#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_১১
#সারিকা_হোসাইন
―তোমাকে কেনো এখানে তুলে এনেছি জানো?
প্রশ্নটি করে আহিয়ান স্বর্গের পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।
স্বর্গের কোনো ভাবান্তর না দেখে মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো আহিয়ান
―আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই স্বর্গ।
কথাটি শোনা মাত্র স্বর্গের রাগের পারদ তরতর করে মাত্রা ছাড়ালো কিন্তু মুখে কিছুই প্রকাশ করলো না।
আহিয়ান আয়েশ করে স্বর্গের পাশে বসে আবার বলতে শুরু করলো
―আমি তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের (এ এফ এম সি) বেলকনিতে।
মুখে লাজুকতার ভাব নিয়ে আহিয়ান স্বর্গের পানে চাইলো
―তুমি দূতলার একটি বেলকনিতে কিছু মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলে।আমি ওইদিন বাবার সাথে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম কিছু কাজে।
কিন্তু তোমাকে দেখার পর আমি কিছুতেই সেই কাজে আর মনোযোগ দিতে পারিনি। তোমার হাসি মাখা মুখটাই শুধু আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
তোমার বড় বড় চোখের পাপড়ি ঝাপ্টানি আমার হৃদয় কে করেছে উত্তাল।সেদিন ই আমি তোমার মাঝে আমার সর্বনাশ দেখেছি মিস স্বর্গ।
তুমি তো জানো,
চাইলেই যেই কেউ ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না।
“কিন্তু আমি বিভিন্ন অফিসার এর সহযোগিতা নিয়ে ঠিক তোমাকে দেখে গিয়েছি।”
“তোমাকে দেখার লোভ আমার এজন্মে শেষ হবে না স্বর্গ।”
―”চাইলে আমার সামনে এসে এসব বলতে পারতেন আপনি!এমন কাপুরুষের মতোন তুলে এনেছেন কেনো?
ঝাঁঝালো স্বরে বলে উঠলো স্বর্গ।”
আহিয়ান মাথা নিচু করে ফুস করে নিঃশ্বাস নিলো ।তারপর একটু থেমে আবার বললো
―কাপুরুষ ই বলতে পারো।
“আসলে প্রেম নিবেদন,ভালোবাসার গপ্পো বলে মেয়ে পটানো এসব আমার ধাঁচে নেই।”
“আমি শুধু জানি যেটা আমার চোখে পড়েছে সেটা আমার লাগবে এবং সেটা শুধু আমারই।”
তোমার জন্য ওই দু টাকার মেজর মুহিতের চোখে আমি মুগ্ধতা দেখেছি।কতো বড় সাহস তার ,
―আমার সামনে থেকে তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়
বলেই রাগ সংবরন করতে না পেরে পাশে থাকা আয়নায় ঘুষি মারে আহিয়ান।
পেশীবহুল হাতের ঘুষিতে ঝনঝন শব্দে ভেঙে যায় দেয়ালে থাকা আয়না।
স্বর্গ চমকে উঠে কিন্তু একদম ভড়কায় না।
আহিয়ান এর হাত কেটে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত ঝরছে।
একজন ডক্টর হিসেবে স্বর্গের খারাপ লাগা স্বাভাবিক।কিন্তু তার লাগছে না।
এই লোকের কারনে তার বাবা,মা,ভাই সবাই অবশ্যই সাফার করছে।
আর মুহিত?
সে কী আমাকে খুঁজবে?নাকি অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবে?
★★★
পোর্ট মাস্টার এর কাছে ডেড সৌল এর নাম শুনে মুহিত আর সৌম্যের চোখ চকচক করে উঠে।তার মানে তারা সঠিক জায়গাতেই এসেছে।
পরক্ষনেই তাদের আশার প্রদীপ নিভে যায় যখন পোর্ট মাস্টার জানায় আগামী তিন মাসের মধ্যে এই জাহাজ এই ঘাটে নোঙর ফেলবে না।
বলেই শিডিউল বইটি মেজর নিকোলাস এর হাতে দিলো বৃদ্ধ ।
নিকোলাস আর ভলতেয়ার সব গুলো কাগজ উল্টে পাল্টে দেখে মুহিত কে ইংলিশে সব বুঝিয়ে দিলো।
মুহিতের মনে আগ্নেয়গিরির হুতাশন জ্বলে উঠলো।যেই আশা বুকে বেঁধে এখানে এসেছে তবে কি তা পূরণ না করে ব্যার্থ হয়ে ফিরে যেতে হবে?
কেনো মুহিত সব জেনেও স্বর্গের জন্য নাফিজ মাহমুদ কে বলে তখন থেকেই দেহ রক্ষীর ব্যবস্থা করলো না।
মুহিত রাগে,কষ্টে নিজের উপর অভিমান করে জমে থাকা বরফের স্তুপে অনবরত পাঞ্চ করতে থাকলো।
সৌম্য দৌড়ে গিয়ে মুহিত কে কোনো ভাবে ম্যানেজ করলো।বিধস্ত মুহিত শরীরের ভার ছেড়ে দিলো সৌম্যের উপর।
আর কি কি হারালে নিয়তি তাকে ক্ষমা করবে?
প্রবীণ আরো কিছু কাগজ ঘেটে আরেকটি পোর্ট সম্পর্কে ওদের জানালো।
―ইউ ক্যান চেক দ্যাট পোর্ট
বলে একটা কাগজ নিকোলাস এর হাতে দিলেন।
বৃদ্ধ কে থ্যাঙ্কস জানিয়ে তারা দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলো।
●●●
পেরিয়ে গেছে বারো দিন।এখনো স্বর্গের কোনো পাত্তা পাওয়া যায়নি।সমস্ত নিউজ পোর্টাল এ ঘুরছে বড় বড় হেডলাইন
―মেজর জেনারেল নাফিজ মাহমুদ এর কন্যাকে অপহরণ করা হয়েছে।
কোনো প্রমাণ ছাড়া আহিয়ান এর ছবিও কেউ পোস্ট করতে পারছে না।
দুইদিন ধরে নাফিজ মাহমুদ মুহিতের সাথে যোগাযোগ করেও ব্যার্থ হচ্ছেন।মুহিতকে লাইনে পাওয়া যাচ্ছে না।চিন্তায় মাথা টনটনে ব্যাথা করছে।
কি থেকে কি হয়ে গেলো এক নিমিষেই !
হায় মাবুদ সহায় হও!
তনুজা ঠেলে ঠেলে কোনোমতে নিজেকে চালাচ্ছেন।তার বিশ্বাস একদিন না একদিন হয় ভালো খবর আসবে না হয় মন্দ।
যখন নাফিজ মাহমুদ বিদেশে মিশনে যেতেন তনুজা কে বুঝাতেন―
” আমি আর না ফিরলে বুঝবে আমি ওপারে চলে গিয়েছি”।
“তোমাকে শক্ত হতে হবে তনুজা।তুমি একজন দেশ রক্ষকের স্ত্রী।তোমার মন দুর্বল হলে কিভাবে চলবে তনুজা?”
প্রথম প্রথম তনুজা অনেক ভয়ে ভয়ে থাকতো
নাফিজ ফিরবে তো?
কিন্তু ধীরে ধীরে তনুজা সেই ভয়কে জয় করে মন কে কঠিন করতে পেরেছে।
তবে আজ কেনো সেই কঠিন মনে আবার ভয় এসে হানা দিচ্ছে?
মাতৃ হৃদয় বলেই কি এমন?
আর ভাবতে পারেনা তনুজা।
স্বর্গের নিষ্পাপ মুখটা মনে পড়তেই কপোল বেয়ে ভারী বর্ষণ নেমে আসে।
সুখের দুস্টুমি কমে গিয়েছে।সেও গুটিয়ে রয়েছে,অনলাইনে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে কিভাবে তার বোন কে উদ্ধার করতে পারবে?
সুখ মনে মনে প্রমিস করেছে আপু ফিরলে আর কখনো অকারনে জ্বালাবো না।
খেপাবো ও না।ভালো ছেলে হয়ে বোনের কেয়ার করবো।
মিসেস তারিন এখনো কিছুই জানেন না।তাকে জানতে দেয়া হয় না।অসুস্থ মানুষ ঘর থেকে বেশি বের ও হন না।এজন্য তিনি এখনো নিশ্চিন্তে একটু আরামে আছেন।
***
পোর্ট মাস্টারের কথা অনুযায়ী সমস্ত খোঁজ খবর নিয়ে তারা এখন উপস্থিত হয়েছে ―
নভোরোসিয়স্ক বন্দরে।
এই বন্দরটি বরফ মুক্ত হওয়ায় বেশিরভাগ জাহাজ এখানে অবতরণ করে।বন্দরটি আকারে বিশাল বড়।
শত শত জাহাজের ভীড়ে কোথায় পাবে সেই ডেড সৌল??
রাশিয়ান আর্মিদের অত্যন্ত সমীহ করে চলে এই দেশের জনগণ।চাইলেই তারা ক্ষমতার ব্যাবহার করে যা খুশি তাই করতে পারে।
পোর্টে আর্মি জিপ দেখেই কিছু পোর্ট অথরিটি দৌড়ে কাছে আসলো এবং অত্যন্ত সম্মানের সহিত জানতে চাইলো
কি প্রয়োজন?
নিকোলাস মুহিতের ট্যাব নিয়ে জাহাজের ছবি বের করে সবাইকে দেখিয়ে সবিস্তারে কাহিনী খুলে বললো।
পোর্ট মাস্টার সকল জাহাজের সিডিউল চেক করে একটি ঘাট দেখিয়ে নির্দেশ করলেন যে―
আগামী মাসের নয় তারিখে জাহাজটি এখানে নোঙর করবে।
মুহিতের নিভে যাওয়া আশার প্রদীপ দপ করে জ্বলে উঠলো।
গ্রাউন্ড ফোর্সের জেনালের এর সাথে কথা বলে নৌবাহিনীর জাহাজের সাথে কথা বললেই কাজ অর্ধেক কমপ্লিট।
এরই মাঝে সন্দেহ জনক দুটি ছেলেকে পাওয়া গেলো,হঠাৎই তারা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলো।
টহল রত দুজন সোলজার দক্ষতার সহিত ছেলে দুটো কে ধরে ফেললো এবং গাড়িতে করে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে এলো।
ছেলে দুটোকে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে আটকে রাখা হলো।
সকাল হলে তাদের বিষয়ে খোঁজ লাগিয়ে একশন নিবে।
~~~স্বর্গ চতুরতার সহিত বিদেশি মেয়েটাকে বোকা বানিয়ে আহিয়ান সম্পর্কে অনেক তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে।
স্বর্গ মেয়েটিকে বলেছে আমি আহিয়ানের হবু স্ত্রী।তুমি যদি তার কি পছন্দ কি অপছন্দ তার দুর্বলতা কিসে?এসব না জানাও আমাকে তাহলে আহিয়ানের কাছে তোমার নামে উল্টা পাল্টা বলে সমুদ্রের তল দেশে সলিল সমাধি দিয়ে দেব।
সুন্দরী মেয়ে দের সঙ্গ আহিয়ানের মারাত্মক পছন্দ।এই একটি বিষয়েই সে দুর্বল।সাথে নেশাপানি।
এই কুলকিনারা হীন সমুদ্র থেকে কোনো প্রকার চতুরতা করেও স্বর্গ ফিরতে পারবে না।যোগাযোগ এর ও কোনো মাধ্যম নেই।যা আছে তা হচ্ছে ওয়াকিটকি।
নিজের এমন দুর্ভাগ্য দেখে আনমনে ঠোঁট কামড়ে কেঁদে উঠলো স্বর্গ।
◆◆
আশরাফ চৌধুরী এই নিয়ে ছাপ্পান্ন বার তার ছেলের নম্বরে কল করেছেন।বরাবরই সংযোগ বিচ্ছিন্ন।রাগে বিতৃষ্ণায় মুখে বাজে গালি এসে গেলো তার।
মনে মনে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তিনি।
তার এই ছেলের জন্য যদি নিজের ধীরে ধীরে গড়া সম্রাজ্যের সামান্য টুকু ফাটল ধরে তাহলে তিনি তার ছেলেকে জ্যন্ত পুতে ফেলবেন।
****
থেমে নেই পিউ।নিজের ডাক্তারি ডিউটি পালনের পাশাপাশি সে তার বাবাকে বেশ ভালো নজরদারি তে রেখেছে।এমন ভাবে সকল কাজ করে বেড়াচ্ছে পিউ যেনো তার বাবা কিচ্ছুটি টের না পায়।
নাসের হায়দার এর বড্ড কু অভ্যাস হচ্ছে মদ খেতে খেতে মাতাল হয়ে ধ্যান জ্ঞান হারানো।
সেই সুযোগ টাই লুফে নিলো পিউ।
ঘড়িতে সময় রাত বারোটা বেজে ত্রিশ মিনিট।
নাসের হায়দার নেশায় চূর হয়ে এলোমেলো ভাবে বিছানায় পরে রয়েছেন।
পা টিপে টিপে পিউ নাসের হায়দার এর শয়নকক্ষে প্রবেশ করলো।সন্তপর্নে আশেপাশে তাকিয়ে তার বাবার ফোনের অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
হঠাৎই ফ্লোরে পায়ের ধাক্কা লেগে খালি হয়ে যাওয়া মদের বোতল গড়গড় শব্দ তুললো।
ভয়ে পিউ আলমারির সাথে সেটে রইলো।
কীয়তক্ষন অপেক্ষা করার পর ও যখন নাসের হায়দার এর কোনো সাড়া শব্দ পেলো না তখন পিউ পা টিপে টিপে বিছানার কাছে আসলো।
ঐতো উনার পিঠের নিচেই ফোনটা দেখা যাচ্ছে।যেকোনো প্রকারে ফোনটা পিউয়ের হাতে চাই।
নিজের কথা চিন্তা না করেই পিউ ফোনের দিকে হাত বাড়ালো,নাসের হায়দার কে কিচ্ছুটি টের না পেতে দিয়ে বের করে আনলো মোবাইল ফোন।
আনন্দে পিউ এর ঠোঁটে সূক্ষ্ণ হাসি ফুটে উঠলো।
বিপত্তি বাধলো লক খুলতে গিয়ে।ফিঙ্গার নয় কোড প্রেস করে লক খুলতে হবে।
জানা অজানা সকল নম্বর দিয়ে ট্রাই করে ব্যার্থ হলো পিউ।
হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।যেভাবেই হোক কোড জানতে হবে।
মাথায় খেলে গেলো দারুন বুদ্ধি।
“কালই একবার ল্যাবে যেতে হবে।প্রধান কাজ হচ্ছে ফিঙ্গার প্রিন্ট পাউডার কালেক্ট করা।
মোবাইলটা পূর্বের জায়গায় রেখে ধীরে ধীরে প্রস্থান নিলো পিউ।
■■
কেটে গিয়েছে চুয়াল্লিশ টি দিন।কারো চোখে ঘুম নেই।কবে জাহাজ কিনারায় ভিড়বে,কবে উদ্ধার হবে স্বর্গ?
স্বর্গকে ওই দিনের পর আহিয়ান একটা আচড় ও লাগতে দেয়নি।যখন স্বর্গের উপর রাগ হয়েছে সে নিজেকে নিজে আঘাত করেছে।
আহিয়ান স্বর্গকে বোঝাতে চায় যে,
“সে অমানুষ হলেও তার ভালোবাসা নিখাদ।”
মুহিত কে টেক্কা দিয়ে স্বর্গকে দূর দেশে নিয়ে এসেছে এর চাইতে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে?
এখানে কোনো আর্মি পুলিশ কিছুই করতে পারবে না তাকে।কে দিবে তার নামে প্রশাসনের কাছে বিচার?
কেউ কি ঘূর্ণাক্ষরে টের পেয়েছে সে কোথায় যাবে বা যাচ্ছে?
রাশিয়া পৌঁছেই স্বর্গকে যেভাবেই হোক বিয়ে করে ফেলতে হবে।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওকে আমার সাথেই থাকতে হবে।
আমি না পেলে কেউ ওকে পাবে না।
দরকার হলে স্বর্গকে টুকরো টুকরো করে সমুদ্রে ফেলে দিবে আহিয়ান।
যেই জিনিস আহিয়ান চৌধুরী চুজ করেছে সেই জিনিসে আর কারো অধিকার নেই।
স্বয়ং নাফিজ মাহমুদ এর ও না।
――――――――――
পোর্ট মাস্টারের দেয়া ডেট শেষ হয়ে গিয়েছে আরো দুদিন আগে।মুহিত দের ফিরে যাবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মুহিত কোনো কাকুতি মিনতি করেও কিছু করতে পারেনি।
যাবার আগে শেষ বারের মতো মুহিত আজকে আবার পোর্টে এসেছে।আজকে সাথে সৌম্য আসেনি।সৌম্য ফিরে যাবার সমস্ত কিছু রেডি করছে।
হঠাৎ ই জাহাজ কিনারায় ভিড়ার শব্দ পেলো।
বিশাল বড় পোর্ট ,এক সাথে অনেক গুলো জাহাজ তীরে ভিড়ছে।যাত্রী,মালামাল, খদ্দের এর ভিড় সব মিলিয়ে এক গোলক ধাঁধার মধ্যে পড়ে গেলো মুহিত।
জেটি ঘাট নিমিষেই লোকে লোকারণ্য হয়ে গেলো।
স্বর্গের চারপাশে আহিয়ান কয়েকজন রুশ মেয়ে নিয়োজিত করে দিলো।আর কঠিন হুঁশিয়ারি জারি করলো।
পোর্টে স্বর্গ কোনোরূপ ঝামেলা করলে ওকে শেষ করবে তো করবেই সাথে নিজের বাবা ,মা ,ভাইকেও তার দাম চুকাতে হবে।
ভয়ে ,ঘৃণায় স্বর্গ নিষ্প্রাণ হয়ে রইলো।
এতো এতো ভিড়ের মাঝে হঠাৎই মুহিতের বুকের বাঁ পাশ টা ধক ধক করে উঠলো।
এমনটা মুহিতের আগেও হয়েছে,যখন স্বর্গ তার আশেপাশে থেকেছে।তবে আজ কেনো এমন পরিস্থিতিতে ধারকান বেড়ে যাচ্ছে?
আনমনে মেয়ে গুলোর ভিড়ে হাঁটছে স্বর্গ।নিজেকে সে সপে দিবে আহিয়ান এর কাছে।এই বিদেশ বিভুঁইয়ে কেউ তাকে রক্ষা করতে আসবে না।নিজেকে কোরবান দিয়ে যদি বাবা,মা,ভাইকে বাঁচিয়ে রাখা যায় ক্ষতি কি?
চোখের জ্বল মুছে সামনের তাকিয়ে হাঁটা ধরলো স্বর্গ।
হঠাৎই পরিচিত পারফিউম এর ঘ্রাণ নাকে এসে লাগলো স্বর্গের।
মুহিতের কথা মনে পড়তেই দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো মোটা মোটা অশ্রু দানা।
“আপনাকে আমার ভালোবাসার কথাটা জানানো হলো না মেজর।”আমি আপনাকে ভালোবাসি মেজর মুহিত ওয়াসিফ।ভালোবাসি।
আহিয়ান চোখ মুখ ঢেকে দ্রুত বেগে পোর্ট থেকে বেরিয়ে গেলো।পোর্ট অথরিটির সাথে কিছু কাজ আছে,সেগুলো কমপ্লিট করে দ্রুত বের হতে হবে এখান থেকে।
যাবার আগে মেয়ে গুলোকে নির্দেশ দিয়ে গেলো কোথায় কিভাবে স্বর্গ কে পৌঁছাতে হবে।
শীতের তীব্রতায় মুহিত নিজেকে এমন ভাবে ঢেকে রেখেছে শুধু চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
মুহিত দিকবিদিক শূন্য হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।কোনো ভাবেই হৃদপিন্ডের লাফানো থামছে না।বুকে সূক্ষ্ণ ব্যাথার আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এই স্পন্দন।
এতো এতো মানুষের ভিড়ে হঠাৎ ই স্বর্গের চোখ যায় ডিপ ব্রাউন ট্রেঞ্চ কোট পরিহিত এক যুবকের দিকে।
চেহারা দৃশ্যমান নয়।গ্রে কালারের মাফলারে সে মুখ গলা ঢেকে রেখেছে শুধু চোখ গুলো বের করা।
পরনে হালকা ব্রাউন সোয়েটার,ব্ল্যাক জিন্স আর বুটস।
এই চোখের দৃষ্টি স্বর্গের বহু চেনা।সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জল রাশির মতো অক্ষিদ্বয় এর মালিক তার মনের অনেক কাছে বাস করে।এই চোখের গভীরে সে তো কবেই ডুবে মরেছে।শুধু চোখের মালিক কে জানানো হয়নি ।
পরক্ষণেই সে মনকে বুঝ দেয়
―সে এখানে কিভাবে আসবে?”
“সবই তোর মনের ভ্রান্ত ধারণা স্বর্গ।
“তাকে পাবার লোভ আর করিস না।”
অবাধ্য মনের নিষেধ অমান্য করে ―
মরীচিকার পিছনে পিপাসার্ত বেদুইন যেভাবে ছোটে সেই ভাবে স্বর্গের ও ওই যুবক টির কাছে যাবার জন্য অন্তর পিপাসার্ত হয়ে উঠলো।
মেয়ে গুলোর চোখ ফাঁকি দিয়ে যুবকটির কাছ ঘেষে দাঁড়ালো এবং হাত চেপে ধরলো স্বর্গ।
আকস্মিক কারো হাতের স্পর্শ পেতেই চমকে উঠে মুহিত।
সামনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অবাধ্য নোনা জ্বলের ধারা।
#চলবে
#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#বোনাস_পর্ব
#সারিকা_হোসাইন
■■
এবাক্যান, রাশিয়া
ঘড়িতে সময় রাত এগারোটা বেজে ত্রিশ মিনিট, যা বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী তিন ঘন্টা পিছিয়ে।
চারপাশে পাকা গম ক্ষেতের বিস্তার, গমের শীষের উপর কুয়াশার আস্তরণ মাকড়শার জালের মতোন মনে হচ্ছে।উত্তরীয় শৈত প্রবাহ হাত পা জমিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট।তাপমাত্রা সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশায় আকাশের চাঁদটা ঝাপসা হয়ে মৃদু আলো ছড়াচ্ছে।
হাওয়ার দাপটে গম ক্ষেতের উইন্ডমিল গুলো ক্যাচ ক্যাচ শব্দ তুলে ঘূর্ণায়মান হচ্ছে।চারপাশ নিস্তব্ধ, শুনশান।মাঝে মাঝে এবাক্যান নদীর তীর থেকে বাইসনের হাড় হিম করা হুংকার ভেসে আসছে।
গম ক্ষেতের জমি থেকে সামান্য উঁচু ভূমিতে ছোট একটি দূতলা বিশিষ্ট কাঠের বাড়ি দেখা যাচ্ছে,সেখানে জ্বলছে মৃদু হলুদ আলো যুক্ত লাইট।বাড়িটির পাহারায় রয়েছে রাইফেল হাতে সাতজন তাগড়া জোয়ান ছেলে।প্রত্যেকের উচ্চতা গুনে গুনে ছয় ফিট সাথে জিম করা মাসেল যুক্ত বডি।
এদের একেক জনের ঘুষির ওজন কমপক্ষে আড়াইশ থেকে তিনশত পাউন্ড হবে।এদের সামনে কোনো সাধারণ মানুষ শক্তিতে টিকতে পারবে না।
বাড়িটির চারপাশ ঘিরে ফেলেছে রাশিয়ান গ্রাউন্ড ফোর্স।সকলের হাতে একটি করে “একে ফোরটি সেভেন” রাইফেল রয়েছে যা বাড়িটির দিকে তাক করা। শুধু অপেক্ষা মেজরের সিগন্যাল এর।
বিয়ার ক্রলিং করে সৌম্য মুহিতের নিকট এগিয়ে এলো।
–”স্যার পজিশন নেয়া হয়ে গেছে,আপনি সিগন্যাল দিলেই শ্যুট করবো।
মুহিত হাতের সাহায্যে ইশারা দিয়ে সৌম্য কে পজিশন হোল্ড করতে বললো।
বাড়িটির চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পঞ্চাশ জন আর্মি।তাদের লিডার মেজর নিকোলাস।
প্রত্যেকের কানে একটি করে ব্লুটুথ ডিভাইস।
মুহিতের কাছ থেকে সিগন্যাল পেলেই সরাসরি এট্যাক করবে।
কিন্তু মুহিত এখনো কেনো সিগন্যাল দিচ্ছে না ?
“এম কে ফোর” রাইফেলটি কে রাইফেল স্ট্যান্ড এর উপর রেখে সিক্স এক্স স্কোপ টিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ভিতরের অবস্থা দেখে নিলো মুহিত।
এই রাইফেলটি মুহিত খুব ভালো চালাতে পারে।এক সাথে ত্রিশ টি গুলি লোড করা যায়,এবং একটানা শ্যুট করা যায়।
শ্যুটিং রেঞ্জ ও যথেষ্ট ভালো।
মুহিত এখন যেই পজিশনে আছে ,শত্রু পক্ষ তার থেকে পাঁচশত পঁচাত্তর মিটার দূরে।
এই রাইফেলের সহায়তায় সে ছয়শত মিটার রেঞ্জের ভেতর গুলি ছুড়তে পারবে।
প্রথম শ্যুটেই টার্গেট বরাবর পৌঁছানোর রেকর্ড আছে মুহিতের।এজন্য একবার সে সেরা গোলন্দাজ এর পুরস্কার ও পেয়েছিলো।
জীবনে খুব কম টার্গেট ই মিস হয়েছে মুহিতের হাত দিয়ে।
তবে আজ কেনো মনে এতো ভয়,এতো অনিশ্চয়তা নিজের উপর?
মানুষটি তার একান্ত ব্যাক্তিগত বলেই কি মনে এতো দ্বিধা,এতো ভয়?
―――――――
বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ঘড়িতে বরাবর একটা বেজে উঠলো।
আর্মি জেনারেল এর ক্যাবিনে বসে আছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, নাফিজ মাহমুদ,মেজর আদ্রিয়ান আহিয়াজ,দুজন ক্যাপ্টেন,দুজন লেফটেন্যান্ট।
মুহিত সকালে তাদের ইনফর্ম করেছে স্বর্গ কে রাশিয়া তে আনা হয়েছে,এবং কোথায় রাখা হয়েছে মুহিত তা জানে।আজ রাতেই মুহিত অপারেশন চালাবে।
প্রত্যেকে অধীর আগ্রহে বসে আছে কখন এই মিশন শেষ হবে।
মুহিত কে ওর্ডার দেয়া হয়েছে আহিয়ান কে কোনো প্রকার ক্ষতি পৌঁছানো ছাড়া দেশে ফিরিয়ে আনা।কিন্তু মিশন চলাকালে গুলি লাগলে সেটা ভিন্ন কথা।
মুহিত কি আর্মি জেনারেল এর আদেশ পালন করবে এবার?
নামাজে বসে আল্লাহর দরবারে মোনাজাতে অঝোর ধারায় কাঁদছেন তনুজা।
―ইয়া রাব্বুল আলামীন আমি তো কখনো আমার নিজের জন্য তোমার কাছে কিছু চাইনি।
নিজের স্বামী সন্তানের মঙ্গলের জন্য দোয়া চাওয়া কি অন্যায়?
―সন্তানের জন্য নাকি তোমার দরবারে দোয়া সমূহ দ্রুত কবুল হয়।আমি এক অসহায় মা আমার সন্তানের সুরক্ষার জন্য দোয়া ভিক্ষা চাচ্ছি।
“আমার বাচ্চা টাকে সহি সালামতে কোনো চোট পৌঁছানো ছাড়া আমার বুকে ফিরিয়ে দাও।”
গভীর রাত কিন্তু স্বর্গের চোখে কোনো ঘুম নেই।
স্বর্গ ঠিকই ছিলো, স্বর্গের মন মিথ্যে বলে নি।পেয়েছে সে এই অপরিচিত দেশে তার চেনা পরিচিত একান্ত ব্যাক্তিগত পুরুষটির স্পর্শ।
―কিন্তু সেই স্পর্শ এক মিনিট ও স্থায়ী হয় নি।
মুহিতের চোখে স্বর্গ দেখেছে তার জন্য কাতরতা।
স্বর্গ যখন অচেনা যুবক মনে করেও মুহিত ভেবে হাত চেপে ধরেছে এই আশায় যে,
―আল্লাহ আমার জীবনে যদি কোনো দিন আমি একটা হলেও ভালো কাজ করে থাকি,সেই কাজের উসিলায় এই ছেলেটিকে ই মেজর মুহিত বানিয়ে দাও।
মৃত্যুর আগে হলেও আমি একবার তাকে আমার হৃদয়ে তার জন্য জমানো অভিব্যক্তি গুলো প্রকাশ করতে চাই।
অচেনা যুবক ভেবেও স্বর্গ সেই ছেলেটির হাত চেপে ধরে বলেছিলো
―আমি জানিনা আপনি কে?তবে আপনাকে আমার বহু জনমের চেনা পরিচিত কাউকে মনে হচ্ছে।আপনার চোখ আমি অনন্ত কাল ধরে চিনি। আপনার শরীরের এই ঘ্রাণ আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে।
জানিনা আমাদের আর কখনো দেখা হবে কি না।আমি আর কখনো আপনাকে পাবো না মেজর।আহিয়ান আমাকে আপনার থেকে আলাদা করে দেবার জন্যই এখানে তুলে এনেছে।
বলেই ফুঁপিয়ে উঠলো স্বর্গ।
কান্না মিশ্রিত কন্ঠে আবার বলে উঠলো_
―””মেজর মুহিত আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।””
―এই হৃদয়ে শুধু আপনারই বসবাস।
আমার হৃদপিণ্ডের প্রতিটি
স্পন্দন আপনার নামে উৎস্বর্গ করলাম মেজর।
কথা গুলো শুনে মুহিতের হৃদয়ে যেনো রক্তক্ষরণ শুরু হলো।এভাবে সে স্বর্গের দেখা পাবে ভাবতেও পারেনি।
এ কদিনে মেয়েটা শুকিয়ে পুতুলের ন্যায় হয়ে গিয়েছে ,উজ্জ্বল হালুদাভ মুখের অবয়ব পাংশুবর্ণ ধারণ করেছে।মলিনতায় ঢেকে গেছে সকল চাঞ্চল্যতা।
এ কোন স্বর্গকে দেখছে মুহিত?
স্বর্গের এহেন দুর্দশা নিজ চোখে দেখতে পেয়ে মুহিতের চোখ থেকে আপনা আপনি গড়িয়ে পড়লো অশ্রু কনা।
সে স্বর্গকে বুকে জড়িয়ে ধরার আগেই মেয়ে গুলো স্বর্গের কোমরের কাছে পিস্তল চেপে ভিড়ের ভেতর ঠেলে নিয়ে চলে যায়।
মেয়েগুলোকে কোনো গ্যাঙ এর সদস্য মনে হয়েছে মুহিতের।
প্রত্যেকের হাতে একটি করে ট্যাটু ছিলো, সেইম ডিজাইনের।
ট্যাটু গুলো মুহিত আগেও একবার দেখেছে।
কিন্তু কোথায় দেখেছে এখন মনে করার সময় নয়।
স্বর্গ করুণ চেহারায় যতক্ষন পর্যন্ত মুহিত কে দেখা গিয়েছে ততক্ষণ দেখে নিয়েছে প্রাণ ভরে।
এতো কাছে পেয়েও মুহিত স্বর্গকে হারিয়ে ফেললো ভাবতেই ভেতর থেকে চিৎকার করে কান্না আসলো।
ছেলে মানুষের যখন তখন কান্না করাও বেমানান।
কান্না গুলো মুহিত নিমিষেই গিলে ফেললো।
ক্রোধে মুহিতের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো।ঘাড়ের রগ গুলো ফুলে উঠলো।চোখ দুটো আগ্নেয়গিরির লাভার মতো লাল বর্ণ ধারণ করলো।
দ্রুত দৌড়ে মেয়ে গুলোকে ফলো করার চেষ্টা করলো।কিন্তু আর খুঁজে পেলো না।
মুহিত দিকবিদিক শূন্য হয়ে জিপের কাছে এসে জিপ স্টার্ট দিয়ে সোজা ক্যম্পে পৌঁছে গেলো।
সেখানে গিয়ে দেখতে পেলো ধরে আনা ছেলে গুলো সম্পর্কে কোনো খারাপ রেকর্ড পাওয়া যায়নি বলে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
ছেলে গুলো বন্দরের মানুষের মাল বহন করে জীবিকা নির্বাহ করে।
ছেলে গুলো ক্যাম্প ক্রস করবে এমন সময় মুহিতের নজর যায় পাশে থাকা ছেলেটির হাতের দিকে।তার হাতেও ঐ মেয়ে গুলোর মতো সেইম ট্যাটু।
ট্যাটুর রহস্য বুঝতে ন্যানো সেকেন্ড সময় ও লাগলো না চৌকষ বুদ্ধিদীপ্ত মেজরের।
কোমরে গুঁজে রাখা রিভলবার টি দ্রুত বের করে ছেলেটির হাটু বরাবর তাক করে শ্যুট করে দিলো।
অতর্কিত হামলায় পাশে থাকা ছেলেটি হুড়মুড়িয়ে কেঁদে উঠলো।
গুলি আর চিৎকার এর শব্দে নিকোলাস দৌড়ে এসে কারন জিজ্ঞেস করলে মুহিত সব খুলে বলে তাকে।
সাথে সাথেই ছেলে দুটোকে আবার বন্দী করে নেয় আর্মি ফোর্স।
তাদের উপর রিমান্ড জারি করা হয়।
টর্চার সেলের ভেতর ঢুকিয়ে নানান পাশবিক নির্যাতন করা হলো ছেলে দুটো কে।
এক দিকে গুলি খেয়ে পায়ে জান চলে যাবার মতো ব্যথা,অন্যদিকে এমন টর্চার ,
সহ্য করতে না পেরে হড়বড় করে সব বলে দিলো ছেলে দুটো।
◆◆
আহিয়ান চৌধুরী আহির,রাশিয়াতে গড়ে তুলেছে পাপের সাম্রাজ্য।সুন্দরী মেয়েদের ধরে এনে চড়া দামে বিক্রি করে দেয় রাশিয়ান পতিতালয়ে।স্বদেশী মেয়েদের চাইতে বাহিরের মেয়েদের প্রতি ইন্টারেস্টেড এ দেশের মানুষ।যৌন কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অমানুষিক নির্যাতন করা হয় মেয়ে গুলোকে।
ব্যাথায় কাতর হয়ে মেয়ে গুলো যখন হাউমাউ করে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে নেশায় বুদ হওয়া অমানুষ গুলো সেগুলো তৃপ্তির সাথে উপভোগ করে।
এটাই এক ধরনের আনন্দ তাদের কাছে।
এই পর্যন্ত আহিয়ান দুই হাজারের ও বেশি এমন মেয়ে এই দেশে নিয়ে এসেছে।ছেলে গুলো বিভিন্ন নিরাপত্তার সাথে কোনো ঝামেলা ছাড়াই আর্মি, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মালবাহী কার্গো তে করে বিভিন্ন শহরে পৌঁছে দেয়।
শুধু তারাই নয়,বড় বড় পোর্ট অফিসার পর্যন্ত আহিয়ানের সাথে যুক্ত।এজন্য দীর্ঘদিন ধরে সে কোনো আইনি ঝামেলা ছাড়াই নির্দ্বিধায় ,বাধাহীন ভাবে কাজ গুলো করে যাচ্ছে।
ছেলে দুটো আরো বললো―
“”নিজের একান্ত মনোরঞ্জন করার জন্য কোনো মেয়ে তুলে আনলে তাদের নিয়ে যায় তার এবাক্যান এর আস্তানায়।””
সারা রাত ফুর্তি করে মেয়ে গুলোকে হয় বিক্রি করে দেয় না হলে জ্যান্ত পুতে ফেলে।
ওই ফার্ম হাউজে তার একটি এলপাইন ড্যাসবার্ষক কুকুর আছে।
দীর্ঘদিন ভোগ করার পর যেই মেয়ে গুলোর প্রতি তার ঘেন্না ধরে যায়,তাদের হত্যা করে ওই কুকুরের খাবারে পরিণত করে।
আহিয়ান সম্পর্কে ছেলেদুটোর মুখে এমন লোমহর্ষক বর্ননা শুনে বুকের ভেতর মুচড়ে উঠে মুহিতের।সে আর এক মুহূর্তের জন্যেও দেরি করতে চায় না।
ছেলে দুটোর থেকে ঠিকানা নিয়ে নিকোলাস চলে যায় জেনারেল এর কাছে।
মিশন স্টার্ট করার জন্য আর্মড ফোর্স দরকার।,অস্র ,গোলাবারুদ, ম্যাগাজিন,এসবের ও প্রয়োজন রয়েছে।অফিসি সকল পেপারে জেনারেল সাইন করলে মিশনে যাবার অনুমতি পাবে।
বাংলাদেশে কল করে মুহিত নাফিজ মাহমুদ কে সব কিছু জানায়।এখানকার ডিপার্টমেন্ট রাশিয়ান আর্মড ডিপার্টমেন্ট এর কাছে অনুরোধ করে সকল ধরনের হেল্প করতে।
অবশেষে হাসি মুখে নিকোলাস সাইন করা পেপার নিয়ে মুহিত কে বলে আমরা আজ রাতেই অপারেশন স্টার্ট করতে পারবো।
________
মুহিত হাতের ইশারায় সকল কে মিশন স্টার্ট করার সিগন্যাল দিলো।
নিকোলাস ব্লুটুথের মাধ্যমে সকল কে ” ওকে” জানিয়ে দিলো এবং হাতের সাইন দিয়ে বুঝালো
“কভার দ্যা এরিয়া””
প্রথম শ্যুট টা মুহিত দ্বার রক্ষী ছেলেটাকে করলো।
হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে ভয়ে বিছানার এক কোনো জড়সড় হয়ে বসে রইলো স্বর্গ।
দ্বিতীয় শ্যুট করার আগেই ওপাশ থেকে ও পাল্টা হামলা এলো।
এরপর শুরু হলো পাল্টা পাল্টি হামলা।
ওপাশের আক্রমণে দুটো সোলজার গুরুতর আহত হলো।
মুহিত গুলি লোড করে আবার রাইফেল তাক করলো।
মিনিটের ব্যাবধানে দুটো ছেলেকে আহত করলো মুহিত।
হাতে গুলি করে দিয়েছে তাদের।বেঁচে থাকবে ঠিকই,কিন্তু গুলি চালাতে পারবে না।
বাকী রইলো আর চার জন।
রাশিয়ান আর্মির রণ দক্ষতার কাছে টিকতে পারলো না ছেলে গুলো।
কাঠের বাড়িটির পিছনের সাইডে চলে গেলো সৌম্য।ভেতরের পরিস্থিতি কি চলছে তা বোঝা দরকার।
আহিয়ান কেবলই ড্রিংকস করার জন্য নিজের ফেভারিট ব্র্যান্ডের বোতল এর ছিপি খুলেছে।এরই মধ্যে এমন গোলাগুলি তার সহ্য হলো না।মুখে বিশ্রী গালি উচ্চারণ করে রিভলবার নিয়ে সে ও বেরিয়ে গেলো।
যেই গম গাছ গুলো ঘন্টা খানেক আগেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো সেগুলো এখন মাটির সাথে মিশে আছে আর্মিদের বুটের চাপে।
সৌম্য মুহিত কে ঘরের ভেতরে ঢুকে যাবার জন্য ইশারা করলো।
বুকে আর কুনুইয়ে ভর দিয়ে ক্রলিং করে মুহিত কাঠের বাড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
বাইরের প্রতিরক্ষার জন্য নিকোলাস আর ভলতেয়ার রয়েছে।
সামনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করা যাবেনা।যেকোনো সময় বিপদ হতে পারে।
ঘরটির পিছনের দিকে একটি জানালা আর বেলকনি আছে তাতে বেয়ে বেয়ে উঠে দু তলায় উঠে যেতে হবে।ভেতরে আহিয়ান আর দুটো মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই।
বাকি সবাই বাহিরে আহিয়ান কে প্রটেক্ট করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে।
হঠাৎই আহিয়ানের চোখ যায় রুমের পিছনের জানালা বরাবর বেলকনির দিকে।
মানুষটি কে বুঝতে এক মিনিট ও সময় লাগলো না আহিয়ানের।
রাগে বোধশক্তি হারালো আহিয়ান।
মুহিতকে মেরে ফেলার জন্য বন্দুক তাক করলো আহিয়ান
―মরার জন্য শেষ পর্যন্ত রাশিয়া পর্যন্ত চলে এলি মেজর?
আহিয়ানের মুখে বাংলায় মেজর সম্বোধন শুনে দিকবিদিক হারিয়ে দৌড়ে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুম থেকে বেরিয়ে এলো স্বর্গ।
মুহিত ধীর পায়ে আহিয়ানের দিকে এগিয়ে আসছে,তার হাতেও আহিয়ানের দিকে তাক করা রাইফেল।
হঠাতই আহিয়ান বিবেক হারিয়ে ট্রিগার চেপে ধরলো।
স্বর্গ আহিয়ান কে বাঁধা দিতে দৌড়ে আহিয়ানের কাছে উপস্থিত হলো।
কিন্তু ভাগ্য আহিয়ানের সহায় হলো না।রিভলবার থেকে কোনো গুলি বের হলো না।কারন গুলি শেষ হয়ে গিয়েছে।
আহিয়ান দ্বিতীয়বার ট্রাই করেও ব্যার্থ হলো।
এবার আহিয়ান পাশে থাকা মদের বোতল টাকে দেয়ালের সাথে বাড়ি দিয়ে ভেঙে সেই ভাঙা অংশ স্বর্গের গলায় ছুঁইয়ে বললো―
” খবর দার মেজর এক পা আগালে তোর প্রেয়সী বাঁচবেনা।””
―হাত উপরে তোল, রাইফেল ফেলে দে ভালোয় ভালোয় মেজর মুহিত।””
সৌম্য উপরে এসে স্বর্গের এহেন অবস্থা দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়।
আহিয়ান আবারো কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে―
―বন্দুক নীচে নামা শালা দু টাকার ক্যাপ্টেন।
ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমে নিকোলাস আর ভলতেয়ার সব শুনতে পাচ্ছিলো কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে বেলকনির দিকে অগ্রসর হয়।
সৌম্য টের পেয়ে বলে উঠে ―”ফ্রিজ।””
এর পর হ্যান্ড সাইনের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয় যে, ভেতরে “এনিমি”।
নিকোলাস কৌশলে আহিয়ানের অবস্থান বুঝে ধীরে ধীরে সরে গিয়ে দূরে গিয়ে পজিশন নেয়।
এদিকে মুহিত স্বর্গকে ছেড়ে দেবার জন্য আহিয়ান কে অনুরোধ করে যাচ্ছে।
―আহিয়ান চৌধুরী ভালোয় ভালোয় আত্মসমর্পণ করুন।হাতে আইন তুলে নেবেন না।আমরা আপনাকে সুস্থ ভাবে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো।আপনাকে ধরে নেয়ার জন্য আমাদের কাছে ওর্ডার আছে।
মেজর জেনারেল এর মেয়েকে ছেড়ে দিন।
আহিয়ান আরো জোরে স্বর্গের গলায় ভাঙা বোতল চেপে ধরছে।তাকে নিতে হলে এই মেয়ের লাশ ক্রস করে তার কাছে আসতে হবে।
হঠাৎই ব্যাথায় স্বর্গ ককিয়ে উঠলো।
আহিয়ান বোতল এতোটাই জোরে চেপে ধরেছে যে তার গলার ভেতরে তা বিধে রক্ত বের হচ্ছে।
সৌম্য আহিয়ান কে বিভিন্ন ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেও কোনো ফল পেলো না।
হঠাৎ ই আহিয়ান দেখতে পেলো তার বুকে অনেক গুলো গান টার্গেট লাইট।
এবার সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো সে মরলে স্বর্গ কে নিয়েই মরবে।
যেই জিনিস আহিয়ানের হাতে এসেছে সেই জিনিস কেউ ফিরিয়ে নিতে পারবে না।
আহিয়ানের ভান্ডার শুধু প্রাপ্তিতে পরিপূর্ণ থাকবে।
মুহিত স্বর্গকে চোখের ইশারায় আহিয়ানের হাতে কামড় বসাতে বললো―
চোখের ইশারা পেতেই স্বর্গ আহিয়ানের হাতে কামড় বসিয়ে দেয়।
রাগে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে স্বর্গের চুলের মুঠি ধরে গালে কষিয়ে এক চড় মেরে দেয় আহিয়ান।
টাল সামলাতে না পেরে স্বর্গ মুহিতের উপর পড়ে যেতে নিলে মুহিত তাকে এক হাতের সাথে আগলে নেয় অন্য হাত দিয়ে গান পয়েন্ট করে।
হঠাৎই দুটো ছেলে রুমের ভেতর প্রবেশ করে মুহিত আর সৌম্যকে বন্দুক তাক করে।
বাইরে থেকে অনবরত গুলি ছুড়তে থাকে নিকোলাস এর টিম।
হঠাৎই পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে যায়।
মুহিত হেচকা টানে স্বর্গকে কোলে তুলে নেয়।
স্বর্গ দুই হাতে মুহিতের গলা জড়িয়ে ধরে,দুই পা দিয়ে কোমড় জড়িয়ে মুহিতের বুকের সাথে লেপ্টে রইলো ছোট বাচ্চাদের মতো।
হঠাৎই মুহিত উৎফুল্ল কন্ঠে বলে উঠলো―
―স্বর্গ যা কিছুই হয়ে যাক আমাকে এভাবেই ধরে থাকবেন।নড়বেন না।
ঠিক আছে?
স্বর্গ বিড়াল ছানার মতো গুটিয়ে রইলো মুহিতের কাঁধে মাথা রেখে।
মুহিত এবার দুই হাতে রাইফেল ধরে সৌম্যকে ওর্ডার দিলো
― ক্যাপ্টেন ,কভার মি।
ছেলে দুটো কে নিকোলাস আর ভলতেয়ার গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিলো।
অসহায় এর মতো পরে রইলো আহিয়ান একা।
সিঁড়ি বেয়ে সতর্কতার সহিত বন্দুক তাক করতে করতে নীচে নেমে এলো মুহিত।
ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমে নিকোলাস কে জানালো―
―মিশন সাকসেস।
―এরেস্ট হিম।
#চলবে।