#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_৮
#সারিকা_হোসাইন
―আমাদের এতোই পর ভাবলেন আপা?
আপনার দুঃসময়ে আমাদের সাথে নিলেন না?,কষ্ট গুলো ভাগাভাগি করে নিলে ব্যাথা কম অনুভূত হয় এটা কেনো বুঝলেন না আপা?
তনুজা তারিন কে হাত জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে আরো নানান অভিযোগ জানালেন
জানেন আপা আপনার ছেলেটা একটা পাষান!
―চার বছর ধরে এখানে আছে অথচ,কোনোদিন ও পরিচয় দেয়নি সে নাফিজের ভাগ্নে।
আর আপনি?
―আপনি কিভাবে আপনার ভাইকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করালেন যাতে কোনোদিনও আপনি না বলা পর্যন্ত আপনাদের পরিচয় আমাদের না জানায়?
পৃথিবীতে কেউ অশুভ, অপয়া,অভিশপ্ত নয় আপা।বড় কথা আমরা সবাই মানুষ।আল্লাহ মানুষের ভাগ্য তার জন্মের ও বহু আগে লিখে রেখেছেন।
―আপনি কারো সংস্পর্শে গেলেই তার অকল্যাণ হবে এসব ভুল ধারনা আপা।
আপনার কোনো কথাই আর শুনবো না আমি।
―,আপনি আমার সাথে চলুন।
বলেই তারিনের ব্যাগপত্র গোছাতে উদ্দত হলো তনুজা।
কাঁপা কাঁপা হাতে মিসেস তারিন তনুজার হাত আকড়ে ধরে,তনুজার চোখের অশ্রু মুছিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন―
নাফিজ কখনো ভুল করতে পারেনা।
―আমার ভাইকে আমি চিনি,আমি জানতাম ও সমঝদার কাউকেই জীবন সঙ্গী করবে যে ওকে দেখেই ওর মন পড়ে ফেলবে।আজ অনেক আত্ম তৃপ্তি পেলাম তোমাকে দেখে তনুজা।
―নাফিজের মুখে তোমার অনেক প্রশংসা শুনেছি।তোমাকে দেখার লোভ আমার বহু আগে থেকেই।আমার মনের ভ্রান্ত ধারণার জন্য আর সাহস পাইনি।
―মাফ করবে আমাকে।
আমি অবশ্যই যাবো তোমার সাথে তনুজা,আর মুহিত কে বকে দেবো কেনো ও পরিচয় গোপন করেছে তার জন্য।
দরজায় দাঁড়িয়ে নাফিজ মাহমুদ সব কিছু শুনছিলেন।নিজের বোনকে কতো বছর পর এমন সাবলীল কথা বলতে শুনলেন ?
হিসেব করে গুনে গুনে বের করলেন নাফিজ মাহমুদ।
চোখের অশ্রু মুছে তারিনের বেডের কাছে এগিয়ে গেলেন।
―আপা তুই তেতত্রিশ বছর তিন মাস ছয়দিন পর আবার আমার আগের আপার মতো করে কথা বললি।আমি খুশিতে কথা বলতে পারছি না আপা।
আমার এতো খুশি কেনো লাগছে আপা?
বলেই হাটু মুড়ে তারিনের বেডের পাশে বসে অঝোরে কাঁদলেন নাফিজ মাহমুদ।
মুহিতের চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো।তার মা আবার আগের মতো কথা বলছে।মা আবার হাঁটবে, চলবে,মুহিতের কান টানবে।
―।সুখ কি সত্যিই আবার ধরা দিতে চাচ্ছে?
এই আবেগ ঘন মুহূর্তে স্বর্গ একটু বেশি ই আবেগী হয়ে গেলো।ভুলে গেলো সে একজন আর্মি ডক্টর।
ভে ভে করে সকলের সাথে তাল মিলিয়ে কেঁদে উঠলো।
―তুমি খুব খারাপ ফুপি! খুব খারাপ!
তুমি তোমার সাথে সাথে সবাইকেই অনেক কষ্ট দিয়েছো,তোমাকে শাস্তি পেতে হবে ফুপি।
মিসেস তারিন স্বর্গের গালে,মুখে,কপালে চুমু খেয়ে স্মিত হেসে ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে বলে উঠলো―
কি শাস্তি দিবে তুমি আমাকে আম্মা?যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নেবো।
সুখ কেও খবর দেয়া হয়েছিলো।সে মাত্রই এসে শাস্তির কথাটাই শুনলো প্রথমে।অমনি ভরা কেবিনে ফুরফুরে মেজাজে বলে উঠলো
―তোমার ছেলের সাথে ওকে বিয়ে দিয়ে দাও ফুপি,তোমার আর তোমার ছেলের যাবজ্জীবন শাস্তি ভোগ করা হয়ে যাবে।
তনুজা ছেলের দিকে চোখ গরম করে তাকালেন।
―ফাজিল কোথাকার সব জায়গায় একই আচরণ।কোথায় কি বলতে হবে শিখেনি।
মুহিত আর স্বর্গ লজ্জায় কোথায় পালালে কেউ খুঁজে পাবে না আর কোনোদিন মনে মনে যেই জায়গা খুঁজছে আর সুখের চৌদ্দ গুষ্টির শ্রাদ্ধ করে ফেলছে।
এমন সময় কেবিনে একজন নার্স আর প্রফেসর সারোয়ার জাহান প্রবেশ করলেন।
―অনেক দিন পর আপনাদের সবাইকে খুশি দেখে ভালো লাগছে নাফিজ সাহেব।
আপনারা সবাই চেষ্টা করলেই উনার জীবন আগের মতো সুন্দর স্বাভাবিক হবে।
কি কি করতে হবে সব আমি প্রেসক্রিপশন এ লিখে দিয়েছি।আপনাদের চেষ্টার যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে আর দুই মাস পর পর আমার ফলোআপ এ নিয়ে আসবেন।
আজকে উনাকে আপনারা নিয়ে যেতে পারবেন।
―আর মেজর মুহিত আপনার মায়ের সঙ্গে সব সময় থাকবে এমন একজন মানুষ লাগবে।যার সাথে সে কমফোর্টলি সব শেয়ার করতে পারবে।হাসবে,কাঁদবে ,সারাদিন কথা বলবে এভরিথিং।
―আশা করি বুঝতে পেরেছেন আমি কার কথা বলছি?
বলে চোখ টিপলেন মেজর মুহিতের উদ্দেশ্য এই প্রবীণ প্রফেসর।
দেয়ালে টানানো বৃহতকার ঘড়ির ঘন্টা,মিনিট ,সেকেন্ড এর কাটা বারোটার ঘরে পৌঁছানো মাত্র ঢং ঢং করে বিকট আওয়াজ তুললো।নিস্তব্ধ নিশীতে শব্দটা বড়ই ভয়ংকর শোনাচ্ছে।
জড় বস্তু হলেও প্রযুক্তির ছোয়ায় তার মধ্যে কৃত্তিম প্রাণের সঞ্চালন হয়েছে।
সৃষ্টি কর্তা মানুষকে জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েছে। সেই বুদ্ধি কেউ ভালো কাজে ব্যাবহার করছে কেউ খারাপ কাজে।
কিছু মানুষ চেষ্টা করে পৃথিবীতে কিভাবে কিভাবে উন্নয়ন মূলক কাজ করা যাবে?কিছু মানুষের প্রচেষ্টা আবার ভিন্ন।তাদের কাজ ই হচ্ছে ভালোকাজ ভেস্তে দিয়ে খারাপ কিছু করা।
তেমন ধাঁচের মানুষের মধ্যে রয়েছে আশরাফ চৌধুরী।
ইজি চেয়ারে বসে বসে নিজের জীবনের ছক আঁকছেন ষাট বছর বয়সের এই প্রবীণ।
তার নিজের অনুধাবন তাকে বলছে সে একজন নিকৃষ্ট খারাপ মানুষ,অথচ তার বাহিরের সত্তা তাকে এসব খারাপ কাজ থেকে ফিরতে বাধা দেয়।সবই টাকার খেলা।এই নশ্বর দুনিয়াতে টাকা না থাকলে সম্মান,ক্ষমতা,প্রাচুর্য কোথা থেকে আসবে?
এই জন্যই তো নিজের একমাত্র সন্তানকে ও গড়েছেন নিজের আদলে।কেউ তো আর চিরস্থায়ী নয় এই ভুবনে।সে মারা গেলে তার অস্তিত্ব কে টিকিয়ে রাখবে?ওই পারে কে কোন হালে রয়েছে সেই খবর কেউ রাখবে না।তাই আমোদ, ফুর্তি,সুখ ভোগ ,অপকর্ম এই দুনিয়াতে একটু করলে ক্ষতি কি?
কেউ তো আর জানছে না আমি এসব করে বেড়াচ্ছি।দিনে সমাজসেবা চলছে পুরোদমে আর রাতে?
বলেই খেক খেক করে হেসে উঠল আশরাফ চৌধুরী।
―দিনে আমি বিশিষ্ট সমাজ সেবক,গরিবের বন্ধু, নির্লোভ,সাধারণ জীবন যাপন কারী আশরাফ চৌধুরী।আর রাতে?আবার বিদঘুটে হাসি হেসে ওয়াইনের গ্লাস তিন আঙ্গুলএর সহিত ধরে চলে গেলেন আয়নার সামনে।।
ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে নকল চুল আর গোঁফ লাগিয়ে হো হো করে হেসে উঠলেন,,
―তোমাকে কেউ কোনো দিন খুঁজে বের করতে পারবে না আহমেদ খান কেউ না।
বলেই রাগে ওয়াইনের গ্লাস ফ্লোরে ছুড়ে মারলেন।
টাইলসের সংস্পর্শে এসে খান খান হয়ে চুরমার হয়ে গেলো ছোট গ্লাসটি।
রাগ যেনো তার সপ্তম আকাশ ছুলো
দাঁতের সাথে দাঁত পিষে চোখ বড় বড় করে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে উঠলো―
―আমার পিছনে লাগার ফল হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে ছেড়ে দেবো মেজর,যেমন দিয়েছিলাম ওই ম্যাজিস্ট্রেট কে।
পুরো ফ্যামিলি শেষ করে দিয়েছি এক তুড়িতে।তুমি তো সেদিনের ছোকরা।
আজ স্বর্গের অফ ডে।ডিউটি আর বাসা ডিউটি আর বাসা করতে করতে শরীর জং ধরে গেছে যেনো।এজন্য সে ঠিক করেছে আজকে বাইরে ঘুরতে যাবে।
ঘুরে বেড়ানোর জন্য হোক বা মন ভালো করার জন্য হোক স্বর্গ মনে করে শপিংয়ের চাইতে ভালো উপায় আর কিছুই হতে পারে না।
তনুজা কে নিয়ে আগে সব জায়গায় যেতো স্বর্গ,ফুপি আছে বলে মা একটু ব্যাস্ত।তাই নিজেই রেডি হতে হতে পিউ কে কল করলো।
পিউ জানিয়েছে ক্যাপ্টেন সৌম্যের সাথে আজকে তার ডেট আছে সে যেতে পারবে না।অগত্যা মন খারাপ না করে নিজেই চলে গেলো শপিং করতে।
বাইরে বের হয়ে অদ্ভুত এক শখ জাগলো তার মনে।সে আজ কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্র্যান্ডেড দোকান থেকে কিছু কিনবে না।সাধারণ মানুষের মতো নিউমার্কেট থেকে দামাদামি করে কেনাকাটা করবে।যেহেতু অনেক দিন পর সে বাইরে এসেছে,তাই সে তার নিজের মতো করে সময় কাটাবে।
যেই ভাবনা সেই কাজ,গাড়ি না নিয়ে সে চলে গেলো রাস্তায়।টেক্সি ক্যাব নিয়ে যাত্রা শুরু করলো
গন্তব্য নিউ মার্কেট।
বোকা স্বর্গ বুঝতেই পারলো না সে কতো বড় বোকামি করে ফেললো।এক জোড়া বাজ পাখির মতো তীক্ষ্ণ চোখ তাকে অনুসরণ করে চললো মুখে ক্রুর হাসি নিয়ে।
গাড়ি থেকে নেমে তনুজা কে স্বর্গ কল করে জানায় সে নিউমার্কেট এসেছে,সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরবে।মেয়ের উপর ভরসা আছে তনুজার,তাই সে অতোটা ঘটালো না।যেই মেয়ে শ্যুটিং, সেলফ প্রটেকটিং জানে তাকে নিয়ে আবার দুশ্চিন্তা কিসের,?
আস্তে আস্তে ভিড়ের মাঝে ঢুকতে থাকলো স্বর্গ,পিছনের ব্যাক্তি আর দু কদম এগুলোই ধরে ফেলতে পারবে স্বর্গকে।কিন্তু না এটা উপযুক্ত সময় নয়।
আরেকটু ভিড় প্রয়োজন।
যেই ভাবা সেই কাজ,রুমালে ক্লরোফার্ম স্প্রে করে স্বর্গ যেই ভিড়ের ভেতর ঢুকে গেলো অমনি নাকে রুমাল চেপে ধরলো।
ছিমছাম গড়নের হালকা পাতলা স্বর্গ নেতিয়ে পড়লো আগন্তুকের বাহুতে।কায়দা করে বুকে জড়িয়ে সন্তপর্নে ভিড় থেকে বেরিয়ে নিজের ব্র্যান্ডেড মার্সিডিজ গাড়িতে তুলে ফেললো।
―বিজয় এবার তার।
রেস্টুরেন্টে বসে আছে পিউ আর সৌম্য।এই রেস্টুরেন্টের পুরো রুফটপ রিজার্ভ করেছে সৌম্য।দুজন ছেলে মেয়ে বসে থাকবে কেউ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে দেখবে এটা সৌম্যের পছন্দ নয়।আর সে পিউ কে কোনো প্রকার অস্বস্তিতে ফেলতে চায় না।
―মৃদু শব্দে সফট মিউজিক বাজছে সাথে রয়েছে রঙবেরঙের লাইটিং ব্যাবস্থা।মৃদুমন্দ বাতাস,সব মিলিয়ে রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি।
প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রে যে শুধু লাভ ইউ, বা আপনাকে আমি পছন্দ করি ভালোবাসি এসব বললেই ভালোবাসা হয় সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে এই জুটি।
দেখা সাক্ষাতে কখন যে দুজন দুজনার জন্য আকুল করা টান অনুভব করেছে কেউ জানেনা।শুধু জানে তারা ভালোবেসেছে।
বুক পকেটে হাত দিয়ে সৌম্য একটি বক্স বের করে আনে,সেটা পিউ এর হাতে দিয়ে বলে_
―আমার পক্ষ থেকে অতি ছোট একটা গিফট আপনার জন্য পিউনাজ।।
পিউ আবেশে লজ্জায় হাত বাড়িয়ে সেই বক্স গ্রহণ করে।
―খুলে দেখুন পিউনাজ কি আছে এতে।
―পিউ পাগল করা হাসি উপহার দিয়ে বক্স খুলে একটি ডায়মন্ড এর পেনডেন্ট দেখতে পায়।খুশিতে ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে বলে উঠে―
―অনেক সুন্দর এটা, পছন্দ হয়েছে খুব।
পিউয়ের খুশি মাখা মুখ সৌম্যের বুকে হাতুড়ি পেটায়।কে বলেছে এই মেয়েকে এতো সুন্দর হতে?এতো দিল মে চাক্কু লাগানো হাসি।
সৌম্য তুই নির্ঘাত মরে যাবি দেখিস।
পিউ সৌম্যের মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে সৌম্যের হুশ ফিরায়।
―কি দেখছেন এমন করে?
―আপনাকে পিউনাজ !
সৌম্যের সাবলীল উত্তর।
পিউয়ের দিকে তাকিয়ে সৌম্য অনুরোধের সুরে বলে ওঠে―
―আমি কি পেনডেন্ট টা আপনার গলায় পরিয়ে দিতে পারি পিউনাজ?
―পিউ চোখ বন্ধ করে সৌম্যের হাতে বক্স টা তুলে দেয়।
আজকের সন্ধ্যা টা সৌম্যের কাছে মোহনীয় লাগছে।প্রেম ভালোবাসা মনে হয় এমনি।
সবকিছু নতুন আর মোহনীয় লাগে।
সৌম্য পিউএর হাত থেকে পেনডেন্ট টা নিয়ে পিউ এর পিঠের ঝলমলে চুল গুলো সরায়।পিউএর চুলের মাতাল করা ঘ্রানে সৌম্যের বুকে উত্তাল ঢেউয়ের প্রবাহ হয়।
সৌম্যের ছোয়ায় পিউ কেঁপে উঠে।এ কেমন শিহরণ জাগানো অনুভূতি?
সৌম্যের মতো ড্যাসিং, স্মার্ট,লম্বা,মোহনীয় পুরুষ পেয়ে পিউ এর কাছে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।এই সুদর্শন পুরুষটি একান্তই তাঁর।
সৌম্যের উষ্ণ নিঃশাস আছড়ে পড়ছে পিউ এর পিঠে।পিউ আর সহ্য করতে পারলো না।সামনে ফিরে সৌম্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
ঘড়িতে সময় রাত আটটা বেজে চল্লিশ মিনিট।
এতোক্ষণ তনুজা স্বাভাবিক থাকলেও এখন আর থাকতে পারছে না। না মেয়েটা বাসায় ফিরছে না ফোনে পাওয়া যাচ্ছে
এর মধ্যে হঠাৎ কলিং বেল এর আওয়াজ হলো।তনুজা দৌড়ে দরজা খুলতে গেলেন।ভেবেছেন স্বর্গ এসেছে কিন্তু দরজা খুলে মুহিত কে দেখতে পেলেন।
ভদ্রতাসূচক হেসে ভেতরে প্রবেশ করতে বললেন মুহিত কে।
মামীর এমন রূপ দেখে বুদ্ধিমান মুহিত বুঝে ফেললো কিছু হয়েছে।
তনুজা ভাবছে নাফিজ মাহমুদ বাসায় এলে কি জবাব দেবেন তিনি?
চিন্তায় তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো।
মুহিত বিনীত সুরে জানতে চাইলো
―কিছু হয়েছে মামী?
তনুজা বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলো
মুহিত ঘাবড়ে গিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে মামী খুলে বলুন!
স্বর্গ―
কী হয়েছে স্বর্গের?
―স্বর্গ বাসা থেকে শপিং এ যাবার জন্য সেই চারটার সময় বের হয়েছে এখন নটা বাজতে চললো মেয়েটা ফিরছে না ফোনেও পাওয়া যাচ্ছেনা।
কথাটা শ্রবণ ইন্দ্রিয় তে পৌঁছানো মাত্র মুহিতের পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেলো।
তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো হয়তো এখনই এসে পড়বে।
―না বাবা ও বলেছে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে ফিরবে।আর ও সন্ধ্যার পর কখনো বাইরে থাকেনা।
উদ্বিগ্নের সহিত মুহিত জানতে চাইলো কোথায় গিয়েছে শপিং এ?
তনুজা কেঁদে উত্তর করলো ―নিউমার্কেট।
আহিয়ানের কথা মনে পড়তেই বুকটা ধক করে উঠলো মুহিতের।
―আমি দেখছি চিন্তা করবেন না মামী বলে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।
জিপে উঠে বসে সৌম্যকে কল করলো।
সৌম্যের কাছে ব্যাক্তিগত বিষয় এক পাশে ,ডিউটি আরেক পাশে।
কেবলই দুজনে ডিনার ডিগ করতে স্টার্ট করেছে।
হঠাৎই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।
তড়িৎ গতি তে তা রিসিভ করে বলে উঠে
―জি স্যার।
ওপাশ থেকে কি বললো তা পিউ শুনতে পেলো না,সৌম্য আবার বলে উঠলো জি স্যার।
পিউ দ্রুত খাবার শেষ করুন আমাদের যেতে হবে।
পিউ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সৌম্য বলে উঠলো স্বর্গ ম্যাম কে পাওয়া যাচ্ছে না।আমি মেজর এর সাথে বের হবো।
―আপনার বাসার ঠিকানা বলুন দ্রুত।
পিউয়ের বাসা রেস্টুরেন্ট থেকে বেশি দূরে নয়,সৌম্য যাবার পথেই ওকে নামিয়ে দিতে পারবে।দেরি না করে দুজনেই দ্রুত বিল মিটিয়ে বেরিয়ে যায়।
পিউকে নামিয়ে দিয়ে সৌম্য মুহিত কে কল করে,
―স্যার আমি অপেক্ষা করছি আপনি আসুন।
―ক্যাপ্টেন একটা নম্বর দিচ্ছি ট্র্যাক করার চেষ্টা করবে কোথায় আছে?
এসব কূটকাচালি বিষয়ে সৌম্য খুব এক্সপার্ট,কিন্তু ডিপার্টমেন্ট সৌম্যের এই গুণ জানেনা।জানলে নির্ঘাত এই ভাইপার স্কোয়ার্ডন থেকে সাইবার সিকিউরিটি তে ঢুকিয়ে দেবে!
নাফিজ মাহমুদ ডিপার্টমেন্ট এ জানিয়ে দিলেন কেউ তার মেয়েকে অপহরণ করেছে।ডিপার্টমেন্ট থেকে পুলিশ ইউনিট মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লো সারা সারা শহর।
মুহিত মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা যদি আহিয়ানই হয় সে ডিরেক্ট শ্যুট করে দিবে।কিছুতেই মুহিতের বুনা জাল থেকে বের হতে দেবেনা আহিয়ান কে এবার।
#চলবে।