তোমায় নিয়ে ভ্রমণ পর্বঃ ০১

0
3222

ভ্রমণ কাহিনী

সাথী আর আবিরের বিয়ে হয়েছে আজ এক মাস হলো। সম্পূর্ণ পারিবারিক ভাবেই ওদের বিয়ে হয়েছে। দুজনে অপরিচিত মানুষ হলেও আবির ঠিক সাথীকে মানিয়ে নিয়েছে। সাথীর কাছে নিজেকে ওর সবচেয়ে আপন একজন মানুষ বানিয়েছে। সাথী যেন আবিরকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। বিয়ের এই একমাস কেটে যায় ওদের দুষ্ট মিষ্টি সময় পার করে। কিন্তু আবিরের একান্নবর্তী পরিবার হওয়ায় ওরা কোয়ালিটি টাইম পার করতে পারছে না। তাই আবিরের মাথায় সর্বদা ঘুরপাক খাচ্ছে ওরা কোথাও দূরে ঘুরতে যাবে। মানে হানিমুনে আর কি। কিন্তু কোথায় যে যাবে তাই ভেবে পাচ্ছে না।

ওদের বিয়ে হলো শীতের মধ্যে। মানে ডিসেম্বরের শেষের দিকে। এখন জানুয়ারির শেষ চলছে। এই শীতে যে কোথায় যাবে তাই ই ভেবে পাচ্ছে না। আবির ওর রুমের রকিং চেয়ারে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিল। এর মধ্যেই আবিরের অপ্সরার মতো স্ত্রী মানে সাথী কফি হাতে হাজির হয়।

~ নিন আপনার স্পেশাল কফি আমার হাতের।

আবির সাথীর দিকে তাকাতেই মুগ্ধ হয়ে যায়। শীতের সকাল। বাহিরে পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ ভেসে আসছে। আর শীত ঠেলে সূর্য মামার ঝলমলে রোদ। এর মাঝে সাথী। মেয়েটার দিকে তাকালেই যেন আবির হারিয়ে যায়৷ কি সুন্দর ও। হাল্কা ফর্সা গায়ের রং, লম্বা ঘন ব্রাউনি সিল্কি চুল। সাথী আবিরের কাছে আসলেই ওর বাঁধা চুলগুলো আবির খুলে দিয়ে হাওয়ার উড়িয়ে দেয়৷ আহ! কি সুন্দর দোল খায়। আবির মুগ্ধ হয়ে তা দেখে। সাথীর অপরূপ মায়ায় ভরা চোখগুলোর কথা না বললেই নয়। এত্তো সুন্দর কারুকার্য চোখগুলোর যে তাতে না হারিয়ে কোন উপায় নেই। মারবেলের মতো চোখগুলো দেখলেই আবির সে চোখের মাঝে ডুবে থাকে। আর রইলো ঠোঁট। সেটার স্বাদ কেমন তা আবির রোজ পরীক্ষা করে। নাহলে তার ঘুম আসে না।

আবির সাথীর হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে সাথীকে ওর কোলে বসিয়ে বলে,

– আমি একটা কথা ভেবেছি।
~ কি ভেবেছেন?
– আমরা কদিন কোথাও ঘুরতে যাবো। শুধু তুমি আর আমি। বলো কোথায় যাবে? বাংলাদেশের বাইরে কোথাও যাবে?
~ না না। আমাদের দেশেই অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে। আগে সেগুলো উপভোগ করা উচিৎ।
– গুড, বলো কোথায় যাবে? আমি ভেবেই পাচ্ছিনা এই শীতে কোথায় যাবো। তুমি বলো।
~ চলুন সাজেক থেকে ঘুরে আসি। মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি।

আবিরতো ভীষণ অবাক। ওর মাথায় কেন এই বুদ্ধি এলো না। আবির সাথীকে জড়িয়ে ধরে অনেক খুশী হয়ে বলে,

– বাহ! সাথী, এই না হলে বউয়ের মতো বউ তুমি। আমার মাথায় সাজেকের কথা আসেই নি। খুব ভালো বলেছো আমরা সাজেকই যাবো।
~ একটা রিকোয়েস্ট করতে পারি?
– করো। একটা না হাজারটা করতে পারো। (হাসি দিয়ে)
~ মেজো ভাবির খুব ইচ্ছা একটু কোথাও ঘুরতে যাবে৷ কিন্তু ভাইয়াতো সময় করতেই পারে না। মেজো ভাইয়া আর ভাবিকে আমাদের সাথে নিয়ে নিলে কেমন হয়? ভাবি অনেক খুশী হবে।
– সাথী তুমি সত্যি অনেক ভালো। আমার মনের মতো একটা মেয়ে৷ আচ্ছা মেজো ভাইকেও নিব। চলো খাবার টেবিলে বিষয়টা সবাইকে জানাই।
~ আচ্ছা।
– কিন্তু তার আগে…
~ এই না না। ছাড়ুন কাজ আছে অনেক। দেরী হলে সবাই খারাপ ভাববে।
– হায়রে৷ দাঁড়াও সাজেক যেয়ে নি। খবর আছে তোমার৷
~ হিহি। হুম দেখবো নে।
– ওরে দুষ্ট। চলো।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।

https://www.facebook.com/groups/golpopoka/https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

এরপর খাবার টেবিলে সবাই বসে খাচ্ছে। আবির’রা তিন ভাই। বড় ভাই রায়হান, তার একটা ছেলেও আছে। বয়স ৫ বছর। ওর নাম ইমন। আর মেজো ভাই সালমান, তার বিয়ে হয়েছে ১ বছর হলো। কাজের চাপে এখনও সন্তান নেয় নি। আর বাকি রইলো আবির। সবার ছোট আর আদরের। আবিরের বাবা-মা খুব ফ্রেন্ডলি। আবির নাস্তা শেষ করে বলে,

– বাবা একটা কথা ছিল।
– হ্যাঁ বল।
– আমি আর সাথী একটু ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম।
– ও বুঝতে পারছি। আচ্ছা যা সমস্যা নেই।
– বাবা শুধু আমি আর সাথী না আরো দুজন যাবে।
– কারা?
– মেজো ভাইয়া আর ভাবি। মেজো ভাইয়া একটু রেস্টই পাচ্ছে না। তাকেও নিয়ে যাবো। সাথী এই আবদারটা করেছে ভাবির কথা ভেবে।

সাথীর ভাবি মানে নীলা সে সাথীর দিকে তাকিয়ে অসংখ্য ধন্যবাদ দিচ্ছে ইশারায়। কিন্তু তার বুদ্ধু স্বামী পাশ থেকে বলে উঠে,

– আরে না না তোরা যা। তোদের মাঝে আমাকে টেনে লাভ কি। তোরা যা।

নিমিষেই নীলা ভাবির মনটা খারাপ হয়ে যায়। মুখটা মলিন হয়ে যায়। এটা আবিরের বাবা-মার চোখ থেকে এড়ালো না। তাই বাবা বললেন,

– চুপ বেটা৷ অনেক কাজ করছিস। এবার বউমাকে একটু সময় দে।

নীলা আর কোন উপায় না পেয়ে মনে পাথর বেঁধে বলে,

~ না বাবা সমস্যা নেই। আমিও চলে গেলে বড় ভাবির কষ্ট বেশি হবে। তার চেয়ে ওরাই যাক।

আবিরের মা বলে উঠে,

~ হয়েছে আর বলতে হবে না। এইযে বড় বউ আমরা দুজন মিলে সংসারটা কদিন সামলাতে পারবো না?

~ আলবাত পারবো। নীলা তুমিও যাও৷ তোমার কষ্টটা বুঝি আমি। সালমান যাও ওকে নিয়ে ঘুরে আসো কদিন।

রায়হান ও বলে উঠে,

– হ্যাঁ তুইও যা আবিরদের সাথে ঘুরে আয়। এদিকে আমি আর বাবা তো আছি। সমস্যা নেই।

সালমান হাসি দিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,

– আচ্ছা যাবো। বাট কই যাবি তাই তো বললি না।

– ভাইয়া সাজেক।

সবাই খুশী হয়ে যায়। রায়হান বলে,

– বাহ! অসম্ভব সুন্দর জায়গা। রুনা মনে আছে সাজেকের টুরের কথা?

রুনা ভাবি লজ্জা পেয়ে যায়। আবিরের মা হাসি দিয়ে বলে উঠে,

~ তুই আবার ওকে প্রশ্ন করিস বোকা ছেলে। শোন আমার বউমাদের দায়িত্ব কিন্তু তোদের। খেয়াল রাখিস।

আবির আর সালমান বলে উঠে,

– জ্বী মা অবশ্যই।

রায়হান বলে,

– তোরা তাহলে পরশু রাতে রওনা দিস। আমি অফিসে গিয়ে ওখানের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

– ওকে ভাইয়া। আর আমি যাওয়ার ব্যবস্থা করছি।(আবির)

– তাহলে আমি কি করবো? (সালমান)

– তুই আপতত নীলাকে সময় দিলেই চলবে। হাহা। (মজা করে রায়হান বলল)

নীলা আর সালমান লজ্জা পায়। বাকিরা হাসাহাসি করে। সাথী আজ অনেক খুশী। ওর মনের মধ্যেও ইচ্ছা ছিল আবিরের সাথে একটু দূরে কোথাও ঘুরতে যাবে৷ যেখানে প্রকৃতির সব সৌন্দর্য্য বিদ্যমান। সাথীর খোলা আকাশ, মেঘ, শীতের কনকনে ঠান্ডা আর আবিরের স্পর্শ খুব পছন্দ। আর এসব একসাথে পাওয়ার জন্য সাজেক ভ্যালি বেস্ট প্লেস।

আবির আর সাথীর জীবনে এটা প্রথম ভ্রমণ কাহিনী হতে যাচ্ছে। স্মৃতির পাতায় এই ভ্রমণ কাহিনী থাকবে চিরকাল। সাথী জামা কাপড় দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে। ও এতোটাই বিভোর যে আবির চুপিচুপি এসে ওকে যে দেখছে তা ও খেয়ালই করে নি। সাথীর এই মিটমিট হাসিটা আবিরের খুব পছন্দ। চুল গুলো খুলে রেখেছে। নিশ্চয়ই ওর জন্য। আবির তা জানে। আবির আস্তে আস্তে সাথীর পিছনে গিয়ে ওকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে। ও ভয় পেয়ে যায় আবিরকে দেখে কিন্তু পরক্ষণেই ওর মায়াবী মুখখানা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। সাথী লজ্জা পেলে একদম টমেটো মতো হয়ে যায়। আবির এই টমেটোটাকে দেখেই সেদিন প্রথম ওর প্রেমে পড়ে৷ কি লজ্জায়ই না পাচ্ছিলো মেয়েটা। আবির প্রথম দেখেই ওর উপর মায়া হয়ে যায়। অন্যদিকে সাথী যখন আবিরকে দেখে তখন ও খুব লজ্জা পায়। আবির দেখতে খুব কিউট টাইপ ছেলে। গোলগাল মুখ, একটু মটুসটু টাইপ আর কি। গালে চাপ দাঁড়ি, ঠোঁটটা অনেক গোলাপি ওর। সাথী কখনো ভাবেনি ছেলেদেরও ঠোঁট গোলাপি হয়। এই গোলাপি ঠোঁটটা রোজ ওকে স্পর্শ করে। আর ও মুগ্ধ হয়ে তা গ্রহণ করে। চিন্তার জগৎ থেকে সাথী বের হয় আবিরের প্রশ্নে। আবির আস্তে করে বলে,

– কি খুশী তো? এবার আর ইমন জ্বালাবে না।
~ আরে ও কি জ্বালায় নাকি। ও তো আসে আমার কাছে আমাকে ভালো লাগে তাই। (লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে)
– ওও। তো আমিও তো আসি আমারও যে ভালো লাগে তাই।
~ ইসস! আপনি অনেক দুষ্ট। লজ্জা লাগে তো।
– টমেটো খাবো। (মজা করে)
~ নিচে ভাবিকে গিয়ে বলেন দিয়ে দিবে। (খুব লজ্জা পেয়ে)
– তাই?
~ হুম।
– ওকে যাচ্ছি।
~ আরে আরে কই জান?
– কেন টমেটো খেতে।
~ মজা নিচ্ছেন? এটা কিন্তু ঠিক না।

আবির আবার সাথীকে জড়িয়ে ধরে বলে,

– তাহলে এই টমেটোটাকে…
~ যাহ দুষ্ট। চুপ। আচ্ছা আপনি কি কি নিবেন বলুন না। ব্যাগটা গুছিয়ে ফেলি।
– শপিং এ যাবো চলো। কিছু শীতের মোটা জামা কাপড় কিনতে হবে।
~ ওকে। ভাইয়া ভাবিকেও সাথে নিয়ে নি।

আবির হাসি দিয়ে বলে,

– আচ্ছা।

এরপর ওরা শপিং করে সব কিছু গুছিয়ে রেডি করে ফেলে। আবির, সাথী আর সালমান, নীলা খুব খুশী এই ভ্রমণের জন্য। খুব এক্সাইটেড ওরা।

এরপর পরশু দিন,

এখন রাত ১১ টা বাজে। ওরা সবাই গাবতলি বাস টার্মিনালে। এখান থেকে শ্যামলী বাসে করে ওরা খাগড়াছড়ি যাবে। আবির এসি বাস ঠিক করেছে। কারণ শীতের সময় এসি বাসে না গেলে রাতে ঠান্ডায় অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে। আবির দুই সিটের মোট চারটি সিট বুক করেছে। আবির আর সাথী একসাথে। আর ওদের পিছনেই ভাইয়া ভাবি। ১১.৩০ এর দিকে ঢাকা থেকে বাস ছেড়ে দিবে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্য। আবিরদের ওদের বড় ভাই রায়হান গাড়িতে করে গাবতলি নিয়ে এসেছে। তাই আল্লাহর নাম নিয়ে তাকে বিদায় দিয়ে ওদের বাস ছেড়ে দেয় খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। বাস তার আপন গতিতে ছুটছে। আর ওরা স্বপ্ন দেখছে সাজেকের।

চলবে..?

তোমায় নিয়ে ভ্রমণ পর্বঃ ০১
লেখকঃ আবির খান

সবার ভালো সাড়া চাই। কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।

https://www.facebook.com/groups/golpopoka/https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে