তোমার জন্য সিন্ধুর নীল পর্ব-৩৩

0
84

#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_৩৩
#সারিকা_হোসাইন®

★★★★
সেনাকুঞ্জ,ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট

সূর্য দিগন্তে হারিয়ে গোধূলির রূপ ধারণ করেছে।উত্তরীয় হাওয়ায় সেনাকুঞ্জের সারিবদ্ধ সাইকাসের চিরল পাতা গুলো হেলেদুলে নড়ছে থেকে থেকে।
একটু অন্ধকার ছড়াতেই কনভেনশন সেন্টার সহ আশে পাশে জ্বলে উঠলো হরেক রঙের মরিচ বাতি।
কনভেনশন সেন্টার এর ভেতরে বড় বড় ঝাড়বাতি দিনের আলোর মতো দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
সকল আত্মীয়স্বজন, বড় বড় আর্মি অফিসার এবং নব্য নির্বাচিত মন্ত্রীকে দাওয়াত করা হয়েছে এই স্বর্ণালী সন্ধ্যায়।

ছোট ছোট বাচ্চা গুলো এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে গুছানো চেয়ার টেবিল গুলো বার বার এলোমেলো করে ফেলছে।

মুহিত বর বেশে তৈরি হয়ে চলে এসেছে অনেক আগেই।

স্বর্গের সাজ ই নাকি এখনো কমপ্লিট হয়নি তাই সে পৌঁছায় নি।

মুহিত আজ পড়েছে ডার্ক নেভি ব্লু রঙের “ক্লাস A” সিরেমনিয়াল ইউনিফর্ম।যার সাথে পরিধান করেছে এযাবৎ কালে তার অর্জিত সকল ব্যাজেস,মেডেল এবং বিভিন্ন ডেকোরাম জিনিস।
হাতে নেভি ফোর্স এর ব্ল্যাক ফিতার ঘড়ি।পায়ে কালো শো, মাথায় নিজের রেঙ্ক অনুযায়ী মিলিটারি পিকড ক্যাপ।

মুহিতের কলিগস,সৌম্য আদ্রিয়ান পড়েছে সেইম ড্রেস শুধু তারা হাতে পড়েছে সাদা হাত মোজা।
মুহিত পায়চারি করছে আর ভাবছে কখন স্বর্গ বধূবেশে তার সামনে এসে দাঁড়াবে আর মুহিত দুই চক্ষু ভরে সেই সৌন্দর্য সুধা উপভোগ করবে!

মুহিত বাইরে বেরিয়ে একটি বিশালাকার কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছের নিচে এসে দাঁড়ালো।
মিনিট পাঁচেক পরেই স্বর্গের দামি গাড়িটি সেনাকুঞ্জের গেটের সামনে দেখা গেলো।
গাড়িটি ভেতরে ঢুকতেই মুহিতকে সামনে দেখে ড্রাইভার গাড়ি থামালো।
মুহিত দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিলো স্বর্গের পানে।
স্বর্গ মুহিতের বাড়িয়ে দেয়া হাত শক্ত করে ধরে বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে।
নববধূর সাজে সজ্জিত স্বর্গকে দেখে মুখের ভাষা হারালো মুহিত।

মোটেও তার প্রিয়তমা কে কোনো সাধারণ মানবী ঠেকছে না।
প্রত্যেক প্রেমিক পুরুষের কাছে তার স্ত্রী হুর তুল্য।
বিয়ের সাজে মেয়েদের যেই সৌন্দর্য ফুটে উঠে সেই সৌন্দর্য আর কখনোই চোখে পড়েনা।
অন্যরকম এক মাধুর্য ভেসে উঠে সর্বাঙ্গে।

স্বর্গ মুহিতের কথা অনুযায়ী গায়ে জড়িয়েছে ধবধবে সাদা জামদানি যার জমিন,পাড় আর আঁচল সোনালী জরি সুতায় কাজ করা।সেই পাড়ের সাথে মিলিয়ে পড়েছে ব্রাইডাল ওড়না।সাথে ম্যাচিং বড় সিতা হার,চকার,কানের দুল ,টিকলি।
মুখে খুবই হালকা মেকআপের ছোয়া।চোখে সুরমা রঙা আইশ্যাডো পেলেটের নিখুঁত ছোয়া,গাঢ় মোটা করে দেয়া হয়েছে কালো কাজল।ঠোঁটে ন্যুড কালার এর লিপস্টিক।চুলগুলো সুন্দর করে খোঁপা করে তাতে দেয়া হয়েছে বেলিফুলের গাজরা।

মুহিত মুগ্ধ নয়নে স্বর্গকে খুটিয়ে দেখে বলো উঠলো

“খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে স্বর্গ।একদম স্বর্গের হুরদের মতো।
যদিও আমি হুর দেখিনি।কিন্তু পবিত্র কোরআনে তাদের বর্ননা রয়েছে।সেই বর্ননা অনুযায়ী তোমাকে হুর ই লাগছে”

স্বর্গ অমায়িক হাসলো।
মুহিত আদুরে স্বরে বলে উঠলো
“চলো সবাই অপেক্ষা করছে।
মুহিতের হাত ধরে স্বর্গ সিরামিক ইটের গাঁথুনি করা নিখুঁত রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চললো কনভেনশন সেন্টার এর দিকে।

স্বর্গ আর মুহিত কে দেখে সকলেই দাঁড়িয়ে গেলো।
মুহিতের সহযোগী রা তাদের প্রত্যেকের হাতে থাকা তলোয়ার দিয়ে হবু নব দম্পতি কে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে টানেল বানালো।
সেই টানেল এর ভেতর দিয়ে ধীর গতিতে মুহিতের কুনুই জড়িয়ে হেটে চললো স্বর্গ ।

টানেল পার হতেই মিসেস তারিন আর তনুজা স্বর্গকে ধরে স্টেজে তুলে সোফায় বসিয়ে দিলেন।
নাফিজ মাহমুদ মুহিত কে নিয়ে স্টেজে উঠলেন।
একটু পর কাজী এলো।

নাফিজ মাহমুদ মুহিত আর মিসেস তারিনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
“মেয়ে বিয়ে হয়ে স্বামী সংসারে চলে যাচ্ছে,আমার খারাপ লাগার কথা,আদরের মেয়ের বিদায়ে কান্না পাবার কথা”
কিন্তু তোমরা বিশ্বাস করো আমার একটুও খারাপ বা কষ্ট কিছুই লাগছে না।

“আমার চাইতেও মুহিত ওর ভালো খেয়াল রাখবে এটা আমার বিশ্বাস বলতে বলতেই কেঁদে ফেললেন নাফিজ মাহমুদ।

তনুজা আচলের সহিত নিজের চোখের জ্বল মুছে বলে উঠলো আমার মেয়েটাকে আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি,ওর ভুল ত্রুটি গুলো নামিরা ভেবে ক্ষমা করে দিবেন।

সুখ, স্বর্গের সামনে এসে হাটু মুড়ে বসে স্বর্গের কোলে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
স্বর্গ সুখের মাথায় হাত বুলিয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো
“আমি শশুর বাড়ী থেকে প্রতিদিন এসে এসে তোর সাথে মারামারি ঝগড়া সব করবো ।তুই শুধু দেখিস।

“চোখের জল মুছে সুখ বলে উঠলো
“আমি তোর ঝগড়া আর মার খাবার জন্য অপেক্ষা করবো আপুই।

মিসেস তারিন তনুজা আর নাফিজ কে শান্ত করে বললেন তোরা এভাবে কাঁদলে মেয়েটাও খুব কাঁদবে।
স্বর্গ যদি তোদের সাথেই থাকতে চায় থাকবে,দরকার পড়লে মুহিত মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যাবে।

আর আমি কি আমার আম্মার কোনো অযত্ন অবহেলা করতে পারবো রে পাগল!

মুহিত বলে উঠলো
“স্যার আপনি কোনো চিন্তা করবেন না,আপনার মেয়েকে আমার সম্পর্কে কখনো কোনো অভিযোগ দেয়ার সুযোগ ও আমি দেবোনা।
আমি তাকে নিজের থেকেও বেশি যত্নে রাখবো।
ওয়াদা রইলো আপনার কাছে আমার।
মিসেস তারিন তাড়া দেখিয়ে বলে উঠলেন―

“চল বিয়েটা পড়িয়ে চার হাত এক করে দেই।সময় যে চলে যাচ্ছে।।গেস্ট দের খাবার খাইয়ে বিদেয় করতে হবে।
এখনো অনেক কাজ বাকী পড়ে আছে।”

সকলেই চোখের জল মুছে মুহিত কে আর স্বর্গকে বিয়ে পড়ানোর আসরে নিয়ে গেলো।

একটি সুন্দর কার্পেট বিছানো যার চারপাশে তাজা ফুলের বেড়া।সুগন্ধি ফুলের গন্ধে ম ম করছে চারিপাশ।
স্বর্গের পাশে বসে গেলো তার বান্ধবী রা আর মুহিতের পাশে তার সকল সহকর্মী, সৌম্য,মেজর আদ্রিয়ান।

মাঝখানে দেয়া হলো সাদা কার্টেন এর দেয়াল।

কাজী সকল পেপার্স রেডি করে মুহিতের দিকে এগিয়ে দিলো।
মুহিত বিসমিল্লাহ বলে ঘস ঘস করে সই করে বলে উঠলো
“আলহামদুলিল্লাহ কবুল”

মুহিতের সহকর্মীরা হাত তালি দিয়ে সমস্বরে বলে উঠলো
“আলহামদুলিল্লাহ।
এবার স্বর্গের পানে এগিয়ে দেয়া হলো খাতা কলম।

কলম হাতে নিতেই স্বর্গের চোখ বেয়ে অঝোরে বর্ষণ হতে লাগলো।
আজ থেকে সে অন্যের অধীনে চলে যাবে।বাবার বাড়িতে এর পর থেকে সে মেহমান হিসেবে গণ্য হবে।
মেয়ে থেকে মেহমান হওয়া একটি মেয়ের জন্য কতোটা কষ্টের তা কেবল সেই মেয়েটি ই জানে।
যদিও স্বামী হিসেবে মুহিতের জুড়ি মেলা ভার।

পিউ স্বর্গকে পিঠে হাত বুলিয়ে রিল্যাক্স করে বললো
“দেরি হয়ে যাচ্ছে
প্লিজ সই টা করে দে।
কাঁপা কাঁপা হাতে স্বর্গ সই করে ভেজা রিনরিনে কন্ঠে জবাব দিলো

“আলহামদুলিল্লাহ, কবুল।

সমস্বরে সবাই আনন্দ উল্লাস এ চিৎকার করে উঠলো।
তুলে দেয়া হলো সামনের কার্টেন।
স্বর্গের হাতে চুমু খেয়ে হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো মুহিত।

নব্য তরুণ আর্মি অফিসার রা বিভিন্ন নাচ গান করছে।মেয়েরাও সাথে পাল্লা দিয়ে অংশগ্রহণ করছে।
কোনো ঝামেলা ছাড়াই আনন্দ বেদনা মিলিয়ে শেষ হয়ে গেলো মুহিত আর স্বর্গের বিয়ের অনুষ্ঠান।

মুহিত আর স্বর্গকে গাড়িতে তুলে দেবার সময় নাফিজ মাহমুদ মুহিতের হাত জড়িয়ে বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলেন।

“মুহিত তুমি দেখেছো আমি কিভাবে ওদের বড় করেছি,আমার মেয়েটা দিনে দিনে বড্ড অবুঝ হয়ে যাচ্ছে।আমি তোমাকে অনুরোধ করে বলছি কখনো ওকে বকা দিয়ে কিছু বলো না।ওর মনটা খুব নরম।
তুমি একটু বুঝিয়ে বললেই ও বুঝে যাবে।
তনুজা স্বর্গকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলেন।
আজ থেকে ঘুম ভাঙলেই তিনি আর তার মেয়েকে দেখতে পাবেন না।
খাবার টেবিলের চেয়ার টা ফাঁকা পরে থাকবে।
কেউ আর বলবে না মাম্মা তাড়াতাড়ি খাবার দাও দেরি হয়ে যাচ্ছে।

স্বর্গ তনুজা আর সুখ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে।
সকলের কান্না দেখে মুহিতের ও চোখে পানি চলে আসলো।
মেজর আদ্রিয়ান আর সৌম্য নাফিজ মাহমুদ কে বুঝিয়ে শান্ত করলেন।
নামিরা আর পিউ তনুজা কে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
মিসেস তারিন সুখ কে বলল
“আব্বা তুমি চলো ফুপির সাথে,স্বর্গের ভালো লাগবে।
সুখ চোখের জল মুছে মিসেস তারিনের গাড়িতে গিয়ে উঠলো।

প্রথমে গাড়িতে করে বড় বড় আর্মি অফিসার রা বেরিয়ে গেলো।
এর পর মিসেস তারিনের গাড়ি বেরিয়ে গেলো।
মুহিত আর স্বর্গের গাড়ি স্টার্ট দিলো সৌম্য।

মেজর আদ্রিয়ান নাফিজ মাহমুদ আর তনুজাকে সেনা নিবাস পৌঁছে দিবে বলে গাড়িতে উঠতে বললো।

ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে গেলো সেনাকুঞ্জ।

――――
ঘড়িতে রাত বারোটা বেজে ছিঁচল্লিশ মিনিট।
স্বর্গ তার গহনা খুলে একে একে শাড়ির পিন খুলছে।
খুট করে খুলে গেলো দরজা।
মুহিত কক্ষে প্রবেশ করলো।

মুহিত স্বর্গের কানের কাছে গিয়ে মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো

“আমি হেল্প করবো?”

স্বর্গ মুখ টিপে হেসে লাজুক ভঙ্গিতে বললো
“লাগবে না তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।”

মুহিত ড্রেস চেঞ্জ করে টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

স্বর্গ কোনো মতে শাড়ি চেঞ্জ করে একটা টিশার্ট আর লোজ প্লাজু প্যান্ট পরে নিজের ব্যাগ খুললো।

এক এক করে নিজের সকল জিনিস বের করে কাবার্ড খুললো।
খুলেই শব্দ করে হেসে উঠলো।

কাবার্ড এর একটা সাইড এর পুরোটা খালি
সেখানে বড় বড় করে মোটা কাগজে লিখা
“এখানে আমার বউয়ের জিনিস থাকবে।”

স্বর্গ বলে উঠলো” পাগল একটা”.

বলে আস্তে আস্তে সব গোছালো।
মিনিট পনেরো পরেই মুহিত বেরিয়ে এলো।
স্বর্গ মুহিতের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো

মুহিত হাটু সমান সাদা একটি টাওয়েল পরেই বের হয়ে গিয়েছে।
তার ধবধবে ফর্সা শরীরে পানির ফোটা গুলো চকচকে হিরের মতো লাগছে।কপালে লেপ্টে আছে কিছু চুল যাদের আগায় শিশিরের মতো বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।
হাত দিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিতে খুব ইচ্ছে করছে স্বর্গের।

ভাবনার মাঝে কখন যে মুহিত তার একদম কাছে চলে এসেছে সে টেরই পায়নি।
মুহিত নেশাক্ত কন্ঠে ডেকে উঠলো
“স্বর্গ!”

স্বর্গের ধ্যান ভাঙতেই মুহিত চুমু খেতে মুখ বাড়িয়ে দিলো স্বর্গের ঠোঁটের দিকে।
স্বর্গ মুহিত কে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে হাতে থাকা মেরুন রঙের সুতি শাড়ি আর টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে দৌড়ে পালালো।

মুহিত চিল্লিয়ে বলে উঠলো
“একটু পরে এই বন্ধ ঘরে আমার কাছেই আসতে হবে।কোথাও পালাতে পারবে না সুন্দরী।
বলেই হু হা হা করে ভিলেনের মতো হেসে উঠলো।

মেকআপ ক্লিন করে,সেটিং স্প্রে করা চুলের জট ছাড়িয়ে ভালো ভাবে শাওয়ার নিয়ে আধ ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বের হলো।

ইতোমধ্যে নামিরা একটা ট্রেতে করে কিছু ফলমূল আর গ্লাসে করে দুধ দিয়ে গিয়েছে।সাথে দুটো জায়নামাজ।

স্বর্গ বের হতেই মুহিত বললো ওযু করে এসো আমি অপেক্ষা করছি নামাজ আদায় করতে হবে।

বাধ্য মেয়ের মতো স্বর্গ ওযু করে এসে মুহিতের পিছে দাঁড়ালো।

দুই রাকাত সালাত আদায় করে নিজেদের দাম্পত্য জীবন যাতে ঝামেলা মুক্ত,সুখের হয়, সেই দোয়া করলো।
মুহিত রাব্বুল আলামিনের দরবারে হাত তুলে বললো
“মৃত্যুর দিন পর্যন্ত যেনো স্বর্গ তার থেকে কোনো আঘাত না পায়,মুহিত কে নিয়ে স্বর্গ যাতে কোনো অভিযোগ অনুযোগ না করতে পারে।

দুজনেই নামাজ শেষ করে উঠে দাঁড়ালো।

দেয়ালে থাকা সুইচবোর্ড হাতড়ে কক্ষের বাতি নিভিয়ে দিলো স্বর্গ।

আকাশে আজ পূর্ণ থালার মতো চাঁদটি ঝকঝকে আলো ছড়াচ্ছে।
মুহিতের দক্ষিণ পাশের জানালার ফাক গলিয়ে সেই চাঁদের আলো ঘরময় হুটোপুটি খাচ্ছে।

সেই চাঁদের আলোতে স্বর্গকে অত্যাধিক মোহনীয় লাগছে মুহিতের কাছে।
পেছন থেকে মুহিত স্বর্গকে জড়িয়ে ধরলো।
কেঁপে উঠলো স্বর্গ।
পিঠের ভেজা চুল সরিয়ে ঘাড়ে চুমু খেয়ে পকেট থেকে একটি ডায়মন্ড এর পেনডেন্ট বের করে স্বর্গের গলায় পরিয়ে দিলো।

“আমার পক্ষ থেকে এই পবিত্র রাতে তোমার জন্য ছোট একটি উপহার।
“এর আগের বার কিছুই দিতে পারিনি তোমাকে,তার জন্য তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী”

স্বর্গ নিজেকে মুহিতের দিকে ঘুরিয়ে মুহিতের গলা জড়িয়ে বলে উঠলো
“আমার সোনা দানা হিরে কিছুই চাইনা।আমি শুধু তোমাকে সবসময় ,সব ভাবে ,প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আমার পাশে চাই।

“বলো থাকবে??”

মুহিত স্বর্গের কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠলো
“থাকবো”
স্বর্গ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মুহিত কে।
মুহিত তার শক্তিশালী দুই বাহুর সাহায্যে এমন ভাবে চেপে ধরলো স্বর্গকে তার মনে হচ্ছে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতে পারলে শান্তি পাওয়া যেতো।

আবেশে,শান্তিতে চোখ বন্ধ করে ফেললো স্বর্গ।মুহিতের বুকের ধারকান স্বর্গকে মাতাল করে দিচ্ছে।
ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলো হৃদযন্ত্রের গতি।
নেশাক্ত চোখে স্বর্গের পানে তাকালো মুহিত।

স্বর্গ মুহিতের পানে দৃষ্টি দিয়ে পড়ে ফেললো মুহিতের চোখের ভাষা।

মুহিত তার ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরলো স্বর্গের তিরতির করে কাঁপা ঠোঁটে।

স্বর্গ পরম ভালোবাসায় বদ্ধ উন্মাদের ন্যায় আকড়ে ধরলো মুহিতের ঠোঁট।
স্বর্গকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ের শার্ট এক টানে খুলে ফেললো মুহিত।

চাঁদের আবছা আলোতে হাতের নরম আঙ্গুলি দিয়ে মুহিতের কান থেকে গাল পর্যন্ত স্লাইড করলো স্বর্গ।
সহসাই স্বর্গের মেদহীন পেটে মুখ ডুবালো মুহিত।

শিউরে উঠলো স্বর্গ।
হাতের বিচরণ হলো অবাধ্য থেকে অবাধ্যতর

দুনিয়াবি সকল চিন্তাভাবনা ভুলে দুজন মানব মানবী হারিয়ে গেলো ভালোবাসার পবিত্র সুধা আস্বাদনে।

#চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে