তোমায় নিয়ে ভ্রমণ পর্বঃ ০৩( শেষ)

1
2368

তোমায় নিয়ে ভ্রমণ পর্বঃ ০৩( শেষ)

লেখকঃ আবির খান

আবিরদের চাঁন্দের গাড়ি ওদের নিয়ে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু পথ দিয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখাতে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে সাজেক। ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর আবিররা সেনাবাহিনী স্কটে পৌঁছে যায়। সেখান থেকে সেনাবাহিনীকে ওদের সব তথ্য দিয়ে তাদের সাথে রওনা হয় সাজেকের উদ্দেশ্যে।

এই সেনাবাহিনী স্কট ছাড়া মানে তাদের পারমিশন ছাড়া কোন ভাবেই সাজেক যাওয়া সম্ভব না। কেউ গেলে তাকে আইনী ভাবে দন্ডিত করা হবে। এছাড়া মূলত সীমান্তের কাছে হওয়ায় পর্যাটকদের সুরক্ষার জন্য এই সেনাবাহিনী স্কট সাথে করে যায়। যাতে কোন সমস্যা না হয় পাহাড়িদের এবং পর্যাটকদের।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

 

আবিরদের গাড়ি অন্য গাড়িদের পিছে পিছে যাচ্ছে। ওরা এই সেনাবাহিনী স্কট থেকে এখন যাবে মাচালং বাজার। এই একমাত্র জায়গা যেখানে গাড়ি থামবে এবং নাস্তা পানি করা যাবে। মাচালং এর পর আর কোথাও গাড়ি থামানোর সুযোগ নেই। কারণ সেখানে এক গিয়ারের একদম সাজেক যেতে হবে। কোন ভাবে ব্রেক কসা যাবে না৷ ব্রেক কসলেই বিপদ। কারণ রাস্তাটাই এমন।

সাথী আবিরের বাহুদ্বয় ধরে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু পথের আশপাশ জ্বলজ্বল চোখে দেখছে৷ আবির শুধু মুগ্ধ হয়ে সাথীর দিকে তাকিয়ে আছে। আহ!মেয়েটা আজ কত্তো খুশী। মায়াবী মুখখানা উজ্জ্বল হয়ে আছে খুশীতে। মনে হচ্ছে ১৮ বছরের কোন মেয়ে সাথী। এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখে পুলকিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অন্যদিকে সালমান আর নীলারও সেইম অবস্থা। তাদের দুজনকেও ১৮ বছরের যুবক-যুবতী মনে হচ্ছে। গভীর ভালবাসায় দুজন মাখামাখি করছে। আসলে সাজেকের এই অপরূপ সৌন্দর্য্য যে কাউকেই পুলকিত করে দেয়। হাসাহাসি মজা ঠাট্টা করতে করতে ওরা মাচালং বাজারে চলে আসে। গাড়ি থামতেই ওরা নেমে শরীরটা একটু ঝাকি দিকে আশপাশটা দেখে। অনেক পাহাড়ি লোক সাথে অন্য পর্যাটকরা। পাহাড়িরা পাহাড় থেকে শাক-সবজি, ফল-মূল আরো কত কি নিয়ে বসেছে৷

