বন্ধ করে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলো। ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল সুহাস ভাইদের বাড়িটা। সদর দরজা দিয়ে ঢুকছিল আইয়াজ। ফারাহ এক পাশ থেকে অপর পাশে যেতে নিতেই নিজ ওড়নায় নিজেরই পা লেগে পড়ে গেল। স্বাস্থ্য ভালো নাদুসনুদুস মেয়েটা পড়ে গিয়ে আঘাত পেল তীব্রভাবেই। বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই অমন দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে পারল না আইয়াজ। ত্বরিত গিয়ে ধরল মেয়েটাকে। ভারিক্কি নরম শরীরটাকে ওঠে বসাতে বেশ বেগ পেতে হলো। দুই চোখ গলে পানি পড়ছে ফারাহ। তরতরা নাক, গোলাপি রাঙা ঠোঁটদ্বয় রক্তিম হয়ে ওঠেছে। আইয়াজের পেছনে নিধি ছিল। আতঙ্কিত হয়ে সেও ছুটে এসে ধরল ফারাহকে। দুই বন্ধু মিলে ওঠাল ওকে। ধীরেসুস্থে নিয়ে বসাল ড্রয়িং রুমের সোফায়৷ ওপর থেকে সুহাস নামী দু’জনেই ছুটে এলো। নামী ফারাহকে ধরে আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল,

‘ কী হয়েছে ফারাহ! ‘

আইয়াজ চশমা ঠিক করতে করতে সরে গেল। নিধি বলল ঘটনাটি। নামী বকে ওঠল ফারাহকে। বলল,

‘ চশমা ছাড়া বেরিয়েছিস কেন তুই? ইস, কোথায় কোথায় লেগেছে বল আমায়। ‘

সুহাস বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফেলল। ব্যঙ্গ করে বলল,

‘ আসছে ডাক্তারনি। ‘

নামী তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। ফারাহকে বলল,

‘ দেখি ওঠতে পারবি? রুমে চল। ‘

নিধি বলল,

‘ আমি সাহায্য করছি। ‘

নামী, নিধি দু’জন মিলে ধরে ফারাহকে নামীর ঘরে নিয়ে গেল। আইয়াজ ব্যথাহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওদের যাওয়ার পানে৷ সুহাস তা দৃষ্টিপাত করে নিচু কণ্ঠে বলল,

‘ কীরে চক্কর কবে থেকে চলে? ‘

‘ কীসের চক্কর টুকটাক কথা হয় শুধু৷ আর কিছু নয়। ‘

‘ তাহলে ব্যথা কোথায় পাচ্ছিস চোখে না বুকে? ‘

‘ মানে কী বলছিস কী? ‘

দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করল আইয়াজ। সুহাস তার চতুর্দিকে ঘুরপাক দিতে দিতে দুষ্টু হেসে বলল,

‘ বুকের ব্যথা চোখে ফুটে বন্ধু, চোখে ফুটে। ‘

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে