তোমার জন্য সিন্ধুর নীল পর্ব-০৪

0
297

#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#চতুর্থাংশ
#সারিকা_হোসাইন

মেজর মুহিত!আপনি এখানে?

পিছন থেকে সুমিষ্ট মেয়েলি সুরটি কার হতে পারে তা ভাবতে ন্যানো সেকেন্ড সময় ও লাগলো না মুহিতের।
পিছন ফিরে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে উঠলো―

-জী ডাক্তার সাহেবা, আমি এখানে আপনার সামনে।চাইলে আমার চুল টেনে গলা টিপে ধরতে পারেন।

লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো স্বর্গ,

লজ্জায় অবনত মুখশ্রী দেখে মুহিতের নিজেকে নেশাখোর মনে হচ্ছে।কি আছে এই মায়াবী চেহারায়?

আমি আপনাকে কিন্তু অলরেডি সরি বলেছি মেজর,তা নাটক না করে এখানে কেনো এসেছেন জানতে পারি?

একটা কাজ ছিলো,

~তো কাজটি কি শেষ?

মুহিত মাথা ঝাকিয়ে নরম সুরে বললো আপাতত শেষ।

_তা মিস গুন্ডি সরি স্বর্গ আপনার ইউনিফর্ম কোথায়?

―ডিউটি আওয়ার শেষ বাড়ি যাবো।

―চলুন একসাথে যাওয়া যাক বলে মুহিত সামনের দিকে সম্মানের সহিত হাত ইশারা দিলো।

―দাঁড়ান একমিনিট মেজর!
যাবো আর আসবো বলেই ফুরুৎ করে দৌড় লাগালো স্বর্গ।

স্বর্গের পরনে জিন্স কালারের রোমপার্স সাথে হাফ হাতা হোয়াইট টিশার্ট,পায়ে স্নিকার্স,সাথে পনিটেইল স্টাইলে বাধা চুল,চোখে সামান্য কাজল ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপিস্টিক মুহিতের বুকে কাঁপন ধরালো।

স্বর্গ যাওয়ার পর মুহিত দুই হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে ওয়েটিং চেয়ারে বসে পড়লো আর বলে উঠলো হৃদয় হরিণী একটা।

মিনিট পাঁচেক পরেই ফিরে এলো স্বর্গ।
―কি ব্যাপার মেজর আপনাকে এমন বিধস্ত লাগছে কেনো বুকে ব্যাথা হচ্ছে?স্বর্গ দুই হাতে দুটো ঠান্ডা জুসের কাপ নিয়ে মুহিতের দিকে ভ্রু কুঁচকে উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

স্বর্গের কথা শ্রবণ ইন্দ্রিয় তে প্রবেশ করা মাত্র ধুম করে দাঁড়িয়ে পড়লো মুহিত।

―না মিস স্বর্গ। আসলে ,কেউ আমাকে খুন করতে চাচ্ছে।

স্বর্গ ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলো ফিসফিসিয়ে―

-কে খুন করতে চাইছে মেজর?আপনি তাকে চিনতে পেরেছেন?ডিপার্টমেন্ট জানে?

―চিনতে পেরেছি,কিন্তু আমি খুন হতে চাই মিস স্বর্গ।তাই ডিপার্টমেন্ট কে জানাইনি।

এবার স্বর্গ বুঝতে পারলো মুহিত তার সাথে মজা নিচ্ছে,তাই সে মুখ ফুলিয়ে বললো

―আমাকে বোকা বানালেন মেজর মুহিত ওয়াসিফ?
এর শোধ আমি তুলবো।বলে জুসের কাপ এগিয়ে বলে উঠলো নিন ঠান্ডা জুস পান করুন বাইরে অনেক গরম।

-জুস হাতে নিতে নিতে মুহিত স্বর্গের দিকে তাকিয়ে বলে বসলো
―আমি চাই আপনি আমার উপর শোধ তুলুন মিস স্বর্গ কথাটি বলে স্বর্গের চোখে চোখ রাখলো।
কতোক্ষণ তাদের দৃষ্টি বিনিময় হলো কে জানে ধ্যান ভাঙলো ক্যাপ্টেন সৌম্যের ডাকে।

―স্যার জিপ নিয়ে এসেছি হেড কোয়ার্টার এ যেতে হবে বোর্ড মিটিং আছে।
সৌম্যের উপস্থিতিতে ইতঃস্ততায়
দুজনেই দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে কাচুমাচু করে কেউ কাউকে বিদায় না জানিয়ে দ্রুত প্রস্থান নিলো।


হুইস্কির বোতল থেকে কেবলই নিজের পছন্দ মতো এক প্যাগ গ্লাসে ঢেলেছে লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাসের হায়দার,চুমুক দেয়ার আগেই টেবিলে রাখা ফোনটি কাঁপতে শুরু করলো।
অসময়ে যখন তখন ফোন আসা নাসের এর পছন্দ নয়।বিরক্তিতে চোখ উপরের দিকে উল্টিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে ফোনটি হাতে নিলো।স্ক্রিনে জানা পরিচিত রাঘব বোয়ালের নম্বর দেখে মুখের সমস্ত দাঁত বের হয়ে এলো খুশিতে।

~হ্যালো―

―ওদিকের খবর কি লেফটেন্যান্ট?
গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি কোনো এক মেজর আমার খুব নজরদারি করছে।মেজর কে একটু ঘোল খাওয়ালে কেমন হয় বলোতো?

―তোমার যা ভালো মনে হয় আহমেদ,কিন্তু তুমি কি তার নাগাল এতো সহজে পাবে ?মেজর কিন্তু সাধারণ কোনো মেজর নয়।যেমন চৌকষ তেমন কার্য উদ্ধারকারী। পুরো ডিপার্টমেন্ট তার সাথে আছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পর্যন্ত তাকে বেশ সমীহ করে চলে।

― শুনো লেফটেন্যান্ট!
তোমার দায়িত্ব আমাকে খবর সাপ্লাই দেয়া, আমি কিভাবে কি করবো সেটা নিয়ে তুমার না ভাবলেও চলবে।
রাখছি বলেই কল টা কেটে দিলো।

নাসের এর মাঝে মাঝে মনে চায় এক শুটে আহমেদ এর বুক ঝাঁজরা করতে,ব্যাটা নিজেকে মহা পন্ডিত ভাবে। যা খুশি তাই বলে ফেলতে দ্বিধা করে না।শালা খুনি একটা।

কিন্তু টাকার লোভে শত অপমান সহ্য করেও দাঁত কামড়ে পরে আছে নাসের।

বাংলাদেশ আর্মি হেড কোয়াটার্স এ বোর্ড মিটিং বসেছে।আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আহমেদ খান নামের এক ব্যাক্তি যিনি প্রচুর অর্থ ,কোটি কোটি টাকার হীরা,আর মানুষের বিভিন্ন অর্গান পাচারের কাজ রীতিমতো করে যাচ্ছে।কোনো পুলিশ র‌্যাব,বিডিআর এমনকি আর্মির কয়েকটি ইউনিট মিলেও কিছু করতে পারছে না।কেনো করতে পারছে না?এই ব্যার্থতা আসলে কার এই নিয়ে মিটিং।মিটিংয়ে উপস্থিত রয়েছেন ক্যাপ্টেন সৌম্য শাহরিয়ার, মেজর মুহিত ওয়াসিফ,লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেজবাহ সিরাজী,কর্নেল তাজ মাহমুদ,ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান ফারুকী, মেজর জেনারেল নাফিজ মাহমুদ সহ লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং জেনারেল।

তারা কিছুদিন আগে একটা গোপন খবরের মাধ্যমে জানতে পেরেছে আহমেদ খান কোথায় আছেন বর্তমানে এবং এটাও জেনেছেন ক্যান্টনমেন্ট এর কোনো বড় অফিসার এখানকার সকল খবর আহমেদ খান এর কাছে পৌঁছায়।এজন্য প্রতিবার আটঘাট বেঁধে প্ল্যানিং করলেও লাভের ফলাফল শূন্য।তাই আজকের মিটিংয়ে শুধু তাদের ই ডাকা হয়েছে যারা তাদের ইউনিফর্ম আর নীতির সাথে কখনো বেইমানি করেনি,এবং ভবিষ্যতেও করবে না।যাদের উপর দেশের দায়িত্ব অর্পণের এতো গুলো বছর পরেও অভিযোগের কোনো আঙ্গুল উঠেনি।

কিরে এমন দৌড়ে বাসায় ফিরলি কেনো?আর ফিরেছিস যখন পোশাক না পাল্টে হাতমুখ না ধুয়ে মরার মতো পরে আছিস কেনো?সেই দুপুরে বাসায় এলি এখন বাজে বিকেল পাঁচটা,দুপুরের খাবার ও খেলি না কিছু হয়েছে মা?

মায়ের প্রশ্নে স্বর্গ কি উত্তর দেবে ভেবে না পেয়ে বলে ফেললো হিসু চেপে ছিলো মাম্মা তাই দৌড়ে উপরে চলে এসেছি।

―তাই জন্য ভাত ও খাবিনা?

―ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম এজন্য যাইনি

কিন্তু আমি তো তোর রুম থেকে ঝাপাঝাঁপির শব্দ পাচ্ছিলাম,কি হয়েছে সত্যি বল।

―ধুর কিচ্ছু হয়নি ,যাওতো এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।

―তোমার মেয়ে প্রেমে পড়েছে মা!।

ভাইয়ের আকস্মিক এমন বেহায়া কথায় চেতে উঠলো স্বর্গ।

-এখনই তোকে ছাদ থেকে ফেলে দেবো ফাজিল ছেলে!একজন ক্যাডেট অফিসার হয়ে ট্রেনিং কমপ্লিট না করে ঘরে বসে বসে কি করিস তুই? বাপীর নাম ভাঙিয়ে যখন খুশি তখন বাসায় চলে আসিস।বেয়াদব!

স্বর্গ কে খেপিয়ে দিয়ে মায়ের পিছনে লুকালো সুখ,

―তোমার মেয়ে প্রেমে পড়েছে মা !দেখো ওর গাল লাল হয়ে রয়েছে লজ্জায়।

তুমিই বলো ও এমনি এমনি লজ্জা কেনো পাবে?

-মাম্মা তোমার ছেলেকে কিন্তু সত্যিই এখন খু*ন করে ফেলবো আমি ।
বলেই বেড সাইড টেবিল থেকে ফুলদানি হাতে নিলো স্বর্গ।
ভয়ে মিসেস তনুজা আর সুখ আস্তে করে দরজা ভিড়িয়ে চলে গেলো।
পাগল ক্ষেপেছে, ইয়ে আম সাকসেস।
বলে সুখ হাত মুষ্ঠি করে ভিক্টরি সাইন দিলো।

― বিছানায় ধপ করে চার হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পরলো স্বর্গ।এর পর আবার বসে পরলো।হাটু ভাঁজ করে হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে বিড়বিড় করে উঠলো ―
―কে বলেছে তোকে স্বর্গ ,ওই মেজরের দিকে এমন ড্যাব ড্যাব করে তাকাতে?ওই লোক যেই চূড়ান্ত বজ্জাত আর ঠোঁট কাটা
তোকে তো লজ্জায় চুবিয়ে মারবে।

―ধুর আর ভুলেও সামনে পারবোনা ওই সর্বনাশা মেজরের বলেই ওয়াশরুমে ফ্রেস হতে চলে গেলো স্বর্গ।

-তুমি কি কখনো প্রেমে পরেছো ক্যাপ্টেন সৌম্য?
আকাশ থেকে পড়ার ভান করে সৌম্য বলে উঠলো―
প্রেম?আর আমি?

―কী যে বলেন স্যার,ইন্টার পাশ করে লং কোর্সে ক্যাডেট অফিসার হলাম,যেখানে সিটি পাস ছাড়া বাইরেই বের হওয়া যায়না,ট্রেনিং নিলাম লেফটেন্যান্ট হলাম এর পর থেকে তো জীবনের রং ই বদলে গেছে।খালি মিশন ,এক্সাম,মিশন ,এক্সাম।এখন আবার ক্যাপ্টেন হয়ে তো মাঝ দরিয়ায় পড়েছি।বাথরুমে যাবার সময় পর্যন্ত পাচ্ছিনা স্যার।

―আপনার মতো মেজর হয়ে গেলে প্রেম না ডিরেক্ট বিয়ে করে টানা ছয় মাসের জন্য গুম হবো বউ নিয়ে।

―এখন তো সারাক্ষন আপনার সাথে থাকি কোনো লেডি অফিসার,নার্স,ডক্টর ,লেডি সোলজার কেউ আপনার ভয়ে সামনে আসে না।প্রেমটা কিভাবে হবে স্যার?

সৌম্য ঠিকই বলেছে ডিউটি আওয়ারে অহেতুক আলাপচারিতা বা কোনো ক্যাপ্টেন,লেফটেন্যান্ট ,বা সোলজার,কোনো লেডি অফিসার,লেডি সোলজার এর সাথে কথা বলা মুহিত একদম এলাউ করে না।

মুহিত মনে করে তারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছে।এখানে ডিউটি ফেলে কারো সাথে হাসি ঠাট্রা করে দুই মিনিট কথা বললেই বিরাট লস।তাই পানিশমেন্ট এর ভয়ে মেজরের সামনে এসব করার সুযোগ হয় না।আর ক্যান্টনমেন্ট এর বাহিরে যাওয়া হয় খুবই কম তাও বিশেষ প্রয়োজনে।প্রেমটা তাহলে হবে কিভাবে?

―কেনো স্যার হঠাৎ প্রেমের কথা কেনো বললেন?

সৌম্যের প্রশ্নে গলা খাকরি দিয়ে মিথ্যে কথার ডালা সাজালো মুহিত
―প্রেম করলে এটার অজুহাতে তোমাকে কঠিন পানিশমেন্ট দিতাম আরকি সেজন্য ।
সৌম্য কে নাটক করার সুযোগ না দিয়ে কন্ঠে অর্ডারের সুরে গাম্ভীর্য নিয়ে বলে উঠলো―
চলো সৌম্য তোমার জন্য আজ রাতে কঠিন ডিউটি আছে বলে রওনা দিলো মুহিত।

□■■অস্ট্রেলিয়া, সিডনি
ঘড়ির কাটায় সময় সকাল নয়টা বেজে বিশ মিনিট যা বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী ভোর পাঁচটা।নামিরা ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।সোহাগ ভার্সিটিতে যেতে নিলেই নামিরা এমন কান্না জুড়ে দেয়।সোহাগ সিডনি ইউনিভার্সিটির একজন লেকচারার।নামিরার এমন কান্নার জন্য প্রায়শই তার লেট হয়ে যায়।নামিরার কান্নার কারন প্রতিদিন একটাই নিঃসঙ্গতা।সোহাগ জানে নামিরা কেনো কাঁদে এভাবে প্রতিদিন।
কিন্তু সোহাগ নিরুপায়, ক্ষমতা থাকলে সে সব আগের মতো করে ফেলতো, সোহাগ তো সবসময় চেয়েছে নামিরা ফুলের মতো হাসুক,খেলুক।কোনো দুঃখ যেনো নামিরাকে স্পর্শ করতে না পারে।
―তাহলে সোহাগের মনের সব চাওয়া গুলো কেনো এক নিমিষে পাশার গুটির মতো উল্টে গেলো?
আচ্ছা যদি টাইম ট্রাভেল নামের সত্যিই কিছু থাকতো সোহাগ কি আগেভাগেই সকল দুর্ঘটনা এড়িয়ে নামিরা কে স্বাভাবিক সুন্দর একটি জীবন গড়ে দিতে পারতো?

কি হয়েছিলো ছয় বছর আগে?কেনো নিমিষেই সব বিভীষিকাময় হয়ে উঠলো?ঘটনা গুলো না ঘটলে নামিরা সোহাগ,মুহিত,সবার জীবনের মোড় হতো ভিন্ন।এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে যাওয়ার কি খুব দরকার ছিলো?
–নাহ আর ভাবতে পারছে না সোহাগ,নিজের চোখের জল কোনো রকম সামলে নামিরা কে হেল্পিং হ্যান্ডের কাছে বুঝিয়ে ভার্সিটিতে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো ।

হাই মিস পিউ!কোন ড্রেস টি নিবেন ডিসাইড করতে পারছেন না?
সৌম্যের অতর্কিত আগমনে চমকে উঠে পিউ।বুকে থুথু লাগিয়ে বলে ওঠে
―আপনি কি ভুত নাকি !ক্যাপ্টেন?

―ওমা ভুত হবো কেন?শপিং এ এসেছি, শপিং করতে করতে দেখলাম আপনি গালে হাত দিয়ে বসে আছেন।আরেকটু এগিয়ে এসে দেখি সামনে ড্রেসের পসরা সাজিয়েছেন।

এতো গুলো ড্রেস একসাথে দেখলে আপনি কখনোই একটি সুন্দর ড্রেস কিনতে পারবেন না মিস পিউনাজ।

সৌম্যের এমন আদুরে ডাকে পিউ আইসক্রিম এর মতো গলে গিয়ে বিড়াল ছানার মতো দুই হাত থুতনির নীচে গুটিয়ে কিউট ফেস বানিয়ে বলে উঠলো

-তাহলে আপনি একটা সিলেক্ট করে দিন ক্যাপেটন।

সৌম্য অভিজ্ঞের ন্যায় দোকানী কে এটা দেখান ওটা দেখান বলে দুটো ড্রেস সিলেক্ট করলো।কাকতলীয় ভাবে দুটো ড্রেস ই পিউ এর পছন্দ হলো,একটি মেরুন রঙের অন্যটি ল্যাভেন্ডার ।

সৌম্য পিউকে উদ্দেশ্য করে আকুতি ভরা কন্ঠে বললো―

―পিউনাজ ড্রেস গুলো আপনাকে সুন্দর মানাবে,কিন্তু অনুরোধ থাকবে এগুলো আপনি কোনো ছেলের সামনে পরবেন না।
কেউ আপনাকে মুগ্ধ হয়ে দেখলে আমার অনেক খারাপ লাগবে বলেই দ্রুত হাঁটা দিলো সৌম্য।

মুচকি হেসে ড্রেস গুলোর বিল মিটিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো পিউ।

ঢাকা সেনা নিবাসের সেনাকুঞ্জের কমিউনিটি সেন্টারটি ফুলে ফুলে সজ্জিত।চার পাশে বিভিন্ন ধরনের লাইটিং,ক্যান্ডেল নিয়ন বাতি সেট করে।আকাশে গুড় গুড় শব্দে ফুটছে বাজি।আজকের সন্ধ্যাটা যেনো মোহনীয় রূপ ধারণ করেছে।বড় বড় সামরিক বাহিনীর অফিসার রা তাদের পরিবার নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান ফারুকীর মেয়ের বিয়ে বলে কথা।কোনো কিছুর কমতি নেই। সবার সাথে বিয়েতে উপস্থিত হয়েছেন নাফিজ মাহমুদ ও তার পরিবার।

মুহিত আর সৌম্য ড্রেস কোড মিলিয়ে ব্ল্যাক সুটপরেছে,সাথে সাদা শার্ট।হাতে ব্র্যান্ডেড স্মার্ট ওয়াচ,কালো বেল্ট ,কালো শো।চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা।তারা দুজনেই কানে লাগিয়ে নিলো ব্লুটুথ ডিভাইস।তারা আজ বিয়ে খেতে নয় গোয়েন্দাগিরি করতে যাচ্ছে।

সৌম্য ,মুহিত আর একজন নবাগত মেজর দাঁড়িয়ে কাজের ব্যাপারে কথা বলছেন এমন সময় মুহিতের নজর গেলো বেবি পিংক লেহেঙ্গা পরিহিত মেয়েটির পানে।আজকে সে সেজেছে,ড্রেসের সাথে স্টাইল করে চুল বেঁধেছে,ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপস্টিক, কানে ঝুলানো বড় বড় দুল, মাথায় ছোট টিকলি,হাতে রিনঝিন চুরি,আহ এই বুঝি হার্ট এট্যাক এসে যায়।মেয়েটা সত্যিই স্বর্গ।দেখলেই শান্তি লাগে মনে।
উফ ডাক্তারনী বুঝি আমাকে খুন করেই ক্ষান্ত হবে।

কিন্তু পরক্ষণেই মুহিত খেয়াল করলো স্বর্গ ভালোভাবে হাটতে পারছে না,সে কাউকে খুঁজছে এমন মনে হলো মুহিতের।
মুহিত মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় মেজর ফাহিম আর ক্যাপ্টেন সৌম্য কে ফেলে চলে যায় স্বর্গের কাছে।

কিছু হয়েছে স্বর্গ?
মেজরের মুখে নিজের এমন আদুরে নাম শুনে থমকে দাঁড়ালো স্বর্গ।পাশে ফিরে মেজর মুহিত কে দেখে লজ্জায় রক্তিম হলো স্বর্গের দু কান আর গাল।
মিনমিন করে স্বর্গ বললো―

―নাহ মেজর মুহিত, আমি ঠিক আছি, বলে ক্যাবলাকান্তের মতো দাঁত বের করে হে হে করে হেসে উঠলো।
কিন্তু মুহিত ছেড়ে দেবার পাত্র নয় তার জানতেই হবে স্বর্গের কি কোনো প্রবলেম হয়েছে?যদিও এটা অনধিকার চর্চা,তার ব্যাক্তিত্বের সাথে এসব যায়না।তবুও কেন জানি তার নির্লজ্জ্ব হতে ইচ্ছে করছে এই মেয়েটার সামনে।

আপনি নির্ধিদ্বায় বলতে পারেন আমাকে স্বর্গ আমি আমার বেস্ট চেষ্টা করবো ।
স্বর্গ নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো

―আসলে মেজর আমি এই ড্রেস টা পরে হাটতেই পারছি না।লেহেঙ্গা টা অনেক ভারী,তার মধ্যে এতো গরম অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার বলেই মাথা নিচু করে ফেললো।
তার মধ্যে একটি ছেলে আমাকে এমন ভাবে ফলো করছে আমি তার দৃষ্টির আড়াল হতে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে করতে কাহিল হয়ে গেছি।
কোনো ছেলে স্বর্গকে ডিস্টার্ব করছে কথাটি শুনতেই চোয়াল শক্ত হয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো মুহিতের।
― গমগমে রাগ মিশ্রিত ভারী কন্ঠে বলে উঠলো―
-দেখিয়ে দিতে পারবেন কোন ছেলে এমন অসভ্যতামি করার চেষ্টা করছে?
সামনের কপালের বেবি হেয়ার গুলো ঠিক করতে করতে স্বর্গ বললো ―
যেই ছেলেটা ড্রেস কোড ফলো না করে ডিপ ব্রাউন স্যুট পড়েছে সেই ছেলেটা।
মুহিত আর কিছু না বলে সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো

―মিস স্বর্গ আসুন আমার সাথে,বলে মুহিত হল রুমের দিকে হাঁটা দিলো।
স্বর্গ দুই হাতে লেহেঙ্গা উঁচু করে ধরে মুহিতের পিছনে ছুটলো আর মনে মনে তার গুণধর ভাই সুখের পিন্ডি চটকালো।
বেয়াদব একটা,দরকার ছাড়া আঠার মতো চিপকে থাকবে কিন্তু দরকারে হারিকেন জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

এখানে বসুন স্বর্গ বলে কর্নারের একটি সোফা স্বর্গকে নির্দেশ করলো মুহিত।
কোথা থেকে যেনো একজন সোলজার কে ডেকে এনে দায়িত্ব দিলো যে,মুহিত ফিরে না আসা পর্যন্ত এক পা ও না নড়তে।সোলজার বাধ্য বাচ্চার মতো সায় জানিয়ে বডি গার্ডের পোজ নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো স্বর্গের পাশে।

মুহিতের এমন অস্থিরতা স্বর্গের মনে হিম শীতল বাতাস প্রবাহিত করলো।
এটা কি ভালোলাগা নাকি মেজর জেনারেল এর মেয়ে বলে দায়িত্ব পালন করা নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো স্বর্গ।
কিন্তু মন থেকে যা উত্তর এলো তাতে ঠোঁটে সূক্ষ হাসি ফুটে উঠলো স্বর্গের।
#চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে