#তোর_মনপাড়ায়
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ০৫
হাত-পায়ে, মুখে পাউডার মেখে সাদাফের রুমে প্রবেশ করলো আদাফ। আচম্বিতে আদাফ-কে এমন অবস্থায় দেখে উঠে বসলে গেলে ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে গেল সাদাফ। সাবিহা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। আসলে চোখের সামনে কাকে দেখছে সে। হাতে ভর দিয়ে আদাফের সামনে দাঁড়ালো সাদাফ। কান ধরে টেনে মায়ের সামনে দাঁড় করিয়ে বলল.
— “দেখ, তোমার ছেলে কারবার। মুখে পাউডার মেখে আমাকে, এই আব্রাহাম আহম্মেদ সাদাফ-কে ভয় দেখাতে এসেছে। ”
কান থেকে সাদাফের হাত ছাড়িয়ে সাবিনার পাশে বসে পড়লো। কান ঢলতে ঢলতে বলল.
— “দেখেছ মা! তোমাদের ছেলের আমার কোনো কিছু পছন্দ নয়। আমি দেখতে ভাইয়ার চেয়ে সামান্য কালো। তাই পাউডার মেখেছি; যাকে ভাইয়াকে ছেড়ে সবাই আমার উপর ক্রাশ খায়। সেটা তোমার আদরের ছেলের পছন্দ হচ্ছে না।”
ছোট ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে চোখ পিটপিট করে তাকালো সাদাফ। লাইফে আজ পর্যন্ত কাউকে মনের মতো পছন্দ হয়নি। যারা লাইফে এসেছে। সব হেংলা। সিনিয়র হয়ে জুনিয়র ছেলেকে প্রোপজ করেছে। আর তার ভাই অন্যর ক্রাশ হওয়ার জন্য মুখে পাউডার মাখছে মানা যায়।
আদাফের হাতের রংঙের সাথে নিজের হাত মিলিয়ে আশ্বাসের কন্ঠে বলল.
— “আদাব তুই যথেষ্ট সুন্দর। আমার থেকেও সুন্দর। তুই শ্যামবর্ণ হলে কি হয়েছে, তোর ফেইস গঠন আমার থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে।
তাছাড়া প্রেম ভালোবাসা জিনিসটা প্যারা। এইসব বাদ দিয়ে পড়াশোনা কর।”
সন্তুষ্টি হলো না আদাফ। ভেংচি কেটে পকেট থেকে ডায়মন্ডের ব্রেসলেট বের করে সাদাফের বরাবার ধরে রুদ্র কন্ঠে গ্ৰাম্য ভাষায় বলল.
— “আমি মন প্যান জান লাগাইয়া পড়াশোনা করমু। আর এইদিগে তুই সুন্দর সুন্দর মাইয়াগো লগে পিরিত করে বেড়াবি। কেন- রে আল্লাহ কি সব মেয়ে তোকে রেজিস্ট্রি করে দিছে।”
আদাফের হাতের ব্রেসলেট-টার দিকে তাকিয়ে আছে সাদাফ। ব্রেসলেট টা সে আগেও একবার দেখেছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে, ঠিক বলতে পারবে না। তাছাড়া ব্রেসলেটের সাথে প্রেম করার কি সম্পর্ক, না বুঝতে পেরে অস্বাভাবিক কন্ঠে বলল.
— “কথাগুলো গলায় না পেঁচিয়ে ঝেড়ে কাশ তো। ”
সাবিহার দিকে তাকালো আদাফ। তখনও কৌতূহলী চোখে সাবিহাও তার দিকে তাকিয়ে আছে। ব্রেসলেট কে উদ্দেশ্য করে বলল.
— “ভালোভাবে দেখ! এটা লেডিস ব্রেসলেট। এটা আমি কোথায় পেয়েছি জানো? ভাইয়ার জিনিসের পকেট থেকে। এখন বলো; ভাইয়ার পকেটে লেডিস ব্রেসলেট এলো কোথা থেকে! নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড এর জন্য এনেছে?”
সাবিহা আদাফের যুক্তির মানে বুঝতে পেরে ভ্রু কুঁচকে সাদাফের দিকে তাকালো। সাদাফ একবার ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার মায়ের দিকে। তারও বুঝতে অসুবিধে হয়নি আদাফ কি বোঝাতে চেয়েছে।
আদাফের হাত থেকে ব্রেসলেট-টা নিয়ে নিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তীক্ষ্ম চোখে আদাফের দিয়ে তাকিয়ে বলল..
— “তুই আবারো না বলে আমার জিন্সের পকেটে হাত দিয়েছিস। আজকে তো তোকে..
সাদাফের কথা শেষ হওয়ার আগেই আদাফ ছুটল। আদাফের পিছুপিছু ছুটল সাদাফ। পেছন থেকে দুই ভাইয়ের পাগলামী দেখে হেসে উঠলো সাবিহা। তাহলে ছেলের সুবুদ্ধি হয়েছে।
_______________________
ঈর্ষার অসুস্থতার খবর শুনে ছুটে এসেছে শাহিনুজ্জামান। বাড়িতে ফিরে ঈর্ষাকে অস্বাভাবিক অবস্থায় দেখে কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন উনি। ঈর্ষার পাশে বসে কড়িকে উদ্বিগ্ন গলায় পানি আনতে বললেন। পানি হাতের নাগালে পেতেই সামান্য পরিমাণে ছিটিয়ে দিল চোখ মুখে। তবুও জ্ঞান ফিরলো না ঈর্ষার। গ্লাসটা রেখে ধীরগতি ভাবে শোয়া থেকে উঠে বসালো ঈর্ষাকে। চৈত্রী আর স্পৃহার সাহায্য নিয়ে রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন ঈর্ষাকে নিয়ে।
মাথার পেছনে বালিশ দিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করে ঈর্ষাকে শুইয়ে দিলেন তিনি। কড়ি লেবুর শরবত নিয়ে হাজির হতেই গ্লাস তুলে নিলেন শাহিনুজ্জামান। স্টিলের চামচ দিয়ে সামান্য পরিমাণে তুলে ধীরে ধীরে ঈর্ষার মুখে তুলে দিলেন। অস্থিরতায় মাঝে লেবুর শরবত ভিশন উপকার।
ট্রে নিয়ে যাওয়া সময় পেছনে ফিরে সংকোচ বোধ নিয়ে কড়ি বলল.
— “বলছিলাম কি বড় সাহেব; আমি কি একবার ডাক্তার-কে ফোন করব।”
মুখের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে গেল শাহিনুজ্জামানের। কড়ির দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে হালকা ধমকের সুরে বললেন.
— “তোকে আমি একবারও বলেছি; ডাক্তার ডাকতে।”
মাথা নেড়ে না সমূহ বোঝালো কড়ি। সাথে সাথে গর্জে উঠলেও শাহিনুজ্জামান.
— “তাহলে সবসময় এতো পাকামি কেন করতে চাস। ডাক্তার আসলে একটা একটা মেডিসিন দিতে দিতে এক গাদা মেডিসিন দিয়ে যায়। তার থেকে যদি একটা মেডিসিন ম্যাডাম মুখে দিতো তাহলে তো হয়েই যেত। দুদিন পর সব মেডিসিন ডাসবিনে ময়লার স্তূপে জমে থাকে। তাহলে সেই মেডিসিন দিয়ে কি করবো আমি। বল..
বেডের কোণে গুটিয়ে রাখা ব্যাঙ্কেট খানা টেনে গলার পর্যন্ত ঢেকে দিলেন শাহিনুজ্জামান। মাথায় হাত বুলিয়ে রুমের আলো বন্ধ করে নিচে নেমে এলেন। সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মাহিন ইতোহস্ত বোধ করতে করতে বলল.
— “সরি! সরি মামা। আসলে আমরা বুঝতে পারি নি।”
— “কি বুঝতে পারনি; বলো আমাকে! আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। ঈর্ষা অসুখের কথাটা কি তোমরা জানতে না। আমাকে মাসে পনেরো দিন দেশে বাকি পনেরো দিন লন্ডনে থাককতে হয়। যখন সেখানে থাকি, সারাক্ষন চিন্তায় থাকি! এই বুঝি মেয়েটা কিছু একটি করে বসলো। কতোবার ঈর্ষাকে বললাম, চল সেখানে গিয়ে থাকি। কিন্তু কে শোনে কার কথা, সে যাবে না মানে যাবে না। ”
আজকে আবার মারামারি করে এসেছে তাই না। ওকে বুঝিয়েছি, অন্যর সংস্পর্শে যাস না। সে যায় আবার অসুস্থ হয়ে ফিরে আসে। আমি তো ওকে ওর দূর্বলতা বুঝাতে পারছি না। তাই তোমাদের জানিসেছি। কিন্তু তোমরাও এতোবড় একটা মানসিক অসুখ নিয়ে হেলাফেলা করছ? তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ, তোমরা ওকে সবকিছু থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করো। অন্যথায় আমি ঈর্ষাকে নিয়ে চলে যাবে।
______________________
দিবাবসুর ক্লান্ত রশ্মি পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে অনেকটা। আলোকরশ্মি দূর্বল হয়ে পড়েছে। রক্তিম বর্ণ সূর্য হলদেটে রুপ ধারণ করেছে। কেউ এই পড়ন্ত বেলায় ব্যাগপত্র নিয়ে প্রাইভেট পড়তে ছুটছে কেউ আবার দল গঠন করে বিভিন্ন খেলায় মেতে উঠেছে। কেউ ব্যাগ রেখে মাঠের ক্রিকেট খেলায় যোগ দিয়েছে। ঈর্ষা এই পড়ন্ত বেলায় শরীরে চাদর পেঁচিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে মাঠের কোণে দাঁড়িয়ে আছে। আজ শরীরটা সকাল থেকেই খারাপ ছিল, তাই কোথাও যাওয়া হয়নি। হঠাৎ-ই অন্যরকম ইচ্ছে জাগলো মনের কোণে। জানালার ফাঁক দিয়ে মাঠে ছোট ছোট বাচ্চাদের খেলতে দেখে এগিয়ে এলো সে। শরীরের ভাব কমাতে পাতলা চাদর জরিয়ে এসেছে।
ঈর্ষাকে আসতে দেখেই বাচ্চাগুলো এগিয়ে এলো। মুচকি হেসে উচ্ছাসের স্বরে বলল.
— “তুমি আমাদের সাথে খেলবে? আগে তো প্রায়ই খেলতে? ”
বাচ্চাদের সাথে হাসলো ঈর্ষা। আগে প্রায় ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলতো। এখন আর খেলাধুলা হয়না।আজ খেলবে। কাঁধে থেকে সরে আসা চাদরটা টেনে বলল.
— “আমি কিন্তু বল করতে পারব না। যদি ব্যাট হয় তাহলে খেলতে রাজি আছে।”
সাথে সাথে ঐ-হুল্লোরের আওয়াজ পড়ে গেল। বাচ্চাদের কান্ড দেখে মন ভালো হয়ে গেল ঈর্ষার।
প্রথম বল ব্যাটেই লাগাতে পারলে না ঈর্ষা। দ্বিতীয় বল চাদরে আটকে গড়িয়ে গেল। নিজের উপর নিজেরই বিরক্ত হলো ঈর্ষা। আগে তো বলে বলে ছক্কা হাঁকাতে পারতো। এখন সামান্য ব্যাটের সাথে বল ছোঁয়াতে পারছে না।
নিঃশব্দে হাত থেকে ব্যাট-টা মাটিতে রাখল। শরীর থেকে পাতলা চাদর টা সরিয়ে নিল। কোমরে পেঁচিয়ে পূর্ণরায় ব্যাট তুললো হাতে। ভাব নিয়ে ইশারায় বল করতে বলে দাড়ালো ঈর্ষা। পরের বলেই ছক্কা হাঁকাতে পারল। ঈর্ষার খুশি দেখে কে?
পরের বলটি করতে নিলেই বাচ্চাগুলো দৌড়ে একপাশে গিয়ে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ বাচ্চাদের এমন বিহেবিয়ার বুঝতে ব্যর্থ হলো ঈর্ষা। এগিয়ে গেল বাচ্চাদের দিকে। কৌতূহলী কন্ঠে বলল.
— “বল করা রেখে এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন?”
বাচ্চাগুলো পেছনে না তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে মাঠের কিনারে ইশারা করে ফিসফিসিয়ে বলল..– ঐ দেখ! ওখানে একটা চান্দিছিলা লোক হিসু করছে!
তাকাতেই মেজাজ চড়ে গেল ঈর্ষার। কোমড়ে হাত দিয়ে বলল..
— “আজ জন্মের মতো হিসু করা ছুটিয়ে দিচ্ছি দাঁড়া। একজন এসে বল কর তো।”
ঈর্ষা ব্যাট নিয়ে পূর্বের স্থানে দাড়ালো। বল ছুঁড়তেই লোকটার মাথার টাক বরাবর বল ঠেকালো ঈর্ষা। হলো তার বিপরীত। হঠাৎ লোকটা সরে যাওয়াতে বল গিয়ে লাগল সাদাফের..
(চলবে)