আবিরঃ ভাইয়া চলো নাস্তা করে ফেলি। অনেক ক্ষুধা লাগছে।

সালমানঃ হ্যাঁ হ্যাঁ চল। তোমরাও আসো।

এরপর ওরা নাস্তা করতে চলে যায়। নাস্তা করেই আবার গাড়িতে। এখন গাড়ি ছাড়লে আর কোন ভাবেই থামবে না। ওরা চারজন গাড়িতে বসে আছে। গাড়ি তার আপন গতিতে আবার ছুটতে শুরু করে। এই শেষের ৩ কি.মি. পথ পার করা একজন ড্রাইভারের কাছে খুব চ্যালেঞ্জিং। একটু ভুল হলেই শেষ। গাড়ি আস্তে আস্তে উপরে সাজেকের দিকে উঠছে৷ আর ওরা সাজেকের সৌন্দর্য্য উপভোগ করছে। আবির দুষ্টটা হঠাৎ সাথীকে চমকে দেয় ওর গালে একটা চুমু দিয়ে। সাথী কারেন্টের সক খাওয়ার মতো করে আবিরের দিকে তাকায়। আবির মিটমিট করে হাসে শুধু। সাথী লজ্জা পায়। আবির সাথীকে জড়িয়ে ধরে পিছন থেকে। সাজেকের ঠান্ডা হাওয়া এসে ওদের মুখে লাগে। অবশ্য এখন আকাশ ভরা রোদ। তাও বাতাসটা খুব হালকা আর ঠান্ডা। আবির আর সাথীদের রোমাঞ্চ দেখে নীলা সালমানের পেটে গুতো দিয়ে বলে,

~ দেখেছো তোমার ছোট ভাই কত সুন্দর করে তার বউকে আদর করছে আর তুমি আমাকে। কথাই নাই তোমার সাথে।

– আহ! আমি কি এখন ছোট ভাইয়ের সামনে তোমাকে জড়িয়ে ধরবো? আমার লজ্জা করেনা।

~ এহহ! কি আমার লজ্জাবতী জামাই। কথা নাই তোমার সাথে যাও।

– আচ্ছা বাবা এই যে ধরছি। খুশী এবার?

~ হ্যাঁ এখন ঠিক আছে। বোকা জামাই। হিহি।

আবির আর সাথী ভাইয়া আর ভাবির কাহিনী দেখে হাসছে। এরপর ওরা সেই প্রকৃত গন্তব্য সাজেক ভ্যালিতে পৌঁছে যায়। অসম্ভব সুন্দর জায়গা। সাজেক নেমেই ওরা একটু হাঁটতেই সেই মেঘে ঢাকা পাহাড় দেখতে পায়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পাহাড়ের মাঝে নদী বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আসলে ওগুলো সব মেঘ। সাজেকের মেইন সুন্দর দৃশ্য ভোর বেলায়ই দেখা যাবে।

আবিররা ওখানে দায়িত্বেরত লোকের সাথে কথা বলে ওদের রিসোর্ট খুঁজে বের করে। ওদের রিসোর্টটা দামি। ৪০০০-৫০০০ টাকা একরাত। ডাবল বেড। যেহেতু ওরা দুই দিন থাকবে তাই ৯০০০ টাকা ভাড়া ওদের। এটা সবচেয়ে হাই রেট এখানে। তবে যারা সাধারণ তারা ১৫০০-২০০০ এর মধ্যেও ডাবল বেড এর রুম পেতে পারে এক রাতের জন্য। অফ সিজনে মূল্য আরো কম থাকে।

আবিরদের রিসোর্ট একদম হাইফাই। সব কিছু ঢাকার মতোই। আবির আর সাথী ওদের রুমে ঢুকে সবার আগে বারান্দায় যায়। কারণ কাল সকালে ওই বারান্দা থেকেই সেই সাজেকের অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখা যাবে। তবে এখন যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে আর সাথে হীম একটা বাতাস। আহ! সাথী আর আবির যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আবির সাথীর হাত ধরে ওর দিকে ঘুরিয়ে সাথীর মুক্তমনির মতো নয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। সাথীও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আবির সাথীকে ওর সাথে জড়িয়ে ধরে। সাথীও আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এ যেন এক অন্যরকম শান্তি। এক অন্যরকম অনুভূতি।

এরপর সেদিন ওরা রেস্ট নেয়। দুপুরে সেখানের একটা হোটেলে খাওয়া দাওয়া করে। এখানে ডাল ভাত আলু ভর্তা খেলে ১২০ টাকার মতো লাগে। আর যদি সাথে মুরগী থাকে তাহলে ১৬০ টাকা পড়বে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওরা একটু রেস্ট নিয়ে বিকেলে ঘুরতে বের হয়। ওদের রিসোর্টের আশপাশটা ওরা ঘুরে ঘুরে দেখছে। পড়ন্ত বিকেল। ঠান্ডা হাওয়া। অপরূপ দৃশ্য। আবির আর সাথী ওরা দুজন আলাদা ঘুরছে। আর সালমান নীলা আলাদা। আবির সাথীর হাত ধরে হাঁটছে আর ওর হাওয়ায় দোল খাওয়া ব্রাউনিস চুল গুলো দেখছে। আবিরের অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।

এরপর গোধূলি বিকেলে সূর্য মামার বাসায় যাওয়া ওরা চারজন মিলে উপভোগ করে। আস্তে আস্তে রাত হয়ে আসে। রাতের সাজেকের সৌন্দর্য্য দেখে ওরা সবাই মুগ্ধ। হরেক রকমের আলোর খেলা। সবগুলো রিসোর্ট বিভিন্ন রকমের আলো দিয়ে সাজানো। সাজেকে এসে রাতের বেলা বনফায়ার আর ব্যাম্বো চিকেন না খেলে সাজেক আসাই ভুল। তাই ওরা সেই ভুল করতে চায় না।

ওরা দুইটা ব্যাম্বো চিকেনের অর্ডার দেয়। একটি ব্যাম্বো চিকেনের দাম ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। একটু পরই ওদের ব্যাম্বো চিকেন এসে পরে। রুটি নিয়ে সবাই ঝাপিয়ে পড়ে। সাথী আবিরকে প্রথমে খাইয়ে দেয়। আবিরও ওকে খাইয়ে দেয়। অন্যদিকে আমাদের সালমান সাহেব সুস্বাদু চিকেন পেয়ে বউকে ভুলে খেয়েই যাচ্ছে। এদিকে নীলা যে গাল ফুলিয়ে বসে আছে তার কোন খবর তার নেই। নীলা সালমানকে এভাবে খেতে দেখে আর রাগ না ধরে রেখে নিজেই সালমানকে খাইয়ে দেয়। সালমান অবাক হয় বাট অনেক খুশী হয়। ও নীলাকে খাইয়ে দেয়। এভাবে খাওয়া দাওয়া শেষ হলে ওরা বনফায়ার করে। সালমান আর নীলার রিকোয়েস্টে আবির একটা গান গায়। সাথী আবিরের গান শুনে মুগ্ধ। এভাবে ওদের আড্ডা মজা গল্প করে সেদিন রাতটা পার হয়।

খুব সকালে,

– সাথী…সাথী…উঠো। সাজেকের আসল সৌন্দর্য্য দেখবে না? মেঘের সেই অপরূপ দৃশ্য?

সাথী দ্রুত উঠে বসে। চোখ মুছতে মুছতে বলে,

~ হ্যাঁ হ্যাঁ দেখবো চলেন।

আবির সাথীকে নিয়ে বারান্দায় যায়। আবির সাথী অবাক। ওদের বারান্দা মেঘে ভরে আছে। সূর্য মামা আস্তে আস্তে উপরে উঠছে। আহ! অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য। আবির আর সাথী শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখছে। শেষ পর্যন্ত ওদের সাজেক আসা স্বার্থক হলো। এরপর সারাদিন ওরা গাড়ি নিয়ে সাজেকের অনেক জায়গাই ঘুরে দেখে। খুব মজা করে। পরদিন ওরা ঢাকায় চলে আসে সাজেকের অপরূপ সৌন্দর্য্যকে বিদায় দিয়ে। আবির সাথী আর সালমান নীলা কখনো এই সাজেক ট্রিপ ভুলবে না।

– সমাপ্ত।

পুরো গল্পটি কেমন লেগেছে আপনাদের তা জানবেন কিন্তু। আমি অপেক্ষায় থাকবো আমার প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের মূল্যবান মন্তব্যের আশায়। ধন্যবাদ সবাইকে এতোটা সময় ধরে সাথে থাকার জন্য। সামনেও থাকবেন আশা করি। আর,

বাসায় থাকুন-আল্লাহর ইবাদত করুন-সবার জন্য দোয়া করুন।

© আবির খান।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে