তোমার জন্য সিন্ধুর নীল পর্ব-০৭

0
297

#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_৭
#সারিকা_হোসাইন

কিছুক্ষন আগেই ঝড়ের তান্ডব শেষ হয়েছে।চারপাশে ঝিঝি পোকা ঝিঝি শব্দের রব তুলেছে।পরিবেশ শান্ত স্নিগ্ধ।শুনশান চারপাশ কারো কোনো আওয়াজ নেই।ঘুমিয়ে গেছে হয়তো পাখপাখালী ও।শুধু ঘুম নেই মুহিতের চোখে।
জীবনের হিসেব কিছুতেই যেনো মিলছে না।কি থেকে কি হয়ে গেলো নিমিষেই!

চোখ বন্ধ করলেই মুকিতের বড় বড় চোখের দুস্টু দুস্টু চাহনি ,ভুবন ভোলানো হাসি,ছোট ছোট হাত পা,ভাইয়া ভাইয়া করে ডেকে অস্থির করে ফেলা সব এসে হানা দেয় আখি পল্লবে।

সেদিন মুহিত কুমিল্লায় ফিরে যেতে চায়নি।

আদনান সাহেব কে দেখেই মুহিত বুঝে গেছিলো কিছু একটা হয়েছে,এজন্য মুহিত আংটি বদল শেষ হতেই আদনান ওয়াসিফ এর কাছে যায়―

―পাপা কোনো কিছু না লুকিয়ে সত্যি করে বলো কি হয়েছে?তোমাকে এমন বিধ্বস্ত অসহায় কেনো লাগছে?
আদনান সাহেব মুহিতের পানে দৃষ্টি ফেলে বললেন
―আমার রুমে এসো মুহিত কথা আছে।

মুহিত আদনান সাহেব কে অনুসরণ করে দূতলার দক্ষিণ পাশের রুমটাতে চলে যায়।সেই রুমের বেলকনি সাইজে বিশাল বড়,বেলকনির এক কোনে চেয়ার টেবিল পাতানো।
মিসেস তারিন গাছ ,ফুল প্রিয় মানুষ।বিভিন্ন ইনডোর প্লান্ট আর ফুলের গাছ দিয়ে বেলকনি সজ্জিত করেছেন ।পাশেই একটা ইজি চেয়ার পাতা।
আদনান ওয়াসিফ এলোমেলো পায়ে হেটে ইজি চেয়ারে বসে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলেন।
বড় করে শ্বাস নিয়ে মুহিতের উদ্দেশ্যে বলেন-

―শুনো মুহিত,সবসময় মাথায় রাখবে তুমি সৎ,সত্যবাদী, আদর্শ একজন নির্বাহী অফিসার এর সন্তান।টাকার লোভে বা ক্ষমতার লোভে পরে কখনো কোথাও দালালি করতে যাবে না।

―এসব কেনো বলছো পাপা?

―বলছি অবশ্যই এর পিছনে কারন আছে।
তোমাকে এই সংসারের হাল ধরতে হবে মুহিত।আমার অবর্তমানে তুমি হবে মুকিত,নামিরা আর তারিনের গার্ডিয়ান।বাবা হিসেবে তোমাকে অনুরোধ নয় ওর্ডার দিচ্ছি আমি।

আমার ছেলে,মেয়ে আর তারিন কে কখনো কোনো দুঃখ দিতে পারবে না তুমি।তোমাকে হতে হবে শক্ত,ধৈর্যশীল।মনোবল হারালে চলবে না।

কি বলেছি তুমি কি বুঝতে পেরেছো?
―আদনান সাহেব চোখ খুলে হেলান ছেড়ে উঠে বসলেন।মুহিতের পানে দৃষ্টি দিগে আবার বলতে লাগলেন-

―আমার সমস্ত দায়িত্ব আমি তোমার উপর অর্পণ করলাম,কখনো দায়িত্বের অমর্যাদা করবেনা।
নামিরার বিয়ে শেষ হতেই কুমিল্লায় ফিরে যাবে তুমি,এখানে যাই হয়ে যাকনা কেনো এই বাসায় আসবেনা।

নামিরা আর সোহাগের জন্য তোমার নাফিজ মামা সকল ব্যাবস্থা করে রেখেছেন।আমি চাই তুমি শুধু আমার না হওয়া দায়িত্ব গুলো পালন করবে বাধ্য অফিসার এর মতো।আমাকে কোনো প্রকার প্রশ্ন করবে না।

মুহিত আদনান সাহেবের এমন কাঠিন্যতা দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলো সেদিন।
―যেই বাবা কখনো চোখ গরম করে পর্যন্ত তাকায়নি সেই বাবা আজ এতো কঠিন স্বরে কথা বলছে?

আদনান সাহেব আবারো বলতে শুরু করলেন―
তোমার মা নরম মনের মানুষ,এমনিতেই তার মন দুঃখ কষ্টে ভরপুর।কোনো আঘাত সহ্য করতে পারেনা।কখনো তাকে আঘাত দিবেনা।আমি থাকি বা না থাকি তাকে ছোট বাচ্চার মতো সামলে রাখবে।
―পরশু নামিরার বিয়ে,বিয়ে শেষ হওয়া মাত্রই ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে যাবে।
অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পরো।
বলেই চেয়ার থেকে উঠে শয়ন কক্ষে চলে গেলেন আদনান সাহেব।

মুহিত দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে পারছে না।একজন ম্যাজিস্ট্রেট কে টেক্কা দিতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
কোনো ঝামেলা হয়েছে এটা নিশ্চিত।

কিন্তু ঝামেলা টা কি এমন যে, কেউ কারো জান নিয়ে নিবে?

সেদিন রাতে মুহিতের ঘুম এলো না।খুব ভোরে বিছানা ছাড়লো মুহিত।

নামিরার বিয়ের তেমন কোনো আয়োজন ও নেই।মুহিত সারাদিন ভেবে চিন্তেও কোনো সুরাহা করতে পারলো না তার বাবার এসব বলার পিছনের ঘটনার।
নামিরার বিয়ে শেষ হতেই মুহিত চলে যেতে ব্যাগ পত্র গোছালো।তারিন ,মুকিত,নামিরা জোর জবরদস্তি করেও মুহিতের মুখ থেকে কিছু বের করতে পারলো না।

তারিন নামিরা কান্না করে দিলো একপ্রকার।
তারিন বলে উঠলো―

―তুই না বললি পনেরো দিনের ছুটিতে এসেছিস তাহলে এখনই কেনো চলে যাচ্ছিস আরো তো বারো দিন বাকী।

নামিরা নাক টেনে টেনে বললো―

সোহাগ কে মানতে পারছিস না দুলাভাই হিসেবে?

মুকিত তো মুহিতের ব্যাগ ই ছাড়ছে না।মুহিত যদি ছুটি থাকতেই ফিরে যায় তাহলে মুকিতের লা*শে*র উপর দিয়ে যেতে হবে।

একদিকে বাবার আদেশ অন্যদিকে পরিবারের আকুতি।সব মিলিয়ে মুহিত মহা ফ্যাসাদে পরলো যেনো।
অবশেষে কাজের বাহানা,মিশনের বাহানা দিয়ে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কুমিল্লায় ফিরে আসে মুহিত।

যেদিন বাবা ভাই কে হারালো সেদিন মুহিত একদম কাঁদেনি।কেনো জানি কান্না আসেনি।দুর্বল মনের মুহিত এক রাত্রের ব্যাবধানে পাষান এ পরিণত হলো।

প্রানপ্রিয় ভাইয়ের শোক হৃদয়ে পাথরের স্তুপ বসালো।হায়রে অভাগী মা! জীবন তোকে কোনো শান্তি ই দিলো না।

এতোদিন বাবা হারানোর শোক ,মিথ্যে অপবাদ নিয়ে কাটিয়েছিস আর এখন সাথে যুক্ত হলো ভালোবাসার স্বামী আর প্রানপ্রিয় পুত্র হারানোর শোক!

মুহিতের বাবা আর মুকিতের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিমিষেই বদলে গেলো।পুলিশ মিথ্যে সাক্ষী দিলো।রাতের আধারে কে বা কারা মুহিতদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলো।
সংবাদ পত্রে নিউজ হলো সৎ ম্যাজিস্ট্রেট আদনান ওয়াসিফ পরিবার সমেত আগুনে পুড়ে মা*রা গিয়েছেন।

মুহিত তখনো মিডিয়ার সামনে এসে হু হা করলো না।
মুহিত ততক্ষনে বুঝে গিয়েছিলো প্রতিপক্ষ প্রশাসনের বাম হাত।এদের কে ধরতে হলে আত্নগোপন করাই শ্রেয়।
এখনই সামনে আসলে তাকেও শেষ করে দিতে কার্পণ্য করবে না।

কিন্তু মুহিত তা কখনো হতেই দিবেনা।তার সুখের পরিবারকে যারা এক নিমিষেই ছারখার করেছে,একদিন অবশ্যই মুহিত তার চূড়ান্ত হিসেব কষবে।

ওপাশের কেউ জানলোই না,নির্বাহী অফিসার এখানে একজন বারুদ রেখে গিয়েছে যা সময় সুযোগ বুঝে আপন শক্তিতে জ্বলে উঠবে এবং তাদের ও জ্বালাবে।

রাতের আধারে পুড়ে যাওয়া নিজের ভবনে এসেছিলো মুহিত,আদনান ওয়াসিফ এর নিজস্ব লকার ছিলো, সেটার লক মুহিত জানতো।
টর্চ জেলে কাঙ্খিত লকারের নিকট এসে কোড প্রেস করতেই লকার খুলে গেলো।
বেরিয়ে এলো বাদামি মলাটের ডায়েরি,একটা পেনড্রাইভ, কিছু স্থির চিত্র।
সোনার হরিণ পাওয়ার মতো চকচক করে উঠলো মুহিতের চোখ।

একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট এর দৌড় আর কতোই বা?
এখনই প্রতিপক্ষ কে জব্দ করা মোক্ষম সময় নয়।সুযোগ বুঝে চাল ফেলতে হবে।

অধ্যবসায় আর কঠিন পরিশ্রমে নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জেরে খুব দ্রুত লেফটেন্যান্ট থেকে ক্যাপ্টেন।ক্যাপ্টেন থেকে মেজরে পরিণত হলো মুহিত।

নিজের মামার পাওয়ার কাজে লাগিয়ে ঢাকায় এসে স্থান পোক্ত করলো।বড় বড় অফিসারদের হাত করতে যা যা দরকার তাই করে তাদের খুশি করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এর চোখের মধ্যমনি পর্যন্ত হয়ে গেলো মুহিত।

মামার পরিচয় জানলে মানুষ তাকে আর তার মামাকে অন্য চোখে দেখবে।তখন মুহিতের কঠিন পরিশ্রম তাদের চোখে পড়বে না।মুহিতের কষ্টে অর্জিত ফল চলে যাবে মামার ক্রেডিটে শুধু তাই নয় মামাও বিপদে পড়বে,ডিপার্টমেন্ট মামাকে হেনস্থা করবে।

এমনটি বুদ্ধিদীপ্ত মুহিত কখনোই হতে দেবেনা।শক্ত মনের অধিকারী মুহিত ভুলে গেলো মেজর জেনারেল তার মামা।

নাফিজ মাহমুদ আর দুটো মেজরের মতো তার ও স্যার।সবাই তাকে স্যার ডাকতে পারলে সেও পারবে।
নামিরার সাথে খুব কম যোগাযোগ করে,নামিরার কান্নাকাটি তে বুকের বাঁ পাশে সূক্ষ্ণ ব্যাথা অনুভূতি হয় যা মুহিত হতে দিতে চায়না।

সোহাগের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ আছে তার।সোহাগ ভালো রাখবে তার বোনকে বা এখনো রাখছে,সেই নিশ্চয়তায় শান্তিতে শ্বাস নেয় মুহিত।।

মাকে আগলে রেখেছে মুহিত ছোট নবজাতকের ন্যায়।যে মা উঠেনা, খায়না,কথা বলে না।যার শুধু শ্বাসটাই চলে।

সকল ভাবনা ভাবতে ভাবতে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো মুহিতের চোখের কার্নিশ বেয়ে।বাবাকে দেয়া কথা মুহিত রাখতে পারছেনা।দিনে দিনে মনোবল হারিয়ে যাচ্ছে।
মনটাকে শক্ত করা দরকার।
★★
রাত তিনটে বেজে সাতাশ মিনিট■
চারশত নব্বই বারের মতো আজকেও বাবার লিখা বাদামি মলাটের ডায়েরিটা মুহিত খুলে বসেছে।মনোবল শক্ত করতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে তার বাবার লেখা গুলো।যতোবার মুহিত মনোবল হারাতে বসেছে ততবারই তার বাবার এই ডায়েরি তাকে সাহস জুগিয়েছে।

মুহিত প্রথম পৃষ্ঠা বের করলো,তাতে টানা টানা অক্ষরে হাতের লিখা―

―আমার ছাব্বিশ বছরের চাকরির জীবনে আমি কখনো অসুদুপায় অবলম্বন করিনি।কখনো আমি আমার পেশার উপর কলঙ্কের কালি লাগতে দেইনি।আমার সন্তানরা কখনো আমার জন্য মানুষের সামনে মাথা নত করবে না।তারা মাথা উঁচু করে বাঁচবে।আমার স্ত্রীর কাছে আমি যেমন আদর্শ স্বামী হয়ে আছি মৃত্যুর পর ও এমনটাই থাকতে চাই।

পরের পৃষ্ঠা উল্টালো মুহিত।

সাল ২০১৮ সতেরো মে।

আমার আদরের পুত্র মুহিত সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হয়েছে।ছেলে দেশের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছে এর থেকে সুখের আর কি হতে পারে?আমি জানি মুহিত আমার সকল স্বপ্ন পূরণ করবে।আমার প্রানপ্রিয় মুহিত বাবার সকল দোয়া আর ভালোবাসা তোমার জন্য।।

◆◆জুন তিন
ভেবেছিলাম নামিরাকে বিয়ে দিয়ে চিন্তামুক্ত হবো,কিন্তু ভাগ্য সহায় হবে কি?
আমি কুচক্রী কিছু লোকের খারাপ পরিকল্পনার মধ্যে ঢুকে গেছি।আমার জন্য তাদের গোপন তথ্য ফাঁস হবার উপক্রম হয়েছে।আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে আমাকে সহ আমার স্ত্রী সন্তান কে তারা পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে।
আমি যদি সাক্ষী না দেই তাহলে সবাই ভালোভাবে বেঁচে থাকবে।

কিন্তু আমিও একজন বাবা,যাদেরকে এভাবে পাচার করে দেয়া হচ্ছে তাদের ও পরিবার আছে,মা,বাবা আছে।নামিরা মুহিত,মুকিতের জন্য আমার যেমন চিন্তায় জান বেরিয়ে যায়,তাদেরও তেমন ই হচ্ছে।

আমাকে যদি আমার জান কোরবান দিতে হয় দিবো তবুও কোনো বাবা মায়ের বুক খালি হতে দিবো না।

■■
জুন সাত―
মনের সাথে যুদ্ধ করে বহু ভেবেচিন্তে দেখেলাম,আমি কোনোভাবেই আমার চরিত্রে দাগ লাগাতে পারবো না।আমি নিজের জীবন বিসর্জন দেব সেই ভাবনা ভেবে ফেলেছি।কাল আমার আদরের একমাত্র মেয়ে নামিরা মেহজাবিন এর বিয়ে।আমার অনেক আনন্দিত হবার কথা।কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে।আমার স্ত্রী সন্তান, কে শেষ রক্ষা করতে পারবো তো?


জুন পনেরো―
―মুহিত আমাকে কথা দিয়েছে ও সব সামলে নেবে।মুহিতের প্রতি আমার আস্থা শতভাগ।মুহিতকে পারতেই হবে।আমি কখনো কারো উপর অবিচার,জুলুম করিনি।আল্লাহ ই আমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট।তিনি অবশ্যই আমার স্ত্রী সন্তানকে রক্ষা করবেন।

মুহিত তুমি যদি কখনো এই ডায়েরি পাও ভেবে নিবে বাবার পক্ষ থেকে তোমার মনোবল বৃদ্ধির মেডিসিন এটা।পাপার সকল দোয়া আর গভীর হৃদয়ের ভালোবাসা তোমার জন্য।

তোমাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো, হয়তো কিছুই পূরণ হবে না।যখন তুমি এই লিখা গুলো পড়ছো পাপা হয়তো তখন তোমার থেকে অনেক দূরে।
তোমার জন্য আমার না হওয়া কিছু কাজ ফেলে যাচ্ছি।যদি বড় কোনো অফিসার হও তাহলে বদলা নিও,আর যদি ভীতু কাপুরুষ হও তবে জেনে নেবে তোমার বাবাকে কেউ সততার জন্য খু*ন করেছে।
নিজেকে ঐভাবেই গড়ে তুলবে মুহিত যেভাবে গড়লে পাপার মৃ*ত্যু*র প্রতিশোধ নিতে পারবে।

কখনো অন্যের নৌকায় পা দিয়ে চলার চেষ্টা করবেনা।কোনো সাহায্য প্রয়োজন পড়লে তোমার মামা নাফিজের কাছে চাইবে।নাফিজ আমাকে কথা দিয়েছে তোমাদের দেখে রাখবে।কিন্তু অনুরোধ থাকবে কারো কাছ থেকে সাহায্য নিতে গিয়ে তাকেই আবার বিপদে ফেলবে না।

তোমাকে অনেক বড় হতে হবে মুহিত,বড় অফিসার হবে।দেশের জন্য,দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে,নিজের শ্রম আর মেধা খাটিয়ে সবসময় সবকিছু অর্জন করবে।সততার পুরষ্কার কতো বড় হয় জানোতো?

মুহিত নরম মনের মানুষ গুলো এই দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়,যাকে মানুষ নরম পায় তার পিছনেই লেগে থাকে।একটা কথা জানোতো?
―শক্তের ভক্ত,নরমের যম!

এমন ভাবেই বিকশিত করবে নিজেকে যেনো ভক্তিটাই তোমার ঝোলাতে উঠে,আর অন্যের জন্য নিজে যমে পরিণত হও।

পাপা অনেক কথা বলে ফেলছি,হাতে সময় খুবই কম।কিছু দায়িত্ব আছে ওগুলো কমপ্লিট করতে হবে।আমার আদর্শে বেঁচে থেকো মুহিত।
শুধু মনে আফসোস তোমাদের পুরোপুরি গুছিয়ে দিয়ে যেতে পারলাম না এমন অভাগা পিতা আমি”

ভালো থেকো আদরের মুহিত।

■ডায়েরি টাতে আর কিছুই লেখা নেই।বাকী সব সাদা পাতা।

ফজরের আজান হচ্ছে চারপাশে।অশ্রু সিক্ত নয়নে মুহিত ডায়েরি টা বন্ধ করে লকারে আবার পুরে রাখলো।
হাত মুখ ধুয়ে ওযু করে মুহিত নামাজে দাঁড়ালো।

তনুজা সকাল সকাল সব কাজ রেডি করছে দ্রুত।আজ সে নিজেই যাবে মুহিতের মা কে এবাড়িতে আনতে।প্রফেসর ফোন করে জানিয়েছেন মিসেস তারিন এর জ্ঞান ফিরেছে।উনাকে একা একা রাখার চাইতে বেশি মানুষের মধ্যে হাসিখুশি রাখলে উনার জন্য ভালো হবে।
স্বর্গকে নিয়ে মিসেস তনুজা বেরিয়ে গেলেন নাফিজ মাহমুদের বাংলো থেকে।

স্বর্গ আর তার মা দাঁড়িয়ে আছে কাঙ্ক্ষিত কেবিনের দরজার সামনে।দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে মুহিত কে দেখা গেলো মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলছে আর হাসছে।
মুহিত কে হাসলে এতো সুন্দর লাগে?ভেবেই স্বর্গের মনে আনন্দের সৃষ্টি হলো।
এইতো মুহিত আজকে মন থেকে হাসছে।

হঠাৎ তনুজাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায় মুহিত।সালাম দিয়ে প্রশ্ন করে ―
―ম্যাডাম আপনি এখানে?

―তনুজা হুহু করে আঁচলে মুখ গুজে কেঁদে উঠেন।
থাবড়িয়ে গালের খাল তুলে ফেলবো ফাজিল ছেলে
―আমি তোর ম্যাডাম নই, আমি তোর মামী।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে