#তোর_মনপাড়ায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ১৫
থার্ড ফ্লোরের সামনে আসতেই কেউ একজন হুট করে ঈর্ষার গালে চুমু খেল। ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পাশে তাকাতেই হাসি ফুটে উঠল তার মুখের কোণে। আদাফ তার গালে চুমু খেয়েছে। সামিরার হাত ছেড়ে এক হাঁটু গেড়ে আদাফের সামনে বসে পড়লো। দুই গাল টেনে দিলো। মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো.
— “আদাফ তুমি এখানে কি করছ? ভাই কিংবা মাকে জানিয়ে এসেছ কি? তারা কিন্তু প্রচন্ড টেনশন করবে।”
আদাফ ঈর্ষার গলা জড়িয়ে ধরে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল.
— “আমি ভাইয়ের সাথে এসেছি! (আঙুলে দিয়ে ইশারা করে) ভাই ঐ দিকটায় আছে।”
আদাফের আঙুল বরাবর তাকিয়ে লক্ষ্য করলো ঈর্ষা। সাদাফকে তার নজরে এলো না। কিছু বলার আগেই সামিরা চেঁচিয়ে উঠলো। আদাফের শার্টের কলার টেনে ধরে বলল.
— “তোর সাহস তো কম নয়, আমার আপির গলা ধরিস। আজকে তোর চুলগুলো ছিঁড়ে শাক রান্না করে খাবো। দাঁড়া তুই.
সামিরা শার্ট ছেড়ে আদাফের চুল চেপে ধরলো। আদাফও বেনুনী করা চুল ধরে টান দিলো। কেউ কার থেকে কম যায় না। দুজনের মাঝখানে ফেঁসে গেল ঈর্ষা। বিষয়টা বোধগম্য হতে হতে আদাফের শার্টের বোতামগুলো ফ্লোরের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। তাদের ঝগড়া কমার বদলে ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ভিড় জমে গেছে। দুজনের ঝগড়া করতে করতে অনেকটা দূর চলে গেছে। সময় অবিলম্ব না করে সেদিকে ছুটল ঈর্ষা। মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুজনকে থামাতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো সে। এক পর্যায়ে সামিরা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে আদাফকে ধাক্কা দিলো। আদাফ নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হয়ে থার্ড ফ্লোর থেকে পড়ে যেতে নিল। সেখানে থেকে পড়লে বাঁচতে পারবে কিনা সন্দেহ। বাঁচলেও হাত পা খোয়াতে হবে। পড়ে যাওয়ার আগেই হাত ধরে নিলো ঈর্ষা। একপা রেলিং এর সাথে পেঁচিয়ে নিল। ধীরে ধীরে আদাফের হাত ধরে তুলে নিলো। পেছনে ফিরতেই স্বজোরে চড় বসিয়ে দিল তার গালে। গালে হাত রেখে সামনে তাকাতেই সাদাফের হিংস্র মুখশ্রী নজরে এলো তার। সাথে আরো কয়েকটা চড় পড়লো তার গালে। আদাফকে বুকে জরিয়ে নিল সে। ঘনঘন শ্বাস নিয়ে কয়েকটা চুমু খেলো ভাইয়ের মুখে। অতঃপর আদাফকে ছেড়ে ঈর্ষার কাছে এসে দাঁড়ালো। বাহু ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলল.
— “কি ক্ষতি করেছে ও তোর। কি শক্রুতা ওর সাথে। আমার মায়ের হাতে খেয়ে, আমার ভাইকে মারার সাহস হয় কিকরে তোর। তোর নামের মানেই তো হিংসা। তুই ভালো হবি কি করে। ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি, কেন তোর মতো একটা মেয়েকে আমি আমার বাড়িতে নিয়ে গেলাম। খাল কেটে কুমির নিয়ে এসেছি, এখন সেই কুমির তো আমাকে শান্তি দিবেই না।”
টুস করে গাল গড়িয়ে পড়লো অম্বুধারা। ক্লান্ত হাতে মুছে নিল সে। সে আজও সাদাফের বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি। যদি পারতো, তাহলে এতো গুলো কথা সবার সামনে শোনাতে পারতো না। হয়তো সে কারো বিশ্বাসের যোগ্য নয়। তারই ভুল হয়েছে অন্যকারো উপর এতোটা ডিফেন্ড হওয়া। ঠোঁট কামড়ে বলল.
— “সাদাফ তুমি ভুল ভাবছো? চোখে যেটা দেখা যায় সেটা সবসময় সত্যি হয় না।”
— একদম রাইট, যেটা দেখা যায় সেটা সবসময় সত্যি হয়না। যেটা তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। (আদাফকে উদ্দেশ্য করে) বাড়িতে চল এইসব অমানুষের মাঝে থাকলে তুইও অমানুষই হবি।
— “ভাইয়া তুই ভুল.
— “চুপ করবি তুই! এখনও এই মেয়ের হয়ে সাফাই গাইবি।”
আদাফকে থামিয়ে কথাগুলো বললো সাদাফ। হাত ধরে টানতে টানতে বেরিয়ে গেল সে। সাদাফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সামিরার দিকে তাকালো ঈর্ষা। মেয়েটা এক কোণে গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো অনেকটা ভয় পেয়েছে। দুগালে হাত বুলিয়ে সামিরার হাত ধরে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে গেল ঈর্ষা। পূর্ণরায় সকলের পূর্বের ন্যায় ব্যাস্ত হয়ে গেল।
________________
রুমের প্রতিটি জিনিস এলোমেলো হয়ে আছে। কাঁচ ভেঙ্গে টুকরোগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মেঝে জুড়ে। কিছুতেই মন দিতে পারছে না সাদাফ। বিকেলের দৃশ্য গুলো ভেসে উঠছে চোখের সামনে। বড্ড দোটানায় পড়েছে সে। দুহাতে মাথার চুল টেনে ধরলো। অতিরিক্ত রাগে চুল টানা সাদাফের নিত্তদিনের অভ্যাস। তখনই কাঁধে কারো স্পর্শ পেল সে। একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে! শান্ত গলায় বলল.
— “মা; আমি এমনিতেই প্রচন্ড রেগে আছি। এমন কোনো কথা বলো না, যাতে রাগটাকে আর সামলাতে না পারি।”
— “সাদাফ; বেশী রাগ ভালো নয়। আমার বারবার মনে হচ্ছে তুই শুধু শুধু মেয়েটার গায়ে হাত তুলেছিস। তুই তো বিচক্ষণ মানুষ তাহলে এই সামান্য বিষয়টাও তোর ভেবে দেখা উচিত ছিল।”
টেবিলের উপর সজ্জিত কাঁচের ফুল-দানিটা ছুড়ে ফেলে দিল। কাঁচ ভাঙ্গার তুমুল শব্দে ফেটে গেল বাড়ি। ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল.
— “আমি তোমার ছেলে হই মা! ঈর্ষা ফুর্ষা কেউ নয়। আমার কথাগুলো তোমার বিশ্বাস হচ্ছেনা, সামান্য দুদিনের একটা মেয়ের কথা বিশ্বাস হচ্ছে। কতোটুকু জানো তুমি ওর বিরোদ্ধে। ওর একটা পাগল,,
ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলেন সাবিহা। আজ নিজের ছেলেকে চিনতে অসুবিধে হচ্ছে তার। দরজার দিকে তাকিয়ে আদাফকে ডাক দিলেন। আদাফ এসে মায়ের পেছনে দাঁড়ালো। সবটা খুলে বললো! পুরোটা শুনে থ হয়ে গেল সাদাফ। শুধু শুধু আরো একটা ভুল করে বসলো। সাবিহার কাছে স্যরি বললে তিনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিলেন। বললেন.
— “তোকে আমি এই শিক্ষা দিয়েছি। ভাবতেই পারছিনা, শেষে কিনা একটা মানুষের দূর্বলতা আঘাত করলি। সকলের সামনে গায়ে হাত দিতেও দ্বিধা বোধ করলি না। ছিঃ..! বলছিস সে পাগল। সময় থাকতে নিজেকে সংযত করে নে!
আদাফ চলে এসো.
আদাফকে আসতে বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন। শব্দ করে বসে পড়লো সে। সামান্যতম আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হলো হাত। কাঁচের কিছু টুকরো হাতের মুঠোয় ঢুকে গেল। সেদিকে না তাকিয়ে আদাফকে বলল.
— “তোর কাছে ঈর্ষার কন্টাক্ট নম্বর আছে?”
আদাফ মাথা নেড়ে হ্যা সূচক বুঝিয়ে বেরিয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো নিজের ফোন নিয়ে।
___________________
ঘড়ির কাঁটা দশটা অতিক্রম করেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। কোনো কিছুতে মন বসছে না ঈর্ষার। রুমের এক কোণ থেকে অন্যকোণে পায়চারী করছে। রিংটোনের আওয়াজ বিরক্ত হলো ঈর্ষা। ক্রমাগত ঘ্যান ঘ্যান করে ফোন ভেজেই চলেছে ফোন। এই নিয়ে তিনবার রিসিভ করেছে, হ্যালো বলার পর কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে ফোন কেটে দিচ্ছে। পূর্ণরায় ফোনের রিংটোন বাজতেই কেটে বন্ধ করে রাখল সে। অতঃপর আবার পায়চারী করতে মন দিলো। “আপি” ডাকে ধ্যান ফিরলো তার। সামিরা এসেছে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে। বক্সটা বেডের উপর রেখে ঈর্ষাকে টেনে বেডে বসিয়ে দিল। তুলোতে স্যাভলন লাগিয়ে ঈর্ষার গালে দিকে হাত এগুলো। স্বল্প পেছনে ঝুঁকে গেল ঈর্ষা। ভ্রু কুঁচকে বলল.
— “আমার মেডিসিনের প্রয়োজন হয় না, এমনিতেই ভালো হয়ে যাই। হালকা একটু লাল হয়ে আছে, রাতেই ঠিক হয়ে যাবে।”
কথা কানে তুললো না সামিরা। একহাতে শক্ত করে গাল চেপে ধীরে ধীরে মেডিসিন লাগালো। মুখে কিছু উচ্চারণ করতে পারলো না। প্রথমবার মেডিসিন গাল স্পর্শ করতেই ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো ঈর্ষা। হালকা বিস্তার মেডিসিন গালে লাগিয়ে দিলো। গ্লাসে পানি ঢেকে কিছু মেডিসিন খাইয়ে দিল। যেমন বিনা বাক্যেয় এসেছিলো, তেমন স্থীর ভাবে চলে গেল। পুরোটা মন দিয়ে দেখেছে ঈর্ষা।
সপ্তাহ খানেক ধরে ক্লাবে যাওয়া হয় না তার। ফোন অন করে সবাইকে ক্লাবে আসতে বললো। নিজের প্রয়োজনীয় জামা কাপড় পাল্টে ক্লাবের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। আজ অনেক দিন পর আবার আগেই ঈর্ষা হয়ে যাবে। একদম আগেই ঈর্ষা।
(চলবে)