#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_২৭
#সারিকা_হোসাইন
~~~~~~
তাহলে ধরেই ফেললে আমাকে মেজর মুহিত ওয়াসিফ?
কথাটা বলে আয়েশ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো আহিয়ান।
এর পর চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ মৌন রইলো।
এরপর দুই হাত ভাঁজ করে টেবিলের উপর রেখে তাতে থুতনির ভর দিয়ে মুহিত কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো―
আমি যে পাগল নই এটা কিভাবে তুমি প্রমান করবে মেজর মুহির ওয়াসিফ?
―আমি তোমাকে প্রমান করতে আসিনি।
এসেছি বাম্পার এক অফার নিয়ে। সাবলীল উত্তর মুহিতের।
ভ্রু কুঁচকে মুহিতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো আহিয়ান।
কি এমন অফার নিয়ে হাজির হয়েছে সে?
গলা খাকরি দিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো মুহিত
তোমাকে জেল থেকে বের হবার সকল ব্যাবস্থা আমি নিজে করে দেবো আহিয়ান।বিনিময়ে আশরাফ চৌধুরী কে আমার হাতে তুলে দেবে তুমি!তার সাথে বহু হিসেব নিকেশ বাকী পরে আছে আমার।
তুমি আমাকে কেনো পালাতে সাহায্য করবে?আমিও তো তোমার ক্ষতি করতে চেয়েছি।
―তোমার সাথে আমার সেরকম কোনো শত্রুতা নেই প্লাস তোমাকে ভালো হবার একটা চান্স দিলাম।আর তুমি যেই ভুলটা করেছিলে সেটা ভালোবেসে পাগলামি করেছিলে।
আর কোথাও না কোথাও তোমার জন্য আমার মনে একটা সফট কর্ণার রয়েছে।
কারন পিতৃহীন থেকে মাতৃহীন হয়ে দুনিয়াতে বেঁচে থাকা সবচাইতে কষ্টের।হয়তো তোমার মা বেঁচে থাকলে আজকে তোমার লাইফের মোড় অন্য কোথাও ঘুরে যেতো।
মায়ের কথা শুনতেই আহিয়ান এর চোখে জ্বালা করতে শুরু করলো।
দেখতে কতো মিষ্টি ছিলো তার মা।মায়ের পুরাতন স্মৃতি তে নিমিষেই ডুবে গেলো আহিয়ান।
আহিয়ান এর সকল দুস্টুমি মেনে আহিয়ানের পিছে পিছে সারা বাড়িময় ঘুরে বেড়াতো মিসেস অহনা।আহিয়ান ছিলো চঞ্চল প্রকৃতির দুষ্ট ছেলে।বহুবার ঘরের দামি জিনিস ভেঙে ফেলেছে,মা কে ইচ্ছে করে ব্যাথা দিয়েছে,খাবার নিয়ে ঝামেলা করেছে।কোনো দিনও মিসেস অহনা আহিয়ান কে একটা মার তো দূরে থাক ধমক পর্যন্ত দেন নি।সারা রাত মাথায় বিলি কেটে গল্প শোনাতো।মায়ের বুকের ওম বহুদিন ধরে পায়না আহিয়ান।
বাবার সকল কুকীর্তি থেকে সবসময় বুকের মাঝে আগলে দূরে দূরে রেখেছেন।
কিন্তু আহিয়ান?
সে তো পারেনি তার মা কে আগলে রাখতে।রাক্ষস টা ঠিক তার মাকে কব্জা করে খেয়ে ফেলেছে।আহিয়ান লুকিয়ে লুকিয়ে শুধু দেখেছে,কিন্তু কারো কাছে আজ পর্যন্ত প্রকাশ টুকু করতে পারেনি।
আচ্ছা আহিয়ানের এই কুকর্মের জন্য তার মা কি ওপারে অনেক কষ্ট পাচ্ছে?
মুহিতের গমগমে কন্ঠে আহিয়ানের ধ্যান ছুটলো।
―তোমাকে আমার প্রয়োজন আহিয়ান!
আমার কথায় রাজি হয়ে যাও আহিয়ান।
ধরে নিতে পারো
―এ গোল্ডেন অপুরচুনিটি ফর ইয়ু।
কিছুক্ষন ভেবে আহিয়ান বলে উঠলো―
আমি তো দাগী আসামিতে পরিণত হয়েছি, যতো সহজে তুমি আমাকে পালাতে হেল্প করবে ভাবছো বিষয় টা আসলে অতোটা সহজ নয়।
মুহিত ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিলো সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
তুমি কি জেল থেকে বের হতে চাও নাকি আজীবন এখানেই পঁচে মরতে চাও সেটা তোমার ব্যাপার।
মনে হচ্ছে তুমি এখানেই কমফোর্ট ফিল করছো।থাকো তাহলে আমি উঠি।আমার শিকার আমি নিজেই ঠিক খুঁজে নেবো বলেই কলার ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালো মুহিত।
আহিয়ান তোষামোদ এর সুরে বললো
আরে মেজর এতো অল্পতেই রেগে গেলে কিভাবে হবে?
ভাবার সময় টাতো দিবে!
তুমি পাপার সাথে ঐরকম কিছুই করছে চাচ্ছ যা মোশতাকের সাথে করেছো তাইনা?
বলেই চোখ টিপলো আহিয়ান।
মুহিতের ভাবের কোনো পরিবর্তন ঘটলো না।
আহিয়ান আবার বলে উঠলো
তোমার দম আছে বলতে হবে মেজর।
আম প্রাউড অফ ইউ।
―আম রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ বলেই হাত তালি দিলো আহিয়ান।
আমি অবশ্যই তোমাকে হেল্প করবো,সে শুধু তোমার বাপ ভাইয়ের খুনি নয়,আমার সহজ সরল অবলা মায়ের খুনিও ওই কসাই টা বলেই রক্তচক্ষু নিয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে হাত পাঞ্চ করে মুহিতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
ডিল?
মুহিত আহিয়ানের পাঞ্চে হিট করে বললো
ডিল!
――――
নিস্তব্ধ কক্ষের মাঝে হঠাৎই ঘড়ির টিকটিক শব্দে লাফিয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসলেন তন্দ্রাচ্ছন্ন আশরাফ চৌধুরী।বসে থাকতে থাকতে কখন যে দুই চোখ লেগে গিয়েছিলো বুঝতেই পারেন নি তিনি।
কতো দিন ধরে এভাবে বসে বসে সময় পার করছেন তার হিসেব অক্ষরে অক্ষরে করে রেখেছেন তিনি।ওই মেজর কে এর থেকেও জাহান্নাম আজাব ভোগ করাবেন তিনি।
পরিবেশ শুনশান,কোনো মানুষের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।মাঝে মাঝে দূর রাস্তা থেকে বড় বড় ট্রাকের শব্দ ভেসে আসছে।আর দুই একটা নেড়ি কুকুরের মৃদু শব্দে ঘেউ ঘেউ শব্দ শোনা যাচ্ছে।
হাঁটুতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন আশরাফ চৌধুরী।পা টিপে টিপে বের হলেন তার গোপন কুঠুরি থেকে।
তিন তলায় নিজের শয়ন কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারলেই অর্ধেক কাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে।শুধু অপেক্ষা আলমারি থেকে গোপন ফোনটা বের করার।
অন্ধকার হাতড়ে সিঁড়ির রেলিং বেয়ে বেয়ে দূতলা পর্যন্ত উঠলেন।হঠাৎই সিঁড়ি ঘরের কর্নারে থাকা শোপিস রেকের সাথে বেঁধে রেক সমেত পড়ে গেলেন।
নিমিষেই ঝনঝন শব্দে আলোড়িত হয়ে গেলো নির্জন বাসটা।
ভয়ে সিঁড়ির চিপায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন আশরাফ চৌধুরী।মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি এখন হার্ট এট্যাক এসে যাবে।
বুকের ব্যাথায় দম বের হবার উপক্রম হলো তার।
কিছুক্ষন ওভাবেই শুয়ে থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে মেজর মুহিতের গুষ্টির পিন্ডি চটকে উঠে দাঁড়ালেন।
আবার রেলিং ধরে ধরে ধীর পায়ে হাঁটা ধরলেন।
এবার সুযোগ পেলে চামড়া তুলে নেবেন তিনি ওই মেজরের।
হাতড়ে হাতড়ে নিজের কক্ষের সামনে এসে দেখলেন দরজা খোলা।
খোলা দরজা দেখে অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকালেন।পরে মুহূর্তেই মনে পড়লো মানুষ সুযোগ বুঝে তার বাড়িতে চুরির অভিযান ও চালায় মানুষ।আমাকে তো খুঁজতে আসে না,আসে কোথা থেকে কি চুরি করা যাবে সেটা দেখতে।
দামি দামি সব নিয়ে যাচ্ছে এক এক করে।যেনো দান বাক্স খুলে বসেছি।
তাচ্ছিল্য হাসলেন আশরাফ চৌধুরী।
সালা সবাই চোর দোষ খালি আমার একার।
সকল ভাবনা ফেলে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলেন।যতো যাই হোকনা কেনো অতো সহজে তিনি ওই হাঁটুর বয়সী মেজরের হাতে ধরা দিবেন না।
বিনা শব্দে রুমে প্রবেশ করে আলমারি খুলে বের করলেন নিজের গোপন ফোন।
সুইচ অন করে ডায়াল করলেন কাঙ্খিত নম্বর।
একবার রিং হয়ে কেটে গেলো।
রাগে ঠোঁট কামড়ে চোখ উল্টালেন আশরাফ চৌধুরী।
বিশ্রী গালাগাল দিয়ে আবার ফোন কানে তুললেন।
রিং হতে হতে কেটে যাবে এমন মুহূর্তে ফোনটি রিসিভ করলো ওপাশের ব্যাক্তি।
খুশিতে ঠোঁট গলিয়ে বেরিয়ে এলো দুপাটি চকচকে দাঁত।
―সোয়াদদী (হ্যালো)
―নি আহমেদ (আমি আহমেদ)
―ছুঁওয়াই ডুওয়াই (আমাকে সাহায্য করো)
ওপাশের ব্যাক্তির কথায় প্রশস্ত হলো আশরাফ চৌধুরীর হাসি।আরো কিছু কথা বলে ফোন কেটে দিয়ে আবার গুপ্ত কুঠুরির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
রাত টা কোনো ভাবে কাটলেই হলো।মেজর মুহিত তুই আমার ছায়ার ও কোনো খুঁজ পাবি না।বলেই হো হো করে হেসে উঠলো।
*******
―তুমি কি বলছো মুহিত এসব?
তোমার মাথা ঠিক আছে?
এই কাজ আমি কিভাবে করবো?
―স্যার আমি আজ পর্যন্ত আপনার কাছে কোনো দিন সাহায্য চাইনি।প্লিজ স্যার আমাকে এই হেল্প টুকু করুন।
ছেলেটা দাগী আসামি মুহিত তোমাকে এটা বুঝতে হবে!
কেউ যদি তার ভুল বুঝতে পেরে ভালো পথে ফিরে আসতে চায় তাহলে তাকে সেই সুযোগ দেয়া উচিত স্যার।
যেখানে সৃষ্টিকর্তা আমাদের এতো এতো ভুল ক্ষমা করে তওবা করে তার কাছে ফিরে আসার সুযোগ দেয়,সেখানে আমরা তো নগন্য মানুষ স্যার।
মুহিত সবই বুঝতে পারছি তোমার কথা।কিন্তু কেউ যদি জানতে পারে আর্মি জেনারেল স্বয়ং এর সাথে জড়িত আছে আমার উপর কেমন ঝড় ঝাপটা আসবে তুমি বুঝতে পারছো?
স্যার আপনি সেসব কিছুই ভাববেন না।আমার টিম নিয়ে ঠিক আমি সব হ্যান্ডেল করবো।আপনি শুধু পুলিশ সুপার কে ম্যানেজ করবেন।
প্লিজ স্যার।
আর্মি জেনারেল মুহিতের পিঠ চাপড়ে মাথা নিচু করে প্রস্থান নিলেন।
মুহিত প্রশস্ত হেসে বলে উঠলো
থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
―――――
আজকে আহিয়ানের শুনানি।তার মেন্টাল হেলথ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আদালতে নেয়া হবে।তারিখের পর তারিখ বেড়েই যাচ্ছে কিন্তু আহিয়ানের সুস্থ হবার কোনো নাম নেই।
ডাক্তাররাও সমস্যাটা কোথায় সেটা ধরতে পারছেন না।
ক্রিমিনাল ভ্যানে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আহিয়ান কে তোলা হলো।সাথে দুটো কনস্টেবল।
গাড়ি ছুটে চলেছে হসপিটাল এর দিকে।
সামনে পুলিশের ডিউটিরত এস আই এর গাড়ি মাঝখানে আহিয়ানের গাড়ি,পিছনে মটর সাইকেল এ দুজন কালো পোশাকে আবৃত কারী ব্যাক্তি।
গাড়ি চলতে চলতে হঠাৎ ই নির্জন একটি রাস্তায় এসে ব্রেক কষলো।
সামনে কেউ তুমুল মারামারি লাগিয়েছে রাস্তা বন্ধ করে।
দুই পাশ থেকেই রাস্তা বন্ধ করেছে ছেলে গুলো।
কি নিয়ে তাদের মারামারি এটাই কেউ বুঝতে পারছে না।
এস আই কনস্টেবল দুটোকে নির্দেশ দিলেন গাড়ি থেকে নামতে।
ছেলে গুলো নিজেদের গাড়ি গুলো রাস্তায় এমন ভাবে পার্কিং করেছে কোনো পাশ থেকেই অন্য গাড়ি গুলো ঢুকতে পারছে না।।
কনস্টেবল নামতেই কালো পোশাকের লোক গুলো পুলিশ ভ্যান এর সাটার এর হ্যাজবল খুলে সুনিপুণ কৌশলে আহিয়ান কে বের করে তাদের বাইকে বসালো।
উল্টো দিকের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে বাইক জোরে টান দিয়ে ধুলো উড়িয়ে নিমিষেই হারিয়ে গেল অজানা গন্তব্যে।
কিছুক্ষণ বাদে মারামারি থামিয়ে কনস্টেবল দুটো পুলিশ ভ্যানে এসেই চোখ বড় বড় করে ফেললো।
এটা কিভাবে সম্ভব।
তারা তো আহিয়ান কে হ্যান্ডকাফ সমেত গাড়ির সিটের সাথে শিকল দিয়ে তালা দিয়ে গেছিলো।
নিমিষেই খবর পৌঁছে গেলো উপর মহল পর্যন্ত।
এস আই দৌড়ে এসে পড়ে থাকা হ্যান্ডকাফ দেখে বলে উঠলেন
―ওহ শীট।
শো কজ কি করবেন সেটা ভেবেই ঘাম ছুটে গেলো প্রত্যেকের।
মানুষ তো অবশ্যই প্রশাসনের অক্ষমতার দিকে আঙ্গুল তুলবে।
বিষয়টা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো হয়ে গেলো।
দ্রুত মর্গ থেকে এক্সিডেন্ট এ মারা যাওয়া চেহারা বিকৃত বেনামি একটি লাশ নিয়ে মিডিয়া ডেকে পুলিশ সুপার জানিয়ে দিলেন
আদালতে নেবার পথে গাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে আহিয়ান।
একদিকে পুলিশের ধাওয়া অন্যদিকে ব্যাস্ত রাস্তা ।
হঠাৎই সিলিন্ডার ভর্তি একটা ট্রাক এসে আহিয়ান কে পিষে দেয়।
সাথে সাথেই স্পট ডেট হয়ে যায় আহিয়ানের।
কু কথা বাতাসে ছড়ায় বেশি।
ঠিক তেমন ভাবেই নিমিষের মধ্যেই আহিয়ানের এক্সিডেন্ট করে মৃত্যুর খবর পুরো শহর ছড়িয়ে গেলো।
কেউ কেউ খুব খুশি হলো আবার কেউ কেউ দুঃখ পেলো।
――――
পেরিয়ে গেছে দুটো দিন।আহিয়ানের সেই জাহাজে আহিয়ান কে তুলে দিতে এসেছে মুহিত আর মেজর আদ্রিয়ান।
মুহিত কে জড়িয়ে ধরে আহিয়ান বলে উঠলো
―যেই উপহার তুমি আমাকে দিয়েছো মেজর এর এহসান একদিন ঠিক চুকাবো ব্রো।
বলেই চোখ মুছে দ্রুত জাহাজে উঠে গেলো।
মুহূর্তেই ভো ভো শব্দ করে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে পতেঙ্গা বন্দরের ছোট ছোট ঢেউ চিড়ে ধীরে ধীরে চলতে লাগলো ডেড সৌল।
এর পর স্পিড বাড়তে থাকলো।ধীরে তা মিলিয়ে গেলো সমুদ্রের ঘোর অন্ধকারে।
আহিয়ান যাবার আগে মুহিত কে অনেক ক্লু দিয়ে গেছে।সেই হিসেবেই মুহিত তার পরবর্তী কাজ শুরু করবে।
রাতটা কোনো ভাবে কাটাবে তারা এখানে।সকালে নোভোএয়ারে তাদের ডমেস্টিক ফ্লাইট আছে।
★★★
চট্রগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দর এ এসে পৌঁছালো মুহিত আর আদ্রিয়ান।
ইমারজেন্সি টিকিট কাটা আছে তাদের।
বিমানবন্দরে ঢুকতেই এক বিদেশি পর্যটক এর সাথে ধাক্কা খায় আহিয়ান।পর্যটক তার আপন ভাষায় কিছু কথা বলে উঠে।
আহিয়ান ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে দৌড়ে আসে পর্যটকের গাইড।
সরি স্যার,সে থাইল্যান্ডের নাগরিক।এখানে ঘুরতে এসেছে।তারা ইংরেজি বলতে পারেনা।
মুহিত আর আদ্রিয়ান ভদ্রতাসূচক আরো কিছু আলাপ করে ডমেস্টিটিক এরিয়াতে এসে নিজেদের টিকিটের সব কিছু ঠিক করে বিমানে উঠে বসে।
মুহিতের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কেনো ওই বিল্ডিং এ বার বার গিয়েও টাইলস গুলো চেক করে দেখলো না।কেনো তার মাথায় এই বুদ্ধি আগে এলো না।
বিমান ছাড়বে সেই অনাউন্স বেজে উঠলো।
সিট বেল্ট বেঁধে একটা ম্যাগাজিন হাতে নিলো মুহিত।
অল্প সময়ের জার্নি।
একটু পরেই প্লেন ল্যান্ড করবে।
এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই সে আদ্রিয়ান কে নিয়ে চৌধুরী ম্যানশন এ যাবে।
*****
সকল ঝামেলা পেরিয়ে এক ঘন্টার একটু বেশি সময় লাগলো মুহিত আর আদ্রিয়ান এর এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে।
ঢাকা বিমানবন্দরের পার্কিং এরিয়াতে আসতেই সৌম্যের দেখা পাওয়া গেলো।গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।
তাদেরকে দেখেই গাড়ি স্টার্ট দিলো।
গাড়িতে উঠে বসতেই মুহিত বলে উঠলো আশরাফ চৌধুরীর বাড়িতে চলো ক্যাপ্টেন।
রাস্তায় জ্যাম ঠেলে আসতে আসতে চল্লিশ মিনিট সময় লাগলো চৌধুরী ম্যানশনে পৌঁছাতে।
গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে ভেতরে প্রবেশ করলো তিনজনে।
গ্রাউন্ড ফ্লোরে দক্ষিণ পাশের প্রত্যেকটি টাইলসে হাত দিয়ে বাড়ি দিতে দিতে এক জায়গায় গিয়ে ফাঁপা মনে হলো।
পাশেই একটা টাইলস এ ছোট হ্যান্ডেল এর মতো দেখা গেলো।
সেটা ধরে টান দিতেই কূপের মুখের মতো গর্ত দেখা গেলো সাথে স্টিলের মই যা নিচের ওয়ালের সাথে ফিটিং করা।
মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে নেমে পড়লো তিন জনই।
ভেতরে ঢুকতেই তাদের চোখ ছানাবড়া।
ঝকঝকে পরিপাটি গুছানো কক্ষ।দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে কেউ অবস্থান করছে নিয়মিত।
প্যাকেট জাত খাবারের খোসা ছড়িয়ে আছে সর্বত্র।
তন্ন তন্ন করে সারা কক্ষ খুঁজেও আশরাফ চৌধুরী কে পাওয়া গেলো না।
দৌড়ে উপরে উঠলো তিন জনেই।
চার তলা থেকে চারটি মিনি রেকর্ডার ডিভাইস বের করে আনলো মুহিত।
সেগুলোর মেমরি খুলে প্রত্যেকেই নিজেদের ফোনে লাগালো।
প্রথম টা থেকে কোনো সাউন্ড পাওয়া গেলো না।দ্বিতীয় টা থেকে ঝনঝন শব্দে তারা সজাগ হলো।
আর কোনো শব্দ নেই সেটাতে।
তৃতীয় টা থেকে অনেকক্ষন বাদে অদ্ভুত কিছু ভাষা শুনতে পাওয়া গেলো।
ভ্রু কুঁচকে এলো প্রত্যেকের।
আদ্রিয়ান বলে উঠলো
কমরেড ভাষা গুলো খুব পরিচিত লাগছে।
মাথায় জোর দিতেই মনে পড়লো কোথায় শুনেছে সেই ভাষা।
সেই থাইল্যান্ডের পর্যটকের কাছে।
রেকর্ডেড কথা গুলো গুগল ট্রান্সলেট করে অর্থ বুঝতেই মুহিতের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো।
সজোরে দেয়ালে এক ঘুষি বসিয়ে দিলো।
মুহূর্তেই বাঁকা হাসলো মুহিত।
চলুন মেজর আদ্রিয়ান থাইল্যান্ড যাওয়া যাক।
#চলবে।
#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_২৮
#সারিকা_হোসাইন
ব্যাঙ্কক,ফুকেট
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্কক এর ফুকেটের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।কিন্ত এই ফুকেট দিনের বেলায় যতোটা সুন্দর মোহনীয় রাতের বেলায় ততোটাই ভয়ংকর।একটু এদিক সেদিক হলেই ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা।
চুরি,ডাকাতি,স্মাগলিং,সে*ক্স ক্লাব,ক্যাসিনো সবকিছু গড়ে উঠেছে ফুকেট এর বাংলা রোডে।এই রোডে সন্ধ্যার পর যে কোনো ক্রাইম ঘটার চান্স থাকে আশি শতাংশের উপরে।বিদেশী পর্যটকদের জন্য বাংলা রোড কে রাতের বেলা রেড এরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
টানা সাড়ে তিন ঘন্টা জার্নি করে ব্যাঙ্কক সুবর্ণ ভূমি এয়ারপোর্ট এসে পৌঁছেছে আদ্রিয়ান,সৌম্য আর মুহিত।
ইকোনোমিক টিকিটের ব্যাবস্থা না থাকায় বিজনেস ক্লাসে আসার জন্য একেকজন কে গুনতে হয়েছে সত্তর হাজার টাকা।
তাদের কে ওয়েলকাম করার জন্য প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন তাদের গাইড থাই আব্বাস।
লোকটির বয়স চল্লিশের কাছাকাছি।থাইল্যান্ড সম্পর্কে এতোই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন যে, নামের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে” থাই”
আব্বাসের সহায়তায় তারা তাদের লাগেজ নিয়ে ফুকেট এর পশ একটি হোটেল নভোটেল ফুকেট সিটি তে উঠে।
মূলত তারা এসেছে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে।রথ দেখা কলা বেঁচা যাকে বলে।
এর মাঝে সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বডি ম্যাসাজ করাতে পারলে মন্দ হয় না!
হোটেলে ঢুকে ফ্রি ওয়াইফাই কানেক্ট হতে না হতেই সৌম্য আর মুহিতের ফোনে ভিডিও কলের নোটিফিকেশন আসতে শুরু করলো।
বিভিন্ন ধরনের মেসেজ দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে পিউ আর স্বর্গ।
একটাই সতর্ক বাণী
―সাদা রঙের মেয়ে মানুষ থেকে একশত হাত দূরে।
মেজর আদ্রিয়ান বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে হো হো করে হাসতে লাগলো।কারন সে স্বাধীন।তাকে বলার মতো কেউ নেই।
তার মতে
― সিঙ্গেল লাইফ ইজ বেস্ট।
―মিঙেল হলেই যতো প্যারা।
মুহিত আর সৌম্যকে উদ্দেশ্য করে চোখ টিপে আদ্রিয়ান বলে উঠলো
―আমি বডি ম্যাসাজ ও নিবো, নাইট ক্লাবেও যাবো,আর বিচেও হাফপ্যান্ট পরে শুয়ে থাকবো।
বলেই মাথার পিছে দুই হাত ভাঁজ করে দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে থাকলো।
আদ্রিয়ান এর কথা শুনে মুহিত আর সৌম্য চোখ চাওয়া চাওয়ি করলো।কারন তারা অসহায়।তারা বউয়ের বন্দী কারাগারে।
মুহূর্তেই মুহিতের ফোন ভো ভো শব্দে কেঁপে উঠলো।
স্ক্রিনে দৃষ্টি ফেলতেই নিজের আদুরে বউয়ের নম্বর দেখে ঠোঁটের হাসি মিইয়ে গেলো।
এখনই শুরু হবে একশ একটা প্রশ্নের জবাব উত্তর।
হলোও তাই।মুহিত ফোন তুলে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে স্বর্গ
বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো সাথে একশত বার শাশালো যাতে ছোট পোশাক পরিহিত মেয়েদের দিকে চোখ না দেয় মুহিত।
তাহলে স্বর্গ মুহিতের চোখ উপরে ফেলবে।
মুহিত শুধু আচ্ছা,আচ্ছা বলে বাধ্য বাচ্চার ন্যায় ফোন কেটে দিলো।
স্বর্গ ফোন কাটার সাথে সাথেই পিউ ফোন করলো সৌম্যের ফোনে।
ঐ একই হুমকি ধামকি।
―শালার আসামি ধরতে এসেও শান্তি নেই দেখা যাচ্ছে বলে বালিশ দিয়ে মাথা চেপে ধরলো সৌম্য।
কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে হোটেলের রুফটপ রেস্টুরেন্টে গেলো তারা।
এটাই প্রথম থাইল্যান্ড ভ্রমন তাদের।এখানকার খাওয়াদাওয়া, কৃষ্টি,কালচার কিছুই জানে না তারা।আর কতো রকম দেশে যে তাদের ভ্রমন করতে হবে সেটাও তারা জানেনা।
মেনু কার্ড নিয়ে খাবারের নাম দেখতে থাকলো।
সৌম্য তো ভয়েই শেষ যদি পর্ক দিয়ে রান্না করে দেয়?
ভাবতেই চোখ মুখ কুঁচকে জিভ বের করে আস্তাগফিরুল্লাহ বলে উঠলো।
সৌম্যের এমন অবস্থা দেখে মুহিত জিজ্ঞেস করলো
―উজবুকের মতো আচরণ করছো কেনো ক্যাপ্টেন?
সৌম্যের উত্তর না শুনেই ওয়াইটার ডাকলো মুহিত।
মুহিত সবাইকে বোঝালো কোনটা কি খাবার আর তারা কোনটা খাবে?
সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুহিত ওর্ডার দিলো থাই স্টীম বোট,সৌম্য ভাত প্রিয় মানুষ সে ওর্ডার দিলো খাও ক্লুখ ক্রবি আর আদ্রিয়ান ওর্ডার দিলো চিকেন সাতায়।
গুগল ঘেঁটে খাবার সম্পর্কে আইডিয়া নিয়ে নিয়েছে তারা।এবার টেস্ট করার পালা।
কিছুক্ষণ পরেই তাদের অর্ডারকৃত খাবার চলে এলো।
সৌম্য ভয়ে ভয়ে খাবার মুখে তুললো।খাবার খেয়ে সে তার মন্তব্য ব্যাক্ত করলো।
―এতো কঠিন নামের কি দরকার ছিলো?চিংড়ি ভর্তা দিয়ে ভাত মাখানো বললেই তো সহজ হতো।
―বেশি কথা না বলে খাও ক্যাপ্টেন বলেই ফুটন্ত ভেজিটেবল আর চিকেন স্টক এ পাতলা স্লাইস করে কাটা মুরগির মাংস চুবালো মুহিত।
সৌম্য খেতে খেতে প্রশ্ন করলো
মেজর আপনি এখানে কোথায় খুঁজে পাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত আশরাফ চৌধুরী কে?
―সন্ধ্যে নামলেই দেখতে পাবে বলেই চপ স্টিক দিয়ে ডুবানো মাংস টা তুলে মুখে পুড়লো মুহিত।
খাবার সময় বেশি কথা মুহিতের পছন্দ নয়।এজন্য সৌম্য আর ঘাটালো না বেশি।
――――
পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন আশরাফ চৌধুরী।পেছনে দুজন মেয়ে গরম তেল মালিসের মাধ্যমে তাকে ম্যাসাজ দিয়ে যাচ্ছে।মেয়ে গুলোকে কক্ষে নিয়ে শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে আশরাফ চৌধুরীর।কিন্তু মুখে কিছুই প্রকাশ করলেন না।
মুহিতের কথা মনে পড়তেই বিদঘুটে হেসে উঠলেন।
তার হাসিতে মেয়ে গুলো ম্যাসাজ বন্ধ করে দূরে সরে দাঁড়ালো।
―আর কিভাবে আমায় খুঁজে পাবি মেজর?
অনেক দৌড় করিয়েছিস আমাকে।এবার তোকে কি করি আমি তুই শুধু দেখ।
লাশ ধরে কাঁদার জন্য ও কোনো মানুষ পাবি না বলেই হাতে থাকা বিয়ারের ক্যান ছুড়ে মারলেন ।
মুহিত যদি কোনোভাবে এখানেও চলে আসে তবে জ্যান্ত পুতে দেবেন থাইল্যান্ডের মাটিতে।
বাংলাদেশের চাইতেও আশরাফ চৌধুরীর জন্য নির্ভরযোগ্য স্থান থাইল্যান্ড।
এখান থেকেই তার ব্যাবসা জীবনের হাতে খড়ি।
ঘুরতে আসা কতো নারী পর্যটক কে অপহরণ করে পতিতালয়ে দিয়ে দিয়েছে আশরাফ চৌধুরী তার কোনো ইয়াত্তা নেই।
বিনিময়ে হাতিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
ধীরে ধীরে পোক্ত আবাস গড়েছেন এখানে।
ছেলেটার জন্য এতোদিন দেশে ফিরে গিয়েছিলেন।
কিন্তু হারামিটা তার সব শেষ করে দিলো।
হঠাৎই আশরাফ চৌধুরীর কক্ষে আট জন্য থাই ছেলে প্রবেশ করলো।প্রত্যেকের উচ্চতা ছয় ফিট।সাথে মাসেল যুক্ত বডি।প্রত্যেকেই কারাতে স্পেশাল।
এবার আর শুকনো মাটিতে বসে থাকবেন না আশরাফ চৌধুরী।ওই লাফাঙ্গা মেজর কে একদম ভরসা নেই।যখন তখন তাকে পাকড়াও করতে চলে আসবে।
সেই জন্যই তো এতো আয়োজন।
গেট কিপার খলিল,মোশতাক আহমেদ এর মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা একটু হলেও আঁচ করতে পেরেছেন আশরাফ চৌধুরী।
পুলিশকে ঘোল খাওয়ানো গেলেও তাকে ভুলানো এতো সহজ নয়।
মাথার চুল বাতাসে পাকেনি তার।
এবার মুহিত কে হাতের কাছে পেলে এই ছেলে গুলোকে দিয়ে টাইট দেয়াবেন আর তিনি বসে বসে উপভোগ করবেন আর হাত তালি দিবেন।
মুহিতের চাটনী বানানো হচ্ছে ভাবতেই খুশিতে চোখ বন্ধ হয়ে এলো আশরাফ চৌধুরীর।
―――――
পৃথিবীতে মানুষের কাছ থেকে কঠিন কোনো সত্য বের করার প্রধান উপায় হচ্ছে ইমোশনাল ব্ল্যাক মিল।
মুহিত এটাই ট্রাই করেছে আহিয়ান এর উপর।
মুহিত জানতো আহিয়ানের মা নেই।তাই বলে তার মা কে আশরাফ চৌধুরী খুন করে দিয়েছে এটা মুহিত স্বপ্নেও ভাবেনি।
সহধর্মিণী হয় আত্মার আত্মা,সব চেয়ে কাছের বন্ধু,ভালো থাকার মেডিসিন।যাকে একটু রুষ্ট স্বরে কথা বললে কীয়তক্ষন বাদে নিজেরই বুকে কষ্ট অনুভূত হয়।
তাকেই কিভাবে কেউ হত্যা করতে পারে?
কতোটা জঘন্য এই আশরাফ চৌধুরী?
ভেবে উত্তর খুজে পায়না মুহিত।
ধীরে ধীরে থাইল্যান্ডের আকাশের সূর্য দিগন্তে হারাচ্ছে।সময়টা এখন গোধূলী।একটু পরেই নেমে আসবে অন্ধকার।কিন্তু বাঙলা রোড সেজে উঠবে ঝকঝকে আলোতে,চলবে দেহ ব্যাবসায়ী দের হাঁকডাক।সাথে ক্যাসিনো,বিভিন্ন ড্রাগস এর আসর আর ডাকাতি ছিনতাই।
মুহিত তৈরি হয়ে নিচ্ছে দ্রুত।
আদ্রিয়ান আর সৌম্য অসময়ে ঘুমুচ্ছে।
মুহিত আজ যাবে আহিয়ানের কথা অনুযায়ী লন্ডন বার নামক জায়গাটি তে।
আহিয়ান আশরাফ চৌধুরী সম্পর্কে সকল তথ্য হাতে কলমে মুহিতের কাছে দিয়ে গিয়েছে।
কোথায় কোথায় পাপের সাম্রাজ্য গড়েছে আশরাফ চৌধুরী সব এখন মুহিতের নখদর্পণে।
মুহিতের হাত থেকে এবার কোনো ভাবেই নিস্তার পাবেনা আশরাফ চৌধুরী।
মুহিত আজকেই এট্যাক করবে না।আজকে সে ওই জায়গায় নাম মাত্র খুঁজ লাগাতে যাবে।
কালো জিন্স প্যান্টের সাথে হাফ হাতার লোজ একটি হোয়াইট টি শার্ট পড়লো মুহিত।মুখে কালো মাস্ক লাগাতেই তাকে দেখে সে কোন দেশের মানুষ তা বোঝার উপায় থাকলো না।
মাথায় একটা ক্যাপ পরে নিলো।পায়ে কালো বুটস।
ঠিকানা অনুযায়ী গুগল ম্যাপে পনেরো মিনিটের রাস্তা দেখাচ্ছে।
ম্যাপের রাস্তা ধরে হাটতে হাটতে মুহিত বিশ মিনিট পর পৌঁছে গেলো সেখানে। মুহিতকে ছোট ছোট পোশাক ধারী মেয়ে গুলো ম্যাসাজ ম্যাসাজ করে ডাকছে আর চোখ দিয়ে বিভিন্ন ইশারা করছে।
মাঝে মাঝে টেনে ধরার চেষ্টা করছে।
মুহিতের আর বোঝার অপেক্ষা থাকলো না যে,কিসের জন্য মেয়েগুলো ডেকে যাচ্ছে।
হাটতে হাটতে মুহিত এসে দাড়ালো একটি বার এর সামনে।যার সাইনবোর্ড এ লাইটিং এ জ্বলজ্বল করছে” লন্ডন বার ফুকেট লেখাটি।”
মুহিত কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে আশেপাশের ভাবভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করলো।এরপর বারের ভেতরে প্রবেশের জন্য পা চালালো।
বারটি তে আসতেই কোকেন এর গন্ধে পেট গুলিয়ে উঠলো মুহিতের।
বহু কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক করে বারের ভেতর ঢুকে গেলো।
বারের ভেতর প্রবেশ করতে মুহিতের মনে হলো সে জাহান্নামে এসে পৌঁছেছে।চার পাশে মানুষ নেশায় বুদ হয়ে আছে।ছোট ছোট কক্ষ গুলো থেকে ভেসে আসছে মেয়েদের শীৎকার আর বিশ্রী হাসির আওয়াজ।ইয়ং ছেলে গুলো সমানে নাক দিয়ে হেরোইন টেনে চলেছে।
মুহিত সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতেই দেখতে পেলো দুটো ছেলে তাকে ঘুরে ঘুরে দেখছে শুধু।
মুহিত তাদের কিছুই বুঝতে না দিয়ে একটা উঁচু বার স্টুল এ গিয়ে বসলো।
কি ওর্ডার করবে সেটাই বুঝতে পারছে না।এদিকে ছেলে গুলো মুহিতকে বার বার নজরে রাখছে।
মুহিত এতটুকু বুঝতে পেরেছে যে,মুহিতের চালচলন ওদের কাছে ভালো ঠেকছে না বলেই ওরা মুহিতকে নজরে রেখে বোঝার চেষ্টা করছে।
মুহিত একটা ককটেল শট ওর্ডার দিলো যা বিভিন্ন সফট ড্রিংকস এর মিশ্রনে তৈরি।
জুস সার্ভ করতেই মুহিত জুসটা হাতে নিয়ে প্রথম চুমুক দিতেই ছেলে দুটো দুপাশ থেকে এসে মুহিতের পাশে বসে গেলো।
এমন ভাবে মুহিত কে চেপে বসেছে যেনো মুহিত পালিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎই মুহিত টের পেলো তার পেটের কাছে শক্ত কিছু ধরেছে ডান পাশে থাকা ছেলেটি।
ছেলেটির মুখের দিকে তাকাতেই অস্পষ্ট ইংরেজি তে বলে উঠলো
―হেই দোন্ত মুভ।
―গিভ আস এভরিথিং ইউ হ্যাভ ,
ফিচেল হাসলো মুহিত।এমনিতেই একজন সারাক্ষন হয়রানি করে যাচ্ছে তার মধ্যে আবার এই দুজন।
মুহূর্তেই রাগে কান গরম হয়ে গেলো মুহিতের ।
রক্ত চক্ষু করে ডান পাশের ছেলেটির দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠলো
―মুভ ইউও গান নাও এট ডিজ মোমেন্ট।
―আদার ওয়াইজ আ উইল কিল ইউ ব্লাডি বিচ।
মুহিতের ধমকে কেঁপে উঠলো ছেলে গুলো,সাথে আশেপাশের মানুষ তাদের তাকিয়ে দেখতে লাগলো।
ছেলেটি আরো শক্ত করে বন্দুক চেপে ধরলো মুহিতের পেটে।
তারা এতটুকু বুঝে গেছে ছেলেটা অন্য দেশের।আর এখানে কোনো ওকারেন্স ঘটালে কেউ বাঁচাতে আসবে না তাকে।
আর একা একটা মানুষ দুজনের সাথে পারবে নাকি?
ছেলেটির ত্যাড়ামো দেখে মুহিতের পায়ের রক্ত মাথায় উঠলো।জুসের গ্লাস টা টেবিলে রেখে খপ করে ডান পাশের ছেলের হাতের কব্জি ধরে ফেলল এবং ছেলেটির হাত মুচড়ে ভেঙে বন্দুক ওই ছেলের পেটেই তাক করলো।
এরপর গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো
―আম বেটার এট গানস শুটিং দ্যান ইউ।
―নাউ মুভ ফ্রম হেয়ার।
আচানক আক্রমণে ছেলে দুটো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো, আর ডান পাশের ছেলেটি হাতের ব্যাথায় রীতিমতো চিৎকার শুরু করেছে।
এর পর মুহিত তার কোমরে গুঁজে রাখা 500 S&w magnam রিভলবার টি বের করে ছেলেদের দিকে তাক করে বলে উঠলো
―মাই রিভলবার ইজ মোর পাওয়ারফুল দ্যান ইয়ু।
ছেলে দুটি ভয়ে ভয়ে দ্রুত সরে গেলো।
মুহিত নির্বিকার ভাবে আবারো বসে রইলো।অপেক্ষা বার খালি হবার।
বার কি আর কখনো খালি হবে?
লোক সমাগম কমতে থাকার অপেক্ষা করতে লাগলো মুহিত।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর মুহিত বারের পেছনের কক্ষে যাবার রাস্তা ফাঁকা পেলো।আশেপাশে নেশায় কাতর লোকজন।
সুযোগ বুঝে মুহিত কাঙ্খিত কক্ষের দিকে হাঁটা দিলো।
নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে মুহিত খুঁজতে লাগলো কক্ষের নম্বর।কারণ ছোট ছোট কটেজে টাইপের অনেক গুলো রুম আছে এখানে।
রুম নম্বর ফোর জিরো ফোর।
বন্ধ রুম অবশ্যই ভেতর থেকে আটকানো ।এই রুমে যে আশরাফ চৌধুরী আছে তারই বা নিশ্চয়তা কি?
কিছুক্ষন পায়চারি করলো মুহিত।
এরপর করিডোরে রাখা একটি বড় ফুলদানির ভেতরে পকেট থেকে বের করে মিনি ক্যামেরা সেট করে দ্রুত বের হয়ে এলো।
দৌড়ে বের হতেই মুহিত দুজন সিকিউরিটির সাথে ধাক্কা খেলো
তারা এই এরিয়াতে মুহিতকে দেখে অবাকের স্বরে জিজ্ঞেস করলো
―হোয়াটস ইউর রুম নম্বর?
―শো মি ইউর কার্ড।
মুহিত কি করবে ভাবতে লাগলো।আচমকাই নেশাক্ত মানুষের মতো হেলেদুলে অস্পট করে বলে উঠলো
―আম লুকিং ফ—-র আ ওয়াশরুম হেয়ার।
লোক গুলো মুহিতের কথা বিশ্বাস করলো কারন প্রায়ই নেশায় বুদ হয়ে মানুষ এই রেস্ট্রিক্ট্রেড এরিয়াতে ঢুকে পড়ে।
সিকিউরিটি মুহিত কে আর না ঘাটিয়ে ওয়াশরুম যাবার রাস্তা দেখিয়ে দিলো।
মুহিত তাদের থ্যাঙ্কস জানিয়ে দ্রুত সরে আসলো ওই জায়গা থেকে।
বারের বাইরে বেরিয়ে মুহিত আশেপাশে দৃষ্টি বোলালো।
সন্দেহ জনক কিছুই চোখে পড়লো না।এর পর সাবধানে হোটেলের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো মুহিত।
―――――
ঘরে বসে থেকে ভালো লাগছে না আশরাফ চৌধুরীর।নিজের প্রিয় হুইস্কিও নেই সেই কক্ষে।
উশখুশ করে উঠে দাঁড়ালেন আশরাফ চৌধুরী।দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন বারের অভিমুখে।
*****
রুমে আসতেই সৌম্য আর আদ্রিয়ান চেপে ধরলো মুহিতকে।তাদের না জানিয়ে কোথায় গিয়েছিলো সে?
এখানে একা একা রিস্ক নেয়া ঠিক হবে না।কারন আগের বার আশরাফ চৌধুরী মুহিতকে বড় ধরনের ক্ষতি পৌঁছিয়ে ছিলো।
সকল কে থামিয়ে মুহিত বলে উঠলো
―জাল ফেলে এলাম যাতে সময় করে মাছ টা তুলে নিতে পারি।
এর পর হাতের ফোন বের করে ক্যামেরার অপশন ঠিক করতে স্ক্রিনে প্রদর্শিত হলো কটেজের করিডোর।
তিন জনেই স্ক্রিনের উপর হামলে পড়লো।
কীয়তক্ষন বাদেই দেখা গেলো অতিকাঙ্খিত সেই ব্যাক্তিকে।
চকচকে হলো সৌম্য আর আদ্রিয়ান এর চোখ।
কপাল কুচকালো মুহিত।
―ইটজ নট ফোর জিরো ফোর?
ইটজ ফোর জিরো জিরো!
#চলবে।