#তোমার_জন্য_সব -২৮
✍️ #রেহানা_পুতুল
খেয়া চমক খেলো। মুখাবয়ব বিকৃত করে বলল,
“হোয়াট?”
“চোর যখন চুরি করে, সে মনে করে কেউই দেখেনি। কেউই জানে না। কিন্তু সে নিজের অজান্তেই এমন এক প্রমাণ রেখে যায়, যা তার গোটা জীবনটা ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সঙ্গে তার পরিবারেরও।”
দুর্বোধ্য হেসে বলল কলি।
খেয়ার মাথায় যেন বজ্রপাত হলো। ক্ষিপ্ত চোখে চেয়ে অপ্রস্তুত গলায় কলিকে বলল,
“তোর মনে হয় পাখনা গজালো ইদানীং? নিউ বিজনেস দিলি। কাবিন হলো। মাহমুদ স্যারের নেক নজর লাভ করলি। সবমিলিয়ে ফাঁফরে আছিস। তাই না? কিন্তু তুই কি জানিস পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে?”
কলি বাঁকা হাসলো। ধীর কন্ঠে খেয়াকে বলল,
“খেয়া এটা বাসা নয়। পাবলিক প্লেস। আমি এমন কিছু তোকে এখন বলতে চাই না,যাতে তুই বাসা পর্যন্ত না যেতে পারিস। সুতরাং ভালোর ভালো স্থান ত্যাগ কর বলছি। সিচুয়েশন অপ্রীতিকর করে তুলতে চাই না আমি। কারণ আমি তোর মতো অভদ্র নই। একজন মেয়ে হয়ে অন্য একজন মেয়ের এতটুকু গুরুত্ব আমার কাছে আছে।”
খেয়া নাকমুখ লাল করে চলে গেলো। তবে মনের ভিতর কঠিন শংকা কাজ করছে। কলি কি মিন করে কিসের ইঙ্গিত দিলো তাকে। কিছুই বুঝে উঠছে না সে। ভীষণ গোলমেলে লাগছে তার কাছে।
কলি বসে পড়লো চেয়ারে। ম্যানেজার কিছু একটা ডাউট করলেও কলিকে জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না। কলির বাকিদিন কাটলো অসহিষ্ণু মেজাজে। ভাবছে,
খেয়া মেয়েটা কি মানুষ? সেই শুরু থেকেই নানাভাবে, নানা প্রকারে আমাকে হেনস্তা করায় চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে আছে। আগের চেয়ে এখন যেন বেড়ে গিয়েছে এই খেয়া। এর অবশ্য স্পষ্টত দুটো কারণ আছে। সেদিন মাহমুদ স্যারের হয়ে তাকে চড় মারা। এবং যখন সে জানলো আমি স্যারকে পছন্দ করি। এবং স্যার আমার অনুভূতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। বাকি ইতিহাস শুনলে যে খেয়ার কি হাল হবে। ওহ নো! বলেই কলি ডানে বামে মাথা দুলিয়ে আলতো হেসে উঠলো।
সেদিন কলি সময়ের আগেই বাসায় চলে গেলো। তবে নিজেদের বাসায় গেলো। যদিও কলি বিয়ের পর শ্বশুরের বাসায় বেশিরভাগ সময় থাকে। সেখান থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছে। আনুশকার রুমেই সে পড়াশোনা করে। ভার্সিটি যাচ্ছে। দোকান পরিচালনা করছে। সন্ধ্যায় কলিকে দেখেই জুলি গোল গোল চোখে চাইলো বোনের দিকে।
“চাঁদ কোনদিকে উঠলো রে আজ? আপা আজকাল ত সেটাই তোর বাসা হয়ে গেলো দেখি। বাবার বাসায় আসিস পরিযায়ী পাখির মতন।”
“ধর নে।”
বলে কলি জুলির হাতে দু তিনটে প্যাকেট দিলো।
“কি আনলি দেখি? ওয়াও! আমার কফি ফ্লেভারের বক্স আইসক্রিম। আনার ফল আব্বুর জন্য বুঝলাম। আম্মুর দই। ভেরি গুড। এভাবেই পরিবারের দায়িত্ব পালন করিবে কন্যা।”
রেবেকা এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। জুলি খাবারগুলো রাখলো। নুরুল হকও মেয়ের গলা শুনে এগিয়ে এলেন। মেয়ের মাথায় আর্শীবাদের হাত রাখলেন। রেবেকা রান্নাঘরে ছুট দিলেন। তালের পিঠা বানাচ্ছেন তিনি। কলি মায়ের পিছন দিয়ে রান্নাঘরে বলল,
” তালের পিঠা? না এলে ত ঠকে যেতাম আম্মু। আমি যেতে কয়টা দিওতো তাদের তিনজনের জন্য।”
” অবশ্যই দিব। এটা বলতে হয় মাকে? তুই রাতে থাকবি না মা?”
“নাহ আম্মু। কাল ক্লাস আছে। বইখাতা সবই ত সেই বাসায়। আব্বুকে দোকানের বিক্রির আপডেট জানাতে আসছি। ও হ্যাঁ আম্মু, তোমার দুধ চিতইয়ের কাটতি ভালো। নারকেল ব্লেন্ড করাটাও পারফেক্ট হয়েছে। মিহি হয়েছে বেশ। কাল আগের পরিমাণে বানিয়ে আব্বুকে দিয়ে পাঠিয়ে দিও।”
“আচ্ছা দিবো। হ্যাঁরে, মাহমুদ, আপা,ভাই কিছু বলে আমাদের দোকান নিয়ে? তোর সময় দিতে হয় যে,আবার সেই বাসা থেকে ডিমের পুডিং, ভেজিটেবল রোল বানাই নেস বলে?”
“ধুর! কি যে বল না। আমি আমাদের বাসার মতই সেখানে ফুল ফিড্রম নিয়া চলতে পারি। তারা কিছুই মনে করে না। বরং আমাকে মেন্টালি সাপোর্ট দিতে পারছে। এই ভেবেও তারা আনন্দ পায়। এডুকেটেড ফ্যামিলির পারসনগুলো খুবই ব্রড মাইন্ডের হয় আম্মু!”
” সহনশীলতা,পরোপকারী, মহৎ মনের মানুষগুলোই এমনিই।”
বলল কলির বাবা। কলির বাবার দিকে চেয়ে বলল,
“আর আব্বু, উনারা যে যা আমার কাছে এক্সপেক্ট করে,তার তো কমতি হচ্ছে না। আমি আমার দায়িত্বগুলো সবই পালন করছি।”
“আলহামদুলিল্লাহ মা। ঠিকভাবে চলিস তাদের মন যুগিয়ে।”
কলি দোকানের ভালোমন্দ বিষয়গুলো বাবার সঙ্গে শেয়ার করলো। নুরুল হকও বুঝে নিলেন। কলি বাবা মায়ের সঙ্গে একত্রে ডিনার সেরে নিলো। রাতে একাই রিকশা নিয়ে বাসায় চলে গেলো। তালের পিঠাগুলো বের করে নিজ হাতে একটি প্লেটে নিয়ে নিলো। স্বশুরের রুমে গিয়ে তাদের দুজনের সামনে রাখলো।
“কি এটা বৌমা?”
“বাবা এটা তালের পিঠা। মা আপনাদের জন্য দিলো কিছু।”
“বাহবা। আঞ্চলিক পিঠার স্বাদতো ভুলতেই বসেছি আমরা শহুরে বাস করা মানুষেরা। তাল কি গ্রাম থেকে আসা?”
“নাহ বাবা। আব্বু শখ করে একটা কিনে নিয়েছে।”
মাহফুজা পটাপট তিন চারটে পিঠা খেয়ে নিলো। আবদুর রহমান মুখে দিতে গেলে কলি বলে উঠলো,
“বাবা খাওয়ার আগের মেডিসিন খেয়েছেন?”
“খেলাম মা।”
“তাহলে খেতে পারেন পিঠা।”
“ওহ! দারুন স্বাদ লাগলো। আরো খেতে হবে বেয়াইনের নরম হাতের নরম পিঠা।”
কলি হেসে উঠলো।
মাহফুজা, বাতাসীকেও দিলো দুটো পিঠা। মাহমুদকে ডাক দিয়ে আনলো। মাহমুদ বাবা মায়ের রুমে এলো। দেখলো কলিও চেয়ারে বসে আছে। মাহমুদ ভারকন্ঠে কলিকে বলল,
“আপনি যে গিয়েছেন বাবার বাসায়? কার অনুমতি নিয়েছেন?”
কলি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। মুখের উৎফুল্লভাব মুহূর্তেই মিলিয়ে গেলো। সে জবাব দেওয়ার আগেই মাহফুজা বলে উঠলো ছেলের উদ্দেশ্যে,
“মাহমুদ কি হলো আজ তোর হঠাৎ? কলি আমাকে ফোনে বলেছে তাদের বাসায় যাচ্ছে। আসবে রাতে। আমি তোর মা। তোর ও আর কলির অভিভাবক। আমার কাছে বললে তোর কাছে আলাদা করে এত বলতে হবে কেন?”
মাহমুদ পিঠা খেল না। চলে গেলো।
“বাপের মতো একটা গোঁয়ার হয়েছে। কলি পিঠা রুমে নিয়ে যাও। এত মজার পিঠা পাবে কই?”
কলি ছোট একটি কাঁচের বাটিতে করে তিনটে পিঠা নিয়ে রুমে ঢুকলো। মাহমুদ ল্যাপটপের টেবিলে বসে কাজ করছে। কলি একটি পিঠা নিয়ে মাহমুদের মুখের সামনে বাড়িয়ে ধরলো। মাহমুদ কলির হাত চেপে ধরলো। তিন কামড়ে পিঠা খেয়ে নিলো। উঠে দাঁড়ালো। পানি খেয়ে নিলো। বিছানার উপরে উঠে শুয়ে গেলো। কলিকে আদেশপূর্ণ কন্ঠে বলল,
“দরজা অফ করে বেডে আসুন।”
কলি অনুগত স্ত্রী হয়ে ঠিক ঠিক বিছানায় উঠে গেলো। বসে রইলো।
“শুয়ে পড়ুন বলছি।”
কলি শুয়ে পড়লো ঠোঁট উল্টিয়ে। মাহমুদ কলির পায়ের উপর এক পা তুলে দিলো। কলির রাঙা দুই ঠোঁটের মাঝে আঙুল বুলাতে বুলাতে বলল,
“বাসায় এসে আপনাকে না দেখে ভালো লাগেনি। বিয়ে হলো কয়মাস হলো। এখনো আপনার সব ধরনের জড়তা কাটেনি। কি করতে হবে আমার বলেন ত? নাকি আপনার পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার প্রতি মনোযোগ হারাচ্ছেন?”
“কিছুই করতে হবেনা স্যার। মনোযোগ হারানোর প্রশ্নই আসে না।”
ছোট্ট করে বলে কলি মাহমুদের বুকে মাথা রাখলো।
“আজ নাইট ড্রেস পরলেন না যে? চেঞ্জ করে আসুন। এতে সবভাবেই কম্প্রোটেবল ফিল হবে আপনার।”
“শুয়ে গেলাম। এখন উঠতে আলস্য লাগছে। সরি। আজ খেয়া দোকানে এলো। ওর বিহেভিয়ার অসন্তুষ্টজনক ছিলো।”
“কেন এলো? কি বলল?”
কলি বিস্তারিত বলল একটা বিষয় বাদ দিয়ে। মাহমুদ খেয়াকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো নিজের খোলা শরীরের সঙ্গে। বলল,
“ইগনোর করেন। ”
“হুম করলাম।”
“আসুন গভীরে ডুবে যাই। মিশে যাই দুজন দুজনার মাঝে। যেমন করে মিশে যায় নদী ও মোহনা।”
মাহমুদের স্বাস প্রশ্বাস ছড়িয়ে পড়ছে কলির ঘাড়ে,মুখে,বুকে। সে কলির জোড়া তুলতুলে অধরখানা দখল করে নিলো গ্রোগাসে। এক অজানা আবেশে কলি কাবু হয়ে যাচ্ছে। বরষার ভেজা হাওয়া ভেজা পরিবেশ দুটো হৃদয়কে করে দিলো উতলা। সুখের নির্যাস আস্বাদন করলো দুজনে রাতভর। অবসাদ হয়ে আসা শরীরে তন্দ্রাঘোরে তলিয়ে গেলো দুজনে।
তার দুইদিন পর কলি ভার্সিটি গেলো বরাবরের মতই বাসে চড়ে। ক্লাস শেষে খেয়া কলিকে ডাক দিলো। কলি থামলো। বিস্ময়ভরা চোখে জিজ্ঞেস খেয়া জিজ্ঞেস করলো,
” তুই যে সেদিন বললি, সেটা বুঝিনি আমি? কিসের চোর চুরি করে প্রমাণ রেখে দেয়?”
“তুই সত্যিই বুঝতে পারিসনি?”
বলল কলি।
“একদম না।”
“ওকেহ! তোর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার দে। বাসায় চলে যা। সেটা রাতে পৌঁছে যাবে তোর কাছে।”
খেয়া চলে গেলো। মনটা অশান্তিতে ছেয়ে আছে। রাতে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে অনবরত তাকাচ্ছে। তখন সময় দশটা। খেয়ার হোয়াটসঅ্যাপে টুং করে আওয়াজ হলো পরপর দুটো মেসেজের। একটা ভিডিও ক্লিপ। পনেরো মিনিটের। আর একটা মেসেজ। খেয়া মেসেজটা পড়লো।
“তোর ক্রাশ মাহমুদ স্যার ও ডিপার্টমেন্টে কখনো যাবে না এটা। ডোন্ট ওরি। কেবল মন চাইলে মাঝে মাঝে আমি অন করে দেখবো,কিভাবে আমার ক্লাসমেট খেয়ার থেকে একসঙ্গে দুজন যুবক মজা নিচ্ছে।”
খেয়া ভিডিও ক্লিপ অন করলো। দেখেই সে স্তম্ভিত! বাকরুদ্ধ! তার নাকমুখ দিয়ে তপ্ত ধোঁয়া নির্গত হতে লাগলো।
এই ভিডিও নেহাল রিমুভ করেনি? সে মিথ্যা বলেছে আমাকে? কিন্তু কলি কিভাবে পেলো এটা? এবার?
চলবে…২৮
#তোমার_জন্য_সব -২৯
✍️ #রেহানা_পুতুল
খেয়া ভিডিও ক্লিপ অন করলো। দেখেই সে স্তম্ভিত! বাকরুদ্ধ! তার নাকমুখ দিয়ে তপ্ত ধোঁয়া নির্গত হতে লাগলো।
এই ভিডিও নেহাল রিমুভ করেনি? সে মিথ্যা বলেছে আমাকে? কিন্তু কলি কিভাবে পেলো এটা? এবার?
খেয়া মুহূর্ত দেরী করল না। কলি তার মাথা পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। সে সদ্য দেশ ছাড়া তার কাজিন নেহালকে মেসেজ দিলো। ভয়েজ নোট দিলো একাধিক। কিন্তু নো রেস্পন্স। খেয়ার মরি মরি দশা। সে কলির হোয়াটসঅ্যাপেও ভয়েজ নোট দিলো। কলি ননদ আনুশকার রুমে পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে। রুমের দরজা চাপানো। খেয়ার ভয়েজ নোটটি প্লে করে হেডসেট দিয়ে শুনলো।
“কলি প্লিজ, বল তুই এই ভিডিও ক্লিপ কোথায় পেলি? কে দিলো?”
কলি ঠোঁট ভিড়িয়ে হাসছে।
খেয়ার গলার স্বর দুর্বল! নিরীহ! মিনমিনে! মনে হচ্ছে জেলখানার পালানো আসামি। কলি রিপ্লাই দিচ্ছে না খেয়ার। কারণ সে প্রয়োজন মনে করছে না। তার কাজ শেষ। এবার ডাঙায় তোলা মাছের মতো খেয়ার তড়পানো দেখবে সে। খেলারাম খেলে যা।
কলির হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারে খেয়া ফোন দিয়ে বসলো। কলি রিসিভ করলো। নয়তো বজ্জাতটা দিতেই থাকবে। নেট অফ করারও সুযোগ নেই। নেটে তার কাজ আছে। কলি রিসিভ করে আনুশকার বারান্দায় গেলো। গ্রিল ধরে বাইরে দৃষ্টি রেখে খেয়ার সঙ্গে কথা বলছে। মাহমুদ বোনের রুমে গিয়ে দেখলো কলি নেই। বারান্দা হতে তার কন্ঠ শোনা যাচ্ছে। মাহমুদ বারান্দার দরজায় গিয়ে একটু চেপে রইলো। যেন কলি টের না পায়। কলি কার সঙ্গে কথা বলছে?
“কলি প্লিজ তুই এই ভিডিও ক্লিপ কোথায় পেলি?”
“আমি যেখান থেকেই পাই। মেয়েটাতো তুই। নাকি বলবি এটা প্রযুক্তির ভেলকিবাজি?”
” বল না কে দিলো?”
“যার সঙ্গে তুই প্রতারণা করেছিস। যাকে ঠকিয়েছিস। যার বিশ্বাস নষ্ট করেছিস। যার ইমোশন নিয়ে খেলেছিস। যার সময়,অর্থ ও শরীরের ক্ষতি করেছিস। সেই দিলো।”
“নেহাল? আমার কাজিন?”
“ইয়েস সিস। ইয়েস।”
সপ্রতিভ কন্ঠে বলল কলি।
“সে তোকে কেন দিলো?”
“সেটা তোর পাক্তন বয়ফ্রেন্ড নেহালকে আস্ক করিস।”
“ওকেহ। বাট তুই আমাকে দিলি কেন?”
“এইতো। জায়াগামতে এসে গেছিস। এটাই টু দ্যা পয়েন্ট। আমি দিয়েছি তুই মাহমুদ স্যারকে যেন আর বিরক্ত না করিস।”
“এতে তোর এত লাগে কেন কলি?”
অবিনীত স্বরে জিজ্ঞেস করলো খেয়া।
“মাহমুদ স্যার আমার ক্রাশ। আমি মাহমুদ স্যারকে ভালোবাসি এবং অনন্তকাল ধরে বাসবো। তার ছায়ায় আমি কোন মেয়ের ছায়াও দেখতে চাই না।”
“মাহমুদ স্যার কি তোকে বিয়ে করবে?”
“শত কোটি বার করবে৷ করতে বাধ্য তিনি।”
“আমার মতো স্যারকেও ব্ল্যাকমেইল করেছিস মনে হয়? তুই তো দেখি ঠান্ডা মাথার ক্রিমিনাল। ”
অবজ্ঞার স্বরে বলল খেয়া।
কলি চট করে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো। মাহমুদ খেয়ার কথা না শুনলেও কলির প্রতিটি রিপ্লাই সে শুনতে পেলো। কলি রুমে ঢুকতেই মাহমুদকে দেখে ভূত দেখার মতো ভড়কে গেলো। মাহমুদ পুরো দরজা দখল করে দাঁড়িয়ে আছে। কলি যেতে পারছে না।
মাহমুদ কলির একহাত ধরে দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“আমি তোমার ক্রাশ? আমাকে নিয়ে এত জেলাস? কই ভুলে কখনো একবারও তো বলনি আমাকে ভালোবাসো? অথচ খেয়াই হবে হয়তো, তাকে বললে আমার ছায়াতে কারো ছায়াও তোমার সহ্য হয়না। নাহ?”
কলি তীব্র সংকোচে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে পড়লো। চোখ মেলে তাকাবার জো নেই তার। মাহমুদ কলির হাত ধরে দাঁড় করালো। প্রায় টেনে নিয়ে গেলো নিজেদের বেডরুমে। কলির মাঝে পালাই পালাই ভাব। কলি দেয়াল চেপে দাঁড়ালো। মাহমুদ কলির দুহাত দেয়ালের উপর মেলে ধরলো। আঙ্গুলে আঙ্গুল গুঁজে নিলো। দুই জোড়া হাত, এক জোড়া হয়ে গেলো চোখের পলকেই। কলির স্বাস প্রশ্বাস বেড়েই চলছে।
“স্যার ছাড়ুন না। আর ইউ ক্রেজি? ক্রেজি ফর মি?”
“ইয়েস মাই লাভ! ক্রেজি ফর ইউ। আমাকে তুমি করে বলবে এবং ভালোবাসি বলবে। এক্ষুনি। এই মুহূর্তে। আমিও আর আপনি সম্বোধন করে কথা বলব না। ভার্সিটি গেলে একটু কেয়ারফুল্লি থাকলেই হবে দুজনের। সেমিস্টারও আর বেশি নেই।”
“পারব না।”
“নোও কলি। একবার বল, মাহমুদ আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
“স্বামীর নাম মুখে আনা নিষেধ। মুরুব্বীরা বলেছে।”
দুষ্টমিষ্ট কন্ঠে বলল কলি।
মাহমুদ কলির ঘাড়ে নিজের দু’ঠোঁট চেপে ধরলো। পেটে মৃদু চাপ দিয়ে বলল,
“ঠোঁট কিন্তু বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এবং ক্রমশ নিচে নামতে থাকবে। সো বলো বলছি।”
“বাকি থাকুক স্যার। পরে বলব।”
“বাকির নামে ফাঁকি। আজ থেকে নো স্যার,নো আপনি। মাহমুদ এবং তুমি বলবে।”
কলি হাত ছাড়াতে পারছে না। মাহমুদ কলির পেটে, পিঠে সুড়সুড়ি দিতে লাগলে কলির হাসি চলে আসে৷
“বল, মুক্ত হতে হলে?”
“আহু! উঁহু! ছাড়েন না বলছি।”
মাহমুদ ছেড়ে দেয় কলিকে। কলি বিছানায় উঠে কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে যায়। মাহমুদ লাইট অফ করে বেডে উঠে যায়। কলির কাঁথার নিচে ঢুকে পড়ে। কলি পিটপিট চোখে চায় মাহমুদের দিকে। মাহমুদ কলিকে জড়িয়ে ধরে। কলিই নিজ থেকেই মাহমুদের কানের কাছে হিসহিসিয়ে বলল,
“ভালোবাসি মাহমুদকে। জীবন দিয়ে ভালোবাসি।”
ওরেহ! আমার ফুটন্ত গোলাপ কলি। যেই ঠোঁট দিয়ে এই ভালোবাসি শব্দটি উৎসারিত হয়েছে। সেই মিষ্টি ঠোঁটজোড়াকে নিবিড়ভাবে আদর করে দিতে চাই। কলি বলল,
“উঁহু! নাহ ব্যথা!”
” ব্যথা দিব না। যত্ন করে আদর করবো। ”
বলে কলির অধরযুগল মাহমুদ নিজের মুখে পুরে দিলো। তার অবাধ্য হাত উম্মাতাল খেলা করে যাচ্ছে কলির বুকের উপরে। কলি, উঁহু ব্যথা পাচ্ছি তো বলে উঠলো। মাহমুদ হাত থামিয়ে দিলো। নিজের ঠোঁটজোড়া সরিয়ে নিলো।
কলিকে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার ডায়াবেটিস আছে কলি?”
“নাতো।”
ভ্রু কুঁচকে বলল কলি।
“তাহলে ডায়াবেটিস রোগীর মতো এত ব্যথা ব্যথা করে কেনো? হাতটা দিব কই? বলে দাও?”
“কোথাও দিতে হবে না। বেশরম পুরুষ আপনি।”
” লজ্জা নারীর ভূষণ। পুরুষের নয়৷ লক্ষ বার হাত দিতে হবে৷ কি সুন্দর রজনী। একই কাঁথার নিচে মিশে আছে দুটো হৃদয়। দুটো শরীর। অথচ সেই দুটো দেহের আলিঙ্গন হবে না। আঙ্গুল আঙ্গুলে ঠোকাঠুকি হবে না। তা হয় না।”
বলে মাহমুদ কলির পেটের উপর হাত বুলাতে লাগলো আলতো করে। বলল,
” আচ্ছা কলি, আমরা বাবু নিবো কবে?”
কলি লজ্জায় উপুড় হয়ে মুখ বালিশে গুঁজে ফেলল।
“ওরে লজ্জাবতীরে। ওকে টপিক চেঞ্জ।খেয়া কেন ফোন দিলো কলি?”
কলি বলল,
“একটা নোটের বিষয়ে হেল্প চেয়ে ফোন দিলো।”
মাহমুদ কথা বাড়ালো না। কারণ সে বুঝলো, কলি তার কাছ হতে কিছু গোপন রাখতে চায়। কলির চাওয়া,ইচ্ছার গুরুত্ব তার কাছে অধিক।
ভার্সিটিতে কলির ক্লাস থাকে তিনদিন মাত্র। তাই সে বাকিদিনগুলোতে প্রায় পুরোদিন সময় দিতে পারে তাদের দোকানে। যদিও এতে বাসায় টুকটাক হলেও সমস্যা হচ্ছে। এসব কলি বুঝে। তবুও তার কিছুই করার নেই। তার বাবা,মা,বোন,পরিবারের ঢাল হয়ে তাকে দাঁড়াতেই হলো।
এমন এক বিকেলে কলি শ্বশুর, শাশুড়ী, ননদকে নিজেদের দোকানে নিয়ে গেলো। ইচ্ছেমতো খাওয়ালো। আবদুর রহমান পিতৃসুলভ কন্ঠে বললেন,
“হয়েছে মা। এভাবে নিজের মানুষদের খাওয়াতে থাকতে ব্যবসা চলবে না মা।”
কলি আন্তরিক হাসলো। কন্ঠে কৃতজ্ঞতা ঢেলে বলল,
” বাবা,আপনারা সবাই আমার পরিবারের জন্য যেই সাপোর্ট দিয়েছেন, তার ঋণ অপরিশোধযোগ্য।”
“এত নমনীয় করে বলতে হবে না ভাবি। এটা আমাদের কর্তব্য। তুমি আমাদের পরিবারের একজন। তো সেই একজনের ভালোমন্দ আমরা দেখব না। বলো?”
বলল আনুশকা।
কলি আনুশকাকে জড়িয়ে ধরলো ভালোবাসায়।
সেদিন রাতে কলি একথা ওকথা প্রসঙ্গে মাহমুদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। মাহমুদ কলির দু-চোখের পাতায় কোমল চুমু খেলো। উদাস গলায় বলল,
“#তোমার_জন্য_সব করতে পারি আমি কলি। সব। যেদিন বাইক এক্সিডেন্ট করেছি। সেদিনই আমি টের পেলাম, এই কলি মেয়েটাই আমার একলা জীবনের সঙ্গী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। নিকষ কালো আঁধারেও যার হাত ধরে আমি পৌঁছে যাব দূর দিগন্তে। পাড়ি দিতে পারি সাত সমুদ্র তেরো নদী। অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করলে ভার্সিটিতে জানাতাম। স্যারদেরকে ইনভাইট করতাম অবশ্যই। কিন্তু তুমি চাও না বলেই হাইড করে যাচ্ছি।”
স্যার, বলে কলি মাহমুদের হাঁটুর নিচে বসে পড়ল। কপাল ঠেকিয়ে ধরলো মাহমুদের হাঁটুতে। ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। বলল,
“আমিও আপনার জন্য সব করতে পারি। সব।”
“সব লাগবে না। উঠো। আপাতত রাতের আনন্দটুকু দাও। এই প্রমাণ পেলেই আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখি মানুষ। আজ কোন ব্যথা শুনব না।”
মুচকি হেসে বলল মাহমুদ।
সেই নিস্তব্ধ নিশিতে কলি মাহমুদের সুখের বাধা হয়ে রইল না। সমস্তই উজাড় করে দিলো। যেমন করে অকাতরে সব বিলিয়ে দেয় প্রকৃতি মানুষকে। মাহমুদও সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে এতটুকু পিছপা হলো না।
নিসংকোচে, নিলজ্জায়, নিদ্বিধায় সারারাত্রি ধরে কলির সবটুকু নির্যাস আস্বাদন করলো মধুপিয়াসী ভ্রমরের ন্যায়।
তার পরের একদিনের ঘটনা। কলি ভার্সিটিতে গেলো। খেয়াও এলো। গত সপ্তাহে খেয়া ভার্সিটিতে এল না । কলি তাকে এভাবে জব্দ করবে এটা তার কল্পনাতীত ছিলো। তাই তার গোটা শরীর ও মন অসাড় হয়ে ছিলো। ক্লাস শেষে খেয়া কলিকে ডাকলো। বলল,
“নেহালকে পাচ্ছি না জানতে। তুই বল কখন,কিভাবে, কেন সে এই ভিডিও ক্লিপ তোকে দিলো?”
“এটা বলার মুড নাই এখন। পরে অবশ্যই বলল। ডোন্ট ওরি।”
“তাহলে এটা বল,আমাকে যে মাহমুদ স্যারের পিছু ছাড়তে বললি,তুই কি সত্যি স্যারকে লাভ করিস? সেদিন রাতে তোর বলাগুলো মনে হলো মিথ্যা।”
“সত্যি হলে কি করবি?”
আত্মবিশ্বাসী সুরে বলল কলি।
“তুই প্রমাণ দিতে পারলে স্যারকে আর চাইব না।”
“আয় আমার সঙ্গে”
মাহমুদ চেয়ারে বসে আছে। রুমের ভিতরে এলো কলি ও খেয়া। কলি দরজা চাপিয়ে দিলো।
“কি ব্যপার কলি, খেয়া? আপনারা দুজন একসঙ্গে?”
খেয়া চুপটি করে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। কলি মাহমুদের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। মাহমুদের গলা পেঁচিয়ে ধরলো দুহাত দিয়ে। মুখ ঝুঁকিয়ে মাহমুদের একগালে গাঢ় চুমু খেলো। বলল,
“স্যার, আমি আপনাকে ভালোবাসি, এটার প্রমাণ পেলেই খেয়া আপনাকে ভুলে যাবে।”
মাহমুদ নিমিষেই উঠে দাঁড়ালো। কলির দু’গাল চেপে ধরে ঠোঁটে চুমু খেলো। খেয়ার দিকে মুখ তুলে চাইল মাহমুদ।
খেয়ার মুখাবয়বে একরাশ কাঠিন্যতা ও অসিহষ্ণুতা ভর করলো। তার কর্ণকুহরে যেন উত্তপ্ত সীসা ঢেলে দিলো মাহমুদ নিজের হাতেই। সে দুপদাপ পায়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।
কলি মনে মনে বলল,
ভালোবাসা সত্যি হলে প্রয়োজনে অনেক কিছুই বিসর্জন দিতে হয়। আশাকরি আমার কড়াডোজে এবার তুই খেয়া সিধা হয়ে যাবি। হৃদয় দিয়ে হৃদয় কিনেছি। কারো ছিনিয়ে নেওয়ার সাধ্যি নেই।
চলবে…২৯
#Romantic